প্রগতিশীলতা, এবারেও কী গুম-খুনের রাষ্ট্রের পক্ষে সাফাইদাতা…


প্রগতিশীলতা, এবারেও কী গুম-খুনের রাষ্ট্রের পক্ষে সাফাইদাতা…
গৌতম দাস

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
https://wp.me/p1sCvy-53L

           গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কান্না

প্রগতিশীলেরা [প্রগ্রেসিভ] ভোল বদলে এখন ভোটাধিকার ও কথাবলার স্বাধীনতার দাবিতে নব রূপে উঠে আসার চেষ্টা করছে। বলেছিলাম, প্রগতিশীলতা আর আধুনিকতা এক কথা নয়। সমগোত্রের ধারণা নয়, একই ঘরানার চিন্তা নয়। ফলে প্রগতিশীলতা আধুনিক রিপাবলিক রাষ্ট্র চিন্তারই কেউ না। রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার পক্ষের কোন চিন্তা ও অবস্থান প্রগতিশীলতা নয়; প্রগতিশীলদের এমন কোন চিন্তা ও অবস্থান নাই। তাই অধিকার, স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ ইত্যাদি এগুলোর একটাও প্রগতিশীল রাজনীতিই নয়। এমনকি এর আরো একেবারে গোড়ার কথা, ‘নাগরিক’ [citizen] ধারণা বা তা থেকে ‘নাগরিক প্রতিনিধিত্ব’ বা রিপ্রেজেন্টশন [representation] এর ধারণার সাথে ‘প্রগতিশীলতার’ কোন সম্পর্ক নাই। এককথায় কমিউনিষ্ট-প্রগতিশীল চিন্তায় ‘নাগরিক’ [citizen] বলেই কিছু নাই।

যদিও প্রগতিশীলেরা বিপদে পড়লে যা তাদের নীতিগত চিন্তা বা অবস্থান নয় তা সত্বেও ওর পক্ষে ভেক ধরে দাঁড়িয়ে যায়; যেমন, রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার রাজনীতির পক্ষে যেন সে একটা সৈনিক এভাবে, দাঁড়িয়ে যায়। তবে, চাপাচাপিতে পড়লে জিজ্ঞাসার জবাবে তখন তাঁরা একাজকে তাঁদের  কৌশলগত অবস্থান নেয়া বলেও স্বীকার করে নেয়। এমন এসব কৌশলগত কারণে নেয়ার সময়-সুযোগে তাঁরা নাগরিক, কনষ্টিটিউশন, অধিকার এমনকি “গণতন্ত্র ধারণার” পক্ষে দাঁড়িয়ে তাঁদের  ভেক ধরে  কথা বলার অবস্থান – সেটা তারা স্বীকার করে নেয়। এমনকি  একারণে, যে নিজেকে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল বলে মনে করে সেও আবার কনষ্টিটিউশন (প্রণয়ন বা রাষ্ট্রগঠন) নিয়ে বকোয়াজি বা বকাবাদ্য করে থাকে। যদিও কোঙ্কমিনিস্টের এমন আচরণ করা অর্থহীন, কোন মানে হয় না।  কারণ, কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল মানে তো সে শ্রেণীর রাষ্ট্র এই বুঝের পক্ষের লোক;  মানে সে তো একই সাথে রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার পক্ষের লোক সে হতে পারে না। ঠিক যে কারণে, প্রাকটিসিং কমিউনিস্ট-ব্যারিস্টার বা কমিউনিস্ট এডভোকেট দেখা যায় না। দুটার একটা তাকে ব্যবহারিকভাবে ছেড়ে দিতেই হয়। যেমন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ব্যারিস্টার হয়ত কিন্তু নন-প্রাকটিসিং!  অনেকে অবশ্য ব্যাপারটা না বুঝে বা না উপলব্দি করে কার্যত একটা বাদ দিয়ে দেয়। কমিউনিজমে নাগরিকো নাই, নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকারের ধারণাও নাই; শ্রেণীর একনায়ক ক্ষমতার ধারণা আছে। অধিকারের ধারণাই যদি না থাকে তো কমিউনিস্ট আদালতে গিয়ে কী করবে??? এটা যে উপলব্দি করে তার আর আদালতে যাবার কোন কারণ থাকে না!   তবু অবশ্য এটা অনেকেই এভাবেই প্রগতিশীলও থেকে যেতে চায়, মনে মনে!  কিন্তু কেন অথবা অন্যভাবে বললে – কেন অধিকার, স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ ইত্যাদি এগুলো একটাও প্রগতিশীল চিন্তা ও রাজনীতিই নয় বলছি ও বারবার তুলে ধরছি?

কারণটা অনেক লম্বা, একেবারে হিন্দুত্ববাদ পর্যন্ত! প্রগতিশীলতা [progressive] মানে যার গুরু হল কমিউনিজম; কমিউনিজমকে লিবারেল বা নরম করে হাজির করা ভার্সানই প্রগতিশীলতা। আর সবচেয়ে বড় কথা প্রগতিশীলতা মানে ধর্ম কোপানো যা মূলত ইসলাম কোপানো; এক চরম ইসলামবিদ্বেষী ও ঘৃণা ছড়ানি চিন্তা – যা সে কমিউনিজম থেকে নিয়ে থাকে।  অনেকেই সেকারণে প্রগতিশীল অবস্থান সে কমিউনিজম থেকে নিয়েছে বা পেয়েছে দাবি করে ও সরাসরি এমন সাফাই-ই হাজির করে থাকে। আবার, প্রগতিশীলতার বড় ভাই কমিউনিজম বলেই তো প্রগতিশীলরা  নিজেকে কথিত ডানপন্থিদের [নিজেকে বামপন্থি মনে করলে কেউ সেই সাপেক্ষে অন্যকে বা নিজ বিরোধীদেরকে ডানপন্থি বলা সম্ভব]  চেয়ে উপরে নিজেকে এক অগ্রসর চিন্তা [শ্রেষ্ঠ ও অগ্রগামি] – প্রগ্রেসিভ চিন্তা বলে দাবি করে। এসব কারণে, কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চিন্তাই প্রগতিশীলদেরও রাষ্ট্রচিন্তা।  তাই প্রগতিশীলদের রাষ্ট্র চিন্তার স্বরূপও হল – এক গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদির এক রাষ্ট্রচিন্তা। যা মূলত এক কমিউনিস্ট রাষ্ট্রচিন্তা।  আবার প্রগতিশীলতার ইসলামবিদ্বেষী ও ঘৃণা ছড়ানি রূপ-বৈশিষ্ঠের কারণে এদের ঘাড়ে চড়েই – প্রগতিশীল সেজে হিন্দুত্ববাদ বাংলাদেশে প্রবেশ ও অবস্থান করতে থাকে।  প্রগতিশীলেরাও সেটা জেনে এবং কেউবা না-জেনে এমন প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। আর এমন হবার পিছনের কারণ, তারা হিন্দু আর হিন্দুত্ববাদ মাখায় ফেলে দুটাকে একই মনে করে। আবার অন্যদিকে বাংলাদেশের হিন্দু মানেই যেন সে মুসলমানের হাতে ভিকটিম তা স্বতঃসিদ্ধ ধরে নেয়! এখন প্রগতিশীলেরা আবার তাদের অনুমিত ভিকটিম হিন্দুর পক্ষে দাঁড়ানোটাই প্রগতিশীলতার প্রমাণ  দেখানোর সুযোগ মনে করে থাকে। তাতে, একাজটা হিন্দুত্ববাদকে ডেকে এনে জামাই আদরে আসন গেড়ে বসানো হলো কিনা অথবা হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি করা হলো কিনা সেসব দিকে এরা বেখবর থাকে! অথচ হিন্দুত্ববাদ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এক বড় শত্রু! আর এসবের ফলেই প্রগতিশীলতা=হিন্দুত্ববাদ হয়ে দাড়িয়েছে!

আপনার ধর্ম মেনে চলতে বা পালন করতে অনীহা আছে বা আগ্রহ নাই, এটা হতেই পারে। সেটা একান্তই আপনার আল্লাহ-ভগবানের সাথে আপনার বুঝাবুঝির বা শাস্তি ভোগ করা না করার বোধের মামলা। সেটা নিয়ে কী করবেন, আদৌও কিছু নাও করতে পারেন এমন ইত্যাদি সব একান্তই আপনার! কিন্তু সেজন্য এটা আপনাকে কোন ধর্মবিদ্বেষ বা  চরম ইসলামবিদ্বেষী ও ঘৃণা ছড়ানি ততপরতা করার সার্টিফিকেট দেয় না, তা নয়ও বা হতে পারে না। ধর্ম চর্চা-পালন করতে না চাওয়া আর ধর্মবিদ্বেষ রাখা – এদুইটার মধ্যে আকাশপাতালের  ফারাক। আপনি যেকোন ধরণের ইসলামিজম বা কোন ইসলামি ব্যাখ্যায় রাজনীতি খাড়া করার বিরোধী হতেই পারেন। এমন রাজনীতি আপনার অপছন্দের তা হলেই পারে।  কিন্তু সেজন্য আপনাকে প্রগতিবাদী হতে হবে কেন? বা আপনাতেই আপনি প্রগতিবাদী হয়ে যাবেন না। এমন কোন সম্পর্কই নাই। তাই  বাইনারী [binary] বানাবেন না যে হয় ইসলামি রাজনীতির লোক আর না হলে তো আপনি প্রগতিবাদী! ব্যাপারটা এমন নয় তাই এমন বানাবেন না, ধরে নিবেন না। বাস্তবত এরা বাইনারি নয়,  কারণ এদুইয়ের বাইরে বহুকিছু আছে। আবার নিজ ইসলামবিদ্বেষ আড়াল করতে প্রগতিবাদী সাজা সেটাও একটা অপরাধ!  ইসলামি রাজনীতি না হলে প্রগতিবাদ এমন, দুইটারই বাইরে আপনার জন্য একটা ভাল নুন্যতম অবস্থান হতে পারে রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার পক্ষে দাঁড়ানো!  র কেবল তখনই আপনার ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশ বা কথাবলার স্বাধীনতা ইত্যাদির দাবিতে শুধু শাহবাগে না শাপলা চত্তরে দাড়ানোটাই গভীর অর্থপুর্ণ হবে। 

 

প্রগতিশীলতা=হিন্দুতাবাদ বানাবেন না। আবার  যেকোন ইসলামি রাজনীতির বিরোধিতায় প্রগতিশীলতা –  এভাবে (ইসলাম বনাম প্রগতিশীলতা) এদের বাইনারী বানাবেন না। মানে যেন, হয় ইসলামি রাজনীতি না হলে প্রগতিবাদ! কারণ এদুইয়ের বাইরে বহুকিছু আছে। আর নিজ ইসলামবিদ্বেষ আড়াল করতে প্রগতিবাদী সাজাও একটা অপরাধ!  তবে একটা ভাল নুন্যতম অবস্থান হতে পারে ইসলামবিদ্বেষ ও প্রগতিশীলতা দুটাই ত্যাগ করে বুঝে শুনে রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার পক্ষে দাঁড়ানো!  র কেবল তখনই আপনার ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশ বা কথাবলার স্বাধীনতা ইত্যাদির দাবিতে শুধু শাহবাগে না শাপলা চত্তরে দাড়ানোটাও গভীর অর্থপুর্ণ হবে। 

 

আবার পরিস্কার করে বলি, পাঠক আঙুলে গুণে গুণে বুঝে নেন। কমিউনিস্ট রাষ্ট্রচিন্তা আর আধুনিক রিপাবলিক (প্রজাতান্ত্রিক) রাষ্ট্র এক নয়। এদুটা এক ধারণা তো নয়ই বরং আকাশ-পাতাল ফারাক, এদুই রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে। যেমন, এক. কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চিন্তায় কোন নাগরিক রাষ্ট্র ধারণা নাই তা বারবার বলছি বরং এর বদলে আছে শ্রেণীর রাষ্ট্র ধারণা।  এক শ্রেণীতে বিভক্ত রাষ্ট্র ধারণা তাদের আছে। তা থাক তাতে অসুবিধা নাই। মাজে শ্রেণীবিভাগ আছে বলে কেবল একটা কথিত শ্রমিক শ্রেণীই  সব রুস্তমি করবে অন্যকে ইচ্ছামত খুন-অপহরণ- আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদি সব করতে পারবে আর এভাবে বাকি অন্য কোন শ্রেণী মানুষের কোন রাজনৈতিক অধিকার থাকবে না? এটা কী কোন রাজনৈতিক চিন্তা হতে পারে???   কিন্তু এর বিপরীতে রিপাবলিক (প্রজাতান্ত্রিক) রাষ্ট্র এর বেলায় যেখানে বাসিন্দা মাত্রই সবাই নাগরিক এবং সবাই বৈষম্যহীন “সমান অধিকারের নাগরিক” ধারণা আছে । শুধু তাই না, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সেই নাগরিক অধিকার রক্ষা করা এবং সকল নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়া।

তাহলে দাঁড়ালো, কমিউনিস্ট শ্রেণী-রাষ্ট্র এর কাজ হল কেবল শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থের রাষ্ট্র হয়ে কেবল কথিত এই শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার্থে সব ততপরতাকে সেই-মুখি করা।  এখানে কথিত বললাম এজন্য যে এই শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থ জিনিষটা কী? এত পবিত্র এবং যেন আন-টাজেবল মানে ধরাছুয়ার বাইরে – এই শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থ মানে কী?  এর মানে আর কিছু না – একছত্র ক্ষমতাধর কমিউনিস্ট পার্টি ও এর অলঙ্ঘণীয় অপার ক্ষমতা! এর সাথে কোন শ্রমিকের কোন সম্পর্ক নাই, বুঝানোও হয় নাই। এটা হল কোন জবাবদিহিতা বা সব প্রশ্নের উর্ধে এক কোটারি ক্ষমতা যা আর বৈ অন্য কিছু না!
আর এটা বলাই বাহুল্য যে  সাধারণভাবে,  শ্রেণী নির্বিশেষে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা – এমন ধারণা কমিউনিস্ট ডিকশনারীতেই নাই। বরং  প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে কেবল ক্ষমতাসীন বা শ্রমিক শ্রেণীর পক্ষের রাষ্ট্র তারা ঐ সমাজের বাকি সব শ্রেণী – এদের সবাইকে কোপ দিবে, এরা নির্মুল হবে ও নিপীড়িত হবে – এটা তারা প্রকাশ্যেই বলে থাকে; রাষ্ট্রকে এমন রূপ তারা দিতে চায়।  এককথায়, রাষ্ট্রে শ্রেণী নির্বিশেষে বাসিন্দাদের সকলের রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা – এই ধারণাটাই কমিউনিস্ট চিন্তায় কোথাও নাই। একারণে, কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতার নামে কোন ক্ষমতা হাজির হলে তাতে ক্ষমতাসীনেরা অপর সবশ্রেণীকে দমন করার এক একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিশাবেই তা তৈরি-হাজির হয়ে যায়। হবেই!
আর এভাবে অপছন্দের অন্য সকল শ্রেণীর মানুষকে  দমন বা একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতা দেখানো আর কমিউনিস্টদের এর পক্ষে  সাফাই দেয়া – এসব কথার মানে কী?  এর সোজা মানে ও পরিণতি হল, কমিউনিস্ট- প্রগতিশীল রাষ্ট্রচিন্তা বা এর স্বরূপ হল এক গুম-খুন-অপহরণ- আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদির এক রাষ্ট্রে পরিণতি পাওয়া!

কমিউনিস্টদের শ্রমিকশ্রেণীর ক্ষমতার চোখে সামাজিক অপর শ্রেণী কারা তা কে সাব্যস্ত করেঃ
কথা আরো আছে। কমিউনিস্টদের শ্রমিকশ্রেণীর ক্ষমতার চোখে সামাজিক অপর শ্রেণী বলতে তারা প্রধানত বা সাধারণভাবে এদেরকে ‘বুর্জোয়া শ্রেণী’ – তারা বলে থাকে। এখন কেউ বুর্জোয়া শ্রেণী কীনা এটা কে সাব্যস্ত করবে????
কোন আইন-আদালত বিচার বিভাগ এমন কী কেউ? না, একেবারেই না।
এই সিদ্ধান্ত নিবে পার্টি; মানে, কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল পার্টি। মানে পার্টির সর্বোচ্চ স্তর পলিটবুরো – এই কমিটি।
তাহলে এতে কী দাঁড়ালো? দাঁড়ালো যে রাষ্ট্রের কোন বিচার বিভাগ নয়, কোন বিচার প্রক্রিয়াও নয়; ক্ষমতাসীন শাসক (মানে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল পার্টি) সিদ্ধান্ত নিলেই প্রগতিশীল রাষ্ট্র গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদি সব করতে পারবে!!!! সব জায়েজ!

তামাসার কথা হল, রাজা-বাদশার আমলেও মানে রাজতন্ত্রেও ক্ষমতাসীন শাসক কাউকে নিজে শাস্তি দেয় না। এমন নিয়ম বা চর্চা সেখানের নয়। তাই কোন ফাঁসির দন্ড মানে সেখানে বিচার করে সেই শাস্তির রায় ঘোষণা করে থাকে বিচার বিভাগের বিচারক বা কাজী!

তাহলে রিপাবলিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রক্ষমতা বলতে তাহলে কথাগুলোর মানে কী দাঁড়ালো?
১। কোন রাষ্ট্রে রাষ্ট্রক্ষমতা বলতে সামগ্রিক যে ক্ষমতা তা কয়েকটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান খাড়া করে তাদের মধ্যে ভাগ করে রাখা থাকে।
২। এর মধ্যে প্রধান ক্ষমতা যেটা সেটা আমরা চলতি কথায় বলি ক্ষমতাসীন শাসক-ক্ষমতা।  (মানে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল পার্টি, তাদের ভাষায় যেটা শাসক শ্রেণী) । এখন বই বা তত্বের ভাষায় আমরা এটাকে বলি রাষ্ট্রক্ষমতার নির্বাহী বিভাগ বা এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ। যেকারণে, কোন প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি বলতে আমাদের বুঝতে হবে এটা নির্বাহী ক্ষমতা

এই নির্বাহী ক্ষমতা জিনিষটা কী?
আগে বলেছি রাষ্ট্রের সামগ্রিক ক্ষমতাটা কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে রাখা থাকে। যেমন,  পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ, সরকার (নির্বাহী) ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নানা বিভাগের হাতে।  যাদের মধ্যে আবার ক্ষমতাটা ভাগ করে রাখা থাকলেও একটা ব্যাপারে কোন ভাগাভাগি নাই। সেটা হল, ক্ষমতা এদের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের হাতেই নানা রূপ বা ধরণে আছে ও থাকে। কিন্তু ক্ষমতার প্রয়োগ এর ক্ষমতা আছে কেবল সরকার বা নির্বাহী বিভাগের হাতে। এজন্য এটা নির্বাহী ক্ষমতা বা প্রয়োগযোগ্য ক্ষমতার রূপ! এজন্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী (বা প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার হলে রাষ্ট্রপতি ) বলতে আমাদের বুঝতে হবে এটা নির্বাহী ক্ষমতা। তাঁর হাতেই একমাত্র ক্ষমতার প্রয়োগ এর ক্ষমতাটা রাখা থাকে। এখানেই ক্ষমতার প্রয়োগ মানে ক্ষমতার বাস্তবায়ন, ইংরাজিতে এক্সিকিউশন [execution] আর সেখান থেকেই এটা এক্সিকিউটিভ পাওয়ার বা নির্বাহী ক্ষমতা – এমন নাম। মনে রাখতে হতে ক্ষমতার প্রয়োগ এর ক্ষমতাটা কেবল এই নির্বাহী বিভাগের হাতে  রাখা হয়েছে জেনেশুনেই। না হলে রাষ্ট্রক্ষমতা বলতে সেটা আর একটা থাকবে না; সব বিভাগে ভাগ হয়ে যাবে যার মানে হবে রাষ্ট্র ততগুলো টুকরা হয়ে যাবে!

তাহলে এখন সোজা প্রশ্নঃ  প্রধানমন্ত্রী কী বিচার বিভাগ দেখে, মানে তাঁর হুকুম-নির্দেশে বিচার চলে? না, অবশ্যই না। কিন্তু বিচারক কোন শাস্তির রায় দিয়েই তার কাজ-দায়িত্ব শেষ করে থাকে। এরপরে ঐ রায়ের বাস্তবায়ন এর দায়ীত্ব প্রধানমন্ত্রীর। মানে তার নির্বাহী বিভাগ বা সরকারের; যা এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডিআইজি(প্রিজন) আর তা থেকে জেলার এভাবে তা বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। এককথায়, শাস্তির বাস্তবায়ন বিচার বিভাগের দায়ীত্ব নয়। এটা নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব।
আবার পার্লামেন্ট বা এর সদস্যরা ( এখানে আগে থেকেই গঠিত ও লেখা হয়ে থাকা এক কনষ্টিটিউশন আছে, ধরে নিয়েছি) কনষ্টিটিউশনের সীমার মধ্যে নয়া সব আইন তৈরি করে থাকে – এটাই পার্লামেন্টের আইন বানানো বা প্রনয়নের ক্ষমতা – এবং এটাও রাষ্ট্র-ক্ষমতার আরেক রূপ, অবশ্যই। কিন্তু আইন প্রনয়নের পরে এর প্রয়োগ-এক্সিকিউশন? না এই ক্ষমতা প্রয়োগের-ক্ষমতা সংসদের হাতে নাই, রাখা হয় নাই। যেমন সংসদের তৈরি কোন আইন তৈরি হয়ে যাবার পরে কোন নাগরিক তা ভঙ্গ করলে তো সে অপরাধী। কিন্তু সংসদ তাকে ধরে আনবে না বা এরপরে বিচারও করবে না। সেসব ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর, মানে একমাত্র নির্বাহী বিভাগের অধীনের কোন মন্ত্রণালয়ের – আলোচ্য ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের!  এই হল নির্বাহী-এক্সিকিউটিভ ক্ষমতার মূল বৈশিষ্টগত দিক!
দুঃখের কথা হল, ককিউনিস্ট চিন্তা বা এর সাগরেদ প্রগতিশীল চিন্তায় ক্ষমতার এসব ভাগাভাগির ধারণাই নাই। শুধু তাই না, এমন ভাগাভাগিকেই ভুয়া মনে করা হয়। এর বদলে তাদের শ্রমিকশ্রেণীর পার্টি মানে, ক্ষমতাসীন পার্টিই সব কিছু! কিসের আবার বিচার বিভাগ বা বিচার আচার?   পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওমুকে বুর্জোয়া তো সে বুর্জোয়া (যেমন যুদ্ধাপরাধী?) । এখন পার্টি বলে দিয়েছে তাই, তাকে ফাঁসি দিয়ে দেও।  কিংবা  গুম-খুন-অপহরণ-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদি যা খুশি লাগে করে ফেলাও!! শ্রেণির রাষ্ট্রে সব জায়েজ! কোন বিচার লাগবে না!

তবুও মূলকথাটা যেন ভুলে না যাই বা না হারিয়ে যায় যে, নির্বাহী ক্ষমতাকে থেকে বিচার বিভাগ আলাদা রাখতেই হবে – এই ইস্যুটা। মানে হল প্রধানমন্ত্রীর গোপন বা প্রকাশ্যে ইঙ্গিত বা নির্দেশে যেন কোন বিচার ও রায় না হয়। এই সেপারেশন অব পাওয়ার –  এটা রিপাবলিক রাষ্ট্রের জন্য এক মুখ্য বৈশিষ্ট; বিশেষ করে যখন কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করে কোন রিপাবলিক রাষ্ট্রকে বুঝতে যাব। কারণ কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের কাছে বিচার বিভাগ বলেই কার্যকর তেমন কিছু নাই, রাখা হয় নাই। মানে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল চিন্তার শ্রেণীর রাষ্ট্রের কাছে এর বালাই-ই নাই। পার্টিই নির্বাহী ক্ষমতা আর পার্টিই বিচার বিভাগ – তাই একাই সে সব মানে, বিচারও শেষ করে দিয়েছে মনে করা হয়। মানে রায় ও সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়। যেটা পার্টির সিদ্ধান্ত সেটাই রায় – এই হল এর মূল জায়গাটা। কেবল একালের চীনে কিছু পেটি ইস্যু আদালত-বিচারকের হাতে ছেড়ে দেয়া শুরু হয়েছে। যেমন শহর ও আবাসিক এলাকায় পরিবেশ দুষণ (কয়লা বিদ্যুৎ বা এমন কিছু) ইস্যু। এসব ক্ষেত্রে আদালত অভিযোগ শুনে রায় নিতে পারবে, পার্টির নির্দেশের সীমার মধ্যে থেকে। যেটা আগে পার্টিই সিদ্ধান্ত দিয়ে সমাধান করত। কিন্তু সেই চীনেই আবার একালেও আমরা দেখছি কেউ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিংবা চীনা আন্তর্জাতিক বড় ব্যবসায়ী জ্যাক মা হলেও রক্ষা নাই!  কমিউনিস্ট ক্ষমতাসীন শ্রেণী আপনাকে একালেও কোন আয়নাঘরে আটকে রেখেই চলেছে! কোন বিকার নাই, পরিবর্তন নাই!  কেবল পার্টি যেভাবে চায় তেমন এক স্বীকারোক্তি দিলে সম্ভবত এরপর ছেড়ে দিবে! তাই আয়নাঘরে রেখেছে। না হলে তো খুন করে রেখে দিতে পারত!! এভাবে বুঝতে হবে!  আর এই আত্ম-স্বীকারোক্তি দেয়া যে আমি নিজেই অপরাধী – এটা সেই ১৯২৪-৩৩ সালের মধ্যে স্টালিনের হাতে তিনি ছাড়া বাকি সব পলিটবুরোর সদস্যদের হত্যা করার সময় থেকে এই একই রেওয়াজ চলে আসছে।  যার সোজা অর্থ কোন ধরণের বিচার প্রক্রিয়ায় [legal process] মানে আইন ও সেই আইনের ভিত্তিতে অভিযোগ এনে বিচার – এসবের উপর কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলদের কখন আস্থা ছিল না, নাই। সেজন্যই এমন প্রতিষ্ঠান গড়তে তারা কখনও যায় নাই। তাদের শ্রেণীবোধ এর উপর আস্থা রাখে না!  অতএব আয়নাঘর – গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদির উপর ভরসা!!!

এবার সারাংশে বলিঃ কমিউনিস্ট চিন্তায়, রাষ্ট্রে শ্রেণী নির্বিশেষে বাসিন্দাদের সকলের রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা – এই রাজনৈতিক অধিকার এবং শ্রেণী নির্বিশেষে সকলের রাজনৈতিক অধিকার এসব ধারণাই কমিউনিস্ট চিন্তায় কোথাও নাই। তথাকথিত শ্রেণীর রাষ্ট্র বুঝ আর  এই বুঝ দিয়ে এটাকে মাখায় ফেলা শুধু না শ্রেণী নির্বিশেষে সকলের রাজনৈতিক অধিকার ধারনা এটা কমিউনিস্টদের মাথার উপর দিয়ে গেছে; ভিতরে ঢুকে নাই।  অথচ তারাও একটা রাষ্ট্র ধারণা করতে গেছে তাদের দরকারে!!  এখানে বলে রাখা যেতে পারে যে এর সমাধান হত এভাবে যে, পার্টির শ্রেণীবুঝ আছে থাক তা দিয়ে যে ক্ষমতাকেও বুঝুক অসুবিধা নাই।  ক্ষমতা শ্রেণীবুঝ দিয়েই বুঝা হোক কোন অসুবিধা নাই। এই ক্ষমতার অধীনেই সকল নাগরিকের মানে সকল শ্রেণীর মানুষের নুন্যতম কিছু রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা আর তাদের নিরাপত্তা সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিতে অসুবিধা কী? মানে রাজনৈতিক অধিকার (আবার এটাকে অন্য-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিতসা-বাসস্থান বলে বুঝ দিয়ে মানুষকে কেবল বৈষয়িক মানুষ কল্পনা করার দরকার নাই। ) কারণ, আমি রাজনৈতিক মানুষের কথা বলছি!  এটা হলে কী পার্টির ক্ষমতা নাগরিকেরা কেড়ে নিত? তাহলে এখনও নিতে পারত!! এই হল শ্রেণীবোধের বুঝের সাথে রাজনৈতিক অধিকার – ই রাজনৈতিকতা [polity] এর ধারণাটাকে ধরতে পারে নাই।  মাখায় ফেলা হয়েছে!  

এটা সত্যি  যে রাশিয়ায় ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব থেকে মানে, আগে সোভিয়েত গড়ে – পরে তা দিয়ে ক্ষমতা দখল সম্পন্ন করে তোলা অবশ্যই এক আলাদা ধরণের রাষ্ট্রের ব্যবহারিক ধারণা এটা। কিন্তু এটা প্রশংসা করতে গিয়ে যেন এটা এক নয়া কমিউনিস্ট রাষ্ট্র সেজন্য এর ভিতরের শ্রেণী নির্বিশেষে নাগরিক বা বাসিন্দা  সকলের রাজনৈতিক অধিকার আর লাগবে না – এমন একটা ভুল অনুমান তারা করেছিল, যাদের মধ্যে খোদ লেনিনও অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া আরেকটা চিহ্ন আছে যে লেনিনকেও রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার ধারণা যথেষ্ট কামড় বা বিব্রত করেছিল – তাঁর মনে খচখচ প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল – সেটা অনুমান করা যায়!  মানে সোভিয়েত গড়া যে “রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার ধারণার” কর্তব্য-কাজের  কোন বিকল্প  হাসিল করা ফেলা নয় – তা লেনিনও সম্ভবত মানতেন; এর প্রমাণ আছে।

বিপ্লবটা রাশিয়াতে হলেও পরে, পুরানা পরাজিত জার সাম্রাজ্যের পুরা কলোনি ভূখন্ডগুলোকে রাশিয়ার সাথে জুড়ে নিয়ে লেনিন-স্টালিন ১৯২২ সালে  যে সোভিয়েত ইউনিয়ন বানিয়েছিলেন ওর ফরমাল নামের দিক লক্ষ্য করা যাক। ওর পুরা নাম বা আনুষ্ঠানিক নাম ইউনাইটেড সোভিয়েত সোসালিষ্ট রিপাবলিক [USSR]। এই নামের মধ্যে ইংরাজি ‘R’ এটাই রিপাবলিক শব্দের প্রতীক। এর মানে লেনিন সাহেব রিপাবলিক শব্দটা ত্যাগ করা সহি মনে করতে পারেন নাই, তাই সাথে রেখেছিলেন। কিন্তু রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার মুলকথা তো পাবলিক বা জনগণ ধারণা। মানে  শ্রেণী নির্বিশেষে নাগরিক বা বাসিন্দা  সকলের রাজনৈতিক অধিকার এই ধারণা!!  কিন্তু  রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার এই বাকী পর্যায়টা মানে ততদুর আর লেনিন আমল করতে পারেন নাই বা  করতে চান নাই ও করেনও নাই। উলটা শ্রেণীর রাষ্ট্র বুঝের ধারণা দিয়ে সব মাখায় ফেলেছেন, শ্রেণী নির্বিশেষে নাগরিক বা বাসিন্দা সকলেরই রাজনৈতিক অধিকার এই ধারণা তিনি আমল উপলব্দি করতে একেবারেই ফেল করেছেন। এর উপর শ্রেণীর একনায়কতন্ত্র ধারণার পক্ষে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বড় ব্লান্ডার করেছেন! যেটা আজ পরিস্কার!  অথচ এটাই তো গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর এর রাষ্ট্র ধারণা!   এটাই কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চিন্তার আদি ক্ষত-খামতি আর অযোগ্যতা হয়ে থেকে গেছে।

আর একারণের কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল চিন্তায় ভর করা যে কোন রাষ্ট্র মাত্রই তা এক গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদির এক আখড়ায়, এক ফ্যাসিজমে পরিণত হয়েছে।  

এককথায় বললে, কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল চিন্তায় ভর করা যে কোন রাষ্ট্র মাত্রই তা এক গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদির এক আখড়া, এই ফ্যাসিজমে পরিণত হয়েছে।

এবার বাংলাদেশের গত ১৫ বছর হাসিনার ক্ষমতার সাফাই বয়ানটা কী ও কে দিয়েছিলঃ
ক্ষমতা বা রাষ্ট্রক্ষমতা বলতে আমরা ফিজিক্যাল ক্ষমতা বা গায়ের জোর ধরণের বলপ্রয়োগ যেটা সেটাকেই বুঝি। নিঃসন্দেহে এটাই ক্ষমতা যা দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হল, ক্ষমতায় থিতু হতে চাইলে এটা কী যথেষ্ট?
এক শব্দে জবাব হল না, এটা যথেষ্ট নয়। আরও কিছু লাগবে। আর সেটা হল, দখল নেয়া এই ক্ষমতার স্বপক্ষে একটা শক্ত বয়ান মানে এই ক্ষমতার পক্ষে একটা জাস্টিফিকেশন  ও ন্যায্যতাও তুলে এর সাথে হাজির করতেই হবে। আর সেটাও আরেক ক্ষমতা অবশ্যই; যদিও তা ফিজিক্যাল নয়। এটাকে আমরা বলতে পারি, ক্ষমতার সাফাই বয়ান এর ক্ষমতার দিক। এই সাফাই বয়ান আর ফিজিক্যাল – ক্ষমতা – এমন এই দুইটা ক্ষমতাকেই হাজির থাকতে হবে তবেই সেটা এক থিতু ক্ষমতা হবে। নইলে না! কী হবে তাহলে?
শুধু ফিজিক্যাল ক্ষমতা আছে যে ক্ষমতার সেটা ক্রমশ ফেল করে যাবে, পরাজিত ও ক্ষমতাচ্যুত হবে। এজন্য ক্ষমতার সাফাই বয়ান এর দিকটাকেই ফিজিক্যাল ক্ষমতার সমান গুরুত্বপুর্ণ মানা হয়।
আ তা না হয় বুঝা গেল। কিন্তু হাসিনার গত ১৫ বছরের ক্ষমতার প্রসঙ্গে ক্ষমতার সাফাই বয়ান সেটা কী ছিল আর তা কে দিয়েছিল?

গত ২০০৮ সাল জুন ১১ থেকেই এটা পরিস্কার হয়ে গেছিল যে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে আর সেই বাংলাদেশের প্রকাশ্য দেখা যাওয়া বাইরের অর্থে ক্ষমতাটা দেয়া হচ্ছে হাসিনাকে। এই দিনই সেকালের তত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় (মানে আদালত থেকে জামিনে নয়) হাসিনা প্যারোলে মুক্তি নিয়ে তিনি আমেরিকা সফরে যান; অলিখিত উদ্দেশ্য স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে আগামি ক্ষমতা-করণীয় এর বোঝাপড়া ফাইনাল করা। এই বিচারে ২০০৯ সালে হাসিনার ক্ষমতারোহণ এটাই ছিল ক্ষমতার ফিজিক্যাল দিকটা, বলতে পারি।

তাহলে বয়ানট কী আর তা কে দিয়েছিল?
এই বয়ান সরবরাহ করেছিল কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল মুখগুলো। কী সেটা?
যেমন, “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি” এই ধারণাটা হাজির করা। – এটা আসলে কী?
” এটাই আসলে কমিউনিস্টদের শ্রেণীর রাষ্ট্র ধারণা দিয়ে হাসিনার ক্ষমতার পক্ষে সাফাই বয়ান তৈরি করে সরবরাহ করার প্রগতিশীলতা! কীভাবে?
কমিউনিস্ট রাষ্ট্রচিন্তায় শ্রমিক শ্রেণীই ক্ষমতাসীন থাকে আর বাকি সব শ্রেণীর উপর সে যেকোন আধিপত্যসহ যথেচ্ছাচা্ররে দমন করে দাবিয়ে রাখে – আর একাজের জন্য কমিউনিস্ট ক্ষমতাসীনেরা গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদি সব কিছু করার এক শ্রেণীর রাষ্ট্র ধারণা হাজির ও চর্চা করে থাকে! এমনকি একালের চীনকে দেখেন তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী জ্যাক মা যেই হন, রাষ্ট্র আপনাকে আয়নাঘরে রাখতেই পারে! কোন সমস্যা নাই।  তবে ২০০৯ সালের বাংলাদেশে, এখানে কমিউনিস্টদের সাফাইটা হল, যে শ্রেণী ক্ষমতায় থাকে সে অপর সকল শ্রেণির সাথেই এমন  নিপীড়নমূলক ট্রিটমেন্ট বা নিপীড়ন করতেই পারে – এই দাবি। কারণ, এটা নাকি ক্ষমতাসীনের একক ইচ্ছা যা সে যেকারও সাথে করতে পারে। পার্টির ইচ্ছাই চুড়ান্ত, কোন বিচার প্রক্রিয়ার কথা ভুলে যান।
কিন্তু  বাংলাদেশে ক্ষেত্রে একই ব্যাখ্যা প্রয়োগ করতে গেলে তা কিভাবে করা যাবে? কারণ,  হাসিনা তো নিজেকেও শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতা বলে দাবি করে না?

এখানেই কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতার কারিশমা! এজন্য তারা এই নয়া শব্দগুচ্ছ হাজির করে রেখেছে – “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বা “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শ্রেণীশক্তি” – বলে যেটা কমিউনিস্টদের শ্রমিক শ্রেণী শব্দগুলো বদলে সেই জায়গায় বসিয়ে দিবে, হাসিনার ক্ষমতার স্বপক্ষে সাফাই তৈরি করতে।   বাংলাদেশের প্রগতিশীলদের সরবরাহ করা সেই গুছানো বয়ানটা ভেঙ্গে বললে তা হল,  ২০০৯ সাল থেকে বিজয়ী হাসিনা সরকার এরাই তো ১৯৭১ সালের বিজয়ী শক্তি সেই আওয়ামি লীগ মানে ২০০৯ সাল থেকে বিজয়ী হাসিনা সরকারই হল “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শ্রেণীর” ক্ষমতাসীন সরকারকাজেই এই শ্রেণী তো তার বিরোধী সকল রাজনীতিক ব্যক্তি ও দলকে তাদের সকলকে – রাজনৈতিক অধিকার শুণ্য- করে রাখবে।  এদের উপর  গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদি সব জায়েজ করবে! এসব গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদি – এটাই তো (প্রগতিশীল)ফ্যাসিজম হয়ে হাজির হবে!!! 

ঠিক একইভাবে আরেক শব্দ ও বয়ান হল “চেতনা” বা “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” – একটা পবিত্র ভাব ধরে এই শব্দগুচ্ছও অনেক বেশি করে গত ১৫ বছর শোনা গেছে। শাহবাগ আন্দোলন এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর দাঁড়িয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার – এই দাবিরই পিছনের কাহিনী!  কিন্তু কেন যুদ্ধাপরাধ? কারণ,  প্রগতিশীলতার সাফাই বয়ান হল, ১৯৭১ সালের শত্রু মানে “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির” বিরুদ্ধ শক্তি তো এরাই। আর একালে যা আমেরিকার কাছে ওয়ার অন টেরর তাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির কাছে যারা যুদ্ধাপরাধী শক্তি – মানে এই শক্তিকে কোপাও মানে ইসলাম-মুসলমান কোপাও, ইসলামবিদ্বেষে ছেয়ে ফেলো! আর শুধু বিএনপি না বলে “জামাত-বিএনপি” এভাবে বলো!  আর সবার আগে জঙ্গীবাদ শব্দ লাগিয়ে দেও!  আর এতে বাস্তবত কী হবে? বাস্তবতা হবে যে,   হাসিনার  যেকোন (সংসদীয় বা তারা লিগাল দল হলেও) রাজনৈতিকবিরোধী যে রাজনৈতিক অধিকার চাইবে অথবা– এই দাবি করে কোন কথা বলবে তাকেই সরকার  জঙ্গীত্ব কাজ বলে চিহ্নিত করবে; বা জঙ্গি সাজিয়ে গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদি সব কিছুই করতে পারবে।  – কারণ প্রগতিশীলতার শ্রেণীবোধের রাষ্ট্রে এসব জায়েজ! শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গিতে ‘অপর’ শ্রেণী বলে যে কাউকে হত্যা করা জায়েজ! এর বিচারেরও দরকার নাই!

শুরুর দিকে এসব বয়ান সবচেয়ে বেশি করে এনেছিল প্রায় সকল কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলেরা বিশেষ করে সিপিবি। মানে মঞ্জুরুল আহসান খান, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম [সরকারী দল ও বিরোধী দল উভয়ই মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষের শক্তি হবে।], এমএম আকাশ (মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারীরা নিরাপদ নন)  আবেদ খান (আবেদ খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আজ অটুট ও ঐক্যবদ্ধ আছে। ) ইত্যাদি এসব নাম। এখনও এর আরও প্রমাণ পাওয়া যাবে  গুগল সার্চে  মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ও তাদের একেকজনের নাম দিয়ে খুজলে…। মনকি দেখলাম গতকালকের বর্তমান রাষ্ট্রপতি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তি যেন ক্ষমতায় না আসে: রাষ্ট্রপতি। আর সুলতানা কামাল এই ১২ সেপ্টেম্বরেই বলেছেন যে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করলে তার পরীক্ষা দিতে হবে : সুলতানা কামাল” ।
এমনকি  এখনও হাসিনা সরকারকে প্রগতিশীলদের দেয়া সেই জঙ্গীবাদের সাফাই বয়ানই চলছে; যদিও তা অনেক ঢিলা হয়ে গেছে আর এর উপর এখন আমেরিকান নানান স্যাংশন নিষেধাজ্ঞা এসে গেছে…।

একটা মজার অবজারভেশনঃ
 তবে একটা মজার অবজারভেশন হল, হাসিনার ক্ষমতার প্রথম পাঁচবছর এমন কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতার সাফাই বয়ান দিয়েই আরামে চলেছিল। আর তা খুবই প্রভাব নিয়ে সরব ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচন ও এর হাল ও প্রক্রিয়া দেখার পর এক বিরাট সংখ্যক কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল পিছনে সরে যায়।  যদিও এদের মধ্যে যেসব নেতা  যারা তখন নতুন করে মন্ত্রী হবার ডাক পেয়েছিল কাকাবাবুর [প্রণব মুখার্জি তখন আবার রাষ্ট্রপতি] প্ররোচনা-উদ্যোগে, সেসব বাম-প্রগতিশীলেরা তখন আরো বেশি করে হাসিনার ক্ষমতার সাথে  সামিল হয়ে আরো বেশি করে জঙ্গিবাদ-বিরুদ্ধ বয়ান আউড়ানো শুরু করেছিল।  এদিকে ২০১৮ সালের পরে দেখা গেল সমর্থনে আরো বেশি করে ভাটা পড়েছে। যারা বাম-প্রগতিশীল বলে দলীয় সাইনবোর্ডে ছিল তারা একেবারেই দল-সহই গায়েব বা দূরে চলে গেছিল। যেন হাসিনা সরকারের তারা আর কেউ লাগে না। যদিও তাদের ব্যক্তি অবস্থান আগের মতই থেকে গেছিল। কিন্তু এবার ২০২৩ সালে এসে এরা একেবারেই উল্টা!  সেটা, কে কবে কত আগে শাহবাগ ছেড়েছেন তা বলার প্রতিযোগিতা যেন!!! আবার ওদিকে আরেক রূপ – বুঝা যাচ্ছে তারা অনুমান করছেন হাসিনার দিন শেষ। অতএব সমাজকে কথিত প্রগতিশীল আবহে রাখতে তাহলে বিএনপিকেই প্রগতিশীল করা্র উদ্যোগ নিয়েছে তারা; অন্তত যতটা পারা যায়!

প্রগতিশীলরা নিকট আগামিতে কোন দিকে যাবেঃ
ঘটনা হল প্রগতিশীলরা কিন্তু কষ্ট কম করে না, তাদেরও সব সামাজিক রাজনৈতিক ততপরতা সহজও নয়! তাতে তাদের রাজনীতির ধারালো হওয়া সেটা  যতই ভাল-খারাপ যাই হোক!  সমস্যা তাদের একটাই আর তা গোড়ার সমস্যা যে এরা নিজ রাজনৈতিক চিন্তা-অবস্থানের রিভিউ [review]  করা – ঢেলে সাজানো এর দরকার মনে করে না বা ব্যাপারটা বুঝেই না। বেখেয়াল! তবে সেটা করার মুরোদের সমস্যা আছে সত্য কিন্তু সবটা তা নয়! আগ্রহ আর উদ্যোগ থাকলে মুরোদ বা চিন্তার ক্ষমতা – সেটার পথ তারা পেয়ে যেতেন বা বের করতেন!  এমনকি এখনও যদি তারা অন্তত সন্দেহ শুরু করতেন যে প্রগতিবাদ বলে যেটাকে ধ্যানজ্ঞান করে জেনেছেন. এটা আসলে খাটো মানে অগ্রগামি নয়, আর  আধুনিক তো নয়ই! তাই এনলাইটেনমেন্ট বা মডান রিপাবলিক ইত্যাদি এসবের কোনটাই নয়। অথচ এরা তো সাহিত্য-সংস্কৃতিতে নিজেদের মর্ডান বলেই দাবি করেন, আধুনিকতা মানে নিজেরা আধুনিক সাহিত্য  করে বলে মনে করেন, আর এটা নিজেদের  অবস্থান বলে জানান দিয়ে থাকেন! তাহলে?

কিন্তু মর্ডানিটি ফেলে “প্রগতিশীল সাহিত্য” সে তো একটা ফেটিস [fetish], অর্থহীনতা ! এসব নিয়ে সক্রিয় থাকলেও তা এতদিনে টের পেতে পেলেন না! তবে একটা কথা; তারা মনে রাখতে পারেন চলতি শতক – এটা একেবারেই এক নয়া শতক। ইতোমধ্যে পরিচিত গত শতকের মেজর সবকিছুই ঢেলে সাজানো শুরু হয়ে গেছে আমরা তা চাই বা না চাই – সেটা গ্লোবাল রাজনীতি বা গ্লোবাল অর্থনীতি সহ সব জগতে। গত শতক থেকে যারাই কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতা কে আঁকড়ে ধরে ছিলেন আছেন সেটা এই ভেবে যে তারা নাকি সবচেয়ে অগ্রসর প্রগতির চিন্তার সাথেই আছেন –  এবার সবার আগে এরাই অস্তিত্বের সংকটে পড়বেন। এব্যাপারে সবার আগে নিজের পিছিয়ে পড়া, অন্ধকারে হাতড়ানো আবিস্কার করবেন যারা এরাই একেবারে অপ্রস্তুত ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্সিয়া, একদেমিক জগতের লোকেরা!   সোভিয়েত পতন, ওয়ার অন টেরর, ওয়ার অন টেররের বয়ানের পতন – ইসলাম ফেনোমেনা – এমনকি অন্তত অর্থনৈতিকভাবে চীনের উত্থান (এমন চীন যার রাজনৈতিক চোখ নাই) আর ততধিক আমেরিকার অর্থনৈতিকভাবে পতন ইত্যাদি মিলিয়ে  যে নয়া শতক জাহির হতে শুরু করেছে এই  নয়া পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করতে ও দিতে পারতে হবে। এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ!  কারণ, সেকাজের জন্য এবার উপযুক্ত চিন্তা ও এর নয়া টুলস ও যোগ্যতা লাগবে।  তবে এসব বৃহত্তর দিক এখানেই থাক, আপাতত আর যাব না! বাংলাদেশের দিকে ফিরে আসি।

প্রগতিশীলতা আবার নিজেকে গুছাতে শুরু করেছে, যদিও চিন্তা-অবস্থান তাদের পুরানাটাই! তাই, তারা কী আবার নয়া (মানে কোন পোস্ট-হাসিনা) শাসকের বেলাতেও এসব গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদির সাফাই সরবরাহ করার ভুমিকায়  আবার নেমে পড়বেন ????? এভাবে (প্রগতিশীল) ফ্যাসিজমকে আর কত দুর টেনে নিয়ে যাবেন? পোস্ট হাসিনা যুগেও মত এবারও কী নতুন করে আরো ১৫ বছরের জন্য প্রগতিশীলতার সাফাই নিয়ে নয়া সরকারের পক্ষেও  গুম-খুন-অপহরণ-আয়নাঘর-আইনবহির্ভুত কিলিং ইত্যাদির রাষ্ট্র হয়ে উঠতে সহায়তা নিয়ে হাজির হবেন????     

[একটা আবেদনঃ এই লেখা ব্যক্তি হিশাবে কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে নয়। আমি যা বলতে চেয়েছি তা মেনে নিবার কোন প্রয়োজনই নাই। কেবল ঠিকঠাক বুঝলে নিলেই আমি কৃতজ্ঞ হব! এসব প্রসঙ্গ হাজির করার একটাই উদ্দেশ্য হতে পারে যে নয়া প্রসঙ্গগুলোকে আলাপ-আলোচনায় নিয়ে তোলা।]

 

 

আপডেটঃ   ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩; সন্ধ্যা ০৭ঃ ২৬
সর্বশেষ আপডেটঃ  ০১ অক্টোবর ২০২৩, সকাল ১১ঃ ১৫

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

Leave a comment