কী তামসা! দিল্লি নয়, পিটার হাস ঢাকায়
গৌতম দাস
১০ নভেম্বর ২০২৩ ২১ঃ ৫৮ রাত
দিল্লি নয়, পিটার হাস ঢাকায় – স্টিফেন ইবেলি বলেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ভারতে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে যোগ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
আবার শুরু হয়েছে। সেই পুরানা বানানো গল্প – ভারত নাকি আমেরিকার সাথে দেন-দরবার করে হাসিনাকে বাঁচাবে। ফিরে হাসিনাকেই ক্ষমতায় রাখবে ইত্যাদি! মানে সেই পুরানা “আনন্দবাজারি” ও “অগ্নি রায়” আর তাঁদের ঢাকার সহযোগী – মার্কা মিথ্যা প্রপাগান্ডা। আর তা শুনে কিছু না বুঝে হাহাকার করে উঠা লোকের সংখ্যাও কম নয় যারাই মূলত – ভারত আবার হাসিনাকে বোধহয় ক্ষমতায় রেখে দিল – এই প্রপাগান্ডাকে পরোক্ষে আয়ু দিচ্ছেন। আর তাতে মিথ্যা প্রপাগান্ডার অপ-সাংবাদিকতা করে হিট বাড়ানোর অসৎ ততপরতার জয়জয়কার শুরু হয়েছে। এবার একাজের লিড হল, বিবিসি বাংলার শুভজ্যোতি ঘোষ। তিনি নেমেছেন যে নিজে ভারতীয় আর ভারতীয় বলেই যেন এক আরএসএসের কর্মির মত আচরণ করে আসছেন তিনি। আর তাত এই আচরণের পিছনে আছে আরেক পরিচয়।
কলকাতার আরএসএস এর এককালের (২০১৬) দায়ীত্বে থাকা নেতা তথাগত রায় এখানে দেখেন তার পরিচয়,
এরই চ্যালা-শিষ্য ছিলেন এই শুভজ্যোতি ঘোষ! তথাগতের আমলে (সে সময়
জঙ্গীবাদের নামে যা খুশি লিখতে-করতে-চালাতে পারত এরা), তাতেই এই শুভজ্যোতির উত্থান!
শুভজ্যোতি ঘোষ, তিনিই এবার প্রপাগান্ডা লিড-নেতা! বাংলা বিবিসি-তে তিনি সত্য-মিথ্যায় মিশানো এক প্রপাগান্ডা রিপোর্ট করেছেন। আর তা থেকেই প্রধান প্রপাগান্ডাটা শুরু হয়েছে। আর এটাই বাংলাদেশে প্রথম আলো, কালের কন্ঠ ইত্যাদি এরা বিবিসির নাম না নিয়েই ঐ মেটারিয়াল দিয়ে সুত্রবিহীন স্ব স্ব রিপোর্ট করেছে। যদিও গতদিনটা শুরু হয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এরও এক মিথ্যা প্রপাগান্ডা রিপোর্ট দিয়ে। সেটা এখানে দেখতে পাবেন।
মিথা প্রপাগান্ডার শিরোনাম কীঃ
গতকাল ১০ নভেম্বর ছিল আভ্যন্তরীণ রুটিন ঘটনা হিশাবে ভারত-মার্কিন সংলাপের দিন। আর সে উপলক্ষ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন তাঁদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে সাথে নিয়ে আগের দিনই ভারত সফরে পৌছে গেছিলেন। বলাই বাহুল্য এতে বাংলাদেশের কোনই সংশ্লিষ্টতা নাই; থাকার কোন কারণও নাই। কিন্তু তা সত্বেও এই ইন্ডিয়ার হাসিনাকে দেয়া মিথ্যা মিডিয়া প্রপাগান্ডা সার্ভিস যে এই সংলাপে নাকি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ আলোচনায় আসবে! কেউ কেউ সাবধানী খাড়া মিথ্যা বলতে ভয় পেয়েছে। যেমন কালের কন্ঠ লিখেছে “ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ : উঠতে পারে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও” । আবার প্রথম আলো তো খুবই সাহসী মিথ্যাবাজ। তাই সে বুক ফুলিয়ে শিরোনাম করেছে,দিল্লিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। কিন্তু প্রকাশ করার পর বুঝেছে এত হারাম কাজ দুনিয়া সহ্য করবে না। রাত দশটার মধ্যেই ঢাকার মানুষ চোরামি জেনে গেছে। মানে প্রথম আলো – এরা এত নিচে নেমেছে যে প্রথম প্রপাগান্ডা নিউজটা গায়েব করে দিয়েছে। লক্ষ্য করবেন এর রেফারেন্স লিঙ্কটা প্রিয়.কম এর। এই ওয়েবে কারো অনেকের প্রকাশিত লেখাই অটো কপি করে রাখা থাকে। তাই আমি সেখান থেকে লিঙ্ক দিয়েছে। এছাড়া ফেসবুকে যারা স্ন্যাপ কপি করে স্টাটাস দিয়েছিল ততক্ষণাত তাঁদের স্টাটাসে প্রথম আলোর প্রথম রিপোর্টটা এখনও লটকানো আছে।
তাই এবার শিরোনাম সহ সবই বদল। বলা যায় এবার দিল্লির সৌমের বরাতে প্রথম আলোর একেবারে ভাল মানুষী এবং পুরা উলটা শিরোনাম – যুক্তরাষ্ট্রকে বলল ভারত নির্বাচন কীভাবে হবে, তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় ।
তাহলে শুভজ্যোতি কী করেছিলঃ
শুভজ্যোতি একদিকে প্রায় তেরশ অক্ষরের প্রপাগান্ডা রিপোর্ট-টা করছেন, শিরোনামে কায়দা করে উস্কানি দিয়ে লিখছেন দিল্লিতে ভারত-মার্কিন সংলাপে নাকি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ আলোচনায় আসবে!!! অপরদিকে লেখা সেই রিপোর্টের একেবারে শেষে ভারতীয় মুখখপাত্র অরিন্দম বাগচির উদ্ধৃতি দিয়ে লিখছেন, “বাগচি বলেছেন, আমরা তৃতীয় কোনও দেশের নিজস্ব নীতি নিয়ে মন্তব্য করি না, এখানেও করতে চাই না”।
“বাংলাদেশের নির্বাচন একান্তভাবেই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা তৃতীয় কোনও দেশের নিজস্ব
নীতি নিয়ে মন্তব্য করি না, এখানেও করতে চাই না”, -জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র। সেই সঙ্গেই তিনি যোগ
করেছেন, “বাংলাদেশের মানুষ নিজেরাই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন। ঘনিষ্ঠ মিত্র ও পার্টনার
হিসেবে আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মর্যাদা দিই।”
যার সোজা মানে হল, শুভজ্যোতির পুরা রিপোর্বটের বক্তব্যটাই ভুয়া প্রপাগান্ডা! কারণ, অরিন্দম বাগচির কথা সত্য হলে শুভজ্যোতির কথা যে ভারত-মার্কিন সংলাপে নাকি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ আলোচনায় – এটা মিথ্যা। অদ্ভুত, এরপরেও এমন রিপোর্ট আবার বিবিসি বাংলায় ছাপা হয়েছে সাংবাদিকতা বলে!!!!
ঘটনা হল, পিটার হাস নাকি দিল্লি গেছেনঃ
সকাল থেকেই বাংলাদেশে প্রপাগান্ডা শুরু যেখান থেকে যে ঘটনা হল, পিটার হাস নাকি দিল্লি গেছেন! প্রপাগান্ডিস্ট কালবেলার কথাই ধরেন, তার এই রিপোর্ট দেখেন। এরা পিটার হাসকে দিল্লি পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সকাল থেকেই এই মিথ্যা প্রপাগান্ডার খারাপ প্রভাব পড়েছে! কারণ পিটার হাস দিল্লি চলে গেছেন!
তো – তাতে কী হবে? না, তাঁদের থামার সময় নাই। পিটার হাস ইন্ডিয়া গেছে মানেই যেন ফিরে এসে তিনি হাসিনা কে নির্বাচিত ঘোষণা করে দিবেন! তাই কান্নাকাটি???
তাঁদের কে বলি – এখন থামেন, একটু শ্বাস নেন ভাল করে; এবার শুনেন!
প্রথম কথা হল, আজ সন্ধ্যা সাতটায় সমকালে ছাপানো ছবি-সহ নিউজ বলছে, দিল্লি নয়, পিটার হাস ঢাকায়। এখন বুঝেন প্রপাগান্ডার হাত-পা, ডালপালা কতদুর বিস্তৃত!
দিল্লি নয়, পিটার হাস ঢাকায়
এটাই বিবিসির প্রপাগান্ডা রিপোর্ট
এমনকি হাস যদি ইন্ডিয়া যেতেন তবুও কিছুই মানে হত না কেনঃ
কারণ, আজ দশ নভেম্বর দিল্লিতে ভারত-মার্কিন ২+২ সভা শুরু হবে আর তাই সেখানে আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন আগের দিনই এসেছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রেও হাস যদি যেতেন তিনি মূলত বড় জোর ব্লিঙ্কেনের সাথেই দেখা করতে যেতেন। তবু কোনভাবেই পিটার হাস ভারত-মার্কিন ২+২ সভার কেউ হতেন না। কারণ তিনি এর কেউ নন।
আর তাতেও কী কী ‘সত্য না’ থেকেই যেতঃ
১। পিটার হাস ২+২ সংলাপ-সভার কেউ নন, হবেনও না। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত মাত্র!
২। এখানে ২+২ সংলাপ মানে আসলে কী? তা হল, ভারত-মার্কিন দুপক্ষেরই দুই পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সাথে ভারতেরও পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, ( তাই, ২+২) – একসাথে ডাকা নিয়মিত সভা – এমন সভার কাঠামোর নাম হল ‘টু প্লাস টু’ মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপে; যা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। এর উদ্দেশ্যে ছিল প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারত-মার্কিন একসাথে কাজ করা কার্যত যা, ভারতকে আমেরিকান অস্ত্র বিক্রি এবং কী কী শর্তে বিক্রি সেসব নিয়ে আলোচনা। কারণ রাশিয়ার কী কী অস্ত্র ভারত কিনলে আমেরিকা অস্ত্র ভারত পাবে না সে তর্ক আছে। আর দ্বিতীয়ত, পারস্পরিক সামরিক রিসোর্স ও স্টোর-গুদাম শেয়ার করতে পারে কিনা যা পরে পূরণ করে দেয়া হবে এধরণের এক আলাপের সম্ভাব্যতা যাচাই দিয়ে এই সংলাপ শুরু হয়েছিল। সুতরাং বলাই বাহুল্য, এই সংলাপে বাংলাদেশে কোন ইস্যুই না। এটাই আমাদের জন্য মূল কথা। একারণেই বলছি পিটার হাস ‘টু প্লাস টু’ সংলাপের কেউই নন।
৩। মনে রাখতে হবে ২০১৮ সাল মানে সেটা ট্রাম্পের আমল। আর এবার বাইডেনের আমলেই এই সভাতেও এবার যুক্ত করা হয়েছে ইন্দো-প্যাসেফিক ইস্যু। যা আসলে এশিয়ায় চীন ইস্যুতে ভারত-মার্কিন একসাথে কাজ করতে পারে কিনা, কতটুকু? এনিয়ে তাঁদের আলোচনা। অর্থাৎ, এখানে এটাতেও বাংলাদেশ কোন ইস্যু-ই না!
মূল কিছু কথা হাতে গুনে মনে রাখতে হবেঃ
এক. এশিয়ায় বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতকে নিয়ে আমেরিকা আর যৌথ কিছুই করবে না। যেটা ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া ঘটেছিল। সে সময় এক্ষেত্রে আমেরিকান লক্ষ্য ছিল ভারতকে চীন ঠেকানোর কাজে ব্যবহার করার ঠিকা দেয়া। সেই ঠিকা দেয়া-নেয়া এখন ওভার! মানে শেষ বা ইতিটানা হয়েছে। যার প্রাথমিক কাজটা করে রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭ সালেই। তিনি এই ঠিকার বিনিময়ের বস্তুগত সুবিধায় ভারতকে আমেরিকায় (কম বা না-শুল্কে) ১৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি সুবিধা বাতিল করেছিলেন। আর পুরা এসাইনমেন্ট-ঠিকা অবলুপ্তি ঘটিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তবে এসাইনমেন্ট বা ঠিকা দেওয়াটাও যেমন আনুষ্ঠানিক ভাবে দেয়া যায় না (এসব কাজ পাবলিকলি করা হয় না) সম্ভব ছিল না; সেকারণে এই ঠিকা বাতিল টাও আনুষ্ঠানিকভাবে করার কিছু নাই। যদিও এতে ঠিক কি ঘটেছে সেটা আমরা জেনেওবুঝে নিতে পারি বাস্তবতা দেখে। এর আগে আমার পুরানা লেখায় বিরোধী কংগ্রেস নেতা শশী থারুর লেখা থেকে – এই ঠিকা দেওয়ার – রেফারেন্স আছে আমি দেখিয়েছিলাম! আলী রিয়াজেরাও এটা স্বীকার করতে চায় নাই!
তবুও এর স্বপক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল, বাইডেনের নয়া নীতি-পলিসিগুলো যদি খেয়াল রাখি। যেমন বার্মা এক্ট, বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর রাখার আগ্রহ কিংবা আন্দামান নিয়ে আমেরিকান পরিকল্পনা (ও আমেরিকান খায়েসও বলতে পারি) ইত্যাদি এসবের দিকে যদি নজর রাখি। এসব কোন ইস্যুতেই ভারত আমেরিকার খায়েসের সাথে চলতে পারবে না – ভারতেরও ঘোষিত নীতি-পলিসি এর বিরোধী। তাই এখানে এসে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক – এই কবি এখানে নীরব থাকবে। ভারত আমেরিকান খায়েস-কে আপন করে নিতে পারবে না শুধু না বরং ভারতের অবস্থান এর চরমতম-বিরোধী! এমনকি ২০২৪ সালে যদি মোদির পরাজয়ে রাহুল বা অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে সেক্ষেত্রেও আমেরিকান খায়েস সম্ভবত পূরণ হবে না! এককথায়, আমেরিকান খায়েস – এই ইস্যুটার ভাগ্য অনিশ্চিত!
সুতরাই এককথায়, বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় আসবে বা থাকবে এই প্রশ্নে আমেরিকান অবস্থান আর কখনও ভারতের সাথে শেয়ার করে এই সিদ্ধান্ত আমেরিকা আর গ্রহণ করবে না। অর্থাৎ সেটা হবে আমেরিকার একক সিদ্ধান্ত।
দুই. কিন্তু তাই বলে কী এশিয়ায় চীনবিরোধী অবস্থান, স্বার্থ ততপরতা প্রশ্নে ভারত-আমেরিকা কমন স্বার্থেও কোন সম্পর্ক বা এক সাথে কমন স্ট্রাটেজিতে কাজ সব নাই হয়ে যাবে? অবশ্যই না। এটা থেকেই যাবে কারণ এটা আলাদা ইস্যু। এমনকি বাংলাদেশে হাসিনার সাথে চীন কী সম্পর্ক রচনা করছে তা নিয়েও ভারত-মার্কিন আলাপ হতে পারে কিন্তু সেটা হবে – বাংলাদেশের ক্ষমতায় কোন সরকার থাকবে সেই প্রশ্ন বাদ দিয়ে – যেটা একান্তই আমেরিকার একক বিষয় হয়েই থেকে যাবে!
আমাদের সমস্যা হল, কেন ভারত হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখার পক্ষে থাকছে সেটা আমরা ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালের সংঘাত ও প্রেক্ষিত থেকে দেখা বুঝা করি। যেন এর বাইরে অন্য কোন কারণ থাকতেই পারে না। ব্যাপারটা যেন হিন্দু-মুসলমানের পুরানা বিরোধই! আমি সবাইকে অনুরোধ করব একটু অন্যদিক থেকেও দেখেন! প্লিজ!!
তিন. তবে এক্ষেত্রে মানে ভারত-মার্কিন সংলাপে কিছুটা গোলমাল পাকিয়ে ফেলতে পারেন ডোনাল্ড ল্যু (সবাই নয়)। তিনিই এবার ‘টু প্লাস টু’ সংলাপের মধ্যে ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি বা আইপিএস (IPS) ঢুকিয়ে ফেলার মূল কারিগর। বাইডেনের ইলেকশনী প্রচার স্ট্রাটেজি সাজানোর সময় থেকেই নির্ধারিত ল্যু-এর এই অবস্থান ও পদ। কিন্তু সরি ল্যু! সো ফার তার সাকসেস প্রায় জিরো! পাকিস্তানে আর সর্বশেষ হাসিনার বাংলাদেশে ল্যু-এর আইপিএস স্ট্রাটেজির এর অর্জন শুন্যই বলা যায়। তবে এবার তিনি ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। আর খুব বেশি এটা আগাবে এমন সম্ভাবনা কম!
চার. ভারত চাইবে এই আলাপের ছায়ায় এক ফাঁকে চীন ঠেকানোর ঠিকাদারি-টা আবার পাওয়া যায় কিনা! সেদিকটা উস্কে তুলতে; আবার যদি লাইগ্যা যায় – আর কী! একদম আগের মতই না হলেও ভিন্ন মোড়কে অথবা কিছু অংশের কাজ!
কিন্তু না। আমেরিকা এদিকে ভারতকে আবার এই ইস্যুতে ছাড় বা ঠিকা দিবার জায়গা এবং পরিকল্পনা কোনটাই নাই। আর তা থেকেই আলোচনায় ভারত বিরোধাত্মক ইস্যুগুলোকে সামনে তুলতে শুরু করে ফেলতে পারে। তাহলে, ভারত-আমেরিকার এবারের সংলাপ মোদির শেষ জমানা খারাপ পরিণতি ফলাফলের দিকে রওনা দিবে!
পাঁচ. অথচ বিবিসি লিখেছে, “বৈঠকে দুই দেশের চারজন মন্ত্রী মিলে সার্বিকভাবে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি’ নিয়েও আলোচনা করবেন বলে ডোনাল্ড লু নাকি মন্তব্য করেছেন। কিন্তু এই প্রসঙ্গে কোনও বিশেষ দেশের নাম তিনি উল্লেখ করেননি। আসলে দোনাল্ড ল্যু এর বরাতে যা যা বিবিসিতে শুভজ্যোতি লিখেছেন এর সবটাই মিথ্যা প্রপাগান্ডা! তাই কোন রেফারেন্স এখানে নাই যে ল্যু এসব কথা কোথায় বলেছেন???
এসব কথা থেকে পরিস্কার যে বিবিসির এই কথিত রিপোর্ট একেবারেই ভুঁয়া। ঘরে বসে ইচ্ছামত বানানো! ভারত-মার্কিন সংলাপে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি’ নিয়ে কোন আলোচনা এমনিতেই হওয়ার সুযোগ নাই। কারণ, ১। তা সংলাপ কাঠামোর মধ্যে পরে না। ২। এসময়ে ভারত বা বাংলাদেশের কারো ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি’ নিয়েই আলোচনা তোলাটাই ভারতের জন্য রিস্কি। কারণ, তাতে ভারতের নিজের ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি’ নিয়েও আলোচনা উঠে যেতে পারে।‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি’ ইস্যুটাই মোদির জন্য সেনসেটিভ। সেই খবর যার নাই তিনি বিবিসির এই মনগড়া রিপোর্ট লিখতে গেছেন বলেই এই সমস্যা।
তাহলে কী দাঁড়ালোঃ
‘টু প্লাস টু’ সংলাপ নিয়ে আজ বাংলাদেশ প্রসঙ্গের নামে যা কিছু হয়েছে এর কোন বিশ্বাসযোগ্যতাই নাই। বিশেষ করে বিবিসি এনিয়ে অপরাধী-সাংবাদিকতা করেছে।
কিছুক্ষণ আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কাত্রার বয়ানে মানবজমিনে যা ছাপা হয়েছে সেটার উপর বিশ্বাস মানবজমিনও রাখে নাই; এমন না রেখেই মানবজমিন এই রিপোর্ট ছেপেছে।
আবার ভারত-মার্কিন যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কাত্রার আবার বক্তব্য কেন? তিনি কিভাবে এটা দিতে পারেন? উনি কে এখানে? দুই পররাষ্ট্র-মন্ত্রীর যৌথ বক্তব্যের পরে তিনি কে?? কী তার প্রটোকল????
ভারতের চেষ্যেটা হল, গায়ের কাপড় খুলে গেলেও ন্নযাংটা হয়েও যদি হাসিনার ক্ষমতাকে যেকোন উপায়ে কিছু প্রাণ পাইয়ে দেয়া যায় কীনা – এরই এক মিথ্যা প্রাণান্তকর প্রয়াস!
ভারতের এই খামোখা প্রচেষ্টা উলটা হাসিনা ও লীগের বিরুদ্ধে যাবার সম্ভাবনাই বেশি! মানুষ বিরক্তবোধ করবে, যে এত মিথ্যা বলার কী দরকার! মিথ্যা কারো সঙ্গি হয় না!
সর্বশেষ আপডেটঃ ১১ নভেম্বর ২০২৩, দুপুর ০১ঃ ৩৫
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

