বিএনপির আত্মহননের সহজ পথ, মির্জা ফকরুলের ‘মৌলবাদ’


বিএনপির নিজেকে খতমের সহজ পথ, মির্জা ফকরুলের ‘মৌলবাদ’
গৌতম দাস
২২ আগষ্ট ২০২৩  মধ্যরাত  ০০ঃ ০২
https://wp.me/p1sCvy-4Q3

 

 

                                 Fundamentalism

 

আনন্দবাজার-অগ্নি রায় এর “দাগী অপরাধী” ততপরতা শেষ হচ্ছে না বা থামছেই না। বরং  সেটা এতই ক্ষমতাধর যে একদিনের মধ্যে বিএনপি সেক্রেটারি মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর-কে একেবারে মৌলবাদবিরোধি করে ছেড়েছে! যত্তবড় মৌলবাদবিরোধি সিপিবি কেন কোন কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল কেউ এতদিন হতে পারে নাই!  নিশ্চয় এতে প্রগতিশীল ও সাহিত্য-সাংস্কৃতি জগতের যারা এতদিন আওয়ামি লীগ ওবস্থা ভাল না বুঝে ছুড়ে ফেলে বিএনপিকে প্রগতিশীল বানানোর কাজে লেগে পড়েছিল তারা তাদের পড়ে পাওয়া সাফল্য দেখে ব্যাপক খুশি হয়ে উঠেছেন!
দেখা যাচ্ছে, এতে সর্বশেষ যোগ দিয়েছে দক্ষিণ-ভারতের দ্যা হিন্দু মিডিয়া গ্রুপের এক নয়া প্রপাগান্ডা-ময় ফ্রি পত্রিকা যার নাম “ফ্রটলাইন” [Frontline]।  মূল মিথ্যা কথাটা ছিল, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নাকি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমেরিকার কাছে এক ‘কূটনৈতিক নোট’ বা “বার্তা” পাঠানো হয়েছে। যেটা পুরাটাই মিথ্যা।  কোন প্রমাণ ছাড়াই এধরণের মিথ্যা প্রপাগান্ডার দাবি প্রথমে ভারতের একটা বা দেড়-টা মিডিয়া থেকে ছড়ানো হয়েছে। মূল অপরাধী আনন্দবাজার-অগ্নি রায়দের আর, সেই কথিত মিথ্যা বার্তা-কে একটু ঘুড়িয়ে-ফিরিয়ে কিন্তু একইভাবে কোন প্রমাণ বা খবরের উৎস কে তা না জানিয়ে পরে তা প্রচার করেছে ডয়েচ ভেলে। তবে এটা নয়াদিল্লির ডয়েচ ভেলে। আর পরে প্রথম আলো-স্টার এই ডয়েচ ভেলের মিথ্যা রিপোর্টের বরাতে সেই চোথা-কপিটাই ছেপেছিল। একাজটাও সমান অপরাধের এজন্য যে  এরা তো দেখতেই পাচ্ছিলেন ডয়েচ ভেলের লেখাটা কোন “নিউজ” না। এটা এক “দাগী [despotic] ততপরতা” কারণ এতে তথ্যের কোন উৎস জানানো হয় নাই। তাই এটা কোন  “নিউজ” হয় নাই বরং একথা গুলো ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালইয়ের কে ও কবে বলেছে এর কোন প্রমাণ সাথে না দিয়েই উলটে  আনা হয়েছে – এক গায়েবী “কূটনৈতিক নোট” এর দাবি। এই অপরাধী কাজ তো জার্নালিজমের লোক ও চোখ হিশাবে প্রথম আলো-স্টারের বুঝতে না পারার কোনই কারণ নাই। কিন্তু তা সত্বেও এই অপরাধী কাজে তারাও সামিল হয়েছে।

তবে ফ্রন্টলাইন অথবা ডয়েচ ভেলে বা প্রথম আলো-স্টার  এরা সকলেওই ভেসে গিয়ে এক লোভে। লোভটা হল, বাংলাদেশের এখন যে অবস্থা যে রাজনৈতিক গুমোট অবস্থা তাতে সবচেয়ে “পাবলিক নজরদারিতে আছে ইন্ডিয়ান সরকার; মানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের মিডিয়া। এখন মিডিয়া বাণিজ্যিক চোখে দেখলে, এটাই বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ান মিডিয়ার চোখে এটা সবচেয়ে লোভনীয় – নিজ নিজ মিডিয়া রিচ [media reach] বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ। যার সোজা মানে যত বেশি ভিউ ততই অর্থলাভ। এছাড়াও এই মিথ্যা প্রপাগান্ডার রাজনৈতিক লাভালাভ উঠবে ভারত ও বাংলাদেশের চলতি সরকারের ঘরে। তাই তাদের থেকেই আরেক অঙ্কের অর্থ পাবার সম্ভাবনা। আর বলাই বাহুল্য এতে বড় ফান্ডটা হওয়ার কথা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার মিডিয়া ফান্ড। এসব চিন্তা থেকেই মনি-কাঞ্চনের চকচকে লোভে এসব মিডিয়ার চোখে; তাতে এই কথিত “ভারতীয় বার্তা” অসত্য বা বাপ-মার হদিস হলেই বা কী? চকচকে লোভের কাছে এই হদিস-হীনতা মামুলি!!!
এর একটা প্রমাণ দেয়া যাক।

“দ্যা হিন্দু” মিডিয়া গ্রুপের আরেক সাবসিডিয়ারি বা সহায়ক কোম্পানি তবে, প্রপাগান্ডা পত্রিকা হল ফ্রন্টলাইন। কেন এমন বিশেষণ লাগিয়ে বলছি? কারণ, মূল ‘দ্যা হিন্দু’ পত্রিকা এই ইংলিশ ডেইলি এখন আগে অর্থ পরিশোধ পে [pay] করলে তবেই পড়তে দিবে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া তাদেরই আরেক ব্যবসা বিষয়ক বা শেয়ার মার্কেট মুখ্য করা আরেক পত্রিকা বিজনেস লাইন আরো আগেই পে [pay] পত্রিকা করা হয়েছে। তাতে বলাই বাহুল্য পাঠক কমে গেছে। তাই সমান্তরালে “ফ্রটলাইন” কে সামনে আনা হয়েছে যেটা ওপেন মানে পয়সা লাগবে না। ফ্রন্টলাইন পত্রিকা থেকে উপরের ছবিটা নেয়া হয়েছে বাংলাদেশের ২১ আগষ্ট সকাল পোনে আটটায়।  আর এতে তখনও দেখা যাচ্ছে “ফ্রটলাইন”  খবরের প্রধান হেড লাইন হল আগের দিনের মানে, ২০ আগষ্ট সকাল নয়টায় ছাপানো বা হোস্ট করা বাসি ও মিথ্যা প্রপাগান্ডা স্টোরিটা। অথচ আজকাল নেট বা ওয়েব পত্রিকার যুগের কোন মিডিয়ায়  মুখ্য হেড লাইন নিউজের জায়গায় কোন খবরকে কী ২৪ ঘন্টা লটকায়ে থাকে? না রাখা উচিত, না বাস্তব সম্মত?? প্রশ্নই আসে না। তাহলে ফ্রন্টলাইন কেন রেখেছে? কারণ, এই প্রপাগান্ডা মিছা খবরটা “পয়সার মাল”। এটা এখনও পত্রিকার রিচ বাড়াবে বা বাড়ছে বলে ম্যানেজমেন্টের বুঝ! পাঠক টানবে, আনাগোনা হবে সেটাই তাদের অন্যসব আজকের টাটকা নিউজের চেয়েও সর্বোচ্চ হিট দিবে! সেই বিবেচনায় এই ২৪ ঘন্টা পুরানা চোথা-কপিটা টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে। এ’থেকে অবশ্য এটা কেমন মান ও পাঠক আদরের পত্রিকা তা ঠাহর করা যাচ্ছে, সেটাই উদাম হয়েছে। যদিও সারকথাটা হল, এখানে মিডিয়া বা জার্নালিজম বলে কিছু নাই, সবটাই ব্যবসা আর অর্থের লোভই মুখ্য!!!

ওদিকে কথিত ‘কূটনৈতিক “বার্তার” কারণে অবস্থা এমন হয়েছে যে এই গল্পের কোন সত্যতা নাই সেই গল্প নিয়ে লীগ-বিএনপি রাজনৈতিক নেতারা বিবৃতি দেয়া শুরু করেছে। বলছে, “যদি ভারত এমন বক্তব্য” দিয়ে থাকে অথবা “যদি এমন ভারতীয় বার্তা” মানে কূটনীতিক নোট বলে কিছুর অস্বিত্ব থেকে থাকে – এভাবে “যদির কথা” তুলে যার যার মনের খায়েস বা বাকযুদ্ধ চালানো হয়েছিল গতকাল সারাদিন।
এভাবে যদির উপর দাঁড়িয়ে কথা বলাটা চরম বোকামি শুধু না বরং বেইজ্জতি হবার সম্ভাবনা!  কারণ, এখন যদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এবার  সোজা বিবৃতি দিয়ে বা সাংবাদিক ডেকে জানায় যে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারত আমেরিকাকে কথিত কোন বার্তাই পাঠায় নাই – তখন কী হবে!!!  সেটা হবে অনেকটা এরকম যে সমাজে কেউ কাউকে যদি বলে [যেটা বাস্তবে কেউ করে না] আপনি আমাকে যদি গালি দিয়ে থাকেন তবে আমি আপনাকে জুতা দিয়ে মারব। আরে বাবা আমি গালি দিয়েছি কিনা সেটা তো আগে নিশ্চিত হবে আপনাকে, নাকি? যদি গালি না দিয়ে থাকেন তখন তো নিজেকেই লজ্জা পেতে হবে!  এছাড়া এসবের মধ্যে কূটনীতিক রীতিনীতি শিষ্টাচার এর ব্যাপার আছে। তাই সেটা হবে কোন ঘটনা বাস্তবে ঘটার আগেই “যদি তা ঘটত” এমন কাল্পনিক ধরে নিয়ে মারামারি শুরু করে দেয়া।  স্বভাবতই এতে মানুষ সবার আগে “যদি দিয়ে কথা বলা” লোকটাই মূল উস্কানিদাতা বলে সাব্যস্ত করবে!  কারণ,  “যদি দিয়ে কথা বলা” মানে পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া শুরু করা।  অথচ সেটাই ঘটেছে।
এব্যাপারে অন্তত কিছু শোভন এবং কূটনীতিক (কোন বাংলাদেশি) এক খসড়া বক্তব্য হতে পারত যদি বলত – এ দেশের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন বিদেশি শক্তি কথা বলতে পারে না, অশ্রদ্ধা করতে পারে না – এটা সবার মনে রাখা উচিত”।  “জনগণের ইচ্ছা” এটাই আমাদের সার্বভৌমত্ব,  জনপ্রতিনিধিদেরকে দেয়া ম্যান্ডেট। কাজেই, কোন বিদেশি  শক্তির আমাদের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার নুন্যতম সুযোগ নাই। এমন যে কোন ততপরতাকে আমারা প্রতিরোধ করতে বাধ্য। তাই কোন বিদেশি শক্তির এমন ততপরতা হবে খুবই দুঃখজনক ঘটনা।  আমরা আশা করব সকলেই এব্যাপারে নিজেকে সংযত করে নিবেন!

কিন্তু এক্ষেত্রে বিএনপি আরো এক ধাপঃ
যেমন বিএনপি “যদি দিয়ে কথা বলে” থেমে গেল তাও একটা মানে হত। কিন্তু মির্জা ফকরুল এরপর যেন একেবারে যেন  নিজে নিজেকেই বিব্রত করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি আরও আগ বাড়িয়ে বলেছেন,  আমরা এ কথা খুব স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কোনো মৌলবাদী দল এখানে ক্ষমতায় আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে দেখা গেছে, কখনোই কোনো মৌলবাদী দল ক্ষমতায় আসতে পারেনি। বরং তাদের যে শক্তি, সেই শক্তি ক্ষীয়মাণ হয়ে এসেছে”


মির্জা ফকরুল এর এই বক্তব্য এটা আত্মঘাতি, নিজেকেই নিজে অপমান করা এই বক্তব্য। কেন?

১। মির্জার মৌলবাদি দল টা কে? মির্জার জানা উচিত এই শব্দের উতপত্তি। এই শব্দ কারা ব্যবহার করে আর এখন তা ফকরুল সাহেব ব্যবহার করলে এর ইম্পিকেশন [implication] বা আরো সংশ্লিষ্ট ও সংযুক্তভাবে জড়ানো আরো অর্থ কী দাঁড়াবে তা তাঁর খেয়াল করা উচিত ছিল।
এটা কোল্ড ওয়ার যুগ (১৯৫৩-৯১) এর শেষ আমলের শব্দ। সুনির্দিষ্ট করে  ১৯৭৯ সালে ততকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছিল। কারণ, ঐ বছরই খোমেনির ইরানের বিপ্লব সংগঠিত হওয়াতে নিজ সেন্ট্রাল এশিয়া ভুখন্ডও না ঐ বিপ্লবের প্রভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই ছিল সোভিয়েত শাসক ব্রেজনেভের ভয়। তিনি আফগানিস্তানকে দখল নিয়ে বাফার স্টেট [buffer state] বা ‘মাঝের পাহারাদার ভুখন্ড’ করতে চেয়েছিলেন। আর এর থেকে পরবর্তিতে পাকিস্তানকে সামনে রেখে এর মাধ্যমে আমেরিকা ঐ দখল হয়ে থাকা আফগানিস্তানে  সোভিয়েত এর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের দিয়ে (মোজাহিদ যার বড় অংশই পাঠান বা পশতুন গোষ্ঠি) সশস্ত্র প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছিল। তাই দেশে দেশে সোভিয়েত সমর্থক বিশেষ করে আমাদের মত দেশের কমিউনিস্টেরা এই মোজাহিদ প্রতিরোধকে মুসলমান বলে নিচা দেখাতেই “মৌলবাদ” শব্দ চালু করেছিল; আর তা মূলত পৃষ্টপোষক হিশাবে আমেরিকার বিরুদ্ধে।  এটা তো স্বাভাবিক আফগানিস্তানের মানুষ মানেই মূলত মুসলমান বা ইসলাম অনুসারি। কাজেই দখলদার সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তাদের যেকোন প্রতিরোধ হলেই সোভিয়েত-প্রীতিতে কমিউনিস্টেরা তাদের আজীবনের ইসলামবিদ্বেষ এর ঝোলা মেলে বের করে সামনে আনবে; মুসলমানদেরকে বা তাদের ধর্মকে এথনিক পরিচয়কে নিচা দেখাবে ইত্যাদি; অথচ এটাই বর্ণবাদিতা। এটা সিম্পল এক গালাগালিতে – “অপর” ধর্মীয় এথনিক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে ঘৃনা-বিদ্বেষ ছড়ানোর রেসিজম।   আর এই রেসিজম-মূলক মূল শব্দটাই হল “মৌলবাদ” পরে আমেরিকা সমর্থিত [মূলত উচ্চমাথায় টেকনিক্যাল অস্ত্র স্ট্রিনজার (Stinger missiles) রকেট যা কাঁধে নিয়ে ছুঁড়ে হেলিকপটার ফেলে দেয়া যায়]  মোজাহিদ প্রতিরোধে টিকতে না পেরে ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান ত্যাগ করে ফিরে চলে যেতে বাধ্য হয়।  কিন্তু  এক বাক্যে মৌলবাদি বলতে মূলত সেটা ছিল কোল্ড-ওয়ার যুগের আমেরিকার বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট বা “প্রগতিবাদী” অভিযোগ, কালি লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।

পরবর্তি ঘটনা সংক্ষেপ হল, বাধ্য হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিরে চলে যাওয়াতে আমেরিকা পরে আফগানিস্তানে আগ্রহ হারায়; ঐ যুদ্ধবিধস্ত দেশ এরপরে যেখানে খুশি যাক মনে করতে শুরু করেছিল। শুধু তাই না এর পরবর্তিতে সেখানে কী হবে সেসব দায় ফেলে আমেরিকাও নিজেকে  গুটিয়ে ফেলেছিল।  এতে মারাত্মক এনার্কিজম আর তাতে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙ্গে চরমে যায় শুরু হয় লুটপাট আর তা ঠেকাতেই তালেবান মানে মাদ্রাসার ছাত্রের নিয়ে মোল্লা ওমরের প্রতিরোধ দাঁড়িয়ে যায়।  পরে ওর ভিতরেই পুষ্ট হয়ে গড়ে উঠেছিল আলকায়েদা মুভমেন্ট, যার প্রথম প্রকাশ হতে হতে পরবর্তি শতক এসে যায়, আর সেটাই নাইন-ইলেভেন। লক্ষণীয় যে মৌলবাদ শব্দটা এতে মলিন হয়ে পিছনে পড়ে যায় [নতুন শব্দ আলকায়েদা, আই-এস ইত্যাদি আরো অনেক কিছু এসে যাওয়াতে], আর ব্যবহার কমে গেলেও আমাদের দেশের কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলেরা আগের মতই মুসলমানবিদ্বেষ থেকে মৌলবাদ শব্দটা ব্যবহার চালু রাখে। শেষে আমাদের এদিকের যেকোন মুসলমান জনগোষ্ঠির প্রতিরোধ ততপরতাকেই ভারত সরকার আর এদেশের কমিউনিস্ট বা “প্রগতিবাদী” গোষ্ঠি এরা মানে, পিছনের উৎস পদচিহ্ন খুঁজে বের করলে,  জমিদার হিন্দুর সেট করা স্বার্থবোধ ও ভাষ্যকে যারা একালেও নিজ স্বার্থ ও ভাষ্য মনে করে – এরাই মৌলবাদ শব্দটা চালু রেখেছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য মির্জা ফকরুল সেই শব্দটাই হাতড়ে খুজে বার করে এনেছেন। ভেবেছেন মৌলবাদী শব্দটা বললে সেই আমেরিকা ও ভারত বিএনপির উপর সদয় ও খুশি হয়ে উঠবে – এটা এক পরিহাস!!!
মির্জা ফকরুল জানেনই না যে তিনি আসলে আমেরিকাকেই গালি দিচ্ছেন। আর চীন ঠেকাতে ঠিকা পাওয়া ভারত, এনিয়ে জোট বন্ধুত্বের সেই ভারত-আমেরিকা আর স্ট্রাটেজিক কমন সম্পর্কে নাই, বা সেই অর্থে বাংলাদেশ নিয়ে স্ট্রাটেজিক বন্ধু বা কমন স্বার্থ নাই। “ওয়ার অন টেরর” বলে ভাষ্য মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি থেকে ট্রাম্প আমলেই বাদ গেছে।  

একটা মজার কথা হল, বাংলাদেশে মৌলবাদ বলে গালি দেয়া ব্যাপারটা দুর্বল ও কমে গেলেও ভারতের আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট- প্রগতিবাদি জগতে মৌলবাদ শব্দটা কোন কোন পকেটে এখনও চালু বিশেষ করে (তাদের সমর্থকের একাংশ যারা অতৃপ্ত হিন্দু-মনের এরা এখনও মৌলবাদ বলতে পছন্দ করে সুখ পায়) – অথচ তাদের কাছে মোদির বিজেপি নিয়ে কোন আপত্তি, অস্বস্তি ইত্যাদি কিছুই নাই; মৌলবাদ-বোধ নাই।  অথচ বিজেপির হিন্দুত্ববাদ যা বাংলাদেশে এমনকি ইসকন নামে বিস্তৃত অথচ এদের ততপরতাকে  বাংলাদেশের কমিউনিস্ট- প্রগতিবাদিদের মৌলবাদ-বিরোধি চোখে কোন খারাপ কিছু বা আপত্তির নয়। এটা কোন “হিন্দু মৌলবাদ” ধরণের কিছু নয়, রাজনীতিতে ধর্ম আনা নয়, হিন্দুধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র বা রাজনীতির আপত্তিকর ততপরতা নয়। তাদের চোখে হিন্দুত্ববাদ-কে তারা মৌলবাদ মনে করে না !!! ব্যাপারটা ভালো মজার না!

বিএনপি কাদের দল, ভোটার কনষ্টিটুয়েন্সি – মুসলিম জাতিবাদঃ
এক বিপরীত বাংলাদেশের ঘটনা হল, ভোটারের টাইপ মানে ভোটার কনষ্টিটুয়েন্সি হিশাবে যদি বলি সেই বিচারে তবে ” মুসলমান জাতিবাদি” সমর্থক চিন্তা ধারা – এমন ভোটারেরা এক বড় অংশ বিএনপিকেই ভোট দিয়ে থাকে। তবে সাবধান এদের দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিক দিকের সাথে নব্বই এর দশকে উত্থিত তালেবান বা পরবর্তিকালের সশস্ত্র যেকোন ইসলামি রেডিকেল ধারা এদের কোনই সম্পর্ক নাই। মিলায় ফেলবেন না।  অন্তত ভোটার গোষ্টির টাইপ বিচারে। কারণ ইসলামি রেডিকেল কোন ধারাই ঠিক কোন ভোটার গোষ্টি নয়, ভোটের রাজনীতিটা তাদের নয়। বৃহত্তর অর্থে বললে,  এই “মুসলমান জাতিবাদি” ক্যাটাগরির ভোটার বাংলাদেশে নুন্যতম ৩৫% ধরা হয়, যার বাকি সমর্থক উঠানামা করা ভোটার।  আবার এমনকি রাজনৈতিক চিন্তা হিশাবে  “মুসলমান জাতিবাদি” চিন্তার কর্মি আওয়ামি লীগের ভিতরেও পাওয়া যাবে।
খোদ হাসিনার কথাই দেখেনঃ
ভাল করে একটু খুঁজলে দেখা যাবে সব সচেতন বাংলাদেশীর ভিতরেই কিছুটা হলেও “মুসলিম জাতিবাদ” আছে। অন্তত মনের কোন কোনায়। কথাটার মানে কী? কী বলতে চাইলাম?  শেখ হাসিনার কথাই ধরা যাক। আমার ধারণা তিনিও এর বাইরে নন! কেন?
তিনি কিভাবে এর বাইরে থাকবেন? খোদ শেখ মুজিব কী এর বাইরে? তিনি তো কলকাতায় পড়ালেখার সময় থেকে তো বটেই এর আগের জমানা থেকেই মুসলিম জাতিবাদী – সেকালে এর প্রকাশের নাম ছিল মুসলিম লীগ!    আর সবচেয়ে বড় কথা খোদ শেখ হাসিনা তাঁর বাবার এই মুসলিম লীগার নেতার পরিচয় একটুও লুকান নাই, মুঝে ফেলেন নাই বা আড়াল করে দেন নাই। গর্বের সাথেই অবলীলায় ছাপতে বলে দিয়েছেন! হাসিনার তত্বাবধানে প্রকাশিত শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী হাসিনা কোথাও এডিট করে কিছুই একালে বাদ দিতে দেন নাই।  প্রফেসর আনিসুজ্জামান সহ যারা এডিটরিয়াল বোর্ডে ছিলেন তারা সুপারিশ করলেও হাসিনা তাদের কথা শুনেন নাই।  এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে!! যদিও ১৯০৬ অথবা ১৯৪৭ সালের মুসলিম লীগ আর ১৯৫৪ সালের পর থেকে হয়ে যাওয়া মুসলিম লীগ আর এক থাকে নাই; ১৯৭১ সালে যেটা একেবারেই পুর্ব-পাকিস্তান অথবা বাংলাদেশ-বিরোধিই হয়ে গেছিল – সেসব কথা আলাদা। অন্যভাবে বললে এক. মুসলিম জাতিবাদ  এই কনসেপ্ট-টা সব সময় একই বা একটাই সাংগঠন এর মাধ্যমের প্রকাশিত বা প্রতিনিধিত্ব হয় নাই!  আর দুই. এটা বেশি গুরুত্বপুর্ণ। ভারত এপর্যন্ত যা করেছে – হিন্দুত্ববাদ কে যেমন যতটা তীব্র অথবা সফট মাত্রায় হাজির করেছে বা বাংলাদেশ সম্পর্কে যা নীতি-পলিসি নিয়েছে আর তাতে বাংলাদেশ এরই যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে এর  নাম হচ্ছে “মুসলিম জাতিবাদ”; তবে এটা অবশ্যই প্রতীকী নাম!
আর সম্ভবত এজন্য বলা হয়, আমরা নিজেরাই আমাদের শত্রু বা অপছন্দের ব্যক্তিত্বের আকার-বৈশিষ্ট কেমন হবে এরই মূল জন্মদাতা!

আমাদের আদি পাপ  আমাদের বাধাঃ
কনষ্টিটুয়েন্সি
শব্দটার আক্ষরিক অর্থ ভোটার – জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে যারা সেই ভোটার। আবার এর আরেক বাংলা ভাষ্য আছে। যেমন আমরা বলে উনি কোন আসনথেকে দাড়িয়েছেন। কথ্য ভাষার এই আসন শব্দটাই নির্বাচন কমিশনের খাতায় লেখা আছে কনষ্টিটুয়েন্সি বলে।তসিকমিশন বলবে উনি কোন কনষ্টিটুয়েন্সি থেকে দাড়িয়েছেন। মূল বা রূট শব্দ কনষ্টিটুট [constitute] শব্দের অর্থ হল গঠন করা; সেখান থেকে এখানে রাষ্ট্রগঠনসম্পর্কিত আলাপ করছি আমরা। তাই কনষ্টিটুয়েন্সি মানে যারা রাষ্ট্রগঠন করে সেই ভোটার
এবার তাহলে বিএনপি এই দলের ভোটার কনষ্টিটুয়েন্সি কারা? এই প্রশ্নের অর্থ হল সমাজের কোন ধরণের ভোটার বিএনপি-কে ভোট দিয়ে থাকে – এমন কোর [core বাংলায় শাঁস] সমর্থক আমাদের সমাজের কোন গোষ্ঠির মানুষেরা? তাই এই প্রশ্নের জবাব হল, বিএনপি হল কোর কনষ্টিটুয়েন্সি মুসলিম জাতিবাদ।  কোর মানে যাদের ভোট নড়চড় হয় না বিএনপিতেই আসে; আর এদের ছাড়াবা  বাদে বাকি ভোটার হল ফ্লোটিং। যারা যখন পক্ষে কখনও বিপক্ষে ভোট দিয়ে থাকে। 

এখন “প্রগতিশীলতার” প্রভাবে পড়ে মুসলিম জাতিবাদ মানে মুসলিম শব্দটা শুনেই ঝাপিয়ে পড়বেন না বা দুরত্ব তৈরি করবেন না। কেবল খেয়াল করে দেখেন, বৃটিশ ভারতে প্রথম রাজনৈতিক দল কংগ্রেস এটাকে তো হিন্দু জাতিবাদি দলই বানানো হয়েছিল। যার রূট খুঁজলে ১৮১৫ সালের রাম মোহন রায়ে যেতে পারেন। পরবর্তিকালে গান্ধী-নেহেরুরা একাজই করেছে; হিন্দু জাতিবাদকে সাফাই দিয়ে গেছে।  অথচ  হিন্দু জাতিবাদ শব্দটা শুনলে আপনার মনে দুরত্ব তৈরি করার কোন প্রতিক্রিয়া না হলে বুঝবেন আপনি প্রগতিশীল এবং মুসলমানবিদ্বেষী। একথাত বিরুদ্ধে সাফাই হিশাবে আপনার মনে হতে পারে যে আপনি তো আসলে ধর্মীয় জাতিবাদের বিরোধিতা করছেন! কিন্তু না; করছেন না।  করলে তো হিন্দু জাতিবাদ শুনলেও একই দুরত্ব তৈরির প্রতিক্রিয়া হত!! তা তো হয় না। বরং প্রগতিশীলেরা কংগ্রেস দলকে আপন মানে। অনেকটা নিজেরই তবে আপনি তো জাতে উঁচা আর এরা হল আম “পপুলার অংশ”। আর তা মনে করে সাথেই রাখেন, আপন মানেন। অথচ মূল কথাটা হল, আপনি সংখ্যাগরিষ্ট এই যুক্তিতে হিন্দু জাতিবাদ এর দল খুললে এটা অবশ্যই প্রতিক্রিয়ায় একটা মুসলিম জাতিবাদি দলও অবশ্যই তৈরি হবে।  কারণ,  হিন্দু জাতিবাদ দল খুলে আপনি মুসলমান নাগরিকদেরকে একা, বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন, ঠেলে দিয়েছেন মুসলিম জাতিবাদ করতে। বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা আপনার সমান নয় – নিচা, আপনারই অধীনস্ত, পায়ের নিচের লোক!  আর এই হল আমাদের আদি পাপ!!!
এরই সবচেয়ে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ১৮৮৫ সালে জন্মানো কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়ায় ২০ বছরের মধ্যে ১৯০৬ সালের মুসলিম লীগ!  কারণ, ব্যাপারটা হল, আপনি যদি অপরের এক ধর্মকে নিচা দেখান, গালমন্দ করেন – মনে রাখবেন সব ধর্মের চোখেই অপর সবগুলো ধর্মই মিথ্যা, তাদের ritual-রিচুয়াল  (শরীয়তি আচার নিয়মগুলো) অর্থহীন – কোন মানে হয় না – বুজরুকি ভন্ড ইত্যাদি মনে হতেই পারে। আসলে আপনি আপনার ধর্মের রিচুয়ালের সাথে মনে মনে তুলনা করছেন আপনারটাই  সবচেয়ে সহি  এই বিবেচনায়!  কিন্তু পরক্ষণেই আপনার বিবেকবান হওয়ার কথা।  সে কারণে, বুদ্ধিমান লোকেদের বুঝ এখানেই থামবে না। কারণ, সে সাথে সাথে বুঝে যায় যে তাহলে তো অপর ধর্মের লোকেরাও আমার ধর্মকেও একই নিচা বা ‘মানে হয় না’ এমন আরেক  নিচা ধর্ম ও রিচুয়ালের লোক হিশাবে দেখছে!!!  সেটাও তো আপনার কাম্য হতে পারে না! তাহলে  এথেকে মুক্তি বের হবার পথ কী? 

খুবই সহজ।  পথটা হল যে, কারোরই অপরের ধর্ম-রিচুয়াল-কে নিচা দেখানো উচিত না।  নিজের ধর্ম  সেফ রাখা বা বাঁচানোর জন্য।  তাহলেই সকল ধর্ম অপমান, নিচা দেখানো ইত্যাদির হাত থেকে বাঁচতে পারে। এজন্যই সকলের চোখে নিজ নিজ ধর্ম শ্রেষ্ঠ এই বোধ থাকলেও কোন বুদ্ধিমান মানুষ নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ববোধ অন্যকে মানতে বাধ্য করে না, চাপায় দিতে যায় না অথবা মানতে হবে বলে দাঙ্গা বাধায় দিতে যায় না। এটা সে করতে পারে না। একমাত্র এমন হলেই সকল ধর্মই আপন আপন জগতে শ্রেষ্ঠ থাকতে পারে। কোন সমাজে এমন বোধ বেশিরভাগ মানুষের ভিতর এলে তবেই একটা রাষ্ট্রগঠন সম্ভব। যে রাষ্ট্রকে অবশ্যই  সবার  ইচ্ছামত নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা  নিশ্চিত করতে হবে – নাগরিক অধিকারের বিচারে নাগরিক মাত্রই সকলের অধিকার সমান; কোন বৈষম্য করা যাবে না – এই নীতিতে  তা গড়ে তুলতে হবে।  কিন্তু মনে রাখতে হবে আদি পাপ  আমাদের বাধা দিয়ে রেখেছে; যেটা সবার আগে পাশ কাটাতে হবে!!    

আমাদের মূল আলোচ্য প্রসঙ্গে ফিরছিঃ
ভোটার কনষ্টিটুয়েন্সির বিচারে বিএনপি এই দলের কোর সমর্থক ভোটার বেজ হল  “মুসলমান জাতিবাদি” ভোটার। বিপরীতে আওয়ামি লীগেরও বাঙালি জাতিবাদি কোর ভোটার ঐ ৩৩% এর আশেপাশে তবে এসবই ২০০৯ সালের আগের হিসাব ও অনুমান।  ভোটার হিশাবে সমর্থদের  এই মৌলিক ভিত্তিগত ফারাকের কারণেই আওয়ামি লীগ কখনও বিএনপি হতে পারে না, পারবে না; বিপরীতে বিএনপিও লীগ হতে পারবে না।  তাহলে, মির্জা আলমগীরের এই আল-টপকা মৌলবাদ শব্দের ব্যবহার এর মানে কী? নিজের পায়ে কুড়াল  মারা? হা ঠিক তাই! মানে সিপিবির কোন নেতার যেন বিএনপির সেক্রেটারি হয়ে যাবার দশা??? এমন আনফিট এক দশা-পরিস্থিতি! আচ্ছা, তাই  বিএনপি ভোটের রাজনীতিতে যে  “মুসলমান জাতিবাদি” ভোটারদের দল, সে  কি করে কথিত “মৌলবাদবিরোধি” হয়! কারণ ভারতের চোখে আর কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলদের চোখে খোদ বিএনপি তো মৌলবাদি দল!!!  আর আমরা ভারতের অযাচিত প্রভাব বিরোধী ফলে প্রতিরোধী যেকেউই তো আসলে ভারতের চোখে মৌলবাদী ট্যাগপ্রাপ্ত!! মানে   মূলত মুসলিম জাতিবাদী ভোটারের দল বিএনপি কিভাবে  নিজ সমর্থক ভোটারের বিরুদ্ধে যাবে? চাইলেও কী যেতে পারবে? [ তবে বছর দুয়েক সময় পেলে পারবে হয়ত কিন্তু তাতে চিত্রটা দাঁড়াবে এভাবে যে “মুসলমান জাতিবাদি” ভোটার ভিত্তিক আরেকটা নয়া দল গড়ে উঠেছে। ফলে আজকের বিএনপি পরিণত হয়ে উঠতে পারে এক কথিত মৌলবাদিবিরোধী বিরুদ্ধে নয়া এক প্রগতিবাদি বিএনপি হতে চেষ্টা করতে পারে; যেটা হবে আসলে ভারতের পছন্দের এক আওয়ামি বি-টিম যার কোর সমর্থক হতে পারে বড়জোর ১০%।

তাহলে মির্জা এত দ্রুত এমন “মৌলবাদ-বিরোধী” বক্তব্য কেনঃ
মূল কথাটা হল, মির্জা নিজেই আল-টপকা  “মৌলবাদ-বিরোধী”বা পক্ষ বলে তর্কটা নিয়ে গেছে।  অথচ কোন মৌলবাদ-তর্ক তো হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে ইস্যু ছিল না!
যদিও গত ২০১৫ সাল থেকেই বিএনপির মধ্যকার এক বেহুশ আর পোলাপানি চিন্তা দেখা দিয়েছিল যে,  প্রগতিবাদিদের মত মৌলবাদ-বিরোধি বক্তব্য দিতে পারলে দল ভারত ও পশ্চিমা শক্তির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে – যেন আওয়ামি সমতুল্য হবে দল!  মানে এরা সেই থেকে বেমালুম অসতর্কতায়  নিজ “মুসলমান জাতিবাদি” কোর সমর্থক গোষ্ঠিরই বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চেয়ে চলেছে। কিন্তু কেন? কারণ, বিএনপির অস্থির কথিত তরুণ নেতাদের অপুষ্ট বুঝের বোকা-অনুমান হল ভারতের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। আওয়ামি লীগকে দেখেই তাদের এই সর্টকাট অনুমান!  অথচ মূল কথাটা হল, বাংলাদেশের উপর ভারতের কর্ত্ত্বত্ব ও প্রভাব ভারতের নিজ মুরোদে সৃষ্ট হয় নাই। আসে নাই। এটা এককালে আমেরিকা ভারতের পিঠে হাত রেখেছিল তাই। কিন্তু এখন বাইডেন প্রশাসন ভারতের সাথে সেই বিশেষ [চীন ঠেকানোর ঠিকাদারির দায় থেকে ভারতকে মুক্ত করে দিয়েছে]। শুধু তাই না, এরপর বাংলাদেশের উপর পুরানা ভারতীয় প্রভাব ভেঙ্গে দিয়ে বাইডেন নয়া সম্পর্ক গড়তে নয়া পলিসি-অবস্থান নিয়েছে। যেটা শুধু বাংলাদেশের উপর ভারতের মাতব্বরি উপড়ে ফেলাই নয়,  ভারত-আমেরিকার পুরানা সম্পর্কে-কেও বদলে নিবে!  এবার গত জুনে ২২-২৪ মোদির বাইডেন সফর তাই  সেই সফর ছিল মূলত সামরিক ক্রেতা-বিক্রেতার সাক্ষাত-সফর। যা মূলত ভারতে (যুদ্ধ বিমানের ইঞ্জিন বানানোর কারখানা বসানোতে) আমেরিকার বিনিয়োগ সংক্রান্ত…। এর সাথে রাজনৈতিক বা স্ট্রাটেজিক কোন ইস্যু নাই, আলোচনার এজেন্ডা বা তালিকায় তা ছিল না।

কিন্তু লেটেস্ট ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক বিষয়টা – এসব পরিস্কার জানা সত্বেও মোদি-হাসিনা ভান করতে চায় যে যেন ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক আগের মতই আছে। ফলে মোদিও যেন আমেরিকার কাছে হাসিনার সুপারিশকারিই এখনও আছে। এই ভান এর উপর ভিত্তি করে গত দুদিনের মিথ্যা প্রপাগান্ডা চলছে, আওয়ামি কর্মিদের মনোবল বাড়াতে! আর তাতেই এক সিপিবি কর্মি যেন বিএনপির সেক্রেটারি হয়ে বসে গেছে অবস্থা!! রাজনীতির খোঁজ-খবর বা অভিমুখ না জেনে না রেখে রাজনীতি করা যায় না। মির্জা ফকরুল-সহ তাদের নীতিনির্ধারকদের ভুল-অনুমান হল, এভাবে মৌলবাদের কথা তুললে নিশ্চয় আমেরিকা বা পিটার হাস খুব সন্তুষ্ট হবে আবার ওদিকে মৌলবাদবিরোধি গলা চড়ালে মোদির হিন্দুত্ববাদও বেজায় খুশি হবে। অথচ ওরা খবর নেয় নাই সেকালে নব্বইয়ের দশকে মৌলবাদ বলতে এর প্রধান পৃষ্টপোষক বলতে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলেরা আমেরিকাকেই বুঝাত – এতে তাদের সেই বয়ান হল,  “মৌলবাদ উত্থান” ঘটার জন্য প্রধান অভিযুক্ত আমেরিকা!
মির্জা ফকরুলের মুখ দিয়ে বের হওয়া যে বয়ান হাজির হয়েছে এটা চলতে থাকলে ক্রমশ এটা এমন নয়া বাস্তবতায় পৌছাবে সেটা হল  বাংলাদেশের “মুসলমান জাতিবাদি” ভোটার সমর্থকদের দল হিশাবে বিএনপি তার স্থান হারাবে।  আর তাতে ভিন্ন এক নয়া দল গঠিত হয়ে এর উপর ভর করে নয়া এক ‘মুসলিম জাতিবাদি’ কনষ্টিটুয়েন্সির দল হাজির হতেও পারে। যা বলাই বাহুল্য বর্তমান বিএনপিকে শুকিয়ে ফেলবে।

মুসলিম জাতিবাদ আসলে কী কেন তা টিকে থাকতে থাকবেঃ
একালের এর পিছনের মূল কারণ গত পনেরো বছরের হাসিনা শাসনের আড়ালে ভারতের লুটপাট  – বিনাপয়সার করিডোর থেকে শুরু করে ভারতের বাংলাদেশ থেকে যা তাদের নেয়া দরকার সবই তারা নিয়ে যাচ্ছে। খোদ হাসিনার ভাষাতেই বললে তিনি আমাদের  জানিয়েছেন, “ভারতকে যা দিয়েছি ওরা আজীবন মনে রাখবে”। তাই এখনকার বাংলাদেশ হল, ভারতবিরোধিতা এক টইটম্বুর – চরমে উঠা বাংলাদেশ – মনে রাখতে হবে এটা খোদ ভারতেরই সৃষ্টি – ভারতের এই লুটপাট সব কাজে ভারতের স্বার্থ এর প্রায়োরিটি – এসবই করে চলেছে গত ১৫ বছর ধরে। সবচেয়ে বড় কথা রাষ্ট্রের শাসনের বিরুদ্ধে আপত্তি জানানোর সুযোগ বন্ধ! যার সোজা অর্থ ভারতের এই হিন্দুত্ববাদি চোখ বাংলাদেশের নিজ স্বার্থকে ভারতের পায়ের নিচে নেওয়ার বিরুদ্ধে নিরব জন-প্রতিরোধ বা রেজিসট্যান্স [resistance]   – এর প্রতীকী নামই মুসলিম জাতিবাদ। এটাই একালের মানে! অতএব ভারতের হিন্দুত্ববাদি ‘বাংলাদেশ নীতি’ এরই ডেকে আনা বিপরীতের নাম  “মুসলমান জাতিবাদি” প্রতিরোধ; তাই এই পরিচয় নিয়েই তাদেরকে আরো থাকতে হবে। তাতে বিএনপি তাদের প্রতিনিধিত্ব করবে বা যোগ্য থাকবে কিনা সেটা বিএনপি-কেই নির্ধারণ করতে হবে। ভোটার গোষ্ঠি অবস্থাকেই পুষ্ট করার জন্য নয়া কোন দল হাজির হওয়া বা আগিয়ে আসা – এসব সেক্ষেত্রে কোন অসম্ভব বা দুরের কিছু না।

তবে ভারত যে মিথ্যা “কূটনীতিক বার্তার” কথা তুলে আওয়ামী কর্মিদের হতাশা ভেঙ্গে মন চাঙ্গা করতে চেষ্টা করেছে সেটা এখন কমবেশি পরিস্কারঃ
আর এতে ভারতীয়  “সাফাই ভাষ্য” চরমভাবে দুর্বল।  তারা বলছে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে হাসিনা ফিরে ক্ষমতায় না থাকলে ভারতের স্বার্থ বিঘ্নিত হবে – এটাই কথিত সেই ভারতীয় বার্তা। এখন একবার ভেবে দেখেন, দুনিয়ার কোন নির্বাচন কমিশন অথবা আদালতের কাছে এটা তো বলাই যায় না যে আমি ওমুককে বিজয়ী দেখতে চাই। অথবা (আদালতের কাছে) ওমুকের ফাঁসির রায় চাই। একথা বলার মানে হয় না। কারণ এটাই তো নিশিভোট! কোন নির্বাচন ফলাফল কেমন হতে হবে তা আগাম দাবি করে বলার মানে হল সেটা আর নির্বাচনই নয়। অথবা শাহবাগের মত দাবি – আগাম ফাঁসির রায়ই হতে হবে বয়ে রায় চাই একথা বলার মানে হল সেটা আর বিচার নয় বা আদালতের রায় নয়। এছাড়া ভিন্ন একটা দেশ, বাংলাদেশের নির্বাচনে হাসিনাকেই বিজয়ী দেখতে চাই এটা কী বলা যায়? মানে হয়? নাকি এসব কথা  জনসমক্ষে প্রচার হয়ে যাবার পর আমেরিকার পক্ষে ইচ্ছা থাকলেই কী এসবের বাস্তবায়ন বা মেনে নিতে পারবে???

সারকথায় এটা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা দিবার মত কোন “ভারতীয় বার্তাই” হয় নাই – কোন কূটনীতিক বার্তা হওয়া দূরে থাক!   এটা “শাহবাগী ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই” – এর চেয়েও ন্যাংটা উলঙ্গ এক বর্বর ভাষ্য! যেমন, আমরা কী বলতে পারি যে আমরা ভারতের আগামি নির্বাচনে মোদিকেই আবার ক্ষমতায় দেখতে চাই; এটাই বাংলাদেশের স্বার্থ!!!!!
এধরনের বাচালদের কাজ কামে আমেরিকার জড়িত হবার নুন্যতম সম্ভাবনা নাই। বাইডেনের আমেরিকা অন্য নানান ইস্যু পদক্ষেপে ভুল করতে পারে, অন্যায় করতে পারে। কিন্তু তারা বোকা নয়।  তাহলে এসব কথিত ভারতীয় বার্তার একমাত্র লক্ষ্য হল, ভেঙ্গে পড়া আওয়ামি কর্মিদের চাঙ্গা করারই এক অকেজো চেষ্টা মাত্র!

আপডেটেডঃ    ২২ আগষ্ট ২০২৩;  সকাল ০৭ঃ ৩৫
সর্বশেষ আপডেটেডঃ  ২৩ আগষ্ট ২০২৩;  সকাল ০৮ঃ ২৫

>
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

 

Leave a comment