হিন্দুত্ববাদের বয়ানের উপর দাঁড়িয়ে যেকোন বিবৃতিই অর্থহীন


হিন্দুত্ববাদের বয়ানের উপর দাঁড়িয়ে যেকোন বিবৃতিই অর্থহীন
গৌতম দাস
০৮ ডিসেম্বর ২০২৪  দুপুর ০১ঃ ০৮
https://wp.me/p1sCvy-5Yx

 

ভারতে হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিবৃতি অর্থহীন

হিন্দুত্ববাদের বয়ানের উপর দাঁড়িয়ে ভারতের কারো উদ্দেশ্যেই দেয়া বিবৃতি অর্থহীন; মানে হল সবার আগে মুখ্যত খেয়াল করতে হবে আপনি কার বয়ানে কথা বলবেন? নিজস্ব নাকি ভারতের হিন্দুত্ববাদের?
এ’সম্পর্কে আপনার সচেতনতা লাগবে। যে বয়ান-পরিভাষা আপনার জনগণের বিরুদ্ধে সেই পরিভাষাই ব্যবহার করে এবং সেই চিন্তা-কাঠামোই ব্যবহার করে আপনি এই শয়তানি ও অসৎ ততপরতার বিরুদ্ধে লড়তে পারবেন না।

আমি একটু দেরিতে, ইতোমধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর ২০২৪  “ভারতের জনগণের উদ্দেশে ১৪৫ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি শিরোনামে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে মিডিয়ায়।
বাইরের চেহারায় এটা সিপিবি ঘরানার চেয়ে আলাদা মনে হতে পারে কারণ মোদি সরকারের বদলে এখানে “ভারতের জনগণের উদ্দেশ্যে” – বলে বলা হয়েছে। কিন্তু এরপরেও এটা যে কার সেই। কারণ, এক. এটা যারা লিখছে তাদের আলাদা কিছু করার প্রয়াস হয়ত কিন্তু তা মর্ম বদল ঘটাতে পারে নাই। আর দ্বিতীয় কারণ, ইতোমধ্যেই ‘ভারতের জনগণ’ আর ‘সরকার’ বলে একটা ছুপা ভাগ তৈরি করেই কিন্তু র-এর পক্ষে কাজ-ততপরতা করতে আরেক প্রতারক-মানব [imposter] ইতোমধ্যেই নিজেকে ধুর্তভাবে হাজির করে রেখেছে। চিন্ময়ের সাথে প্রকাশ্যে বিসদৃশ্য গলাগলি দেখিয়েছে আর চিন্ময়ের পক্ষে বেপরোয়া সাফাই নিয়ে হাজির হয়ে গেছে।  আবার ‘ভারতের জনগণ’  বলে কী কেউ বিজেপি-মোদির হিন্দুত্ববাদী বয়ানের বাইরে কেউ আছে? বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন হচ্ছে, শাখা সিন্দুর পড়তে পারছে না ইত্যাদি ডাহা মিথ্যা যে বয়ান মোদি দাঁড় করিয়েছে তা কী খোদ সিপিএম, কংগ্রেস, মমতা ইত্যাদি এরা কী এর বাইরে? নাকি মিথ্যাভাবে একই নির্যাতনের গল্পের বিবৃতিতে সবদলগুলোও ইতোমধ্যেই দিয়েছে? এককথায় ভারতের কোন দলই নাই যে মোদির মিথ্যা ভাষ্যের বাইরে! তাহলে এসবের বাইরে কারা এখন “ভারতের জনগণ” আছেন যাদের কাছে পৌছাতে এই বিবৃতি চেষ্টা করছে? অর্থাৎ এককথায় বিজেপি-মোদির বয়ানের বাইরে ভারতের এখন মোটামুটি কেউই আর অবশিষ্ট নাই। কাজে ফাঁকা কল্পনা করে লাভ কী?

আসলে মূলকথাটা হল সারা ভারত এখন হিন্দুত্ববাদের বয়ানে ইসলামবিদ্বেষী নেকড়ে হয়ে কাঁপতেছে, যেন ঝাপিয়ে পড়বে বাংলাদেশের উপরে!  আর সেই সময়ে আমরা দেখছি ১৪৫ জনের ভাষ্য বলে এক বিবৃতি যার প্রথম কয়েকটা শব্দ হল  ভারতে হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে – নাকি তারা এই বিবৃতি দিচ্ছে????
কিন্তু এই সাম্প্রদায়িকতা জিনিষটা কী? কাদের বয়ান ভাষ্য ন্যারেটিভের পরিভাষা এটা? এটা তো হিন্দুত্ববাদেরই পুরানা পরিভাষা!!! তার মানে হিন্দুত্ববাদী পরিভাষাসাম্প্রদায়িকতা, অসাম্প্রদায়িক ইত্যাদি – এসব  ব্যবহার করে এই বিবৃতিদাতারা হিন্দুত্ববাদ এর বিরুদ্ধে লড়তে চাইছেন!!!!
এখানে লড়া মানে ফিজিক্যাল লড়াই না বরং বয়ান ভাষ্য সামনে রেখে লড়াই। তাহলে আপনি কার বয়ানে নিজের কথা বলবেন ও লড়বেন? নিজস্ব নাকি ভারতের হিন্দুত্ববাদের?

ভারতের জনগণের উদ্দেশে ১৪৫ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি


অবশ্য কথাটা এভাবে লেখায় আমাদের ‘দেশি’ বুঝের  জাতিবাদি মন বলে উঠবে অবশ্যই নিজস্ব!! কিন্তু কীভাবে বুঝবেন বয়ান-ভাষ্য আপনাদের নিজস্ব? এর জবাব অত তড়িৎ কারো মুখ দিয়ে আসবে না।
কারণ, সেক্ষেত্রে মুখ্য বাস্তবতা ও ফ্যাক্টস হল, আপনার কোন আলাদা বয়ানই নাই। মূলত হিন্দুত্ববাদের বয়ানটাকেই আপনি এতদিন প্রগতিবাদী বয়ান মনে করে এসেছেন আর সেটাই আউরাইতেছেন! এছাড়া বিবৃতিতে এই যে হিন্দুত্ববাদ বলে শব্দ লিখেছেন এটাও তো আপনাদের পরিভাষা শব্দ নয়।
আপনাদের শিখা পরিভাষা হল সাম্প্রদায়িকতা বা অসাম্প্রদায়িক এগুলা যেগুলা চালু করেছিল প্রথমে জমিদার-হিন্দুরা (১৮০০ সালের পর থেকেই) পরে ছুপা কংগ্রেসিরা (১৮৮৫ সালে)! আর আপনারা হিন্দুত্ববাদ এই শব্দটা শিখতে বাধ্য হয়েছেন শাহবাগের পরে [আগে নয়] অন্তত ২০১৪ সালের পরবর্তী বাংলাদেশ। এখন সমস্যা কী হয়েছে দেখেন! আপনারা বিবৃতিতে একইসাথে “ভারতে হিন্দুত্ববাদী শক্তি” আর “সাম্প্রদায়িকতার” এমন দুটার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। অথচ এদুটা একসাথে ব্যবহারযোগ্য শব্দ নয়।  আপনি যদি সত্যিই হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধ কিছু হতে চান বুঝেশুনে ফিল করে তবে আপনাকে সাম্প্রদায়িক শব্দের ব্যবহার ত্যাগ করতে হবে। কারণ সাম্প্রদায়িক শব্দটা তো জমিদার-হিন্দুদের চালু বয়ানের শব্দ যা পরে ছুপা (সফট হিন্দুত্ববাদী) কংগ্রেসিরা তুলে নিয়ে তাদের বয়ানে স্থাপন করেছে। যেখান থেকে আপনারা এটা পবিত্র জ্ঞান করে তুলে নিয়েছেন! কোন বয়ান নির্মানে কিছু মার্কামারা বয়ান ভাষ্যের প্রতিনিধি চিহ্নমূলক শব্দ থাকে। সাম্প্রদায়িক এই শব্দ ও পিছনের ধারণাটাতে তা আছে – সাম্প্রদায়িক নিজেই এক হিন্দুত্ববাদি বয়ানের মার্কামারা শব্দ!  আপনি চাইলেই  তাই একই সঙ্গে হিন্দুত্ববাদীবিরোধীতা আবার সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী হতে পারেন না, পারবেন না। 

এখানে হিন্দুত্ববাদের বয়ান কোনটা?
মুখ্যত  অসাম্প্রদায়িকতা বা সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি এসম্পর্কিত যত শব্দ আছে সবগুলোই – হিন্দুত্ববাদের বয়ান-ভাষ্যের চিহ্ন। বহুবার আমি লিখেছি এটা বাংলাদেশের কারও বয়ান বক্তব্যের শব্দ, ভাষ্য হতে পারে না। জমিদারহিন্দু যারপর নাই ক্ষুব্ধ হয়েছিল ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান কায়েম হওয়াতে। কারণ পাকিস্তান হওয়ার সোজা মানে হল তার জমিদারি উচ্ছেদ। যদিও কথিত শ্রেণী-বোদ্ধা কমিউনিস্টেরা আজও ভান করে যে তারা এই জমিদার শ্রেণির (শ্রেণীস্বার্থের) উচ্ছেদের দিকটা দেখতে পান নাই! ার খাঁড়া কথাটা হল, জমিদারি ব্যবস্থার উচ্ছেদ মানে হল জমিদারি কেন্দ্রিক হিন্দুত্ববাদি সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, কালচারাল ক্ষমতা ও আধিপত্যের অবসান।  তাই সেই থেকে জমিদার-হিন্দুর সংগ্রাম হয়ে উঠেছিল, চরম মুসলমান বিদ্বেষ জারি করে এমন বয়ান তৈরি। এর প্রথম পদক্ষেপ তাদের পাক্কা ছলনার এক বয়ান যে এটা যেন মূলত জমিদারি উচ্ছেদ ছিল না, এটা যেন পুর্ব-বঙ্গের সকল হিন্দুদের উচ্ছেদ এভাবে ঘটনাকে উপস্থাপন করেছিল তারা।
অথচ দেশভাগ ঘটে যাওয়াতে, এরপর যে হিন্দু এবং মুসলমান উভয়কেই – দুদিক থেকে দেশান্তর হতে হয়েছিল। হিন্দু হলে ভারতমুখি মুসলমান হলে পাকিস্তান মুখি এটাই তো হয়ে উঠেছিল সবার ভাগ্যেই! নাকি?

এভাবে সাধারণ হিন্দু-মুসলমানের ভারত অথবা পাকিস্তানের দিকে যাত্রা এর সাথে পুর্ব-পাকিস্তানে জমিদার উচ্ছেদের সরাসরি কোনই সম্পর্ক নাই। তা সত্বেও জমিদারের স্বার্থ উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া এটাকে সকল হিন্দুদের স্বার্থ হিসাবে হাজির করা এটাই জমিদার হিন্দুর শঠতাপুর্ণ বয়ানের সাফল্য! জমিদার হিন্দুর নিজ জমিদারি স্বার্থকে প্রজা হিন্দুরও যেন এটা একই স্বার্থ এভাবে হাজির করে ফেলেছিল। তা কোন বিপ্লবী, কোন শ্রেণীবোধের প্রগতিশীল কেউ খেয়াল করে নাই। বরং পুর্ব-পাকিস্তানের (জমিদার-প্রজা নির্বিশেষে) এমন সকল হিন্দুর স্বার্থ যেন এক  কাজেই পুর্ব-পাকিস্তানের হিন্দু মাত্রই ভিকটিম এই নয়া ভিকটিকহুড এর বয়ানই হল – হিন্দুরা তাহলে ‘সাম্প্রদায়িকতার’ শিকার। আর সাম্প্রদায়িকতা মানেই এর জন্য  অরিজিনাল অভিযুক্ত ও দায়ী হল পুর্ব-পাকিস্তানের মুসলমানেরা…! এটাই তো হিন্দুত্ববাদের বয়ান – সাম্প্রদায়িকতা বয়ানের ভিতরের আসল রহস্য বয়ান এবং  পুর্ব-পাকিস্তানের হিন্দু মাত্রই ভিকটিম এই মিথ্যা ভিকটিমহুড এর বয়ান!
এসব যে মিথ্যা এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল, পুর্ব-পাকিস্তানে জমিদারি উচ্ছেদ আইনে কী জমিদারি ব্যবস্থা উচ্ছেদের পরে পুর্ব-পাকিস্তানের মুসলমান প্রজারা যেমন নিজ নিজ চাষের জমির মালিকানা পেয়েছিল একইভাবে সমান সুযোগে  পুর্ব-পাকিস্তানে হিন্দু প্রজারাও কী সমান সুযোগে পায় নাই???
তাহলে, পুর্ব-পাকিস্তানের হিন্দু মাত্রই ভিকটিম এই নয়া ভিকটিকহুড এই বয়ান ভাষ্য বা এই মিথ্যা অনুমানের ভিত্তি কী? 

আবার যেমন ধরেন, এক ভারতরত্ন মানে পদ্মভূষণ খ্যাত ডঃ আনিসুজ্জামান তিনি পুর্ব-পাকিস্তানে দেশান্তর হয়ে এসেছিলেন, কেন? পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান হিসাবে পুরানা এতদিনের আবাস ছেড়ে পরিবারসহ তাঁদের এদেশে আসার ক্ষেত্রে পুর্ব-পাকিস্তানে জমিদারি ব্যবস্থা উচ্ছেদ বা না-উচ্ছেদ এর কোন সম্পর্কই নাই। আর সবচেয়ে বড় কথা তিনি কী কেন তাঁকে কলকাতা ত্যাগ করে আসতে হয়েছিল সেজন্য কী কখনো কলকাতার হিন্দুদের দোষারোপ বা দায়ী মনে করেন বা করেছেন??? কখনই না; বরং ব্যাপারটাকে কপাল বা ভবিতব্য হিসাবে দেখে থাকেন!  অথচ পুর্ব-পাকিস্তানের হিন্দুরা পুর্বপাকিস্তানের মুসলমানদেরকে দেশভাগের জন্য আজও কঠোরভাবে দায়ী করে থাকেন। আবার বদরুদ্দিন উমরের কথাও ধরতে পারেন! তিনি কী বর্ধমান ছেড়ে ঢাকায় এসেছেন বলে বর্ধমানের হিন্দু জনগোষ্ঠিকে দায়ী করেন?

মজার কথা হল, আনিসুজ্জামান কিন্তু সাথে মাথায় করে হিন্দুত্ববাদি অসাম্প্রদায়িকতার বয়ানই নিয়ে এসেছিলেন! মুসলমান হিসাবে কলকাতার জমিদার-হিন্দু তাঁকে তার পরিবারকে শিখিয়েছিল হিন্দুদের পাশে বসতে চলতে হলে তাদেরকে অসাম্প্রদায়িক হতে হবে। সারকথায় যা জমিদার-হিন্দুর আধিপত্য এটা মানতে হবে; তাদের সেই বয়ান ভাষ্যমতে মুসলমানদের নিজেকে সাজাতে হবে; তবেই মুসলমানেরা হিন্দুদের পাশে তিনি বসবাস শিক্ষা-চাকরির সুযোগ ইত্যাদি পেতে পারেন!

আর এই সাম্প্রদায়িকতা কী তাহলে? কে কার উপরে করলো?
সেটা কী আর বলার অপেক্ষায় আছে? সেটা বলাই বাহুল্য যেহেতু হিন্দু মাত্রই (জমিদার-প্রজা নির্বিশেষে) দেশভাগের ভিকটিম! – এই হল মিথ্যা মূল বয়ান!  যে বয়ানে তার মানে দাবী করা হল, পুর্ব-পাকিস্তানের মুসলমানেরাই যেন (জমিদার-প্রজা নির্বিশেষে) এমন সকল হিন্দুকে ভিকটিম বানিয়েছে ও বানানোর জন্য দায়ী????   তাহলে সাম্প্রদায়িক  -এই শব্দের উতপত্তি বয়ান ভাষ্য কার চালু করা কোথা থেকে? এটা কী প্রথমে জমিদার-হিন্দুরা (১৮০০ সালের পর থেকেই) পরে ছুপা কংগ্রেসিরা (১৮৮৫ সালে) হয়ে এখন মোদির হিন্দুত্ববাদের মুখ্য এক বয়ান ভাষ্য নয়!! আর কোন ফাঁকে এই হিন্দুত্ববাদ-ই আবার সকল কমিউনিস্টদেরও বয়ান ভাষ্য হয়ে গেছে??? ভারত (ফলে বাংলাদেশের) সকল কমিউনিস্টদের !!!  তাহলে সেক্ষেত্রে, এই বিবৃতিদাতারা একইসাথে ভারতে হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সরব হবেন বা হলেন কী করে?? এটা কী সম্ভব???
সব বিবেচনা তাদের হাতেই তুলে রাখলাম!!!

শেষে আরেকটা কথা দেশভাগঃ

যদি আপনাদের চিন্তার মুরোদে কুলায় তাহলে দেশভাগ এর জন্য কাকে দায়ী করতে চান সেদিকে আসেন। যারা দেশভাগে ব্যাথ্যা পেয়েছেন তাদেরকে সাহসের সাথে রাজা রামমোহন রায় পড়তে হবে! এখান থেকেই পড়াশুনা শুরু করতে হবে। সেই ১৮১৫ সালে ফিরতে হবে। কেন রামমোহন ১৮১৫ সালে “আত্মীয় সভা” খুলেছিলেন? কেন সেই ১৮১৫ সালেই তিনি এক ব্রাহ্ম সমাজ বলে নতুন ধর্ম চালু করেছিলেন?
রামমোহনই প্রথম ব্যক্তি যিনি সেকালে বৃটিশদের রিপাবলিক রাষ্ট্র একে চিনেছিলেন, এক এংলো-ক্যাথলিক বৃটিশ রিপাবলিক বলে।   অর্থাৎ জাতিরাষ্ট্র [নেশন স্টেট বা nation State] মানে আদতে তা কোন না কোন ধর্মের ভিত্তিতে জাত এমন রিপাবলিক রাষ্ট্র-ই হতে হবে, হয়। ফলে সেসময়ের চোখ আগামির অখন্ড ভারত – সেটাও আসলে কোন না কোন ধর্মের ভিত্তিতে জাত এমন রিপাবলিক রাষ্ট্র-ই করতে হবে এই ছিল তাঁর বুঝ ও সিদ্ধান্ত! আর সেখান থেকে অসংখ্য জাতভেদে বিভক্ত হিন্দু সমাজ সহ ভারতের সবাইকেই সবার আগে এক নয়া ধর্ম ‘ব্রাহ্ম’ এই নয়া একেশ্বরবাদি ধর্মে দীক্ষিত করে নিয়ে আগানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। একাজে রামমোহনের সবচেয়ে ঘনিষ্টজনেরা যেমন রবীন্দ্রনাথে দাদা দ্বারকানাথ ঠাকুর সহ ঢাকার সুশোভন সরকারের (বেঙ্গল রেনেসাঁর লেখক) দাদা ইত্যাদি সকলেই পরিবারসহ সবার আগে ব্রাহ্ম হয়ে নিয়েছিলেন। যদিও রামমোহনের এই উদ্যোগ – এটাই পরে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অরবিন্দ ঘোষ বিবেকানন্দ ইত্যাদি হাত ঘুরে হিন্দুত্ববাদ হয়েছিল – আর এটাই হল ভারতে হিন্দুত্ববাদের আদি ভিত্তি ও বয়ান ভাষ্য!   কাজেই হিন্দুত্ববাদী বয়ানে জিন্নাহ কে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ বলে সব দায় তাঁর এমনকি এই একালেও বিএনপির মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর ভারত-হিন্দুত্ববাদের স্বার্থে নয়া দালাল হতে প্রথম আলো গং কে বাঁচাতে মির্জার – “চিন্তা করতে পারেন ধর্মের ভিত্তিতে……” বলে মিথ্যা আবেগ তুলে অভিনয় করা এসবই আমাদের ত্যাগ করতে হবে। সবার আগে রাজা রামমোহন রায় পড়েন।
এর আগেই জমিদার-হিন্দু অথবা হিন্দুত্ববাদের সফট বা কড়া ভার্সান
এর ভক্ত দালাল নিজ মস্তক-বিক্রি এগুলা আর কইরেন না। এবার ছাড়ান দেন!  দেশভাগ আমাদের ভাগ্যে ছিল অথবা সবদোষ হল জিন্নাহ-র এসব হিন্দুত্ববাদের বয়ান আর কতদিন বইবেন???

একালে যারা রাজা রামমোহন রায় নিয়ে নতুন করে হিন্দুত্ববাদের বিয়ান ভাষ্যের বাইরে এসে পড়তে চান তাদের সবার জন্য প্রথম চয়েজ হল ইন্টারনেট সার্চ করা – সার্চ করতে শিখেন। এখন এতেও আবার গাইড পেতে গেলে আমার নিজের ওয়েব সাইটে দেখতে পারেন।

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

শেষ আপডেটঃ  দুপুর   ডিসেম্বর  ২০২৪    

 

Leave a comment