বিবিসি ও শ্রীরাধা দত্ত
গৌতম দাস
৩০ মে ২০২৩
https://wp.me/p1sCvy-4xe
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি সামলানোর
কোন নিউজ বা মিডিয়া গ্রুপ যখন কথিত “ফাইনান্সিশিয়াল সংকটে” পড়ে তখন যে সে কত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে তা আমরা দেখেছি। বিশেষ করে সে দুনিয়াতে যদি মোদি আর তার গোয়েন্দাবিভাগ হাজির থাকে। ভারতের ভিতরে অথবা বাইরে অঘোষিতভাবে ভারতের (গোয়েন্দা বিভাগের) মিডিয়া কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান এর নাম হল এএনআই (ANI) যে নিজেই এক ‘বেসরকারি সংবাদ সংস্থা-ই’ যেন অন্য কিছু নয়, এই ভাব ধরে থাকে। অথচ এ’হলো ভারতে সরকারি প্রটেকশনে ব্যক্তিমালিকানাধীন নিউজ এজেন্সী যে আমাদের বাসসের মত পর্যায়ের হয়ে উঠেছে কিন্তু কাজ করে সরকারি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের বাড়ানো হাত যেন! শুধু তাই নয়, ভারতের প্রধান সরকারি নিউজ এজেন্সি প্রতিষ্ঠান পিটিআই [PTI] এর চেয়েও ভারত সরকারের কাছে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত নিউজ এজেন্সি এটা; অথচ লিগ্যাল স্টাটাসে সে বেসরকারি সংবাদ সংস্থা মাত্র। আর তা দিয়েই কথিত সংকটে পড়া মিডিয়া গ্রুপগুলো তাদের ফাইনান্সিল খারাপ সময়ে অভাবকে ব্বযবহার করে অর্থালোভি হয়ে উঠলে তাদেরকে শিকারে নেমে পড়ার প্রতিষ্ঠান হল এই এএনআই। কথিত অর্থ-সংকটে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর খুবই কাছের বন্ধু হয়ে উঠে এই এএনআই। এমনকি সে ঘটনা বাংলাদেশের বেলাতেও একই, সত্য! বাংলাদেশের প্রথম আলোর ক্ষেত্রে দেখেছি তার বন্ধু হয়েছে এএনআই। এভাবে বন্ধু হয়ে জার্নালিজমের বেসিক নীতি ত্যাগ করে হলেও ভারতীয়দের আকাট পাকিস্তানবিরোধী প্রপাগান্ডায় নেমে পড়েছিল ো পরে প্রায়ই এই প্রথম আলো, স্রেফ কিছু নগদ অর্থ কামানোর জন্য। এগুলো ২০২১ সালের শেষের দিকে সবচেয়ে বেশি ঘটেছিল; এই উসিলায় যে করোনাকালে নাকি কর্মচারীদের ঠিকমত বেতন দিতে পারে নাই বা আয় কমে গেছে – মালিক বকা দিবে – এই ছিল সম্পাদকদের অজুহাতে।
সম্প্রতিক বছরগুলোতে বিবিসিরও অর্থসংকট, ছাটাই ইত্যাদির কথা অনেকদিন ধরে কানে আসছে আমাদের। বিশেষ করে এসময়ে বিবিসি বাংলাকে প্রায়ই “এএনআই-এর এসাইমেন্ট ধরণের” নিউজ করতে দেখছি। একালের বিবিসি বাংলার এই ফেনোমেনাটা হল বিজেপি-আরএসএস এর আইটি চীফ অমিত মালব্যর অনুগত-রিপোর্ট করা; যেটা মালব্য-রা লাগাতর পয়সা খরচ করে মিডিয়া কিনে প্রপাগান্ডা তৈরি করে – সেখান থেকে এটা এএনআই পর্যন্ত বিস্তৃত এই ততপরতা। এবিষয়ে এএনআইয়ের সিন্ডিকেটেড রিপোর্ট – যা ছাপলে উলটা মিডিয়াগুলো পয়সা পায় – এমন কুখ্যাত ততপরতা এর ভাল প্রমাণ। রিপোর্টে কলমের একটা আচড়ও বসায় না অথচ সেটা নিউজ বা জার্নালিজম বলে ছেপে দেয় এরা নগদ পয়সা পাওয়ার লোভে। যারা অমিত মালব্যকে চিনেন নাই তারা জেনে রাখতে পারেন, ভারত-বাংলাদেশ জুড়ে ফেসবুক যার নিয়ন্ত্রণে; প্রান্তীয় পর্যায়ে যেকোন প্রোফাইল-একাউন্ট গায়েব করে দেয়া যার কাছে তুড়ি বাজানো…। এছাড়াও ভারতীয় অরিজিন ফেসবুকে কাজ করা স্টাফদের সবার উপরের অলিখিত কর্তাব্যক্তিটার নাম হল যেন অমিত মালব্য। তবে এসবের বাইরেও অনেক ঘটনা আছে যেমন পুরানা যারা কলকাতা অরিজিন বিবিসি বাংলার স্টাফ যেমন, শুভজ্যোতি ঘোষ আর সে আমলে কলকাতা আরএসএসের তথাগত রায় যখন বাংলার প্রধান ব্যক্তিত্ব – এরা ছিল দুজনে দুজনার।
গত দুদিন ধরে তেমনই এক ততপরতা আমরা দেখছি বিবিসি -বাংলায়। সেটা হল ভারতের (গোয়েন্দা বিভাগের) তরফে কিন্তু ফ্রন্টাল ফেস যেমন, ডঃ শ্রীরাধা দত্ত-কে সামনে এনে তাঁর বয়ানে ভারত ও মোদিকে বিরাট পরাশক্তিগত নেতা হিশাবে তুলে ধরার এক প্রপাগান্ডা চালিয়েছে বিবিসি। এই নারীকে বাংলাদেশের ত্রাতা বা বাপ-মা হিসাবে তুলে ধরারও প্রকল্প এটা। কে এই শ্রীরাধা দত্ত? ফরমালি তিনি বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন [VIF] নামের যেটা সরাসরি আরএসএস এর এক থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান, তার সিনিয়র ফেলো শ্রীরাধা। এছাড়া ভারত আরএসএস প্রভাবিত নানান একাদেমিক / কমার্সিয়াল কিন্তু দলীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে তিনি জড়িত। বাংলাদেশে প্রায়ই তিনি সিপিডি [CPD] ভিজিট করে থাকেন।
সবমিলিয়ে মানে হল, তাঁর RSS এর সাথে খোলাখুলি যুক্ত থাকা বা সংশ্লিষ্টতা আমাদেরকে তাঁর সম্পর্ক কিছু বিশেষ ধারণা দেয়। সেখান থেকে অনেকে মনে করেন, মোদি-আরএসএস এর দুনিয়াব্যাপী হিন্দুত্ববাদ ছড়ানোর যে স্বপ্ন-কল্পনা আছে তা বাস্তবায়নের কর্মী একজন তিনি। তাই কার্যত ভিআইএফ (VIF), থিঙ্কট্যাঙ্কের নামে আরএসএস এর গ্লোবাল হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার এক প্রপাগান্ডা প্রতিষ্ঠান হয়েছে মনে করা ভুল হবে না; যার কান্ডারি তিনি। যেমন এই প্রসঙ্গ বিবিসিসহ অনেক অনেক ইউটিউব ভিডিও-ও ছাড়া হয়েছে সব জায়গায় একই প্রপাগান্ডা তুলে ধরা হয়েছে; যার প্রধান কাজ হচ্ছে শ্রীরাধার তুলে ধরছেন – বাংলাদেশে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পরে যেন মোদি হলেন হাসিনার বাংলাদেশের ত্রাতা যে মোদি চাইলেই হাসিনা সরকারকে উদ্বার করে দিতে পারেন অথবা হাসিনা সরকারের এখনকার পরিত্রাণ যেন কথিত এক ক্ষমতাধর পরাশক্তি ভারত ও এটা মোদির ইচ্ছা বা ভাল মুডের উপর নির্ভরশীল।
এটা ফুটিয়ে তোলা মত এক উপস্থাপক হচ্ছেন শ্রীরাধা দত্ত ও তাঁর কারিশমা; আর ওদিকে তা বাজারের ছড়িয়ে দিবার দায়ীত্ব-ঠিকাদারি পেয়েছে যেন বিবিসি বাংলা!
বিবিসির রিপোর্টের নামে এক গারবেজের প্রসঙ্গঃ
বিবিসির রিপোর্টের নামে এই গারবেজের শিরোনাম হল, “মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি সামলানোর উপায় কী হাসিনা সরকারের”, যার রিপোর্টার হলেন শাকিল আনোয়ার।
আচ্ছা এমন শিরোনাম কেন? মানে রিপোর্টার এখানে এটাকে একটা ‘হুমকি’ বলে ধরে নিয়েছেন কেন? কী দেখে নিশ্চিত হয়েছেন? আর ধরে নিয়েছেন যে “মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা” এটা বাংলাদেশ সরকারের উপর এক “হুমকি”? কিন্তু এন্থনি ব্লিঙ্কেনের টুইট বা ডোনাল্ড লু এর বাংলাদেশি টিভিতে গিয়ে ব্যাখ্যাদানের পরে হাসিনা সরকার ও সরকারি দলের প্রতিক্রিয়া কী ? নেগেটিভ ? তা তো নয়। এমনকি আওয়ামি লীগ, বিএনপি এমনকি জাতীয় পার্টি – এর নেতারা কেউই একে নেতিবাচক ভাবে দেখে নাই, নেয় নাই। অন্তত তাদের অফিসিয়াল ভার্সানে এটা তাই। পরেরদিন রাষ্ট্রদুত পিটার হাস এই তিন দলের প্রতিনিধিদেরকে ডেকে কথা বললে তারা কেউই “মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা” নিয়ে কোন নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া দেখান নাই।
আবার ওবায়দুল কাদের এর প্রতিক্রিয়া দেখুন। সরকারি বাসস-এর রিপোর্ট লিখছে – “মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে বেকায়দায় বিএনপিঃ ওবায়দুল কাদের” অর্থাৎ আওয়ামি লীগ এর জন্য কোন বিপদ ঘটে নাই বরং বিএনপি এই নিষেধাজ্ঞায় বিপদে পড়েছে বলে দাবি করছেন তিনি। অথবা আবার দেখেন, একই বাসস কিন্তু আরও এক রিপোর্টে লিখছে – “নতুন মার্কিন ভিসা নীতিতে অগ্নিসংযোগ বন্ধ হবেঃ মোমেনের আশাবাদ“। তাহলে কিসের ভিত্তিতে শাকিল আনোয়ার এটাকে হুমকি বলে চিহ্নিত ও প্রচার করছেন? সেটা কী এই যে এটাকে হুমকি বলে প্রচার না করলে শ্রীরাধা দত্ত বা তার মহাজন মোদিকে – হাসিনা সরকারের এক ত্রাতা ও বীর হিশাবে তুলে ধরা যাবে না??? বাঃ বেশ ভাল কায়দা তো! আর সেক্ষেত্রে হয়ত বিবিসির ক্লায়েন্ট এসাইনমেন্টের বিল সেক্ষেত্রে পে করবে না, তাই কি? তার মানে বিবিসির এই এসাইমেন্টের ফোকাস হল, মোদিকে এক বিরাট ত্রাতা আর মোদির ভারতকে একটা পরাশক্তি হিশাবে তুলে ধরা!! সেটা কতটা সত্যি – এই প্রশ্নটাকে মাথায় রেখে আমরা বিবিসির রিপোর্ট পড়ব।
রিপোর্টের শুরুতেই বিবিসি এক গায়েবি কূটনীতিকের কথা এনেছে। নাম না আনা এই কূটনীতিক বলেছেন, “……এই রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক চাপ সামাল দিতে তলে তলে আমেরিকার সাথে দেন-দরবার দর-কষাকষির পথে যাবে সরকার“। আচ্ছা ভাইসাব, কূটনীতিক ট্যাগ দিলেই কী কারো নামে যা খুশি লেখা বা চালানো যায়; জায়েজ? আমেরিকার সাথে হাসিনার কোন ডিল বা রফা করতে গেলে একটা দেয়া-নেয়া লাগবে, এটা তো কোন গুঢ় জ্ঞান না, এটা সবাই জানে। এখন প্রশ্ন হল হাসিনার হাতে এমন কি আছে যেটা আমেরিকার কাছে লোভনীয় ফলে যা সে কামনা করে? এমন কিছুই নাই, যেটুকু ছিল তা আগেই দেয়া হয়ে গেছে। আর দ্বিতীয়ত, হাসিনার সাথে আমেরিকার কোন ডিলে জড়ানোর মানে হল হাসিনার প্রথম চয়েজ তাকে আরও এক টার্ম ক্ষমতায় রাখতে হবে – আর এর দায় আমেরিকাকে নিতে হবে। কিন্তু আমেরিকা ইতোমধ্যে প্রতিটা কথাতে জুড়ে দিয়ে বলেই যাচ্ছে যে একটা ফেয়ার ইলেকশন হতেই হবে। তাহলে এখানে বটম লাইনটা হল, একটা ফেয়ার ইলেকশন আর হাসিনাও আবার ক্ষমতায় – এদুটো একসাথে ঘটাতে হবে ; কিন্নোতু সরি এদুটো একসাথে সম্ভব নয়। কোন ম্যাজিকেও সম্ভব নয়! তাহলে এসব “তলে তলে বা দর কষাকষি টাইপের” বুকিস মুখস্ত কথা বিবিসি ঐ কথিত কূটনীতিকের মুখ দিয়ে বলাচ্ছে কেন?
তাহলে, রিপোর্ট-টাকে কী বিবিসি কোন রহস্য উপন্যাস বানাতে চেয়েছিল ?? অবশ্য না হলে মোদি ত্রাতা, মোদি পরাশক্তির মত ক্ষমতাধর এই গল্প কিভাবে আনা যাবে? ব্যাপারটা তো তাই, তাই না?
দুইঃ
দেখা গেল বিবিসি এভাবে প্রথম পর্ব জমাতে পারল না। এখন পরের পর্ব। এবার প্রকাশ্যে সাবেক কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন বলছেন “বাংলাদেশে এক সামরিক ঘাটির” কথা। যদিও তিনি নিজেই তা শুরু করেছেন এটা একটা গুজব একথা বলে।
প্রথমত এটা গুজব নয়, এটা আমেরিকানদের একটা খায়েস যে তারা তাদের সপ্তম নৌবহর বাংলাদেশের জলসীমায় নোঙ্গর করতে পারলে তাদের শান্তি লাগত, এতে এশিয়ায় তাদের গায়ে বল বল ঠেকত। খায়েস তো মানুষের কত রকম থাকে! যেমন এই শতকের শুরুর আগে থেকেই অর্থহীন “ইসলাম কোপানিতে” লেগে পড়া ভারত-আমেরিকার দোস্তালির ইস্যুতে ভারতের (তখন সেটা বাজপেয়ীর ভারত) সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অ্যামেরিকান প্রশাসন গ্রহণের পর থেকেই এই ঘাটি বানাবার খায়েস তারা লুকিয়ে ফেলেছিল, কোন ঘরের চালে গুজে রেখে চলছিল। কারণ, অ্যামেরিকান এই খায়েসের ইস্যুতে এর বিরুদ্ধে চীনের চেয়েও কোর আরও বড় বিরোধি হল ভারত। অর্থাৎ ভারত-ঘনিষ্ঠতা চাওয়ার আগেই আমেরিকাকে এই খায়েস ডেড করে তুলে রাখতে হত তাই করেছিল আমেরিকা। আর তাই সেটা সেই থেকে তোলাই আছে। অর্থাৎ খায়েস টা একেবারেই কোন গুজব নয়, তবে তুলে রাখা আছে, এক্টিভ নয় এই আরকি!
কিন্তু আমেরিকান এই খায়েস নিয়ে আমাদের কী করার আছে?
সেটা এবার এককথায় বললে, অ্যামেরিকান এই খায়েস ঠেকানো এটা আমাদের চেয়েও ভারত ও চীন এদুই শক্তির জন্য আরো বড় ইস্যু; সেটা এতই বড় যে এরা দুই রাষ্ট্রই তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তা ঠেকাতে প্রস্তুত। কাজেই আমাদের ভুমিকা এখানে এতটুকু হলেই যথেষ্ট হবে যে বাংলাদেশকে ওদের লড়াইয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে হওয়ানো যাবে না। বরং না হয়ে ওদের পায়ের পারার নিচে চাপা পড়ে মরতে না চাইলে আমাদের ভুমিকাটা খুবই ছোট্ট! তা হল, এই ইস্যুতে কোনপক্ষের সাথে না গিয়ে কোন খাতির জমানোর ইস্যু বলে বিবেচনাই না করা – যেটাকে বলে – এটা আমাদের জন্য NO GO ইস্যু! যদি তা না মানি তাহলে এই ইস্যুর কারণে, আমেরিকা আসার আগেই ভারত ও চীনের দুদিক থেকে আক্রমণে আমরা শেষ হয়ে যাব। মানে এটা হাসিনা বা কারও ক্ষমতায় আসা বা ক্ষমতার আয়ু বাড়ানোর কোন ইচ্ছার আইটেমই নয়! দরকষাকষির ইস্যু নয় বা এভাবে দেখা হারাম! এই কথাটা মনে রাখতেই হবে!। কাজেই কূটনীতিক বলে নয় যেকারোই ভাব ধরে এনিয়ে কিছু বলা বা ভয় দেখানো অর্থহীন, অমূলক!
আচ্ছা দুনিয়াতে আমেরিকার আর একটা সামরিক ঘাটি করা না করাতেই বা কী হয়েছে? কী হতে পারে? গত ২০১৬ সালে আমেরিকা অষ্ট্রেলিয়াতে কোস্টাল এরিয়ায় একটা সামরিক ঘাটি চালু করেছে। তাতে কী হয়েছে? আমেরিকা চীনের উপর বিজয়লাভ করেছে নাকি কোন অতিরিক্ত সুবিধা পেয়েছে? কিছুই পায়নি। মনে রাখতে হবে কড়া ভাবে যে একালে আমেরিকা-চীনের প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এটা কোনভাবেই সামরিক চরিত্রের নয় সামরিকও নয়, এটা অর্থনৈতিক। আরো স্পষ্ট করে বললে, কার অর্থনীতি এই মুহুর্তের দুনিয়ায় নিজ অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি সারপ্লাস একুমুলেশন বা অতিরিক্ত সম্পদ জমা করতে সক্ষম হয়ে উঠেছে তারই প্রকাশের লড়াই । যদিও এটা তো প্রতিযোগিতার ইস্যু নয়, অবজেকটিভ ঘটনা। অর্থনীতিতে এই বাড়তি সম্পদ এটাই অন্যদেশের উপর আমেরিকা বা চীনের প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা হয়ে দেখা দিতে সক্ষম এবং হয়ও তাই। যেখানে আমেরিকা দ্রুত তার পুরানা প্রভাব-বিস্তারের সক্ষমতা হারাচ্ছে আর বিপরীতে চীন জাগছে। তাই আমেরিকা এটাকে সামরিক সক্ষমতা হিশাবে উলটে দিবার বা হাজির করে দেখানোর প্রাণপন চেষ্টা করছে। যে সামরিক ফিল্ডে আমেরিকা এখনও চীনের চেয়ে ছয়গুণ বেশি সক্ষম। কিন্তু আমেরিকা চাইলেই তা হচ্ছে না। কারণ, কোনদেশই সামরিক সংঘাত চাচ্ছে না, যদিও চীনের সাথে অনেক পড়শি দেশেরই সীমানা বিতর্ক বিরোধ আছে। কিন্তু তাই বলে আমেরিকার কোলে উঠে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে কেউ আগ্রহি নয়; এটা গাধামি এটুকু সকলেই বুঝে। তাই আমেরিকা বার বার ফেল করছে এখানেই। আর তাতে কী হয়েছে? হয়েছে এই যে অষ্টেলিয়ায় বানানো অ্যামেরিকান সামরিক ঘাঁটি কারই অন্তত এখনই কোন কাজে আসছে না। বিনিয়োগটা খামোখা হয়ে বসে আছে!
ভারত পাশে দাঁড়াবে?- এর গল্পঃ
ভারত পাশে দাঁড়াবে – একথা শুনলে আজকাল আর হাসিনাও খুশি হয় না। কারণ, মোদি ও ভারত মুরোদহীন, উত্থানরহিত এক ব্যক্তি বা শক্তি! আর এই মিথ্যা কথা কে বিশ্বাস করে!
এরপরেও বিবিসি ও শাকিল আনোয়ার এসেছেন আসলে তাদের সাবজেক্ট বা এসাইনমেন্ট নিয়ে যে – ভারত পাশে দাঁড়াবে? ! আচ্ছা একালে ভারত কবে থেকে কারও পাশে দাড়ানোর মত পরাশক্তি হয়ে গেছে? আর কিভাবে সেটা? যখন একাল বলতে গ্লোবাল নেতৃত্বের পালাবদলে আমেরিকা-চীনের রেষারেষি, লড়াই বা প্রতিযোগিতা তুঙ্গে উঠার কাল বলে এটাকে বুঝতে হবে। একালে ভারত তাহলে কী কেউ?? অবশ্যই না। তবে ভারত বড়জোর কখনও আমেরিকা অথবা চীনের পক্ষে তাদের কারও থেকে আলগা খেপ-মারার মত কাজ বা এসাইনমেন্ট পেয়ে গেলে সীমিত অর্থে ভারত নিজেকে কিছু ক্ষেত্রে পাওয়ারফুল বোধ করতেও পারে। যা সে আগে করেছেও; বাংলাদেশকে ভারতের হাতে আমেরিকার তুলে দিবার পরে!
আমাদের ওয়ান-ইলেভেন ছিল ২০০৭ সালের তেমনই একটা ঘটনা। আমেরিকার চাওয়া ছিল এশিয়ায় চীন-ঠেকানোর ঠিকাদারির কিছু কাজ ভারতকে দিয়ে করিয়ে নেয়। আর তাতেই বিনিময়ে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। কিন্তু সেই মাখন আমেরিকা কিছুই খেতে পারেনি বরং তার চেয়ে পিঠার আসল ভাগটা গিয়েছে ভারতের মুখে! আর তাতেই ২০১৪ সালের শুরু থেকেই আমেরিকাই সরাসরি বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ ও চাওয়া-পাওয়ার সকল ক্ষমতা ও সুযোগ হারিয়ে ফেলেছিল। আর এতে ভারত তখন বাংলাদেশকে একেবারে লুটে আর চুষে সব খেয়ে ফেলার ভুমিকায় হাজির হয়েছিল। এখন এটাকেই কী শাকিল বলছেন – এটাই কী ভারতের পাশে দাঁড়ানো? বিবিসি বা শাকিলের উচিত শব্দের ওজন, অর্থ জেনে মেপে এরপর ব্যবহার করা! আর এটা আমার বলার বা মনে করিয়ে দিবার কথা না, তাদের নিজেদেরই জেনে আসারই কথা!
আরএসএসের আছে একটা গ্লোবাল স্বপ্ন-প্রকল্পঃ
আরএসএসের একটা গ্লোবাল স্বপ্ন-প্রকল্প আছে। যেটা হিন্দুত্ববাদের ভিত্তিতে শুধু একটা অখন্ড ভারত কায়েম নয়; বরং সারা দুনিয়া জুড়ে হিন্দুত্ববাদ কায়েম করার স্বপ্ন। আর মোদি হলেন সেই স্বপ্ন-প্রকল্পের এখনকার প্রধান কান্ডারি। আমার একথার সবচেয়ে ভাল প্রমাণ মিলবে আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষত যেসব রাজ্যে প্রবাসী ভারতীয়দের সংখ্যা বলার মত একটা চাঙ্ক! সেসব রাজ্যের দেখা যাবে ক্যালেন্ডারে আরএসএস ঘোষিত হিন্দুত্বের চোখে পালনীয় দিন, মানে সরকারি ছুটির দিন নয় – যেমন একালের রামনমমী পালনের নামে অ-হিন্দুদের কোপানোর দিন হয়ে উঠেছে; এসব দিনে আমেরিকায় বসে এরা হিন্দুত্বের জয়গান গেয়ে মিছিল-সমাবেশ করছে। মনে রাখতে হবে অ্যামেরিকান হিন্দু ফাউন্ডেশন বলে তাদের সংগঠন আছে।
কাজেই এমন লক্ষ্য ও ততপরতার অংশ হিশাবে – বাংলাদেশের উপর অ্যামেরিকান ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এই উসিলায় ত্রাতা ও বীর মোদির ভারতকে একটা পরাশক্তি হিশাবে তুলে ধরা আর মোদি কী ত্রাতা হবেন – এভাবে এমন মুরোদবিহীন কিন্তু উস্কানিমূলক প্রশ্ন তুলে এরপর এরই জবাব দেওয়া বা নেওয়ার উসিলায় শ্রীরাধার কাছে গেছে বিবিসি। এটাই মোদি-আরএসএসের পক্ষে প্রোপাগান্ডা করার জন্য বিবিসিকে দেয়া এসাইমেন্ট!
কেন কথাগুলো এত কঠোরভাবে বলছিঃ
লেটেস্ট বাস্তবতার দিকে তাকাতে হবে। সেটা হল বাইডেন এখন ভারতকে কিভাবে দেখছে তা বুঝতে হবে। অন্তত এই ২০২৩ সালের শুরু থেকেই পুরানা – ভারত-আমেরিকা যতটুকু যা এলায়েন্স খাতির অথবা চীন-ঠেকানোর চুক্তি এবং হাতে হাত ধরে ওয়ার্কিং রিলেশন যা আগে তৈরি ছিল – এর সবটাই ফুল স্টপ হয়ে যায়। এর বহু আগেই অবশ্য ট্রাম্পের আমলেই ২০১৭ সালে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলারের আমেরিকায় এক্সপোর্ট এর বিশেষ সুবিধা বাতিল হয়েছিল। আবার একালে কোয়াড [] শুকিয়ে অকেজো হয়ে গেলে অথবা ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ান তেল, কয়লা ইত্যাদি পুণঃরপ্তানি শুরু সহ নানাবিধ প্রকাশ বলছে যে দুপক্ষই অঘোষিতভাবে স্ট্রাটেজিক সম্পর্ক সমাপ্তি টেনেছে। ভারতের সাবেক কূটনীতিকেরা আমাদের জানাচ্ছে যে ভারত এখনও স্ট্রাটেজিক এলায়েন্সটা ফিরে চায়। মানে হল আমেরিকা চায় না। এসবের কারণে, আমরা বুঝতে পারি যে চীনের সামনে ভারতের অসহায়বোধ আরও বেড়েছে। আর সর্বোপরি – আমেরিকা বড় ভাই তার পিঠে হাত রেখেছে – এতে ভারতের গা-গরম ভাবভঙ্গি ভারত সেটা গত ২৩ বছর ধরে দুনিয়ার বাজারে বিক্রি করে চলেছিল তা বন্ধ হয়ে আছে। – আর এখান থেকেই মিথ্যা আর ফাঁপা হলেও মোদির যে পরাশক্তি ভাবদেখানো এর উৎস হিশাবে আবার আমেরিকার সাথে সম্পর্ক নাই কিন্তু আছে দেখাতে মোদি-রা এখনও উদগ্রীব যদিও সেসব দেখানোটা এখন একেবারেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে!
তবু স্ট্রাটেজিক এলায়েন্স টা যে নাই তা বাস্তবে দেখা ঘটনা, সিম্পটম বা ইঙ্গিত দেখে বলা ঘটনা-ই, কারণ সরকারি বা ঘোষিতভাবে দুপক্ষের কেউ তা বলে নাই। তাই এবার কিছু সরাসরি ইঙ্গিত-প্রমাণ নিয়ে কথা বলব।
ভারত-আমেরিকার ডিভোর্সঃ
ভারত-আমেরিকার ডিভোর্স মানে আসলে স্ট্রাটেজিক ডিভোর্স – মানে স্ট্রাটেজিক এলায়েন্সে যে দীর্ঘ কমপক্ষে ২২ বছরের সমপর্ক ছিল এর অবসান ঘটা। এর প্রমাণ হিশাবে একালে আমেরিকার বার্মা দখল বা রেজিম চেঞ্জ এর ইচ্ছা নিয়ে যতটুকু যা প্রকাশিত তা যথেষ্ট ভাল প্রমাণ অবশ্যই। কারণ এটাই অ্যামেরিকার নয়া এশিয়ান স্ট্রাটেজির বেজ বা মূল অংশ, অবশ্যই আর তা ভারতবিরোধী বা ভারতের স্বার্থকে আমল বা কেয়ার না করে হাজির করা হয়েছে। কিন্তু আমি এর কথা এখানে এখন টানবো না। কারণ আরও বড় প্রমাণ-লক্ষণও হাজির হয়ে আছে তাই। কী সেটা?
এককথায় এটা হল, ভারতকে সাইজ করে ছোট করা বা আসল সাইজে আনা – বলতে পারি। মানে হল আমেরিকা যেন বলতে চাইছে গত তেইশ বছর আমার প্রভাবে থেকে ফুলে উঠা ভাব করেছো -পরাশক্তি মারাও? তাই এখন তোমাকে সাইজ করবে আমি। তোমার আসল সাইজে তোমারে ফিরিয়ে আনব। এসব ভাব-ইঙ্গিতের বক্তব্যেরই বাইরের মানে হল – ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর আমেরিকা-বাইডেন প্রশাসন আর মোদির শাসন দেখতে চায় না। তবে এক্ষেত্রে পরোক্ষে এবং আইন মানা সব ততপরতায় আমেরিকা ভারতের বিরোধীদলদের সুবিধা হয় সুবিধা পায় এমন সব পদক্ষেপ নিবে। এটা ইতোমধ্যেই আমেরিকা শুরু করে দিয়েছে। বলা যায় গুজরাত-ফাইল বা গুজরাতে মুসলমান নিধন এর ডকুমেন্টারি বিবিসিতে প্রচার দিয়ে এর শুরু। পরে আদানিকে ডুবিয়ে দেয়া যেটা মোদির সব ততপরতার অর্থনৈতিক উৎস ও সাপোর্ট যেখান থেকে পেত সেটাকে ধবংস করে দেয়া; রাহুল গান্ধীকে বিকল্প হিশাবে প্রমোট করা ইত্যাদি। এভাবে বিরোধী সকল দলকে ম্যাসেজ দেয়া যে রাহুলের পিছনে তারা যেন দাঁড়ায় আর নিজেদের নানান স্বার্থগুলো এলাইন করা এক রাস্তা ধরে সহযোগিতা করে সাজিয়ে নেয় যাতে তাদের সকলেরই আমেরিকার সহায়তা পেতে সুবিধা হয়, আমেরিকারও কাজগুলো সবার জন্য এফেকটিভ হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্টের ছোট্ট একটা কথা – যা এর মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল যখন বলেন ‘আমরা সব মনিটর করছি” – তা অনেক কথারই স্বল্পকথা আসলে।
আবার লক্ষ্য করেন সম্প্রতি ফেসবুকে ভারতীয় স্টাফদেরকে যে সমুলে ছাটাই করা হয়েছে সেটাও বাইফ+ডেনের দিক থেকে মোদিবিরোধিদেরকে দেয়া উপহার। এটা যে মোদির ঘরে আঁচ ও আগুন লেগেছে এর কিছু নমুনা দেখতে পারেন এখানে। এই পত্রিকাটা আরএসএসের স্বরাজ -উইংয়ের পত্রিকা।
মজার কথা হল, বাইডেন যতই এক্টিভ বা এগ্রেসিভ হচ্ছেন যা জন্মের পর থেকে ভারতের রাজনীতিতে কখনই উপস্থিত ছিল না ততই যেন মোদি পিছু হটছেন; মানে হয়ে গেছে যেন তাই করছেন বাইডেন। আমেরিকার হেফাজতে থাকা ভারতের আভ্যন্তরীণ প্রসঙ্গে যত গোয়েন্দা রিপোর্ট ডকু আছে [যেমন পুলোওয়ামায় পাকিস্তানের সাথে কোন বোমাবাজি ঘটেই নাই, সেতাই আমেরিকা মোদির পছন্দের লোক কাশ্মীরে মীদি যাকে প্রতিনিধি বা গভর্নর করে পাঠিয়েছিলেন সেই সত্য মালিক তা ফাঁস করে দিয়েছেন।] এর সবগুলো যেন বাইডেন ভারতের বিরোধীদলের সামনে খুলে দিয়েছে, এক্সেস দিয়ে দিয়েছেন। অথচ প্রতিক্রিয়ায় মোদি ততই কুকড়ে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে, সরে যাচ্ছেন – সর্বপরি এড়িয়ে প্রতিরোধ অবস্থান ত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন। যেন মোদি বুঝে গেছেন যে প্রতিরোধ অবস্থানে গেলে তাঁর আরো বেশি ক্ষতি হবে, ন্যাংটা হয়ে যাবে্ন!
এটা এক অদ্ভুত খেলা যেন! ওদিকে সর্বশেষ অনেক বাধা পেরিয়ে রাহুল তার নিজের জন্য একটা সাধারণ পাশপোর্ট ইস্যু করাতে পেরেছেন তাও সেটা আবার মাত্র তিন বছরের জন্য – বাকি আগের সব পাশপোর্ট সারেন্ডার বা বাতিল করেছে মোদি সরকার। আর এই পাশপোর্ট নিয়েই আগামি মাসে রাহুল আমেরিকা যাচ্ছেন। বাজারের অনুমান এটাই মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে তার ফাইনাল ডিল মানে – কাজের লক্ষ্য কী হবে, কে কী করার দায়ীত্ব নিবে ইত্যাদি এসবেরই ফাইনাল হবে সেখানে। বাস্তবে কী হবে না হবে সে আমরা আগামিতে দেখতেই পাবো অবশ্যই।
কিন্তু আসল কথাটা হল, ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক যে এখন ডিভোর্সির – স্ট্রাটেজিক এলায়েন্স থেকে পতিত হয়ে স্ট্রাটেজিক ডিভোর্স – এর একথা তো অন্তত বিবিসির কাছে কোন কিছুতে অজানা নয়! ছিল না। কারণ গুজরাত ডকু তো তারাই প্রচার করেছে! তাহলে???
একালে ভারতের নিজের সক্ষমতায় বাংলাদেশের পাশে দাড়ানো, কিংবা আমেরিকার কাছে বাংলাদেশের জন্য সুপারিশ করা ইত্যাদি কোন কিছুই হচ্ছে না, কারণ মোদির তা করার মুরোদ নাই, শেষ। তা নাই এবং ছিলও না যতটুকু যা ভারত দেখিয়েছিল আগে সেটুকুও মোদি ফুলিয়ে ফাপিয়ে নিজেকে পরাশক্তি কল্পনায় দেখিয়েছে – এসবের পিছনের কারণ ভারতের পিঠে কিছুটা সময় হাত রেখেছিল আমেরিকা – সে কারণে। অর্থাৎ অ্যামেরিকান স্বার্থে সে ভারতকে যতটুকু মাতবর বলে দাবি করার সুযোগ দিয়েছিল সেটাই। সবচেয়ে বড় কথা সেটা আর এখন একেবারেই নাই। অথচ এটাকেই মোদি ভারত পরাশক্তি হয়ে গেছে বলে চালাবার দেখাবার প্রাণান্ত চেষ্টা করে গেছে। যার সর্বশেষ প্রচেষ্টার নাম হল বিবিসি ও শ্রীরাধা দত্ত এদের ক্যারিকেচার! তাহলে ভারত বাংলাদেশের পাশে দাড়ানো বা না দাঁড়াতে চাওয়া নিয়ে জল্পনাওকল্পনা ছড়ানো এর সবকিছুই ডাহা মিথ্যা। মোদির ইমেজ তৈরির প্রপাগান্ডা মাত্র!
আসল কথাটা হল, যে মোদির ভারতের এখন বাইডেনের আমেরিকার কাছে নিজেদেরই বেইল নাই – না ভারতের না মোদির – সেই মোদি কিভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে পারে? হাসিনার হয়ে বাইডেনের কাছে সুপারিশ নিয়ে যেতে পারে, কে তিনি?????
অথচ এ পুরা ব্যাপারটাই ডিটেইল অন্তত বিবিসির নিজের জানা থাকার পরও দিল্লি কি তাদের সেই কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে – হাসিনাকে উদ্ধার টাইপের রিপোর্ট তাহলে কী করে করতে পারল??
এটাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের হয়ে নেয়া বিবিসির এসাইনমেন্ট!
বিবিসি একালে অনেক এক্টিভ একাজে। বিবিসি যদি এমন চালাতেই থাকে তবে আগামিতে হাসিনার যুগ শেষে তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। বাংলাদেশে গণধিকৃত মিডিয়া হিশাবে পরিচিত হবে! নিজের ভাগ্য নিজে বেছে নেওয়ার অধিকার তো অবশ্যই বিবিসি বা শাকিল আনোয়ারের! মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্য গড়ে থাকে!
আপডেটেডঃ ৩১ মে ২০২৩, দুপুরঃ ১০ঃ৩৯
গৌতম দাস,
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

