ভারতের কথা শুনে আমেরিকার সিদ্ধান্ত নিবার দিন শেষ!


 

বাংলাদেশ প্রসঙ্গেঃ
ভারতের কথা শুনে আমেরিকার সিদ্ধান্ত নিবার দিন শেষ!

১৪ জুলাই ২০২৩   মধ্যরাত ০০ঃ ০৫
https://wp.me/p1sCvy-4In

 

                    VOA  –  MODI & BIDEN

 

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আমেরিকা আর ভারতের কথা শুনে কোন সিদ্ধান্ত নিবে না!” – সেসব দিন শেষ হয়েছে। হ্যা কথা এটাই; যদিও কথাটা আমার নয়। কথাটা বলেছেন এসএনএম আবদি; ভারতীয় সাংবাদিক!  আবদি লিখেছেন “Heart of the Matter: India, US not on the same page in Bangladesh” আক্ষরিক অর্থে বললে, আবদি বলছিলেন “ঘটনার মূলে হল – ভারত ও আমেরিকা আর একমতে বাংলাদেশের কোন কিছুকে দেখছে না”।

হা বাংলাদেশ নিয়ে ভারত-আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি আর এক নয়ঃ
আবার এসএনএম আবদি [SNM Abdi] ভারতীয় সাংবাদিক;  এক দৈনিকের সাবেক  সম্পাদক এসএনএম আবদি চলতি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আবার লিখেছেন। প্রায় একমাসের বেশি কিছুদিন আগে তাঁর লেখা নিয়ে আমার আলোচনা-মন্তব্যে তাঁর পরিচয় নিয়ে অনেক লিখেছি। তাই এবার আবার সেদিকে যাচ্ছি না। তবে দৃশ্যত আবদি আর সুবীর ভৌমিক (যিনি আবদির মত গত শতকের আরেক সাংবাদিক), এরা দুজনেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ও সম্ভবত এঁরা তাদের মিডিয়া উইংয়ে কাজ করেন বলে মনে করা হয়। অনেকে যারা ভারতের রাজনীতির উত্থান-পতন ও ট্রেন্ড-অভিমুখ মনিটর করেন, খেয়াল রাখেন এটা তাদের ধারণা বা মতামত। এদের দুজনেরই তাই একই সমস্যা যে তাঁরা পাবলিকলি বলতে পারেন না যে তাঁরা এখন কী করেন বা কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে আছেন বা কাজ করেন! কোন প্রতিষ্ঠানের বেতনের লিস্টে বা পে-রোলে তাদের নাম আছে! ইত্যাদি!

আবদি আবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে লিখেছেন গত ১০ জুলাইয়ে, ভারতের ফ্রি-প্রেস-জর্নাল নামে এক বহু পুরানা ইংরাজি পত্রিকাতে, যার শিরোনাম “Heart of the Matter: India, US not on the same page in Bangladesh” । আমাদের মানবজমিনও আবার সে লেখা অনুবাদ করে চাপিয়েছে – বাংলাদেশ বিষয়ে ভারত থেকে আলাদা যুক্তরাষ্ট্র, নিতে চায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত – এই শিরোনামে। ফলে পাঠক যারা বাংলা বা ইংরাজি যেটা থেকেই পড়তে চান পড়তে পারেন।

আমার এলেখার বড় শিরোনাম,  “বাংলাদেশ-আমেরিকা প্রসঙ্গঃ ভারতের কথা শুনে আমেরিকার সিদ্ধান্ত নিবার দিন শেষ!”। যেটা আবদির শিরোনামের কথাটাই তবে আমার ভাষায় লিখা বলা যায়।  আমরা বলে এসেছি, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেনের ক্ষমতা দখলের পরে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। আমরা একথা বহুবার বলেছি।  ভারত কে দিয়ে আমেরিকার চীন ঠেকানোর কাজের বিনিময়-মজুরি হিশাবে। কিন্তু তা কি চিরদিনের জন্য নাকি কতদিনের জন্য??

এই প্রশ্নে বাংলাদেশে হাসিনাবিরোধী একাংশের ধারণা এটা যতদিন হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন। যদিও বাস্তবে ঘটনাটা এমন না। এভাবে ঘটে নাই। অপ্নতত এখন তো একেবারেই পরিস্কার যে দিন ফুরিয়েছে। তবুও যেমন এক. ২০১৮ সালের শেষের নির্বাচনে হাসিনা চেয়েছিল ভারত ২০১৪ সালের মত খোলাখুলি ন্যাংটা হয়ে হাসিনাকে সমর্থন জানাক! কিন্তু মোদির ভারত বুদ্ধিমান হতে চেয়েছিল সম্ভবত! তাই এত দায় না নিয়ে দূরে দাঁড়ায় কেবল মাখনটা উঠিয়ে খেতে চাওয়া এক অবস্থান নিয়েছিল। আর এতে হাসিনা ক্ষেপে গিয়ে এক প্রকাশ্য হুঙ্কারে যে  বয়ান দিয়েছিলেন “ভারতকে যা দিয়েছি সারা জীবন মনে রাখবে: শেখ হাসিনা” –  রিপোর্ট্ টা তখনকার বাংলা ট্রিবিউনের। কিন্তু তাতে কী এরপর ভারত-বাংলাদেশ স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক কী নাই হয়ে গেছিল? না ঠিক তা নয়। তবে এই ভাষায় ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যাবে না। যদি বলি এরপরে মানে ২০১৯ সাল থেকে হাসিনা-মোদি সম্পর্কে আর কোন নয়া চুক্তি হয়েছে কিনা – এই বিচারে বলা যায় হাসিনা-মোদি এরপর আর কোন চুক্তি হয় নাই অথবা নয়া চুক্তি করে কিছু দেয়া হয় নাই। তবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আগের করা চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন অর্থে ২০১৯ সালের পরেও অনেক কিছুই দেয়া হয়েছে, হচ্ছে। আর সবসময়ই একটা রুটিন সম্পর্ক তো আছেই যেটা অবশ্যই বেশ ঘনিষ্ট। এমনকি যতটা ঘনিষ্ট সময়ে এর চেয়েও বেশি করে তা দেখানোও হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতিকালে যত অ্যামেরিকান চাপ বাড়ছে ততই ভারতের মুরোদ থাকুক আর নাই হাসিনা সরকার ততই ভারতের কোলে মুখ-গুজে – “দেখেন না কিছু করতে পারেন কিনা” টাইপের  চাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে এমন রিপোর্ট ভারতীয় পত্রিকায় বেশি দেখা যাচ্ছে; যা প্রথম আলো একেবারে লজ্জ্বার মাথা খেয়ে হলেও তাদের বরাতের উপর চড়ে মিথ্যা করে ভারতীয় করিতকর্মের মিথ্যা বয়ান তৈরি করে চলেছে।   যদিও এর মানে এমনটা একেবারেই নয় যে ভারতের সাথে হাসিনার খাতিরের সম্পর্কটা অটুট আছে বা ধরে রাখা গেছে! সেটা একেবারেই নয়; বাস্তবতাই সেটা নয়। মূলকথা আমেরিকাকে সুপারিশ করে ভারতের সেই মুরোদই হারিয়ে গেছে!

কিন্তু হাসিনার সাথে ভারতের সম্পর্কটা কী বা কেমন আর সবচেয়ে বড় কথা ভারত-বাংলাদেশের এই বিশেষ খাতিরদারি সম্পর্কটা ২০০৭ সালে কেন হতে পেরেছিল? তা নিয়ে আমাদের আম-জনতা লেবেলে জানা-বুঝা কম। বরং তর্ক হতে দেখা যায় এটা ভারত অধীনস্ত এক সরকার কীনা এনিয়ে; এবং বলাই বাহুল্য তর্কে দেখা যায় সংখ্যাগরিষ্ট অংশই মনে করে এটা ভারত অধীনস্ত এক সরকার। কিন্তু গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন হল কেন এটা হতে পারল? এককথায় এর জবাব হল, এটা আমেরিকার কারণে। অন্যভাবে বললে বড়ভাই আমেরিকা এশিয়ায় নিজস্বার্থে চীন-ঠেকাতে ভারতের পিঠে হাত রেখেছিল। আর তাতেই ভারতের ‘মুই কি হনু’ এমন এক অবস্থা তৈরি হয়েছিল। শুরুতে সে নিজেকে অ্যামেরিকান বরকন্দাজ-প্রতিনিধি বা আমেরিকার লোকাল এজেন্ট ভাবা শুরু করেছিল। আর অন্তত টানা দশবছর এটা সে উপভোগ করেছিল যতক্ষণ না ট্রাম্প এসে  ২০১৭ সালে আমেরিকার আগের সরকার-প্রশাসন গুলোর দেয়া বিশেষ সুবিধা ট্রাম্প সেবার সব কেড়ে নিয়ে বাতিল করেছিল। যদিও সেটা ছিল আসলে আগের দেয়া অর্থনৈতিক সুবিধা প্রত্যাহার, রাজনৈতিক নয়।

আর এবার সব রাজনৈতিক সুবিধা প্রত্যাহার – এটাই ঘটেছে একালে বাইডেন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতাসীন হওয়ার শুরু থেকেই একট একটু করে। একমাত্র একালে যা সুনির্দিষ্ট আকারে দৃশ্যমান হচ্ছে!  মূলত ভারতীয় মুসলমানদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন, বৈষম্য আর সাধারণভাবে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের অভিযোগ; যেটা প্রতিবছরের ধর্মীয় স্বাধীনতা [Freedom of religion or religious liberty – OHCHR] লঙ্ঘনের সুচকে প্রতিফলিত এবং এর  আমেরিকান কমিশনার প্রতিবছর প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করে গেছে প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু এবার এসব কিছুকে ছাড়িয়ে বাইডেন মোদির বিরুদ্ধে কত সিরিয়াস আর কত আগিয়ে গেছে তা প্রকাশ হয়ে পরে যখন দেখা যায় মোদির বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন মোদিবিরোধী সকল গোষ্ঠির নেতা হিশাবে  কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীকে সহায়তা করছে। সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে,  গুজরাত হত্যার বিবিসিতে প্রচারিত ডকুমেন্টারি থেকে শুরু করে  আদানির শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি ফাঁস ও ধ্বস নামিয়ে দেয়া, আদানিকে তুলাধোনা করে জর্জ সোরেস (গ্লোবাল শেয়ার মার্কেটে হেজ ফান্ড বা hedge fund এর এক কুতুব শেঠ) এর পাবলিক বক্তৃতা ইত্যাদিতে প্রকাশিত। এরপরে রাহুল গান্ধীর প্রথমে লন্ডন ও পরে আমেরিকা সফর আর সেখানে গিয়ে সবখানেই থিঙ্কট্যাংক ও মানবাধিকার গ্রুপের সাথে দিনরাত বৈঠক – ইত্যাদি এঘটনা থেকেই প্রথম পরিস্কার হয়ে যায় যে ভারতের পিঠে হাত রাখার দিন এবার শেষ হয়েছে! ২০০৭ সালে  বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া নিয়ে আমেরিকা যেভাবে অভিযুক্ত যাই হোক না – মূল ভারত-আমেরিকান সম্পর্কই এখন আর সেই আগের জায়গায় নাই হয়ে গেছে। কারণ, বাইডেন এখন ভারতের আগামি নির্বাচনে মোদিকে আর দেখতে চান না মর্মে অবস্থান নিয়ে ফেলেছেন আর বলা যায় তা প্রকাশ্যও হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় এটা এখন পরিস্কার যে সেজন্য আইন বাঁচিয়ে দুরত্বে থেকে বাইডেন যতটা সম্ভব সব ভাবেই মোদি বিরোধীদের জোটের রাহুলকে নেতা মেনে গড়ে উঠার পক্ষে আগিয়ে গিয়ে সহায়তা করেছে। এবিষয়ে আমার আগের লেখা দেখতে পারেন এখানে।  তবে আমার আমেরিকা-ভারত দুরত্বের কথা লেখাতে অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে তাহলে, সম্প্রতিকালে মোদির আমেরিকা সফর এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করব?

স্বল্পে মূলকথায় বললে, এবারের মোদির সফর ছিল একেবারেই অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক সফর। যেটাকে টেনেটুনে বড়জোড় সামরিক অস্ত্র কেনা-বেচা বা কিছু সামরিক ইকুইপমেন্ট ভারতে  উতপাদন করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও টেকনোলজির চুক্তি হয়েছে বলা যেতে পারে। এমনকি এই সফরে গ্লোবাল বা আঞ্চলিক কোন ভারত-আমেরিকা স্ট্রাটেজিক আলোচনা বা আমরা “কমন স্ট্রাটেজিক বন্ধু” জাতীয় কোন কথাবার্তাও হয় নাই।  তবে এশিয়ায় ভারত ও আমেরিকা উভয়েই চীনবিরোধি নিজ নিজ স্ট্রাটেজিক অবস্থানের রাষ্ট্র। যদিও তাদের মধ্যে কোন কমন জীবিত কোন প্লাটফর্মও [কোয়াডের মত যা এখন মৃত অকার্যকর অর্থে]  অবশিষ্ট নাই বা বেঁচে নাই। ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি [নন অফিসিয়াল জোট ধরণের] উদ্যোগ বলে এতে ভারত-আমেরিকা চীনবিরোধী হয়ে আছে ধরে কিছু কথা হয়; তাও সেটা যৌথতায় নয়! এছাড়া ভারত কোন সামরিক জোট করতে চায় না – এই নীতির দেশ বলে এনিয়েভারতের নুন্যতম উচ্ছসিত হওয়ার বাস্তবতাই নাই। অর্থাৎ মোদির ঐ সফরটার একমাত্র ফোকাস বাণিজ্যিক। কোন রাজনৈতিক আলোচনায় সেখানে হয় নাই। বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা তো অনেক দুরের বাত!

তাহলে হানিমুন শেষঃ
হা শেষ! ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন ঘটিয়ে যেটা শুরু হয়েছিল – আমেরিকা বড় ভাই ভারতের পিঠে হাত রেখেছিল বলে ভারত নিজেই ‘হাসিনার বাংলাদেশের’ মালিক হয়ে গেছে বলে যে ভাব নিয়ে চলছিল এর অবসান হয়েছে। এটাকে আবদি তার এবারের লেখায় বলেছেন বাংলাদেশ নাকি ভারতের প্রভাব বলয়ের দেশ [Bangladesh is in India’s zone of influence, New Delhi is mum on the sudden proactive US role in Bangladesh’s internal affairs. ] অথবা কখনও বলেছেন হাসিনা হলো ভারতমুখাপেক্ষী সরকার [pro-India Prime Minister Sheikh Hasina-led Awami League …]।  এবং এভাবেই ভারত এতদিন নিজেকে ভুয়াবাজি মিথ্যা করে হলেও পরাশক্তি ভাব ধরে চলেছিল – এরই সমাপ্তিকাল!
এর মূল কারণ, এখন বাইডেন প্রশাসন মোদি-যুগের অবসান দেখতে মনস্থ করেছে।  মোদির মুসলমান বিদ্বেষ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন কে ব্যবহার করে বাইডেন তাই এপ্রসঙ্গকে সামনে উঠিয়ে ফোকাসে এনেছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ এটাই। এতে ইতোমধ্যেই মোদিবিরোধী জোট সবল হচ্ছে – নিজেদের আভ্যন্তরীণ বিভেদকে সেকেন্ডারি করে কার্পেটের নিচে তা চাপা দিতে পেরেছে – মিডিয়াও মোদিবিরোধীয় সরব হয়ে উঠছে। এমনকি এর ছাপ আদালত পাড়াতেও পড়েছে যে মোদির বিরুদ্ধে রায় দেয়া যেন এখন সহজ ও সম্ভব।   কেন্দ্রীয় ক্ষমতার হাতে থাকা প্রতিষ্ঠান সিবিআই, ইডি, রাজ্যপালের অফিস বা আয়কর বিভাগ লেলিয়ে দিয়ে  বিরোধীদের শাসিত রাজ্যে মোদি নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার চরমে উঠেছে – আর এর অবসানে বিরোধীরা জোটবদ্ধ ও নিজেরা ভোকাল হওয়া সম্ভব বলে মনে করতে শুরু করেছে –  বাইডেনের একটু দুরবর্তি সহায়তাতেই!
এসবের সারকথা হল, যদি ২০২৪ সালে মোদি যদি পুনরায় নির্বাচিত হতে না পারেন তবে মোদিবিরোধী সেই ভারতের উপর অ্যামেরিকান প্রভাব অনেক বেশি হবে।  চাই কী সেই ভারত, আমেরিকার এশিয়া নীতি যেমন বার্মা নীতির সাথে এলাইন [align] বা সমপাতিত করে নিজেকে পুনর্গঠিত হতে পারে বলে আমেরিকার মনে আশা জাগতে পারে।  আর সেই আমেরিকা হবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আমেরিকা যেকথা বলবে সেটাই শেষ কথা! এনিয়ে ভারতের সাথে কোন আলোচনাই নয়।  ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক সেই অভিমুখেই ইতোমধ্যে   রওনা দিয়ে দিয়েছে – এটাই আবদির এই নয়া লেখার প্রধান দাবি!!

এজন্যই আবদি বলছেন, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমেরিকার হঠাত সক্রিয় ভুমিকার বিরুদ্ধে ভারত বোবা হয়ে গেছে ও আছে [… New Delhi is mum on the sudden proactive US role in Bangladesh’s internal affairs]। বাংলাদেশের ভিতরেও যতটা শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ যেভাবে নিজস্বার্থ উপযোগী করে আকার দিয়ে, এজেন্সি দিয়ে দাঁড় করিয়ে এতদিন রাজত্ব করছিল এমন সবকিছু থেকে আপাতত গুটিয়ে প্রত্যাহার শুরু হয়েছে।  আর হয়ত তা সীমিত করে পুনর্গঠিত করার ইচ্ছায়ও হতে পারে। এসবেরই সোজা মানে হল,  যেই “বাবা আমেরিকা” ভারতকে পড়শিদের উপর কিছু মাতব্বরি করার ক্ষমতা দিয়েছিল  সেই বাবা এখন ভারতের সব ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ভারতকে ফকির করে দিচ্ছে।

যে রাশিয়ান জাহাজের মালামাল খালাসের মুরোদ ভারতের হয় নাইঃ
আবদি তার লেখার শেষের দিকে বাংলাদেশের রূপপুরে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কিছু রাশিয়ান ইকুইপমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসতে চাওয়া এক রাশিয়ান জাহাজ-কে কিভাবে মাল খালাস না করে তা রাশিয়ায় ফেরত নিয়ে যেতে হয়েছিল এর বর্ণনা দিয়েছেন – একটা বড় উদাহরণ হিশাবে।  ঘটনা হলো রাশিয়ান জাহাজটা ছিল আমেরিকার স্যাংশন খাওয়া তালিকায়।  তাই ঐ জাহাজে বাংলাদেশে ভীড়তে গেলে আমেরিকা তা রোধ করতে বাংলাদেশকে আগাম তথ্য জানিয়ে সতর্ক করেছিল। এতে প্রতিক্রিয়ায়  রাশিয়া ও বাংলাদেশের সাথে আলাপ করে ভারত লিড নিয়ে রাজি হয়েছিল যে ঐ নিষিদ্ধ জাহাজ সে কলকাতার হলদিয়ায় ভিড়িয়ে মালামাল নামিয়ে সহজেই সড়ক পথে সেসব মালামাল বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু বিধি বাম! কারণ সেদিন শেষ হয়েছে। তাই আমেরিকা ভারতকেও তার আপত্তির কথা জানিয়ে দেয় যাতে সে নিষিদ্ধ জাহাজ নোঙ্গর না করায় কলকাতা। আবদি লিখছে, আমেরিকা আপত্তির পদক্ষেপে এগিয়ে এলে ভারত পিছু হটে যায়!

শুধু তাই নয় ঐ লেখার শেষে আপনি একটা মরাল লিখেছে এভাবেঃ
এই গল্পের শেষে প্রকাশিত নৈতিক ভাষ্যটা হল, আমেরিকা এখন মনে করে তার কথাই শেষ কথা – এর উপর কোন কথা নাই। এবং পুরান দোস্ত ভারত অ্যামেরিকান এই নয়া অবস্থান পছন্দ বা অপছন্দ যাই হোক ভারতকে এমন অ্যামেরিকান ইচ্ছাকে মেনেই বেচে থাকা অভ্যাস করতেই হবে!  [“The moral of the story is that the US believes in having the last word, and even allies like India must learn to live with it whether they like it or not.”। মানে মোদিকে এমন অপমান হজম করতে শিখতে হবেই!

কেন আবদি এমন সংবাদের বাহক হলেনঃ
ব্যাপারটা হলো, এই নতুন অভিমুখ সম্পর্কে অনেকদিন ধরেই বলছি। কিন্তু ভারতের  কেউ এসব কথাকে সত্যি বলে বলে আমাদেরকে জানায় নাই। বরং উলটা প্রপাগান্ডা করতেই দেখেছি। তাহলে এই অসহায় ভারত – আমেরিকার সামনে গড়াগড়ি খাওয়া এই ভারতের ইমেজ আমাদের সামনে আনার দায়িত্ব আবদি কেন নিলেন? আগে উপরে লিখেছি বাংলাদেশে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের ততপরতা অন্তত আপাতত গুটিয়ে রাখার কথা কানে আসার কথা বলেছি। আবদির এই লেখা কানে আসা সেসব সংবাদ নিয়ে নিশ্চয়তা যোগালো বলা যায়।  তার মানে ভারত এই খবর নিশ্চয়তা দিয়েই ছড়িয়ে দিতে চাইছে?? মানে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গ্রুপ বা গোষ্ঠিতে ভাঙ্গা-গড়া না হোক অন্তৎ ক্রমশ এদের ভাঙ্গার কথা নিয়মিত শুনব আমরা – তাই কি???

যাকিছু আপোষে নিজ ইচ্ছায় আসতেই আছে ও থাকবে  তা সাদরে গ্রহণ কর জনগণ! জনগণ বুদ্ধিমান!

সবশেষে আবদির কিছু সত্যবচনঃ
 আবদি এখানে যে অবস্থান নিয়ে লিখেছেন তা হল বাংলাদেশে হাসিনার ২০১৪ আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে কারচুপি আর গুম খুন হত্যায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের যত অভিযোগ সেসবকেই তিনি সত্য বলে গ্রহণ করে নিয়ে কথা বলেছেন। এসব পাশ কাটিয়েও তিনি সদর্পে বলছেন হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় রাখতে হবে! কেন? তার একটাই সাফাই আর তা হল, বাংলাদেশে ভারতের গভীর স্বার্থ আছে যে হাসিনা-ই রক্ষা করে দিতে পারবে।  অর্থাৎ কোন ন্যায়-ইনসাফ বা আন্তর্জাতিক আইনের ন্যায্যতা নয়। শ্রেফ ভারতের স্বার্থ – কাজেই আব্দি ভারতের সেই স্বার্থের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন????? বড়ই অদ্ভুত না! মানে কোন মানুষ কী কোন ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তি ছাড়াই – আমার  ওইটা ভাল লাগে বা ওইটা আমি খাবো আমাকে এনে দেও ইত্যাদি এভাবে কথা বলতে পারে???

তিনি এটাও পরিস্কার করেই বলছেন তাই এই চাওয়া – ভারতের স্বার্থ বলে তা পেতে চাওয়া এটা হাসিনারও (বেইনসাফি) উচ্চাঙ্খা বটে; এমনকি এর মানে হবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মই থেকে ছিটকে পিছলিয়ে পড়ে যাওয়া এমনকি যেটা বাংলাদেশকে এক দলের ও এক নেতার বাংলাদেশে পরিণত করবে…। [That would no doubt serve India’s national interests; and of course, fulfil Hasina’s ambitions; but would also mean ignoring the democratic backsliding that has reduced Bangladesh into a one-party, one-leader nation.]

তবুও এটাই তাঁর আকাঙ্খা! কি তামসা!

 

 

আপডেটেডঃ  ১৪  জুলাই ২০২৩; রাত ০২ঃ ০৮
আপডেটেডঃ     জুলাই ২০২৩;

>>>>
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

 

 

 

 

Leave a comment