আবার সুবীর ভৌমিক!
গৌতম দাস
২ জুন ২০২৩
https://wp.me/p1sCvy-4yv
Why Did the United States Just Sanction Bangladesh – FP
আবার সুবীর ভৌমিক! তিনি আবার একটা লেখা পয়দা করেছেন, একই ফেডারেল পত্রিকায়। তবে এবার সম্ভবত শ্রীরাধা দত্তের দ্বারা সুবীর উদ্বুদ্ধ হয়েছেন যে – “ভারত এক পরাশক্তি”, এমন ভাব দেখানিতে সামিল হয়ে। স্বপ্নে পোলাও খাবার মত এই ভাব ধরে কল্পিত ধারণার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ নিয়ে আরো কত কী তো লেখা সম্ভব!! অসম্ভবএর কী আছে? আর এতে মোদির ভারতের ইমেজ অনেকটাই ফাও ফাও বাড়িয়ে নিবার অনেক সুযোগ আছে। তাই সুবীর মনে হচ্ছে এবার সে লাইনে আবার একটা লেখা পয়দা করেছেন।
লেখার শিরোনামঃ “India intervenes to douse tempers in US-Bangladesh spat” মানে হল – “আমেরিকা-বাংলাদেশের মধ্যে গরম হয়ে যাওয়া কথাবার্তায় ভারতীয় হস্তক্ষেপ, উত্তেজনার পারদ নামাতে”।
তার মানে সারকথা হল, ভারত এক বিরাট পরাশক্তি আর মোদি তার বিরাট নেতা – এই প্রপাগান্ডা করতে এসেছেন সুবীরও। এতে তিনি মোদিকে এতই বিরাট নেতা বানাচ্ছেন যে তিনি যেন দুপক্ষকে শান্ত করেছেন [নিচে মূল ইংরাজিটা দেখতে পারেন।]। এই অভিনয়ের উপর দাঁড়িয়ে সুবীর কথা সাজিয়েছেন। আবার সুবীর নিজেই এক সাফাইও হাজির করেছেন যে কেন ভারত গুরুত্বপুর্ণ হল। সুবীর বলছেন, ভারত নাকি “উভয় পক্ষকে সহনশীল সংযত [advising moderation] হতে পরামর্শ দিয়েছে”। কিন্তু কেন দিতে গেল আর কেন আর কী সুত্রে ওরা উভয়পক্ষ ভারতের কথিত পরামর্শ গ্রহণ করল বা ভারতকে পরামর্শ দিবার জায়গা করে দিল? এনিয়ে সুবীর নিজেই ব্যাখ্যা দিয়ে বলছেন, কারণ আমেরিকা নাকি ভারতের কৌশলগত পার্টনার আর বাংলাদেশের কাছে ভারত হল সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু , তাই।
“India has played a vital role by advising moderation
on both sides since it is close to both the US(its strategic partner)
and Bangladesh (its most trusted friend in South Asia).”
সমস্যা হল, বাংলাদেশের মানুষ জানে যে এটা একটা শতভাগ মিথ্যা কথা। কারণ, স্বামী প্রাক্তন হয়ে গেলে তাকে কী আর স্বামী বলে চালায় দেয়া যায়? আমেরিকার সাথে ভারতের স্ট্রেটেজিক মিল অবস্থানের যে সম্পর্ক ছিল সেটা আর কার্যত নাই। বাইডেন মোদি-বিহীন ভারত চাওয়া শুরু করলে কী আর পুরানা এসব সম্পর্ক এখনও জিন্দা আছে বলে চালিয়ে দেয়া সম্ভব?? আবার অন্যটা, মানে হাসিনা সরকার? ভারত যে সুযোগ পেলে হাসিনা সরকারকে বেঁচে দিয়ে হলেও পরবর্তি সরকারের সাথে সম্পর্ক বা খাতির জমানো করতে পিছপা হবে না সেটা তো কারও অজানা থাকার কোন কারণ নাই! তাহলে কেন সুবোর এদিকটা আড়াল করতে চাইছেন?
আর ইতোমধ্যেই ভারত যে এমন বেচাবিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে এর প্রমাণ সুবীর তার এই লেখাতেই রেখেচেন। সেখানে যাচ্ছি একটু বাদে। তার আগে, সবচেয়ে আজিব বাত হল, সুবীর নিজেই জানাচ্ছেন “…… R&AW chief Samant Goel to Dhaka,” – মানে র-এর চীফ নিজেই ঢাকা-ইন্ডিয়া দৌড়াদৌড়ি করতেছেন। প্রথমত সুবীর কেন সামন্ত গোয়েলের এই গোপন ততপরতা পাবলিক করে দিচ্ছেন? সুবীরের হয়ত ধারণা এতে হাসিনা সরকার খুশি হবে? অথবা র-এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আবছায় থাকবে! তাই কী? না হলে, গোয়েলের এই গোপন ততপরতা পাবলিক করে দিবার কোন লাভজনক কারণ তো দেখা যাচ্ছে না!
তবে অন্যদিকে, সুবীর কী জানেন না যে এই কথাটা বাংলাদেশের আম-মানুষ সবচেয়ে অপছন্দ করবে????? যেখানে বাংলাদেশের আম-মানুষের ভারতীয় ততপরতা নিয়ে সবসময় উদ্বেগের মধ্যে থাকে; অবিশ্বাস করে! অন্যভাবে বললে, R&AW অথবা এর chief এর প্রতি বাংলাদেশের আম মানুষের নুন্যতম সহানুভুতি নাই, থাকার কোনও কারণও নাই! কারণ, গত ১৫ বছর ভারত বাংলাদেশিদের স্বার্থের এদিকটায় কোন আমলই করে নাই! তাহলে সুবীরের এই বেপরোয়া ভাবটা কেন? সামন্ত গোয়েল বা প্রণয় ভার্মা-রা বিরাট দৌড়াদৌড়ি করছেন এই তথ্য কী হাসিনা সরকারের পক্ষে যাবে, তার জন্য ভাল হবে? প্রশ্নই আসে না, পাবলিকের চোখে ভাল হবে না বরং নেগেটিভ হবেই! তাহলে সুবীরের এসব পাকামো কেন? এর একটাই কারণ হতে পারে যে মোদি ও তার ভারত যে বিরাট পরাশক্তি হয়ে গেছে – সেই ফাঁপা আর শতভাগ মিথ্যা হলেও সেই কথাটাকেই ফুটানি দেখানোর জন্য ব্যবহার করা!!
এটাই আসলে হাসিনা সরকার মরুক আর বাচুক জাহান্নামে যাক এই সরকারকে এখন বেচা দিয়ে হলেও সামন্ত গোয়েল বা মোদির স্বার্থ উদ্ধার মনে হচ্ছে তাদের প্রধান লক্ষ্য!
আবার লেখার শুরুর প্যারাতেই সুবীর হাসিনা সরকার সম্পর্কে লিখছেন Bangladesh has promised ………who are linked to electoral fraud.
মানে সুবীর বলছেন, – অ্যামেরিকা বলেছে যারা নির্বাচনী প্রতারণা বা কারচুপিতে সংশ্লিষ্ট তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে, এজন্য সরকার সুষ্ঠ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। আবার পরে সুবীর আরো বলেছেন, ২০১৪ আর ২০১৮ এর নির্বাচনে যারা ভোটচুরিতে দুবারই ব্যাপারটাকে আবর্জনা বানিয়ে ফেলেছিল তাদের উপর আমেরিকা খুবই ক্ষুব্ধ। [it feels, has marred two successive national elections in 2014 and 2018.]
আবার সুবীর সাথে জুড়ে দিয়েছেন হাসিনা সরকার এসব কারচুপির কথা ঝেড়ে অস্বীকার করেছে……। তাই কী করার কথা না? সরকার স্বীকার করার পরে কী আর সরকার থাকে?
আচ্ছা সুবীর সাব এত পিছলা-পিছলি করতাছেন কেন? যেমন, ২০১৪ সালের কথাই ধরেন, ভারত সরকার বা তার গোয়েন্দা বিভাগের কাছে ফাস্ট-হ্যান্ড ইনফরমেশনই আছে? নাই কী? ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং-কে দিয়ে ভারত সরকার যে এসাইনমেন্টে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল তা কী তামাম ভারতীয় সরকারি পক্ষের কাছে অজানা? সেখানে বিএনপি বাদ আর এরশাদকে বিরোধী দল সাজিয়ে নির্বাচন পার হতে হবে – এই ছিল সুজাতার এসাইনমেন্ট তা তো সেই সময়ই এরশাদ ঐ সময়ের সুজাতার সাথে এরশাদ তাঁর মিটিং থেকে বের হয়েই ভারতের এই সিদ্ধান্তের কথা সরাসরি সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন। একালেও চলতি বছরে সংসদে জাতীয় পার্টিও সেসব পুরানা ভারতীয় প্রতারণার কথা তারা নিজেরাই স্বীকার করে আবার আমাদের জানিয়েছে, এখানে দেখুন। কাজেই এসব তো সুবীর সাবের কিছুই অজানা নয়। তাহলে এখন এমন ঢং করে নিঃস্পাপ সাজা – এটা তো বাংলাদেশের আজ-জনতার জন্য বিরক্তিকর নেকামোই ঠেকবে! নাকি?
আবার র্যাবের উপর অ্যামেরিকান স্যাংশনের জন্য হাসিনার যেসব দুর্বল সাফাই – যে র্যাব কথিত জঙ্গিবাদ দমন করেছে – বলেছেন সেগুলোকেই সুবীর আঁকড়ে ধরে আবার হাজির করেছেন এখানে। কিন্তু কথা হল সুবীরের টার্গেট শ্রোতা কে? আমেরিকা? বাংলাদেশের আম-জনতা? এদের কারও কাছেই তো এই সাফাই গ্রহণীয় নয়। তাহলে কে টার্গেট শ্রোতা? ভারতের সরকার অথবা হাসিনা সরকার? সেটা তো ঘরে ডেকে নিয়ে বললেও হত! এর প্রয়োজন কী? কার ভোগে লাগবে এই প্রকাশ্য চামচামি?
সোজা কথায় আমরা দেখছি এবার সুবোর ভৌমিক খুবই অস্থির বেচাইন; কথার তালমিল রাখতে পাচ্ছেন না।
তবে সুবীরকে যা মনে রাখতে হবে তা হল এটা ২০১৩-১৪ সাল নয়। এটা ২০২৩ সাল। ফলে নানার আমলে ঘি খাইছিলেন সেই গল্প হাজির করে এখন তুড়ি বাজাতে চাইলে তো আর বাজবে না। এখন আমেরিকান অবস্থান আর ভারতের অবস্থান এক নয়, স্ট্রাটেজিক মিলের গল্প সে তো বহু দূর, যা বহু আগেই ছিঁড়ে গেছে; এশিয়ায় ভারত-আমেরিকা এখন যার যার তার তার আর সর্বপরি খোদ মোদিকেই ক্ষমতাচ্যুতি বা অপসারণ এখন অন্তত বাইডেনের কামনা! কাজেই পরাশক্তি ভাবধরা মোদির চেয়ে এক অধীনস্ত ইন্ডিয়া – এটাই বাইডেনের এশিয়া নীতির সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ। সেটাকে অধীনস্ত বা বাইডেন-রাহুল ডিল যাই বলি না কেন! আদতে সবকিছুই মোউলিক জায়গায় আসলে বদলে গেছে। কাজেই খামোখা মোদিকে পরাশক্তি বা বাংলাদেশের ত্রাতা ভাব ধরে লাভ নাই। আমেরিকা ভারতের এখনও স্ট্রাটেজিক বন্ধু বলে মিথ্যা ভাব ধরেও লাভ নাই! এতে মোদির গুরুত্ব বাড়ারও কোন কারণ নাই! এমনকি তা হাসিনা সরকারের কাছেও না!
কে মিথ্যা বলছেন সুবীর না শ্রীরাধাঃ
আবার সবচেয়ে বড় কথা শ্রীরাধা দত্ত [যাকে নিয়ে গত সপ্তাহেই লিখেছি এখানে দেখেন] অফিসিয়ালি আরএসএস এর সাথে যুক্ত মানে আরএসএস এর এক থিঙ্কট্যাঙ্কের ভিআইএফ [VIF] এর এক কর্ণাধর। বিপরীতে সুবীর ভৌমিক আপনি যা কিছুই হন না কেন অফিসিয়ালি ভারত সরকারের কেউ না।
এখন শ্রীরাধা দত্ত বিবিসি-কে বলে গেছেন ভারত সরকার হাসিনার জন্য কিছু করবে না। আর সুবীর আপনি বলছেন উল্টাটা। কী হল তাহলে?
আবার হাসিনা সরকার টিকানোর পক্ষেই নাকি র-এর প্রধান সামন্ত গোয়েলের ঢাকা সফর ছিল বলে গল্প দিচ্ছেন! মানে এসেছিলেন এটা আপনিই সাক্ষ্য দিয়ে বলছেন তাই এটা আমাদের অস্বীকারের কিছু নাই। কিন্তু সরকার টিকানোর জন্য কী এসেছিলেন? না উল্টাটা, আমরা বিভ্রান্ত! তাহলে আসলটা কী? ঠিক কোনটা আসল তা নিয়ে আপনার উপর আস্থা রাখা যাচ্ছে না! তাই, খুব সম্ভবত শ্রীরাধা নয়, সুবীর আপনি একদম ডাহা মিথ্যা বলছেন।
কথা বেশি বললে চাপাবাজি সব বের হয়ে পড়ে!!! এত বারবার একেক কথা দিয়ে আপনার হাজিরাটাই সব অস্থিরতারই ইঙ্গিত!
আর স্বভাবতই এতে, বাংলাদেশে ভারত সরকার বা মোদি বা সুবীর ভৌমিক ইত্যাদি এদের সকলেরই বিশ্বাসযোগ্যতা শুণ্যের কোঠায় ডুবে যাচ্ছে! অসৎ লোকে দুনিয়াটা ভারি হয়ে উঠছে!
+++
আপডেটেডঃ ০২ জুন ২০২৩ দুপুর ১০ঃ ৫৮ ১১
গৌতম দাস,
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

