সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে এই অনুরোধ্টা রাখতে পারেন


সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে এই অনুরোধ্টা রাখতে পারেন
গৌতম দাস

১০ জুন ২০২৩    ০০ঃ ০৭
https://wp.me/p1sCvy-4BG

 

এই লেখা শুরুর কিছুক্ষণ আগে ঘনিষ্টদের একজন নিশ্চিত করলেন যে সিরাজুল আলম খান, দাদা তিনি আর নাই।  কিন্তু এক মিনিট আগেও আমি জানতাম না যে আমি কিছু লিখব তাঁকে নিয়ে। কিন্তু হঠাত দেখলাম আমার অন্য কিছু ঘনিষ্ট যারা তারা তাঁর সম্পর্কে অ-প্রোথিত না-জানা সব মন্তব্য করছে।  সেখান থেকেই এই লিখতে বসা্র আইডিয়াটা। তাঁকে নিয়ে অবশ্যই লেখা যায়; আমার লেখা উচিত।  সেসব মুল্যায়ন নিয়ে একটা বইও বের করা সম্ভব। কিন্তু সেসব মূল্যায়ন অনেক ঠান্ডা হয়ে বসে করার কাজ, আজকের কাজ নয়।  তাই, এটা এক ইমিডিয়েট কিছু প্রতিক্রিয়া মাত্র!

আমার খুব ঘনিষ্ঠরা ছাড়া অনেকেরই না জানা থাকা স্বাভাবিক যে আমার সক্রিয় এক্টিভিস্ট রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে, বুয়েটে ভর্তি হয়ে পড়ার সময় জাসদ-ছাত্রলীগ করতে করতে; যা আমি বুয়েটে আমাদের ক্লাস শুরুর আগেই পাশের ঢাকা মেডিকেলের হোস্টলে থেকেই করা শুরু করেছিলাম, প্রায় আট মাস ধরে। আর জাসদের রেওয়াজে (এমনকি ১৯৭১ আগে সারা আওয়ামি লীগে তরুণদের কাছে) তিনি দাদা বলেই পরিচিত; নিজেদের আলাপচারিতায় আমরা দাদা-ই বলতাম।  এটা অনেকটা গভীর শ্রদ্ধা করে নাম না ধরে দাদা ডাকা আবার, এটা প্রকাশ্যে তার নাম না নেওয়ার সুযোগ নেওয়াও – বলেই আমার মনে হত! এখন থেকে এলেখায় দাদা-ই বলব।

 

আরেকটা কথা, আমি এখন আর কোন ধরণেরই কোন কমিউনিস্ট বা কোন প্রগতিশীল বা বামপন্থী নই, বলেই মনে করি। একালের চীন বা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং  এর অনুসারি এমন বা অমন কোন চীনপন্থিও নই।  আসলে কাউকে কোন “পন্থী” বলে বা তা দিয়ে বুঝবার যে চেষ্টাটা ছিল সেটা সোভিয়েত “কোল্ড-ওয়ার” আমলের ধারণা ও বাস্তবতা। এটা একালে অকার্যকর হয়ে গেছে। সেটা একালের অন্তত দুটা ঘটনাঃ ১. ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙ্গে যাওয়া আর ২. এঘটনার প্রায় আট বছরের মধ্যে ২০০১ সালের দ্বিতীয় ধাক্কা – প্রেসিডেন্ট বুশের ইসলাম ফোবিয়া, নিপীড়ন ও মুসলমানদের সাথে অল-আউট বৈষম্যে, অসম ট্রিটমেন্টের পালটা প্রতিক্রিয়ায় দুনিয়াজুড়ে মুসলমান মানেই সে আমেরিকাবিরোধী এবং নুন্যপক্ষে কড়া সমালোচক। এতে সারা দুনিয়ায় চিন্তার ক্ষেত্রে যে ইসলামিজম বা ইসলাম প্রশ্ন হাজির হয়ে গেছে তা  আপনি চান বা না চান আপনাকে এই প্রশ্নে পক্ষে-বিপক্ষে একটা অবস্থান নিতেই হবে – এমন অবস্থায় আমাদের সকলকে ফেলে দিয়েছে। এদুই ঘটনারই সোজা পরিণতি হল, তাতে আপনি আর আগের বুঝাবুঝির জ্ঞান ও চিন্তা-পদ্ধতি দিয়ে এই নয়া পরিস্থিতিকে বুঝা ব্যাখ্যা করা অসম্ভব হয়ে গেছে। আমি একাদেমিক দিক থেকে বলছি অতএব নয়া পড়াশুনা, নয়া মূল্যায়নে আগের সবকিছু ধারণাকেই ঢেলে সাজানো, আবার সবকিছু উল্টেপাল্টে দেখে পুনঃবিচারে বসা আর ভেবে দেখা যে আগের সাফাই ঠিক আছে কিনা; দুনিয়ার ইউনিভার্সিটি মাত্রই সেই রিভিউ করতে বসতে সেই থেকে আমরা সকলেই বাধ্য হয়ে গেছি। তবেই  অন্তত যারা আজকের নয়া শতকের দুনিয়ার সব ঘটনাবলীকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়ে থাকতে চান তাদের জন্য এটা বাধ্যতামুলক যে আগের অন্তত কমিউনিস্ট জ্ঞান বা চিন্তাকাঠামোটা আর এখন চলবে না।  এছাড়া চিন্তা পদ্ধতিতেও অনেক নয়া সংযোজন ঘটাতে হয়েছেই। বহু আগে অনেক হারিয়ে যাওয়া জিনিষ ফিরে এসেছে। ইসলাম বা থিওলজি এটা বুঝার দরকার নাই আমরা সব বুঝি – এসব কথা এখন পোলাপানি শুনায়। এসবেরই সার কথাটা বললে এখন আর ওমুকে চীন বা আমেরিকা পন্থী বা ইসলামপন্থী  ইত্যাদি এসব বলে  ট্যাগ দিয়ে কিছু বুঝার দিন গত হয়েছে।
দুনিয়া জুড়ে কমিউনিস্ট প্রগতিশীলতার (এমনকি সাথে আধা-বুঝের রেনেসাঁ ও হিউম্যানিজম মার্কা আধুনিকতাও) সবচেয়ে বড় অপরাধ ও গৌণ হয়ে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে তারা ধরে নিয়েছিল ধর্ম বা থিওলজি কে তারা শেষ করে এসেছে – এটা আর পড়তে হবে না। থিওলজি বুঝার বোধবুদ্ধি বা অনুভব ছাড়াই মানুষ চলতে পারবে – এই ওভার এস্টিমেশন ও উগ্রতা তাদেরকেই এখন গৌণ ও তুচ্চছ করে তুলছে ও আরো তুলবে।  তাদের চিন্তা ও চিন্তাপদ্ধতিতে তাদের ইতোমধ্যেই পিছিয়ে পরার এটাই মূল কারণ।  এতো সারা পশ্চিমের এটিচুডের কথা বললাম। আমার এদিকের অখন্ড ভারতের কালের প্রগতিবাদ সেতো জন্ম থেকেই মূলত জমিদার হিন্দুর হিন্দুত্ববাদ।  সারকথায় আমাদের সকলকেই একালে অমুকে ওমুক পন্থী ট্যাগ দিয়ে বুঝাবুঝির সবকিছু পথ বা স্টাইল ত্যাগ করতেই হবে। বদলে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শিখতে হবে।     

আবার  “আগামি দিন চীন গ্লোবাল নেতা হচ্ছে” একথা বললে পরে কেউ ভেবে নিচ্ছেন নিশ্চয় আমি চীনপন্থি???? এটা তবু এখনও হচ্ছে, হয়। অথচ ফ্যাক্টস হল, অ্যামেরিকান অর্থনীতিতে বাড়তি মূল্য সঞ্চয় এটা আর আগের মত হচ্ছে না, ধারেকাছেই না। যেটা চীনের হচ্ছে ততোধিক। তাই চীনের বিপুল সারপ্লাস ফুলে উঠছে। কিন্তু একথাটা তো কেউ চীন ভালবাসে বলে বলছে তা তো না। এটা একটা বাস্তবতা। ইন্ডিপেন্ডেন্ট একাদেমিকদের স্টাডি পরিসংখ্যান। এটা আমি বানাই নাই। তাই এই ঘটনাটাকে  কেউ উচ্চারণ করে বলা মানেই সে নিঃশ্চয় চীনপন্থি এই সিদ্ধান্তে যাওয়া একেবারেই গাধামি – আর আগেকার শতকের “পন্থী” দিয়ে ঘটনা বুঝবার এক পুরানা অচল অভ্যাস মাত্র!   দয়া করে এসব ত্যাগ করেন, নয়া চিন্তা পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেন।
বরং দেখা যাবে, আমি একালে আমেরিকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে গ্লোবাল অর্জন ও অবদান  নিয়ে এত তথ্য আমার লেখায় তুলে এনেছি যে আমি নিশ্চিত বাংলায় তা আর কেউ করে নাই। পুরাণ “পন্থী” বিচারে এটা তো আমি তাহলে ডানপন্থী হই!!! এছাড়া আমি এখন আমার পাঠককে অ্যামেরিকান ইতিহাস পড়তে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে পাইওনিয়ার, সবাইকেই পড়ে নিতে বলি আজকাল নেটের যুগ! কারণ, প্রগতিশীলতার আড়ালে এরা আমাদেরকে অ্যামেরিকান ইতিহাস পড়তে নিরুতসাহিত করাতে একটা বিরাট গ্যাপ হয়ে আছে যেতা ভাঙতেই হবে। কাজেই “পন্থী” দিয়ে বুঝবার চেষ্টা অন্তত আমার বেলায়, বাইরে জুতা খুলে রেখে আসার মত করে, বাদ রাখতেই হবে! আমার কোন কথাই পাঠকের মেনে নেওয়ার কোনই দরকার নাই। কিন্তু আমাকে জানতে গিয়ে ভুল বুঝার ভুল অনুমান করার তো অন্তত মানে হয় না!

সবার আগেই বলে নেই, দাদা ফেরেস্তা তাঁর দোষ-গুণ নাই, ভুল করেন নাই বা ব্যর্থতা নাই – তা তো নয়ই! কোন মারাত্মক ভুলও যে তিনি করেন নাই আর এটাই আমি বলতে চাচ্ছি – না এমন আগাম ধরে নেয়া একেবারেই অপ্রয়োজনীয়।  এমন কী যা ভাবে তিনি কোন জিনিষ করেছিলেন সেটা তা না বলে এখন জানা যাচ্ছে, ব্যাপারটা আদৌও সেটা ছিল না, এমন হতেই পারে!  আর আমার কোন কথা থেকেই আমার অসতর্কতায় এমন কোন ফেরেস্তা আরোপ করা ইঙ্গিত করেছি বলে  মানে বের করলে তা ভুল হবে সেটা আগেই জানিয়ে রাখছি।  রক্ত-মাংসের একটা বাস্তব মানুষের যা যা দোষ হয় হতে পারে তার বোধহয় সবই পাওয়া যাবে তাঁর মধ্যে।  কাজেই তিনি মহান এই টাইপের বকোয়াজের কোনই প্রয়োজন নাই, অন্তত আমি দেখি না। কিন্তু সাবধান তাই বলে তাঁর গুণাবলী, আর আমাদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবন বিনির্মাণে তার অজস্র রাজনৈতিক অবদান, অজস্র দাগ-চিহ্ন যা তিনি রেখে গেছেন তা যেন নজর-আন্দাজ না করি। অতএব এসব নিয়ে আজ কথা বলা নিশ্চয় সবাই স্বাভাবিক বলেই দেখবেন!

একটা ছোট্ট দিক উল্লেখ করি। বাংলাদেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে আমাদের আইনি রাজনীতিতে  (অনেকে যেটাকে সশস্ত্র ধারার বিপরীতে গণ-আন্দোলনের ধারা বলে চিনেন, এটাকেই আইনি ধারার রাজনীতিও বলে)  এর কালচার মানে, এই রাজনীতির চর্চার রূপটা কেমন হবে – তা করে দেখানোর এক গুরুত্বপুর্ণ নির্ধারক হলেন দাদা; বলেই আমরা ধারণা। যেমন ধরেন লক্ষ্য করেছেন কিনা আমাদের রাজনীতিতে দলগুলোর (আদর্শ নির্বিশেষে) মিছিলে আমাদের সবার শ্লোগান ধরা বা তোলার স্টাইলটা এতে সবার মধ্যে একটা মিল আছে।  সবার মৌলিক দিকে মিল আছে।  কেন এমনটা হল? কে ঠিক করে দিল?
তফাতটা বুঝবেন কারও যদি কলকাতায় তারা কিভাবে শ্লোগান তুলে বা ধরে তা যদি জানা থাকে তাহলে তিনি বুঝবেন, আমাদের দুদেশের মাটিতে দুই কালচারে  এই দুইটা ভিন্ন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের রূপ – আমাদের মূল স্টান্ডার্ড টা ঠিক করে দেওয়ার অবদান দাদার।
আবার ধরেন সারা আওয়ামী  ঘরানাতে ষাটের দশক থেকে বক্তৃতা দেওয়ার – এটা যেই ওজস্বিনী ভাষায় ও স্বরে উচ্চগ্রামে তুলে বক্তৃতা দিতে দেখা যায়  – সেটা আবার আওয়ামি-ভিন্ন অন্য দলের কালচারে তা নাই বা আলাদা। এই বক্তৃতার আদর্শ স্টাইলটা মনে করা হয় আসম আবদুর রব এরটা। দাদার হাতে তৈরি এই স্বর। এই স্টাইলটা হল – পাবলিক বা গণ-বক্তৃতা মানে যেন শব্দ ছুড়ে মারা। আমার ধারণা ব্যাপারটাকে সেভাবে বুঝেই এই বিশেষ স্টাইল তিনি বাজারের ছেড়েছিলেন। তোফায়েল বা রাজ্জাকের বক্তৃতার সাথে এর বিরাট মিল পাবেন (যদিও রাজ্জাক সাহেব দাদার চেয়ে কয়েক বছরের বড় সম্ভবত)। যাহোক এই স্টাইলটার আরেক বিশেষত্ব হল, প্রথমে উচ্চ ওজস্বীনি ভাষায় শাসককে  – কেন আপনি এটা করেছেন – ধরণের চার্জ আনা। এরপর কী করতে হবে শাসককে এই দাবিটা বলার সময় এবার আরেকটা স্বর সেটা অনেক নিচু আর ফ্ল্যাট – এমন হবে।  মানে দর্শকদের উজ্জীবিত করার উপায় নিয়ে ভেবে তা এফেকটিভ কি করে করা যায় এসব ভেবে নিয়ে এই রূপটা বের করা হয়েছে বলে আমার ধারণা।

সশস্ত্র রাজনীতি প্রসঙ্গে দাদা বিশ্বাস করতেন বলে আমার মনে হয়েছে (এটা সঠিক বা বেঠিক যাই হোক)   সশস্ত্র রাজনীতির জন্য ভাল লুকানোর জায়গা পাহাড়-বন দরকার হয়, বাংলাদেশের ভুগোল সে মোতাবেক নয়। এক চট্টগ্রামের কিছু অংশ ছাড়া এর পুরাটাই এক সমতল। তাহলে কী কেবল মাস মুভমেন্ট বা গণ-আন্দোলন-ই একমাত্র রাস্তা!  দাদা এখানেও ইনোভেটিভ!  দাদার আইডিয়াটা হল, গণ-আন্দোলনের মিছিলের মধ্যে থেকেই যতটা সম্ভব এটা এলাও করে – বিসদৃশ্য না লাগে এমন পারমিশিবল মাত্রায় একধরণের সশস্ত্রতা আনা। হাল্কা মার দেয়া, মিছিলে লাঠি-ককটেল ক্যারি করা, মিছিলের ভিতর থেকেই পুর্ব-পরিকল্পিতভাবে ছোট একটা গ্রুপ বের হয়ে গিয়ে আক্রমণ করে একটা ‘শিক্ষা’ দিয়ে আসা বা তাকে গণস্বার্থের শত্রু বলে চিহ্নিত করে দেওয়া ইত্যাদি। আবার এমন সশস্ত্রতা করাই যাবে না যেটার কারণ এটা আর আদালতে আইনি কনষ্টিটিউশন মানা দলের সীমা অতিক্রমকারি বলে প্রমাণ যেন না হয়ে যায়!

তাই আমার মতে বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চার যে কালচার এই মৌলিক বৈশিষ্টগুলো চালু করার ক্ষেত্রে এর পিছনে দাদার অবদানগুলো মনে রাখা যেতে পারে!

আমি দাদার ঘনিষ্ট কেউ নইঃ
উপরের কথাগুলো তুললাম আমার ব্যক্তিগত কিছু অবজারভেশন হিশাবে। যেগুলো কিছু নিয়ে এই একালেই কেবল দাদার সাথে সরাসরি কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। আগেই বলেছি ১৯৭৯ সালের কথা। আমি জাসদ যখন করেছি সেটা একেবারেই অবিভক্ত জাসদ, মানে প্রথম ভাঙনের পরে প্রথম যে বাসদ নামে নয়া দল হয় এরও আগের অবিভক্ত জাসদ সেটা। আমি জাসদ ত্যাগ করি ১৯৮২ সালের একেবারে শেষের দিকে। এরপর আর কখনও জাসদ করি নাই, দলিয় সম্পর্ক রাখি নাই কারও সাথে। পরে ভিন্ন রাজনীতিতে আরও সক্রিয় জড়িয়ে যাই। যদিও সেকালে জাসদ ছারার আগেই দলের ভিতরের আমরা জানতাম ভিতরের বিদ্রোহের চার-পাঁচটা ধারা গুমড়ে উঠছে যা বাইরে থেকে তেমন জানা যেত না। এই হতাশা থেকেই মূলত আমার জাসদ ত্যাগ ঘটেছিল।

তবে একথাটা ঠিক যে জাসদ করা এই চার বছর ছিল আমার জন্য খুবই রাজনৈতিক সক্রিয়তার কাল।  ছাত্রত্ব যায় যায় অবস্থা!  কিন্তু এসব সত্বেও  আমার কখনও সেকালে দাদার সাথে পরিচিত হওয়া দূরে থাক, কথাও হয় নাই কখনও। হয়ত কেবল একটু দূর থেকে দেখেছি আমার বুয়েটের সিনিয়রদের সাথে দাদা দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। হয়ত ইউকসু নির্বাচন সামনে অথচ অর্থ সংগ্রহ যথেষ্ট হয়নি তাই দাদা এসেছেন।  কথাগুলো বললাম আমি যে তার থেকে অনেক দুরের তা বুঝানোর জন্য।  কথা যখন উঠল একটু বলে রাখি মাঠের রাজনীতি শিখার আমার গুরু জাসদের ডাক্তার মোশতাক, ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র, একালে মহাখালির সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান IEDCR ছিলেন,  এখন অবসর নেয়া।

যা হোক সেটা;  একালে মাত্র বছর দুই আগে (সম্ভবত ২০২১ সালের শেষের দিকে) আমার লেখার এক ভক্তপাঠক আমাকে খুঁজে বের করেন ও দেখা করে কথা বলতে চান বলেন। আর সেটা, আমার লেখা তিনি নিয়মিত পড়েন তাই সেই সুত্রে। পরে জানতে পারি দাদা তাঁর-ই হেফাজতে ও তত্বাবধানেই থাকেন। আর সেই সন্ধ্যাতেই আমার সাথে দাদার প্রথম দেখা হয়।  সেই থেকে দাদা আজ মারা যাবার আগে পর্যন্ত হয়ত পাঁচ-ছয়বার দেখা হয়েছে, কখনও লম্বা কথা হয়েছে।

ইম্প্রেশন বা একজন এমন মুরুব্বি মানুষকে পেয়ে যেমন হয় তেমনই। দাদা-রা  পাকিস্তান আমলের তরুণদেরও নেতা, যারা নিজেদের পড়াশুনা শেষ করেছেন পঞ্চাশের দশকের শেষেই। পুর্ব-পাকিস্তান তখন মুসলিম লীগের জমানা, রাজনীতির প্রধান ধারা। যেটা আবার কেটেও যাচ্ছে! এর ভিতর তরুণদের নেতা তারা সেকালের যেটা জনপ্রিয় রাজনীতি সমাজতন্ত্র এর স্বপ্নে বিভোর নেতা তারা – যদিও কার্যত স্বাধীন বাংলাদেশ এরই এক জাতিরাষ্ট্র  কায়েম তাদের ইমিডিয়েট মূল স্বপ্ন। তবে সবচেয়ে তাতপর্যপুর্ণ ঘটনাটা হল, দাদা  -না মস্কো না পিকিং – কোন বামপন্থি লাইনে যান নাই, এর কোনটাই করেন নাই যদিও জানি পারিবারিকভাবে ভাইয়েরা অনেকে মস্কো রাজনীতি করতেন। অবশ্য অখন্ড পুর্ব-পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি তখনও মস্কো আর পিকিং এভাবে দুভাগে ভাগ হয় নাই, পার্টি বলতে একটাই ছিল। এভাগাভাগি আমাদের এদিকে হয়েছে ১৯৬৪ সালে। দাদা মনে করতেন মস্কো বা পিকিং পন্থি কোন দলই করা যাবে না। এতে সরকারি আক্রমণের স্বীকার হতে হত বেশি আর তুলনামূলক স্বাধীনতা থাকে কম, মস্কো বা পিকিংয়ের ব্যাগ বইতে হয় বেশি।

আসলে অন্যভাবে বললে, দাদা র টার্গেট ছিল সমাজতন্ত্রের চেয়েও এর আগে এক স্বাধীন বাংলাদেশ কায়েম যেটা তো মস্কো বা পিকিং পন্থি কোন কমিউনিস্ট পার্টি করলে বা গড়লে হবে না।  আবার মাস-পার্টি (গণ-আন্দোলনের সংগঠন) হতে হবে ঠিক কোন গোপন দল নয়। তাই মাস-পার্টি হিশাবে আওয়ামি লীগে যোগ দেয়া কিন্তু এর উপরে ভিতর নিজ প্রভাবাধীন এক উপ গ্রুপ (দাদা-দের ভাষায় অগ্রগামী অংশ বা নিউক্লিয়াস) গড়ে নিয়ে চলা। আমার অনুমান ব্যাপারটা এভাবেই ঘটেছিল।  আবার এটা ওপেন সিক্রেটের মত ছিল যে নিউক্লিয়াস থেকে ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট হলে সেক্রেটারি হবে বাকি অংশের থেকে; মানে আওয়ামি লীগ বা  কথিত ‘ডানপন্থি’ অংশ থেকে – এমন একসাথে চলার কালচার তারা ধরে রাখত।   আমার অনুমান শেখ মুজিব এর সবই জানতেন আর দাদাকেও প্রশ্রয় দিয়ে কেবল তিনি নিজেই কেবল তাদের সাথে  যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে আওয়ামি লীগের অন্য নেতারা এটা এলাও করতেন।  আসলে এতে কার্যত শেখ মুজিব ছাত্রদের মধ্য থেকে একটা তুলনায় রেডিকেল ধারা থাকার সুবিধাটা উপভোগ করতেন, সুবিধা ব্যবহার করতেন সমানে আবার নিয়ন্ত্রণও  করতে পারতেন সীমারেখাটা উল্লেখ করে দিয়ে। আজ বলতেই হয় সারা সত্তর দশক জুড়ে এই সাংগঠনিক ও রাজনীতি চর্চার স্টাইল টা সফলই ছিল। যদিও তা ১৯৭২ সালের পরে তা আর থাকে নাই। জাসদ নামে দাদা-রা আলাদা হয়ে যান।  সেটা আমাদের সকলের জন্য এক বিশাল ট্রাজেডি।

আর এটা আমার সৌভাগ্য যে দাদার সাথে মুখোমুখি বসে বলতে পেরেছিলাম যে ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবকে ছেড়ে চলে এসে নয়া দল করারটা তাঁর ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। তেমনটা হলে আজ বাংলাদেশ অন্যরকম হতে পারত!  তাতে লক্ষ্য করেছিলাম, একালে দাদা এসব কথা খুবই মনোযোগ দিয়ে শুনেন। কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেন কম। কিন্তু খুটিয়ে আমার পয়েন্টগুলো বুঝার চেষ্টার খামতি রাখেন না!
এই লেখা অবশ্যই সেসবেরই এখন এক মূল্যায়ন খুলে বসা নয়।

আজ যার দেহ-অবসান ঘটলো – দাদা সিরাজুল আলম খান –  তিনিই এই প্যারালাল ইতিহাসের নায়ক। একটা যুগের কত কিছুরই ইতিহাস, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটা পর্ব” – আজ তেমন এক পর্বের সমাপ্তি ঘটল!
তবে যেকথা বলার জন্য এই লেখায় হাত দিয়েছি তা হল এটা খুবই প্রাথমিক কিছু ইমিডিয়েট প্রতিক্রিয়া। আর এটা বলাই বাহুল্য ও স্বাভাবিক যে আজ দাদার মৃত্যুর পরে আমাদের সমাজের প্রায় সব কোণ থেকেই মূল্যায়নের ঝড় উঠবে! সবারই তার তার দৃষ্টিকোন থেকে কতকিছুই না বলার থাকবে। ভাল-মন্দ দোষ-ভুলের আলাপ থাকবে।

মনে রাখতে হবে, মূল্যায়ন একটা খুবই সাংঘাতিক কাজ! কেন, এত সাংঘাতিক ভাবার কী আছে?
আছে; যেটা মূল্যায়ন করবেন ওর মাপকাঠিটা কিন্তু আপনার উপরও ফিরে প্রয়োগ হবে। কিভাবে মূল্যায়ন করছেন তার ভিতর দিয়ে আপনি কেমন মানুষে সেটাও প্রতিফলিত হবে; লুকানো থাকবে না! তাই মূল্যায়ন সহজ কাজ নয় অবশ্যই! এছাড়া,  আপনি কতটুকু কত গভীরে  ভাবতে পারেন সেই সক্ষমতারও  একটা প্রকাশ এটা!  কাজেই সাবধান!   অনুমান বা গসিপ বা যথেষ্ট চিন্তা করে বলেন নাই এমন সব কথাগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভাল!
এখন আমরা কী তা মনে রাখতে পারব?

যেমন ধরেন লেখা হয় দাদা রাজনীতিতে এক রহস্য পুরুষ! আচ্ছা কোন জায়গাটা রহস্যে ভরা বলেন তো দেখি? নাকি যা আপনি ব্যাখ্যাই করতে পারেন না আপনার সীমাবদ্ধতা সেটা ঢাকতেই এই রহস্য শব্দটা আমদানি করেছেন না তো?  কাজেই আগে আপনি নিজেই ভেবে দেখেন! সেটাই সবার জন্য ভাল না!!!

দাদার প্রতি মনের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি! তার আত্মা শান্তিলাভ করুক!

 

>>>>>
গৌতম দাস

রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

12 thoughts on “সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে এই অনুরোধ্টা রাখতে পারেন

  1. ‘পন্থি’ বিবেচনায় ওনি ভারত প্রভাবিত এক প্রতিবিপ্লবী বৈকি..
    যিনি ভারত-পাকিস্তান এই দুই তরফ থেকে বেহাত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতেন!!
    নিজেকে বিপ্লবী বিপ্লবী ভাব নিয়ে শেষ অবধি ধরে রাখতে গিয়ে খলনায়ক ভনে গেছেন…
    ১৯৪৭ পরবর্তী ভারতীয় উপমহাদেশে সুভাষ বসুর রাজনৈতিক দর্শন যেমন একটি বাহ্যিক বুঝাপড়ার চোরাবালিতে আটকে গিয়েছিল এবং যে জন্য হয়ত: তিনি বেচেঁ থেকেও সক্রিয় এবং প্রকাশ্য হননি ঠিক তেমনি অথচ একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ‘দাদা’ প্রকাশ্যে সক্রিয় হননি কিন্তু ক্ষমতার পালাবদল ঘটাতে ওনার গোপন ভূমিকার কথা শোনা যায়…
    বলে রাখছি এটা তাকে ‘বুঝতে না পারা ‘ ধরণের মূল্যায়ন নয়…

    Like

    1. সবার আগে মন্তব্য লিখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

      এখানে “ভারত প্রভাবিত” আর “প্রতিবিপ্লবী” শব্দ দুইটা নিয়ে কথা বলবঃ

      ১। ভারত প্রভাবিত’ বললে পুরা স্বাধীনতা যুদ্ধ বা পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়া সেটাই তো ভারতের সাহায্য নিয়ে ঘটেছিল। আমাদের প্রায় এক কোটি মানুষকে ভারতের আশ্রয় নিতে হয়েছিল।
      তাই এক ধরণের ভারত সংশ্লিষ্ঠতা তো এর ছিলই। আমার মনে হয় না এটা তেমন কোন অভিযোগ!
      তবে, পরবর্তিতে এর ফলে দাদা ভারতের তল্পীবহক ছিলেন বা হয়েছিলেন কিনা?
      এর বিচার করার ভিত্তিতে আমরা মুল্যায়নটা আগাতে পারি। এটা একটা মাপকাঠি হতে পারে বলে আমার মনে হয়।
      এই বিচারে আমার মনে না কখনও তিনি ভারতের স্বার্থের পক্ষে কাজ করেছেন। মৃত্যুর আগের বছরগুলোতে মানে একালে যখন ভারতীয় প্রভাব বাংলাদেশের তুঙ্গে তখন তিনি কখনও, আমি দেখিনি যে,
      ভারতীয় স্বার্থের পক্ষে কাজ করা অথবা মনোভাব রাখতেন বা দেখিয়েছেন। আর আমার মনে হয় আমাদের জনগোষ্ঠির ব্যাপক অংশের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে এগুলোই আমাদের মুল্যায়নের ভিত্তি হতে পারে।

      ২। প্রতিবিপ্লবী
      এই শব্দটা জাসদ বা দাদার মুল্যায়নের ক্ষেত্রে অনেকীই আনেন দেখেছি। কিন্তু আমি কখনও দেখি নাই তারা শব্দটা আনা জাস্টিফাই করতে পেরেছেন। এমন না পারারই কথা!
      কারণ প্রতিটা ক্ষেত্রেই এমন বক্তার কাছে ‘বিপ্লব’ জিনিষটা কেমন, কী হলে বা থাকলে সেটা বিপ্লব হবে এই একটা আগাম অনুমান কল্পনা বক্তার কাছে আছে। আর সেটার বিরোধী যা কিছু এমন হলেই সেটা ত “প্রতিবিপ্লব” মনে হবেই!
      এখন সবার বিপ্লবের কল্পনা ত একইরকম নয়, তাই কোনটা প্রতিবিপ্লব তিনি বলবেন সেটাও অনেক!
      তবে আমার ধারণা, আমাদের মধ্যে যেমন রাজনৈতিক ধারা-গত নানান ধারার পার্থক্য আছে তেমন কমপক্ষে সেই ভিত্তিতে একেক ধরণের বিপ্লবের (মানে কি হলে বা থাকলে তাকে বিপ্লব বলতে রাজি হবেন) ধারনা দেখা যায়। এই অর্থে মস্কো বা পিকিং ধারার চোখে যা বিপ্লব সেই বিপ্লবের চোখে তো দাদা অবশ্যই প্রতিবিপ্লবী হবেনই! অর্থাৎ কোথায় বসে দেখছেন সেটাই মূল মাপকাঠি। অর্থাৎ এটা হল সবার চোখে না তবে নিজ পছন্দের ধারার রাজনীতির চোখে যা বিরোধী তাই প্রতিবিপ্লবী; এধারণা সমালোচনা গুরুত্বহীন!

      ৩। সুভাষচন্দ্র নিয়ে কিছু একটা বললেন বুঝি কিন্তু কী বললেন তা একেবারেই অস্পষ্ট থেকে গেছে। আপনি চাইলে সুভাষ কেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক তা নিয়ে আমার এই সাইটেই একটা লেখা আছে। দেখতে পারেন আমার অবস্থান!

      ৪। “ক্ষমতার পালাবদল ঘটাতে ওনার গোপন ভূমিকার কথা শোনা যায়…” – ধরণের শোনা যায় ধরণের বাক্য না লিখাই ভাল। শুনেছেন মানে একটা প্রাথমিক অবস্থা, যার পরে এবার খতিয়ে দেখেন; সত্যি কিনা এর নুন্যতম তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেন, তা পেলে এরপর মূল্যায়নে বসেন অন্তত এরপরেই না তা নিয়ে মুখ খোলার একটা অবস্থা তৈরি হবে। এর আগে শোনা কথা আলোচনার যোগ্যই নয়। এক্ষেত্রে তাই আলোচনা আগাবেই না!

      Liked by 1 person

      1. সুভাষ চন্দ্রের কথা এনেছি জাস্ট এপ্রোচ কিংবা ‘কৌশল’ বুঝাতে যেয়ে…
        যেমন ভারত আনুষ্ঠানিক ভাগ হওয়ার পর তিনি বেচেঁ থাকা সত্ত্বেও আর সক্রিয় হননি..
        এখানেও ৭১ এর পরের বাস্তবতায় ‘দাদা’ ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন…
        পার্থক্য শুধু তিনি আড়ালে থেকেও অনেক কিছুতে পাঠ দিতেন….

        সুভাষ বোসের অনেক তথ্য হয়তঃ কখনও জানতে দেওয়া হবেনা..
        তেমনি ‘দাদা’র অনেক তথ্যই হয়তঃ আমাদের জানতে দেয়া হবেনা…
        এখানে ফরহাদ ভাইয়ের(ফ:মযহার) একটি উক্তি তুলে ধরলাম…
        ‘ইতিহাসকে কান ধরে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। ক্ষমতাধরেরা ইতিহাসকে নিজের মত করে রচনা করতে তা করে থাকে।”

        সুভাষ বোস নিয়ে লেখাটি যদি দিতেন….

        Like

      2. সুভাষ নিয়ে কলকাতার যা বুঝাবুঝি তা একেবারেই আবেগী আর উগ্র-জাতিবোধ জাত। এমনিতেই কলকাতা এখনও জানেই না যে সে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতায় আটকে গেছে। দুনিয়া তাকে ছেড়ে আগিয়ে গেছে। একারণে, হিন্দু না মূসলমান কে ভাল ধরণের তর্কে ভাল জমে, মশগুল তারা। আসলে
        ছিপ ফসকে হারিয়ে / পালিয়ে যাওয়া মাছটাই নিশ্চয় সবচেয়ে বড় মাছ ছিল – সেই কথিত বড় মাছটাই হল সুভাষ! আপনিও মনে হচ্ছে কিছুটা প্রভাবিত। যাহোক নিচে লেখাটার লিঙ্ক দিয়েছিঃ
        কলকাতার ‘নেতাজী’ কেন বাংলাদেশের কেউ না – GOUTAM DAS

        কলকাতার ‘নেতাজী’ কেন বাংলাদেশের কেউ না

        Like

  2. স্যার উইকিপিডিয়া তে দেখায় তো রাজ্জাক সাহেবের জন্ম ১৯৪২ ১ আগস্ট। প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান বইতে সিরাজুল আলম খান বলছেন রাজ্জাক তার ১/২ বছরের জুনিয়র

    Like

    1. স্মৃতি থেকে বলেছি, ভুল হতে পারে। সেজন্যই তো সম্ভবত বলেছি। যতটুকু মনে পড়ছে দাদা “একটা চার বছরের তফাতের কথা” বলছিলেন। আর আমাদের সবারই আসল বয়স আর অফিসিয়াল বয়স দুরকম হয়ে থাকে।
      মূল কারণ একালের না সেকালে, ম্যাট্রিকের ফর্ম ফিলাপের সময় আমাদের স্কুল শিক্ষক যেটা জন্ম তারিখ বসায় দেন সেটাই আমাদের অফিসিয়াল জন্ম তারিখ হয়ে যায়। এনিয়ে তাই আপাতত আর কোন তর্ক করছি না। তর্কটা তুলে রাখলাম!

      Like

  3. আপনার অবস্থান সুস্পষ্ট করায় এরপর আপনার লেখা ধরে এগিয়ে যাওয়াটা সহজ হবে আপনার পাঠকদের জন্য। আরেকটা জিজ্ঞাসাঃ আজকাল কোন দৈনিকে আপনার লেখা ছাপছে সেটা জানালে উপকৃত হতাম। ধন্যবাদ !

    Like

    1. আজকাল কোন পত্রিকাতেই আমি লিখছি না। দুটা কারণে, এক প্রগতিশীল বা পোগতিশিল ভায়েরা ভয় পেয়ে সব ধরণের বাধা বা প্রভাব খাটাচ্ছে, না ছাপা হোক এটা চেয়ে সব পদ্ধতিতে হাসিনার ক্ষমতায় বলিয়ান হয়ে বাধা দিচ্ছে। আর দুই. অনেকে অহেতুক ভয় বা ডিএসএ আইনকে উসিলা বানিয়ে নিজেদের অন্যায় কাজকে সাফাই দিচ্ছে। তাই এখন আমার সব লেখার একটাই, যে ভার্সানটা এখানে ছাপা হচ্ছে। তবে আশা করছি অচিরেই অন্তত দুটা পত্রিকায় লেখা আসবে আবার, হলে জানাবো অবশ্যই!

      Like

    2. আজকাল কোন পত্রিকাতেই আমি লিখছি না। দুটা কারণে, এক প্রগতিশীল বা পোগতিশিল ভায়েরা ভয় পেয়ে সব ধরণের বাধা বা প্রভাব খাটাচ্ছে, না ছাপা হোক এটা চেয়ে সব পদ্ধতিতে হাসিনার ক্ষমতায় বলিয়ান হয়ে বাধা দিচ্ছে। আর দুই. অনেকে অহেতুক ভয় বা ডিএসএ আইনকে উসিলা বানিয়ে নিজেদের অন্যায় কাজকে সাফাই দিচ্ছে। তাই এখন আমার সব লেখার একটাই, যে ভার্সানটা এখানে ছাপা হচ্ছে। তবে আশা করছি অচিরেই অন্তত দুটা পত্রিকায় লেখা আসবে আবার, হলে জানাবো অবশ্যই!

      Like

  4. উনি অবশ্যই রাজনীতির রহস্যপুরুষ। নাহলে শেখ মুজিবর রহমানের আমলে বাকি জাসদ নেতারা এত জুলুমের শিকার হওয়ার পর, জাসদের এত নেতাকর্মী হত্যার পরেও উনার কার্যত কিছুই হয় নাই। আর চিত্তরঞ্জন সুরের সাথে উনার এত ঘনিষ্ঠতার রহস্য কি? কমেন্ট দেখলে ব্যাখ্যা করবেন।

    Like

    1. দাদা বা অনেক বড় নেতারই অনেক সময় “কার্যত কিছুই হয় নাইঃ এমন হয় হতে পারে।

      শেখ মুজিব ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে এসে অনেক মুসলিম লীগার বড় নেতা যারা সাধারণ্যে রাজাকার তাদের জন্যও এমন করেছিলেন; এমনই হয়ে থাকে। তিনি শাহ আজিজ বা সবুর খানের মত নেতাদের বেলায় এমন ভাল ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করেছিলেন।
      এর মূল কারণ এরা সকলে শেখ মুজিবের মুসলিম লীগ করা জীবনের কমরেড! রাজনীতিক নেতা জেলে চলে গেলে ফেলে রেখে যাওয়া পরিবারের কী অবস্থা হয় এব্যাপারে এদের সবার স্মৃতি একই! ফলে যতই রাজনৈতিক বিরোধ বা মতপার্থক্য হোক না কেন তা পাশে সরিয়ে একটু জায়গা বের করে তারা ব্যক্তিজীবনের ঘনিষ্ঠতার দিক টাকে পরস্পর এর কাছে মেলে রাখতে চান। তবে এজন্য অবশ্যই রাজনৈতিক মতপার্থক্য কমে যায় না।

      মানুষের জীবনের বহুবিধ দিক, বহু স্তরে তা বিন্যাস্ত থাকে সেটা বুঝতে চেষ্টা করতে পারেন! মানুষের জীবন জটিল, তার দায় অনেক…।

      Like

      1. দাদা বা অনেক বড় নেতারই অনেক সময় “কার্যত কিছুই হয় নাই”- এমন হয়, হতে পারে।

        শেখ মুজিব ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে এসে অনেক মুসলিম লীগার বড় নেতা যারা সাধারণ্যে রাজাকার বলে চিত্রিত তাদের জন্যও এমন করেছিলেন; এমনই হয়ে থাকে। তিনি শাহ আজিজ বা সবুর খানের মত নেতাদের বেলায় এমন ভাল ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করেছিলেন। যেমন জেলে ভাল আছে কিনা; বয়স্কের জীবনে অসুখে ওষুধ ঠিকমত পাচ্ছেন কিনা অথবা বাসায় বাজার হচ্ছে কিনা ইত্যাদি।
        এর মূল কারণ এরা সকলেই ছিলেন শেখ মুজিবের মুসলিম লীগ করা জীবনের কমরেড! রাজনীতিক নেতা জেলে চলে গেলে ফেলে রেখে যাওয়া পরিবারের কী অবস্থা হয় এব্যাপারে এদের সবার স্মৃতি একই! ফলে যতই রাজনৈতিক বিরোধ বা মতপার্থক্য হোক না কেন তা পাশে সরিয়ে একটু জায়গা বের করে তারা ব্যক্তিজীবনের ঘনিষ্ঠতার দিক টাকে পরস্পর এর কাছে মেলে রাখতে চান। তবে এজন্য অবশ্যই রাজনৈতিক মতপার্থক্য কমে যায় না।

        মানুষের জীবনের বহুবিধ দিক, বহু স্তরে তা বিন্যাস্ত থাকে সেটা বুঝতে চেষ্টা করতে পারেন! মানুষের জীবন জটিল, তার দায় অনেক…।

        Like

Leave a reply to Ikram 18 Cancel reply