জয়শঙ্করের কাছে এখন ‘আঙুর ফল টক’!
গৌতম দাস
০৬ জুলাই ২০২৩
https://wp.me/p1sCvy-4Gw
সময়ে কারও কাছে আঙুর ফল খুবই টক মনে হয় কারণ আঙুর হাতের নাগালে না আসা বা লাভ করা দুষ্প্রাপ্য বা নিজ অযোগ্যতা; তাই এমন কথা বলে চালিয়ে দেওয়া। ঠিক যেমন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কাছে এখন ‘আঙুর ফল টক’ হয়ে গেছে ।
তিনি দাবি করেছেন, “নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বকালে “প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত সবচেয়ে কম জড়িয়েছে“। প্রতিবেশীদের কাছে এখন ভারতের পরিচয় স্থিতিশীলতার স্থায়ী প্রতীক হিসেবে”। মানে জয়শঙ্কর এখন আমাদের বিশ্বাস করতে বলছেন যে মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বকালে মানে গত নয় বছরে অন্তত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মোদি ভারত সবচেয়ে কম জড়িয়েছে!!!!! আচ্ছা, এ তো বড় আজিব বাত!
তাহলে মোদির সাম্প্রতিক আমেরিকা সফর যা ছিল ২১-২৪ জুন – এই সময়কালের সপ্তাহেরও বেশি আগে থেকেই, ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের প্রমোটেড ঘরে বসে বানানো রিপোর্ট ভারতে যারা ছাপে (মূলত হিন্দুস্তান টাইমসের রেজাউল লস্কর অথবা শিশির গুপ্তা এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী) আর বাংলাদেশের প্রথম আলোও – এরা সকলে মিলে অন্তত তিনবার ঝলক উঠিয়ে কেন প্রপাগান্ডা করল যে বাংলাদেশের হাসিনার ভাগ্য নাকি মোদির আমেরিকা সফরে মোদি-বাইডেনের এর আলাপের মধ্যেই নির্ধারিত হবে????
এখন প্রশ্ন হল কে মিথ্যা বলছে?
দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী লিখেছিল, “ভারতের দুই প্রতিবেশি দেশ বছর শেষে নির্বাচনে যাচ্ছে। ভারত চায়, আমেরিকা এমন কোন উদ্যোগ যেন না নেয় যাতে ভারতের নিজস্বার্থ তাতে ক্ষুন্ন হয়ে যায়”। ভারতের নিজস্বার্থ মানে – আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হাসিনাকে আরেকবার জবরদস্তিতে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার উপর বাধা সৃষ্টি – এটা বুঝতে হবে। কারণ, ভারতের সব মিডিয়া এই অবস্থান নিয়েই খোলাখুলি লেখা ছেপে চলেছে। আর আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি উপদেষ্টা (NSA) জ্যাক সুলিভান [Jake Sullivan] ভারতে এসে ভারতের NSA অজিত দোভালের সাথেকার আলোচনায় নাকি এমন আলোচনা হয়েছে বলে দীপাঞ্জন দাবি করেছেন।
“Two of India’s neighbours –Maldives and Bangladesh will go to polls later this year and early next year respectively. India is of the opinion that no initiatives should be launched in its neighbourhood that impacts its national interests adversely.”
হিন্দুস্তান টাইমসের রেজাউল লস্কর লিখেছেন, “বাংলাদেশ-আমেরিকার সম্পর্ক একটা চাপের মধ্যে ঝাকুনিতে পড়েছে। রাষ্ট্রদুত পিটার হাস বারবার করে আগামি নির্বাচন যেন অবাধ ও স্বচ্ছ হয় এর আহবান জানাচ্ছে।” [“…Peter Haas, repeatedly calling for the holding of a free and transparent general election”] যখন ইতোমধ্যেই আমেরিকা বাংলাদেশের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত যে নিজেকে এই অঞ্চলের এক পরাশক্তি বলে মিথ্যা করে হলেও ফুটানি করে ভাব দেখাতে চায় – সেই ভারতের কাছে নাকি হাসিনার সাহায্য চেয়েছে। [“Bangladesh has sought India’s assistance to tide over a rough patch in its relations with the US, especially over the conduct of elections in the neighbouring country, people familiar with the matter said on Tuesday.”]
প্রথম আলোর প্রচেষ্টাঃ
আর রেজাউল লস্করের এই রিপোর্টারই উধৃতি দিয়েই আমাদের প্রথম আলো এক রিপোর্ট ছেপেছিল। যেন বাংলাদেশের সরকার ও তার সমর্থক এবং যারা ভারতের স্বার্থের ভিতরেই নিজস্বার্থ দেখে অথচ থাকে বাংলাদেশে – এমন গোষ্ঠিগুলোকে মিথ্যা করেই আস্থার কথা শোনাতে চেয়েছিল – এই অপ্রমাণিত কেবল জল্পনা-কল্পনার খবর (?) ছেপে উত্তেজনা সৃষ্টি করার মাধ্যমে!
তবে এখানে ভারতের জ্ঞোয়েন্দা বিভাগ ও প্রথম আলোকে দেয়া তাদের এসাইনমেন্ট এর উদ্দেশ্য খুবই পরিস্কার। যেমন প্রথম আলো লিখছে, “…হিন্দুস্তান টাইমসের সূত্র বলছে, নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনায় একটি মুক্ত ও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের গুরুত্বের দিকে ইঙ্গিত করেছে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে—এমন সম্ভাবনার ওপরও আলোকপাত করেছে তারা“।
অর্থাৎ ভারত আমেরিকাকে চীনা জুজুর ভয় দেখাচ্ছে যে, যদি আমেরিকা তোমরা বাংলাদেশের আগামি নির্বাচন যেন অবাধ ও স্বচ্ছ হয় – এই উদ্দেশ্যে হাসিনা সরকারকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা-সহ নানান উপায়ে চাপ সৃষ্টি করতেই থাকো তাহলে নাকি হাসিনা চীনের কোলে গিয়ে উঠে পড়তে পারে! মানে আরেকবার রাতের নির্মাবাচন করতে দাও – এই হলো ভারতের অদ্ভুত আবদার!!! ভারত এই কথিত চীনা-জুজুর মিথ্যা ভয়ের কথা ছড়িয়ে হাসিনাকেই আরেকবার ক্ষমতায় রেখে দিবার পক্ষে কথা তুলতে চাচ্ছে।
আচ্ছা তাহলে এটাই কী জয়শঙ্করের কথিত ” প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত সবচেয়ে কম জড়ানো – কী তামাসা! আমরা কী প্রথম আলোর পারফরমেন্সে অভিভুত – এটা বলে উঠব!!!
আরো আছেঃ
প্রথম আলোর নয়াদিল্লির প্রতিনিধি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সৌম্যের লেখা প্রথম আলোতে কখন কী পরিচয়ে ছাপা হবে এর তাল-ঠিকানা পাওয়া মুশকিল। যেমন কখনও তাঁর লেখা ছাপা হচ্ছে মতামত হিশাবে, কখনও নাম ছাড়াই শ্রেফ ‘নয়াদিল্লির প্রতিনিধি’ এভাবে পরিচয় লিখে; নয়ত প্রকাশ্যে নিজের নাম উল্লেখ করেই!! গত ১৮ জুন সৌম্যের একটা লেখা ছাপা হয়েছিল; মানে মোদি-বাইডেন সরাসরি বা সামিট বৈঠক হয়েছিল ২৩ জুন – এর পাঁচদিন আগের ঘটনা সেটা। অর্থাৎ মোদির আমেরিকা রওয়ানা দিবার আগেই। সে লেখার সারকথা ছিল মোদি-বাইডেন বৈঠকে নাকি বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গ উঠছেই। এমনকি এভাবে লেখা হয়েছিল যে, “……সন্দেহ নেই, মোদি-বাইডেন বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের মন বোঝার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে বাংলাদেশের নির্বাচনী গতিপ্রকৃতি”। অর্থাৎ সোজাকথায়, বাংলাদেশের বা হাসিনার নির্বাচনী ভাগ্য নির্ধারিত হবে মোদি-বাইডেন বৈঠকে!!!!!
সৌমের ১৮ জুনের লেখায় আরো বলা হয়েছিলঃ
এক.
“দিল্লি ও ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই চুক্তির দিকে দুই দেশের নজর যতটা নিবদ্ধ, ততটাই আগ্রহে এই সফরের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ। সে দেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচন ‘সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ’ করে তুলতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নতুন যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, যা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি এই মুহূর্তে সরগরম, সে বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি”।দুই.
“নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নিরন্তর চাপ, নতুন ভিসা নীতির মধ্য দিয়ে যা প্রতিফলিত, বাংলাদেশ তো বটেই, ভারতকেও তা খানিকটা অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছে। ওই নীতির রূপায়ণ, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে তার সম্ভাব্য প্রভাব এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন ভারতের অস্বস্তি ও চিন্তার কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের এই নয়া ফরমান নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহল পরস্পরের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছে। বাংলাদেশকে এই বিষয়ে আশ্বস্তও করা হয়েছে যে আসন্ন সফরে এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি অবশ্যই মতবিনিময় করবেন”।
তাহলে আজ ৫ জুলাই মানে মোদির সফর শেষে ১১/১২ দিন পরের। তবু ২৩ জুন মোদি-বাইডেন বৈঠক শেষ হয়ে গেলেও এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মোদি-বাইডেন বৈঠকে আসলেই কী আলোচনা হয়েছিল এসব নিয়ে ভারতের সকল মিডিয়া বা আমাদের প্রথম আলো …… অথবা কেউই না; সবাই চুপ হয়ে আছে আর মুখে কুলুপ! না সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় এর কোন লেখা ??? সবাই মুখে কুলুপ এঁটে গায়েব, ডিসাপিয়ার্ড!!
তবু ২৩ জুন মোদি-বাইডেন বৈঠক শেষ হয়ে গেলেও এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মোদি-বাইডেন বৈঠকে আসলেই কী আলোচনা হয়েছিল এসব
নিয়ে ভারতের সকল মিডিয়া বা আমাদের প্রথম আলো …… না সবার মুখে কুলুপ; না সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় এর কোন লেখা ??? সবাই মুখে কুলুপ এঁটে গায়েব, ডিসাপিয়ার্ড!!
আগের দুসপ্তাহ ধরে মিথ্যা চাপাবাজির সব রিপোর্ট ছাপিয়ে ২৪ জুন থেকে আজও সবাই লুকিয়ে পড়ে আছে!!! আহা! কী সুবিধা!!!
এখানেই শেষ নয়ঃ
এরপর আবার সেই সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনি হাজির! কিন্তু নতুন বেশভুষায়! আর এবার একই প্রথম আলোতে গত ২ জুলাই তার লেখার শিরোনাম কিন্তু এবার একেবারে উলটা কথায় – “প্রতিবেশী রাজনীতিতে ভারত কম জড়াচ্ছে, বললেন জয়শঙ্কর”। আর সবচেয়ে বড় কথা এটাও ঘরে বসে এক বানানো খবর! আচ্ছা কন তো সৌম্য এটা একটা কথা হইল? নিজের মান-সম্মান বিশ্বাসযোগ্যতা এগুলো কিছুই না??? টাকাই সব!
আপনি সৌম্য এতদিন কইলেন বাংলাদেশের বা হাসিনার নির্বাচনী ভাগ্য নির্ধারিত হবে মোদি-বাইডেন বৈঠকে! – মানে ২৩ জুনের বৈঠকে, মানে প্রধানমন্ত্রী মোদির সরাসরি বাংলাদেশের বা হাসিনার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবেন!! আর এখন এখানে কইতেছেন,জয়শঙ্কর বলেছেন – প্রতিবেশী রাজনীতিতে ভারত কম জড়াচ্ছে…।
তাইলে সৌম বা প্রথম আলো আপনারা বলেন আপনাদের কোন কথাটা সঠিক????
আপনাদের দুইটা কথার একটা তো অবশ্যই মিথ্যা কথা, এটা নিশ্চিত!
কোনটা নিশ্চিত মিথ্যাঃ
প্রথম আলোতে ২ জুলাই ছাপা হওয়া সৌমের লেখাটার শিরোনাম – প্রতিবেশী রাজনীতিতে ভারত কম জড়াচ্ছে – গুগল সার্চে দেখা গিয়েছে এটা ভারতে কোথাও ছাপা হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। আর এই বানানো খবরটা বাংলাদেশে কেবল যুগান্তর, কালবেলা আর মানবজমিনে মাত্র; মানে বাংলাদেশেও আর কোন মিডিয়ায় ছাপা হয় নয়। আর এরচেয়েও তাজ্জব ব্যাপারটা হল, এটা প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে নয়াদিল্লি প্রতিনিধি হিশাবে সৌমের নিজস্ব রিপোর্ট হিশাবে। মানে সৌম নিজেই সোর্স! তাহলে সে একই লেখা যুগান্তর, কালবেলা [পরে আবিস্কার হল যে সে স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে তার খবরটা প্রথম আলোরটাই মানে ওটার কপি] আর মানবজমিনে ছাপা হয় কী করে??? খবর ছাপলে যে সোর্স বলতে হয় যেন তারা এটা জানেই না। তাই যেন এরা এই দুই মিডিয়া কেউই তাদের খবরের সোর্স কী তা লেখেই নাই। বাংলাদেশের জার্নালিজমে সবচেয়ে বিপদজনক এক ধারা শুরু হয়েছে সোর্স-রেফারেন্স ছাড়া রিপোর্ট ছাপা অথবা আরো বিপদজনক এক শব্দ তারা লিখে – “ডেস্ক রিপোর্ট”! অথচ জার্নালিজমে ডেস্ক রিপোর্ট(!) বলে কিছু কী আছে? হতে পারে না। তবে বাংলাদেশে এর মানে হল, অন্য মিডিয়া থেকে কপি করে এনেছে কিন্তু অসততা করে দেশি-বিদেশি সেই মিডিয়ার নামটাও বলতে চায় না। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিকটা হল – ডেস্ক রিপোর্ট মানে খবরের সোর্স বলে কিছু নাই (মানে পুরাটাই মিথ্যা বা গুরুত্বপুর্ণ কোন শব্দ বা বাক্য বদলে দেয়া টুইস্ট নিউজও তা হতে পারে) অথচ একে মিডিয়া রিপোর্ট আর জার্নালিজম বলে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে!! আর প্রথম আলো এই নষ্ট-সাংবাদিকতার নেতা উদ্গাতা!
আরো গভীরে যাইঃ
সৌমের প্রথম আলোতে ২ জুলাই ছাপা হওয়া লেখা এটা কী এর আগের দিন বা আগের এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটে যাওয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কোন প্রেস ব্রিফিং বা কোথায় দেয়া বক্তব্য???
জবাব হল – না একেবারেই না। সৌম্য রিপোর্টে কেবল লিখেছেন, “……রাজধানী দিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে নরেন্দ্র মোদির শাসনের ৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের ‘সাফল্য’ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। কিন্তু কোথাও কবে জয়শঙ্কর একথা বলেছেন সে প্রসঙ্গে সৌম লিখেছেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত শুক্রবার এ মন্তব্য করেন। কিন্তু গুগল সার্চে এই রিপোর্টটা এক প্রথম আলোতে সৌম্যের লেখা ছাড়া আর কেউ লিখে নাই বা কোন পত্রিকা নিজে রিপোর্ট লিখে ছাপে নাই। আর আগেই বলেছি বাংলাদেশের যেদুই একটা মিডিয়া এটা ছেপেছে তা তারা প্রথম আলোর নাম উল্লেখ করে বা না করে মানে সোর্স উল্লেখ না করেই ছেপে দিয়েছে। আর কোন “এরেঞ্জমেন্ট” থাকলে সেটা গোপন রেখে দিয়েছে।
কেন আর কোথাও (ভারতে বা বাংলাদেশে) সৌম্যের লেখা এই রিপোর্ট এর বিষয়ে রিপোর্ট নাইঃ
ভারতের কেন্দ্র সরকার বা সংসদের নির্বাচন আর সাত-আট মাস বাকি; মোটামুটি বললে আগামি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এর শুরু হতে পারে। ফলে জয়শঙ্কর-মোদি সহ সরকারের সকলের সব কাজকর্ম এখন নির্বাচন-মুখি বা মোদির ইমেজ বাড়ানোকে লক্ষ্য করেই আগাচ্ছে। তাই গত নয় বছরে দেশে-বিদেশে মোদির সাফল্য কী – দেশের মুখ-উজ্জ্বল কী করেছেন এনিয়ে প্রপাগান্ডায় নেমে গেছেন জয়শঙ্কর! তাই তিনি এক বক্তৃতা আয়োজন করেছিলেন। আর সেখানেই দিয়েছিলেন এমন কিছু বক্তব্য। কিন্তু প্রথম কথা সেটার তারিখ কবে??? ওর তারিখ ছিল ৮ জুন। কীভাবে বের করলাম?
অনেক খুজাখুজির পরে দেখা গেল মোদির নয় বছরের সাফল্য আর জয়শঙ্করের বক্তব্য এদুই শব্দে মিল আছে এমন একটাই ইংরাজি রিপোর্ট আছে – যা ভারতের প্রায় সবাই ছেপেছে। যদিও স্বভাবসিদ্ধ ভাবে মোদি-বিজেপি এই প্রপাগান্ডা খবরটাকে টুইস্ট করেছে কুখ্যাত ANI কে দিয়েও। অনেকে সেটাই ছেপেছে। যেমন দ্যাপ্রিন্ট এর লেখা। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস্র লেখা। ইত্যাদি। আর এর বাইরে এক মিডিয়া যা আমার নজরে এসেছে তা হলো “লাইভ-মিন্ট” – এই কম চলা পত্রিকার রিপোর্টটা ভাল- এটা সরকারি এজেন্সি পিটিআই এর নিউজ। কিন্তু গুরুত্বপুর্ণ হল এসব খবরই ভারতে প্রকাশিত হয়েছে ৮ জুন তারিখের; মানে যেদিন জয়শঙ্কর তা বলেছেন।
তাহলে কী ৮ জুন তারিখে প্রকাশিত জয়শঙ্কর এর বক্তব্য প্রসঙ্গে কী জয়শঙ্কর আবার পরবর্তিতে পয়লা জুলাই তারিখে এসে তিনি একই বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বলেছেন??? কারণ সৌম্যের রিপোর্টের দাবি এই তারিখ ১ জুলাইয়ের!!!! এটা একেবারেই অবিশ্বাস্য!!! কারণ, যে প্রশ্নের উত্তর নাই তা হল, সেক্ষেত্রে কেন ভারতের আর কোন মিডিয়ায় জয়শঙ্করের এই কথিত ১ জুলাইয়ের মিডিয়ার সাথে কথা বলা নিয়ে ভারতে কোন রিপোর্ট কেউ ছাপে নাই কেন??? এটা বেশ অস্বাভাবিক, বিশ্বাস অযোগ্য!!!
তাহলে সৌম্য বন্দোপাধ্যায় ১ জুলাই জয়শঙ্কর এমন সব কথা বলেছেন বলে দাবি করে রিপোর্ট লিখলেন কেন??? এর কোন ব্যাখ্যা নাই।
তবে, খুব সম্ভবত একাজ করার কারণ হল কংগ্রেস দল। আসলে জয়শঙ্কর খুব সম্ভবত আবার একই প্রসঙ্গে – ফিরে নতুন করে কিছুই বলেন নাই। কিন্তু কংগ্রেস দল চায় জয়শঙ্করের বক্তব্যকেই একটু সমালোচনা করতে যা বাংলাদেশে প্রকাশিত হবে। আর তাই সৌম্যের ঐ ভুয়া রিপোর্টে যার মধ্যে (বাড়তি হিশাবে) কলকাতার বাঙালি এক সাবেক কূটনীতিক দেব মুখোপাধ্যায় এর বরাতে কিছু সমালোচনা ছাপা হয়েছে। যেখানে তিনি “তিস্তা চুক্তি না হওয়া” আর “অখণ্ড ভারতের মানচিত্র” মোদি প্রকাশ করেছে বলে – এনিয়ে অসন্তোষ উষ্মা প্রকাশ করেছেন। যদিও ফ্যাক্টস হল, ভারত বাংলাদেশ থেকে করিডোর নিয়েছে কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিয়েও তিস্তা পানি আজও দেয় নাই – এর প্রথম ভায়লেটর (২০১১ সালে বাংলাদেশে সফর) বা লঙ্ঘনকারী সেসময়ে কংগ্রেসেরই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তাঁর ক্ষমতাকালের ও ২০১১ সালে মনমোহনের বাংলাদেশ সফরকালে এটা উন্মোচিত হয়েছিল যে ভারত তিস্তা পানিচুক্তি ভঙ্গ করছে। দেখুন সেসময়ের বিবিসি রিপোর্ট। আর সেই একই ভায়োলেটর পরের প্রধানমন্ত্রী মোদি – এই ফ্যাক্ট তো লুকানো যাবে না। সে যাই হোক তাহলে, সৌমের এই রিপোর্ট কী মোদির নয়, কংগ্রেসের অর্থে লেখানো??? প্রথম আলো অর্থের লোভে এই জুয়াচুরি-সাংবাদিকতা করেছে???
শেষ কথাঃ প্রথম আলোতে ছাপা সৌম বন্দোপাধ্যায়ের ২ জুলাইয়ের এই রিপোর্ট অস্পষ্ট রহস্যময়ই থেকে গেল!
আপডেটঃ ৭ জুলাই ২০২৩; দুপুর ১২ঃ ৩৪
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com


