অজ্ঞতায় থেকে কথা বললে নুইসেন্স তৈরি করবে
গৌতম দাস
২৭ জুলাই ২০২৩
https://wp.me/p1sCvy-4Kk
পরাশক্তিগুলোকে আর কী দেওয়ার আছে,
বামপন্থী নুইসেন্সেঃ
চলতি নয়া শতকের রাজনৈতিক ঘটনা ফেনোমেনাগুলোকে ব্যাখ্যা করতে চাইলে গত শতক (২০০০ সাল) পর্যন্ত যেসব টুলস বা ব্যাখ্যার হাতিয়ার আমাদের হাতে এসেছিল তা এই নয়া শতকের একেবারেই কাজে আসবে না; নতুন নতুন মেজর ঘটনাগুলোকে ব্যাখ্যা করতে আমরা সক্ষমতা দেখাতে পারব না। বিশেষ করে না-বুঝ বা অবুঝ কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল নামে পরিচিত ধারণাগুলোর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সবার আগে সচেতন হতে হবে। এরপর একালে সেসবের পুরাপুরি একটা রিভিউ বা পুনর্মুল্যায়ন আগে করে না নিয়ে সেসব পুরানা ধারণা এই শতকে ব্যবহার করতে গেলে একটা বিপর্যয় আসতে বাধ্য। আর এ’থেকে সকলের পরিত্রাণের একমাত্র উপায় নিজ চিন্তাকে নয়া হাতিয়ারে সাজানো, চিন্তার নয়া যোগ্যতা, নয়া দক্ষতা মানে সক্ষমতায় যোগ্য হয়ে আমাদের উঠতেই হবে; এটাই এথেকে বের হবার একমাত্র পথ।
কাজেই উপায় একটাই, নিজ সক্ষমতা সম্পর্কে আগে মুল্যায়ন ও সঠিক মাপামাপি-এস্টিমেট করে নেন – যাদের সক্ষমতা নাই টের পান তারা নিজ দায়িত্বে নিজ খামতি পূরণে রত হন। কিন্তু তবু এই পরিস্থিতিতে দয়া করে পরিপুর্ণ না জেনে নিশ্চিত না হয়ে কোন সন্দেহ বা ষড়যন্ত্র তত্ব দিয়ে পুরান কথা ও অনুমানগুলোই আবার অবলীলায় ব্যবহার ও বলতে শুরু করলে সেটা শুধু ভুল না, অপরাধ হবে। এছাড়া এমন করলে সেটা একটা বিপর্যয়কর ও বিব্রতকর অবস্থা – একটা নুইসেন্স তৈরি সে তো হবেই।
যেমন কেউ মনে করতেই পারে যে সে ন্যাংটা হয়ে মাঝরাস্তা দিয়ে আমি হাঁটবে, এটাই নাকি তাঁর অধিকার! মানে সমাজের জন্য নুইসেন্স তৈরি করাটাই যেন তাঁর অধিকার – এমনটা ভাবলে নগরের বাকি মানুষের আর কী করার থাকবে!!
বিডিনিউজ২৪ লিখেছে, “সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু সম্মেলন কক্ষে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ আয়োজিত ‘দক্ষিণ এশিয়ার ভূ–রাজনৈতিক বাস্তবতা ও পুঁজির পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্য: বামপন্থীদের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা হয়েছে”। সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় বক্তা ছিলেন।
কেউ গত শতকে যা বলতেন সেই একই কথা চলতি শতকেও কোন রিভিউ ছাড়াই আগের মত বলে গেলে একটা বিপর্যয়কর ও বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হবেই। বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার প্রায় ত্রিশ বছর পার হয়ে গেল এরপরে যেন কিছুই ঘটে নাই ধরে নিয়ে আমরা পুরান কথা চালায় যেতে পারি না।
BRICS বলে একটা ধারণা ও প্রতিষ্ঠান ২০০৯ সাল থেকে মানে গত ১৪ বছর ধরে এসে গেছে। আজকের ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাইডেনের যথেচ্ছভাবে স্যাংশন প্রয়োগের পটভুমিতে ব্রিকস এবার দ্রুত বিকাশের জন্য সচল ও সক্রিয় হতে চেষ্টা করতে শুরু করছে। এই সময় অধ্যাপক প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “বর্তমানে কোয়াড ও ব্রিকস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য পদ পাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমার কাছে এগুলো আধিপত্যবাধের আরেকটা নতুন রূপ। “এগুলোতে আপনি দেখবেন না শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশকে মুখ্য ভূমিকায় আনতে। বৈদেশিক শক্তি বা আমাদের অঞ্চলের বাইরের ক্ষমতাশালী দেশগুলো কিন্তু এই অঞ্চলে এসে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। এটা বিভিন্ন সময় নাম বদলাচ্ছে।” –
“বর্তমানে কোয়াড ও ব্রিকস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য পদ পাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমার কাছে এগুলো আধিপত্যবাধের
আরেকটা নতুন রূপ। “এগুলোতে আপনি দেখবেন না শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশকে মুখ্য ভূমিকায় আনতে। বৈদেশিক শক্তি বা আমাদের অঞ্চলের বাইরের ক্ষমতাশালী
দেশগুলো কিন্তু এই অঞ্চলে এসে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। এটা বিভিন্ন সময় নাম বদলাচ্ছে।” – অধ্যাপক প্রতীপ চট্টোপাধ্যায়
কোন কমিউনিস্ট-বামপন্থীর পক্ষেই এমন না জেনে বলা বক্তব্য দেয়া সম্ভব। ব্রিকস সম্পর্কে কারও না জানা বা কম জানা থাকতেই পারে। কিন্তু তা সত্বেও নিজের অজ্ঞতাকে বুক ফুলিয়ে জানানো এটাকেই ‘বোকার সাহস’ বলে!
এমনিতেই গত শতকের সমস্যা হল, স্তালিন-সহ পরের বাংলাদেশে পর্যন্ত কোন কমিউনিস্ট এর আর আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক জিনিষটা কী তা জানা হয় নাই। দুইটা বিশ্বযুদ্ধ শেষে গত ১৯৪৫ সালের পর থেকে দুনিয়াতে এই প্রথম একটা গ্লোবাল ইকোনোমিক সিস্টেম ও একটা গ্লোবাল পলিটিক্যাল সিস্টেম গড়ে উঠেছে। হতেই পারে যে আপনার চোখে এটা ভুল কাজ হয়েছে, ভুল রাস্তায়। তাই আপনি তা পছন্দ করেন নাই, অনুমোদন করেন না। কিন্তু তাতেও আপনি ওসব প্রতিষ্ঠানগুলো কী, ঠিক কী করে থাকে ইত্যাদির কোন বেসিক তথ্য না জেনে অন্ধকারে থেকে মন্তব্য করা কী ঠিক?
কঠিন সত্যি বা ফ্যাক্টস টা হল, কোন কমিউনিস্টই দুনিয়া যে ১৯৪৫ সালের পরে সেই প্রথম একটা গ্লোবাল ইকোনোমিক সিস্টেম ও একটা গ্লোবাল পলিটিক্যাল সিস্টেম মানে এর প্রতিষ্ঠান হিশাবে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এবং দ্বিতীয় পলিটিক্যাল সিস্টেমের জন্য জাতিসংঘ গড় তুলেছে – এদিকটা টের পায় নাই। স্থানীয়ভাবে একটা দেশ-ভুখন্ডে যেমন রিপাবলিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠেচে তেমনই গ্লোবাল পরিসরে (তবে সীমিতভাবে) গ্লোবাল এক রাষ্ট্রব্যবস্থার মতই জাতিসংঘ গড়ে উঠেছিল – যার ভিত্তি হল, কোন ভুখন্ডের বাসিন্দাদের কলোনিদখল করা অবৈধ কাজ। এই ভিত্তিতে জাতিসংঘের জন্ম ঘোষণায় ১৯৪২ সালের ১ জানুয়ারিতে প্রথম যে চার রাষ্ট্র স্বাক্ষর করেছিল তার একটা হল স্তালিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই ফ্যাক্টস ও এর তাতপর্য কমিউনিস্টেরা বুঝেছে বা জানে তা নিয়ে সন্দেহ করার জেনুইন কারণ আছে। খোদ স্তালিন কী মনে করতেন এনিয়ে তার কোন লেখা বা উচ্চবাচ্যের কথাও জানা যায় না।
দ্বিতীয়ত, ১৯৪৪ সালে আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ারের এই হোটেলে এক সম্মেলনে [Bretton Woods Conference] টানা ২২ দিন ধরে চলা আসর থেকে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক নামের দুই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছিল। একটা গ্লোবাল ইকোনোমিক সিস্টেম দাঁড় করানোর জন্য। যাতে দুনিয়াব্যাপী “আন্তঃরাষ্ট্রীয় এক বাণিজ্য” ব্যবস্থা চালু করা যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট স্তালিনের প্রতিনিধি ঐ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রতিষ্ঠান দ্বয়ের জন্ম ম্যান্ডেট যে কেন কী উদ্দেশ্যে এটা জন্ম দেয়া হচ্ছে, এর এক্তিয়ার কী ইত্যাদি সেসব রচনার পরে সেই সম্মেলন শেষ হয়ে যায়। এরপরের কাজ ছিল প্রত্যেকটা রাষ্ট্রের চাঁদা পরিশোধ সাপেক্ষে ওদুই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ লাভের আবেদন করা ও সদস্যপদ নেয়া। এই অংশে কোন সোভিয়েত প্রতিনিধি আর সেখানে হাজির হন নাই। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অংশ হল এটা। কিন্তু কেন স্তালিন সদস্যপদ নেন নাই, কারণ কী – অথবা দুই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তার ধারণা অনুমান কী অথবা আপত্তি কী ইত্যাদি এসব নিয়ে তিনি কোথাও কিছু লিখেছেন জানা যায় না।
পরবর্তিতে কমিউনিস্ট জগতেও এনিয়ে কোন আলোচনা উচ্চবাচ্য কোথাও শুনা যায় নাই। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের পরিচালিত ১৯৮২ সালের প্রশাসনিক সংস্কার চলার সময় সরকারি পাটকলের শ্রমিকেরা চাকরিচ্যুত হলে সেই প্রথম আমাদের কমিউনিস্টেরা এদুই প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে পারে। তারা এদুই প্রতিষ্ঠানের নামে – নিপাত যাক – শ্লোগান দেয়া সেই থেকে চালু হয়। অতটুকুই; তবু এদুই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানাশুনা তখনও আর কিছু হয় নাই বা আগায় নাই।
ওদুই প্রতিষ্ঠানের জন্ম পরবর্তিতে সোভিয়েত ব্লক বলে কোল্ড ওয়ার যুগের (১৯৫৩-৯১) আমেরিকা বনাম সোভিয়েত – এই ব্লক রাজনীতির কালে সোভিয়েত ব্লকের কোন রাষ্ট্র ওদুই প্রতিষ্ঠানের সসস্যপদ গ্রহণ করে নাই। বা পায় নাই। এটা প্রমাণ করে যে এর মানে এই ব্লকের রাষ্ট্রগুলোর নিজেদের মধ্যেও কোন আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা বলতে কিছু ছিল না। তবে গুরুত্বপুর্ণ হল, ১৯৯১ ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পরেই ১৯৯২ সালেই ভেঙ্গে তৈরি হওয়া ১৫ রাষ্ট্রের সকলেই ওদুই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ গ্রহণ করেছিল।
এসবই হোল বেস ফ্যাক্টস [Base Facts]। এবার আসি ব্রিকস [BRICS] প্রসঙ্গে। একবাক্যে শেষ করব। আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক গড়ে উঠেছিল আমেরিকার নেতৃত্বে। এর অর্থ তাতপর্য করা যেতে পারে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর গঠন ছিল শেয়ার মালিকানার কোন ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের মত, যেখানে আমেরিকার এত বেশি শেয়ার যা অন্যেরা মিলিতভাবে চ্যালেঞ্জ উপযোগী নয়। আর ব্রিকস হল সেই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান যার লক্ষ্য হল চীনের নেতৃত্বে এবার নয়া আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর সমতুল্য প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয়া।
কাজেই গত প্রায় আশি বছর ধরে চলা গ্লোবাল অর্ডার হিশাবে নয়া প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাটাকে [এর সীমাবদ্ধতা বা বড়লোক দেশগুলোর দিকে কান্নি মারা বিষয়ক খামতি সহ ] যে বুঝেই উঠতে পারে নাই, জানার [মানার কথা বলি নাই] চেষ্টা করে নাই, সে একালে গ্লোবাল নেতৃত্বের পালাবদলের কালে ব্রিকসের উত্থানকে কিভাবে বুঝবে? আবার তেমন জানাবুঝা নাই একারণেই হয়ত এটা বলাও সহজ মনে হতে পারে যে কোন রাষ্ট্রের আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর সদস্যপদ না নিলে যেন ঐ রাষ্ট্রের লাভ-ক্ষতি নাই!!! সদস্যপদ না নিয়েও যেন দুনিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকা যাবে!!! তাই কী??? এরা তাই মনে করে। জানাবুঝা না থাকার এই এক বিরাট সুবিধা; যাখশি বলা যায়। আজকের দুনিয়াতে অন্যকোন দেশের সাথে আমদানি-রপ্তানিতে না জড়িয়ে কী অর্থনীতি টিকানো সম্ভব? মনে হয় না এনিয়ে কেউ ভেবে একথা বলছে!!!
আনু মুহম্মদের বক্তব্যঃ
কিছু কঠিন বাস্তব সত্য হল, খোদ কার্ল মার্কস বা লেনিন তাদের বইতে কী লিখে গেছেন সেটা নয়। সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র কী সেটা স্তালিন যেটা ব্যবহারিক ভাবে মানে করেছিলেন সেটাই কমিউনিজম বলে দুনিয়ায় পরিচিত হয়ে আছে। সে বাস্তবতায়, স্তালিন প্রবর্তিত – উতপাদন ব্যবস্থা থেকে ব্যক্তিমালিকানা উচ্ছেদ করে উতপাদন করলেই “বাড়তি মূল্য ফেরত”-সহ সবকিছু সমাধান – এটাই কমিউনিস্টদের সমাজতন্ত্র।
কিন্তু এটা কী বাস্তবে ‘বাড়তি মূল্য ফেরত’ করেছিল কিনা এমনকি এই সমাজতন্ত্র নিজে কী ভায়াবল এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা? নিজে টিকে থাকতে পেরেছিল কিনা এটা নিয়ে চিন্তা করতেও রাজি না এই কমিউনিস্টেরা।
এছাড়া স্তালিনের সমাজতন্ত্র বাড়তি মূল্য ফেরত দেয়ার সুরাহার ব্যাপারটা ছাড়াও মৌলিক যেসব সমালোচনা মুখোমুখি তা হল – এটাও কী আরেক ক্যাপিটালিজম নয়, এক রাষ্ট্রীয় বা স্টেট ক্যাপিটালিজম! যা ক্যাপিটালিজমের চেয়ে বাইরে নয়। ফলে এতে জমা হওয়া বাড়তি মূল্য সেটাও কী শ্রমিক ফেরত পেয়েছে? পায় নাই, কারণ, পার্টি মালিকানায় চলে গিয়েছে। তাই তা ভোগ করেছে পার্টি এলিট – উপর মহলের নেতা কর্তা ও তাদের পরিবারেরা!
সবচেয়ে বড় কথা এটা ছিল চরম অদক্ষ উতপাদন ব্যবস্থা – প্রত্যকেটা উতপাদিত পণ্যে অপ্রয়োজনীয়ভাবে অদক্ষ বাড়তি শ্রমের বোঝা চাপানো। ম্যানেজমেন্ট বলে কোন ধারণা সেখানে কাজ করত না।
স্তালিনের আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য ধারণাঃ
বাণিজ্য হারাম নাকি হালাল মানে জায়েজ কিনা, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পর্যায়ের কমিউনিস্ট এরাও বলতে পারে না; অস্পষ্ট হয়ে থাকে। কারণ বাণিজ্য করতে গেলে তো মুনাফা করা হয়ে যাবে! মুনাফা করা কী জায়েজ? এটা তো আরো বড় অস্পষ্ট জায়গা! এর উপর আবার আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য? ফলাফলে কমিউনিস্টেরা স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারে না।
ফ্যাক্টস হল, স্তালিন ব্যক্তি-মালিকানাহীন সমাজতন্ত্রী তো বটেই এছাড়াও তিনি যে অর্থনৈতিক (সমাজতন্ত্র) ভাবনার অনুসারী, সেটা মূলত এক উগ্র অর্থনৈতিক-জাতিবাদী ধারণা। সেটা এই অর্থে যে মনে করে আমার দেশের মানুষ যা কিছু ভোগ ব্যবহার করবে তা কেবল দেশেই তৈরি হতে হবে – এমন এক ইকোনমিক ন্যাশনালিস্ট এরা।
অনেকের কাছে একালেও যথেষ্ট চিন্তাভাবনা না করে মনে হতে পারেন, এটা খারাপ কী!
এর খারাপটা হল, সবদেশই সোভিয়েত ইউনিয়নের মত বিশাল বড় ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নয়। এছাড়া, সবদেশ সব ধরণের পণ্য উতপাদ্নই আসম্ভব নয়, এছাড়া সমান দক্ষ নয় সে তো আছেই। দক্ষতার উপর পণ্যমুল্য নির্ভর করে। আমি যে দেশ যে পণ্য উতপাদনে দক্ষ সেটা নিজে ভোগ ও রপ্তানি করে অন্যের ভাল দক্ষ্যতায় তৈরি পণ্য আমদানি – এই নীতি সবচেয়ে কাজের।
কিন্তু মোদির মত উগ্র অর্থনৈতিক জাতিবাদীরা এক ফলস দেশপ্রেম কপচাবে চীনা টিভি ভাঙছে দেখাবে কিন্তু ভারতের ৭০% চীনা মোবাইল ব্যবহার করবে সস্তা বলে; ভারতের ওষুধ কোম্পানিগুলো ৪০% চীনা কাচামাল ব্যবহার করে ওষুধ বানাবে।
স্তালিন যে বাণিজ্যবিরোধী ও সমাজতন্ত্রের নামে মূলত এক ‘উগ্র অর্থনৈতিক জাতিবাদী’ ছিলেন এর প্রমাণ কী? কিসের ভিত্তিতে একথা বলছি? বলছি এজন্য যে সোভিয়েত ব্লকে নিজেদের মধ্যে কোন আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য ব্যবস্থাই ছিল না। কেন? সেটা বুঝতে চেয়াষ্টা করেন জেনে যাবেন। সবচেয়ে বড় কথা একটা নিজেদের মত করে হলেও আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর সমতুল্য প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোন “আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা” গড়া সম্ভবই নয়। সোভিয়েতে ব্লকের এই তাগিদই ছিল না।
সোভিয়েত ব্লক ব্যবস্থাটাও টিকতে না পারার এটাই কারণ।
গত ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে ঐ সোভিয়েন ইউনিয়ন রাষ্ট্রই একেবারে ভেঙ্গে যায়। মানে, বাইরের কারও আক্রমণ ছাড়াই নিজগুনে নিজেকে রক্ষা করতে না পেরে কথিত সোভিয়েত রাষ্ট্র – এই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে অকেজো ও টুকরা হয়ে পরেছিল। তাই ভাঙনের পরে তারা আপোষে ১৫টা দেশে (রাশিয়া-সহ) নিজেরা নিজেকে বিভক্ত করে নিয়েছিল। পরের বছর ১৯৯২ সালের মধ্যেই রাশিয়াসহ ১৫টা রাষ্ট্রই আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর সদস্য হয়ে নিয়েছিল।
আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক কী, কেমন প্রতিষ্ঠান সেসব না জানা থাকলে যা ইচ্ছা তাই বলে ফেলা, মাইক কাপানো ইত্যাদি তো অবশ্যই সম্ভব। গত ১৯১৬ সালে লেনিন “সাম্রাজ্যবাদ” বইটা লিখেছিলেন। লেখার পরে ক্যাপিটালিজম ইস্যুতে মুখ্য করে লেখা রচনা আর নাই। ১৯২৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি মারা যান। ঐ বইয়ে তিনি লগ্নি পুঁজির ধারণা ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু দুনিয়া কী আজও সেই জায়গায় আছে? লেনিনের দেখা দুনিয়া ছিল কলোনি হয়ে থাকা দুনিয়া। কলোনিদখল অবৈধ ঘোষণা যে হয়েছে, এর উপর ভিত্তি করে জাস্তিসংঘ প্রতিষ্ঠান হয়েছে তা কয়জম=ন কমিউনিস্ট জানে। খোদ স্টালিনই আমল করেন নাই। আর একালের ১৯৪৫ সালের পরে যে গ্লোবাল অর্ডার চালু হয়েছিল তা আপনার অপছন্দের এবং অনুমোদিত হতে পারে; অবু এর সম্পর্কে এই নয়া দুনিয়া সম্পর্কে আপনার অজ্ঞ থাকা গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর সুদের হার সম্পর্কেই খবর নেন নাই। অথচ বলে দিলেন এগুলো হল লগ্নি পুজি। মানে পুঁজি খাতায় সুদ খাবার ব্যবস্থা। অথচ বিশ্বব্যাংকের সুদের হার হলো – বিনাসুদে এবং আসলও ফেরত দিতে হবে না এমন অনুদান এখান থেকে শুরু করে ০.৭৫% মানে ১% এর নীচে সুদে এবং চল্লিশ বছর ধরে আসল ফেরত যার আবার প্রথম দশবছর সুদ আরোপ হবে না – এসব কী লগ্নি পুজি? টাকা খাটিয়ে সুদ খাবার কারবার??? না জেনে আমরা কেন কথা বলব?
আব্বার তাই বলে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক কী খুবই বাংলাদেশের ফেবারেবল সংগঠন? অবশ্যই না। কিন্তু ঠিক কোথায় সেটা? এসব জেনে এরপরেই কেবল মুখখোলা উচিত নয় কী?
আনু মুহম্মদ ঐ সভায় বলেচ্ছেন, পুঁজিবাদের আধিপত্য প্রতিহত করতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে ‘সাউথ এশিয়ান ইউনিয়ন’ গঠন করতে বামপন্থিদের কাজ করতে হবে। “দক্ষিণ এশিয়ায় যে পুঁজির আধিপত্যের মধ্যে আমরা আছি, সেখান থেকে বের হতে গেলে পুরো দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে আমাদের একটা ভিশন চিন্তা করা উচিৎ। এই ভিশনটা একমাত্র বামপন্থিরাই ধারণ করতে পারে।”
পুঁজিবাদের আধিপত্য – এটা কী জিনিষ? এর তো কোন মানুষ-কর্তা নাই দেখা যাচ্ছে। মানে অবজেকটিভ? আবার ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ভেঙ্গে যাবার পরে দুনিয়ার কোথাও কী ক্যাপিটালিজম ছাড়া অন্য কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আছে? বাস্তব সেটা? আবার চীন যে বহু আগেই স্তালিনের স্টাইলের কথিত সমাজতন্ত্র ছেড়ে দিয়েছে শুধু তাই না, যে ১৯৩০ সালের মধ্যে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে দুনিয়ার এক নম্বর অর্থনীতি হতে চলেছে এই ফেনোমেনা কে কেমনে ব্যাখ্যা করবো? কথিত পুঁজিবাদ-বিরোধিতা জিনিষটা এক কল্পনা হয়ে থেকে গেছে। বাস্তবতার সাথে যার কোন সম্পর্ক নাই। এই বাস্তবতায় ‘সাউথ এশিয়ান ইউনিয়ন’ পুঁজিবাদ-বিরোধিতার এজেন্ডা কার? কে সেই ফোর্স? দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশ? এমনকি শুধু বাংলাদেশেও এরা কারা? এমন কে আছে? তাহলে এই যে “দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে আমাদের একটা ভিশন চিন্তা” বলা – একটা স্বপ্নে পোলাও খাওয়াও তো এত খারাপ নয়!!!
বিএনপি এর চেয়ে বেশি কী দেবেঃ
রাজনীতি বা ক্ষমতা মানেই দেশের তেল-গ্যাস সম্পদ বিদেশিদেরকে দিয়ে দেয়া – এভাবে রাজনীতি ও ক্ষমতাকে ব্যাখ্যা করা এই হাতুড়ে গিরি আর কতদিন? এথেকে বুঝা যায় ‘রিয়েল’ কোন ক্ষমতা পাওয়া বা দখল সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নাই। বিএনপি কোন বিপ্লবী দল নয়, কিন্তু তাবলে তা কল্পনায় পোলাও খেয়ে চলা বামপন্প্নথী চেয়ে বেতার নয় কী? এই অর্থে যে বিএনপি রিয়েল পাওয়ার নিয়ে ডিল করে থাকে! আনু মুহম্মদ কী বলতে পারবেন বিএনপির ক্ষমতা পেতে বাধা কী কী অথবা হাসিনার ক্ষমতা ধরে রাখতে চ্যালেঞ্জ কী কী? বাস্তব ক্ষমতা কী, কী তার সমস্যা ও সম্ভাবনা বামপন্থীদের কখনও জানা হয় নাই। আবার, ভারতের সাথে বিএনপির সম্পর্ক কেমন কী? কোন ধারণা আছে? কিছুই ধারণা নাই। । ক্ষমতা বুঝতে গেলে আগে ক্ষমতার লবি সম্পর্কে অন্তত জানা থাকতে হয়। লবি – হোটেলের লবি যে অর্থে। ক্ষমতার করিডোর যেখানে ক্ষমতা ঘুরাফিরা করে – এর ধারণা যে কখনও ক্ষমতায় যায় নাই অন্তত একবার তার কোন ধারণা থাকবে না। আর না জানা থাকার বিরাট সুবিধাটা হল না জেনে সহজে অবলীলায় সব বলে দেয়া যায়।
আসলে এক “সারপ্লাস ভ্যালু থিওরি” নিয়ে কিছু বুঝ ছাড়া বামপন্থীরা বাস্তবের ক্ষমতা বা রাজনীতি সম্পর্কে আর কী জানে? এভাবে আর কতদিন?
আরো কিছু ধারণাঃ
“পরাশক্তিগুলোকে আর কী দেওয়ার আছে, তাই খুঁজে পাচ্ছে না বিএনপি: আনু মুহাম্মদ” – এটা বিডিনিউজের রিপোর্টের শিরোনাম। আচ্ছা এই পরাশক্তি মানে কী সোভিয়েত বনাম আমেরিকা? মানে সে জায়গায় রাশিয়া বনাম আমেরিকা? নাকি চীন বনাম আমেরিকা?
এছাড়াও এই পরাশক্তি মানে কী সামরিক ক্ষমতা?
কিন্তু না সরি, এটা এখনকার তো নয়ই, সোভিয়েত আমলেরও বয়ান নয়। সেকালেও “পরাশক্তিগুলোকে আর কী দেওয়ার আছে” এমন, বলা হত না। কারণ সোভিয়েত বা চীন তো কমিউনিস্টদের ঘরের জিনিষ তাই এভাবে তারা বলত না। তবে হ্যা পরাশক্তি বলতে সোভিয়েত বনাম আমেরিকাকে যেটা বুঝানো হত সেখানে পরাশক্তি বলতে সামরিক শক্তিই বুঝা বা বুঝানো হত।
১। তবে একালে এসে এটা এখন পরিস্কার যে পরাশক্তি মানে সামরিক শক্তি নয়। বরং পরাশক্তি মানে অন্য রাষ্ট্রের উপর প্রভাব বিস্তার বা তার সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা বুঝায়। এখানেই শেষ নয়। অন্য রাষ্ট্রের উপর প্রভাব বিস্তার এর ক্ষমতা এটাই বা আমেরিকার হাতে আসে কেন? আমেরিকার সামরিক শক্তির ভয়ে? না, একেবারেই না। বাংলাদেশের মত দেশের সাথে আমেরিকার সামরিক ক্ষমতার তুলনা অবান্তর। তাহলে অ্যামেরিকান ক্ষমতাটা কী থেকে এসেছে? এটা অর্থনৈতিক সক্ষমতা। আরো স্পষ্ট করে বললে বাংলাদেশের মত দেশকে আমেরিকার খুবই কম সুদের বিনিয়োগ পুঁজি (অবকাঠামো ও ডাইরেক্ট বিনিয়োগ দুটাই) যোগান দিবার ক্ষমতা।
হা আমি উলটা করে বলছি, কমিউনিস্টেরা যা বুঝে এর উলটা। কমিনিস্টদের জানাই নাই যে গত দুশবছরের কলোনি শাসনাধীনে থাকায় তা আমাদের অর্কেথনীতিকে ব্যপকভাবে পুঁজির অভাবে বুভুক্ষ এক দেশ করে দিয়ে গেছে। পুঁজি নাই তো নয়া কাজ সৃষ্টি নাই। তাতে আপনি পুজিবাদ নাকি কথিত সমাজতন্ত্র যাই করেন। কমিউনিস্টেরা একথাটাই উলটা বুঝছে – তারা বিনিয়োগ নেয়াকে হারাম বুঝেছে। ভারতের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক সমস্যার মুলে হল এই ভুল ধারণা। নেহেরু ১৯৬৪ সালে মারা গেলেও তার পুঁজিবিরোধী ভারতের অর্থনীতি টিকে ছিল ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। যখন এটা নিজ গুনেই ভেঙ্গে পড়ে আইওএমএফের কাছে হাত পেতেছিল ও সংস্কার করেছিল। কমিউনিস্ট উলটা বুঝের মারাত্মক সমস্যাগুলো এটাই। বাংলাদেশে আমরা সংস্কার করে নিয়েছিলাম ১৯৮২ সালেই। যেকোন আধা বুঝ আরো বেশি স্মস্যা তৈরি করে। আবার ভারতকে পরাশক্তি বানায় দেয়া হয়েছে। কোন যুক্তিতে ভারত পরাশক্তি?
যেকথা বলছিলাম পরাশক্তি আসলে একটা বিনিয়োগ দেয়া বিশেষত অবকাথামো মানে কম সুদে বিনিয়োগ দিবার ধারণা। আর কোন দেশের অর্থনীতি যখন বিপুল সারপ্লাস জমার মত অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারে সেটাই ও পরাশক্তি হয়ে উঠার পুর্বাভাস। যে ক্ষেত্রে চীন এখন আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। কাজেই “পরাশক্তিগুলোকে আর কী দেওয়ার আছে” মানে পরাশক্তিগুলোকে তেল–গ্যাস উপ্টৌকন দিলে তবেই ক্ষমতায় যাওয়া যায় এটা আমেরিকার নেতৃত্বের দুনিয়ার গত সত্তর বছর ফেনোমেনা কোথাও ছিল না। এখনও চীন নাকি আমেরিকাকে তেল-গ্যাসের খনি দিলে তবে ক্ষমতায় যাওয়া যায় এটাও বাস্তবতা নয়। কেবল ২০১৮ সালের পরে কোয়াড বা কে কন দেশের দেশের বলয়ে যাবে এনিয়ে ইন্দো-প্যাসেফক স্তাতেজি বিষয়ক আলাপ উঠেছে। তাও সেটা আবার কোন অ্যামেরিকান প্রেসিদেন্ট এনিয়ে কী অবস্থান নেয় তার উপর নির্ভরশীল। কাজেই আন্দাজি কথা বলা ত্যাগ করাই ভালো।
২। এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাঃ
কথাটা আলোচনার শিরোনামে আছে। কিন্তু ভুরাজনীতি জিনিষটা কী? কেউ এনিয়ে কথা আগায় নাই। এছাড়া এখন একালে মানে আরো ছট করে বলা যায় ২০১০ সালের পরে আগে নয়, এই শব্দটার ব্যবহার চালু হল কেন? কী বুঝাতে চায়? কোন খবর নাই। বরং একটা সহজ নির্ণায়ক দেই । দেখবেন কেউ যদি ভুরাজনীতি শব্দতা ব্যবহার করে তো বুঝবেন যা সে বলছে তার এনিয়ে জানার মধ্যে কোথাও অস্পষ্টতা আছে। আর এই অস্পষ্টতা ডাকার মোক্ষম শব্দ হল ভুরাজনীতি। শব্দটা কেবল সেই বিষয় নিয়ে কথা বলে যখন কোন দেশের ভৌগলিক অবস্থানই ঐ দেশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপুর্ণ করে তোলে কোন বিশেষ কালে। এজন্যি ভূ বা জিও [GEO] শব্দটা। শব্দটা ১৯৪০ দশকে স্বল্প সময়ের জন্য চালু হয়েছিল। পরে যুদ্ধ শেষের গ্লোবাল পরিবর্তনে নয়া সিস্টেমে শব্দটা অপ্রয়োহনীয় হয়ে যায়। প্রতীক চট্টোপাধায় বলছেন, ” ভূ-রাজনীতি এখন জটিল অবস্থায় আছে। সেখানে পুজির স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে, নির্দিষ্ট জাতি রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে”। এটা ব্যাপক এক জ্ঞানের কথা বলেছেন মনে হলেও এটা অর্থহীন কিছু কথা। ভূ-রাজনীতি জিনিষটা কী? কেন তা এখন জটিল এর কোন মা-বাপ নাই। শেষে এলো পুঁজির স্বার্থ। আচ্ছা বলেন তো দুনিয়ায় এখন কোন অর্থনৈতিক ততপরতাটা পুঁজির নয়? কাজেই এসব বকোয়াজি কেন?
সবশেষ প্রতীক চট্টোপাধায় দেখা যাচ্ছে অজ্ঞতার সীমা ছাড়িয়ে গেলেন। বলছেন, প্রতীক চট্টোপাধায় বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বটি মেকি আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই শিক্ষক বলেন, “গত পরশু হেনরি কিসিঞ্জার চীন ভিজিট করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের কোনো ঝামেলা নাই। এগুলো হচ্ছে আইওয়াশ”।
৩। যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বঃ
প্রতীক সাহেবকে সবার আগে বলতে হত যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্ব এটাকে তিনি কী বলে বুঝেছেন? যেটাকে আবার তিনি ঝামেলা নাই-ও বলছেন? কিভাবে বুঝলেন? এরপরেই কেবল আমরা শুনতাম কেন এটা তিনি মেকি বলছেন? তিনি তো জানেনই না তাদের দ্বন্দ্ব না হলেও ঝগড়া বিরোধটা কী নিয়ে? এছারা আবার হেনরি কিসিঞ্জার চীন ভিজিট করতে গিয়ে কে কী বলেছে তিনি কী জানেন ফলো করেছেন? কমিউনিস্টদের স্মস্যা হচ্ছে সারপ্লাস ভ্যালু নিয়ে কথা তোলা – এটা ছাড়া ছাড়া বাকি সব প্রসঙ্গই ভুয়া মেকি ইত্যাদি। এজন্য তারা জবরদস্তিতে হলেও যেকোন সমস্যা-জটিলতাকে সারপ্লাস ভ্যালুর সমস্যা বলে রিডিউস করে নাস্মিয়ে দেখাতে ভালো বাসে। একদম গরুর রচনা করে ছাড়ে সবকিছুকে! এভাবে নিজেকে অর্থহীন কথাবলার লোক হিশাবে তুলে ধরেন কেন? মফস্বলের চা দোকানে বসে চাঁদে যাওয়াকে মিছা কথা বলে তুমুল তর্কের মত!
আপডেটেডঃ ২৭ জুলাই ২০২৩; রাত
আপডেটেডঃ জুলাই ২০২৩;
>>>>
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

