মোদি-হাসিনা দুজনেই কী আসামি হবেন, না ট্রাম্পের বক্তব্য বুঝে হাসিনাকে ত্যাগ করবেন


“মোদি-হাসিনা দুজনেই কী আসামি হবেন,
না ট্রাম্পের বক্তব্য বুঝে হাসিনাকে ত্যাগ করবেন”
গৌতম দাস
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   দুপুর ০২ঃ ১৭
https://wp.me/p1sCvy-6jH

 

 

 

মোদি-হাসিনাদের দোকান কী এখন বন্ধ হবে? যে দোকান তারা খুলেছিলেন ৫ আগষ্ট ২০২৪ এরপরে?
গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি ছিল মোদি-হাসিনাদের বহু আশা -ভরসা দেখা প্রতিক্ষিত ট্রাম্প-মোদি মিটিং।  মোদি-হাসিনাদের মিথ্যা প্রপাগান্ডার জোর এত তীব্র ছিল যে সব ফ্যাক্টস বা সত্য আমরা তুলে দেখালেও আমার বাংলাদেশিদের শঙ্কা যাচ্ছিলই না। কারণ তারা ঘর-পোড়া গরু – সেই ২০০৭ সালের ১/১১ থেকে যখন আমেরিকা বাংলাদেশকে ইন্ডিয়ার হাতে তুলে দেয়া ঘটেছিল তখন থেকেই লাগাতর -এভাবে নয়ত সেভাবে – নির্যাতিত হয়ে আসছে! হিন্দুত্ববাদের দাপট বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ হচ্ছে বলে প্রপাগান্ডার আড়ালে তারা এক গুম-খুন-অপহরণ এর রাষ্ট্র কায়েম করেছিল আর সাথে ছিল রাষ্ট্রীয় সম্পদের সীমাহীন লুটপাট!
ফলে বাংলাদেশের আম-মানুষের শঙ্কা কাটছিলই না বিশেষত মোদি-হাসিনাদের এই শেষ চেষ্টা যে এবার মোদি-ট্রাম্পের মিটিংয়ের পরে  মোদি-হাসিনার হিন্দুত্ববাদী খুনি এলায়েন্স যদি আবার ফিরে আসে???
আমি মনে করি সেই দিন শেষ হয়েছে।

সেই বহু প্রতিক্ষিত অপেক্ষা শেষ হয়েছে।  ট্রাম্প পাবলিকলি বাংলাদেশের উপর ইন্ডিয়ার সব অপরাধের দায় মোদির উপরেই চাপিয়ে দিয়েছেন।  নিচে দেখেন র-এর মিডিয়া ডেইলি স্টারের বাংলা রিপোর্ট থেকে  [স্ন্যাপ শর্ট] ছবি তোলা বক্তব্য!

 

ট্রাম্পের মুখে মারা জবাবঃ
ইন্ডিয়ান সাংবাদিক নিজেই প্রথম মার্কিন ডিপস্টেট এর প্রসঙ্গ বা শব্দগুলা ব্যবহার করেছিলেন। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সপাটে মুখে মেরে এর জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, “এ ক্ষেত্রে আমাদের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না”। সাথে আরো বলেছেন, “এটা এমন একটি বিষয় যেটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী (মোদি) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এবং সত্য বলতে, শত শত বছর ধরে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। কিন্তু আমি এটা প্রধানমন্ত্রীর (মোদির জবাব দিবার কিছু থাকলে) হাতে ছেড়ে দিচ্ছি”। এটা অনেক শয়তান অনুবাদক –  ট্রাম্পের এই কথা টা বাংলাদেশকে ইন্ডিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়া বলে মিথ্যা প্রচার করেছেন!

আসলে ইন্ডিয়ান সাংবাদিকদের হোমওয়ার্ক সবসময় কম থাকতেই দেখা যায়।  প্রশ্নকর্তার বুঝা উচিত ছিল দুই চোর একসাথে চুরি করতে যাওয়ার পর এক চোরের আরেক চোরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা আর চলে না – সুযোগ থাকে না। কারণ, সেক্ষেত্রে দুই চোরই ধরা খাবে। যদি ২০০৭ সালের ১/১১ থেকে কথা তুলি যখন আমেরিকা বাংলাদেশকে ইন্ডিয়ার হাতে তুলে দেয়া ঘটেছিল – এই ঘটনা তুলে সেসময়ের আমেরিকান ভুমিকা বা  মার্কিন ডিপ-স্টেট কে অভিযুক্ত করে কথা অন্তত ইন্ডিয়ার কেউ তুললে সেটা তো নিজেদের পায়ে কুড়াল মারাই হবে। যদিও এটা স্পষ্ট যে সাংবাদিক সরাসরি বাইডেনের নাম নিয়ে সেই রেফারেন্সে  প্রশ্ন করছেন! কিন্তু সেখানেও একই বিপদ-ই থেকে গেছে।
এটা ঠিক যে বাইডেনের প্রথম তিন বছর (২০২১-২৩) মানে ২০২৩ সালের আগষ্ট-সেপ্টেম্বরের আগে পর্যন্ত  তিনি হাসিনার উপরে মানবাধিকার-স্যাংশনের নীতিতে আগিয়ে গেছিলেন যেটা বাংলাদেশের বিরোধীদল সুবিধা পেয়েছিল আর মোদির ইন্ডিয়া এতে বাইডেনের আমেরিকার সঙ্গী হতে পারে নাই বা সুযোগ ছিল না বলে গোসসা ঘরে খিল দিয়েছিল, এসময়টাতে।  কিন্তু  ২০২৩ সালের আগষ্ট-সেপ্টেম্বর থেকে বাইডেন পল্টি মেরেছিলেন ইন্ডিয়ান প্ররোচনায়; ফলাফলে ল্যু-বাইডেন হাসিনার হাত ধরেছিল আমাদেরকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে!  এই পল্টি মারাতে হাসিনা কথিত তাঁর ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করে নিলে বাইডেন চিঠি লিখে জানিয়েছিল এরপর বাইডেন-হাসিনা একসাথে কাজ করবে!!!
আর এটাই বাইডেন ও তার সিআইএ (যেটাকে এখন ভারতীয় সাংবাদিক মার্কিন ডিপস্টেট বলে ডাকছেন) তাদের একেবারে গাধা বনে যাওয়ার ঘটনা! কারণ, বাইডেনের ৫ ফেব্রুয়ারির চিঠিতে – একসাথে কাজ করার খায়েশ – জানানো মানে, পরবর্তিতে চারমাসের মধ্যেই যে খোদ হাসিনাই গণঅভ্যুত্থানে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছেন এইটা তারা কোন আগাম আমল – তা করতেই পারেন নাই! যার আরেক অর্থ হল, বাংলাদেশে সিআইএ ততপরতা (বা কথিত মার্কিন ডিপস্টেট ধারণা যেটা) এখন গুটিয়ে ফেলা উচিত। কারণ, তারা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে কোন আগাম ধারণাই এরা দিতে পারেন নাই বলেই তো বাইডেন বোকার সাহসে হাসিনার হাত ধরার কথা বলেছিলেন!! অর্থাৎ এখান থেকেই – বাংলাদেশে ৫ আগষ্টে যা দাড়িয়েছিল – তা শুধু হাসিনার উচ্ছেদ না এটা তো একই সাথে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তাঁর নীতিসহ উতখাত; যে বাইডেন নিজেই হাসিনার দোসর সেজে একসাথে কাজ করতে চাওয়া এক গাধা বনে যান মাত্র!!! বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা এই গাধা আর তার সিআইএ টাইপের আর যেসব আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা আছে সবাইকেই ছুটিতে পাঠায় দিয়েছিল।
অথচ এরপরও  মোদি-হাসিনা মিলে উলটা গল্প বানিয়েছে যে –  বাইডেনের আমেরিকান ডিপ-স্টেট নাকি হাসিনাকে উতখাত করেছে!!!  যে বাইডেন দাবি করে হাসিনাকে জানিয়েছিল তারা ফেব্রুয়ারি থেকে একসাথে কাজ করবে সেই আমেরিকান বাইডেন তাঁর কথিত ডিপ-স্টেটের ভুমিকা – বলে মোদি আর তার র-এর গল্প – তা বানালেই যে তা গল্প হবে না তা বুঝিয়ে বলার কী আর দরকার আছে??

তাহলে ট্রাম্প এখন প্রবলভাবে এই কথিত ডিপ-স্টেটের ভুমিকা সরাসরি নাকচ করল কেন?
মোদি-হাসিনা যে এমন ডিপ-স্টেটের গল্প বানাইতেছে সেটা গত কয়েকমাস থেকে কমবেশি সবাই জানে। কিন্তু এর বাইরে মূল নিয়ামক ছিল ইউনুস সাহেবের সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে প্রথম আমেরিকা গিয়ে বাইডেনের সাথে সাক্ষাত। সেখানে ইউনুস সাব বুঝায়ে দেন তাঁর বক্তব্যে যে তাঁর সরকার আমেরিকান পুরানা অপরাধে কথা তুলে সেখানেই আটকে থাকতে চায় না। ইউনুসের সরকার পজিটিভলি সামনে তাকাতে চায়। আর ইউনুসের এই কথা আসলে বাইডেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গ ল্যু-সহ সকল স্টাফ শুধু না এমনকি আমেরিকান থিঙ্কট্যাঙ্ক, নীতিনির্ধারক গবেষক বা কর্তা সকলেই হাফ ছেড়েছিল যে আমরা তাদেরকে অভিযুক্ত করাতেই আটকে থাকতে চাই নাই! আসলে আমরাই বুদ্ধিমান হয়ে ” পজিটিভলি সামনে তাকানোর আমাদের নীতির” কথা জানিয়েছিলাম। কারণ, এটা না করলে আজ এদের সকলকে আমরা মোদির কোলে উঠে যেতে দেখতাম!  অর্থাৎ ইউনুসের কথায় আমেরিকান কথিত ডিপস্টেটের সকলেই জেনে যায় যে ইউনুস সাব তাদের মাফ করে সামনে আগাতে চাইতেছে। তাহলে রিয়েলিটি কী ছিল?
বাইডেনের সাথে আমেরিকান সারা ডিপস্টেট-ই তো বাংলাদেশের হাসিনা সাথে সাথে পরাজিত ও উতখাত হয়ে যায়! ফলে কথিত ডিপ-স্টেটের এই নয়া জীবন লাভ এটাই সাধারণ ব্রিফিং হয়ে যায় আর সেই ব্রিফিং-ই ট্রাম্প এবার প্রেসিডেন্ট হবার পরে পেয়েছেন। তাই তিনি সহজেই ফুতকারে মোদি-হাসিনার বয়ান উড়ায় দিছেন। শুধু তাই না মনে করিয়ে দিয়েছেন ইন্ডিয়া গত শত বছর ধরে বাংলাদেশের উপর হেজিমনি-আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করে গেছে। মানে আমেরিকা সব দায় এখন ইন্ডিয়ার উপর চাপিয়ে দিয়েছে। যা নিয়ে আমাদের ব্যস্ত না হলেও চলবে!!!
যদিও ডেইলিস্টার পুরানা র-এর এসাইন্ড দালালিতে মোদির হাতে ট্রাম্পের মাইক্রোফোন ছেড়ে দেওয়া বা বলার সুযোগ ছেড়ে দেওয়াকে খোদ বাংলাদেশকেই মোদির হাতে ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত  বলে  ভুল অনুবাদ করেছে!

তাহলে দাঁড়ালো কী?
এককথায়, মোদি-হাসিনার সব প্রপাগান্ডা মেশিন যে ৫ আগষ্ট থেকে সাজিয়েছিল এর সব ফেলড, পরাজিত!  ধর্ম না ন্যায়ের কল বাতাসেই নড় উঠেছে! ঘন্টা বেজে উঠে জানাচ্ছে সবাইকে!
এতে মোদি-হাসিনার এতদিনের নিয়মিত মিথ্যা আশ্বাস যে এই তো আমেরিকা ইন্ডিয়ার পিছনে দাঁড়াবে আর ইন্ডিয়া-আমেরিকার যৌথ উদ্যোগে আবার হাসিনা ক্ষমতায় ফিরে আসবে!
এই সাধারণ প্রপাগান্ডা লাইনের অধীনে আবার সাব-প্রপাগান্ডা বা উপ-প্রপাগান্ডা আরেক লাইন এসেছিল নভেম্বর ২০২৪ সালে যে মোদির ট্রাম্প ভাইয়া জিতে গেছে আর মোদি-হাসিনা, তাদের আর  চিন্তা নাই। ট্রাম্পের শপথের পরে এই তো মোদির ট্রাম্পের সাথে এবার দেখা হল বলে!!! হাসিনার সব দুঃখের অবসান হয়ে যাবে বলে মোদি-হাসিনা মিথ্যা আশা ছড়িয়েও প্রপাগান্ডা চালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সবই পরাজিত হল।
এরপর জয়শঙ্কর যখন বুঝলেন ট্রাম্প এভাবে গলবার কোন সম্ভাবনা নাই!! মানে হল, এই পেশাদার কূটনীতিকও ট্রাম্পের নির্বাচনি ক্যাম্পেইনের সময় থেকে ঘোষিত নীতি পড়ে বুঝতে অক্ষম ছিলেন যে হবু ট্রাম্প প্রশাসনের মৌলিক নীতি হবেঃ
১। আমেরিকা ফার্স্ট
২। যেকোন দেশের উপর  ট্রাম্প  আমেরিকায় রপ্তানির উপরে ট্যাক্স বসাবেন

এসব তো না বুঝার কিছু নাই!!! মানে মোদি-জয়শঙ্কর তবু না বুঝার ভান করে গেছিলেন! আর ভেবেছিলেন এবারের মোদির সফরে আমেরিকান অস্ত্র কিনতে আগ্রহ দেখালে বোধহয় ট্রাম্প মোদি-হাসিনার শয়তানিকে সমর্থন দিবেন। সেসব বোকার স্বর্গে বাস এখন ন্যাংটা হয়ে গেল!

তাহলে, এখন আর কী হবে? 
তাহলে, এখন আর কী হবে? ইম্পিকেশন[implication] বা পরিণতি-প্রভাব কী দেখব? জাতিসংঘের রিপোর্ট !!!

ইতোমধ্যেই একটা মুখে মারা ঘটনাও ঘটে গেছে। মোদি-ট্রাম্প বৈঠকের আগেই জাতিসংঘের রিপোর্ট – গণহত্যার প্রাথমিক অনুসন্ধান রিপোর্ট প্রকাশিত হয়ে গেছে। যার সোজা মানে হল মোদি-হাসিনা এ’দুই দানব-দানবীই এখন দুনিয়ার চোখে আসামির নজরে! ফলাফল এই যে সারা আমেরিকাকে তো পাগলে তাড়া করে নাই যে এই অবস্থায় ট্রাম্প -এই মোদির সাথে – কোন সম্পর্ক জড়াবেন কোন সংসর্গে থাকবেন??? বরং যতটা সম্ভব মোদির ইন্ডিয়ার সাথে আমেরিকান সংশ্লিষ্ঠতা নাই তা দেখানোর ট্রাম্পের জন্য ভাল উপায় হল মোদিকে দূরে রাখা! ট্রাম্প এই নীতিই অনুসরণ শুরু করে দিয়েছেন!  আর এক্ষেত্রে আমরা – আমাদের ইউনুস সরকার কী সেটাই নিশ্চিত করেছেন, যাতে জাতিসংঘ রিপোর্টটা মোদি-ট্রাম্প সাক্ষাতের ঠিক আগের দিন প্রকাশিত হয়? হ্যা করলে করছেন! অসুবিধা কী? আমরা কোন অন্যায় অযাচিত তো কিছু করি নাই! চোরেরা ধরা পড়লে আমাদের আর কী করার আছে????

তাহলে এখন কী হতে পারে?
একটা দল এখন গণ-কেস [gone case]! হাসিনা ও তার লীগ আর উঠে দাঁড়াতে পারছে না! ফলে এটাই মানে, জাতিসংঘের রিপোর্ট টা প্রকাশের পরে এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে ভাল সময় যে, এই লীগ দল ও এর নেতাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার। এমন কী জনগণ দেখতে চায় যে অন্য কোন কোন দল এর (লীগ নিষিদ্ধের) বিরোধিতা করতে চাইছে। আমরা দেখতে চাই কোন কোন দল এর বিরোধী। বুক ফুলিয়ে তারা সামনে আসুক!

তাহলে অন্য আর দুইটাঃ
আমার অনুমান বাংলাদেশের  হবু ক্ষমতায় যাবার আকাঙ্খি বিএনপি ও জামাত সহ অন্য যে কোন দল যারা ইন্ডিয়ার পকেটে কম-বেশি হাত ঢুকিয়ে চলে নিজেদের বুদ্ধিমান মনে করে এসেছে – তাদের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নিবার শেষ সুযোগ এখনই! সেই ইস্যুটা হল, ট্রাম্প বা আমেরিকার মোদিকে ছুড়ে ফেলে দেওয়াটা – এটা কী তারা দেখতে পেয়েছেন? পেলেন?
আমরা জানি না, তবে জেনে যাবো অচিরেই!

এমন দলগুলো যদি নিজে বাঁচতে চায় তবে তাদের হাতে সময় থাকবে খুবই কম – বড় জোর আগামি সাত দিন!
এমন দলগুলোকে দেখাতে হবে যে তারা কোন দুরতম সুত্রেও ইন্ডিয়ার উপর আর কোন আশা ভরসা রাখছে না। ইন্ডিয়ার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কও সে অনুসারে নাকচ ও তারা এখন দূরে চলে গেছে – এমনটা আবার মনে মনে করলে হবে না; পরিস্কারভাবে সাধারণ মানুষ যেন বুঝতে পারে এমন আচরণ – বক্তব্য তাদের সামনে আসতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা নিজ জনভিত্তি (নিজ রাজনীতি ও নিজ কনষ্টিটুয়েন্সিতে মনোযোগী) গড়তে যে তারা এখন থেকে মনোযোগী হয়ে গেছে এটা পাবলিকের সামনে নিদর্শন হাসির করে চলতে হবে তাদের।

এখন এরপরেও ‘অতি- বুদ্ধিমান’ দল কেউ থাকতেই পারে! ধরে নিচ্ছি! যদি থাকে তবে তাদের গণবিচ্ছিন্নতার শেষের দিন গোনা শুরু করতে পারে তারা!
আমার অনুমান এখন থেকে ইন্ডিয়ার সাথে যোগসুত্র থাকা বা রাখা যাদেরই আছে সেটা ঐ দলের জন্য পাবলিকের সামনে নেগেটিভ পয়েন্ট হিসাবে হাজির হবে।

সারকথায় আগামি অন্তত একমাস এগুলাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মূল ইস্যু হতে যাচ্ছে!

আজ ভোর বা সকাল থেকেই অনেকেই আমাকে প্রশ্ন রেখেছেন – মোদি-হাসিনাদের দোকান কী এখন বন্ধ হবে?

আমার স্থির ধারণাঃ হ্যা সেই সময় আজ সকাল থেকে শুরু হয়ে গেল! আমেরিকা অন্তত বাংলাদেশ ইস্যুতে আর মোদির ভারতের সাথে কথা বলবে না।
আর এর প্রতিক্রিয়ায় খুব সম্ভবত মোদি-জয়শঙ্কর যদি  বুঝমান হন, এখনও কিছু বুদ্ধি-সুদ্ধি যদি তাদের বেঁচে গিয়ে থাকে তবে কত দ্রুত ইউনুসের নেত্বত্বের বাংলাদেশের  কাছে আসা যায় তাদের সে ততপরতা ও নীতি-পলিসি  অচিরেই দেখব আমরা!

কিন্তু মোদি কী তাঁর আমেরিকা সফরের ম্যাসেজ পাঠ করতে পারবেন? হাসিনার হাত ছেড়ে দিয়ে বিদায় জানাবেন? সেসব দিকগুলো এখন থেকে পরের সাতদিনে তার নড়াচড়া দেখলেই বুঝতে পারব? তবে যেটাই করেন না কেন এই সতেরো বছর পরে বাংলাদেশ থেকে হাত গুটানো এক ইন্ডিয়া  দেখতে পাবো বলে আমার বিশ্বাস! সেই কাউন্টিং এর শুরু আজ থেকে!

বাড়তি একটা ছোট ইস্যুঃ মাইলেল কুগেলম্যান
Michael Kugelman, ইনি আরেকজন বাইডেনের সঙ্গী; ডোনাল্ড ল্যু এর মতই। যিনি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি জবরদস্তিতে হলেও তা কাজ করছে সেটা দেখাবেনই যেন!!! এমনই গাধা ও গোঁয়াড়! কুগেলম্য্যানের এসাইনমেন্ট ছিল, আমেরিকান ম্যাগাজিন ফরেন পলিসি-তে সাপ্তাহিক কলাম লিখা। আর এর মাধ্যমে তিনি বাইডেন প্রশাসনকে সচেতন করতেন যে দক্ষিণ-এশিয়া থেকে ফিডব্যাক ইনফরমেশন ঐ কলামে লিখে দিয়ে। তাই গত ২০২১-২৩ সালে আমাদের দেশে বিরোধীদলের জমায়েতে বাস্তবেই লোক বেশি হয়ে গেলে উনি খামোখা তর্ক জুড়তেন – দশলাখের জায়গায় এক লাখ দাবি করে! কারণ, উনি জানতেন বাইডেন-ল্যু এর পলিসি হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুতি নয় বরং হাসিনার উপর চাপ দিয়ে তাকে চীনের হাত ছাড়তে বাধ্য করা যাতে এই কুচক্রিদের আসল স্বার্থ ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি সফল বলে দাবি করতে পারে। তাই, বাইডেন যে আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে পল্টি মারতে যাচ্ছেন তা ইনার লেখা থেকেই আঁচ করা যাচ্ছিল!
যাহোক, সেই কুগেলম্যান এখন মোদি-ট্রাম্প বৈঠক নিয়ে টুইট করেছেনঃ

In the trump-Modi presser, Trump was asked for his view on Bangladesh, and interestionly he dumurred, saying “I’ll leave Bangladesh to the Prime Minister”

এই টুইটে আসল শব্দটা হল,  dumurred যার আসল অর্থ হল ‘আপত্তি’ বা ‘অনিচ্ছা দেখানো’। বলছেন, ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিয়ে ট্রাম্পের অনিচ্ছা দেখে তিনি মজা পাইছেন।
আসলে কুগেলম্যানেরা মজা পান আর দুঃখই পান বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আপনাদের সকলকেই হাসিনা-সহ উতখাত ও উপড়ে ফেলে দিয়েছে! সেটা পারলে স্বীকার করেন!!!

সাথে আমেরিকান ডিপ্লোম্যাট জন ড্যানিলঃ
সে যাই হোক, আরেক সাবেক আমেরিকান ডিপ্লোম্যাট জন ড্যানিল (এই নামে আমাদের এখানে বেশি পরিচিত) [Jon F Danilowicz]; তিনি একসময় বাংলাদেশে ডেপুটে এমব্যাসাডর ছিলেন। তিনি কিন্তু কুগেলম্যানদের মত ছলনা করে কথা বলার বিরুদ্ধে। তিনি ট্রাম্পের মোদির দিকে মাইক্রোফোন আগায় দেবার অর্থ করে টুটে লিখেছেন, যারা ভয় পেয়েছিলেন যে মোদি ট্রাম্পকে বাংলাদেশের ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর হতে ট্রাম্পকে রাজি করায় ফেলবেন তারা এখন আয়েসে নিঃশ্বাস ছাড়তে পারেন”। মানে জন বলতে চাইছেন, তাঁর মনে হয়েছে মোদি তা করতে পারেন নাই।
এছাড়া তিনি আরো যোগ করেছেন, জাতিসংঘের রিপোর্ট [UN OHCHR report]  প্রকাশ আর ইউনুস সাহেবের ট্রাম্পের (এখনকার প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করা )  বন্ধু ইলন মাস্কের সাথে ফোনে কথা বলে ব্যবসায়িক আলাপ করা  – এদুই টা ইন্টারন্যাসনাল ফ্রন্টে বাংলাদেশকে অনেক আগিয়ে রেখেছে বলে জন বিশ্বাস করেন। এনিয়ে TBS পত্রিকার লিঙ্ক দেখতে পারেন এখানে

 

 

 

লেখকঃ
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

আপডেটঃ  দুপুর ০৩ঃ২০   ১৪ ফেব্রুয়ারি  ২০২৫

সর্বশেষ আপডেটঃ  বিকাল ০৫ঃ ১১   ১৪ ফেব্রুয়ারি  ২০২৫

Leave a comment