জ্যাক সুলিভান এর ভারত সফর; আমাদের শঙ্কা, কানও খাড়া
গৌতম দাস
০৬ জানুয়ারি ২০২৫ সকাল ১১ঃ ৪৮
https://wp.me/p1sCvy-69K
জ্যাক সুলিভান [Jake Sullivan] , চলতি বাইডেন প্রশাসনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজার [NSA]; যারা আর দুসপ্তাহ ক্ষমতায় আছেন।
সুলিভান বর্তমানে ইন্ডিয়া সফরে আছেন তার ৫-৬ জানুয়ারি ২০২৫ সফর কর্মসুচিতে। প্রশ্ন উঠেছে ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র দুসপ্তাহ আগে কেন তিনি ইন্ডিয়া সফরে?
আমাদের শঙ্কা, কানও খাড়াঃ
ইন্ডিয়া-আমেরিকার যে কোন ছোট বা বড় মাখামাখিতে তা সবচেয়ে রুটিন কোন সফর হলেও বাংলাদেশে আমরা কান খাড়া রাখি! আপনাতেই! কারণ গত ১৬ বছর আমাদেরকে অত্যাচার নির্যাতন, স্বার্থ-অর্থ লুট, বাজার দখল, বিনা পয়সার করিডোর, জঙ্গি নাটক সাজানো; এমনকি বাংলাদেশ রাষ্ট্র বলতে কার্যত যেসব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের প্রতীক এমন সেনাসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কী নাই যা ইন্ডিয়া ধ্বংস করে দেয় নাই – এসব আমরা দেখেছি। আর ইন্ডিয়া তা করে যেতে পেরেছে কারণ আমেরিকা বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল এককালে, সেই ২০০৭ সাল থেকে। যদিও এতে পরে ভাটা পরেছে আমেরিকার দিক থেকে, ২০১৬ সালের পর থেকে; মানে, এতে ইন্ডিয়ান আগ্রাসী-পনা কমিয়েছে হয়ত, যদিও ট্রাম্পের আগের আমলে তা ছেড়ে দেয় নাই। মূল আধিপত্য ইন্ডিয়া কখনও বাংলাদেশের উপর থেকে সরে নাই। এমনকি ট্রাম্পের পরে বাইডেন প্রশাসন এসে ভাব ধরেছিল তিন বছর ধরে যেন সে হাসিনার ফ্যাসিজম ভাঙতেই স্যাংশন-মানবাধিকারের অস্ত্র ব্যবহার করতেই এসেছে। মানে যাতে এর ফলে বাংলাদেশের মানুষেরা একটা নুন্যতম রাজনৈতিক অধিকার পায়, আমাদের বিরোধীদল রাজনীতির মাঠে বের হতে পারে। আর এই তিন বছর হাসিনা যতটা পারে নিজের ফ্যাসিজমে অটুট থাকার চেষ্টা করে গেছে ইন্ডিয়ার নিরন্তর সমর্থন -সহায়তায়। আর সেই সাথে প্রায় এই তিন বছর (২০২১-২৩) ইন্ডিয়া এই বলে বাইডেন প্রশাসনের কানভাড়ি করে গেছে যে আগের মতই ইন্ডিয়ার মাথায় আমেরিকান হাত থাকলে বিনিময়ে হাসিনা এবার আরও ভালভাবে আমেরিকাকে সেবা দিবে!
কিন্তু হায়! শেষে তাতেও বাইডেনের আমেরিকা প্রতারণা করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ল্যু-বাইডেন চক্রের নাম ইতিহাসে প্রতারক চক্র হিসাবেই লেখা হয়ে গেছে। মধ্য ২০২৩ সাল থেকে ইন্ডিয়া- ল্যু-বাইডেন চক্র আবার সঙ্গোপনে একজোট ও সক্রিয় হয়, একেবারে ভাই-ভাই! তাতে হাসিনাকে ক্ষমতাসীন করতে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন করতেও সহায়তার এক নয়া ডালি খুলে বসেছিল এই চক্র।
সব থিওলজিক্যাল “কিতাব” সেখানে দাজ্জাল বা অনুরূপ দানবের উত্থান ও পরিণতির বর্ণনা আছে যা আসলে দুনিয়ার সাধারণ বা আম-মানুষযারা সারা জীবনে এতশত নির্যাতনের পরেও আত্মহত্যা না করে কষ্ট সহ্য করে হলেও বেঁচে থাকে – কেন? কারণ তাঁদের বাঁচার সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগানদার হল এসব দাজ্জালের গল্পকথা! এটাই সাহস যুগিয়ে গেছে সারা জীবন! আর এসব কথার মূল ধারণাটা হল, একদিন না একদিন ডিভাইন-বিচারের দিন আসবে – অথবা এই দুনিয়াতেই হয়ত আল্লাহ বিচার করে দিবেন; সব দাজ্জাল বা হাসিনার ফ্যাসিজম পরিণতির দিনে পৌছাবে তাতে – দুনিয়ায় যত অত্যাচারই আসুক এই আশার আলো জাগিয়ে রেখে গেছে এসব মেটাফোরিক্যাল গল্পকথা! একারণে, এসব সব থিওলজি-কেই বুকভরা শ্রদ্ধা ও সালাম জানাই!
আর তাতে আমরা সেসময় দেখলাম হাসিনা ৭ জানুয়ারি ইলেকশন ক্য্যারিকেচার করে ফেলেছে আর সাথে বাইডেনও নির্লজ্জ পল্টি মেরে সেই হাসিনার সাথেই তারা একসাথে কাজ করবে বলে চিঠি পাঠিয়েছিল পিটার হাসের হাত দিয়ে। কিন্তু হায় হায়! দাজ্জাল বা ভণ্ড মসিহ সাজে যে চরিত্র – এদের দিন ফুরিয়ে এলে বা হয়ে গেলে কোনকিছুই তা ঠেকাতে পারে না! তাই হাসিনা পলাতক ফ্যাসিস্ট হয়ে যান! আর বাইডেন মুখ লুকিয়েছিল! আর ইন্ডিয়া????
সেই থেকে আজও মোদির ইন্ডিয়া পাগলপ্রায় অবস্থায়! কোনকিছুই মানতে পারছে না! ইউনুস এই নাম বা এই সরকার এখন সারা ইন্ডিয়াতে একটা ত্রাস; একটা শত্রু বা এনিমির নাম হয়ে দাড়িয়েছে! আসলে এখানে ইউনুস মানে কি?
আসলে এখানে ইউনুস মানে কি?
এখানে ইউনুস মানে হল যে এক দাজ্জাল প্রতিরোধের প্রতীক; এই দাজ্জাল প্রতিরোধকারী আমরা বাংলাদেশ; এখানে যাদের প্রতীকী নাম হল ইউনুস!! ইন্ডিয়ান আধিপত্যের বিরুদ্ধে মানে এই দাজ্জালের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত উঠে দাঁড়ানো আমরা বাংলাদেশের আম-জনগণ! মোদির ইন্ডিয়া – বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের কাহিনী বলে বলে এখন ক্লান্ত; মিথ্যা বাঘ আসছে এই গল্প বলা রাখাল বালক হল মোদি! তিনি হিন্দু নির্যাতনের বানানো কাহিনী দুনিয়াকে বিশ্বাস করাতে পারেন নাই; আবার ওদিকে চিন্ময়-ইসকন এখন খুনের আসামি হয়ে জেলে! আর এদিকে চিন্ময়ের সাগরেদ যারা আমাদেরকে চিন্ময়ের সাথে তাঁর অস্বস্তিকর মেলামেশা-গলাগলি দেখিয়েছিল – তা ইতিহাস হয়ে থাকবে! কেউ ছাড়া পাবে না! ফলে এই মোদির-ইন্ডিয়া এখন একেবারেই অসহায়; সবগুলো চালই তাদের ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে ইন্ডিয়ান মিডিয়ার চোখে, বাংলাদেশে তাদের চোখে একনম্বর ভিলেন হল ইউনুস এই নামটা! যেমন ধরেন বাংলাদেশ থেকে ৫০ জন জেলা জজ পর্যায়ের ব্যক্তি (সম্ভবত এটা ছিল সেকেন্ড ব্যাচ। হাসিনার আমলে, গত ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ইন্ডিয়ার প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এর বাংলাদেশ সফর থেকে এর শুরু। বাংলাদেশের বিচারকদেরকে সফরের লোভ দেখিয়ে হিন্দুত্ববাদ-বয়ানের পক্ষে মস্তক ধোলাই এর এক কর্মসুচি ছিল এটা); এদের ইন্ডিয়া সফরে যাওয়া প্রায় ফাইনাল ছিল কিন্তু তা গতকাল বাতিল করা হয়েছে। তাই এই ক্ষোভে কলকাতার আনন্দবাজারের শিরোনাম দেখেন, “ভারতের খরচেই ভারতে এসে প্রশিক্ষণের কথা ছিল বাংলাদেশি বিচারকদের, আটকাল ইউনূস সরকার”। মানে ইউনুস এই নামটাই ইন্ডিয়ার কাছে এখন এক ত্রাসের নাম; যা সবকিছু আটকে দেয়!!! মানে ইন্ডিয়ান আধিপত্য রুখে দিবার এক কর্তা এমন নাম-বাচক শব্দ এটা!
এমন পরিস্থিতিতে জ্যাক সুলিভান ইন্ডিয়া সফরেঃ
এমন পরিস্থিতি বলতে – এর মানে কী? এর অর্থ এখানে বুঝতে হবে মোদির ভারত যখন ভাটিতে চলছে বা পশ্চাদ-অপসারণে। যেমন ধরেন, এবার তাদের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশ সফরে আসার মূল পরিকল্পনাটা ছিল বাংলাদেশকে ভয় দেখিয়ে কব্জা করার শেষ চেষ্টা। কারণ, গুম-খুন-আয়নাঘর কান্ডে শুধু হাসিনা না সাথে মোদি-ইন্ডিয়াও জড়িত এই প্রমাণ সংগৃহিত হয়ে গেছে। এবং সেই প্রাথমিক রিপোর্ট ইউনুস সরকারের কাছেও আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করা হয়ে গেছে যা মিডিয়া রিপোর্টও এভেলএবল! ফলে অনুমান করা যায় সেসব দলিল এখন জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অফিসের দিকে রওনা হবে বা দৌড়াচ্ছে!!!! যেখানে এমনকি বিএনপির নেতা যারা অপহরণ-গুম হয়েছিল তাদেরকেও মোদির র-বাহিনী ম্যানেজ করে ফেলেছে। বা তারাই এখন বিএনপিতে র-এর স্বার্থ-ইচ্ছার ক্যারিয়ার! ফলে এটা মোদি-ইন্ডিয়ার জন্য এক বিরাট কেলেঙ্কারির ঘটনা হিসাবে আসতেছে! আর এর সাথে আরও ছিল ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকান্ড নয়া তদন্ত কমিশন। এদুটাই যেন বাংলাদেশ খাতা-বন্ধ করে রাখে মুলত এনিয়েই আবদার বা দরকষাকষি করতে এসেছিলেন বিক্রম মিশ্রি! কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিশ্রির সফর-উত্তর বাংলাদেশ এসব দালালি-প্রলোভন বা ভয় দেখানি অতিক্রম করে গেছে!!! নিজেদের সংহত করে ফেলেছে যার সোজা মানে ইন্ডিয়ান হেজমনি-বিরোধীরা এখন আবার ফিরে সংহত হয়ে গেছে। ফলে ইন্ডিয়ার চোখে সবকিছু নষ্টের গোড়া এখন একটাই নাম ইউনুস সরকার!!
তাহলে আবার সেই পুরানা প্রশ্ন, তাহলে জ্যাক সুলিভান ইন্ডিয়া সফরের অর্থ – আমাদের জন্য এর অর্থ কী? কোন বিপদের কী?
একটা ক্লু দিয়ে শুরু করি। সুলিভানের এবারের ইন্ডিয়া সফরে র সাথে তিনি বাংলাদেশও ঘুরতে আসেন নাই; এমন সিডিউল-পরিকল্পনাও নাই; যেটা এর আগে ল্যু-বাইডেন জমানার এর তিন বছরে বেশিরভাগ সময় ঘটেছে। এর বদলে এখন বরং আলাদা করে ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ মানে দুসপ্তাহ আগেই ইউনূসের সঙ্গে সুলিভানের ফোনালাপ হয়েছে একটা। এটা সিগনাল দেয় যে আমেরিকার ইন্ডিয়ান ডেস্ক বা এর কায়-কারবার কার্যতই বাংলাদেশ ডেস্ক থেকে আলাদা। নাইলে আমরা দেখতাম ইন্ডিয়া থেকে সুলেভান বাংলাদেশও ঘুরে যাচ্ছেন।
এছাড়া আরেকটা কড়া কথা বলব। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইউনুসের (জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বার্ষিক বক্তৃতার সফর এর সুযোগে) প্রথম এবং মুখ্যত ইউনুস সরকারের নীতি (আমেরিকা প্রসঙ্গে নীতি কী) তা মুখোমুখি বসে আলাপ করার সুযোগ পেয়েছিল আমেরিকা!
কোন আমেরিকা????
এই প্রশ্নটা গুরুত্বপুর্ণ! যেই ল্যু-বাইডেনের আমেরিকা গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের হাসিনার সাথে একসাথে কাজ করবে বলে লিখিত চিঠি দিয়েছিল। আর সেই হাসিনা মানে বাইডেনের পার্টনার হাসিনা সরকারকে বাংলাদেশের মানুষ উতখাত করে দিয়েছিল বাইডেনের ঐ খায়েসের চারমাসের মধ্যেই!!! মানে প্রথমত আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স সব ভুয়া, কাগুজে বাঘ মাত্র! আর এটাই প্রমাণিত হয়েছিল! আর সবচেয়ে বড় কথা এরপরেও আমরা – ইউনুস সাবকে আমেরিকা পাঠিয়েছি। বাইডেনকে তিনি বলেছেন আর পিছনে না, সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে!!! শুধু তাই না, দেখেন ল্যু-বাইডেনের ইন্দো-প্যাসিফিক পলিসি কেউ খাইলো না। সেটা এখন মৃত! আর বিপরীতে আমরা এর চেয়েও এক বাস্তব প্রস্তাব, বাংলাদেশ-আমেরিকার উভয়ের স্বার্থ আছে এমন পলিসির প্রস্তাব আমরাই বাইডেনকে জানিয়েছি। সাথে এটাও যেখানে লুকানো নয় যে চীনের সাথে আমাদের ঋণ-বাণিজ্য এবং সস্তায় অস্ত্রদাতা ইত্যাদি সব সম্পর্কও চলবে! যা নিয়ে আমেরিকার ভয় পাবার কিছুই নাই। আমরা আমেরিকান (FDI) প্রাইভেট বিনিয়োগও ওয়েলকাম করব!
এসব কারণে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমেরিকা যদি আরেকবার বেকুব হতে না চায় তবে আমেরিকা (যে প্রশাসনেরই হোক) বাংলাদেশ প্রশ্নে ইন্ডিয়াকে দূরে রাখবে! ইন্ডিয়া-আমেরিকা সম্পর্ক যেমন-ই থাক বা না থাক এর ভিতর বাংলাদেশ কোন প্রসঙ্গ হবে না, আসবে না – এই নীতি-বৈশিষ্ট বজায় রাখবে; এই সীমারেখা মেনে চলবে!
তাহলে এটাও এখানে বলে রাখা যায় যে আমেরিকা যদি এই – বাংলাদেশকে আলাদা রাখার নীতি-বৈশিষ্ট – মেনে না চলে তবে স্বভাবতই আমরা সারা বাংলাদেশ সরাসরি এন্টি-আমেরিকানও হয়ে যাব!! কোন আমেরিকা? যে আমেরিকা আমাদেরকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল ২০০৭ সালে! আমাদেরকে ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত করা হয়েছিল তখন থেকে! ইউনুস সরকার গত চার মাসে এই প্রসঙ্গ কখনও বাঁকা-কথা বা রেফারেন্স হিসাবে আনে নাই। কেবল ইন্ডিয়ার আধিপত্যের বিরোধ করে গেছি আমরা ইউনুস সরকারের মাধ্যমে! কিন্তু এবারও আমেরিকা সোজা না হলে, আত্মঘাতি হলে আমরা সরাসরি আমেরিকাবিরোধী দেশ-সরকার হয়ে যাব। সবচেয়ে বড় কথা (আর কোন ভারসাম্য নয়) আমরা সেক্ষেত্রে প্রকাশ্যেই চীনের কোলে গিয়ে উঠবে এমন বাংলাদেশ হব হয়ত! আর এর সম্পুর্ণ দায়দায়িত্ব বর্তাবে আমেরিকার উপর; যা সবাই খোলা চোখেই দেখতে পাবে!!!
এবার শেষাংশ, এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণঃ
আমি মনে করি উপরে যা যা বললাম এসব কারণে সুলিভান এই ইন্ডিয়া সফরে (ফাঁকে-ফোকরেও) বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আনবেন না।
এছাড়া ইতোমধ্যেই সুলেভানের এই সফরের মুল কারণ যা সব প্রধান এজেন্সি মিডিয়াতেই ছাপা হয়েছে বিশেষত রয়টার্স সেখানে সোজা আমেরিকান প্রশাসনের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে এই সফর মূলত [about the impact of Chinese dams,] নদীতে বাঁধ ও বিদ্যুৎ প্রকল্প যেটা চীন নিয়েছে – সে প্রসঙ্গে ভারতের আপত্তিওগুলো কী তা নিয়ে নীতিগত অবস্থানের নৈকট্য কী করা যায় তা নিয়ে।
এখন আরেকটু ভেঙ্গে বলি। আমাদের দেশে যেটা মূল ব্রহ্মপুত্র নদ নামে পরিচিত [চীনের তিব্বতে ইয়ারলুং জাংবো নদ এটাই ভারত-বাংলাদেশে যার পরিচিতি ব্রহ্মপুত্র নামে] যা ভারতের আসাম হয়ে কুড়িগ্রাম-ময়মনসিংহ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এই নদী মূলত চীনের মেকং অঞ্চল থেকে শুরু হয়ে চীনের তিব্বত থেকেই ইন্ডিয়ায় (আসামে) প্রবেশ করেছে। পরে আসাম হয়ে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে এসে আমরা এটাকে ব্রহ্মপুত্র বলি! চীন উজানে এই নদিতে নানান জায়গায় বাধ ও জলবিদ্যুত প্রকল্প করেছে। আমেরিকা ভারতের উপর এর প্রতিক্রিয়া প্রভাব নিয়ে কথা বলতে এসেছে […… about the impact of Chinese dams,]...।
তবে এটা ঠিক নদীর পানি নিয়ে মারামারি নয়; আমেরিকা বুদ্ধিমানের মত এটাকে পরিবেশ ইস্যু হিসাবে তুলতে চায়। নিচে সুলিভানের ইন্ডিয়া সফর কেন তা নিয়ে আমেরিকান প্রশাসনের মূল বক্তব্যটা কি দিয়েছে তা তুলে দিলাম। এটা রয়টার্স থেকে নেয়া। বাকি সব মিডিয়ার বক্তব্যের সারকথাও এইটাইঃ
“We’ve certainly seen in many places in the Indo-Pacific that upstream dams that the Chinese have created, including in the Mekong region, can have really potentially damaging environmental but also climate impacts on downstream countries,” a senior U.S. official said ahead of Sullivan’s visit.
তাহলে সারাংশে বললে, সুলেভানের সফরে বাংলাদেশ কোন প্রসঙ্গই নয়। এই বিচারে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
আর নিশ্চিত করেই আমেরিকান প্রশাসন জানিয়েছে, আলোচনার টপিক হল (civilian nuclear cooperation, artificial intelligence, space, military licensing and Chinese economic overcapacity)এগুলা। অর্থাৎ যার কোনটাই বাংলাদেশ সম্পর্কিত নয়। যদিওও ভারতের কিছু প্রপাগান্ডা মিডিয়া ভয় দেখানো সুত্রহীন রিপোর্ট ছেপেছে।
কিন্তু একটা নতুন সুবিধার দুয়ার উন্মোচিতঃ
ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালোয়ের মুখপাত্র এখন এক রণধীর জয়সোয়াল! [এই অংশটার জন্য দুটো মিডিয়া রিপোর্ট পাঠকের ভাল কাজে লাগবে। একটা হল ভারতের Mint-Livemint আর আরেকটা হল আমাদের ইত্তেফাক। লিঙ্ক সাথে দিয়ে দিলাম। কারণ জয়সোয়ালের মন্তব্য এখানে ভাল কাভার করেছে এরা। ]
গত চারমাস তাঁকে আমরা দেখেছি কেবল – বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন চলছে – এনিয়ে কথা বলতে। কিন্তু এবার সুলেভানির সফর নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি নিজে ও ইন্ডিয়ার জন্য এক বিপদ ডেকে এনেছেন।
কমন নদীর পানিতে ভাটির দেশের সমান অধিকার থাকে। এটাই আন্তর্জাতিক আইন। যে বোধটা এতদিন বাংলাদেশে উপেক্ষিত, সব শাসকের কাছেই। এই প্রথম বহু কাঠখর পুড়িয়ে ইউনুসের মুখ দিয়ে সামএ আনা গেছে ফেনীতে এবারের বণ্য বা ইন্ডিয়ার বাধ খুলে দেয়া কে কেন্দ্র করে।
মজার কথা হল, সুলিভানের সফরে চীন-ভারত কমন নদীর পানি ইস্যুতে এই জয়সোয়াল দাবি করেছেন যে তিনি জানেন, যে ভাটির দেশের (মানে ইন্ডিয়ার) এক্ষেত্রে সমান অধিকার আছে।
রণধীর জয়সোয়াল বলেন, অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে ভাটির দেশেরও কিছু অধিকার আছে। রাজনৈতিক ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সেই অধিকারের কথা বারবার জানানো হয়েছে। সেই অধিকার ও স্বার্থের বিষয়ে ভারতের পর্যবেক্ষণ জারি আছে। সরকার সেইমতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করবে।
তাহলে এটা কী আমাদের জন্যও সুযোগ না যে ঠিক একই কারণে আমাদের সাথে ভারতের ৫৪ নদীর পানির হিস্যায় আমাদেরও ভাটির দেশ হিসাবে ইন্ডিয়ার সাথে সমান অধিকার আছে। -এবং এটা তো জয়সোয়াল জানেনই -! সুতরাই নদীর পানি ইস্যুতে আমাদের সমান ও ন্যায্য ভাগীদারির কথাটা এখন আমরা সহজেই তুলতে পারার রাস্তা উন্মোচিত হচ্ছে সেটা এখানে দেখতে পাওয়াটা জরুরি!
ফলে সে অনুযায়ী আমাদের ফরেন অফিস তার কাজ ও নীতি সামলানো এখন ফরজ!
এই মাজা ভাঙ্গা উপদেষ্টা যদি এখানে পারফরমেন্স দেখাতে না পারেন তবে তাকে বদলানোর দায়ীত্ব ইউনুস সাহেবের। পাবলিক তৌহিদ সাহেব চিনে না। আমরা একাজে ততপর ফরেন অফিস না দেখতে পেলে কিন্তু আমরা ইউনুস সাহেবকেই দায়ী করব! কাজেই আমাদেরকে এই ইস্যুতে এখনই পদক্ষেপ দেখানোর উপর নির্ভর করছে ইউনুস সরকারের সার্থকতা!!! নাইলে এটা একটা খামোখা সরকার হয়ে দাঁড়াবে!!!
লেখকঃ
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
আপডেটঃ বিকাল ০৪ঃ ৩৫ ০৬ জানুয়ারি ২০২৫



