বগলে মোদিকে নিয়ে বাংলাদেশে জাপান যে ফাঁদে
গৌতম দাস
০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ রাত ২১ঃ ১৮
https://wp.me/p1sCvy-5WO
Bangladesh-India-Japan conclave discusses path……
আজ বণিক বার্তায় একটা রিপোর্ট ছাপা হয়েছে, “বাংলাদেশ-ভারত এর উত্তেজনা” শব্দ ব্যবহার করে। আশা করি এলেখা নিয়ে কিছু আলোচনা করব বলে বণিক বার্তা মাইন্ড করবে না। কারণ আমি কোন “প্রগতিবাদী” আলোচক নই। এই রিপোর্টে একটা প্রচ্ছন্ন ম্যাসেজ হচ্ছে বাংলাদেশ জাপান এর এডিবি এর নেহায়েতই একটা একটা উন্নয়ন প্রকল্প আছে। কিন্তু “বাংলাদেশ-ভারত এর উত্তেজনায়” সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাই আমরা যেব “বাংলাদেশ-ভারত এর উত্তেজনা” কমাই – উন্নয়ন প্রকল্পের খাতিরে।
সরি, জাপান সরকার লেখক এবং বনিকবার্তাও। আপনাদের এই পারসেপশন অনুমান এবং বর্তমান ঘটনাকে “বাংলাদেশ-ভারত এর উত্তেজনা” হিসাবে দেখা ও দেখানো সঠিক নয়। একেবারে মূল কারণ, জাপান মোদির মতই বাংলাদেশকে চুষতে একটা তথাকথিত কানেকটিভিটি প্রকল্পে ঢুকেছিল। কানেকটিভিটি শব্দটা দেখলেই আমাদের বুঝতে হবে এটা ভারতকে বিনা পয়সায় করিডোর দেয়া আর সাথে এজন্য ভারতকে অবকাঠামো সুবিধা দিতে বাংলাদেশের মানুষের কাঁন্ধে বিদেশি অবকাঠামোঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বিনা পয়সায় ভারতকে করিডোর দেওয়ার খেলাতার নামই হচ্ছে কানেকটিভিটি।
এবার জাপান হয়েছিল সেই অবকাঠামো ঋণদাতা যে ভারতের মতই কানেকটিভিটি এর নামে বাংলাদেশকে চুষবে। এক্ষেত্রে ভারত ও জাপান দুই সরকারই ধরে নিয়েছিল আসলে বলা উচিত জুয়া-বাজি ধরেছিল যে মোদির বসানো হাসিনা আরো টিকে যাবে ফলে তাদের কানেকটিভিটি ব্যবসাও। কিন্তু আল্লাহ মেহেরবান বলতেই হবে!
সব জুয়ার বোর্ড উলটা দিয়ে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা জাপান-ভারতের চোখে অবিশ্বাস্যভাবে হাসিনা কেই উপরে ফেলে দিয়েছে। আর এখন এতে জাপান বণিকবার্তা কিনে নিয়ে নাকি কান্না গাইতে এসেছে নেহায়েতই একটা একটা উন্নয়ন প্রকল্প এর খাতিরে যেন আমরা বাংলাদেশ-ভারত এর উত্তেজনা থামাই…।
বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনায় দুশ্চিন্তায় জাইকা ও এডিবি
এলেখা ছাপা হওয়াতে এটা হল সেই চিহ্ন যে, বাংলাদেশ-ভারত এর সম্পর্কটা তৃতীয় দেশের স্বীকার করার মত উত্তেজনা হয়ে হাজির হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। আর দ্বিতীয়ত, এই তৃতীয় দেশ হল, মোদির প্রিয় জাপান ভাইয়া! কোন জাপান ভাইয়া? নিচে দেখেন।
মোদির ভাইয়া কেন? মানে হুদাই চীনবিরোধী সেজে বা দেখায়ে সেইটা বেঁচে আমেরিকার কাছ থেকে কিছু বাড়তি সুবিধা ও আমেরিকান ক্ষমতার এঁটো-উচ্ছিষ্ট লেগে থাকা পাত্রে (মানে খাওয়া হয়ে গেলে সে পাত্রকে এঁটো বা ঝুটা পাত্র জ্ঞান করা হয়) একটু চাটা দিবার সুযোগ পেতেই – এটা হল মোদির ভারতের আমেরিকা প্রীতির লালচামি আর সেটা দেখায়, নিজ মুরোদ থাক না-থাক, এখান থেকেই বাংলাদেশের উপর আধিপত্য, এটার মোদির রুস্তমির খায়েশ!
অথচ মোদির ভারত সস্তা বিদেশি ঋণচাহিদার দেশ বা “বিনিয়োগ দরকারের ভারত” এই অর্থে ভারত কিন্তু আমাদের পর্যায়ের বা মানেরই ঋণ চাহিদার দেশ। কাজেই আমেরিকার কাছে ভারতকে চীনবিরোধী দেখায়ে সেই মিথ্যা-চেহারা বেচতে গিয়ে মোদির ভারতের চীনের কাছে থেকে দূর থেকে দূরে মানে তুলনামূলক অনেক সস্তায় যে ঋণ পাবার সুযোগ ছিল চীনের কাছ থেকে – কিন্তু সেই পথ ভারত নিজেরাই বন্ধ করে ফেলেছে। [যদিও ২০১৪ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হবার পর কয়েক বছরে বড় বড় চীনা ঋণপ্রকল্প মোদি নিয়েছিলেন।] কিন্তু এরপর থেকেই চীনের চেয়ে তুলনামূলক কম সুবিধাদি ও উচ্চসুদের জাপানি ঋণ হয়ে পড়েছে ভারতের একমাত্র ভরসা! এখন মোদির ভারতের জাপানি ঋণ নিবার অভিমুখ করে পররাষ্ট্রনীতি সাজাতেই পারে – এতে গাড্ডায় পরা বা না-পরা সবই তাদের ইচ্ছা। তাহলে বাংলাদেশে আমরা কেন কথা বলছি?
করিডোর একটা চরমতম বিতর্কিত শুধু নয় ক্ষতিকর প্রকল্পঃ
এটা এমনই চরমতম বিতর্কিত প্রকল্প যে কলোনি আমলেও বৃটিশেরা এভাবে আমাদের চুষে নাই। করিডোর নামে যেকোন প্রকল্প এটা ভারতের বাংলাদেশকে খোলাখুলি চুষে নেয়া, খাবলে খাওয়া এক প্রকল্প। বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতকে অবাধে সবকিছু পরিবহণের তা মাটির নিচে, সড়ক, রেললাইন, পানিপথে – এভাবে সবধরণের যানবাহনে, যেকোন সীমান্ত দিয়ে যতখুশি এবং সবই বিনা পয়সায় বা নামমাত্র (সময়ে বাংলাদেশিদের চেয়েও কম) মুল্যে নিয়ে এসব করিডোর আমাদের ভারতকে দিতেই হবে – এজন্য এটা ক্ষতিকর প্রকল্প।
অথচ জাপান এই প্রকল্পে নিজেকে ঘোরতরভাবে জড়িয়েছে, অর্থ ঢেলেছে – বলা হয়েছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। এতে জাপান যে ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছে তা হল,
এক. একেবারেই ভারতের স্বার্থে বাংলাদেশের জনগণের নামে ঋণপ্রকল্প নিবে বাংলাদেশের হাসিনা চোর-সরকার; আর জাপান সরকার সে প্রকল্পে প্রধান ঋণদাতা হয়ে জড়িয়ে যাবে? মানে ভারতের স্বার্থে কোন ঋণ প্রকল্পে ঋণ নেয়া আর বাংলাদেশের মানুষকে এই ঋণ এর বোঝা টানতে, পরিশোধ করতে হবে। জাপানের তাতে পরোয়া নাই? শুধু তাই না ভারত এতে নির্মিত সব অবকাঠামোর মুল ব্যবহারকারি, সকল সুবিধাভোগী হবে; অথচ এমনকি এর যে টোল আসবে সেটাও ভারত বইবে না। টোল দিবেই না বা ভারতের জন্য বিশেষ ছাড় নামমাত্র কিছু একটা হবে। হাসিনার উপদেষ্টা বলেছিলেন ভারতের কাছে টোল বা ট্যাক্স চাওয়াটাই নাকি অভদ্রতা!!! অথচ নেয়া ঋণ পরিশোধের দায় ভারত সরকারের না। এমনকি এর সুবিধা ব্যবহারকারি বাংলাদেশি হলেও যে টোল নির্ধারিত হবে সেটাও ভারত পরিশোধ করবে না। চাইলে নাকি সেটা অসভ্যতা হবে! অথচ এসব লুটপাটের খবর চোখের সামনে ঘটবে ঘটেছে সেটা দেখে-জেনেও জাপান এই প্রকল্পে বিনিয়োগ বা ঋণ দিতে এসেছিল।
কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের ঘাড়ে মোদির জাপান ভাইয়া প্রকল্প লটকায়ে দিবে? বিশেষ করে যখন একদিকে, এটা অর্থনৈতিক স্বার্থে দেখে নেয়া প্রকল্প নয়, কথিত স্ট্রাটেজিক স্বার্থ মুখ্য করে দেখে নেয়া মোদির প্রকল্প! আর তাতে জাপান নিজেই নিজেকে সংশ্লিষ্ট করেছে? এর মানে ঋণের অর্থ ভেরত পাবে কী করে সেটা বিবেচনা করে এসব প্রকল্প জাপান নেয় হয় নাই। অন্যদিকে জাপান কী দেখে নাই জানে বরং দেখেও না দেখা করে ফেলে রেখেছে যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এর মূল সুবিধাভোগী ভারত অথচ ঋণ পরিশোধের ভার বাংলাদেশের জনগণের! এধরণের একটা প্রকল্পে জাপান নিজেকে জড়িয়েছে কেন? আর এখন কান্নাকাটি কেন?
এমনকি আরেকটা তথ্য এখানে জানায় রাখি। একটা অবকাঠামো হিসাবে গড়া রাস্তা বা ব্রিজ এর টোল একজন বাংলাদেশির বেলায় যা চার্জ করা হবে একজন বিদেশির বেলায় সবচেয়ে বৈধভাবেই তা হতে হবে এর চেয়ে অনেক বেশি। মূল কারণটা বুঝে রাখেন। কেউ বাংলাদেশি মানেই হল, যুগ যুগ ধরে আমাদের পাবলিকের দেয়া ট্যাক্স এটাই সরকারের সকল আয়-সম্পদের উতস যেখানে ঐ রাস্তা বা ব্রিজ এই অবকাঠামো সেটাও সরকারের সম্পদ মানে পাবলিকের। তাই বাংলাদেশিরা যাদের দেয়া ট্যাক্সের অর্থ থেকেই সরকার চালানো টিকানো ইত্যাদি সব ব্যয় নির্বাহ করা হয় বলে ঐ সরকার চালানোর অর্থের যে অংশ এই টোল নির্ধারণে যুক্ত হওয়ার কথা তা যুক্ত করা হয় না।বা কম করা হয়। কিন্তু একজন বিদেশি যখন এর ব্যবহারকারী যারা সরকার পরিচালন কাঠামো খাড়া করা ও এর দৈনিন্দিন ব্যয় সেসব খরচের দায় তো তার নয় বা তাঁর থেকে নেয়া হয় নাই। তাই একজন বাংলাদেশি যে তার বাপ-চোদ্দপুরুষ সরকারকে প্রত্যক্ষে-পরোক্ষে ট্যাক্স দিয়ে আসছে যেটা আসলে সব রাষ্ট্রীয় সম্পদের উতস – তার অবদান আর একজন বিদেশির অবদান এক নয় বলেই – অবকাঠামোর টোল বিদেশির বেলায় বেশি ও ভিন্ন হবে।
আবার সাবধান আপনি ব্যাংককে গিয়ে স্থানীয়দের রেটেই টোল পরিশোধ করতে পারেন। কিন্তু আপনার ভুখন্ড পেরিয়ে যখন একটা বিদেশি-পড়শিদেশের ট্রাক বা ট্রেন পরিচালিত হবে উদাহরণ গুলো এক্ষেত্রে চিন্তা করতে হবে।
আরেকটা আরও বড় পয়েন্ট হল, ভারত বাংলাদেশ থেকে এই করিডোর পেলে ওর যা সুবিধা ও অর্থ সাশ্রয় হবে (যেমন নর্থ ইস্ট থেকে কলকাতা যেতে যেখানে পুরাটাই ভারতের ভুখন্ড এর উপর দিয়ে যাত্রা হলে সেক্ষেত্রে যাত্রাপথ হল প্রায় ১৭৫০কিমি আর বাংলাদেশের বুক চিরে গেলে এইপথ নেমে আসবে প্রায় ৩৫০ কিমি।) এই সুবিধা সবটাই একা ভারত নিবে [এর অর্থনৈতিক বেনিফিট এর কিছুই সে বাংলাদেশকে দিবে না]। আবার ভারতকে এই সুবিধা দিতে হলে নয়া পথ-অবকাঠামো তৈরির যে ঋণ নিবে বাংলাদেশ আর তা পরিশোধের দায়ও নিবে বাংলাদেশের জনগণ! কী মজা তাই না? ভারতের জন্য সবই লাভ আর লাভ! আর জাপান এখানে এসেছে এরই মাখনের ভাগ খেতে!
এখন জাপান কী – এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী কে আর দায় পরিশোধ করবে কে এসবের কোন কিছু জানে না? নাদান সে? না জেনেই এই প্রকল্পে একেবারে শুধু জাইকা না একেবারে তার প্রভাবিত এডিবি ঋণ এনে জাপান ঝাপিয়ে পড়েছে কী এমনি? এমন ভাবার কোন কারণ নাই!
এখন কথাটা আসলে খুব সোজা। জাপান যদি এসব প্রকল্পের অর্থনৈতিক ভায়াবিলিটির [viable বা দায় বইবার যোগ্যতা] যাচাই না করে থাকে বা উপেক্ষা করে থাকে তবে এর দায় কী বাংলাদেশের বা অন্য কারো? নাকি তা সরাসরি জাইকা ও এডিবির হবে; তাই নয় কী?
আরো বড় কথা হল, এই পুরা প্রকল্পটা হল, ভারতে বাংলাদেশের উপর অবৈধ প্রভাব এর উপর দাঁড়ানো হয়ে শুরু হয়েছিল। ভারত বাংলাদেশে জবরদস্তিতে একজন হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে আর এই সরকারের উপর দেশি-আন্তর্জাতিক সব ধরণের সমর্থন যোগাড় করে এনে দিবে আর এর বিনিময়ে হাসিনা ভারতকে বৈষয়িক সব ধরণের সুবিধা ও মারাত্মক সব অসম চুক্তি করে সুবিধা দিবে – এই ছিল অবৈধ প্রভাবে ভারতের বসানো এক হাসিনা সরকার। আর এটা তো জাপান সরকারের অজানা ছিল না। এর আগের যে জাপানি রাষ্ট্রদুত বাংলাদেশে ছিলেন তিনি তো ২০২৩ সালে বাংলাদেশে রাজনীতিতে – অনির্বাচিত অবস্থা নিয়ে – প্রকাশ্যে মুখ খুলেও ফেলেছিলেন একবার। তাহলে বৈধতার খবর না থাকা অথবা নড়বড়ে থাকা – মোদির বসানো পুতুল হাসিনা সরকারের সাথেই জাপান সরকার কেন ঋণ চুক্তি করেছিল? এর দায় কী জাপান সরকারের নিজেরই নয়?
এবার এর রিপোর্টের লেখকের প্রসঙ্গেঃ
বণিকবার্তায় এই রিপোর্টটা লেখা হয়েছে ভারতের চোখে বা ভারত-জাপানের মিলিত চোখে দেখে লেখা। যেমন কানেকটিভিটি [connectivity] এই একটা বিশেষ শব্দই অনেক কিছু এটা প্রকাশ করে। এই বিশেষ কানেকটিভিটি শব্দটা ব্যবহার করে কেউ কথা বলে বা লিখলে এর অর্থ হল, তিনি জেনে না-জেনে জবরদস্তিতে ভারতের বাংলাদেশের উপর দিয়ে করিডোর সুবিধা নেওয়ার এক সাফাইমূলক শব্দ ব্যবহার করে কথা বলছেন। ভারত জানে বিনা পয়সার করিডোর সুবিধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কথা উঠবে। তাই আগেভাগে এটাকে শব্দের মারপ্যাচে যেটুকু শুশীল ভদ্র ফেয়ার একটা ইমেজ – যে বিনা পয়সায় করিডোর নেয়াটা কোন অন্যায্য কাজ হয় নাই – এটা দেখাতেই এই শব্দ। এই শব্দ দিয়ে ভারত (বা তার হাইকমিশনার) বুঝাতে চায় যে আমরা এই অঞ্চলের দেশগুলো একসাথে পারস্পরিক বাণিজ্যিক সুবিধা দেয়ার জন্য যেন এসব করছি – আমরা যেন এক কথিত বাণিজ্যিক কানেকটিভিটি যোগাযোগের বাণিজ্য ব্যবস্থা করতে মেতে উঠেছি। আসলে ব্যাপারটা এর উলটা। এটা কেবলমাত্র ভারত সরকারকে সুবিধা দিতেই ক্থা হয়েছে। ফলে এতে কোন আঞ্চলিক বা অনেক রাষ্ট্রের মিলিত উদ্যোগ নয়, এমনকি এটা সবার কোন বাণিজ্যিক উদ্যোগ নয়। কেবলমাত্র একমুখি – ভারতের সুবিধা মুখি এই ততপরতা। বিনিময়ে বাংলাদেশের একজনই এর সুবিধা পেতেন তিনি শেখ হাসিনা। সেটা হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার নিশ্চয়তা!!!
কী হতে পারত কোন বাণিজ্যিক করিডোর ব্যবস্থাঃ
আসেন কল্পনা করি; বাংলাদেশের উপর দিয়ে গড়া একেবারেই বাণিজ্যিক করিডোর ব্যবস্থাটা কী হতে পারত। ভারতের নর্থ ইস্ট এটাই দুনিয়ার শেষ সীমানা নয়। এর ওপারে বা আরো উত্তরে আছে চীনের তিব্বতের একাংশ; এছাড়াও আছে ভারত পেরিয়ে নেপাল ও ভুটান এর ভুখন্ড ইত্যাদি। এসব ভুখন্ড বা এদিকগুলো একেবারেই ল্যান্ডলকড। কাজেই আসেন ভারতও এসব দেশ-ভুখন্ডকে ভারতের উপর দিয়ে করিডোর দিয়ে দেক। যাতে ভারতের নর্থ ইস্ট সহ যেকোন দেশই বাংলাদেশের উপর দিয়ে তৈরি সব অবকাঠামোই ব্যবহার করতে পারে। তাতে সেটা মাটির নিচে, উপরে রেল সড়ক, নদিতে পোর্ট এমনকি মংলা বন্দর এমনকি আরো বড় আমাদের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর ইত্যাদি সব ধরণের অবকাঠাম ব্যবহারকারি যেকোন দেশকেই বাংলাদেশ এই সুবিধা দিতে পারে। আর সকলকে সতর্ক ও সাবধান করে দেই। সোনাদিয়া সহ বাংলাদেশের এমন সব অবকাঠামোই হবে একেবারেই বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক বৈশিষ্ঠের। মানে কোন সামরিক-স্ট্রাটেজিক কোন কিছু তাতে থাকবে না, রাখা হবে না। সামরিক ব্যবহার থাকবে না তা বাংলাদেশ প্রতিশ্রুত থাকবে ব্যবহারকারি সবদেশের কাছে।
এতে ভারত বা জাপান কী রাজি? এদিকটা ভারত বা জাপানের সরকার বা তাদের বিখ্যাত সব এক্সপার্ট এরাকেউই কী চোখ দিয়ে কী দেখেছিল? দেখে নাই কেন?
উত্তর খুব সহজ। দেখে নাই। বরং জাপানের লোভি চোখ যদি মদির মত হয় – ভারত যেভাবে হাসিনাকে জবরদস্তিতে ক্ষমতায় বসিয়ে অবৈধ অনির্বাচিত ও গুম-খুনের রাজত্বের এক সরকার রেখে বাংলাদেশের সব লুটতে পারে তবে জাপানও কেন এর ভাগ নিবে না – এটাই ছিল জাপানের চোখ ও অবস্থান। শুধু তাই না, বলা যায় জাপান এই ঋণচুক্তি টা করেছিল এটা ধরেই নিয়ে যে হাসিনা যেন চিরদিন বাংলাদেশের ক্ষমতায় থেকে যাবে – বাংলাদেশের জনগন চিরদিন যেন এই অবৈধ ভারতের চর হাসিনার ক্ষমতাকে সহ্য করবেই – উপরে ফেলবে না। এটাই ধরে নেয়া ছিল! যার সোজা অর্থ জাপান সরকার তো কোন ঋণ দানের চুক্তি করে নাই আসলে যেন জুয়া খেলতে বসেছিল। জুয়ার রিস্ক নিয়েছিল যে ভারতের পুতুল হাসিনা ক্ষমতায় থেকেই যাবে.…..!!! কিন্তু জুয়াখেলার জাপান হেরে গেছে। সেই হার এটা। জাপান সেই জুয়া খেলায় হেরে গেছে। কাজেই বিশ বিলিয়নের ঋণ এর দায় কী কেবল এবং কেবলমাত্র ভারত-জাপানের নয়? বাংলাদেশের জনগণ এর কোন দায় কেন নিবে?
এখানে সবচেয়ে ইতরোচিত শব্দ হল ইন্দো-প্যাসেফিকঃ
লেখক বলছেন এ বিষয়ে জাইকার ওয়েবসাইটে বলা আছে, ‘এ বিষয়ে জাইকার ওয়েবসাইটে বলা আছে, ‘অবাধ ও মুক্ত ইন্দোপ্যাসিফিক নিয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার পরিকল্পনার ভিত্তিতে দ্য বে অব বেঙ্গল-নর্থইস্ট ইন্ডিয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভ্যালু চেইন ধারণাটিকে সামনে নিয়ে এসেছে জাপান।
“এ বিষয়ে জাইকার ওয়েবসাইটে বলা আছে, ‘অবাধ ও মুক্ত ইন্দোপ্যাসিফিক নিয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার পরিকল্পনার ভিত্তিতে দ্য বে অব বেঙ্গল-নর্থইস্ট ইন্ডিয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভ্যালু চেইন ধারণাটিকে সামনে নিয়ে এসেছে জাপান।”
যার সারার্থ হল, এটা ভারত-জাপান করেছে তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক স্বার্থ বাস্তবায়নের কারনে। আর এটাই নাকি তাদের – অবাধ ও মুক্ত ইন্দোপ্যাসিফিক এর ধারণা ও নমুনা!!!
আমরা উপরে দেখলাম এটা আসলে ছিল জাপান সরকারের এক জুয়া খেলা যে হাসিনা ক্ষমতায় থেকে যাবে আর ভারত-জাপান যোথভাবে বাংলাদেশকে চুষতেই থাকবে……!এখানে হা হা হা করে এক লম্বা হাসি হবে।
বণিকবার্তা ও এর লেখক এটাকেই অবাধ ও মুক্ত ইন্দোপ্যাসিফিক এর ধারণা ও নমুনা বলে চালিয়ে দিতে এসেছেন?
উপরে আমরা দেখেছি লেখক এটাকে কানেকটিভিটি বলে চালাতে এসেছিলেন।
এর সাথে লিখার ভিতর পাবেন ভারতের কথিত লুকইস্ট জাতীয় প্রপাগান্ডা। আবার দেখেন লেখকও আমাদের বিশ্বাস করতে বলেছে এসব নাকি কোন -“উপ-আঞ্চলিক জোট সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশনের (সাসেক)” এর অধীনস্ত প্রকল্প! তো ভারত ছাড়া আর বাকি দেশ কারা ওখানে? মানে কানেকটিভিটা একা ভারতের স্বার্থ নয় এটা সবসময় ভারত তুলে ধরবে এতা অঞ্চলিক আরো অনেক দেশের যেন! অথচ খুজে সুবিধাভোগী হিসাবে ভারত ছাড়া কেউ নাই!
এর মানে এই রিপোর্টের লেখক (বা হতে পারে খোদ বনিকবার্তাও) জাপান-ভারতের স্বার্থের পক্ষে এক প্রপাগান্ডা করতে এই রিপোর্ট হরেছে। আর নয়ত এরা একেবারেই ন্যাকা-বোকা সরল! সেজন্য জাপানের ওয়েব সাইট খুজে সাফফাই খুজে নিয়ে আসতে গেছে!
মূল বিষয়টা কিঃ
শুরুতে ও শিরোনামে – “বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনায়…” বলে যেশব্দ কয়টা লিখেছেন সেটাই মুল বিষয়। হাসিনাকে পুতুল সরকার বসিয়ে আগে থেকে ভারত পরে তাতে যোগ দেয়া জাপান যাতে তারা বাংলাদেশকে লুটতে পারে। ফলে এখন যেটাকে তারা বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা বলছেন সেটা আসলে আরো বড় কিছু। এতা আসলে আগামিত্এ মোদির ভারত আবার লুটের ব্যবস্থা চালু করতে একটা সরকার বসাতে পারবে কংবা পারবেই না – এখনকার লট=ড়াই যেটাকে তারা শুধু উত্তেজনা বলছেন এরই মুল লড়াই। বাংলাদেশে আবার ভারতের আধিপত্যের কোন ১৬ বছরের সরকার কায়েম হবে কি হবেই না এরই লড়াই চলছে। তাতে এটাকে লেখক বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা বলে লঘু করতে চেয়ে লাভ নাই। এর প্রথম পর্যায়ে জাপান সরকার জুয়ায় হেরেই গেছে! তাই কোন রিপোর্টার এথেকে জাপানকে আর জিতাতে পারবে না!!! সরি জাপান!! হাসিনার বেনিফিসারি লোভি জাপান, সরি!!!
লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
আপডেটঃ ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ রাত ১১ঃ ১৭
শেষ আপডেটঃ ২০২৪

