হিউম্যান রাইট ওয়াচ কী হাসিনা বা ইন্ডিয়া প্রভাবিত!
গৌতম দাস
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সন্ধ্যা ১৭ঃ ০৯
https://wp.me/p1sCvy-6hG
হিউম্যান রাইট ওয়াচ [HRW] এক আমেরিকান মানবাধিকার সংস্থা। আমাদের প্রথম আলো জানাচ্ছে তারা এই বলে বিবৃতি দিয়েছে যে, “ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন ন্যায্য নয়”। যেকথার সোজা মানে হল, “ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কোন আইন লঙ্ঘন করা যাবে না। তাহলে এখানে আইন লঙ্ঘন মানে কী? ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে কোন গণ-প্রতিরোধ সৃষ্টি করা হলে তাতে পালটা ক্ষমতার জন্ম দিলে তা আইন লঙ্ঘন হয়ে যাবে? যার সোজা মানে হল, যেকোন বিপ্লবই অবৈধ; এমন কাজ এক আইন লঙ্ঘন মাত্র? কার আইন? কোন আইন?
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন ন্যায্য নয়
কোন আইন লঙ্ঘন?
তাহলে যে দেশের মানবাধিকার সংস্থা এই HRW সেই আমেরিকার ১৭৭৬ সালের বিপ্লবও অবৈধ ও আইন লঙ্ঘন; অথবা ধরেন, বাংলাদেশের ১৯৭১ সাল মুক্তিযূদ্ধ এসবই আইন লঙ্ঘন? নাকি? কী বলেন? HRW এর জ্ঞানী সাহেবানেরা?
বলেন তো দেখি, ১৭৭৬ সালে কী আমেরিকান বিপ্লবীরা অস্ত্র হাতে তুলে নেয় নাই? সেটা কোন আইনে? কোন আইনি ন্যায্যতায়? নাকি HRW বলতে চায় সেটাও অবৈধ ও আইনের লঙ্ঘন???
জীবন্ত নয়া গণক্ষমতার উত্থানঃ
প্রধান সুত্রটা হল, কোন নতুন ও জীবন্ত গণক্ষমতার আগে বা উপরে কোন আইন নাই। আগে ক্ষমতা এরপর সেই ক্ষমতার মুরোদ থেকে আইন-কনষ্টিটিউশন জন্ম হতে পারে।
আসলে এই হল, মানবাধিকার এর নিজ সীমাবদ্ধতা না জানা মানবাধিকার ধারণা! খাড়া বাংলায় এটাকেই আমরা বেশি বুঝা বুলি!
ঘটনা হল যেকোন গণ-প্রতিরোধ সৃষ্টি করা হলে তাতে এক পালটা গণক্ষমতার জন্ম হয় যা জীবন্ত! আর যা আগের সকল ক্ষমতা সকল আইন কনষ্টিটিউশনকে নাকচ করে দেয়। পাবলিক নিজেই জীবন্তভাবে গণক্ষমতা নিজে হাজির হয়ে যায়। যার সামনে আগের সকল ক্ষমতা সকল আগের আইন, কনষ্টিটিউশন সব নাকচ হয়ে যায়। নতুন ক্ষমতার সামনে সকল আইন অন্যায্য বাতিল হয়ে যায়। তাতে সেটা ঘোষণা করে আগের কনষ্টিটিউশন বাতিল বলা হোক আর নাই হোক! হাতে গুনে মনে রাখতে হবে সকল নতুন ও জীবন্ত ক্ষমতা থেকে এরপরে সকল আইন নতুন করে শুরু হতে পারে। সবসময় আগে নতুন ক্ষমতা পরে আসবে সেই সুত্রে আইন। আগে থেকে থেকে থাকা কোন আইন নতুন ক্ষমতা তৈরির পরে আর প্রযোজ্য থাকে না; কার্যকারিতা রাখে না!
যেমন আমরা কী ১৯৭১ সালের আগে থেকে থাকা (পুর্ববাংলা বা পুর্ব-পাকিস্তানের যাক প্রযোজ্য ছিল) পাকিস্তানের আইন-কনষ্টিটিউশন মেনে নিয়ে এরপর মুক্তিযুদ্ধ করতে পারতাম? নয়া কোন গণ-ক্ষমতা তৈরি করতে বা জন্ম দিতে পারতাম? পুরান যেকোন আইন-কনষ্টিটিউশন মানলে যেকোন অস্ত্র-ধারণই তো অবৈধ এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং হত?
এককথায় তাই সোজা ফর্মুলাটা হল, যেকোন নতুন গণ-ক্ষমতা জন্ম নিলে এর পর সে নতুন সব আইনের জন্ম দিতে পারে! আর গণ-ক্ষমতা জন্ম এর আগের কোন আইন সে মানবে না। ক্ষমতার আগে কোন আইন নাই! নয়া ক্ষমতা থেকেই এবং এর পরেই কেবল নয়া আইন-কনষ্টিটিউশন হতে পারে যা তার জন্য মান্য! ১৭৭৬ সালে কী আমেরিকান বিপ্লবীরাও তাই করেছিল। তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল আর এরপর আগের কোন আইন-কনষ্টিটিউশন তাদের উপর আর প্রযোজ্য নয়, ছিল না; থাকতে পারে না।
১৯৭১ সালেও মুক্তিযুদ্ধের গণক্ষমতার আগের কোন আইন-কনষ্টিটিউশন তাদের উপর আর প্রযোজ্য নয়, ছিল না; থাকতে পারে না। ২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্ট গণ-অভ্যুত্থান এই গণক্ষমতার উপরে আগের কোন আইন তাদের উপর আর প্রযোজ্য নয়, ছিল না; থাকতে পারে না। তাহলে তো ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার যেসব পুলিশ, আর্মি, হেলিকপ্টা্ র্যাব আমাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিল তাদেরকে গণ প্রতিরোধে প্রতিহত করা [যাতে অনেক খুনি পুলিশ আহত-নিহত হয়েছে] এটা তো হাসিনার পুরানা আইন-কনষ্টিটিউশন অনুসারে অন্যায্য ও আইনের লঙ্ঘন! কিন্তু না এতা হতেই পারে না। নয়া গণক্ষমতার উপর আগে থেকে থাকা কোন আইন আর প্রযোজ্য নয়, ছিল না; থাকতে পারে না। এটা যেকোন বিপ্লবী নয়া ক্ষমতার মুখ্য বৈশিষ্ট!
এখন মানবাধিকারের নামে কোন পুরানা পতিত বা পলাতক শাসক নিজের ন্যায্যতা জেতাতে সামনে আসতে পারে না। ঠিক যেমন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা গত ৫ ফেব্রয়ারির বক্তৃতায় তাঁর যেসব পুলিশ, আর্মি হেলিকপ্টার র্যাব আমাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিল তাদের ততপরত্তাকে বৈধ বলে দাবি করেছেন! হাসিনা আমলে যেসব মিথ্যা মামলা মাদের উপর নির্বিচারে দায়ের করে গেছিলেন সেগুলো ইউনুস সরকারের বাতিল করাকে অন্যায্য, অবৈধ বলেছেন!
এখন তামাশার কথা হল, HRW নিজেও হাসিনার বয়ানে ভাষায় ও ভাষ্য কথা বলছে। দাবি করছে “লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আইনের লঙ্ঘন ন্যায্য নয়”! আসলেই এ’এক অদ্ভুত মিল! যার সোজা অর্থ হয়েছে এরা যেন হাসিনা নিয়োজিত এক HRW ; এক মানবাধিকার বয়ান! এই মানবাধিকার ফেরিকারকেরা জানে না যে যেকোন আইন কনষ্টিটিউশন মানে মানবাধিকারের উতস কী? কোথা থেকে এর শুরু? স্থায়ী আইন কনষ্টিটিউশন বলে কিছু নাই! প্রত্যেকটা নয়া জীবন্ত গণক্ষমতার পর থেকে – এথেকেই বারবার নয়া আইন কনষ্টিটিউশন এর জন্ম হবে!
এর বাইরে বা উপর থেকে মানবাধিকার ফলাতে চাইলে তা হবে মানবাধিকার ব্যবসায়ীর কাজ!
জেনে বা না জেনে HRW এই মানবাধিকার ব্যবসায়ীর মত কাজ করে ফেলেছে! নিজ সীমাবদ্ধতা বা নিজ শুরু কোথা থেকে তা খেয়াল করে নাই! বা কারও খারাপ মতলবে বা হাতে প্ররোচিতও হতে পারে।
জীবন্ত গণক্ষমতার উত্থানকাল লম্বা বা ছোটও হতে পারেঃ
আমাদের ২০২৪ জুলাই-আগষ্ট অভ্যুত্থান অনেকের মনে হতে পারে এটা বড় জোর দুমাসের জীবন্ত গণক্ষমতা ছিল! না, এই অনুমান একেবারেই ভুল। একতা বিপ্লবী জীবন্ত গণক্ষমতা জন্মের শুরু আর শেষ বা তা থিতু হলে বছরেরও বেশি লেগে যেতে পারে। খোদ রাশিয়ায় এটা ছিল ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর। ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবে তো শুরু আর শেষের মাঝে মানে ক্ষমতাধর শাহ উচ্ছেদের পরে পরপর চারটা সরকার গঠিত হয়ে গেছে আর ভেঙ্গে গেছে একই বছরে। আর সবশেষে যেটা খোমেনির বিপ্লব হয়ে থিতু হয়েছিল। ফলে এর সবটাকেই জীবন্ত ক্ষমতার উত্থানকাল হিসাবে গুনতে হবে, ধরতে হবে!
কাজেই মানবাধিকার কর্মী বা প্রবক্তা হয়ে হাজির হতে চান তারা সাবধান ও সতর্ক হয়ে যান। বিভ্রান্তি তৈরি করবেন না। হাসিনার বয়ানে কথা বলবেন না। সবার আগে নিজ মানবাধিকার বোধের সীমাবদ্ধতাটা কী সেটা আগে জেনে নিন। বিপ্লবী জীবন্ত গণক্ষমতার সাথে লাগতে আসবেন না। তামাসা করবেন না। নিজ চিন্তার মৌলিক সীমাবদ্ধতা [LIMIT] জেনে-বুঝে এরপর মানবাধিকার মারাতে আসবেন! জীবন্ত গণক্ষমতার জন্মের আগের কোনই আইন নাই, হতে পারে না যা সে মানতে বাধ্য বা তার উপর প্রযোজ্য! এটাই সংক্ষেপে বললে, আগে ক্ষমতা পরে তা থেকে আইন! উল্টাটা কখনও না!
সবশেষে একটা পরামর্শঃ
HRW যদি নিজ লিমিট খেয়াল করে বলতে পারত রাজনৈতিক সংগ্রামে সহিংসতা দীর্ঘায়িত না করা বা এড়িয়ে চলার কথা; তবে বুঝা যেত তারা নিজ ভাষ্য-বয়ানের লিমিট সম্পর্কে সচেতন! কিন্তু দুভাগ্য আমাদের এরা হাসিনার (ইন্ডিয়ার) ভাষ্যের উপর দাঁড়িয়ে কথা বলতে এসেছে!
আমেরিকা-ভিত্তিক HRW কে মনে হয় আর একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়াই যায়। ট্রাম্পের শপথ নেতা একমাসও হয় নাই। আর এসেই তিনি খোদ জাতিসংঘের ICC কোর্টের বিরুদ্ধেই স্যাংশন আরোপ করেছেন। কারণ কী? অভিযোগ-অযুহাত কী?
অভিযোগ হল ICC কেন নেতেনিহাহুর বিরুদ্ধে একশন গ্রেপ্তার এর কথা তুলেছে? দাবী করেছে ইসরায়েল আমেরিকার বন্ধু রাষ্ট্র [our allies]; মজা না? (নিচে ট্রাম্পের ভাষ্যটা দেখে নেন) আমাদের ধারণা, তিন হাজারের উপর হত্যা, গুম-খুন অপহরণের ১৬ বছরের যথেচ্ছাচারের নায়িকা পতিত হাসিনার জন্য খাড়ানোর চেয়ে তাদের শ্রম-ঘামের বেশি অংশটা সেদিকে দেয়া উচিত! সবার আগে মানবাধিকার ইস্যুটাকে গ্লোবাল ক্ষমতাধর দেশের আজ্ঞাবহ হওয়া, প্রভাবিত হওয়া থেকে বের করার বা হবার উপায় খুঁজেন!
“This malign conduct in turn threatens to infringe upon the sovereignty of the United States and undermines the critical national security and foreign policy work of the United States government and our allies, including Israel,” he added.
সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হল যারা ক্ষমতা বুঝে না – ক্ষমতা ধারণার পিছনের দর্শন বিশেষ করে গণক্ষমতা যেটা জীবন্ত গণক্ষমতার উত্থান যেটা আবার যেকোন রি-পাবলিক ধারণায় পাবলিক এর ক্ষমতা বা পিপলস পাওয়ার ধারণার মূলভিত্তি – এসব সম্পর্কিত করে রাজনীতির মাঠে যে জীবন্ত পিপলস পাওয়ারের জন্ম হয় তা সম্পর্কে বেহুশ – এরা মানবাধিকার ধারণা বইবার ধারণ করার জন্য নুন্যতম যোগ্যতা রাখেন না। যদিও বা কেউ রাখেন তবে সেক্ষেত্রে আপনারাই মানবাধিকার ধারণাকে সুশীল মানে, না বুঝা সিভিল সোসাইটি ধরনের মানবাধিকারের দোকান বানাইয়ে রেখে দিছেন! কাজেই সময় থাকতে সাবধান হন! লেজুড় হবেন না!
লেখকঃ
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
আপডেটঃ সন্ধ্যা ০৬ঃ ১৩, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ আপডেটঃ সন্ধ্যা ০৭ঃ ৫০, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫


