বিএনপি কী ‘র’ বা ভারতীয় আধিপত্যের নয়া বাহক ১৬ বছরের পথে? 


বিএনপি কী ‘র’ বা ভারতীয় আধিপত্যের নয়া বাহক ১৬ বছরের পথে?
গৌতম দাস
২৮ নভেম্বর ২০২৪
https://wp.me/p1sCvy-5S6

 

ধর্মকে কেন্দ্র করে উন্মাদনা, উদ্বিগ্ন মির্জা ফখরুল | Mirza Fakhrul Islam Alamgir | BNP | Somoy TV

আজ কী চলতেছে?
গতকাল থেকে আজ  এ’পর্যন্ত মূলত যা চলতেছে তা হল, উপর উপর দেখলে এটা ইসকন কে নিষিদ্ধ প্রশ্নের ফয়সালা বা এনিয়ে আমাদের রাজনীতিতে দুই মেরুর লড়াই।  যা আসলে গত ১৬ বছরের মত বাংলাদেশে র-এর ততপরতা বা ভারতীয় আধিপত্য কী কন্টিনিউটি বা ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলতেই থাকবে কী থাকবে না – এরই রাজনৈতিক দুপক্ষের লড়াই এবং এর ফয়সালা কোন দিকে হতে যাচ্ছে এরই কালপর্ব এটা।
আর এই কালপর্বে মুখ্য ভিলেনের ভুমিকায় নেমে গেছে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর। এটা কেউ ঠিক বিএনপি না বরং এটা আওয়ামি লীগ ২.০ হয়ে বিএনপির আসন্ন ক্ষমতায় আসার কসরত-মহড়া বলতে পারেন।  আর সেই মহড়ায় মির্জা সাহেব ওবায়দুল কাদেরের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে নিয়েছেন তো বটেই বরং সাথে আরো অনেক বেশি হাসিনার চরিত্রও নিয়ে ফেলার অবস্থায় চলে গেছেন। এই সামান্য ব্যতিক্রমের কারণ আওয়ামি লীগ ২.০ এর সভাপতি শারীরিকভাবে দেশে অনুপস্থিত তাই।

গতকালকে মির্জার যে পারফরমেন্স এটা বলা যায় কারো যদি মনে হয় ক্ষমতা এই তো হাতের মুঠোয় দুহাত দূরে তখন একটু-আধটু কাপড় খোলা গেলে সেটা তেমন অসুবিধা কী বলেই মনে হবে। আর সেই খোলা শরীর ঢাকতে তিনি তখন শতভাগ কোশেশে নেমে পড়েন যাতে তাকে  শুশীল এবং বিখ্যাত (আসলে কুখ্যাত) হিন্দুত্ববাদ=প্রগতিবাদ হয়ে হাজির হইয়েছেন মনে হয়।
গতকাল ছিল মির্জার দুইটা পারফরমেন্স দেখানোর দিন; বা অন্যভাষায় বলা যায় আসন্ন দুহাত দুরের ক্ষমতায় চড়ে বসার ক্ষেত্রে “হুজুর নাকি সন্ন্যাসীদের (কলকাতা আজকাল ‘র’এর ততপরতাকে সন্ন্যাসী  ততপরতা বলে পরিচয় করাচ্ছে ) বলব যেটাই হোক তাদের দেয়া দুইটা এসাইনমেন্ট সম্পন্ন করার দিন।  এর একটা হল, সকাল সকাল প্রথম আলোর জন্য মায়াকান্না। তবে এর চেয়ে অভিযোগ বা সাফাই টা বেশি মজার। “তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! – মানে ঢাকায় প্রথম আলোর অফিস কী পোড়ায় দেয়া হয়েছে??

না কী ঢাকায় অফিস টাচ করা হয় নাই ফলে ধর্মীয় উন্মাদলার কথা আনা যাচ্ছে না তাই ভাড়াটে নিজেদের লোক দিয়ে রাজশাহীতে যেখানে কোনায় এক-দুজন বসে ওর সাইনবোর্ড খোলার ছবি তুলে এনে এবার প্রোপাগান্ডা করা হয়েছে!
তবে মানতেই হবে মির্জার অভিনয় ভাল হয়েছে! এতদিনে মির্জা যে অতীতের কমিউনিস্টগরি করেছেন তা যে বিএনপির ঘরে এসে বৃথা যায় নাই ব্যাপক কাজে লেগেছে কেঁদে ফেলার মত আবেগী অভিনয় করে বলা চিন্তা করতে পারেন চিন্তা করতে পারেন – বলা সত্যি চোখে পানি এসে যাবার মত হয়েছে। আর নিশ্চয় চেয়ারম্যান সাহেব তাঁকে  এক বড় পিঠচাপড়ানো উপহার দিবেন।

 

আপনি চিন্তা করতে পারেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! আপনি চিন্তা করতে পারেন, যে মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য
আমরা এত দিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না, আমি অন্তত চাই না।’

 

আসলে আমরা জানতামই না যে মির্জা সাহেব মিডিয়া রক্ষার জন্য এতবড় জান কোরবানী দেয়া লোক! এটা এখন হয়ে গেছে যেন একটা কম্পিটিশন যে গরু জবেহ দেওয়াতে গরুটা নাকি মির্জা সাহেব এর এই কোরবানী হওয়ার ইচ্ছাটা কে বেশি কষ্ট পেয়েছে?

মির্জা সাহেব তর্কটা হলঃ র-এর অর্থে বাংলাদেশের ভারতের স্বার্থে প্রপাগান্ডা করাটা কী জার্নালিজম? এটা কী মুক্ত স্বাধীন মিডিয়া র নমুনা? কাকে জার্নালিজম বলবেন আর কোনটাকে মুক্ত মিডিয়া স্বাধীনতা বলবেন? আপনি ও আপনার বিএনপি তো আসলে ভারতের অর্থ নিয়ে প্রপাগান্ডা করার মিডিয়া স্বাধীনতার পক্ষে নাটক করতে এসেছেন! তাই না? এজন্য নিচে দেখেন বাক্যটা হবে আসলে উলটাঃ

আপনি চিন্তা করতে পারেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রস্বার্থের বিরুদ্ধে ভারতীয় আধিপত্য ডেকে আনার শর্তে হলেও বিএনপি মরিয়া হয়ে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! আপনি চিন্তা করতে পারেন, যে মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার নামের আড়ালে  আওয়ামি লীগ ২.০ হয়ে বিএনপির আসন্ন ক্ষমতায় আসার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠেছে!!! 
আমরা এত দিন লড়াই করলাম, কী এই জন্য! এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না, আমি অন্তত চাই না।’ এটাই আসলে পালটা আপনাদের প্রতি পাবলিক ভাষ্য!
সারা বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে আর আপনারা এর উলটা দিকে বাইতেছেন!

 

ভিডিও টা এখানে দেখতে পারেন।
আর সেজন্যই কী গতকাল সারাদিন সরকারী এপিপি কেন তিনি সরকারী অবস্থান মোতাবেক দাঙ্গাবাজ র-এর স্বার্থের বাহক এজেন্ট চিন্ময় (যার আসল নাম চন্দন কুমার ধর) এর জামিনের বিরোধিতা করলেন তাই চিন্ময়ের সাগরেগেরা এপিপি সাইফুল ইসলাম কে কুপিয়ে খুন করে ফেললো। অথচ আপনি এক বিরাট দল বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এতে কোন প্রতিক্রিয়াই দেখালেন না? গতকাল সারাদিন চট্টগ্রামবাসীকে ধন্যবাদ দিতে হয় যে তারা ইসকনের কোন উস্কানিতে না মেতে কেবল আইনি প্রতিবাদ করে গেছেন। জনমানুষের সমসস্ত ক্ষোভ দুঃখকে তিনটা জানাজার মধ্যে শান্তভাবে ধরে রেখেছেন – অথচ কথিত কোন  ধর্মীয় উন্মাদনা দেখতে না চাওয়া আপনার কমিউনিস্ট মন  এসব তাতপর্যের কিছুই দেখতেই পেলেন না??? আপনি তো আসলেই কমিউনিস্ট? এবং কোন মানুষ না!  রক্তমাংসের মানুষ যা যেমন চিনি আপনি তা নন!! আপনি আপনার চেয়ারম্যান কে ক্ষমতা উপহার দিতে চান তাতে সেটা অভিনয় করে, আওয়ামি লীগ ২.০ হয়ে হলেও আপনার দলের নীতি-পলিসির সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নাই! বেপরোয়া!

আর দ্বিতীয় এসাইমেন্ন্ধ্যাট হল, ইউনুস সাহেব এর সাথে সন্ধ্যায় ইসকন নিষিদ্ধের প্রশ্নে উলটা আপনারা বলে এসেছেন যে  উলটা ১।  চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কেন গ্রেফতার করা হলো, তার কারণও জানতে চেয়েছেন আপনারা আর ISCKON এর সাথে আলোচনায় বসে শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে যাওয়ার মতো পরামর্শও প্রদান করে। ২। দৈনিক প্রথম আলো এবং The Daily Star এর ওপর যে (কথিত কল্পিত )আক্রমণ হয়েছে, সেটার ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখবার জন্য BNP এর পক্ষ হতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

সার কথা র- এবং মোদির হাত ধরে আপনারা যেকোন ভাবে ক্ষমতায় যেতে চান। তাতে সারা বাংলাদেশ আবার ১৬ বছরের জন্য ভারতীয় আধিপত্যের কবলে পড়ে গেলেও আপনারা নির্বিকার! এই হল আপনাদের দেশবিক্রির নয়া রাস্তা!

নিচের ছবিটার দিকে দেখেন।
মির্জা ফকরুল আলমগীরের এই উন্নতি একেবারে প্রগতিশীল=হিন্দুত্ববাদ গোষ্ঠির মধ্যমনি হয়ে আসরে জায়গা পাওয়া – এটা বিএনপি জন্মের পর থেকে যত নেতা এর ছিল তারা কেউ চিন্তাও করতে পারবেন?


একেবারে রাতারাতি মির্জার ইমেজ বদলে গেছে। তিনি কমিউনিস্ট প্রগতিবাদের পরিচয় ধারণ করে ফেলেছে। যেখানে ১৯৯১ সাল খালেদা জিয়া যখন প্রথম বারের মত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন – তখনও টিভি বলতে এক বিটিভি। সেই যুগে বিএনপি করা লোক দিয়ে বিটিভি চালাইবেন এই মুরোদ বিএনপির ছিল না। বিতিভি তখন নানান  কমিউনিস্ট প্রগতিবাদী প্রযোজকদের [মানে অনুষ্ঠান পরিচালক] চালাইতে হইত।
অথচ এক রাতেই মির্জা সব কমিউনিস্ট প্রগতিবাদী প্রযোজকদের বাপ হয়ে বসেছেন!! কী মজা মজা না? তাও আবার যে সে আসর না। কবি-কবিতা সাহিত্যের আসর!!! চিন্তা করা যায়???  কমু সেলিমের পাসে আসন নিয়ে বসেছেন! আমরা এটা তাহইলে কী দেখতেছি??????? রাতারাতি বিএনপির কমিউনিস্ট বিপ্লব????? এটা দেখার জন্য সম্ভবত আমি এতদিন মরি নাই!!!
দাবী করেছেন

ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে: ফখরুল

কারণ ফকরুলই তাই, সবকিছুতে ওবায়দুল কাদের কেও ছাড়িয়ে গেছেন!

একটা কথা বলা শেষ করবঃ
জেনারেল মঈন ও তার দুই সঙ্গী এখন কোন মতে আমেরিকায় মুদি দোকানে চাকরি নিয়েই প্রকাশ্যে আসতে পারেন না।
আগেরবারের ১৬ বছরের আধিপত্য ভারত শুধু হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়েই কায়েম করতে পারে নাই। অন্যতম যে কাজ করতে হয়েছিল তা হল ২০০৯ সালের পিলখানা। সেবার যা কেবল উর্দি এমন ব্যক্তিবর্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিল।  যারা ভেবে গুটি সাজাচ্ছেন অভিনয় করতেছেন আর ভাবছেন ওসব তো কেবল উর্দিদের উপর চলবে, পিলখানা হয়ে ফলে তাতে আপনার কী? সবকিছু একইভাবে দুবার ঘটে না। বিশেষ করে ‘প্রহসন’ যেগুলা!! এবার সেটা উর্দি সহ ইউনুস সরকার ও তা ছাড়িয়ে সিভিলিয়ান বহুদুর পর্যন্ত যাবে ……..!!! বেশির ভাগেরই তা জানা নাই। কাজেই দুপক্ষের মাঝে পড়েও কাটা পড়তে পারেন! অবজেকটিভ বা আল্লার দেয়া  বিশ্বাসঘাতকতা আর লোভের শাস্তি কত কিছু হয়!
তখন আপনি কোনদিকে মানে কোন ভুমিকায় থাকবেন? কাদের না হাসিনা? নাকি আজকের কাদের-হাসিনা!!!  হুশ করেন!

নিজের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে সেসব অন্তত বুঝে নিয়েন! তাই না?  আর শেষ কথা টা হল আপনি একজন পুওর অভিনেতা!
আর ক্ষমতা আদতে কিন্তু খুবই নোংরা আর এর চেয়ে বেশি তা রক্তাক্ত! এই অর্থে ক্ষমতা মানে কখনও লোভ করে পেতে যাওয়া বা চাওয়া ক্ষমতা [যার প্রতীক হয়ে আছেন ব্রি. খালেদ মোসাররফ], সে নিজে খুন হয় আর দেশসহ সবাইকেই খুন করে যায়!
যে ‘র’ কী, এটা কীভাবে কাজ করে; আর এর সাথে মোদির রাজনীতি যেটা আসলে একমাত্র তুলনীয় হিটলারের সাথে ফলে মোদি আর র – এদুইয়ের কম্বিনেশন এর অর্থ তাতপর্যই হল একটা ম্যাসাকার – এসব যে জানে নাই সে এখনও মায়ের গর্ভে আছে! মানে সে আসলে এখনও নিজ জন্মের পুর্বাবস্থায় আছে! তাই সে নাদান হওয়ারও উর্ধে; যোগ্য হয় নাই!

তবুও আপনার জন্য শুভ কামনা!

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

আপডেটঃ      ২ ডিসে.  দুপুর দুইটা  ২০২৪
শেষ আপডেটঃ      নভেম্বর ২০২৪

 

 

One thought on “বিএনপি কী ‘র’ বা ভারতীয় আধিপত্যের নয়া বাহক ১৬ বছরের পথে? 

Leave a comment