মোদির মুসলমান-ঘৃণা ছড়ানো হিটলারিজমের পরিণতি
গৌতম দাস
০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ দুপুর ১৩ঃ ০৮
https://wp.me/p1sCvy-5XN
Protesting residents raised slogans against the former owner Dr Ashok Bajaj, asking him to take the house back – pic- AK Mishra BBC
ব্যানারে যা লেখা এর বাংলাটা হবে সম্ভবত এরকমঃ
ডাঃ অশোক বজাজ হায় হায়
নিজ বাড়ী (মকান) ফেরত নেন
নিজ বাড়ী ফেরত নেন
নিবেদকঃ সমস্ত টি.ডি.আই. নিবাসী
এই পুরা রিপোর্ট এটা বিবিসি ইংলিশ থেকে নেওয়া। লিঙ্ক এখানে নিচে শিরোনা্মের সাথেঃ
Muslim couple forced to sell house after protests by Hindu neighbours
ভারতের উত্তর প্রদেশ! হা ঠিকই ধরেছেন, মুখ্যমন্ত্রী ‘বুলডোজার যোগীর’ উত্তর প্রদেশ! ভারতের এই রাজ্য বা প্রদেশের পশ্চিম-দিকে এক শহর এর নাম মুরাদাবাদ [Moradabad is an industrial city; Moradabad district] আর এখানেই ঢাকার বারিধারার মত পশ হিন্দু [posh TDI City] মানে উচ্চ আয়ের শহুরে হিন্দুদের বসতবাড়ি এলাকা বা এক কলোনি যার নাম টি.ডি.আই. সিটি।
উপরের এই ছবিতেই আপনারা দেখছেন কিছু এর বাসিন্দা ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
তাদের এক পড়শি ছিলেন ডাঃ অশোক বাজাজ [Dr Ashok Bajaj] যার চোখ অপারেশনের হাসপাতাল আছে শহরে। তাঁর প্রায় চল্লিশ বছরের পুরানা কলিগ আরেক ডাক্তার বন্ধু যারা আবার স্বামী-স্ত্রী উভয়েই ডাক্তার [কিন্তু ধর্ম পরিচয়ে তাঁরা মুসলমান]তাদের কাছে টিডিআই কলোনির বাড়িটা বাজাজ সাহেব বিক্রি করেছেন। এঘটনাকে কেন্দ্র করে ছবির এই হিন্দু বাসিন্দাদের ক্ষোভ হল যে মুসলমানের পাশে তারা বসবাস করতে পারেন না। তাই তাদের একজন যেমন […residents Megha Arora saying that Dr Ashok Bajaj, a resident, had sold his house to a Muslim family without consulting them.] মেঘনা অরোরা-র মুখ দিয়ে আসা দাবী হল, বাড়ি বিক্রির আগে বাজাজ সাহেবের এনিয়ে আলোচনা-অনুমতি নেয়া উচিত ছিল। আর তাই তাদের এখনকার দাবী হল যেহেতু ডাঃ বাজাজ সাহেব তা করেন নাই অতএব তাঁর মুসলমান কে বাড়ি বিক্রি এটা ডাঃ বাজাজ-কে এখন বাতিল করতে হবে। তাই ব্যানার টাঙিয়ে তাদের প্রতিবাদ। এরা কিন্তু আম আদমি না। রীতিমত উচ্চ আয়ের পস নাগরিক, পড়ালেখা করে প্রফেশনে আসা তারা ভারতীয়!! পরবতিতে তাই আপোষ। ওয়ার্ড কাউন্সিলারের কথিত মধ্যস্থতায় মুসলমান ডাক্তার দম্পত্তিও তাঁদের কেনা বাড়ি ফেরত-বিক্রির সুযোগ নিতে পেরে যেন জানে বেঁচে গেছেন!!! এই হল, বিবিসি্র এই রিপোর্টার সারকথা!
এখন মুরাদাবাদ ধরনের ঘটনাগুলো এগুলোই কী আরএসএস-বিজেপির মোদিকে এখনকার বাংলাদেশে মুসলমানবিদ্বেষী মিথ্যা হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে প্রপাগান্ডা করায় নাই? একই চলমান প্রক্রিয়া নয়? দুই ধর্মীয়-এথনিক জাত, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাঙ্গা [পাঠক দয়া করে এটাকে কথিত সাম্প্রদায়িক শব্দে বলবেন না। কারণ, সাম্প্রদায়িক শব্দটাও হিন্দুত্ববাদের বয়ান ও এর ভাষ্য। যেমন, ভারত সরকারি ভাষ্যে বলেছিল OIC নাকি ‘সাম্প্রদায়িক’ সংগঠন! সেই কান্ড দেখেন এখানে। এটাই এথনিক-জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদ; [মানে আমার ধর্মীয়-এথনিক জাত এটাই শ্রেষ্ঠ – এমন দাবী করা ] এভাবে, এটাই ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের রাজনীতির মুল ধারা বানিয়ে ফেলেছেন মোদি। এখন পড়শি দেশেও সেই বয়ান তা ছড়াচ্ছেন। এভাবেই পুরা অঞ্চল মানে সব পড়শি হয়ে এশিয়ায় ছড়াবেন তিনি – এশিয়ান হিটলার হয়ে উঠতে চাইছেন মোদি! কাজেই আপনারা যার যার অবস্থান স্পষ্ট করেন যে, কে কোনদিকে অবস্থান নিবেন! কেবল আমরা হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই এক থাকতে চাই – এই সুশীল নরম হিন্দুত্ববাদি অবস্থানে আর কুলাবে না। মুলকথাটা হল, এথনিক জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদ; আপনি এর পক্ষে না বিপক্ষে থাকবেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
“আমরা হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই, এক থাকতে চাই” – এটাও সুশীল নরম হিন্দুত্ববাদি বয়ান; একে “কংগ্রেসি হিন্দুত্ববাদ” বলেও বুঝতে পারেন। এটা একালের ছলনার বয়ান! একালের বিচারে। কারণ মোদি হিটলারিজমের ড্রাম বাজাচ্ছে এ’যুগে; আর আপনি সেকালের প্রগতিশীলতা=হিন্দুত্ববাদের বয়ান এখন আকঁড়ে ধরে ভাবছেন এটা বোধহয় মোদি মোকাবিলার বয়ান! এছাড়া, আপনারা ভাল মানুষ – তা বুঝানো যাবে ভেবে এই সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন! আসলে আপনি বোকা ও সরল তাই আপনি এখন প্রতারিত হবেন। কারণ আপনি জানেনই না শুধু মোদি-ই না দেশীয় প্রতারক (imposter) এরাও সর্বোচ্চ ততপর। ব্ল্যাকমেল হয়ে এরা এখন র-এর হাতে বাধা পুতুল বা দাসী; এদের সব জ্ঞানবুদ্ধি তাই এখন র-এর সেবায় তাদের চরণে নিবেদিত! এমন লেবাসে যারা – হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই – শ্লোগান দিয়েই কথা বলে আর, এরা চিন্ময়ের গলা জড়িয়ে ধরছে বা কোলে উঠে পড়ছে – অথবা চিন্ময়ের মত হিটলারি দাঙ্গাবাজদেরও নাকি অধিকার আছে বলে ইউনুসকেও পটিয়ে ফেলতেছে – আপনাকে একালে এদেরকে সবার আগে চিনতে হবে! নাইলে এদের হাতের পুতুল হয়ে থাকবেন আপনি। যখন বুঝবেন তখন অনেক দেরি, সব শেষ হয়ে যাবে হয়ত!
ঘটনা বিচারে খুবই কমন আমাদের আশপাস এর ঘটনা মনে হবেঃ
মোদি হতে যাচ্ছেন এশিয়ার হিটলার! এখন আপনি কী এটা চেয়ে চেয়ে দেখবেন? আরেক এথনিক জাত ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের জোশে পালটা বেরিয়ে পড়বেন? নাকি সব ধরনের এথনিক জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদ – এর বিরুদ্ধে মানে, নয়া হিটলারিজমের বিরুদ্ধে দাড়াবেন? এটাই আপনার সচেতন সিদ্ধান্ত হতে হবে, নিতে হবে!
আমরা একাদেমিক শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে খুব কম লোকেই জানি হিটলার কেন কুখ্যাত! বড় জোর আবছা করে আমরা জানি হিটলার একটা খারাপ লোক। তাও তিনি আমাদের এ-অঞ্চলের না ঐ দুরের পশ্চিমা বা ইউরোপের দেশে বোধহয় কিছু একটা করেছে বলে শুনি – এই হল আমাদের শিক্ষিতদের জানাশুনা। অনেকে ওদেরকে “ইহুদি-খৃশ্চান” অথবা চাইকি “সাদাচামড়াদের” কারবার বলে মনে করে ফেলতে দেখেতে চাইতে পারেন! সরি, এগুলো এত দুরের কেউ বা কোন ঘটনা না। এটাই মোদি, এশিয়ান হিটলার – হিটলারিজমে আপনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতে আগিয়ে আসছে! জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদ এর গর্ব বা এথনিক জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদ এর সুরসুরি খুবই ভয়ঙ্কর! আপনি এর শিকার হয়ে যেতেও পারেন যদি আপনিওও কোন না কোন জাতিবাদের ঝান্ডাধারী হন!!! মোদি আপনাকে ডেকে, টেনে হিচড়ে ওর নিয়মের খেলায় কখন সামিল করে ফেলেছে তা বুঝবার আগেই সব শেষ হয়ে যেতে পারে!
খুবই কম কথায় বললে, হিটলার অবশ্যই আরেক ‘জাতিবাদি’ ছিলেন। তাতে অনেকের মনে হতে পারে তাতে অসুবিধা কী আমরাও তো বাঙালি জাতিবাদি না হয় বাংলাদেশি জাতিবাদি, ইসলামি জাতিবাদি কিংবা জুম্মু জাতিবাদি ইত্যাদি অনেক কিছুর জাতিবাদি! তবে, এবার যদি বলি হিটলার উগ্র জাতিবাদি তো এবার তারা বলবেন হয়ত – ওমন একটু আধটু উগ্রতা অনেকের (অনেক জাতিবাদির) মধ্যে থাকে!
তবে এরপর এসবের বিস্তারি জবাব হবে – এসবই আসলে শাহরিয়ারের নির্মুল কমিটি মানে জাত নির্মুল বা এথনিক ক্লিনজিং [ethnic Cleansing] এর কথা। এককথায়, উগ্র জাতিবাদিরা আসলে এটাই! পড়শি বা অন্য ধর্মের লোকজনকে তাদের গুষ্ঠিসহ ঝেটিয়ে কচুকাটা নির্মুল বা উপড়ে ফেলে দেওয়া – এটাই হিটলারিজম! । আর এর শুরুটা সব সময় হয় এভাবেই হিন্দু-মুসলমান, একই ধর্মের দুই মজহাব, কিংবা গায়ের রঙ সাদা বনাম কালো-বাদামি আর এটাই হিটলারের বেলায় ছিল ইহুদি-ঘৃণা ইত্যাদি। শুরুতে হিটলার ছড়িয়েছিলেন যে আমরা জর্মান জাতি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জাতি এজন্যই আমাদের চোখ নীল রংয়ের যা সারা ইউরোপেও অন্য কারও নাই। এজন্য বাকি সবাইকে আমাদের কথাই মানতে হবে। আমরাই শ্রেষ্ঠ – তাই! এই জর্মান জাত শ্রেষ্টত্ববোধ বা শ্রেষ্ঠত্ববাদ – সেকালের হিটলারের জর্মানিতে তিনি এই বয়ানে জর্মানিদের সকলকে কখন আপ্লুত করে করে অন্ধ-ঘৃণায় সামিল করেছিলেন তা পালটা বুঝে বা হুশে ফেরত আসবার আগেই সব শেষ! যুদ্ধ শেষ! ম্যাসাকার ঘটাসহ সব শেষ! ১৯৪৫ সালের আগষ্ট এসে পড়েছিল!
এটাকেই আমি বহুবার এথনিক-জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদি চিন্তা বলে চিনিয়েছি আপনাদের কাছে। যা শুরুতে খুবই সাধারণ থাকে আর শেষ হয় একটা নির্মুল বা এথনিক ক্লিনজিং [ethnic Cleansing] এর বিশাল ঘটনা হিসাবে। যখন তাকে আমরা হিটলারিজম বা জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদিতা বলে দেখতে পাই। সার কথাটা হল, আমার জাত বা আমার ধর্ম, আমার গায়ের রঙ, আমার ভৌগলিক অবস্থান (পাহাড়ি না সমতলি) ইত্যাদি কোন একটার প্রসঙ্গ তুলে আমিই শ্রেষ্ঠ, আমার এথনিক-জাতই শ্রেষ্ঠ, আমিই শ্রেষ্ঠ – এই বয়ানগুলোর জন্ম হয়! অতএব আমার আধিপত্য, তোমাদের উপর আমার রুস্তমি তোমরা সকলে মেনে নেও – নাইলে আমি তোমাদের নির্মুল করে দিব। এই হল হিটলারিজমের বয়ান, এর মূল লক্ষ্য বা টার্গেট! আমাদের ওমুক যুদ্ধে আমাদের ওমুক ধর্মীয় নেতা কীভাবে বিজয় এনেছিলেন জানো? আমরা সেই শ্রেষ্ঠ জাত! অথবা শ্রেষ্ঠ ধর্মের লোক! উত্তরসুরী, একালের শ্রেষ্ঠত্ববাদি! সব জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদি খুঁজলে তাদের পুরানাকালের ইতিহাসে এমন অনেক গল্পকাহিনী খুঁজে পেতেই পারে। আর সেগুলাই তারা তাদের নির্মুল কমিটির নামে হাজির করে থাকে। যেমন ধরা যাক খুবই সাদাসিধা মনে হবে এই বয়ান টা যেমন – আমাদের আছে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বহমান ভূমির শেখ মুজিব!! লও লও লও সালাম শেখ মুজিব ইত্যাদি ইত্যাদি – দেখেন তো মিলে কিনা!
মোদির উস্কানি-সুরসুরিতে পা দিয়েন না! গত ২৭ নভেম্বরের [পিপি সাইফুল ইসলাম এর হত্যার পরের দিন] চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের মত শক্ত নিয়ন্ত্রিত ও পরিস্কার হুশে থাকা মানুষ থাকেন!
পাঠকদের প্রতি আমার বিনীত আবেদন, এলেখা পড়ার পরে দুদন্ড সবাই নিজের সাথে যেন বসবেন! নিজের সাথে একান্তে কথা বলেন! পরে যা হয় সিদ্ধান্ত নিয়েন!!!
লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
শেষ আপডেটঃ দুপুর ০২ঃ ৩২ ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

