আসলে সিপিএম এর সাথে মমতাও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে


আসলে সিপিএম এর সাথে মমতাও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে
গৌতম দাস
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪   দুপুর ১২ঃ ৩৩
https://wp.me/p1sCvy-5UX

 

বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তি সেনা পাঠানো হোক, চান মমতা

 

গতকাল ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার অফিসে হামলা হয়েছে। যার সোহা বাংলাটা হল, মোদি-জয়শঙ্কর এর গ্রাম্য মোড়লের মত চিন্তায় এই হামলা করিয়েছেন, হতে দিয়েছেন। আবার ঘটনা ঘটানোর পরে মাফ চাইতেছেন।
মোদি-জয়শঙ্কর কে গ্রাম্য মোড়লের বোকা-চিন্তা বললাম এজন্য যে যেন এরা ধরে নিয়েছেন যে ঢাকার মানুষেরা ভারতীয় হাইকমিশনের অফিস কোথায় চিনে না, ঢাকায় প্রণয় ভার্মা কোন বাসাতে থাকেন তা ঢাকার মানুষেরা জানে না! অথবা মোদি-জয়শঙ্কর এর মত এসব স্থানগুলোতে একটা হামলা ঘটিয়ে দিয়ে এরপর আমাদের পররাষ্ট্র  উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বোধহয় কম নাটুকেপনা করতে পারবেন!!!
একমাত্র মোদি-জয়শঙ্কর এর মত মফস্বলি চিন্তার লোকেরাই এমন ভাবতে পারে।  বিশেষ করে মফস্বলি রাজনীতিতে বিজেপি-আরএসএস এর ট্রেনিং পাওয়া মোদি এমনটা ভাবতে পারেন। কিন্তু জয়শঙ্কর??? উনি তো পেশাদার কূটনীতিক ক্যাডার ছিলেন! কাজেই উনার তো জেনেভা কনভেনশনের আইন-নিয়মকানুন না জানার কোন সুযোগই নাই! এর অর্থ তিনিও নিজ পদমর্যাদা ভুলে মোদির পা-চাটার জন্য মোদির মফস্বলি খায়েশ পূরণে সম্মতি দিয়েছেন???
আগরতলায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার অফিস মানে জেনেভা কনভেনশন অনুসারে ওটা বাংলাদেশ-ভুখন্ড সমতুল্য গন্য করতেই হবে; এই স্থাপনা যেকোন ভারতীয়ের আক্রমণ দূরে থাক স্পর্শ থেকেও দূরে রাখতে হবে ভারত সরকারকে। সেকাজে যা যা নিরাপত্তা লাগে সব যোগান ভারত-সরকার দিতে বাধ্য, এমন লিখিত প্রতিশ্রুতির পরে বাংলাদেশে সেদেশে গিয়েছে!  কাজেই এখানে সরি বলবারও কোন অবকাশ নাই!
মোদি-জয়শঙ্কর যদি মনে না রাখেন যে এপর্যন্ত প্রতিবার এমন ঘটনাগুলোতে বাংলাদেশ সরকার তার নিজ জনগণকে মটিভেট করে যেকোন ভারতের উস্কানিতে শান্ত থেকেছে। গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে সরকারের কর্মি আদালতে সরকার নিজ বা বাদিপক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনে আদালতে নিয়োজিত কর্মী যাকে পাবলিক প্রসিকিউটর বা সংক্ষেপে পিপি নামে ডাকা হয় – সেই পিপি সাইফুল ইসলাম আলিফ কেন আদালতে ইসকনের চিন্ময় এর জামিনের বিরোধিতা করল এই অজুহাতে আলিফ কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব গুন্ডামি কী বাংলাদেশের মানুষ কম জানে? কিন্তু বাংলাদেশের সরকার ও আম-জনগণ এরপরেও নিজেদের সংযত রেখেছে – পরেরদিনের চারচারটা জানাজার আয়োজন করেছে চট্টগ্রামবাসী; এভাবে তাদের মনের ক্ষোভ, দুঃখ বেদনা মানসিক চাপ ইত্যাদি সবকিছুকে ঐ জানাজার মধ্যে দাফন করে দিয়ে আম-জনগোষ্ঠির এক  জন-ঐক্য  সৃষ্টি  ও দায়ীত্বপুর্ণ আচরণে সবাইকে পরিচালিত করে আমরা উঠে দাড়িয়েছিলাম – এক অনন্য নজির করেছিল সেদিন!

অথচ মোদি-জয়শঙ্কর এর মফস্বলি আচরণের মত একটু ইশারাই কী যথেষ্ট ছিল না?  – মুহুর্তের মধ্যে ইসকন-চিন্ময় গং চিহ্ন লোপাট হয়ে যেত না? রক্তের বন্যায় আমরা এরপরে কোনপক্ষই আর কেউ নিজেদের কাছেই মানুষ হিসাবে মুখ দেখাতে পারতাম না!  কিন্তু আমরা সেসব দিকে যাই নাই, সেসবের কিছুই করি নাই!  নিজেদের সংযত রেখেছি। যদিও বারবার মোদি-জয়শঙ্কর আমাদেরকে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে! আমরা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে সব বিদেশি কূটনীতিকদের মাধ্যমে সারা দুনিয়াকে সব ঘটনাই জানিয়েছি।  মোদি-জয়শঙ্কর আপনারা কিছু পেটি-স্বার্থে আর কত নিচে নামবেন? বাংলাদেশ আপনাদের কোন হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি বা স্বার্থের কাছে মাথা ঝুকাবে না!
এখানে সবচেয়ে বড় তামাশাটা হল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলেরা যারা প্রতি মুহুর্তে গত দুশ বছর ধরে মুসলমান মানেই নিচা মানুষ, এরা জঙ্গি পশ্চাদপদ ইত্যাদি তাই মুসলমানকে তাদের পায়ের নিচে দাবায় রাখতে হবে বলে প্রোপাগান্ডা-বয়ান খাড়া করে গেছে – যে প্রপাগান্ডার মুখ্য শব্দ বা কয়েন করা শব্দ হল সাম্প্রদায়িকতা – কিছু হলেই হিন্দুত্ববাদ যাকিছুই অপরাধ করুক উস্কানি দেক না কেন আমাদের হিন্দুত্ববাদকেই রক্ষা করতে হবে মানে  আমাদেরকেই তথাকথিত অ-সাম্প্রদায়িক হয়ে থাকতে হবে। মানে হিন্দুত্ববাদ এর কোন দোষ-অপরাধ নাই, ওর এর গায়ে টোকাও দেয়া যাবে না, উল্টা রক্ষা করে যেতে হবে। আর এটাই কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল অ-সাম্প্রদায়িকতা রাজনীতি ও অবস্থান!  এতে আসলে প্রমাণ হয় যে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল নামের আড়ালে এরাই প্রকৃত হিন্দুত্ববাদী একারণেই এরা সবাই এখন মোদি-জয়শঙ্করের ভারতের মফস্বলি আচরণ ও উস্কানির বিরুদ্ধে কোন টু-শব্দ নাই; প্রথম আলো নিঃশ্চুপ, এই ইস্যুতে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী [কোন ৩৪জন বুদ্ধিজীবীর প্যাকেজ] এদেরকে আর দেখা যাচ্ছে না। এরা মুখে তালা দিয়ে কোথায় যেন লুকিয়ে বসে আছে!!! কী সুন্দর  বাংলাদেশ তাই না!!!  যেখানে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলেরা মোদির হিন্দুত্ববাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে ততপর থাকে! 

এটা কী সুন্দর  বাংলাদেশ তাই না!!!  যেখানে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলেরা অবলীলালায় মোদির হিন্দুত্ববাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে ততপর থাকে! আর উলটা আমাদেরকেই কথিত ‘অসাম্প্রদায়িক’ থাকবার বাণী শোনায়!!!!  

আরেক মফস্বলি মমতা বন্দোপাধ্যায়ঃ
কলকাতার আরেক মফস্বলি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, তিনি বাংলাদেশকে জাতিসংঘ শান্তিবাহিনীর অধীনে নিতে চান! এখানে দেখেন বিবিসির নিউজ। 
আরে ভাই আগে  জাতিসংঘ কী, শান্তিবাহিনী কী – এগুলো কী খায় না মাথায় দেয় – সেটা জানেন! জানার পরেই না হয় মুখ খুলেন? নাকি?
এখন বাংলাদেশের মিডিয়া স্বাধীনতা মানে হল হিট বাড়ানোর জন্য সত্য-মিথ্যার পরোয়ার দরকার নাই। জার্নালিজমের নীতি মানা হচ্ছে কিনা পরোয়ার দরকার নাই!  কারণ, ওয়েবে যত বেশি দর্শক-পাঠক কে উস্কানি তুলে ডেকে নিয়ে আসো কোন অসুবিধা নাই, আর এটাই তো এভাবে হিট বাড়িয়ে অর্থ কামানোর সহজ পথ!  এই হল, এখনকার বাংলাদেশের মিডিয়া স্বাধীনতা  আর প্রথম আলো যেখানে যার আদর্শ ও মডেল! শুধু তাই নাই আমাদের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ মির্জা ফকরুল এখন খোলাখুলি র-এর এজেন্সি নিয়েছেন। তিনিওই আগামি সংসদের যারা আসন ভিক্ষা করেন এমন সবদলকে আসন ভিক্ষা দিবার নেতা কারণ তার হাতে র-এর এজেন্সি এসে গিয়েছি। আর তাই এমন সম্ভবত ২১টা মানে প্রায় সব নির্বাচনি দল এখন ফকরুলের নেতৃত্বে এমন এই প্রথম আলো মার্কা  বাংলাদেশের মিডিয়া স্বাধীনতার পক্ষে খাঁড়ায় গেছে। এটা হল পাঠকে বিক্রি করে দেওয়ার মিডিয়া স্বাধীনতা। তার মানে, এরা কী সাংঘাতিক গণতন্ত্রী! আপনারা চিন্তা করতে পারেন……।
তো বাংলাদেশের এমন দুই “স্বাধীন মিডিয়া” – প্রথম আলো আর মানবজমিন – তাদের আবার আজকাল নাকি কলকাতার সংবাদদাতাও আছে!  ফলে মমতার বক্তব্যকে কত সেনসেটিভ বা হাইপ তুলে রিপোর্টটা করা যায় সেদিকে এরা ব্যস্ত হয়ে উঠে। এমন জব্বর খবর – এই পয়সার মাল –  এটা নিয়ে উত্তেজনা উঠানোর (মানে অঢেল অর্থ বা হিট কামানোর) সুযোগ তো হাতছাড়া করা যায় না?
কিন্তু এতে সবই হয়েছে আর খোদ জার্নালিজম টাই বাদ হয়ে গেছে!

প্রথম কথা হল, এই মিডিয়া স্বাধীনতা ওয়ালারা খেয়ালই করেন নাই যে – মমতার কথাগুলো অসামঞ্জস্যপুর্ণ। বাংলায় যেটাকে আমরা বলে কথার মধ্যে তাল নাই। একেকবার একেক অর্থ করে কথা বলেছেন। উনি কার কথা কাকে নিয়ে বলছেন তাই আউলায়ে ফেলেছেন। অথচ এদিকটা  সেটাই কেউ সামনে আনে নাই, গুরুত্ব দেয় নাই। প্রথম আলো আর মানবজমিন  এর নিউজ পাবেন এখানে।
সবার আগে মমতার কথাগুলো যে অসামঞ্জস্যপুর্ণ তা নিয়ে অন্তত একটা বাক্য খরচ করেছে বিবিসি বাংলা।

“……এ জাতীয় ঘটনা (সহিংসতার) ঘটতে থাকে তাহলে আমরা আমাদের লোকেদের ফিরিয়ে আনব। সরকার উদ্যোগ নেবে। তারা ফিরে আসলে থাকার, খাওয়ার কোনও সমস্যা হবে না। কোনও ভারতীয়ের উপর অত্যাচার হবে সেটা আমরা হতে দিতে পারি না।”

উপরের এই বাক্যগুলো ছিল মমতার মূল কোট-আনকোট বক্তব্য। এখানে মমতার ধারণা বাংলাদেশে গত ৫ আগষ্টের কথিত হিন্দু নির্যাতন হচ্ছে মোদি, ইসকন ইত্যাদি এদের যে প্রপাগান্ডা ভারত সরকার করছে তাতে মমতার ধারণা কথিত যে নির্যাতন তা ভারতীয় হিন্দুদের উপর হচ্ছে।  এখন এতে যে বিভ্রান্ত তা হল,
এক. নির্যাতিতরা ভারতীয় হিন্দু হলে তারা বাংলাদেশে বসে থেকে নির্যাতন খাইতেছে কেন?
দুই. মমতা তো কথিত নির্যাতিতদেরকে  আমাদের লোকেদের  বলেছেন। আমাদের লোকেদের ফিরিয়ে আনব – বলেছেন???? আরো পরিস্কার করে পরের বাক্যে বলেছেন, ভারতীয়ের উপর অত্যাচার হবে সেটা আমরা হতে দিতে পারি না। তাহলে?
তিন. মমতা আসলে বেদিশ [বেদিশা] হয়ে গেছেন! সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে ভারতীয় হিন্দুরা এদের থাকাটাই তো অপরাধ! নাকি? এর কী হবে?
চার. নাকি মমতা মোদি-বিজেপি-আরএসএস এর ভক্ত হয়ে উঠেছেন?  সেটা এই কারণে যে – “সারা দুনিয়ার হিন্দুদের (তিনি যে দেশেরই নাগরিক হন না কেন, সে হিন্দুর) রক্ষকর্তা একমাত্র মোদি, মোদির সরকার – ইদানিক এই বক্তব্য রেখেছে তারা বিবিসির এক রিপোর্টে; এখন মমতা কী সেই বক্তব্যের ভিক্ত অনুসারি হয়ে উঠেছেন? আর সেকারণেই বাংলাদেশে কথিত নির্যাতিত হিন্দু সে বাংলাদেশি / ভারতীয় সকলের রক্ষাকর্তার দায়ীত্ব তো মহান ভারত ও মহান মোদি নিয়েছে – ফলে এখন মমতাও মহান মমতা হয়ে সেই দায় বোধ করে কথা বলছেন! তাই কী????

এসবেরই সারকথা, একটা ইস্যুতে কোন ঘটনা-বিবরণ না জেনেই লাঠি হাকিয়ে দেয়া বলতে যা বুঝায় মমতা তাই করে স্টুপিড হয়ে গেছেন!
আর সেকারণেই ব্যাপারটা নজর করেছে বিবিসি তারা বুঝাতে চাইছে মমতার এই স্টুপিডিটি এই বিবৃতির সাথে বিবিসি নাই; তার এর কোন দায় নিচ্ছেনা।
আর তাই ঐ রিপোর্টে বিবিসির মন্তব্য বা সতর্কবার্তা লিখাছে যে  ‘ভারতীয়দের উপর অত্যাচার’ বলতে তিনি কাদের বুঝিয়েছেন, তা ওই বক্তব্যে পরিষ্কার করেননি। মানে বিবিসি এই “কথা হয় না কথার” কোন দায় নেয় নাই। 

অথচ আমাদের বাংলার স্বাধীন মিডিয়া এসব বাদ দিয়ে মমতা শান্তি রক্ষী বাহিনী দেয়েছে এদিকে পাটয়হককে নিয়ে গেলেন। অথচ, বাংলাদেশি পত্রিকা হিসাবে মমতা কে দেখার ও তার বক্তব্য-চিন্তার মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে স্টুপিড চিন্তা কাজ করছে সেদিকে চোখ ফেলে নাই। মমতার কথা যে মৌলিকভাবে অসামঞ্জস্যপুর্ণ এদিকটা যেন তারা দেখেই নাই অথবা এদিকটা নিজ নিজ পত্রিকা পাঠককে সাবধান করে দেয়া যেন তাদের দায়ীত্ব না। সলে তারা আছে হিট কামাতে আর এতে পরোক্ষে হিন্দুত্ববাদের  অসাম্প্রদায়িকতা জাগিয়ে রাখতে।
তবে প্রথম আলোর কলকাতা রিপোর্টার একটা বাড়তি তথ্য দিয়েছেন সেকথা আসছি।

মমতা কেন এমন পোলাপানি বিবৃতি দিতে গেলেনঃ
পুরা কলকাতায় তো বটেই ভারতের এখনকার রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদকে প্রধান করে তুলেএনেছেন মোদি সরকার এন্ড গং।  আর বাকি দলগুলো এই হিন্দুত্ববাদ করে সাজানো মোদির নির্বাচনি রাজনীতিকে আপন করে নিয়েছেন বা আত্মাহুতি দিয়েছেন। এর পিছনের মূল কারণ ভারতের রাজনীতিটাই গড়ে উঠেছে সেই ১৮১৫ সাল থেকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষে, কখনও আবছা বা স্পষ্ট করে, মূলত হিন্দুত্ববাদ কে কেন্দ্র করে।  ভারতের সব রাজনীতিই কমবেশি হিন্দুত্ববাদ প্রভাবিত। যেমন এথেকে কমিউনিস্ট সিপিএমও এর বাইরে না। বরং সবসময় হিন্দুত্ববাদকেই সামনে আনার ক্ষেত্রে শীর্ষভুমিকা পালন করে গেছে। অনেকের শুনে অবাক লাগতে পারে কথাটা। কিন্তু এনিয়ে একটা রেফারেন্সই যথেষ্ট।  সেটা হল, কেন সুশোভন সরকার বেঙ্গল রেনেসাঁ নামে বইটা বের করেছিলেন? [বইটার গুগল পিডিএফ-ও পাওয়া যায় নেটে তবে ইংরাজিতে ] আর কেন এই বইটায় খোদ কমিউনিস্ট পার্টি (যার একচুয়াল ততপরতা ১৯৩৫ সাল থেকে শুরু হয়েছিল) সেকালে সাপোর্ট দিয়েছিল, পার্টি সেক্রেটারি পিসি যোশী একটা ভুমিকা লিখে দিয়েছিলেন? কেন? আর ঐ বইয়ে কী আছে? বিশেষ করে হিন্দুমেলার চাপ্টারটা?? এটা কজন পড়েছেন?
এটা প্রমাণ করে খোদ কমিউনিস্ট পার্টি টা শুরুই হচ্ছে হিন্দুত্ববাদকে সাথে নিয়ে।

যাই সেকথা, প্রথম আলো মমতা নিয়ে লিখেছে, “……গত ২৮ নভেম্বর সিপিআইএমের পলিটব্যুরো বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ শান্তি সেনা পাঠানোর প্রস্তাব করলেন”।
এটাই হল সেই গুরুত্বপুর্ণ দিক। মমতা মনে করেন কলকাতার ভোটের রাজনীতিতে তার প্রধান বয়ান-রাজনীতি বা ইডিওওলজির দিক থেকে প্রধান প্রতিপক্ষ-এনিমি হল সিপিএম। এর পাল্টা সিপিএম আরো বেশি করে মনে করে মোদি-বিজেপি নয়, সারা ভারতে তাদের প্রধান রাজনীতির এনিমি হল মমতা। কারণ মমতাই তাদের ৩০ বছরের কলকাতার ক্ষমতা থেকে উপড়ে ফেলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতায়। শুধু তান না একারণে, সিপিএম তার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের প্রশ্নে মোদির কোলে উঠে বসতেও বা অপ্রকাশ্য এলায়েন্স করতেও রাজি। করেছেও তাই।
আর সেকারণেই তারা মোদির হিন্দুত্ববাদি রাজনীতির পক্ষে সিপিএম এই মিথ্যা দাবিতে মোদি সরকারের অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছে। দেখতে যায় নাই যে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের এই উন্মাদনা কেন সত্যি না। সেটা ইনডিপেন্ডেন্টলি ভেরিভাই করতে যায় নাই, চাই নাই। এতে সারা ভারত হিন্দু ভোটের লোভে মোদি যেন হিন্দুত্বের শুরসুরি দিয়ে সব নিয়ে যা যায় সেটা ঠেকাতে তারা সকলে কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, সিপিএম ও মমতা ইত্যাদি লাইন ধরে হিন্দুত্ববাদের রাজনীতিকে আপন করে নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। সত্য-মিথ্যা বা ফ্যাক্টসের ধার ধারে নাই। মূলত সিপিওএম এর বিবৃতির পরে মমতাও বিবৃতি দিতে অস্থির হয়ে পড়েন।

এমনকি যেখানে দুদিন আগেও মমতা বলেছিলেন্, এটা কেন্দ্রের মানে কেন্দ্রীয় মোদি সরকারের দেখভালের ইস্যু। তাই তিনি এনিয়ে তেমন কিছু বলতে চান না। অথচ নিজের বক্তব্যের বিরোধিতা করেই তিনি শান্তিবাহিনী ডাকার বিবৃতি দফিয়ে ফেলেছেন। যেন শান্তিবাহিনী হিন্দুসেনা সব!!!!! ডাক দিলেই এসে যাবে!  প্রথম কথা এই শান্তিবাহিনী বসানোর অর্থ কী ভারত দিবে? বইতে রাজি আছে? বাজারে ডালের দাম না জেনে প্লেটের ভাতে বিরাট এক গর্ত করেছে ডাল নিবে বলে………!!! এদেরকে আর কী বলব?

সারকথায়, যতদিন ভারতের যেকোন দল, কেন হিন্দুত্ববাদ বিরোধিতা করতে হবে, আর তা কী করে এনিয়ে চিন্তা-ততপরতায় সোচ্চার না হবে ততদিন এদের কারো মুক্তি নাই। ভারত ভাঙনের দিকে এগিয়ে যাবেই। এথনিক জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদী চিন্তার  হিটলারের উতখাত ছাড়া যেমন জর্মানির প্রতিবেশি কোন ইউরোপীয় রাষ্ট্রে শান্তি  তো বটেই সারা দুনিয়ায় শান্তি আসে নাই, দুনিয়াতে শান্তি আসে নাই; ঠিক সেরকম মোদির ভারতও এশিয়ার হিটলারই হয়ে উঠবে ক্রমশ!
আর ২৯% মুসলমান ভোটের উপর দাঁড়ানো মমতাও কেবল হারতেই থাকবেন; উলটাপালটা বকবেন তাতে কোন লাভ হবে না!

 

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪  দুপুর ০১ঃ ২৩  

আপডেটঃ    ২০২৪  

Leave a comment