আনন্দবাজার-অগ্নি রায়ের গায়েবী “সুত্রে” যা খুশি লিখা 


 

আনন্দবাজার-অগ্নি রায়ের গায়েবী “সুত্রে” যা খুশি লিখা
গৌতম দাস
২০ আগষ্ট ২০২৩   মধ্যরাত ১২ঃ ৩৬

https://wp.me/p1sCvy-4Ox

 

        হাসিনাকে দুর্বল করলে ক্ষতি সবার, বার্তা আমেরিকাকে

 

ঘটনা বড়ই অদ্ভুত! ভারত বাংলাদেশ বা হাসিনা সরকারকে নিয়ে তাদের ভাষায় বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের বার্তা”  এমন কোন বার্তার অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা এর কোন খবর নাই। আনন্দবাজার, ডয়েচ ভেলে, প্রথম আলো অথবা  ওবায়দুল কাদের (সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী) এমন কারো কাছেই এমন খবরের নিশ্চয়তা নাই; কেউই নিশ্চিত করেন নাই বা এমন খবরের রেফারেন্স কী তা বলেন নাই। অথচ গতকাল থেকে এখনও কথিত এই ভারতীয় বার্তা নিয়ে প্রায় সব পক্ষই কথা বলে চলেছে। “ভারতীয় বার্তা” বলে কিছুর অস্বিত্ব কী? তা না বলে  যারা এনিয়ে কথা বলছেন তারা অন্যায় করছেন।  এভাবে “ভারতীয় বার্তা” বলে কিছু থাকলে তার কথা এই…... এভাবে শর্ত সাপেক্ষে নিজের কথা বলছেন। অথচ এভাবে কথা চলতে পারে না, মানে হয় না। খুব সম্ভব কয়েকদিনের মধ্যে ভারতের এক সরকারী ভাষ্য এখন আসন্ন যেখানে তারা বলবেন –  না তো এমন কোন ভাষ্য তো আমরা দেই নাই!!!!!
অথচ এবার আনন্দবাজারের সাথে একইভাবে খবরের উৎস কী সেটা উল্লেখ না করে গায়েবী লিউজ ছেপেছে ডয়েজ ভেলে।  আর এই মিথ্যা গায়েবী খবর প্রথম আলো ডয়েচ ভেলের বরাতে ছেপেছে।  দাবি করেছে “কূটনৈতিক নোটে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে তা ভারত এবং অ্যামেরিকা কারও পক্ষেই সুখকর হবে না”। কিন্তু কোথায় ভারত এমন  কূটনৈতিক নোটে জানিয়েছে এর কোন হদিস নাই। মানে এরাও প্রথম আলো, স্টার, আনন্দবাজার এর মত একই দলে যোগ দিল। এতে বলাই বাহুল্য ডয়েচ ভেলে কেও মূল্য চুকাতে হতে পারে।   যেন সকলে এরা হাই স্টেকে জুয়ারি জুয়া খেলতে নেমেছে সাংবাদিকতা নামে!!!!

আনন্দবাজারের অগ্নি রায় যা শুরু করেছিলেনঃ
প্রথম কথা হল আজকের আনন্দবাজারে অগ্নি রায়ের লেখাটা এটা কোন সাংবাদিকতা-ই নয়। এটা আসলেই এক বাজারি লেখা যার পায়ে কেবল ঘুঙ্ঘুরটাই নাই!  একটা মনগড়া  আর কোন রেফারেন্স ছাড়া কিছু  রচিত বাক্যের গল্প বলা যায় একে বড় জোর। যেমন এই বানানো গল্পটা মোট ৪৪৪ শব্দের। কিন্তু তাতেই এর ভিতর অগ্নি রায় চার বার  “সুত্র বলছে” ব্যবহার করেছেন। মানে সোজাসাপ্টা এটা গায়েবী কথাবার্তা যার বাপ-মা নাই।  আর এধরণের চাপাবাজি শব্দ আর মিথ্যা কথাই সেখানে আছে। তবে আনন্দবাজারি লেখায় “সুত্র” মানে তা ইংরাজি সোর্স এর বাংলা করেছে তারা এভাবে। আর এভাবে কথিত “সুত্র” এর কথা বলে আনন্দবাজার সাংবাদিকতায় খবরের সোর্স বলার বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে যেতে চায়। এটাই অসৎ জার্নালিজম!   জার্নালিজমে নুন্যতম ফেয়ার [fair] বা সৎ জার্নালিজমের প্রধান ও নুন্যতম শর্ত হল খবরের সোর্স উল্লেখ করতেই হয়; পাঠক-কে জানাতেই হয়। অথচ এই ৪৪৪ অক্ষরের গল্পটার মধ্যে কোন উপযুক্ত সোর্সের কথা উল্লেখ নাই। অথচ সমানে যা খুশি তাই দাবি করে চলা হয়েছে। অথচ আনন্দবাজার প্রবর্তিত সেই অস্তিত্বহীন কথিত “ভারতীয় বার্তা” প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের আর মির্জা ফকরুল পর্যন্ত কথা বলে ফেলেছেন!!
তবে আরো সব প্রসঙ্গে ঢুকবার আগেই পাঠককে মনে করিয়ে দেই। বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের এবার এখন একেবারে ঘুম নাই অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেকথা ভারতের ভাষাতেই বললে, ভিসানীতি ধরণের স্যাংশন দিয়ে হাসিনাকে নির্বাচন করতে বাধ্য করা হলে সেটাতে নাকি ভারতের স্বার্থ খুন্ন হবে। এটা আবদি বা সুবীর ভৌমিক আমাদেরকে খোলাখুলিই জানিয়েছে।  যার মানে হল, হাসিনাকে ভোট কারচুপি বা রাতের ভোট করতে দিলেই একমাত্র ভারতের স্বার্থ রক্ষিত হবে।  যার সারকথাটা হল, নির্বাচন এর নামে যা হবে হোক কিন্তু শেষে হাসিনাকেই ক্ষমতায় রাখতে হবে নাহলে নাকি ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে। এমনকি তাদের বিদেশ মন্ত্রণালোয়ের মুখপাত্রও অরিন্দম বাগচি আমাদেরকে কনষ্টিটিউশন মাফিক মানে হাসিনার মাপে চলতে হেদায়েত করেছে।

এখন এসবের সারকথাটাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভারতের মিডিয়ায় লেখা হচ্ছে। এবং খুব সম্ভবত এটা চলতি বছরের দ্বিতীয় বড় ঢেউ তোলা ফাঁপা উচ্ছ্বাস এর চেষ্টা।  যার প্রথমটা তোলা হয়েছিল মোদির আমেরিকা বা বাইডেন সফরের কালে (২১-২৪ জুন ২০২৩), আগে ও পরের সময়ে। কিন্তু এসব মিথ্যা হাইপ তোলার দায় দায়িত্ব না নিয়ে ও অস্বীকার করে ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর ২ জুলাই জানায়ছিলেন একেবারে উলটা কথা – যে ভারত নাকি “প্রতিবেশী রাজনীতিতে ভারত কম জড়াচ্ছে”।  [এপ্রসঙ্গে আমার সেসময়ের লেখা – “জয়শঙ্করের কাছে এখন ‘আঙুর ফল টক’!” – লেখাটার লিঙ্ক এখানে]।  তার মানে অগ্নি রায়দের মত মিথ্যা প্রপাগান্ডা লেখকদের পরিণতি মাত্র গত মাসেই আমরা দেখেছি; যখন জয়শঙ্কর এসবের কোন দায়দায়িত্বই নেন নাই। অথচ তাসত্বেও  আনন্দবাজার ও অগ্নি রায়েরা এবার আবার দ্বিতীয় বড় ঢেউ তোলা ফাঁপা উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে।

তবে খুব সম্ভবত এবারের পটভুমি হল আগামি মাসে [৯-১০ সেপ্টেম্বর] অনুষ্ঠিতব্য ভারতে G20 নেতাদের সম্মেলন। নিচে সংক্ষেপে G20 জিনিষটা কী তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যাদের হাতে সময় কম তারা এটা পার হয়ে এরপরের প্যারাতেও চলে গিয়ে সেখান থেকে পড়া শুরু করতে পারেন। ভারতের জনসংখ্যা এখন চীনের চেয়েও বেশি। ফলে সে পটেনশিয়াল বা সম্ভাব্য বিনিয়োগ গ্রহিতা। তাই এবারের সম্মেলন সেখানে।

G20 নেতাদের সম্মেলন কীঃ
দুনিয়াতে যেসব রাষ্ট্রের জিডিপি সবার চেয়ে উপরের দিকে এমন টপ ২০টারাষ্ট্রের  কমন অর্থনৈতিক স্বার্থ নিয়ে কথা বলার এক জোট হল এই G20। প্রতিবছর নানান দেশে এর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এটা গড়ে উঠার ইতিহাস হল, এক কথায়, এটা মূলত য়াল স্ট্রিট [wall Street]  নিউইয়র্ক,  এর আগ্রহ ও আবেদনে গঠিত ও সৃষ্ট।  ওয়াল স্ট্রিট এক প্রতীকী নাম বা শব্দ যার অর্থ এটা বিরাট বিরাট পুঁজি (ঋণ দেয়া) বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান। এর এতই বড় প্রতিষ্ঠান যা কমিউনিস্টদের কল্পনাতেই নাই। নাই কারণ, এবিষয়ে তাদের প্রধান গুরু জোসেফ স্তালিনেরও কোন ধারনা ছিল না। কিন্তু তামাসাটা হল,  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান যুদ্ধের খরচ যোগানদার ও নেতা ছিলেন অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট। রুজভেল্টের অর্থনৈতিক-সহ সবধরণের সহযোগিতাতেই স্তালিন তার সোভিয়েত ইউনিয়নকে হিটলারের জার্মানির হাতে আক্রান্ত ও পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এখানে আসল কথাটা হল, রুজভেল্টের পিছনে ছিল এই য়াল স্ট্রিট -ই। য়াল স্ট্রিট এর বৃহত ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে করিতকর্মা ও দক্ষ কর্মিরাই ছিল রুজভেল্টের মন্ত্রী, প্রশাসক, পরামর্শদাতা, বিভিন্ন সরকারি কমিশনের প্রধান ইত্যাদি সবকিছুতে...। আর স্তালিন মারা যান ১৯৫৩ সালে, মারা যাবার আগে তিনি জানতেন যে য়াল স্ট্রিট  কী জিনিষ এমন প্রমাণ কেউ দেখে নাই।  সম্ভবত একারণেই, পরবর্তিতে স্তালিনের অনুসারি কমিউনিস্টদের কল্পনায় সবচেয়ে বড় পুঁজির কারবারী  হল, বহুজাতিক কোম্পানি [MNC: Multi National Corp.] বা কর্পোরেট হাউজগুলো। আর আমাদের মত দেশের কমিউনিস্টেরা অনুসরণ করে ইউরোপীয় কমিউনিস্টদের। যেখানে ইউরোপীয় কমিউনিস্টদের চোখেও ওয়াল স্ট্রিট বলেই কিছু নাই। তাই বাংলাদেশের কমিউনিস্টদের তো খবরই নাই।
এই MNC দেরই বাপ হল য়াল স্ট্রিট সেটা এই অর্থে যে MNC গুলোকেই  বড় বড় পরিমাণ পুঁজি ঋণ বা বিনিয়োগ হিশাবে দেয় ওয়াল স্ট্রিট; মানে ওয়াল স্ট্রিটের বড় বিনিয়োগ কোম্পানিগুলো।  তাই ওয়াল স্ট্রিট শব্দের আলোচ্য প্রসঙ্গে মানে হল যাদেরকে বিনিয়োগ পুঁজির বাজারকে বাড়াতে সব সময় নয়া বাজারের খোঁজে বেরাতে হয়। এজন্য এরা প্রভাবশালী রাষ্ট্র বা অর্থনীতিগুলোকে তারা চাপ দিয়ে বেড়াতে হয়।  ওয়াল স্ট্রিট এর আবেদন ও দাবি হল, তোমরা  G20 দেশগুলো বছরে একবার করে নিজেদের মধ্যে বসে সমন্বয় বাড়াও, এতে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য আরো বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাধাগুলো কী তা নিয়ে আলাপ করে বড় ২০ দেশ কোঅর্ডিনেটশন বাড়াও। কারণ, একমাত্র তাহলেই য়াল স্ট্রিট এর বাজার বাড়বে; মানে এতে তোমাদের অর্থনীতিও বাড়বে দ্রুত।  এই হল সংক্ষেপে G20

কিন্তু মোদির ছেঁচড়ামো গেল না। ভারতের জনসংখ্যা এখন চীনের বেশি হয়ে গেছে বলে ভারত এখন চীনকে ছাড়িয়ে যাওয়া অর্থনীতি যেন হয়ে গেছে  তা একেবারেই নয়। তবে ওয়াল স্টিটের চোখে ভারত পটেনশিয়াল রাইজিং বলে সে  বড় জোর সম্ভাব্য পরোক্ষ-প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগ ঋণ গ্রহিতা। এতটুকুই। আর মোদিকে এই সম্ভাবনাটাকেই বাস্তব করে দেখাতে পারতে হবে, ভারতের অর্থনীতিকে  বাস্তব গতি দিতে পারতে হবে। মানে ভারত জি-২০ সম্মেলন করেছে বলেই ভারতের অর্থনীতি তেমন উচা হয়ে গেছে তা একেবারেই নয়। কিন্তু মোদির ছেচরামি হল, তাকে ভারতের অর্থনীতি সে জায়গায় উচা করার আগেই এর ফায়দা নিতে হবে – এই লাইনে রওনা দিয়েছে। আর সেই সাথে ভাব করতে হবে ভারত যেন পরাশক্তি। তবে এই ভাব-ভাষ্যটাই মোদি আভ্যন্তরীণ ভোটের রাজনীতিতে ব্যবহার করে ভোট তুলতে চায়।  আর এরই সাথে হাসিনার বাংলাদেশ জি-২০ দেশগুলোর ধারেকাছেরও কেউ না হওয়া সত্বেও মোদি হাসিনার বাংলাদেশ তার অধস্থন  হাতা-ল্যাসপেন্সার এই অপমান করার বিনিময়ে হাসিনাকে  জি-২০ এর দাওয়াত করে এনে দেখাতে চায়। তার নিজ দেশে দেখাতে চায় যে মোদির ভারতেরও অধস্থন এক  হাতা-ল্যাসপেন্সার দেশ-সরকার আছে!!! এটাই মোদির ছেচরামি!!! অথচ কার্যত অনাহুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমরা ঐ সভায় কী সম্মান পাবো সেখানে??  বড়লোক বন্ধুর বিয়েতে যেতে পেরেছি তা অনেক গরীর বন্ধু এক বিরাট অর্জন বা জাতে উঠা বলে মনে করতে পারে, এটা সেরকমই কিছু একটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি!!!

সেটা কী দাঁড়াবে তা দেখা যাবে। এর আগে অনেক কিছুই ঘটবে। তবে এনিয়ে আপাতত আনন্দবাজার ও অগ্নি রায়েরা এবার আবার দ্বিতীয় বড় ফলস এক ঢেউ তুলতে চাইছে।   যেমন শিরোনাম থেকেই বিশ্লেষণ শুরু করা যাক। অগ্নি রায় বলছে “হাসিনাকে দুর্বল করলে ক্ষতি সবার, বার্তা আমেরিকাকে”। এখানে সবারটা কে কে? একা মোদির ভারত ছাড়া তো কেউ নাই। আমেরিকাই তো ভারতের সাথেই নাই। অগ্ন রায় যেটা এককালে ছিল যেন সেটা এখনও আছে এই মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে একথা বলছেন। মানে ২০০৭ সালের যে আমেরিকা বাংলাদেশে হাসিনাকে বসিয়ে সেই বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল – সেই আমেরিকা তো এখনকার আমেরিকা নয়। দেখাই যাচ্ছে হাসিনা সরকারই বলতেছে, আমেরিকা তাকে উতখাত করতে চায়। সর্বশেষ ১৬ আগষ্ট সরকার বলছে, আমাকে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী, লিঙ্ক দেখেন। অথচ অগ্নি রায় গল্প ফেঁদেছে হাসিনা সরকার দুর্বল হলে নাকি সেটা আমেরিকারও ক্ষতি?? মানে সোজাসাপ্টা একটা আরেকটার বিপরীত কথা!
এরপরে স্টোরির শুরুতে অগ্নি রায়ের প্রথম বাক্য “বাংলাদেশে হাসিনা সরকার দুর্বল হলে তা ভারত এবং আমেরিকা কারও পক্ষেই সুখকর হবে না বলে মনে করে নয়াদিল্লি”। যেটা নিয়ে আমরা উপরে দেখলাম এটা এক ভারতের ছাড়া আর কোন দেশের স্বার্থ নয়।  এরপর পরের বাক্যঃ

“কূটনৈতিক সূত্রের খবর, একাধিক স্তরের বৈঠকে নয়াদিল্লি
এ কথা জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসনকে।
সূত্রের খবর বাংলাদেশের
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার বর্তমান ভূমিকায় ভারত যে খুশি নয়,
ওয়াশিংটনকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সেই বার্তাও”

এটা অগ্নি রায়ের সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী মন্তব্য।  গত জুনেই মোদির আমেরিকা সফরে এটা ফকফকা স্পষ্ট হয়ে যায় যে বাইডেনের সাথে মোদির, বাংলাদেশ নিয়ে কোন কথাই হয় নাই। এছাড়া পরে জয়শঙ্কর উলটা ক্রেডিট নিয়েছে এই বলে যে প্রতিবেশি দেশে ভারত কম জড়াচ্ছে। তাহলে এসব সুত্রের খবর বলে মিথ্যা প্রপাগান্ডা কেন??  ফ্যাক্টস হল, ত এনিয়ে ওয়াশিংটনকে ভারত কিছুই জানায় নাই। কারণ বাংলাদেশকে নিয়ে একই স্বার্থের পাটাতনে ভারত-আমেরিকা আর নাই।   ভারতের সাথে মিলে আমেরিকার এশিয়াকে দেখার দিন শেষ হয়েছে। বাইডেনের আমেরিকা এখন এশিয়াকে দেখতে চায় ভারতকে ছাড়াই। বরং ভারতের স্বার্থবিরোধি অবস্থান নিয়ে।  আর তা শুধু আগামিতে মোদিকে হারিয়ে রাহুলের নেতৃত্বে বিরোধী জোটকেই ২০২৪ সালের ক্ষমতায় দেখতে চাওয়া  এতটুকুই নয়। আরো আছে!  কী সেটা?

বাইডেনের আমেরিকার নয়া এশিয়া নীতি-পলিসি সেখানে কেবল রাহুলের নেতৃত্বে বিরোধী জোট এর ভারত নয়, সেই ভারত এমন হবে যে হবে যে হবে সম্ভাব্য সারা দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার পদচারণা করতে চাইছে সেই আমেরিকাকেই সমর্থন করবে, এমন এক অধস্তন অনুসারী ভারতকেই আমেরিকা দেখবার আকাঙ্খা করছে। আরো আছে – আর তা শুরু বাইডেনের বার্মা পলিসি-ই নয়; মানে বাইডেন যেমন আগামি বার্মা দেখতে চায় সেটাকেই ভারত সমর্থ করবে মানে, ওর বিরোধিতার বদলে বরং অ্যামেরিকান স্বার্থের ভিতরেই ভারত নিজের স্বার্থ খুজে নিচ্ছে বা খাপ খাইয়ে নিচ্ছে এমন হতে হবে – শুধু তাও নয়।  এটা হল, সপ্তম নৌবহর কেবল বঙ্গোপসাগরে নয় আন্দামানেও হাজির থাকতে চায়।

ঠিক যেমন বাংলা ট্রিবিউন লিখেছে, 
ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে নিয়ে নানা খেলা চলছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই এলাকাটাকে
নিয়ে নানা ধরনের খেলার একটা চক্রান্ত। যেহেতু আমি জানি
, আমি বুঝি যে কীভাবে আমাকে ক্ষমতা থেকে
সরাবে। তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে
, পদলেহনকারী আছে, তাদের বসিয়ে এই জায়গাটাকে নিয়ে খেলবে।
সেটাই হচ্ছে প্রচেষ্টা। সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি”।

কিন্তু হাসিনার এসব বক্তব্যের কারণে কিছুই বদলাবে না। যেমন, ২০০৬ সালের শেষে যদি ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে,  আজ সরকার যেমন বক্তব্য রাখছে, তখনকার  বিএনপি যদি একই রকম বক্তব্য দিত তাতে ওয়ান-ইলেভেন ঘটা বা কিছুই ঘটা আটকাতো না। তখনও ভারত মহাসয়াগরের কথার মত অন্য কথাও তো ছিল। যেমন যদি বিএনপির দিক থেকে  বলা হত এভাবে  যে,  আমাদের বদলে আমেরিকা আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় আনবে, বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিবে ……ইত্যাদি! তাতে কী কিছু ওয়ান-ইলেভেন ঘটা আটকাতো? মোটেও না।
এসরের মূল ইস্যুটা হল জনপ্রতিনিধিদের গণবিচ্ছিন্নতা।   এমনকি আজ গণ বিচ্ছিন্নতার দিক থেকে আজকের  হাসিনা সরকারের সেকালের বিএনপির চেয়ে বেশি গণবিচ্ছিন্ন। সেটা এই অর্থে যদি অন্তত একটা ফ্যক্টর বিবেচনা করি যে আমাদের মত দেশে জনপ্রতিনিধিদের অন্তত কিছুটা ভয় বা লজ্জা থাকে যে দিন শেষে আমাকে আবার জনগণের কাছেই ভোট চাইতে যেতে হবে। কিন্তু সেটা এখন থাকত হয়ে গেছে।  গত ১৫ বছর ধরে  সরকার প্রশাসন আমলা পুলিশ এমনকি যেকোন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি তা একেবারে আওয়ামি মাঠকর্মীটারও আর সেসবের পরোয়া করা বালাই নাই। কারণ, সেটাও ম্যানেজ করার মেকানিজম মাঠকর্মী-নেতাদের হাতে পর্যন্ত এসে গেছে। জনপ্রতিনিধিদেরকে ভোট চাইতে আর পাবলিকের কাছে যেতে হয় না – এটাই সে মেকানিজম।  কাজেই  এখন ক্ষমতাসীনদে্রা এখন আম-জনতাকে সব ধরণের পরোয়ার বাইরে বা উর্ধে উঠে গেছেন। এরই উলটা দিকটার নামই হল এক  “জনবিচ্ছিন্ন জনপ্রতিনিধি ব্যবস্থা” যা জন্ম দিয়েছে এক গণবিচ্ছিন্নতার দল ও সরকার ব্যবস্থার রাজনীতি।  তাই আগেই বলা যায় এসব “ভারত মহাসাগরের গল্প” বলে এবারও আরো কিছুই ফিরানো যাবে না।

সারাংশটা হল্‌  এখন কেন আমাদের মত দেশে কেন কিছু “ফিরানো” যায় না – এর আসল কারণ পাওয়া যাবে একজন জনপ্রতিনিধির আবার গণবিচ্ছিন্নতা কী? এটা তো স্ববিরোধি কথা!!! হা এই স্ববিরোধের আরেক নাম নিশিভোট!  এথেকে সে কেন গণবিচ্ছিন্ন এর অর্থ  কিছুটা হলেও বুঝা যাবে।  আবার, মূলত  এখনকার বাংলাদেশের রাজনীতির এই – গণবিচ্ছিন্নতা বৈশিষ্ট – এর কারণেই এখন গণ-অভ্যুত্থানের কথা বকোয়াজ, ফাকা-আওয়াজে উলটা বরং তা জুতসই “ভারতের দালালি” করার বক্তব্য হয়ে থাকবে।  যেটা অনেকেই গণ-অভ্যুত্থানের কথার আড়ালে তা করছেন।  আর এতেই কার্যত তৃতীয় শক্তির হস্তক্ষেপ জাতীয় কথা ও শব্দাবলী এসবই মুখ্য বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়,  দাঁড়াবেই! সেটা আমরা পছন্দ করি বা নাই করি!

ভারত জামাতে ইসলামি বলে কী বুঝাতে চায়ঃ
আনন্দবাজার বা অগ্নি রায় তাদের এই ৪৪৪ শব্দের লেখায় প্রথম ১১৫ শব্দের পরের ১৮০ শব্দ কেবল ব্যয় করেছে জামাতে ইসলাম বলে এক শব্দ আর ধারণা নিয়ে। এনিয়ে সবার আগে পাঠককে একটা সাবধান করে দেই। ঐ লেখায় “জামাতে ইসলাম” লেখা হলেও এশব্দ শুধু রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলাম  বুঝান হয় নাই। এটা একটা দলের নাম করার আড়ালে একটা প্রতীকী শব্দ হিশাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এশব্দ দিয়ে বুঝতে হবে বাংলাদেশে ইসলাম সম্পর্কিত যেকোন কথা, ভাব বা আইডেনটিটি সব মিলিয়ে যেকোন কালচারাল বা রাজনৈতিক প্রকাশ – এর কথা বুঝানো হয়েছে।   এভাবে জামাতে ইসলাম বলে সব জিঘাংসা বিদ্বেষ উগড়ে দেওয়ার শুরু ২০০৮ সাল থেকে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে যারাই গেছেন সকলেই  জামাতে ইসলাম এদুটো শব্দ দিয়ে গত ১৫ বছর ধরে  জিঘাংসা বিদ্বেষ ছড়িয়ে কথা বলে গেছেন।  ভারতও সেটাই রপ্ত করে কথা বলছে। এটা হল ভারতের কাছে অনেকটা ১৯৪৭ সালের আগের জমিদারি শাসনে শাসিত পুর্ববঙ্গে ফিরে যাবার (মৃত) আকাঙ্খার মত। এটাই জামাতে ইসলাম শব্দে এর বিরুদ্ধাচারণ।
কথাটা স্পষ্ট হবে, যদি উত্তর খুঁজি যে ভারত বা  আনন্দবাজার বা অগ্নি রায় এরা জামাতে ইসলাম শব্দগুলো বলে কীসের বিরোধিতা করছে? অথবা আরো স্পষ্ট করে তারা এর বদলে কী দেখতে চাইছে?

এরা সকলেই [এবং এমনকি খুব সম্ভবত বাংলাদেশের এখনকার বেশির ভাগ হিন্দু-সহ প্রগতিশীলেরা ] এদের কাছে যে আদর্শ বাংলাদেশ কাম্য সেটা হল ১৯৪৭ সালের আগের জমিদার হিন্দুর আধিপত্যের যে পুর্ববঙ্গ – সেটাই, সেখানে যদি ফেরত যাওয়া যেত। ভেঙ্গে বললে সেটা হল কোন নাগরিক সাম্য নয়, আইনের চোখের ধর্ম-নির্বিশেষে সব নাগরিক অধিকারে সাম্য নয় বরং জমিদার হিন্দু আধিপত্য করবে আর ইসলাম-মুসলমানের কোন কথা, ভাব বা আইডেনটিটি সব মিলিয়ে যেকোন কালচারাল বা রাজনৈতিক প্রকাশ – সেটাকে অবশ্যই দমানো হবে শুধু না এদের সকলকে জমিদার হিন্দুর ডমিনেন্স মেনে নিতে হবে।
এক্ষেত্রে মুসলমানদেরকে কী কী মেনে নিতে হবে? সেই তালিকার নাম সেটা অন্য শব্দে বললে তা হল – মুসলমানদেরকে অসাম্প্রদায়িক-  হয়ে থাকতে হবে। এটা শুধু বাংলাদেশের বেলায় নয়, এখনকার সারা ভারতের – মানে কেবল মোদির ভারতের না বা হিন্দুত্ববাদের ভারতের নয় – সারা ভারতের বেশীর ভাগ হিন্দু নাগরিকের আকাঙ্খা। এমন এক ভারত রাষ্ট্রই এদের কল্পনা।  আসলে যেকোন থিওলজি-তে দাঁড়িয়ে কল্পনায় যে কোন মর্ডার্ণ রাষ্ট্রের অনুমান এমন হয় ও হবেই।  আসলে যেকোন এথনিক বৈশিষ্ট ভিত্তিক আধিপত্যের কল্পনা এটা দিয়ে জাতিরাষ্ট্র কায়েম হবে হয়ত কিন্তু তা রিপাবলিক রাষ্ট্র হবে না যেটা ‘নাগরিক সাম্য’ অথবা “ধর্ম-নির্বিশেষে সব নাগরিক অধিকারে সাম্য” এটা হবে না।
এককথায় বললে, ভারতের হিন্দুত্ববাদ (সাথে একালের ওয়ার অন টেরর) এটাই কিন্তু বাংলাদেশে  -ইসলাম সম্পর্কিত যেকোন কথা, ভাব বা আইডেনটিটি সব মিলিয়ে যেকোন কালচারাল বা রাজনৈতিক প্রকাশ  জোরেসোরে ঘটিয়েছে।  এটা হল হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ।  অথচ তামাসাটা হল, হিন্দুত্ববাদের ভারত বাংলাদেশে ইসলামের কালচারাল বা রাজনৈতিক প্রকাশ ঘটিয়ে যে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ সেটাকেই “জামাতে ইসলাম” বলে প্রতীকী নামে বিরোধিতা করছে!
আর ঐ যে জমিদার হিন্দুর ডমিনেন্স এর চিহ্ন ও নমুনা হিশাবে মুসলমানদেরকে “অসাম্প্রদায়িক” হয়ে থাকতে বলার দাবি ও বয়ান এটাই সবচেয়ে বেশি করে বয়ে বাংলাদেশের নিয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ ফেরত মুসলমানেরা
।  কারণ কলকাতায় থাকার সময়ে এসব মুসলমানেরা অসাম্প্রদায়িক থাকবে এই শর্তেই তো শিক্ষিত হতে সুযোগ পেয়েছিল।    অথচ বাংলাদেশে ফিরে এরাই প্রগতিবাদের নামে হয়ে গেল হিন্দুত্ববাদের (জমিদার হিন্দুর ডমিনেন্স ধারণার) ক্যারিয়ার।
তবে এত শব্দ থাকতে বাংলাদেশের চেতনাবাদী বা “মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি” কেন ইসলাম কোপাতে “জামাতে ইসলাম” বলে প্রতীকী শব্দটা বেছে নিল?  এর কারণ হল, “জামাতে ইসলাম” নামে ডেকে কাউকে কোপানো এর  পরে এমন নৃশংসতার পক্ষে কোন সাফাই হাজির করা ওদের জন্য খুবই জরুরি।  আর ইসলাম কোপানোর স্বপক্ষে সেই সাফাই বয়ানটা হল, যে এটা সাধারণ ভাবে “বাংলাদেশে ইসলামের কালচারাল বা রাজনৈতিক প্রকাশকে” কোপানোর নৃশংসতা করা নয়; বরং এটা যেনবা  ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামের অপরাধের বিরোধিতা করা হচ্ছে। 

কঠিন সত্যিটা হল,   বাংলাদেশে ইসলামের কালচারাল বা রাজনৈতিক যেকোন প্রকাশকে কোপানোর নৃশংসতা করা – এটা তো রেসিজম। ঘোরতর এক Racism; এক নির্মুল আকাঙ্খা।  এক এথনিক[ethnic] জাত-ধর্ম বিদ্বেষ – ইসলামবিদ্বেষ! এথনিক ক্লিনজিং [ethnic cleansing] বা অন্যের জাত-ধর্ম নির্মুলের ভয়াবহ আকাঙ্খা!!   অথচ এটাই প্রগতিশীলতা বলে চালানোর চেষ্টা  চলছে।

তাহলে আনন্দবাজার কেন এখানে জামাতে ইসলাম শব্দ দিয়ে মুসলমানবিদ্বেষ ছড়ানোর সুযোগ নিল?
কারণ, সে আমেরিকাকে ভয় দেখাতে চায় যে হাসিনা আগামিতে ক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশে ইসলামিজম ছেয়ে যাবে। কাজেই হাসিনাই ক্ষমতায় থাক! এই হল তাদের ছদ্ম-পরিচয়ে থেকে বলা সাজেশন!

কিন্তু এনিয়ে অ্যামেরিকান অবস্থান কীঃ
এটা বলাই বাহুল্য যেকেউই  ক্ষমতাসীন যখন থাকে তখন সে কখনই  বিরোধি যেকোন “রেডিক্যালিজম” মানে ক্ষমতাসীনকে সশস্ত্রভাবে উতখাত করতে চাওয়া যেকোন শক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর বা নির্মমই হবে।  একারণের সবদেশের কনষ্টিটিউশনেই লেখা থাকে এসব “রেডিক্যালিজম”  করলে ওর শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। তাই  ইসলামি রেডিক্যালিজমের বিরুদ্ধে আমেরিকার অবস্থান থাকা তা কোন নতুন জিনিষ নয় বরং অনস্বীকার্য বা obvious ঘটনা অবস্থান। এছাড়া ওয়ার অন টেরর এর টানা বিশ বছর এর বেশি হয়ে গেল; এখন   আমেরিকার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা-শিক্ষা তো হয়েছেই ধরে নিতে পারি। সম্ভবত সেকারণের আমাদের মত দেশে অ্যামেরিকান নীতি এখন ইসলামি রাজনীতি মানেই এর বিরোধী হতেই হবে ঠিক তা নয়। মানে কোন মর্ডান রিপাবলিক রাষ্ট্রে ইসলামি রাজনীতি করা যাবে না ঠিক তা নয়। তবে মূল অবস্থানতা হল এই যে, নাগরিক অধিকারের দিক থেকে সব ধর্মের নাগরিকের অধিকার সমান বা সাম্য ধারণার মধ্যে থাকলে  ইসলামি রাজনীতি করতে কোন দলেরই সমস্যা নাই। তবে এর সাথে কথা আরো কিন্তু কথা বা ফারদার ব্যাখ্যা তারা সাথে দিয়ে বা করে থাকে। যেমন তারা সমাজে প্লুরালিজম [Pluralism]  থাকবে মানে হল,  ওদেশে বহু এবং বিরোধি মতামত-রাজনীতি থাকবে এটা মানতে রাজি থাকতে হবে। এছাড়া একথাটাই আরেকভাবে বলা ইনক্লুসিভ [Inclusive] বলে আরেক শব্দের কথা তারা বলে দেয়। যেমন যেকোন রাজনীতি-চিন্তাকে তার সকল বিরোধিতাকারীদেরকেও সাথে পাশাপাশি নিয়ে চল্তে পারতে হবে।  মানে কোন বিরোধি মতামত বক্তব্যকে চাপিয়ে কোনায় ফেলে দেয়া বা কোনঠাসা করে রাখা  – সেটা না করে বরং সবার বক্তব্যই বলতে দিতে হবে, তাতে শেষে কার বক্তব্য ও তা কতটুকু পাবলিক গ্রহণ করবে সেটাই হবে সবকিছুর নির্ধারক। এসবই মোটা দাগে অ্যামেরিকান অবস্থান। মানে সারাংশে বললে, ভারত বা আনন্দবাজারি গোষ্ঠি  ইসলামি রাজনীতি বা ইসলামি জুজুর ভয় দেখালেই আমেরিকা ভয় পেয়ে পালাবে বা হাসিনাকে ফরে ক্ষমতায় রেখে দিবে আর  এই বাজারি গোষ্ঠি এতে সফল হয়ে যাবে – এগুলা বেকুরি সর্টকার্ট ও ধান্দালি চিন্তা।

এগুলো আসলে কলকাতার কিছু মফস্বলি চিন্তা।  তাদের দুনিয়া বলতে তা কলকাতার মধ্যেই আবদ্ধ বলে মনে করে – এরা আমেরিকাকে আন্ডার এস্টিমেট করছে খামোখা। এসব তো এমনকি জয়শঙ্করই আমল করবে না,  করার কথা না। মোদি-জয়শঙ্কর বরং  ভারতে বাইডেনের পলিসিকে  কৌশলে পাশ কাটিয়ে কিভাবে মোদিকে আবার ক্ষমতাসীন করবে – এই চিন্তায় নির্ঘুম! নিজ মাথার ঘায়ে তারা নিজেরাই পাগল অবস্থায়! যদিও হাসিনাকে জি-২০ এর সভায় ডেকে আনতে পেরেছে বলে এটা মোদি সরকারের বিরাট কূটনৈতিক  সাফল্য বা মোদি আন্তর্জাতিক জগতে এক বিশাল নেতা এসব কথা ছড়িয়ে ভোটের বাক্সে এর ইতি প্রভাব যেন পড়ে ইত্যাদি এসব কান্ড তো মোদি অবশ্য করবেনই!!  এমনকি বাইডেনও জি২০ এর সভায় আসতেছেন; তাই বাংলাদেশের হাসিনার জন্য মোদিই যেন বাইডেনের কাছে সুপারিশ করবেন বলে মোদি প্রপাগান্ডাও করবেন। সেটা নিজে বলবেন না অবশ্যই – তবে কয়েকটা মিডিয়ায় এমন জল্পনা-কল্পনা রিপোর্টও করাতে পারেন। যদিও তা অবশ্যই ওখানেই শেষ হবে; মানে সত্যিই মোদি কী বাইদেনের সাথে কথা বলেছিলেন তা নিয়ে আর কোন রিপোর্ট হবে না। ফুলস্টপ!

হাসিনা জি-২০ মিটিংয়ে গেলেও বাইডেনের সাথে কোন সাইড-লাইন টকঃ
আমরা এখনও কেউ জানিনা (এছাড়া এখনও সময় আছে) যে হাসিনা শেষে জি-২০ এর সভায় ভারত সফরে নিশ্চিত যাবেন কী না! ধরে নেয়া যাক তিনি যাবেন। যদি যানও তবু হাসিনার সরাসরি বাইডেনের সাথে বা মোদির মধ্যস্ততায় কোন কথা কী হবার সম্ভাবনা আছে? সাইড লাইনে? অনুমান হচ্ছে এর সম্ভাবনা খুবই কম। এর অন্তত একটা কারণ হল, আমেরিকার সাথে বসে কোন আর লাভ বা পরিস্থিতি হাসিনার পক্ষে আগাবে এমন বাস্তবতা সম্ভবত আর নাই। তা এখন ঢাকায় একেবারেই স্পষ্ট!  যেমন সর্বশেষ যে দুজন কংগ্রেস-ম্যান ঢাকা সফরে এসেছিলেন তা সরকারের জন্য কোন সুখকর কিছু ছিল না। এই সফরে কংগ্রেস-ম্যানদের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জবাব ছিল এর এক মাপকাঠি। কারণ, মোমেনের জবাব দেখে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল যে কংগ্রেস-ম্যানদের প্রশ্নগুলো কাম্য বা ওয়েলকামিং  নয়! খাস বাংলায় বললে মোমেন -টেরা উত্তর- দিয়েছিলেন।  এছাড়া অতিথিরা ঢাকার পৌছানোর আগেই মোমেন অনেকবারই বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই আগমন ওয়েলকামিং নয়। তিনি বলে দিয়েছেন, নির্বাচনের আগে সরকার আমেরিকার সাথে আর কোন চুক্তিতেই যাবেন না।  অথবা হাসিনার নিজেরই ভারত মহাসাগরে কী ঘটতে যাচ্ছে সংক্রান্ত বক্তব্য থেকে বুঝা যায় তিনি আমেরিকার সাথে সম্পর্কের উন্নয়নের কোন আশা আর সম্ভবত দেখেন না।
কাজেই এই পরিস্থিতিতে তিনি জি-২০ এর সভায় বাইডেন বা অন্য কারও সাথে কথা বলার আগ্রহে আছে – এটা আমাদের জন্য কষ্ট কল্পিত!
আর এসব খুটিনাটি দিক বা এর ডেভেলবমেন্ট বিবেচনায় রেখে কথা বলা – এটা আনন্দবাজার বা অগ্নি রায়ের মুরোদের মধ্যে তা আছে এমন মনে হয় না। তার আসলে একটা মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালানো তাও আবার সেটা মফস্বলি বুঝাবুঝির উপর ভর করে করতে যাওয়া …… না এটাকে এখানেই ছেড়ে যেতে হচ্ছে আমাদের!

আপডেটেডঃ    ২০ আগষ্ট ২০২৩;  রাত ০১ঃ ৫৩
আপডেটেডঃ     ২০২৩;

>>
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

Leave a comment