‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ -কেন মোদি আর সিপিবির একই দাবি!
গৌতম দাস
৯ জুলাই ২০২৩ ভোর ০৩ঃ ৫৪
https://wp.me/p1sCvy-4Hx
‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ কথাটা ভেঙ্গে সরাসরি উদোম করে দেখালে এর মানে হল, নাগরিক রাষ্ট্রে কোন ধর্মীয়-সামাজিক বিয়ের প্রথা রাখাই যাবে না। বিশেষ করে ইসলামি বিয়ে। এর বদলে ধর্ম নির্বিশেষে সকলকের জন্য একই (তাই ইউনিফর্ম বা সার্বজনীন বলা) এবং একমাত্র ‘রাষ্ট্রীয় বিয়ের আইনেই’ বিয়ে করতে হবে। এই হোল সিভিল কোড বুঝনেওয়ালাদের দাবি। তাদের সার্বজনীন ‘রাষ্ট্রীয় বিয়ের আইন’ মানে হল, কোন বিয়েকে ধর্মের সংশ্লিষ্টতাহীন করে সাজাতে হবে; যেটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। এবং ধর্মীয় বিয়ে আর রাষ্ট্র আমল করবে না; এর বদলে নাগরিক হিশাবে দুই পুরুষ-নারী নাগরিকের মধ্যে বিয়ের আইন করা হবে।
একথা শুনে অনেকের মনে হতে পারে বা ভালই তো!!! ধর্ম বা হিন্দু-মুসলমান নিয়ে ক্যাচালের চেয়ে এই ‘রাষ্ট্রীয় বিয়ের আইন’ তো খুবই ভালো!!! এর মধ্যে বেশ প্রগতিশীলতা আর এডভ্যান্সমেন্টও দেখে ফেলতে পারে কেউ!!! ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশংসায় আমরা কাউকে খুশিতে উত্তেজিতও হয়ে উঠতে দেখতে পারি। আর পোগতিশিল=হিন্দুত্ববাদীরা খুশিতে নেচে উঠতে পারে এই বলে যে এবার ‘মুসলমান কোপানির’ একটা ভাল অস্ত্র পাওয়া গেছে!!
হ্যা ঠিকই তাই। ‘ইউনিভার্সাল সিভিল কোড’ এর দাবিদারেরা অসৎ মনে ও উদ্দেশ্যে ইসলামের সাথে রাষ্ট্রের একেবারেই অপ্রয়োজনীয় বিরোধ খাড়া করতে, মুসলমান কোপাতেই এই দাবি করে থাকে। তাই এনিয়ে একটা মজার দিক বা মিলের দিক দেখিয়ে দেই তাহলে অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ এর দাবি সবচেয়ে উচ্চকন্ঠে করে থাকে কমিউনিস্ট পার্টি, সিপিবি। এর খাস প্রমাণ পাওয়া যাবে এখানে ২০২৩ সালে সমাপ্ত সিপিবি এর দ্বাদশ কংগ্রেসে গৃহীত ও প্রকাশিত প্রস্তাব যা সাপ্তাহিক একতা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে সেখান থেকে। তাতে ১২ নম্বরে যার উপশিরোনাম [১২. নারীর প্রতি সহিংসতা সম্পর্কে] এর অধীনে চার নম্বর দাবিতে লেখা আছে দেখেন [৪. ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।] । এবং বলাই বাহুল্য তার নারী (এনজিও) সংগঠন মহিলা পরিষদও এই দাবি করে থাকে। অন্যদিকে, আগামি বছরে মানে ভারতের আবার কেন্দ্র সংসদ নির্বাচন আসন্ন। তাই মোদি বা বিজেপির এবারেরও মুসলমানদেরকে কোনঠাসা করে রাখার সফল নেতা হিশাবে মোদির অন্যতম নির্বাচনী ইস্যুও হল এই ‘‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ কায়েম।
তাহলে সিপিবি আর মোদির মধ্যে মিলটা কোথায় আর কেনইবা এই মিল দেখছি আমরা??? বলাই বাহুল্য এই মিল হল একই ইসলামবিদ্বেষ আর মুসলমান কোপানির খায়েসজাত – এটাই তাদের মধ্যে কমন; তাই এই লক্ষ্যের ঐক্য!!
তবে যারা এখনও প্রগতিশীল আর সাথে বাড়তি হিশাবে যাদের কেউ কেউ হয়ত নারীবাদিও তাদের জন্য বলে রাখি যদি তারা সাদা মনে – শ্রেফ বুঝবার জন্য মানার জন্য না – যারা জানতে চান যে কেন ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ দাবিটা ভুল তাহলে তা এলেখার শেষের দিকে “আমাদের ধর্মীয়-সামাজিক বিয়ের প্রথার কী হবেঃ” – এই উপ-শিরোনামে লেখাটা পাবেন; পড়ে নিতে পারেন।
‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ যখন হাতিয়ারঃ
‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ এই শব্দ কয়টা শুনলে অনেকের কাছে পবিত্র বা উচ্চমার্গীয় মনে হতে পারে, তাই অনেকের ক্ষেত্রে কিছুটা ভক্তিতে অজান্তে মাথা ঝুঁকেও যেতে পারে; সেটা এই বলে যে এটা একটা খুবই ‘রেনেসাঁ- এনলাইটেনমেন্ট খচিত’ কোন পরম জ্ঞান হবে নিশ্চয় যা কোন প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় খুবই কাজের ও উপাদেয়!!!
কিন্তু আমি দুঃখিত পাঠক। এই অনুমান একেবারেই মিথ্যা শুধু না বরং উলটা। এটা আসলে মন ভর্তি যাদের ইসলাম বিদ্বেষ, যারা তক্কে তক্কে থাকে কিভাবে মুসলমানদেরকে সমাজে নিচা দেখাবে – মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানি বা জাগানি কিছু প্রগতিশীল ভাব ধরাদের কারবার এটা; যারা আসলে হিন্দুত্ববাদী। তাদের কাছেই – মুসলমান কোপানির এক ভাল হাতিয়ার হল এই শব্দগুচ্ছে – ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’।
শব্দগুলো ইংরাজিতে যার বাংলায় ইতিবাচক অর্থে সারকথা হল, একটা রাষ্ট্রে ধর্মের বাইরে বিয়ে সংক্রান্ত আইনী ধারা।
রিপাবলিক রাষ্ট্রমাত্রই কী তা ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’এর পরিণত হবেঃ
না একেবারেই না। তবে মুসলমানবিদ্বেষ যদি আপনার গোপন খায়েস হয় তবে এমন জাতিরাষ্ট্র বা রিপাবলিক রাষ্ট্রকে আপনি মুসলমান কোপানি বা বৈষম্য তৈরিতে উপযোগী করে হাজির করবেনই। আর সেজন্য ‘‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ এই হাতিয়ার তুলবেনই। ফলে এই অসততার এমন আউটকামই আমরা হয়ত দেখব। তাই এককথায় বললে, রিপাবলিক রাষ্ট্রমাত্রই তা গড়ার মূল উদ্দেশ্যই তো হল নাগরিক বৈষম্য দূরে রাখা। ধর্মীয় বা যে কোন পরিচয় নির্বিশেষে নাগরিক অধিকারে সকলেই সমান – এই নীতির বাস্তবায়ন। কাজেই মুসলমান বা ধর্মীয় বিয়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র অবস্থান নেয়া অপ্রয়োজনীয়; আর তাতে এতে বৈষম্য তৈরিতে উপযোগী করে যে কোন রাষ্ট্র গড়া বা রূপ দেয়া হবে যেটা অগ্রহণযোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য হ্যে দাঁড়াবে যা কাম্য নয়।
একথা সত্য যে, একটা রিপাবলিক রাষ্ট্র ধর্ম বা অন্যকোন পরিচয় নির্বিশেষে বৈষম্যহীন ভাবে তার সকল নাগরিকের সকল ‘মৌলিক নাগরিক অধিকার’ সুরক্ষা দিবার প্রতিশ্রুতিতেই কেবল জন্ম নিতে পারে বা হওয়ার কথা।
কিন্তু বাংলাদেশ মানে যে পুরাতন অখন্ড ভারত ভেঙ্গে আজ যে তিন রাষ্ট্র হয়েছে এর একটা রাষ্ট্র – এই বাংলাদেশে (সাথে হিন্দুত্ববাদি ভারতেও) কিছু পোগতিশিল কমিউনিস্টের এই ধারণা যে – না এভাবে চলবে না। রাষ্ট্রকে ইসলাম কোপাতেই হবে। মুসলমান বিদ্বেষী ও মুসলমানের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানি ইত্যাদি এমন বৈশিষ্ট তাদের “কল্পিত আধুনিক রাষ্ট্রের” থাকতেই হবে। নাইলে আর সেটা তাদের জাতিরাষ্ট্র হয় কী করে – এতে তো “মজা” নাই। অথচ এটা আধুনিক রাষ্ট্রের কাজ বা এক্তিয়ারই নয়; বা উদ্দেশ্যই নয়। কারণ এমন রাষ্ট্রে মুসলমান নাগরিককে যদি চিন্তায় খাটো আর নিচা সংস্কৃতির বলে মিথ্যা হলেও তুলে ধরতে করে তবে তা এক চরম বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রই হবে! তবে বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রই যদি তাদের মজা পাবার উপাদান হয় তো বলার কিছু নাই! অতএব একারণেই ভারতে ১৯৪৭ সালের পরে সম-নাগরিক অধিকারের নয় বরং হিন্দু আধিপত্যের ভারতবর্ষ মানে হিন্দু জাতশ্রেষ্ঠত্বের এক ভারত জাতিরাষ্ট্র সেখানে গড়ে উঠেছে। আর তাই-ই হয়েছে আমাদের বাস্তবের ভারত! আর এর প্রভাবে অন্য দুই রাষ্ট্রও তাই একই!
তবে বিশেষ করে পাকিস্তান কায়েম হওয়াতে ১৯৫১ সালে জমিদারি উচ্ছেদ আইন পাশ হবার পরে জমিদারি হারানো জমিদার হিন্দুরা প্রতিশোধ নিতে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিল। এই ভেবে যে এই পার্টি ধর্মবিরোধী; কাজেই এদের ধর্মবিরোধী রাজনৈতিক ধারার আড়ালে বসে তারা মুসলমানবিদ্বেষ ও ঘৃণাছড়ানি বয়ান প্রগতির বয়ান বলে হাজির করতে পারবেন। প্রগতিবাদিতার আড়ালে এরা রাষ্ট্রকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ইসলামের সাথে সংঘাত বাধাতে আর রাষ্ট্রকে দিয়ে ইসলাম কোপাতে বা এভাবে রাষ্ট্রকে সাজাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। যদিও এতে কারও লাভ হয় নাই। কারণ, প্রতিশোধ নেয়া মানুষের করণীয় কাজ হতে পারে না। তবু এই ততপরতাকেই আমরা এই অঞ্চলে চিনি পোগতিশিলতা-কমিউনিস্ট বলে। তারা আমাদেরকে ধর্মচিন্তা-মুক্ত বিশেষত ইসলাম-চিন্তা মুক্ত এক সমাজ-রাষ্ট্র হাজির করতে চায়; আর এভাবে তারা তাদের জমিদারি হারানির ক্ষোভের প্রতিশোধ নিতে তারা কায়েম করতে বদ্ধপরিকর! তাই তাদের এক নম্বর কৌশল হল আধুনিক রাষ্ট্রকে অপ্রয়োজনীয় বা গায়ে পড়ে ভাবে হলেও ইসলামের বিরুদ্ধে খাড়া করে হাজির করা।
আমাদের ধর্মীয়-সামাজিক বিয়ের প্রথাঃ
আমাদের ধর্মীয়-সামাজিক বিয়ের প্রথা তেমনই এক ইস্যু যা দিয়ে পোগতিশিল-কমিউনিস্টরা রাষ্ট্রকে মুসলমান কোপানোর কাজে ব্যবহার করতে চায়; আর তা পারবে বলে তারা মনে করে। তারা অপ্রয়োজনীয়ভাবে ধর্মীয়-সামাজিক বিয়ের প্রথা বিশেষত ইসলামি ধর্মীয়-সামাজিক বিয়ের প্রথা ভেঙ্গে চুরমার করতে চায়।
আর এটাকেই তারা ‘রেনেসাঁ- এনলাইটেনমেন্ট খচিত’ তাদের কথিত উচ্চমার্গীয় জ্ঞান জাত ততপরতা বলে আড়াল নিয়ে দাবি করে থাকে! কিন্তু আড়ালে কেন?
কারণ, প্রগতিবাদীদের ৯৯.৯৯% এর ‘রেনেসাঁ- এনলাইটেনমেন্ট” জিনিষটা কী এসম্পর্কে পড়াশুনা-বুঝাবুঝি একেবারেই নাই। বেশির ভাগই এর নাম শুনে নাই। তবে এর অন্তত একটা কারণ হল, মার্কসের কোন রচনায় রেনেসাঁ- এনলাইটেনমেন্ট বা আধুনিকতা বা রিপাবলিক রাষ্ট্র ইত্যাদি সেখানে কোন প্রসঙ্গই নয়, হয় নাই। আবার এমনকি তাদের মধ্যে যারা অতি দিগগজ মানে ধরেন যারা লন্ডনে গিয়ে ইংরাজী সাহিত্যে পিএইচডি করে এসেছেন – এরাও অন্তর্ভুক্ত মানে একই অবস্থা তাদের! তাই এরা কখনও ‘রেনেসাঁ- এনলাইটেনমেন্ট’ নিয়ে দুপাতা লিখেছেন জানা যায় না। ‘রেনেসাঁ- এনলাইটেনমেন্ট’ কে প্রগতিশীলতা-কমিউনিস্ট এর সাথে রিলেট করে কিছু ব্যাখ্যা করেছেন জানা যায় না। অর্থাৎ কার্যত যেহেতু তাদের চিন্তার মুরোদ নাই – অক্ষম উত্থানরহিত; তাই ‘রেনেসাঁ- এনলাইটেনমেন্ট’ নিয়ে তাদের হাউশ তাদের খায়েসের বাতচিত তারা কেবল তাদের মধ্যেই এক আড়ালের মধ্যে রেখে দিয়েছেন। এবং অলিখিত আলোচনাতেই আটকে রাখেন!
অথচ এরা প্রত্যেকে আধুনিক রাষ্ট্রকে দিয়ে ইসলাম কোপানির অগ্রসেনানী সৈনিক! রাষ্ট্রকে তারা তাদের ইসলামবিদ্বেষ এর খায়েস পূরণের হাতিয়ার করে অপব্যবহার করতে চায়!
ইচ্ছানুযায়ী ধর্মপালনের স্বাধীনতা ও রিপাবলিক রাষ্ট্রঃ
আপন ইচ্ছানুযায়ী ধর্মপালনের স্বাধীনতা – একে একটা নাগরিকের অবিচ্ছেদ্য অধিকার হিশাবে দেখা এটা ইউরোপের কোন দেশে নাই; কিন্তু একমাত্র কেবল আমেরিকান কনষ্টিটিউশনে এটা পাওয়া যাবে। পিছনের অনেক কারণের মধ্যে মূল কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান বা ওসমান সাম্রাজ্যের পতনের পরে এই সাম্রাজ্য-ভুখন্ডকে কার্যত বৃটিশ ও ফরাসীরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া থেকে। এরপর এরা ওসব ভুখন্ডের মুসলমান বাসিন্দাদেরকে শাসন করতে গিয়ে – পুরানা ক্রুসেডে ইউরোপের হারের কথা না মনে পড়ে যায় – এটা একটা ভয়ের কথা ছিল। এজন্য যে নতুন শাসন-তত্ব শাসক বৃটিশ ও ফরাসীরা ১৯১৮ সালের পরে ওসমান সাম্রাজ্য ভুখন্ডে চালু করেছিল তা হল, কথিত নয়া রাষ্ট্রে, রাষ্ট্র থেকে ধর্ম আলাদা করা নামে এক অদ্ভুত বায়না সেখানে তারা হাজির করেছিল। গত ১৬৪৮ সালের ওয়েস্টফিলিয়া সম্মেলনের কখনও অথবা ক্লাসিক্যাল ইউরোপীয় রাষ্ট্র-চিন্তায় কখনও এমন কথা শুনা যায় নাই। বরং উল্টা আমেরিকা নিজে ১৭৭৬ সালে কলোনিমুক্ত স্বাধীন দেশ হবার পরে পনেরো বছরের মধ্যে ১৭৯১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম কনষ্টিটিউশন সংশোধনী আনা হলে সেখানে নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো কী কী তা বর্ণনা করতে গিয়ে সেখানে এই প্রথম কোন রিপাবলিক রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার বলতে তাতে ইচ্ছানুযায়ী ধর্মপালনের স্বাধীনতা – এটাকেও এক নাগরিক অধিকারের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আর এথেকে এটা প্রমাণ করেছে যে রিপাবলিক রাষ্ট্র ধারনার সাথে ধর্ম পালনের কোন বিরোধ নাই। তাই রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে আলাদা করার কথা বুজরুকি ও শয়তানি!
কিন্তু এই শয়তানিটাই আপন হয়ে দাড়ায় আমাদের এই অঞ্চলে হিন্দু জাতিরাষ্ট্রের অনুসারি, হিন্দুত্ববাদিদের কাছে। ফলে তা প্রগতিশীল ও কমিউনিস্টদের কাছেও।
সব সিভিলাইজেশনই ধর্মতত্বের হাত ধরেই আগিয়েছেঃ
কিছু কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। সারা দুনিয়াতে মানব সভ্যতার বয়স ধরা হয় প্রায় ছয় হাজার বছরের বেশি। ইতিবাচক অর্থে মানব সভ্যতা (human Civilization) এর সোজাসাপ্টা মানে হল যখন থেকে মানুষ যাযাবর জীবন, ফলমূল খাবার টোকায়া খাওয়ার জীবন ছেড়ে এবার কৃষিকাজ শিখে চাষাবাদ শুরু করেছিল। আর চাষাবাদের জীবনের পুর্বশর্ত হল, থিতু হয়ে কোন এক নদীবিধৌত উর্বর ভুখন্ডে বসতি স্থাপন করে বসে যাওয়া – আগের কোন যাযাবর জীবনের বিপরীতে। যেটাকে আমরা একালে এমন একেক ভুখন্ডে গড়ে উঠা বসবাস যা থেকে আসলে নানান এথনিক [ethnic] বৈশিষ্টে ভিন্নতায় আমাদের নিজ সভ্যতায় বসবাস শুরু হয়েছিল – আর এটাকেই আমরা সিভিলাইজেশন অর্থে সভ্যতা বলছি। যা আসলে মূলত এথনিক অর্থে জাত-সভ্যতা! আর এই এথনিক পরিচয় বলতে যার ভিতরের এক প্রভাবশালী উপাদান হল ধর্মতাত্বিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়! আর প্রগতিশীলতার নামে আমাদের অনেকের মনে বৈষম্যহীন অধিকারের রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চেয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে এরা ধর্মতাত্বিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় এর সাথে সংঘাত বাধানোকে অনিবার্য মনে করে থাকে। আর এখান থেকেই সব বিরোধের উতপত্তি।
এখন এই ছয় হাজার বছরের মধ্যে প্রায় দুহাজার বছর আগে যীশুর জন্ম। এর মধ্যে নবীর যুগও এসেছে। আর এই সময়কালে সবসময়ই আমরা অনেকগুলো মানে কোন না কোন একটা ধর্মতত্বের হাত ধরেই হেটেছি। আমাদের হাত খালি থাকে নাই। আর ইতিবাচক অর্থে দুনিয়ায় আমাদের সকল সভ্যতা ধর্মতত্বের হাত ধরেই এপর্যন্ত হেটে এসেছে। পরবর্তিতে ১৪৫০-১৫৫০ এই সময়কালকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ শতবর্ষ – যখন একনাগাড়ে বিজ্ঞানের গুরুত্বপুর্ণ আবিস্কার গুলো ঘটেছিল। কিন্তু এরপরেও এসময়ে “বিজ্ঞান” এসে যাওয়াতে দুনিয়া থেকে কোন ধর্মতত্ব তো নাই হয়ে যায় নাই! বরং বলা যায় বিজ্ঞানকে পাশে জায়গা ছেড়ে দিয়ে ধর্মতত্ব তার জায়গাতেই আছে। মাঝে একটু কেবল সময় লেগেছে এডজাস্ট হতে পরস্পরকে জায়গা করে দিতে। তাই শেষ বিচারে মানুষের এখনকার চিন্তা-চর্চার রূপ যেখানে গিয়েই ঠেকুক চিন্তা-চর্চার শুরুর দিকে সবকিছুই ছিল ধর্মতাত্বিক বৈশিষ্ঠের। কাজেই ধর্মতত্ব জিনিষটা গায়ের জোরে ত্যাগ করার বিষয়ই নয়! আর কাকে ত্যাগ করব আমাদের সকলের আদি না হলেও পুরাতন সব প্রজন্মকে??? এটা কী সম্ভব?? কাজেই ইচ্ছানুযায়ী ধর্মপালনের স্বাধীনতা – একে মৌলিক নাগরিক অধিকার হিশাবে রিপাবলিক রাষ্ট্রে রেখে দেওয়া একটা খুবই উপযুক্ত এপ্রোচ বা আগানোর উপায়। কিন্তু কাজ আরও আছে আর তা করতে হবে বুদ্ধিমান হয়ে!
তাহলে আমাদের ধর্মীয়-সামাজিক বিয়ের প্রথার কী হবেঃ
খুবই সহজ!
১। সবার আগে আমাদের মনের ভিতরের যেকোন ধর্মের প্রতি সমস্ত বিদ্বেষ, ঘৃণা ইত্যাদি বাইরে বের করে ফেলে দিতে হবে; তাতে আমরা যার যার ধর্মপালনের লোক হই আর নাই হই না কেন! ধর্মপালন বা মানা না মানা আপনার নিজস্ব বিষয়। কিন্তু ধর্মের প্রতি সমস্ত বিদ্বেষ, ঘৃণা ইত্যাদি ত্যাগ করতেই হবে! নাগরিক যার যার ইচ্ছা হবে তাকে তার ইচ্ছানুযায়ী ধর্মপালনের স্বাধীনতা – একে মৌলিক নাগরিক অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে করতে হবে। আর আমরা তার ফেলো বা পাশের নাগরিকেরা আমাদের দায়িত্ব হবে আমরা নিজেরা যেই ধর্মই পালন করি অথবা কোন ধর্মই পালন না করলেও ফেলো নাগরিকের অধিকার রক্ষায় আমাদের সহযোগিতামূলক অবস্থানে যেতে হবেই।
২। আমাদের ধর্মীয়-সামাজিক বিয়ের প্রথা মানেই যেগুলো বহু পুরানা ট্রাডিশন হিশাবে কোন না কোন ধর্মতত্বের ঘরে বসে, হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। ধর্মীয়-কালচারাল ও সামাজিকতায় মাখামাখি হয়ে থাকা এই ট্রাডিশনে হস্তক্ষেপ বা ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়; আর এটা রাষ্ট্রের কোন কাজ বা এক্তিয়ারই নয়। বিশেষত এক হিশাবে দেখলে এসব ট্রাডিশন মানা না মানা তো পারসোনাল ইস্যু। তবে রাষ্ট্রের দায় আছে নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষা দেওয়ার। তাই সেই কর্তব্য পালন করার প্রয়োজনে ট্রাডিশনাল বিয়ের প্রথায় কোন হাত না লাগিয়ে রাষ্ট্র বরং কিছু বাড়তি কাজ করণীয় বাধ্যতামূলক করে দিতে পারে। যেমন বিয়ে ধর্মীয়-সামাজিক রীতিতেই ট্রাডিশন মেনেই চলবে। তবে এর আর বাড়তি দিকটা হতে পারে হলঃ ক. এই বিয়েটা সরকারি লাইসেন্স নেয়া কাজি বা রেজিষ্টার্ড কাজির কাছে লিপিবদ্ধ (রেজিষ্ট্রেশন) করাতেই হবে। যেই কাজিই আবার বিয়ের সাতদিন বা একমাসের মধ্যে (যেভাবে বলা থাকবে) সরকারি ডাটাবেজে এই বিয়ের সব তথ্য ফিড করা হয়েছে তা নিশ্চিত করবে – ঐ বিয়ের ডকুমেন্টে বা কাবিনে ডাটাবেজ সংরক্ষকের প্রতিস্বাক্ষর যুক্ত করে দিবে। এতাই মূলত রেজিস্টার্ড কাজির রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মূল করণীয় কাজ হবে।
একচুয়ালি, এটাই বাংলাদেশের বর্তমান কাজি অফিসের কাজের প্রচলিত নিয়ম; যেটা ইতোমধ্যেই চালু হয়ে আছে ১৯৮৮ সাল থেকে মানে, এরশাদের আমলে। এবং সেসময় আমাদের রাষ্ট্রের ধর্মীয়-সামাজিক বিয়ের প্রথা তো ভেঙ্গে ফেলতে বা হস্তক্ষেপ করতে হয় নাই। বরং সেসময় মূল কনসার্ণ ছিল পুরুষেরা যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে আর যেকোন মনের দশা খেয়ালে থাকা অবস্থায় তাঁর নারীকে তালাক দিয়ে দিচ্ছিল। এই দায়িত্বহীন কাজগুলোকে শৃঙ্খলা আনতে গিয়ে দেখা গেল ১৯৮৮ সালের আগে বিয়ে হত পাড়ার মসজিদের মোয়াজ্জিন কে ডেকে এনে দুজন দোস্তকে সাক্ষী রেখেই বিয়ে সম্পন্ন মনে করা হত। কিন্তু কোথাও এই বিয়ের তথ্য সংরক্ষণ করার কোন সিস্টেমই ছিল না। আর তাই দায়িত্বহীন তালাক তখনই শৃঙ্খলে আনা সম্ভব হবে যখন বিয়েটা যে হয়েছিল এর ডাটাবেজ সংরক্ষিত থাকবে ও সার্টিফাই বা সার্টিফিকেট দেবার ব্যবস্থা থাকবে। এসব কারণেই ১৯৮৮ সাল থেকে বিয়ের ডাটাবেজ সংরক্ষণ ভিত্তিক কাজি-রেজিষ্টার্ড বিয়ে ব্যবস্থা চালু করা গেছিল। তবুওও এতে এখনও যেটা অসম্পুর্ণ অংশ তা হল, মুসলমান বাদে অন্য নাগরিকদের বেলায় এমন কোন রেজিষ্ট্রশনের সহজ ব্যবস্থাটা এখনও নাই। অথচ রাষ্ট্রের দিক থেকে দরকারি হল, কোন ধর্মীয় ট্র্বেডিশনের বিয়ে সেটা হোক বা না হোক – সমান্তরালভাবে সকল নাগরিক মাত্রই সবার বিয়ে রেজিষ্টেশনেরে ব্যবস্থা থাকতেই হবে। কারণ, এটা না থাকলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে নারী নাগরিকেরা। নিশ্চয় আমরা সকলে মানব যে বিয়ের পরে সামাজিক পারিবারিক দায়ীত্ব ফেলে পুরুষেরা সোজা হেটে চলে যেতে খুবই ওস্তাদ!
অতএব, কোন রিপাবলিক রাষ্ট্রে ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ ব্যবস্থা চালু একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। সকল নাগরককে একই খুড়ে মাথা কামিয়ে দিতে হবে কেন? মানে ধর্মবিহীন বিয়ের ব্যবস্থা কায়েমই একমাত্র রাষ্ট্রের করণীয় এটা ভিত্তিহীন কথাই শুধু নয়, এই বক্তব্য ধর্মবিদ্বেষী যা মূলত ইসলামবিদ্বেষী ঘৃণাজীবীদের অসৎ কাজ হবে। এককথায় ‘ইউনি্ফর্ম সিভিল কোড’ এর উদ্দেশ্য মুসলমান কোপানি আর ঘৃণাচর্চার দোকান খুলে বসার সামিল! আর মূলত ধর্মপালনের কাজ স্বাধীনভাবে করার সুযোগ করে দেয়া রাষ্ট্রের কাজ তাতে ধর্ম তার এক্তিয়ারের মধ্যে কাজ করবে আর রাষ্ট্র নাগরিক অধিকার রক্ষার পক্ষে তার এক্তিয়ার ও দায়ীত্ব পালন করে যাবে। এখানে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অসততায় ইসুলাম বা মূসলমান এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে খাড়া করা শুধু অন্যায় নয়, এটা অপরাধও!
তাহলে মোদি এখন কী করছেনঃ
মোদি গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে আরেক বৈষম্য চালু করতে পায়ে পারা দিয়ে হলেও জবরদস্তিতে ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ চালু করার হুমকি দিয়ে চলেছেন। তাঁর এই ইসলামবিদ্বেষকে আড়াল করতে এখানে এসে তিনি মর্ডানিস্ট হবার ভান করছেন। যাতে মুসলমানেরা আরও রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়। কিন্তু ভারতের অনেক পুরানা রাষ্ট্র বলে এর কিছু সুবিধাও আছে। তাই তাদের বিচার বিভাগের অংশ প্রতিষ্ঠান ‘আইন কমিশন’ এর মতামত যথেষ্ট শক্তিশালী। এমনকি কোন আইন বদলাতে গেলে সেবিষয়ে আইন কমিশনের মতামত ভালই গুরুত্ব পায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
কলকাতার আনন্দবাজার ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ এর বাংলা করেছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। ইলেকশনের আগে আর পিছনে অ্যামেরিকান সমর্থনে রাহুলের নেতৃত্বে বিরোধীদল এখন একজোট হচ্ছে বলে অনেক কিছুতেই আর মোদির টাকা খেয়ে মিডিয়া কাজ করছে না। তাই আনন্দবাজার নিজেই জানাচ্ছে ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ নিয়ে ভারতের আইন কমিশনের মতামত কী? নিচের সেই পুরা প্যারাগ্রাফটাই আনন্দবাজার থেকে তুলে আনা হয়েছে দেখেন।
“কী বলেছিল ২১-তম আইন কমিশন?”
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলবীর সিংহ চৌহানের নেতৃত্বাধীন ২১-তম আইন কমিশনের মত ছিল, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকারের মতো পারিবারিক বিষয়ে হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিষ্টান, পার্সি, জৈন সকলের একই আইন চালু করার প্রয়োজন নেই। পারিবারিক আইনে সংস্কার নিয়ে কমিশনের বক্তব্য ছিল,“সংঘাতের সমাধান ফারাক মুছে ফেলা নয়। অধিকাংশ দেশ এখন ফারাককে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোচ্ছে। ফারাক থাকাটাই মজবুত গণতন্ত্রের প্রতীক। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এখন কাঙ্ক্ষিত নয়, প্রয়োজনও নেই। তার বদলে যেখানে বৈষম্য রয়েছে, সেগুলো দূর করা উচিত।”
অর্থাৎ এককথায় বললে আইন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর সাথে নাই। তবু মোদি ডেসপারেট ভাবে আগাচ্ছেন। আর ওদিকে এতদিন কংগ্রেস-কমিউনিস্টেরা ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ কে মুসলমানেদেরকে প্রগতিশীলতায় শিক্ষিত করার আইন মনে করত। কিন্তু এখন?
এখন এরা মোদিবিরোধী প্রায় সকলেই অবস্থান বদলে নিয়েছে। তারা এখন আইন কমিশনের বক্তব্যকেই নিজেদের বক্তব্য বলে প্রচার করতে নেমেছে। সিপিএম এর পরিবর্তিত অবস্থান পাওয়া গেছে তাদের গণশক্তি পত্রিকায়। নিচে সে অংশ তুলে আনা হয়েছেঃ
সিপিএম এর অভিন্ন দেওয়ানি বিধি
বিবৃতিতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে তৎপরতার বিরোধিতা করে পলিট ব্যুরো বলেছে, এই বিষয়ে ফের আলোচনা শুরু করেছে বর্তমান (২২তম) আইন কমিশন। অথচ এর আগের আইন কমিশন (২১তম) বিষয়টি নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচনা করে ২০১৮ সালেই বলেছিল, ‘‘এখন অভিন্ন দেওয়ানি বিধির না প্রয়োজন আছে, না এই বিধি কাম্য।’’ সিপিআই(এম) এই অবস্থানকে সমর্থন করে। অভিন্নতা আর সমতা এক নয়। পার্টি সমস্ত সম্প্রদায়ের মহিলাদের সমানাধিকারের পক্ষে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত ও প্রথাগত আইনগুলিকে সংস্কারের মাধ্যমেই সেই লক্ষ্যে সব থেকে ভালভাবে এগিয়ে যাওয়া যেতে পারে, যে প্রক্রিয়ায় সক্রিয় গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ থাকবে ওই সম্প্রদায়গুলির সমস্ত মহিলা ও পুরুষের।
কংগ্রেসের অবস্থান এখানে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের প্রগতিশীলদের অবস্থান আগে যাই থাক তাদের উচিত হবে ভেবে চিন্তে তাদের আপডেটেড অবস্থান দেখানো।
আশা করব সমাজের সকল অংশ ইতিবাচকভাবে নিজ নিজ দায়-অবস্থান দায়ীত্বের সাথে তুলে ধরবেন; তাতে আগে আমরা যে অবস্থানেই থাকি না কেন! ঘৃণা-বিদ্বেষ আমাদের কারও জন্যই কোন সমাধান-অবস্থান নয় হতে পারে না! এটুকু আমাদের না বুঝার কিছু নাই!
আপডেটেডঃ ০৯ জুলাই ২০২৩; দুপুর ১২ঃ ৫৮
আপডেটেডঃ ১০ জুলাই ২০২৩; দুপুর ০৩ঃ ৩৩
>>>>
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com


