কথিত “আদিপুরুষ” -সিনেমায় কী হচ্ছে
গৌতম দাস
২০ জুন ২০২৩ মধ্যরাত ০০ঃ ০২
https://wp.me/p1sCvy-4Dk
ইংরাজিতে জাতি শব্দটা বুঝাতে মূলত দুইটা শব্দ হয় – Race ও Ethnicity। অর্থাৎ ইংরাজির Race ও Ethnicity এই দুটা শব্দকেই আমরা বাংলা করি জাতি বলে। খুবই সংক্ষেপে বললে এরমধ্যে Race অর্থে জাতি মানে যেটা মানুষ প্রজাতির দুনিয়ায় আগমন বা উদ্ভব ঘটেছিল কয়েক মিলিয়ন বছর আগের ঘটনা যেটা; এই অর্থে তা মানুষ জাতি [Human Race]। এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের রেস অর্থে বা রেসিয়াল বা জাতিগত ভিন্নতা – তা আবার বুঝা সম্ভব তার রক্তের ডিএনএ এর ভিন্নতা থেকে।
বিপরীতে বাংলায় লেখা আরেক জাতি এই শব্দ ও ধারণা হল যেটা Ethnicity অর্থে জাতি। যেটা একাল থেকে মাত্র মোটামুটি প্রায় ছয়হাজার বছরের পুরানা – এথনিক জাতি। মানুষ কালচারাল যা কিছু আছে তাতে ভাষা, ধর্মীয়, সামাজিক, প্রধান খাদ্য, রান্নার প্রক্রিয়া, বিশ্বাস মিথ ইত্যাদি সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত – এটাই এথনিক জাতি পরিচয়। যেটাকে আমরা সভ্যতা বলি অথবা, অন্যভাষায় বললে দুনিয়ায় মানুষ যবে থেকে আগের যাযাবর জীবন ছেড়ে প্রথম কৃষিকাজ এর জীবন শুরু করেছিল। দুনিয়ার কোন এক ভুগোলে থিতু হয়ে বসে গিয়েছিল। আর তাতেই একেকটা সিভিলাইজেশন এর সুত্রপাত ঘটেছিল। এই অর্থে আমরা সিন্ধু সভ্যতার অংশ। এটাকেই বলে এথনিক জাতি পরিচয়। আর পরে সিন্ধু সভ্যতারই উপবিভাগ মানে এরও আবার সাব-এথনিক জাতি পরিচয় হিশাবে আমরা বাঙালি।
উপরের কথাগুলো হল জাতি ধারনাটার সবচেয়ে ইতিবাচক উপস্থাপন। আর এর বাইরে জাতি পরিচয়ের বা জাতি বা জাত পরিচয় নিয়ে কথাবার্তার সবটাই মূলত নেতিবাচক। কারণ সেসবগুলোতে জাত পরিচয় নিয়ে আলাপ মানেই জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধ অন্য সকলকে ঘৃণা করা ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো। যেখানে মূল কথাটা হল আমার জাতই শ্রেষ্ঠ – এই শ্রেষ্ঠত্ববোধ।
এই ধারণার সবচেয়ে ক্ষতিকর ও বিপদজনক দিকটা হল – নিজেকে জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধে বলে উপলব্দি ও হাজির করা মানেই অন্য সকল জাত-পরিচয়ের মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা, নিচা দেখানো ইত্যাদি আর এখান থেকেই যেহেতু আমি শ্রেষ্ঠ কাজেই আমি অন্য সকল জাত (বা ধর্ম)-পরিচয়ের মানুষকে নির্মুল করতে পারব সেটা জায়েজ হবে মনে করা শুরু হয়। আর এই নির্মুল বলতে অন্য জাত-ধর্ম পরিচয়ের মানুষকে হত্যা, দখল করা নইজের পায়ের নিচে রাখা অধীনস্ত করে রাখা এমনকি কলোনিদখল করা ইত্যাদি এসব কাজকরার স্বপক্ষে নিজ জাতশ্রেষ্ঠত্ব বোধকে সাফাই হিশাবে তুলে ধরা শুরু হয়। এটাই, এই প্রেজেন্টশন এভাবে বয়ান হাজির করা এটাই মোদির হিন্দুত্ববাদ। এটাই হিটলারিজম – জর্মান জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধ।
তত্বকথা শেষ। এবার ব্যবহারিক কথাবার্তা। আর এর এক নয়া নমুনা হল ভারতের ‘আদিপুরুষ’ সিনেমা। যেটা গত ১২ জুন রিলিজ হয়েছে। পাঠক সকলকে চিনে রাখতে বলব মনোজ শুক্লা নামের এই ব্যক্তিকে। যার ছবি উপরে দিয়েছি। অনেক স্ময় তাকে মনোজ মুন্তাশীর [Manoj Muntashir] শুক্লা নামেও চিনবেন।
ইনিই হচ্ছেন এখন ভারতের সবচেয়ে বড় পেমেন্ট পান এমন -সিনেমা, নাটক বা টিভি অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট রাইটার, ডায়লগ লেখক। বিশেষ করে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদ নামে পৌরাণিক বা মিথিক্যাল ঘটনাবলী যদি আপনার কাহিনীর চাহিদা হয়ে থাকে। এছাড়াও ভারতের জাতীয় দিবসগুলোতে সেদিনের টিভি প্রোগ্রামের স্ক্রিপ্ট লিখার কাজে। আর বলাই বাহুল্য এসব দিন মানেই ভারতের সেনাবাহিনীর বর্ণনা আর এখান থেকে সবচেয়ে সহজে এবং অবশ্যই থাকবে মানে এতে ভিলেন হয়ে যে জিনিষ থাকবে তা হল পাকিস্তান; মানে মুসলমান-ইসলাম। এবার হিন্দুত্ববাদের জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধের বয়ান যেটা সেখানে হাজির থাকবে এরই পপুলার কঠিন সুরসুরি দেয়া আবেগের স্ক্রিপ্ট লেখক হিশাবে পাবেন এই মনোজ মুন্তাশীর-কে!
এমনিতেই জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধের বয়ান জিনিষটাই থকথকে আবেগের; যা স্থির মনে মানুষকে চিন্তা করতে দেয়না বরং ক্রমাগত আবেগে ভেসে যেতে উস্কানি তুলে চলে। কোন র্যাশনালিটি বা যুক্তিবুদ্ধিও মানুষের মধ্যে কাজ শুরু করার আগেই ভোক্তা মানুষ বা ক্লায়েন্টকে মনোজ মুন্তাশীর তাঁর আবেগের সুরসুরি তুলে দখল নিতে হবে – এটা মনোজ খুবই ভাল বুঝেন এবং দক্ষ তিনি। ফলে এরপরে আবার মানুষের র্যাশনালিটি বা যুক্তিবুদ্ধিতে চিন্তা পেরিয়ে স্পিরিট বা স্পিরিচুয়াল স্তরে যেতে মানুষকে মনোজ কোন সুযোগই দেন না।এই হল মনোজ মুন্তাশীর [Manoj Muntashir] শুক্লা। একালের হিটলার মোদি বা হিন্দুত্ববাদ এর মূলত সাফাই বয়ান লেখক। অথচ বাইরে যার পরিচয় পান্ডুলিপি – অভিনয়ের পান্ডুলিপি লেখক বা প্রণেতা।
মনোজ মুন্তাশীর [Manoj Muntashir] শুক্লা তিনিই আদিপুরুষ সিনেমার ডায়লগের লেখক। যেমন বিডিনিউজ লিখেছে, “…এদিকে ‘আদিপুরুষ’ সিনেমার সংলাপ লেখক মনোজ মুন্তাশীর শুক্লা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, যেসব সংলাপ দর্শকদের আঘাত করেছে, সেগুলো সংশোধন করা হবে”।
আর প্রথম আলোও খুবই ইনোসেন্টলি ছেপেছে, “……এদিকে ‘আদিপুরুষ’ ছবির সংলাপ লেখক মনোজ মুন্তাসির শুক্লা টুইট করে জানিয়েছিলেন যে এই ছবির বিতর্কিত সব সংলাপ বদল করা হবে। মনোজ এক বড়সড় পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আমি এবং ছবির নির্মাতা আর পরিচালক মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই ছবির যেসব সংলাপ আপনাদের আঘাত করেছে, আমরা তা সব সংশোধন করব।’ আর এই সপ্তাহে তা ছবির সঙ্গে যুক্ত করা হবে”।
সবাই নিস্পাপ, ইনোসেন্টঃ
মনোজ মুন্তাশীর থেকে প্রথম আলো অথবা চাই কী দর্শকেরা যাদের ভিতর হিন্দুত্ব জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধের জোশ-চেতনা জাগরিত হয়েছে এরা সকলেই নিজেকে নিস্পাপ হিসাবেই দেখছেন। যাদের সবার কম কথাটা যেন এরকম – আমি কী করেছি, আমি তো সিনেমাটা দেখেছি কেবল – অথবা আমি কী করেছি, আমি তো সিনেমাটা খবরাখবর নিয়ে পত্রিকার বিনোদন পাতা চালিয়েছি যাতে ভারতীয় সেনিমাতার প্রচার প্রসার হয় এতটুকুই। এটা তো বিনোদনমূলক কাজ মাত্র। এভাবে ম্নোজও হয়ত বলবেন আমি কী করেছি, আমি তো সিনেমাটা যেন চলে প্রযোজক আমাকে টাকা দিয়েছে – তার সিনামাটা চালিয়ে টাকা উঠিয়ে দেয়াটাই আমার দেখার বিষয়। অর্থাৎ কেউ জানেই না যে তিনি একটা মারাত্মক অপরাধ ক্করছেন। নিজের জন্যও ক্ষতিকর একটা কাজ করেছেন।
যদিও পুরা ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তাতে অনেক মোচড় বা টুইস্টও আছেঃ
সিনেমাটা মূলত তেলেগু (বৃহত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ-হায়দ্রাবাদ) ডমিনেটিং অভিনেতা-প্রযোজকদের এক হিন্দি সিনেমা যার অন্য সব দক্ষিণী ভাষাতেই (তামিল, তেলেগু, কন্নড় ও মালায়লাম ভাষায় ) রিলিজ দেয়া হয়েছে। রিলিজের প্রথম দিনেই নাকি ১৪০ কোটি টাকার টিকেট বিক্রি হয়েছে। আবার এককথায় বললে এটা হিন্দুত্ববাদের জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধ এর প্রচার ভিত্তিক এক সিনেমা ততপরতা যেটা একটা হিটলারিজম! কিন্তু এতে মজার টুইস্ট হল, আরএসএস-এর কিছু অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এতে খুশি না। যেমন বিডিনিউজ লিখেছে, “মুক্তির আগে এবং পরেও এই সিনেমাকে ঘিরে অভিযোগ একটাই ‘হিন্দুধর্মের ভাবাবেগকে আঘাত করেছে আদিপুরুষের কাহিনি’। এমনকি সিনেমা থেকে কিছু দৃশ্য বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টে আর্জি জানায় হিন্দু সেনার দল।
আবার আরএক রিপোর্টে লিখেছে, আদিপুরুষ: রামায়নের গল্পের ‘ইসলামাইজেশন’! – এই শিরোনামে। রিপোর্ট জানাচ্ছে, “…… সর্ব ব্রাহ্মণ মহাসভা পন্ডিতের জাতীয় সভাপতি পিটি সুরেশ মিশ্রের পক্ষে কমলেশ শর্মা এই উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন পরিচালককে”। তাহলে কাহিনী কী এখানে?
কাহিনী হল এটাও আসলে হিন্দুত্ববাদের জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধ এর উপর দাঁড়িয়ে আরেক ততপরতা; কিন্তু তা হলেও যেটা দেখে মনে হবে এটা তো সিনেমাটার বিরোধিতা করছে! সেটা কেমন করে? এটা “হিন্দুধর্মের ভাবাবেগকে আঘাত করেছে” বলে অভিযোগটাই তো হিন্দুত্ববাদের জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধ এর দাঁড়ানো। তারা বলতে চাচ্ছে এটা মুসলমানেরা করেছে বা মুসলমানদের চিন্তার উপর দাঁড়িয়ে করা কাজ অথবা মুসলমান সংশ্লিষ্টতা বা তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল হয়ে করা কাজ। আর সবচেয়ে বড় প্রমাণ বা অভিযোগ হল এখানে রামায়নের রাবনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাইফ আলী খান যিনি পতৌদির (এখন হরিয়ানা-দিল্লির এক অংশ হয়ে গেছে, সেকালে এক ছোট করদ রাজা ছিল) নবাবের বংশধর মুসলমান, ক্রিকেটার মনসুর আলো খান পতৌদির সন্তান। মূল ইঙ্গিত-বক্তব্যটা হল যেন এটা বলা যে – মুসলমানেরা হিন্দুদের সব ভাল ঐতিহ্য নষ্ট করে দিচ্ছে।
পরের অভিযোগটা সর্ব ব্রাহ্মণ মহাসভা পন্ডিতদের। সেটা তো আরো সরাসুরি এটাক বলছে এটা ” রামায়নের গল্পের ‘ইসলামাইজেশন’ করা হয়েছে। তাই এখানে হনুমানের দাড়ি-গোফ রাখা হয় নাই।
কোনো হিন্দু গোঁফ ছাড়া দাড়ি রাখে না, যেভাবে ভগবান হনুমানজিকে দেখানো হয়েছে।
চলচ্চিত্রটি রামায়ণ এবং ভগবান রাম, মা সীতা, ভগবান হনুমানের সম্পূর্ণ ইসলামীকরণ হয়েছে।
এমনকি আদিপুরুষে রাবণের ভূমিকায় অভিনয় করা সাইফ আলি খানও তৈমুর কিংবা আলাউদ্দিন খিলজির মতো দেখতে।”
অথচ কেউ টেরই পাইলেন না যে এই সিনেমাকে কেন্দ্র করে ‘হিন্দুত্ববাদের জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধ দেখানোর’ এর যত ততপরতা – এটা একটা এতই উগ্র জাতি বা জাতিবাদি চিন্তা যে এটাই ভারতকে ভেঙ্গে ফেলার জন্য যথেষ্ট। হিটলার হয়ত আপসোস করে বলবেন যে তিনি ও কেন এত উগ্র হতে পারেন নাই।
আবার ওদিকে নেপাল তার দেশের সব সিনেমা থেকে আদিপুরুষ সহ সব সিনেমাকে নামিয়ে দিয়েছে। দেখুন নেপালে হিন্দি ছবি প্রদর্শন বন্ধ ঘোষণা, নিষিদ্ধ ‘আদিপুরুষ’।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে আর আট মাসের মধ্যে ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন। মানে মোদিকে এবার জততেই হবে; নইলে বাইডেনের আমেরিকা বসে আছে ঘাড়ের উপর। তাই ইতোমধ্যেই যা শুরু হয়েছে – মুসলমান কোপাও, জোরদার করো – যাতে হিন্দু ভোট সব হিন্দুত্বের বড়াই ভ্যানিটিতে কেবল মোদির বাক্সে ঢুকে, এরই নানান ততপরতা। এবারও মিথ্যা মিথ্য অভিনয়ে ভারেতের পাকিস্তান আক্রমণের নাটক হতে পারে। জয়শঙ্কর ও উঠতে বসতে কুটনৈতিক নর্মস রেওয়াজ ভেঙ্গে পাকিস্তানকে গালাগালি করছে, সোজন্যেবোধের হ্যান্ডশেক করবেন না জানাচ্ছেন। কারণ যত পাকিস্তানবিরোধীতা প্রদর্শন ততই মোদি নিজেকে হিন্দু-বীর হিশাবে হাজির দেখাতে পারবে – এই হল ভিতরের সাজেশন বয়ান। এছাড়া এসব হিন্দু সেনারা মামলা করলে সিনেমা প্রযোজকেরা অর্থের বিনিময়ে আপোষ করতেও চাইতে পারে। যা এসব লোকাল সংগঠনের আক আয়ের উৎস হতে পারে! কাজেই এগুলা টুইস্ট ঘটনা হিশাবে দেখা যাচ্ছে খারাপ নয়!
কোন রাষ্ট্রই একালে টিকবে না যার নাগরিকেরা সবাই সমান অধিকারের নয়ঃ
একালের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হল যে, এখন আমরা দুনিয়ার সকল রাষ্ট্র একই এক গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের অন্তর্গত হয়ে গেছি বলে এক গ্লোবাল বাণিজ্য ব্যবস্থায় সকল জনগোষ্ঠিই অপর (Others) জনগোষ্ঠির সাথে কানেকটেড। আর তা জীবনের সকল অর্থেই জীবনের সাথে আরেক জীবনযাত্রার ক্রমশ গভীর হয়ে উঠছে এই বিনিময়; যা কেবল পণ্যবিনিময় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কাজেই অন্য অপর জাতি জনগোষ্ঠির তুলনায় আপনি শ্রেষ্ঠ এমন এক হিন্দুত্ববাদের জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধ – এটা একালে অচল শুধু নয়; এটা আত্মঘাতি। কারণ, এতে ভারত উল্টা একঘরে হয়ে যাবে অন্য যেকোন রাষ্ট্র এই ঘৃণা-বিদ্বেষ অপছন্দই শুধু না – এই ভারতের সঙ্গে পণ্যবিনিময় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যঅও করতে চাইবে না। কিছুদিন আগে কাতার লিড নিয়েছিল ওআইসির [OIC] হয়ে কঠর সমালোচনা করেছিল। জবাবে ভারতে বিদেশ মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি মুখরক্ষার একটাই শব্দ পেয়েছিল যে OIC নাকি সাম্প্রদায়িক!!!!!! এখানে দেখুন, জমিদারি-হিন্দুত্ব জাগিয়ে বলা ওআইসি ‘সাম্প্রদায়িক’!
তাহলে এর সারকথাটা হল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে ছেয়ে উঠার একালে, হিন্দুত্ববাদের জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধ এই বয়ান এই উগ্র জাতিবাদি রাজনীতি দিয়ে কোন রাষ্ট্র খাড়া করা আত্মঘাতি, অচল। এটা কাউন্টার প্রডাকটিভ! হিতে-বিপরীত কাজ! আর এরই অনুসঙ্গ আরেক চিহ্ন হল যে, আপনার রাষ্ট্রে বা কোন রাষ্ট্রই একালে টিকবে না যার নাগরিকেরা সবাই সমান অধিকারের নয়। কারণ, উগ্র জাতিবাদি রাজনীতিক ভিত্তি থলে তো ভিতরে নাগরিক অসাম্যই চর্চা হবে, মুসলমান কোপায়েই ভোট নিতে চাইবেন। এটাই হবে একমাত্র ততপরতা ও ভিত্তি! আর এঘটনায় আপনার পণ্যের ক্রেতা ভয় পাবে -অপছন্দ করা শুরু করবেই! এজন্যই বলছে একালে উগ্র জাতিবাদ –হিন্দুত্ববাদের জাত শ্রেষ্ঠত্ববোধ – এক অচল আত্মফঘাতি রাজনোইতিক চিন্তা। হিন্দুত্ববাদের ভারত তাই ক্রমশ ভেঙ্গে পড়বেই, একঘরে হয়ে যেতে বাধ্য
একালে ধর্ম প্রচার, নিজ ধর্ম শ্রেষ্ঠ এজন্য অন্যের দেশ দখলে (ধর্ম প্রচার বা কলোনিদখলের জন্য) বেরিয়ে পড়বেন কিংবা এসব কাজকে পুরানা দিনের রেফারেন্স দিয়ে জায়েজ বলে সাফাই বয়ান খাড়া করবেন – তা হবে না ! এটা কাজ করবে না। আর এরচেয়েও বড় কথা এটা আত্মঘাতি অচল ততপরতা! আপনিই একঘ্রে হয়ে যাবেন। সেটা সবার আগে বুঝবার চেষ্টা করেন!
সবার আগে দুনিয়ায় বিশেষ করে চলতি নয়া শতকে কী কী ও কেন বদলে গেছে সেসব কিছুকে আমল করেন। নিজের ভাল চাইলে এর বাইরে কিছুই নাই!
তাই একটা সিনেমা শুধু সিনেমা নয়, বহুকিছুই……।
অথচ ভারত রাষ্ট্রের যেখানে দরকার একটা ফেডারেলিজম বা ফেডারল রাষ্ট্র কায়েম যাতে কেন্দ্র-রাজ্য বৈষম্য দূর হয়ে যায়, হিন্দুত্ববাদের জাত শ্রেষ্ঠত্বের বোধের রাষ্ট্র না হয়।
তাই এ’রাষ্ট্র নিজেও ভুগবে পড়শি রাষ্ট্রদেরকেও ভুগাবে আর সাথে সংঘাত হত্যা, ক্লিনজিং ডেকে আনবে সেই শঙ্কা প্রবল হচ্ছে!
আপডেটঃ ২১ জুন ২০২৩ মধ্যরাত ০১ঃ ১৯
আপডেটঃ ২১ জুন ২০২৩ ভোর ০৫ঃ ০৪
আপডেটঃ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সন্ধ্যা ০৭ঃ ২৪
>>>>
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
গুরুত্বপুর্ণ হওয়াতে একটা পাঠক-প্রশ্ন নিচে তুলে আনলাম সাথে আমার জবাবঃ
Anil Iftakher
বিশ্বে যতো জাতি আছে,তাদের মধ্যে অনেকেই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে।যারা এগিয়ে আছে তাদের গর্ব করাটা কি অন্যায়? আমরা যে অনেক দিক দিয়ে পিছিয়ে আছি এটা নিয়ে কেউ খোচা দিলে কি তা অন্যা
তবে এটা অন্যায় হবে মূলত এজন্য যে এরপরে আপনি আমার ঘাড়ে চড়বেন, আপনার পা টিপে দিতে বলবেন, আমার সম্পদ কেড়ে নিবেন, আমাকে উঠায় নিতে চাইবেন ইত্যাদি। আর এসবই করবেন যেহেতু – আপনিই শ্রেষ্ঠ – সেটা আগেই বলে নিছিলেন, তাই। অর্থাৎ আপনি যে জাত-শ্রেষ্ঠ এই বক্তব্যের দাম চাইবেন আপনি, আর আমাকে এর দাম চুকাতে বলবেন………।
– মোদি ভারতে মুসলমানদের নিচা দেখানো আর মোদির হিন্দু জাত শ্রেষ্ঠত্ব এর বড়াই দেখানোও একই কারণে। যেমন করোনাকালে মাঝে তারা বলেছিল তাবলীগ-মারকাজ এরা কালচারের দিক থেকে খুবই নিচু। কারণ মুসলমানেরা নাকি আঙুল দিয়ে চেটে চেটে খাবার তুলে খায়। অথচ যেখানে ঘটনা হল, সারা অখন্ড ভারতই এথনিক-জাত বৈশিষ্ঠ হিশাবে তারা সকলেরই খাদ্য গ্রহণ বা খাওয়ার স্টাইল হল তারা চামচ দিয়ে তুলে খায় না। বরং হাতের পাঁচ আঙুল ব্যবহার করে, আঙুলে ধরে খাবার তুলে খায়। আবার খেয়ে বলতে চায় যে যে খাবারটা আমার শরীরের বাইরের – প্রকৃতির – কিন্তু তা আমার নিজ শরীর প্রবেশ করার পরে এক ‘প্রক্রিয়ায়’ সেটা আমার নিজ-শরীর হয়ে যাবে তাকে আগে থেকেই নিজ হাতে ছুঁয়ে ছেনে অনুভব করে আদরে আপন করে নিব না কেন! আমি আমার ঐ হবু খাদ্য বা শরীরকে আগেই তাকে স্পর্শে ফিল করতে চাই, এই অনুভুতি আমার জন্য খুবই জরুরি; অতএব হাত দিয়েই খেতে হবে!



হিন্দুত্ববাদী রাজ্য সরকার মনিপুর রাজ্যের দাংগাহাংগামা থামাতে পারে না।উগ্র ধর্মীয় সংকীর্ণ মানসিকতা ভারতকে দুর্বল করবে,ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
LikeLike
আপাতত এটা প্রসঙ্গের বাইরের বিষয়।
LikeLike
হয়ত
LikeLike