মোদির র, তারেক ও সাথে আরেক ভাড়াটে মিডিয়া রয়টার্স


মোদির র, তারেক ও সাথে আরেক ভাড়াটে মিডিয়া রয়টার্স
গৌতম দাস
০১ এপ্রিল ২০২৫ দুপুর ০১ঃ ১৪
https://wp.me/p1sCvy-6np

 

 

ডঃ মঈন খান

 

গতকাল ছিল ঈদের দিন! কিন্তু ষড়যন্ত্রকারী তবে বেকুবেরা বসে ছিল না। মোদির ‘র’ আর তার ফাঁদে আরো বেশি করে আটকে যাওয়া তারেক ও তাঁর বিএনপি এই ততপরতায় সক্রিয়। গতকাল ‘র’ এর দালাল প্রথম আলো একটা খবর ছেপেছে যার শিরোনাম, “নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে গেলে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, সতর্ক করল বিএনপি”
প্রথম আলো এরকম দালালির আয় দিয়েও পত্রিকাটা চালায় রাখছে জানি আমরা বলে এটা তেমনই একটা কিছু বলে প্রথম চোটে তাই মনে হয়েছিল। কিন্তু এরপর চোখ আটকে যায় সাথের দুটা শব্দে “রয়টার্স নয়াদিল্লি”। শুধু রয়টার্স লিখলেই তো হত সাথে নয়াদিল্লি লিখল কেন? সন্দেহ এখান থেকে ঘনিভুত, আর তা থেকে ভিতরে পড়তে শুরু করি!  এটা বুঝতে যে রয়টার্স তাহলে এবার এক ভাড়াটে রিপোর্ট ছেপেছে! রয়টার্স মূল ইংরাজি নিউজ এর লিঙ্ক এখানে দিয়ে দিলাম। 

এই গল্পের  সারকথাটা শিরোনাম আকারে আগে বলে নেই।  মোদির ‘র’ আর তার ফাঁদে আটকে যাওয়া তারেকের বিএনপি এক নয়া যৌথ কর্মসুচী নিয়ে মাঠে নেমে গেছে। সেটা হল, বিএনপি সব বড় নেতাগুলাই বেচারা তবু এদের মধ্যে পাতে দেয়া যায় এমন একজন হলেন ডঃ মঈন খান। সেই মঈন খান এখন এই ষড়যন্ত্র কর্মসুচী নিয়ে নিজ দেশ-পরিবার ঈদ ফেলে আমেরিকায় গেছেন। রয়টার্সের এই ভাড়াটে রিপোর্টটা সেই ষড়যন্ত্র পরিকল্পনার কথা আমাদের খোলাখুলি জানিয়েছে। লিখেছে, “বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানরত মঈন খান বলেন………”। [“……said Khan, speaking from Washington D.C. where he is seeking meetings with U.S. officials to discuss Bangladesh.”]

“বাংলাদেশের পরিস্থিতি” মানে?
আসলে মঈনের এই আমেরিকা লবিইং কর্মসুচী থেকে দেখা যাচ্ছে মোদির ‘র’ আর তারেকের বিএনপি – একেবারেই খোলাখুলি এক “যৌথ উদ্যোগে” নেমে পড়েছেন। ব্যাপারটা অনেকটা এই দুপক্ষের যার যা আছে তাই নিয়ে খোলাখুলি নেমে পড়া – হয়ে গেছে। তাতে তারেক বা বিএনপির গায়ে ‘র’-এর স্পষ্ট দাগ লেগে যাবে কিনা এনিয়ে  তারেক বেপরোয়া হতে দেখা যাচ্ছে! যেখানে যার যা হাতিয়ার আছে মানে মোদির ‘র’ এর হাতে আছে “রয়টার্স নয়াদিল্লি” – এটা সাথে নিয়েই মোদির ‘র’ মাঠে নেমে গেছে। এতে ঢাকার প্রথম আলো / স্টার এদের রেট বা ইন্ডিয়ার যেকোন মিডিয়া ভাড়া নেওয়ার রেট এর তুলনায় “রয়টার্স নয়াদিল্লি” এর রেট অনেক মহেঙ্গা – ত্রিশ-চল্লিশ গুণ খরচা বেশি! তবু নিজের ক্ষমতা দেখাতে মোদির ‘র’ এটাই তারেকের জন্য ভাড়া করে দিয়েছেন!

তো এখন এখানে “বাংলাদেশের পরিস্থিতি” বলতে আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট কী বুঝতে হবে?
এতদিন ‘র’ আর তারেকের যৌথ বয়ান ছিল একঃ
যে এখনই নির্বাচন” বা তারেকের ভাষায় তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন” দিতে হবে। এই “তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন” এই বুলি টা তারেকের সেই ২০২১ সাল থেকেই যখন বাইডেনের প্রশ্রয়ে মানে, বাইডেন স্যাংশন বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয় দেখাবেন ফলে আমাদের পক্ষে হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় মিছিল ও ব্যাপক জমায়েতের সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা। (যদিও ২০২১, ২০২২, ২০২৩ এর মাঝামাঝি এসে বাইডেন পল্টি মেরেছিলেন হাসিনার সাথে একসাথে কাজ করবেন বলে, তবুও সেদিকে এখানে আর যাচ্ছি না)।  তবে সেকালের শুরু থেকেই তারেকের সার বক্তব্য ছিল একটাই ১। হাসিনাকে কে ফেলাবে? কী করে ফেলাবে ক্ষমতাচ্যুত করবে তা আমি জানি না। ২. তবে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গেলে (মানে কেউ করে ফেললে) তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। ৩. আর এই পরিবর্তনের এর মাঝে কোন “সেনাবাহিনী” সংশ্লিষ্ঠতা চলবে না।  এই অবস্থানের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল, ৫ আগষ্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পলায়নের কয়েক ঘন্টা পরের সন্ধ্যায়। তারেকের জাতীয় সরকার গড়তে রাজি না হওয়া আর, তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে দাবি – এর সবচেয়ে ভাল প্রমাণ। এছাড়া সত্যি সত্যি হাসিনা কী করে ক্ষমতাচ্যুত হবে তা তিনি তারেকে একেবারেই সংশ্লষ্ট হতে চান না, এটা মাথাব্যাথা তিনি নিবেন না। সেসব দূরে থাক এমনকি সেনাবাহিনীর কোনই সংশ্লিষ্টতা থাকুক তিনি চান নাই। বারবার নাকচ করেছেন! আজিব ব্যাপারটা হল, যেন সেনাবাহিনীর ভিতরেও একটা আভ্যন্তরীণ পরিবর্তন দরকার নাই বা তাঁর কাম্য নয়; মানে, সেখানে তারেক সিদ্দিকীর পরিচালিত  র-প্রভাবিত অফিসার বনাম এদেরকে পরাজিত করতে চাওয়া বাকি সকল সেনা-অফিসারের লড়াই এবং ফয়সালা ছাড়াই যেনবা হাসিনা ক্ষমতাচ্যুতি সম্ভব ছিল!!!! আর এপ্রসঙ্গে তারেক নিয়মিত বলে চলেছিলেন – হাসিনা ক্ষমতাচ্যুতি (যার সোজা মানে হল, সেনাবাহিনীর ভিতরে ক্ষমতার পালাবদল বা হাসিনা-সিদ্দিকী এন্ড গং বা র-এর দালালদের উচ্ছেদ)  কীভাবে হবে কে করবে এসব তাঁর চিন্তা-বিবেচনার বিষয় না। কিন্তু তিনি কেবল হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন চান; এই মুখ্য ও নির্ধারক ভাগটা তারেককেই দিতে হবে! এককথায় বললে, তিনি আসলে  হাসিনার জায়গায় নিজেকে প্রতিস্থাপন দেখতে চান!!! কিন্তু কীভাবে তা ঘটবে এর দায় নিবেন না! হেব্বি মজা!!
আর তাঁর এই অবস্থানটাই মোদির র-এর জন্য খুবই সুইটেবল, ভাল মিলেছে! একারণেই শুধু তোতাপাখির মত ‘দ্রুত নির্বাচন’, ‘এখনই নির্বাচন’ এসবই নয়। সাথে ইন্ডিয়ান কু-ভাষ্যও আছে। যেমন, ইউনুস সরকার হল একটা তত্ববধায়ক সরকার  (মানে ইন্টেরিম বা বাংলায় অন্তর্বর্তিকালীন সরকার নয়)। কেন ইন্ডিয়ার এই ভাষ্য বদল বা শব্দ বদল?
কারণ, তত্ববধায়ক সরকার মানে তো তিনমাসের সরকার যার কাজ হল একটা নির্বাচন ঘটিয়ে দিয়ে বিদায় নেয়া! কাজেই তিনমাস এর পরেও ইউনুস সরকার বিদায়ে যাচ্ছেন না কেন? এই হল শয়তানি বয়ানটা!

আসলে র-এর কাজ হল সময়ে বোকা সেজে বসে থাকা! যেমন র-এর দালাল ও চাকর হাসিনা যে  কনষ্টিটিউশন সংশোধন করে বহু আগেই “তত্ববধায়ক সরকার” ধারণাটাই গায়েব করে দিয়েছেন সেটা এখন মোদির ‘র’ সেটা এখন যেন জানেই না – এমন ভাব ধরে বসে গেছে। আর র-এর ভাড়াটে কিছু ব্যক্তিত্ব ও অবসরের পরে ‘র’-এর খেদমত করে দুপয়সা কামানি বিনা সিক্রি এই বয়ান জারি রেখেছে সেদিন থেকে বিবিসি বাংলায় মোদি যেটাকে ভাড়া করে রেখেছে! আর সবচেয়ে বড় কথা, ইউনুস সাবের এই সরকার গঠনের সময় থেকেই নিজেকে  ইন্টেরিম বা বাংলায় অন্তর্বর্তিকালীন সরকার  বলেই চিনিয়েছে ( নিজেদেরকে কখনও কোন তত্ববধায়ক সরকার বলেন নাই)। অন্য কোন কিছু অন্য কোন শব্দ নয়।  আর সবচেয়ে বড় কথা এসব ষড়যন্ত্রকারীরা এসব ঝামেলা পাকাতে চাইবে আমরা জানতাম বলেই (আমি যতটুকু জানি ২০২২ সাল থেকে এটা যে ইন্টেরিম [interim] সরকার বলে গড়তে হবে সে ধারণা পরিস্কার রাখা ছিল। অর্থাৎ কেবল ৫ আগষ্ট ২০২৪ বিকেলে হঠাত করে আমরা ইন্টেরিম [interim] সরকার গড়ি নাই। ) উপরে বলেছি তারেক বা তাঁর বিএনপি তাদের এসব  তো তাদের কনসার্ণ-বিবেচনা ছিল না। সবসময় তারেকের বুঝ ছিল একটাই – তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন – দিতে হবে!

অতি বুদ্ধিমানের গলায় দড়িঃ
আপনি যখন বলবেন, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুতির পরে তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন চাই; কিন্তু, হাসিনা কী করে ক্ষমতাচ্যুত হবে সে দায় আপনার নয়, আপনি জানেন না। শুধু তাই নয় হাসিনার পতনে বা অন্তর্বর্তি সময়ে সেনা সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারবে না – তখন আসলে আপনি কী চাচ্ছেন? আসলে কী বললেন? এটা তারেক জিয়া বুঝেন নাই, বুঝতে চান নাই। বুঝার যোগ্যতা নিয়েও আমি সন্দিহান!  এভাবে তারেক আসলে কল্পনা করেছেন যে  যে শক্তি (এক বা একাধিক শক্তির সম্মিলন) হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে সেটা তিনি নন শুধু তাই নয় – হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুতকারীরা আবার হবেন ভীষণ বোকা! তাদেরকে বোকা হতেই হবে। না হলে তারা এরপর সেই বিজয়ী ক্ষমতাটা এবার তারেক ও বিএনপির হাতে কেন সঁপে দিবেন???? কেন তারেকের পায়ে সঁপে দিবেন???? কেন? এটাই বোকার, গোয়ারের বুঝ! আমার অভিজ্ঞতা খারাপ! আপনার “পারসোনাল অভিজ্ঞতা” বাসায় রেখে আসেন।  দেশের স্বার্থ, গন ক্ষমতার স্বার্থের কথা বলেন!

এর সম্ভবত একটা জবাব হতে পারে যে তারেক জিয়াউর রহমানের ছেলে, তারেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে!!! সেজন্য কী? অথবা ধরেন তারেক বড় গুন্ডা অথবা তারেক ঢাকায় কয়েক লাখ লোক জড়ো (যদি এলাও করেন তা করতে) করতে পারেন সেজন্য? কিন্তু সরি! এগুলোই একেবারে অরাজনৈতিক ও বোকা-স্টুপিড চিন্তা!

আমি বহুবার বলেছি গুন্ডামি আর ক্ষমতা (মানে রাজনৈতিক ক্ষমতা) এক জিনিষ নয়। যে সমন্বিত শক্তি (একাধিক শক্তিগুলা যেমন একটা,  যারা সেনাবাহিনীকে র-মুক্ত করেছে এবং এমন এদেরকে সমস্ত কী-পজিশন থেকে সরিয়ে দিতে পেরেছে, বিচার বা ফোর্স রিটায়ার্ড করিয়ে দিয়েছে যারা আর সাথে আরেক শক্তি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার রাস্তাঘাট দখল – জনগণ রাস্তায় নামিয়েছে গণক্ষমতার প্রদর্শন ঘটিয়েছে যারা এই শক্তি আর এরসাথে যারা বুদ্ধি-বিবেচনা খাটিয়ে সময়মত জাতিসংঘকে মানবাধিকার ইস্যুকে নিজের লড়াইয়ের পক্ষে হাজির করতে পেরেছে যারা এরাও আরেক শক্তি) – এই সমন্বিত শক্তি কেন বিজয়ী হবার পরেও তারেক কে নেতা মানবে???? কেন? যে তারেক মনে করে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি কিভাবে হবে কে করবে তিনি জানেন না! এটা তাঁর দায় না। এতে তারেক মনে করতেই পারেন তার এই অবস্থান খুবই বুদ্ধিমান অবস্থান! কারণ, তিনি গুন্ডামি আর ক্ষমতার ফারাক বুঝেন না। তাই গুন্ডামিকেই ক্ষমতা মনে করেন। আর সাথে তিনি কয়েক লাখ কর্মীর সমাবেশ ঘটাতে পারেন – সেজন্য????
এর চেয়ে স্টুপিড ভাবনা দুনিয়াতে আর কিছুই হতে পারে না।
এককথায় যে বা যারা হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে তারাই এককভাবে ক্ষমতায় আসবেই! এর পাল্টা আমি বড় গুন্ডা (রাজনৈতিক ক্ষমতা কী তা না বুঝা গুন্ডা) অথবা আমার লোক জমায়েতের সামর্থ আছে সক্ষমতা আছে তাই আমি তারেকই ক্ষমতা???? এটা এক স্টুপিড চিন্তা! ক্ষমতা কী এনিয়ে রাজনৈতিক নুন্যতম জ্ঞানশুন্য এক চিন্তা! তারেক কী জানেন যাদের তিনি নিজের কর্মি মনে হয়, ইদানিং তিনি যাদেরকে বেধরক চাদাবাজি করতে উতসাহ দেন অথবা বড় নেতাদেরকে বিভিন্ন হাসিনা-চোরদের সম্পত্তির শেয়ার মালিক বা পুরাই মালিক বানায় দিচ্ছেন তা সত্বেও তারেকের এই নিজস্ব নেতাকর্মিরা তারেককে ছেড়ে চলে যাবে। মুহুর্তের মধ্যেই! কখন???
যখন বাজারে এই আওয়াজ স্পষ্ট হয়ে যাবে যারা হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে তারাই ক্ষমতায় আসবেই! তারাই ক্ষমতায় এবং তারাই আগামিতে নির্বাচিত ক্ষমতা হয়েই আসবে, বসবে! সেদিন তারেক হঠাত আবিস্কার করবেন যে তিনি একা!!!!

তাহলে এখন “বাংলাদেশের পরিস্থিতি” বলতে কী বুঝায়ঃ
এখন “বাংলাদেশের পরিস্থিতি” বলতে আমেরিকায় বসে মঈন খান  বা তারেক যেটা বুঝাতে চাইছেন তাহল, ইউনুস সাহেব আগামি ডিসেম্বর ২০২৫ নয়ত পরের জুন ২০২৬ সময়কালে যেটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ না হলেও যে ধারণা দিয়েছেন সে ধারণাতে ইউনুস সাব যেন ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যেই আটকে থাকেন; আরও না সরে যান বা অনির্দিষ্ট না হয়ে যায় – এটা নিয়েই মূলত মঈন খান  বা তারেক এর বড় উদ্বিগ্নতা! লা যায় এটাই মঈন খান  বা তারেক জিয়ার উদ্বিগ্ন এক “বাংলাদেশের পরিস্থিতি”।

এথেকে বুঝা যায় তাদের প্রথম অনুসিদ্ধান্ত হল যে,
মোদির ‘র’ আর তারেকের বিএনপি এরা দুপক্ষই এখন স্বীকার করে নিচ্ছেন যে (তারেকের) তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন, বা এখনই নির্বাচন, দ্রুত নির্বাচন ইত্যাদি আর ওদিকে মোদির ‘র’ এর বাংলাদেশের ইন্টেরিম সরকারকে তত্বাবধায়ক সরকার বলে চালিয়ে দেয়া আর তাই তিনমাসের মধ্যেই নির্বাচন (মানে তারেককে ক্ষমতায় বসায় দেয়ার) দাবি আর সেই সাথে ইউনুস সরকারের সাথে মোদির ইন্ডিয়ার কোন সম্পর্ক নয়, পরের নির্বাচিত  (তারেকের) সরকারের সাথেই কেবল তারা সম্পর্ক করবেন যে গোঁ ধরেছিলে এসব সবকিছুই এখন পরাজিত বক্তব্য-বয়ান হয়ে গেছে।
তাদের দ্বিতীয় অনুসিদ্ধান্ত হল যে,
তারা দুপক্ষই (মোদির ‘র’ আর তারেকের বিএনপি) শুধু হেরে গেছেন তাই নয় সামনে তাদের আরও বড় পরাজয় অপেক্ষা করছে। আর সেকারণে তারা এখন আরো বেশি করে ঘনিষ্ট হয়েছেন। শুধু তাই না, আরো ঘনিষ্ট হয়ে এবার মোদির র এবার রাজনৈতিক বুদ্ধিশুন্য তারেককে আরেকটা টোপ দিয়েছে। সেটা হল, এবার তারা একসাথে আমেরিকায় গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনে লবি করবেন যেন ইউনুস সাব আগামি ডিসেম্বরই নির্বাচন দিতে বাধ্য হন (মানে মোদির ‘র’ আর তারেকের বিএনপি এরা দুপক্ষের কপাল খুলে)।
এখন তাহলে এতে কী দাড়ালো?
মানে আমরা এবার দেখতে পাচ্ছি ঠিক যেমন হাসিনা কে নানা সময় আমেরিকার কাছে লবি করে দিব বলে মুলা ঝুলিয়ে মোদি-জয়শঙ্কর হাসিনার ফ্যাসিজম দীর্ঘায়িত করে নিজেরা বাংলাদেশকে লুটেছিল ঠিক সেই একই পথে (কেবল হাসিনার জায়গায় তারেককে বসিয়ে) ‘র’-এর সাথে নিজের ভাগ্য বেধে তারেকও এখন হাটছে অজানা উদ্দেশ্যে ও পথে!!! কথা হল, মোদি হাসিনাকে বাচাতে পারে নাই। তারেক কে পারারও কোনই কারণ নাই!

আমি বারবার বলেছি, এখন আমেরিকায় কে প্রধানমন্ত্রী বা কে রাষ্ট্রপতি কিছু এসে যায় না;  – সারকথাটা হল আমেরিকা-ইন্ডিয়া যে এলায়েন্স গড়ে উঠেছিল ২০০৭ সালে – বাংলাদেশকে ইন্ডিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে তাহলেও  সেই আমেরিকা-ইন্ডিয়া বুঝাবুঝি বহু আগেই (২০১৬ সালের মধ্যে) নাই হয়ে গেছে। তা সত্বেও ২০১৭ থেকে পরবর্তি আমেরিকান প্রেসিডেন্টেরা ট্রাম্প১ -বাইডেন এই সময়কালে আগের তুলনায় দুর্বল হলেও আমেরিকা-ইন্ডিয়া একটা স্ট্রাটেজিক সম্পর্ক ছিল। যেটা ২০২৪ সালে বাইডেনের হাসিনার সাথে কাজ করার প্রকাশ্য ঘোষিত পলিসি নেয়ার পরের বাইডেন মানেই তিনি তখন থেকেই হাসিনার মতই পরাজিত বাইডেন। এই পরাজিত বাইডেনের দায় আমেরিকান কোন সরকার, পলিসিদাতা, থিঙ্কট্যাঙ্ক ইত্যাদি কেউ আর নিতে চাচ্ছেন না। নেওয়ার কোন কারণ নাই। বরং ইউনুসের মাধ্যমে আমরা তাদেরকে পালানো  আর মুখের কালিমা লুকানোর যে সুযোগ দিয়েছে এবং আমাদের ইউনুস সরকারকে সমর্থনের যে সুযোগ দিয়েছি এতেই তারা কৃতার্থ!
ওদিকে মোদি ট্রাম্পের সাথে দেখা সাক্ষাত, অস্ত্র কেনার লোভ কিছু দিয়েও বিনিময়ে কোন সম্পর্ক, ট্রাম্পের সাথে নুন্যতম ঘনিষ্ঠতা – কিছুই অর্জন করতে পারেন নাই। এতে সব অর্থ পানিতে গেছে। হাত-পা বেধে ইন্ডিয়ানদের সামরিক প্লেনে তুলে দেয়া, বারবার ইন্ডিয়ান এক্সপোর্টের সবকিছুতে ট্রাক্স আরোপ ইত্যাদি সব কিছুতেই মোদি-জয়শঙ্কর এখন পরাজিত শক্তি। ২০০৭ সাল থেকে আমেরিকান ছাতার নিচে থেকে ইন্ডিয়া বাংলাদেশের উপর রুস্তমির যে সুযোগ এমন সব কিছুই এখন শেষ, আর কোনদিনই যা ফিরে আসবে না। এসব দিনের আলোর মতই পরিস্কার।
সর্বশেষ তুলসী গাবার্ড কে সাজিয়ে এনে মোদি যা ভাব তৈরি করতে চেয়েছিল সেটাও একেবারে মুখোমুখিতে ট্রাম্পের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে সব মুছে গেছে; আমরা সবাই দেখেছি। ভাড়াখাটা তুলসী এখন বেকার। মোদির সব অর্থ এরা খেয়ে নিয়েছে, মোদিও বেকার!!

ঠিক এই অবস্থায় তারেক কেন মোদির র-এর সাথে কোন বুদ্ধিতে নয়া ষড়যন্ত্রে মাততে চাইছে?? যেটা দিবালোকের মত পরিস্কার ট্রাম্পের প্রশাসনকে মোদির প্রভাবিত করার নুন্যতম কোন যোগ্যতা মোদি-জয়শঙ্করের নাই, এটাই তলানিও না এটা শেষ! একমাত্র রাজনৈতিক জ্ঞানশুন্য এক তারেকই এই ছাইয়ের মধ্যেই তবু নিজের ও বিএনপির ভাগ্য খুঁজে ফিরতে পারে। মোদি-জয়শঙ্করেরা তো নিজেরা লবি করতে আমেরিকায় যায় নাই বা নিজেদের কাউকে পাঠায় নাই – তারেকের মঈন খান কে পাঠিয়েছে!!! যাতে এটাও তো ব্যর্থ হবেই। আর ব্যর্থ হলে যাতে তারেক ও তার নিজ কপালকেই দোষারোপ করে চুপচাপ নিজ ব্যর্থতাকে আপন কর্ম বলে মেনে নেয়!
দুনিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার এত পরিস্কার করে বারবার বলার পরেও রাজনীতিক জ্ঞানশুন্যরাই কেবল তবু ঐ মোদি-র-এর গার্বেজের মধ্যেই নিজ ভাগ্য খুঁজে ফিরতে পারে। তারেক নিজ রাজনৈতিক-নেতা জীবনের শেষ স্তর পার করছেন! তিনি এখন কেবল রাজনীতি থেকে একেবারেই উতখাত ফলে প্রভাবশুন্য হবার জন্যই অপেক্ষা করতে পারেন!!

মোদি যা পারেন তা হল মিথ্যা প্রপাগান্ডাঃ
তাই তিনি এবার কমপক্ষে দশগুণ বেশি অর্থ দিয়ে রয়টার্স কে ভাড়া করেছেন। এটা দিয়ে তিনি তারেকের মন জয় করতে গেছেন। কিন্তু এতে তারেকের সাথে মোদি ও র-এর ঘনিষ্ঠতার লেভেল কত গভীর তা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আর দ্বিতীয়ত, বিএনপির নেতা-কর্মিরা এখন নিজেই পরিস্কার দেখতে পাবে যে তাদের দলের ভাগ্য এখন কোন গভীর সংকটে। পালানোর কোন পথও নাই!!!

 

রয়টার্সকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবেঃ
আমি এর আগে সরাসরি ইউনুস সাবকে সতর্ক করে লিখেছিলাম কেন রয়টার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অথচ আমরা এনিয়ে ইউনুস সাবের কিছুই প্রতিক্রিয়া দেখি নাই। ইউনুস সাহেব কে বুঝতে হবে সব ব্যাপারে ঢিলেঢালা চলে না। গৃহস্থ দেখতেছে চোরে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকেছে। তবুওও তিনি ভাবছেন “দেখি না কী করে”। এরপর চোর বমাল নিয়ে বিদায় নিবার পরে আর কী করবেন???? কাজেই এসব বাদ দেন, একশন চাই! যে মিথ্যা বলে বা ছড়াই তাকে দমন করতেই হবে!

রয়টার্স এই ভাড়াটে রিপোর্টটা লিখেছে এক বাঙালি হিন্দু কৃষ্ণ এন দাস [Krishna N. Das]; আরেক শয়তান ভাড়াটে রএর দালাল; রুমা পালের যুগ শেষে তাকে সরিয়ে আরেক শয়তান কৃষ্ণ দাস কে তার জায়গায় বসানো হয়েছে। এখন এই কৃষ্ণ তিনি বারবার প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস সাবকে প্রধানমন্ত্রী বলে  (লিখেছেন  • Interim PM suggests ) লিখে গেছেন। কেন? নিচা দেখানোর জন্য?? অথচ বাংলাদেশে ইন্টেরিম পিএম বলে তো কেউ নাই!

দুইঃ
এরপর  এই কৃষ্ণ দাস নিজ ভাষ্যে এক ভয়ানক প্যারাগ্রাফ লিখেছেনঃ
“…. An unelected interim government led by Nobel Peace Prize laureate Muhammad Yunus has been running the South Asian country of 173 million since August, after deadly student-led protests forced Prime Minister Sheikh Hasina, a long-time India ally, to flee to New Delhi. ”

ইউনুস সাহেব নাকি আন-ইলেকটেড!!! দেখেন তিনি নাকি রয়টার্সের রিপোর্টার!!!! কৃষ্ণ দাস মোদির দালালি করছেন? কৃষ্ণ দাস – আপনি কী জানেন স্বাধীন ইন্ডিয়ায় প্রথম কবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়েছিল? জেনে নিতে পারেন সেটা ছিল ১৯৫১ সাল (25 October 1951)। অথচ নেহেরু তো ক্ষমতায় সেই ১৫ আগষ্ট ১৯৪৭ দিন থেকেই! তাহলে??? তিনি কী তখন ১৯৪৭ সালে নির্বাচিত ছিলেন? তাহলে কী ছিলেন – ইলেকটেড নাকি An unelected?????
এসব খোঁজ না নিয়ে  বাঁদরামো করতে আসা উচিত না। মোদির  বা ‘র’-এর থেকে অর্থ নিয়েছেন? এই বাদঁরামো করার জন্য?
আর এই প্যারাগ্রাফ টা আপনি লিখেছেন নিজ ভাষ্যে কারও বরাতে নয়। রয়টার্স এর জার্নালিজমের নীতিতে আপনি কী এমন নিজ ভাষ্য বয়ান লিখতে পারেন???

আর এখানে রয়টার্স কেও জানিয়ে রাখি, নিজের ফাঁসির দড়ি এভাবে আপনারা নিজের জন্যও তৈরি করলেন!!!

রয়টার্স কে বলছিঃ কান খুলে শুনে রাখেন। এই যে সব রিপোর্টের শেষ লিখে রাখেনঃ

Reporting by Krishna N. Das in New Delhi; Editing by Michael Perry
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles., opens new tab এভাবে, আপনাদের প্রত্যেকটা রিপোর্টের নিচে লেখা থাকে। এখন বলেন Krishna N. Das এর এই লেখাটা আপনাদের নিজের ঘোষিত স্টান্ডার্ড থমসন রয়টার্স ট্রাস্ট এর প্রিন্সিপাল মেনে কী করা হয়েছে???? নাকি এটাই রয়টার্সের নীতি? এটা জার্নালিজম ?????
রুমা পালকে নিয়ে আপনাদের কাছে বহুবার লিখেছি। বারবার বলেছি ইন্ডিয়ার ভিতর বসে বাংলাদেশ কাভার করবেন না, এটা বন্ধ করেন! আপনারা কানে শুনেন নাই। এখন আপনাদেরকে বাংলাদেশ থেকেই একেবারে উতখাত করতে হবে। বাংলাদেশের কোন মিডিয়া যেন আপনার ব্যুরো নিউজ কিনতে সাবসক্রাইব না করতে পারে এর ব্যবস্থা করতে হবে আমাদেরকে!!!

সব শেষে ডঃ মঈন খান সাহেবকে কিছু কথাঃ
আমার যতটুকু ধারণা ছিল তিনি সম্ভবত সবচেয়ে বয়স্ক ও সিনিয়র নেতার একজন যার খোদ জিয়াউর রহমানের সময়ে জিয়ার সাথে বিএনপিতে কাজ করেছেন অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু তিনি কী বুঝে আমেরিকাতে যেতে রাজি হলেন! আমি বিস্মিত! তারেক সাব বলেছেন আর আপনি রওনা দিয়ে দিলেন? আপনি কী খেয়াল করছেন ইতোমধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমেরিকার বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থান! আপনি কী নজর করেন নাই তুলসী গাবার্ড এর ভরাডুবি! তিনি ইন্ডিয়ায় থাকা অবস্থায় আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট তার বিরুদ্ধে নিজেদের বাংলাদেশ নীতি প্রকাশ করেছে! এত কী আপনি বুঝেন নাই  আমেরিকায় মোদির দৌড়, প্রভাব ক্ষমতা ইত্যাদি একটা ভুয়া ধারণা! চাপাবাজি!  আর আপনি আর তারেক সেগুলো দেখা-জানা সত্বেও আবার সেই মোদির বগলে সুগন্ধ খুজতে গেছেন??? আমি শুনেছি আপনারই নাকি তারেককে কিছু বুঝিয়ে বলার ব্যক্তিত্ব আছে! তাহলে কোথায় সেগুলা???

আচ্ছা, আপনি সুস্থ আছেন তো নিশ্চয়! আচ্ছা তাহলে, ইউনুসের সাহেবের বিরুদ্ধে আমেরিকায় লবি করতে যান কোন বুদ্ধিতে? তাও আবার মোদি-জয়শঙ্করের ভরসায়? যাদের নিজেদেরই ভরসা নাই; ট্রাম্পের কাছেই নিজেদের কোন বেইল নাই!!!
তাহলে আপনি এই বেকুবি ষড়যন্ত্রে শামিল হন কেমনে? আবার দেখেন এটা এমন এক ষড়যন্ত্র যা বেকুবেরা করে। এটা অন্তত আপনাকে নিশ্চয় মানায় নাই! নাকি এটাও বুঝেন না!

আগামি দিনে বিএনপির ভরাডুবি বা সম্ভবত প্রায়  বিলীন এক মুসলিম লীগ যেন এমন যদি হয় তবে তারেকের পাশে আপনার নামটাও লেখা হয়ে থাকল আজ থেকে!   কোন কিছুর খবর নাই! কীসের নেশায় আপনারা এখনও রাজনীতিক বলে দাবি করে আছেন আমি বুঝতে পারি না!! সরি!! আমি সম্ভবত আমার হতাশাই ব্যক্ত করতে পারি!!!
আর শেষ কথাটা হল, এই যে আপনি ভুয়া এক হুমকি দিয়েছেন যেন আপনি (সাথে আপনারা) আমেরিকায় গিয়ে কোন এক মহাযজ্ঞ করে ফেলতেছেন বলে ভাব তৈরি করতেছেন বলছেন “নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে গেলে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে,  এখন এই কথাগুলো বলে আপনাদের নাড়াচাড়াতেই না আপনাদের প্রিয় নির্বাচনটাই অনির্দিষ্ট হয়ে যায়। এতে হতে পারে এক গণভোটের দাবি সামনে চলে এসেছে। আর সেটাও তো নির্বাচনই! “নির্বাচিত প্রধান উপদেষ্টা” পেয়ে যেতে পারেন হয়ত! তখন কী করবেন? পাবলিক মাইন্ড বুঝতে মনোযোগ প্রচেষ্টা নিয়ে দেখতে পারেন, কান পাতেন!

লেখকঃ
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 আপডেটঃ  দুপুর  ০২ঃ ৪০,  ১ এপ্রিল ২০২৫
সবশেষ আপডেটঃ  দুপুর  ০৪ঃ ১০,  ১ এপ্রিল ২০২৫

 

Leave a comment