ইউনুস সরকারের কড়া শক্ত হাতের অবস্থান চাই! 


ইউনুস সরকারের কড়া শক্ত হাতের অবস্থান চাই!
গৌতম দাস
২১ মার্চ ২০২৫ রাত ০৯ঃ ৩৯
https://wp.me/p1sCvy-6mH

 

সময়ে রাত একটার পরের কারও কোন স্টাটাস দেয়া তা একটা দেশকে তোলপাড় করে তুলতে পারে। গতকাল বাংলাদেশ এমনই এক রাত কাটিয়েছে। যতটুকু খবর শুনলাম অনেক গুরুত্বপুর্ণ লোক সারারাত ঘুমান নাই!
গতকাল (দিনশেষের রাত ১২টার পরের) রাত আড়াইটা থেকে হাসনাত আব্দুল্লাহ-র এক পোস্ট থেকে এই তোলপাড়!
যদিও সেনাপ্রধানের গত ২৫ ফেব্রুয়ারির ফুলস্টপ বক্তৃতার বক্তব্য থেকেই তার নামে দেয়া হাসনাত এর এমন অভিযোগ যে সত্য হতে পারে এমন সন্দেহ সমাজে বিশেষ করে ফেসবুকে আগে থেকেই তা প্রবল ছিল। এককথায় সেনাপ্রধান (মোটাদাগে) পাবলিক আস্থা,  বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মনে হয়েছে – বিশেষত তাঁর ঐ রাওয়া ক্লাবের বক্তৃতার পর থেকে।

আবার তার ঐ বক্তৃতার পর থেকে তিনি ঐ ইন্ডিয়ান ব্যাগেজ টানা বা বোঝা বওয়া থেকে বের হয়েছেন তা আমার কখনও মনে হয় নাই। বরং মনে হয়েছে তিনি একের পর একটা ট্রাই করে যাচ্ছেন কিছু একটা থেকে মুক্ত হবার বা বের হতে চাছেন কিন্তু কোন কিছুতেই তাঁর লাক ফেবার করছেন না – দিশার আলো হয়ে হাজির হচ্ছে না।
এই অর্থে তিনি, ইন্ডিয়ান স্বার্থ আর ক্রমশ বড় খেদমতগার হয়ে উঠে বিএনপি, (জামাতও কিছুটা) ইত্যাদি সকলেরই ভাগ্য যেন এক হয়ে গেছে। সবাই তা থেকে বের হবার পথ খুজছে প্রাণপণ!!

গতরাতে সবচেয়ে তামসার কান্ড ঘটিয়েছে বিএনপি মানে তাদের মিডিয়া সেল! এটা পরিস্কার গত রাতে হাসনাতের স্টাটাসের পরে বিএনপি ইন্ডিয়ার হাতে প্রতাড়িত হয়েছে এমন এক ফিলিং যেন তাদের হয়েছে এমন আচরণ শুরু করেছিল।
যেমন রাত ০৩ঃ ৩৫, ২১ মার্চ মানে হাসনাতের স্টাটাসের প্রায় এক ঘন্টা পরে মিডিয়া সেল প্রচার করা শুরু করে এক ভিডিও কার্ডঃ

আওয়ামী লীগ নামে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না।
সেই আওয়াজ আমরা উঠাচ্ছি।
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আ. লীগের সাংগঠনিকভাবে বিচার দাবি করছি।
-সালাহউদ্দিন আহমদ, সদস্য, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, বিএনপি।
০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

 

অর্থাৎ মির্জা আলমগীরের সেই কুখ্যাত বাক্য – “জনগণ” আওয়ামী লীগের বিচার করবে বা নিষিদ্ধ করবে বা নির্বাচনে অংশ নিতে দিবে কিনা ইত্যাদি সবই  – জনগণ বিচার করবে  – এই লাইনে যেটা ছিল সেখান থেকেও সরে আসা সালাউদ্দিনের এই বক্তব্য। আর যদিও সালাউদ্দিনের এই বক্তব্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ মানে প্রায় দুমাস আগের। অথচ  সেটাই কেন গতরাত দুপুরে বিএনপির মিডিয়া সেল কেন আবার প্রচার করতে শুরু করেছে এর কোন ব্যাখ্যা দেয় নাই। এমনকি এর  আরও আধা ঘন্টা পরে (০৩ঃ৫৯ am  ২০২৫) ছাত্রদলও ফেসবুক পেজে একই স্টাটাস দিয়েছিল। এসবের সার কথা যেন এরকম ইন্ডিয়া বিএনপি কে ফেলে পুরানা প্রেমিক আওয়ামী লীগের সাথেই চলে গেছে, তাই গোসসা! আর হাসনাত কথিত অভিযোগের আঙুল যেদিকে সেই সেনা প্রধান (বিএনপি বা তাদের দলের সাথে যতই খাতির আছে বলে শুনা যায় তা শেষ) তিনিই লীগকেই (বিএনপিকে ফেবার করা না ) সামনে এনেছেন তাহলে, পুণর্বাসিত করতে আগিয়ে এসেছেনন – হাসনাতের অভিযোগের সারকথা এমন হয়ে গেছে!।
যদিও পরে দিনের আলো ফোটার পর থেকে বেলা বাড়তে বাড়তে দুপুরের দিকে রিজভি সাহেব দলের অবস্থান আবার পুরান জায়গায় নিয়ে দাড় করিয়েছেন!

লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে বা নির্বাচন করতে দেয়া হবে কীঃ
লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে কিনা বা নির্বাচন করতে দেয়া হবে কী এটা নিয়ে গত সাত মাস জুড়েই প্রবল উদ্যোগ ও উদ্বেগে একচেটিয়া ভাবে  থেকেছে ইন্ডিয়া বা মোদি সরকারের।
আর ক্রমশ এখন সেটা যারাই ইন্ডিয়ান স্বার্থ / দায় যেটাকে আমি প্রায়শই ইন্ডিয়ার বোঝা  মানে, ব্যাগেজ বা লাগেজ বলে থাকি – এটা যারাই কাধে নিয়েছে তাদের সকলেই নিজ নিজ স্বার্থের সাথে ইন্ডিয়ান স্বার্থকে মাখিয়ে একাকার করে দেখছে; যেখান থেকে মনে হচ্ছে তাদের কারই আর বের হবার বা ত্যাগ করার সুযোগ নাই। বা পারবে না!

ইন্ডিয়া ক্রমাগত বিদেশী (ভাড়া করা) সাংবাদিক পাঠিয়ে ক্রমাগত ইউনুস সাহেবকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে যে –  “লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে বা নির্বাচন করতে দেয়া হবে কী না”। আর ঐ চালাকিটা না বুঝে সরল উত্তর দিতে গিয়ে সকলেই পরিস্থতি জটিল করে তুলেছে। মূলত সকলেরই এমন শঠতা-প্রশ্ন এড়ায় যাওয়া উচিত ছিল যেহেতু ঠোস জবাব তাদের হাতে / কাছে প্রস্তুত নাই। যেমন যদি প্রশ্নের জবাবে বলতেন যে, –  আমরা অন্য কিছু নিয়ে প্রায়োরিটি তে এখন ব্যস্ত আছে। ক্রমশ আমরা এসব নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিলে মিডিয়াকে জানাবো”  –  এভাবে বলে দিতে পারত।
কিন্তু সকলেই বিপদে পড়েছে কী হলে  – “লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে বা নির্বাচন করতে দেয়া হবে কী”  – এভাবে সেই “শর্তগুলো” তা বলে জবাব দিতে চেষ্টা করতে গিয়ে!

এজন্যই র-এর দক্ষতা এখানে বার বার যারাই জবাব দিতে গিয়েছে তাদেরকেই বিপদে ফেলতে পেরেছে। অন্ততপক্ষে সাময়িক!
বাস্তবত আসলে লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে বা নির্বাচন করতে দেয়া হবে কী – না এই বিষয় টা  – অনেক যদি কিন্তুর পরের পরিস্থতিতে কী হবে এর উপর নির্ভরশীল। এর চেয়েও বড় কথা যেকথা আমার শত্রুদের কৌশল ঠিক করতে সহায়তা করবে তার জবার আমরা সহজ ভাবে দিব কেন????

আমি অনেইকবার বলেছে আমাদের সমাজ অনেক ছোট; আবার আরেক অর্থে খুবই ভাইব্রেন্ট। মানে পাবলিক একদিকে আছে তার জীবন সংগ্রাম নিয়ে আর রাজনীতি বা ব্যারাক এটা তাদের কাছে আরেক জগত – আমরা এমন না। সামাজিক পর্যায়ে আমরা আমরা খুবই কাছেরই। ব্যারাক আর সিভিল সমাজ সব খবর শেয়ার করি। সে হিসাবে আমার ধারণা, বাইরের সমাজের কিছু উত্তেজনা গত রাত থেকে যার শুরু সেটা ব্যারাকের কিছু উত্তেজনা তৈরি করার কথা। এখন আজ রাত সাড়ে নয়টায় মনে হচ্ছে আপাত সব জগতেই সব শান্ত হয়েছে।

সবার কাছে আমার একটা পরামর্শ হবে, সেসব সরিয়ে রেখে সব পক্ষই ইউনুস সাবের হাতে সব ছেড়ে দেয়া উচিত। উনার বিবেচনায় যেটা স্থায়ীভাবে সব উত্তেজনা স্তিমিত করে এমন সিদ্ধান্ত তিনি দিবেন – এদিকে পরিস্থতিকে থিতু হতে আগিয়ে দেয়াই সঠিক হবে।  নিশ্চয় আমরা ইন্ডিয়া বা বিদেশি কারও হাতের পুতুল হয়ে আমাদেরকে তারা নাচানোর সুযোগ নেক তা হতে দিতে পারি না।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এটা চলছে কাজেই আর নয়! এবার থামাতে হবে সব পক্ষকে!

ইউনুস সরকারের কড়া শক্ত হাতের অবস্থান চাই!

সামনে আমাদের অনেক কাজ পড়ে আছে সেসব দিকে মনোযোগ দিতে হবে!

লেখকঃ
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 আপডেটঃ  রাত ১০ঃ ০৫, ২১ মার্চ ২০২৫

 

Leave a comment