জয়শঙ্করের সফর


জয়শঙ্করের সফর
গৌতম দাস
২৮ এপ্রিল ২০২২

সম্ভবত এই প্রথম জয়শঙ্করের সফরকে প্রথম আলো – এর পক্ষে থেকে দেখতে পারবে না!
দুনিয়া আসলেই বড় অদ্ভুত যায়গা! অথচ যেটা গুণে গুণে চারদিন আগেও  হয়ত পারত।

 জয়শঙ্করের সফরের উদ্দেশ্য কী? হাসিনা-মোদি কী বাইডেনকে তাদের সম্মিলিত আবেদন দিয়ে উল্টা চাপ দিতে চাইছেন?? হাসিনা-মোদি কী বাইডেনকে তাদের সম্মিলিত আবেদন দিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন?? আমরা ঠিক জানি না। কিন্তু ফলাফল হবে সম্ভবত তাঁরা দুজনেই ফেল করবেন!

কিন্তু কেন চাপ দিবেন, কী নিয়ে?
যদি সব ঠিকঠাক থাকে, দুই প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত বলতে চাইবেন তাঁদের উপর বাইডেনের দুই অস্ত্র – অবরোধ আর মানবাধিকার – এদুই খড়্গ এর প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। শুধু এতটুকুই না, প্রচ্ছন্ন বা অস্পষ্ট হুমকিও থাকতে পারে যে অন্যথায় তাঁরা রাশিয়ার কোলে গিয়ে উঠে বসতেও পারে। তবে ততদুর যাক না-যাক এমন হুমকি দিতে পারে!

জয়শঙ্করের সফরে একান্ত বিষয়ক সব আলাপের কারণ, ব্যক্তিগত ভাবে (অন্যের মুখে) ভারত যা বলছে হাসিনা যা শুনেছে এটাই ‘মোদির ভারতের’ সব ঠিকঠাক অবস্থান কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া খুবই জরুরি; তাই!
যেমন মোদির বুঝ হতে পারে তাঁরা একসাথে চাপ দিবে এতদুর ঠিক আছে। তবে শেষে ভারত সত্যিই আমেরিকার হাত ছেড়েই দিব – এখনই তা সিদ্ধান্ত নেয় নাই বা এতদুর যাবে না। বা হুমকি-ইঙ্গিতও দিবে না। এমন হতে পারে। তাই আগাম ভারতের মনের কথা বুঝে নেওয়াটা খুবই জরুরি হাসিনার জন্য। পথে নামার আগেই এসব বিষয় ব্যক্তিগতভাবে পরিস্কার হতেই হবে, বুদ্ধিমান হতে হলে!
আর যদি হাসিনা অন-বোর্ড হয়েছে এজন্য যে মোদি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেই যে আমেরিকাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলা পর্যন্ত মোদি যেতে রাজি – এমনটা যদি হয়ে থাকে, তাহলে স্বাভাবিক একান্ত আলাপে জয়শঙ্করকে নিশ্চিত করতে হবে যে হা, মোদির ভারত বাইডেনকে ছেড়ে আসা পর্যন্ত চিন্তা করেছে!
আসলে উপরের পুরা ঘটনাটা একটা পশ্চাদ পটভুমিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তা হল, মোদি-বাইডেন সম্পর্কের সর্বশেষ অবস্থা। ক্রমশ এটা এখন এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে বাইডেনের পক্ষে মোদির উপর নিজ দুই অস্ত্র – অবরোধ আর মানবাধিকার- এদুই খড়্গ ব্যবহার ত্যাগ করা একেবারেই সম্ভব না। অন্তত কাশ্মীরে ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘণ – এটা তো বাইডেনের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল। এছাড়া এখন ভারতের বেলায় এটা ছাড় দিলে বাইডেনের ইমান উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন এই সন্দেহ তৈরি হবে। কারণ এই একই অস্ত্র রাশিয়ার পুতিন সহ চীন ও সবার উপরেই প্রয়োগ ব্যবহার বাইডেনকে করে যেতে হবে। সেটা ইউনিফর্ম থাকবে না তাহলে! তাই ভারতের বেলায় বাইডেন যতটুকু খাতির করতে পারে তা হল এখনই তিনটা অবরোধ আরোপ করার সুপারিশ বাইডেনের অফিসে পেন্ডিং – তা আরো বড়জোর কয়েক মাস পেন্ডিং ফেলে রাখা। কিন্তু কোনভাবেই তা বাতিল বা ভারতকে বিশেষ বিবেচনায় ছাড় দেয়া জাতীয় কথা উচ্চারণই বাইডেন করতে পারবেন না।
ওদিকে মোদির সমস্যা হল, কমপক্ষে আগামি ২০২৪ সালে নিজের পুনঃনির্বাচন পর্যন্ত সব নির্বাচনে মোদিকে মুসলমান কোপানো-হত্যার কথা সরাসরি বলে চলতেই হবে – এই নীতিতে তাকে দল ও রাজনীতি পরিচালিত করতেই হবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ বলে ক্ষুব্ধ হিন্দু -ভোটারদের নিজের বাক্সে আনার জন্য এটাই মোদির হাতের শেষ অস্ত্র। কাজেই বাইডেনের মানবাধিকার বা অবরোধের ভয় আমল করার অবস্থায় নুন্যতম ভাবে বাইডেনকে ছাড় দিবার অবস্থায় মোদি নাই। বরং বাইডেনের এই মানবাধিকারের হুমকি উল্টা ভারতে দেশের ভিতরের – সুপ্রীম কোর্ট, নির্বাচন কমিশনার বা আমলাদেরকে মোদির বিরুদ্ধে সাহসী করে তুলতে পারে। ইতোমধ্যে সাবেক শত আমলা-সচিব মোদির বিরুদ্ধে নাগরিক-বৈষম্য ও মুসলমান হত্যা ইস্যুতে বিবৃতি দিয়েছে [ঘৃণা আর বিদ্বেষের আবহে আমরা ভীত! মোদীকে খোলা চিঠি প্রাক্তন আমলাদের]। যেটা মোদির জন্য খুবই এলার্মিং!
তাহলে সারকথা – মোদি আর বাইডেন কেউ কাউকে এতটুকু জায়গা ছাড় দিয়ে আপাতত বিবাদের সমাধান করবে সেই সুযোগ দুপক্ষের কারও হাতে নাই।
এই অবস্থায় মোদি যদি (একা নয় সাথে হাসিনার প্রতিনিধি ও সুপারিশ সাথে নিয়ে ) বাইডেনের মুখোমুখি হয় তবে এখানেও ভারত-আমেরিকা যে কেউ কাউকে সম্পর্ক ছেড়ে যাবার চরম কথাটা উচ্চারণ এখনও করে নাই বা করছে না সেটাই প্রকাশ্য হয়ে গিয়ে বিপদ ডেকে আনতে পারে – কোন হাতছুট মুহুর্তে!

বটম লাইন হল, কোন আগামি পরিস্থিতিতেই হাসিনার সংকট কাটছে না। বরং ভারত-বাংলাদেশের যৌথ মুভ সংকটকে আরো বাড়িয়ে তা “এখনই” ডেকে আনার অবস্থায় ফেলতে পারে! বাংলাদেশের ব্যাপারে বাইডেনের সিদ্ধান্তই ডমিনেট করার সম্ভাবনা বেড়ে গেল। এছাড়া সেক্ষেত্রে, বাইডেনের বগলে ভারত না থাকার সম্ভাবনাও বেড়ে গেল!

পুনশ্চঃ- আলী রীয়াজের আজকের লেখার শিরোনামটা বেশ অদ্ভুত! “বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করবে ভারত?”।
আচ্ছা আলী রিয়াজের কাছে তাঁর জাতীয় স্বার্থ কোনটা? আমেরিকার স্বার্থ না বাংলাদেশের স্বার্থ? আমি এনিয়ে পুরাই কনফিউজড বিভ্রান্ত! আমাদেরকে এভাবে বিপদে না ফেলে, এসব শব্দ তাই লেখকদের এড়িয়ে চলাই ভাল!!!

অন্তত গত চৌদ্দ বছর ধরে যেখানে আমেরিকান স্বার্থই বাংলাদেশের স্বার্থ হয়ে আছে তখন তিনি “বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব” ভারত করলে কেন বিস্মিত হচ্ছেন? আমি বুঝি নাই!  কে যে কখন কার পক্ষে!!!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

Leave a comment