বিডিনিউজ বা চন্দন নন্দীর নাদানি
গৌতম দাস
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
https://wp.me/p1sCvy-4WN
[রাজশাহী অঞ্চলের কিছু বিশেষ এক্সপ্রেশন-শব্দাবলী আছে – “মামু, কাকে লেড়েছো? সে খবর লিয়েছো?”
খুবই কমিউনিকেটিং একটা আঞ্চলিক পদবাচ্য বটে! মানে হল, যা যথেষ্ট বুঝো নাই তা নিয়ে কথা বলতে গেছো কেন? এমনই কিছু অর্থ বিতে পারে এই ভাষ্য!
চন্দন নন্দীর লেখার দশা হয়েছে তাই। তিনি এক অনিয়মিত সাংবাদিক, যার একটা লেখা আমাদের বিডিনিউজ২৪ মিডিয়া ছাপানোর পরে সবই ব্লক করে রাখা আছে। আজকের লেখা সেই প্রসঙ্গের ভাল-মন্দ দিক নিয়ে।
বিডিনিউজ সরকার বা ভারতের ঘনিষ্ট বলে এমন এক পরিচিতি কারো কারো চোখে থাকা সত্বেও – এটা বিডিনিউজের দ্বিতীয়বার ব্লকড হওয়া, প্রথমটা ২০১৮ সালের। কেউ কোন একটা লেখা নিয়ে আসলেই সেটা বিডিনিউজ ছেপে দিবে তা হওয়ার কথা না। যেকোন লেখাই লেখা ছাপবার অনেক দায়দায়ীত্ব আছে। সেসব পূরণ ও পালন হচ্ছে কীনা সেসব দেখাও যেকোন দায়ীত্বশীল মিডিয়ার কাজ। আবার কোন মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া – এটাও খুব ভাল লক্ষণ না। ভাল সামাজিক প্রাকটিস নয়! তবে বাংলাদেশে আমরা এখন এমনই খারাপ অবস্থায় যে কোন নীতি-পলিসি বা তত্বকথা শুনার সময় নাই কারো। সবাই ক্ষমতা কেন্দ্রিক চিন্তা ও ততপরতায় ব্যস্ত! এই অবস্থায়, চন্দন নন্দীর লেখা আলোচনার প্রসঙ্গ!]
গত কয়েকদিন ধরে অনেক বিদেশী পত্রিকা, যার একটা বড় অংশই ভারতের মিডিয়া, তারা যা কিছুই লিখছে তাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু থাকছে। ফলে চরম উন্মুখ উৎকন্ঠায় থাকা এখনকার বাংলাদেশের মানুষ সবকিছুর উপরেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তাদের কান খাড়া সবদিকে! তাই মুহুর্তেই সব ব্যক্তি জানাজানি সামাজিক হয়ে যাচ্ছে। এমন লেখাগুলো যাদের মধ্যে নিউইয়র্ক টাইমসে মুজিব মাশাল [Mujib Mashal] নামের একজন যার লেখার শিরোনাম “নীরবে ধ্বংস করা হচ্ছে একটি গণতন্ত্রকে, বাংলাদেশে কাঠগড়ায় মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ [Quietly Crushing a Democracy: Millions on Trial in Bangladesh]”। যেটা আবার আমাদের মানবজমিন অনুবাদ করে ছেপেছে (লেখকের মুজিব মাশাল নামের বাংলা বানান আমি মানবজমিন -এরটাই অনুসরণ করেছি)।
এই মুজিব সাহেবের লেখার প্রসঙ্গ তেমন কিছুই নতুন না, আমাদের আদালত পাড়ারই ঘটনা যা আমরা ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই এর সেকাল থেকে এপর্যন্ত সব দেখছি, সহ্য করে চলছি। তবে এখন নতুন কেবল এতটুকুই যে এই মুজিব সাহেব এবার এদিকে চোখ ফিরিয়েছেন। কাজেই এনিয়ে আমাদের মন্তব্য একটাই যেটা উনি নিজে নিজেকেই জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন যে উনি এখন কেন, কী মনে করে এদিকে ফিরলেন! তার সব প্রশ্নের জবাব ওখানেই আছে!! আর আমরা ভিকটিম এর বেশি কী বলতে পারে!! শুনেছি ভিক্ষার চালের গুনাগুণ নিয়ে আলোচনা চলে না। অতএব আমাদের এমন সময়ে আমাদের নিয়ে, মনোযোগ ফিরানো সবাইকেই স্বাগত!
সাথে আরও আছে; মানে আছে ভারতীয় এক চন্দন নন্দীর লেখা। এ’লাইনে পুরানা লোক; ২০১৮ সালের আগে বাংলাদেশ নিয়ে এখনকার মত বেশ ততপরতা দেখিয়েছিলেন। অনেকের মনে হত, তিনি ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের সাথে কানেকটেড লোক তবে, পুরানা কংগ্রেসি কোণায় পরে থাকা ধারার। আর সবচেয়ে বড় কথা সাংবাদিকতার চেয়ে পাগলামি করেন বেশি। আর তাঁর পাগলামিটাই অপ-সাংবাদিকতা হয়ে যায়। তার এবারের লেখার শিরোনামঃ বিভক্ত দুপথের মাথায় আটকে যাওয়া [Caught in a cleft stick]। ঐ লেখার শুরুতেই দাবি করা হয়েছে এই লেখা আগে বাংলাদেশের বিডিনিউজ২৪ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। [যে ভার্সানটা আমার হাতে তা নর্থ-ইস্টের এক ওয়েব-সাইট থেকে নেয়া। আর বলে রাখি ভারতের নর্থ-ইস্টের কোন ওয়েব-সাইট মানে এরা কম-বেশি গোয়েন্দা ফান্ডেড।] এই সাইটে লেখাটার শুরুতেই দাবি করা হয়েছে লেখাটা আমাদের বিডিনিউজে প্রকাশিত হবার দুঘন্টা পরেই নাকি বিডিনিউজের বাংলা ও ইংরাজি ওয়েব সাইট এটা আর বাংলাদেশ ও ভারতের দর্শকেরা কেউ দেখতে পারছে না, ব্লক করে দেয়া হয়েছে। কথা কতদুর সত্য-মিথ্যা জানি না। তবে ভারত থেকে নয়,এমন, অন্য-বিদেশ থেকে অন্তত ইংরাজি বিডিনিউজ তারা দেখতে পাচ্ছে বলে জানিয়েছে।
[This article by Chandan Nandy first appeared in Bangladesh’s premier news portal http://www.bdnews24.com earlier this morning. In less than two hours after the article’s publication, both the English and Bengali websites of bdnews24.com was blocked for viewers/readers in Bangladesh as well as India]
তবে এটা বাংলাদেশে মানে আমাদের বিটিআরসি [BTRC] থেকে ব্লক করে দেয়া অসম্ভব নয়। বরং দেয়াটাই আমার কাছে স্বাভাবিক পরিণতি মনে হয়!
চন্দন নন্দীর আরেক দিক থেকে পরিচয়ঃ
বাংলাদেশে এটা প্রতিষ্ঠিত যে গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেবার একটা নিশিভোট বা রাতের ভোট হয়েছিল। মজার কথা হল এনিয়ে চন্দন নন্দীর স্টেক কী? এই পাগলের হাল কী? মানে ঐ নির্বাচন নিয়ে এর ততপরতা বা বয়ান কী ছিল? কারণ, আজকের মত ২০১৭ সাল থেকেই সে বাংলাদেশ নিয়ে সক্রিয় ছিল, কোন একটা পত্রিকা [মালয়েশিয়া থেকে প্রকাশিত সাউথ এশিয়া মনিটর নামে। southasianmonitor.com] এর সাথে সম্পর্কিত থেকে। পত্রিকাটা এখন খোলা দেখালেও সাইটটা আপডেট হয়না এভাবে খোলা আছে।
কিন্তু যেটা এখন গুরুত্বপুর্ণ তা হল, ২০১৮ আলের নির্বাচন হয়েছিল ৩০ ডিসেম্বর। আর এর পরের দিন চন্দন নন্দী নিজের টুইট একাউন্ট থেকে একটা টুইট করেছিলেন ৩১ডিসেম্বর ২০১৮, যেটা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। তার সে টুইট একাউন্ট এখন খোলা যায় না। কিন্তু সংগ্রহ করে রেখে দেয়া একটা স্ন্যাপ সর্ট এখানে দিচ্ছি। ছবিতেই যা কথা বলার বলে তাই কোন বর্ণনা দিলাম না।
কেন চন্দন নন্দীর লেখা বা বিডিনিউজ ব্লকডঃ
এককথায় বললে, চন্দন নন্দীর লেখা জার্নালিজম হয় নাই। মানে এর নুন্যতম নীতি অনুসরণ করে নাই। এই লেখাটা শুধু ভুয়া নয় বরং প্রমানিত মনে করা যায় এমন কোন সোর্সের উল্লেখ তিনি করতে পারেন নাই, অথচ যা খুশি লিখে গেছেন; সে কারণে।
এখন পালটা অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে কিছুদিন আগে আনন্দবাজারের অগ্নি রায় এর লেখা ও পরে যা ডয়েচ ভেলে তে ছাপিয়ে এরপরে তা প্রথম আলো আর ডেইলি স্টারে ছাপা হয়েছিল – সেই লেখা ও ততপরতাগুলোও তো জার্নালিজম ছিল না। তাহলে তাদের বেলায় আমাদের সরকার ‘কোন ব্লক করা’ বা কোন বাধাই দেয় নাই কেন? এককথায়, এনিয়ে অনুমান করা জবাব হল, অগ্নি-আলো-স্টার এভাবে – এই গোষ্ঠির ততপরতাটা ছিল সরকারের পক্ষে যায় এমন প্রপাগান্ডা, আর বুঝাই যাচ্ছিল যে এটা দুদেশেরই সরকারের “জানাশুনা” লোকের মাধ্যমে ঘটানো কাজ। কিন্তু সেই মিথা প্রপাগান্ডা বাংলাদেশের সরকারি দলের কর্মিদের মনোবল বাড়াবে – এই মশলা আছে মনে করেছিল বলেই সম্ভবত তা চলতে দেয়া হয়েছিল – এটাই সম্ভাব্য কারণ বলে অনুমান!
অথচ বিপরীতে চন্দন নন্দী – সবকিছুতেই তিনি একা, একাই সব। এমনিতেই সব সময় তার ভিতর একটা ঝোঁক দেখা যায় যে “তিনি সাহসী – সাহসী জার্নালিজম করেন” – এই আত্মম্ভরিতা বা নিজের সম্পর্কে অতি আত্মবিশ্বাসী ও মিথ্যা উচু ধারণা পোষণ করে লিখে থাকেন। সম্ভবত এই ‘অতি আত্মবিশ্বাসী’ অথচ ভিত্তিহীন সাহস দেখাতে গিয়ে তিনি আলোচ্য লেখাটা লিখেছেন বাংলাদেশ সরকারকেই অভিযুক্ত করে অথচ কোন প্রমাণ দেন নাই! এটা গোয়ার মানুষের অতি সাহসী বোকামি বলা হয় সম্ভবত! যেমন তার পুরা লেখাটাই দাঁড়িয়ে আছে, “senior Awami League sources” এই অস্পষ্ট ও অর্থহীন “সুত্র” এর বরাতে! আওয়ামি লীগের সরকারের বিরুদ্ধে ভুয়া এক “আওয়ামি বরাতে” – যা খুশি তাই বলে দিবেন – এটা তো এক আত্মহত্যা-প্রবণ গাধামি!! প্রায় প্রতি প্যারার শুরুতে তিনি এই অর্থহীন কথিত এই একই সোর্সের বরাতে যা খুশি লিখে গেছেন; বেপরোয়াভাবে। অতএব এমন কান্ডগুলোতে তার না জানার কোন কারণ নাই যে এটা নুন্যতম কোন নীতি মেনে সাংবাদিকতা নয়। এটা কোন সাংবাদিক রিপোর্টই নয়।
তার বোকা সাহসের আরো নমুনা আছেঃ
প্রথমত তিনি বাংলাদেশ নিয়ে লিখতে এসেছেন ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ কোলে বসে; তারা যে অংশেরই হোক! অর্থাৎ তাঁর কোন লেখাই সাংবাদিকতা হবেই না! কিন্তু তিনি সম্ভবত ভেবেছেন, যেহেতু এ’লেখা হাসিনার মোদির ভারতকে ফেলে কথিত চীনের কোলের উঠে যাওয়ার গল্প – তাই তিনি বীরবেশে সব বাধা পার হয়ে যেতে পারবেন! অথচ তিনি কোন যুক্তি বোধবুদ্ধি তে কাজ করতে পারেন না, আবার এটা তিনি খেয়াল করেন না। তিনি চীনবিরোধী ভারতীয় দেশপ্রেমিক উগ্র জাতিবাদী হতে চেয়ে হাসিনাকেই অভিযুক্ত করছেন। তার মানে এলেখার টার্গেট পাঠক ভারতীয়রা। কারণ, একটা কথিত “ভারতীয় দেশপ্রেমিক উগ্র জাতিবাদী” মনকে টার্গেট করে লেখা বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির কোন অংশ পছন্দ করার কোন কারণ নাই। তিনি আওয়ামি লীগের সুবিধাভোগী হলেও না। এমনকি বাংলাদেশের হিন্দুরাও ভয় ও দ্বিধা করবে!
তাহলে এই লেখা সরাসরি বাংলাদেশেই ছাপতে চাওয়ার এত মরিয়া আগ্রহ কেন??? এত অর্থ একটাই তা হল, আমি একটা ভারতীয় এক বেপরোয়া হিন্দু-মন দিয়ে বাঙ্গলাদেশ তো বটেই সারা দুনিয়াকে দেখতে চান! শুধু তাই না আপনার এই দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান আপনি বাংলাদেশের মাথায় চাপায় দিতে চান! এমনকি এটা এতই বেপরোয়া যে তা আওয়ামি লীগ তো বটেই হাসিনাকেও বাধ্য করতে চান! এটাই এক অন্ধ ও বোকার গাধামি সাহস!
চন্দন নন্দী নিজেকে এতই অযোগ্য ভাবে তুলে ধরেছেন যে তিনি মনে করেন বা ধরেই নিয়েছেন যে বাংলাদেশের কোন স্বার্থ নাই, এনিয়ে কোন স্বার্থবোধও নাই; শুধু তাই না। খোদ প্রধানমন্ত্রী হাসিনারও ক্ষমতায় টিকে থাকবারও যেন কোন স্বার্থ নাই! কেবল ভারতের স্বার্থই আছে আর সেটাই সহি। আর তাই, বাকি আমাদের সকলকে ভারতের পক্ষে তাও সেটা আবার মুরোদহীন এক ভারত – এর পক্ষে জয়গান করতে হবে, সেটা করাই আমাদের কাজ! সহজ ভাষায় বললে এটা এক স্টুপিডিটি; আর তা এমনই স্টুপিডিটি যা কোন সুস্থ মানুষ করে না!
তবে চন্দন নন্দীর এমন তিনটা স্টুপিডিটি আছেঃ
প্রথম স্টুপিডিটি বা গাধামিঃ
সম্ভবত গাধাও একটা পর্যায়ের পর আর গাধামি করে না। কিন্তু চন্দন নন্দী তাতে থামতেও রাজি না, এমনই তার স্টুপিডিটির লেভেল! তার লেখায় নিচের এই বাক্যটা আছে সেখান থেকে উঠিয়েছিঃ
“However, the only concession that the Awami League government
is likely to make is to partially reduce the level of repression on
opposition party leaders, cadres and supporters.”
নন্দী বলছে, আওয়ামি লীগ এবার একটাই কনসেশন বা ছাড় দিতে পারবে সেটা হল level of repression। এইটায় একটু ছাড় দিতে পারবে। মানে এবার বিরোধীদেরকে গুম, খুন অপহরণ একটু কম করে করবে। মজা না। আমাদের তো একথা শুনে হাততালি দেয়া উচিত। আর চন্দন নন্দীর নামে জয়ধ্বনি!! তাই না??
কিন্তু ঘটনা হল উলটা? হাসিনা সরকারের এতে প্রচন্ড ক্ষেপে উঠাই স্বাভাবিক। কেন???
কারণ, এই বক্তব্য দিয়ে নন্দী স্বীকার করে ফেলেছেন যে এর আগে হাসিনার দল বিনা concession এর হেভি level of repression তাহলে আওয়ামি লীগ করেছিল। আর সে তুলনায় এবার কম করবে – এটাই তো নন্দীর ভাষ্য???
এটা স্টুপিড চন্দন নন্দী খেয়াল নাই। তিনি খেয়াল করছেন না। কিন্তু হাসিনা সরকারকে অবশ্যই এই স্বীকারোক্তি অপসারণ করতেই হবে! কারণ, সে তো স্টুপিড নন্দী না; হওয়ার কোন সুযোগও নাই। তাই স্বভাবতই সে নন্দী-ভৃঙ্গী সবাইকে সাথে বিডিনিউজ কেও আগাছার মত উপড়ে ফেলে দিয়েছে!!!
এখন তামসাটা হল, এতে নন্দীও বেজায় খুশি হয়েছে। কারণ, “কোন লেখা নিষিদ্ধ হওয়া মানেই তা নিশ্চয় খুব দামি লেখা????” আর এই দামি লেখাটা প্রসব করেছে নন্দী! আর তাতে নিশ্চয় আমরা বুঝতে পারছি গাধা কত প্রকার ও কী কী!!!!
দ্বিতীয় স্টুপিডিটি বা গাধামিঃ
এবার দেখি পরেরটা। তার লেখায় পরের আরেক বাক্য হল এরকমঃ
This time around, there are few reports of “disappearance” of opposition party cadres.
এবারও তিনি আরো বড় গাধা হয়ে আমাদেরকে আশ্বস্ত করছেন যে এবার বিরোধীদেরকে গুম বা অপহরণ কম হচ্ছে বা হবে। চন্দন নন্দী হিউম্যান রাইট হিশাবে “অপহরণ” শব্দের অর্থ তাতপর্য কোন্দিনই বুঝেন নাই তাই বুঝা যাচ্ছে। ঠিক যেমন আমাদের দিপু মনি তিনি ২০১৩ সালে তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জেনেভায় জাতিসংঘের (UPR) সভায় খোলাখুলি বলেছিলেন বাংলাদেশের আইনে গুম বা অপহরণ (disappearance) বলতে কোন অপরাধের কথা নাই। অতএব বাংলাদেশে কোন disappearance নাই! এতে যে যা বুঝছেন বুঝে নেন! আর এখানে চন্দন নন্দী দেখা যাচ্ছে আরেক কাঠি সরেস! তিনি সরকারের হয়ে আশ্বস্ত করছেন এবার disappearance হবে তবে কম হবে!!!
অথচ ঘটনা হল, একটা disappearance এর ঘটনা যদি ICC তে প্রমাণ করা যায় তো হুকুমের আসামি হিশাবে প্রধান নির্দেশদাতার সর্বোচ্চ শাস্তি হয়ে যাবে! আমি নিশ্চিত এসব দিক এই চন্দন নন্দী কখনও খবর নেন নাই। তাই অবলীলায় বলে যেতে পারছেন এবার disappearance কম হবে। মানে যেন এবছরের ধানের ফলনের হিসাব দিচ্ছেন!!!
তাই এক্ষেত্রেও হাসিনা সরকারকে অবশ্যই নিজ স্বার্থে নিজে স্টুপিড নন্দী না হয়ে নন্দী-ভৃঙ্গীসহ বিডিনিউজ কেও আগাছার মত উপড়ে ফেলে দেয়া ছাড়া পথ ছিল না!!!
তৃতীয় স্টুপিডিটি বা গাধামিঃ
এলেখায় তিনি, কোন রাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেটা যে কোন ধরণের চাপবিহীন ও বিশ্বাসযোগ্য হতেই হয় এবং তা উল্লেখ করা লাগে নাই নইলে কে জনপ্রতিনিধি হল? আর জনপ্রতিনিধিত্বই যদি ফেয়ার ভাবে না হয় তো ওটা তো কোন রিপাবলিকই না – গণপ্রতিনিধির রাষ্ট্র না, সমাজের কোটারি গ্রুপের ক্ষমতা হল সেটা এটাই তো ফ্যাসিবাদ হয়েছে বা হবে। অথচ এলেখায় চন্দন নন্দী সব সময় বলে গেছেন, নির্বাচন ফ্রি ও ফেয়ার একটা রিলেটিভ ধারণা মাত্র। হাসিনাও নির্বাচন ফ্রি ও ফেয়ার করতে পারেন। সেটা পিটার হাসের মাত্রায় ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচন না হলেও চলবে। এটা সোজাসুজি একটা শয়তানি। একেবারে যেকোন ধর্মতত্বে শয়তানের যে বর্ণনা আছে সেই দানব এই চন্দন নন্দী। তিনি ভারতের নির্বাচনে গইয়ে তার এই শয়তানি তত্ব ফেরি করে না কেন? আগে তিনি সেটা করে আসেন এরপর ………।
তাই এসব শয়তানি বক্তব্য দেয়া তা বলার কোন মানে হয় না। অথচ তিনি কী বলেছেন দে৪খেনঃ
the Western bloc, including the US, seek to play a role “far stronger than India”
in shaping the road for a relatively free and fair elections in Bangladesh.
অর্থাৎ তিনি সুজাতা সিং এর ২০১৩ সালের হস্তক্ষেপটাকে জায়েজ করতে সেটা এবারের পিটার হাসের ভুমিকার সাথে তুলনা করে দিলেন। আর কৌশলে দাবি করলেন এটা একটা relatively free and fair elections – মানে তুলনামূলক ঘটনা মাত্র বলে দেখাতে চাইলেন। মানে এটা মাত্রাজ্ঞানের ব্যবপার যা একেক জনের একেক রকম হয় =- সেই মাত্রাজ্ঞান। এটা যেন “far stronger than India” মাত্র এতটুকুই।
তামাসার দিকটা হল, এই দানব নন্দীর একটা সাধারণ নির্বাচনকে খুবই হাল্কা ব্যাপার হিশাবে দেখা আর সেটা নেহাতই ফ্রি-ফেয়ার এর মাত্রজ্ঞান এর ব্যাপার বলে চালানোর চেষ্টা এটা হাসিনাও হজম করতে চান নাই। এরই বহিঃপ্রকাশ হল আপন স্বার্থে নিজে কোন স্টুপিড নন্দী না হয়ে নন্দী-ভৃঙ্গীসহ বিডিনিউজ কেও আগাছার মত উপড়ে ফেলে দিয়েছে সরকার!
হাসিনার পাঁচমন্ত্রীতে ভারতের কথিত আপত্তি প্রসঙ্গঃ
প্রসঙ্গটা সবার আগে তুলে ছিলেন সুবীর ভৌমিক যে হাসিনার পাঁচমন্ত্রী নাকি পাকিস্তানপন্থী! তিনি নামও উল্লেখ করেছিলেন সেবার। কিন্তু অর্থহীন একটা বিষয়কে ঘটনা বানানো মনে হবে যেকোন সিরিয়াস পাঠকের কাছে। অন্তত দুটা কারণে এক. বিভিন্ন দেশের সরকারে মন্ত্রীদের মধ্যে সিরিয়াস গ্রুপিং চলে আর তা একেবারে মতাদর্শিক লেভেলে। কোল্ডওয়ারের আমলে ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রীসভায় মোরার্জি দেশাই – এসব আসলে সেকালে সোভিয়েত নাকি আমেরিকান এভাবে পন্থী পরিচয়ের আড়ালে দ্বিবিভাগে বা গ্রুপিং চলত। তবে অবশ্যই তা আন্ডার কারেন্ট। মানে মূল স্রোত বা মেন স্ট্রিম বা মূল ধারাতেই বভক্তি না অবশ্যই না। মানে ইন্দিরার ক্ষমতাকে মেনে নিয়েই এরপর দুই ধারার মত। এমনকি আমাদের ৭১ যুদ্ধের সময়েও ইন্দিরার আমেরিকান ধারার মন্ত্রীরা বিরোধিতা করেছে। তো এই অর্থে কোন মন্ত্রীসভার ভিতরে গ্রুপিং এর কথা জানা যায়।
কিন্তু হাসিনার মন্ত্রীসভার মধ্যে গ্রুপিং? এটা যে না বাংলাদেশ না হাসিনা কাউকেই চিনেনা কেবল – মন্ত্রীসভায় গ্রুপিং থাকে – এই তত্বীয় ধারণা যা খুশি বলে এদের কথার নুন্যতম গুরুত্বও নাই। তাই এর আমলও নাই। আসলে দলের ভিতর দুই মতামত নিয়ে আপোষে ফ্রি-ভাবে তর্ক-বিতর্কের সুযোগ থাকলে এরপরে মন্ত্রীসভা পর্যন্ত তা কল্পনা করা যেতে পারে। কাজেই সুবীরের এই কথিত গ্রুপিং এর ধারণা তুলে তিনি হয়ত অন্য কিছু বলতে চেয়েছেন তাই যেকোন সুস্থ মানুষ মনে করেছে। কারণ নিজ মন্ত্রীত্ব থাকলে বেচে গেলে সেটা মন্ত্রীর বাপের নাম দশা সেখানে এই মন্ত্রীরা আবার গ্রুপিং করবে। গ্রুপিং শুনলেই তো গুষ্ঠিশুদ্ধ বের করে দেয়া সহ যেকোন শাস্তি খাবে যেকোন ব্যক্তি মন্ত্রী! কাজেই পাঁচমন্ত্রীর গল্প – এটা বানানো গল্পই!
আর দ্বিয়=তীয় কারণটা হল, হিন্দুত্ববাদী ভারতের পাকিস্তান ম্যানিয়া বাংলায় যাকে চুলকানি বলে। মুসলমান বা পাকিস্তান নিয়ে হিন্দুত্বের চুলকানি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই! বট্ম লাইনটা হল আমাদের যেকোন কারো ভিনদেশে আত্মীয় স্বজন থাকতেই পারে। সালমান এফ রহমানের অনেক কাছের আত্মীয়ই পাকিস্তানের – তা হলেই পারে। সেজন্য তিনি পাকিস্তানপন্থী – এটা মূলত রেসিজম! সালমান রহমান খারাপ ব্যবসায়ী হতে পারেন, লোন ডিফল্টার হতে পারেন, ইত্যাদি মেলা অভিযোগ থাকতেই পারে কিন্তু সেজন্য তার বিরুদ্ধে করা কোন রেসিস্ট মন্তব্য জায়েজ হয়ে যাবে না! কিন্তু ভারতীয় হিন্দু-মন এতে অভ্যস্ত, এটাই দুঃখের ব্যাপার!
আর মোমেন যখন যাকিছু বলেছেন ধরে নিতে হবে তাতে প্রধানমন্ত্রীর সায় আছে। কে কোন পন্থী সেটা বাসায় বউয়ের কাছে রেখে এসে তবেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অধীনে মন্ত্রীত্ব করা সম্ভব। এটা যারা জানে না তারা এখনও মায়ের গর্ভে আছেন! বিকশিত প্রস্ফুটিত হন নাই। আমরা কয়জন কজানি বা মনে রেখেছি যে মোমেনের আগে হাসিনার সব পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন নাম কাওয়াস্তে – লো প্রফাইল। তাঁর অফিসই তখন প্রায় সবক্কিছু নিজে সরাসরি তদারকি করত। অবজারভেশন বলে, মোমেন দায়ীত্ব নিবার পরই তাঁর অফিস অনেক কিছুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলে আলাদা কাউকে নির্দেশ দিয়ে করান। ভারতের যারা মোমেনের বিরুদ্ধে বা কথিত গ্রুপিং ধরণের যা মনে চায় বলছেন তারা অন্যকিছু মিন করছেন সম্ভবত! বাংলাদেশের কেউই বিশ্বাস করবে না যে মোমেন কোন স্বাধীনপন্থা বা গ্রুপিংয়ে চলেন! আসলে এসব কথা যারা বলছেন তারা গত ১৫ বছরের সরকার কেমন কী তার ঝোঁক কিছুই অবজার্ভ না করেই বরং ভিন্ন কিছু বলতে চেয়ে এমন ভুয়া কথা ছড়াচ্ছেন! আবার এসব কথার মানে এমনও না যে হাসিনা সরকার বা মোমেন এর কাজ ততপরতা খুবই জন আদৃত! এরা সবাই নির্দোষ! অথবা নিঃস্পাপ ধরণের ইমেজের অথবা এমন ব্যক্তিত্বের।
চন্দন নন্দীর এলেখা মহা-চীনবিরোধী ভাবের উপর দাঁড়িয়ে লেখাঃ
চন্দন নন্দীর এই লেখা মহা-চীনবিরোধী ভাবের উপর দাঁড়িয়ে লেখা। ভারতের নিজ মুখের খাদ্য “বাংলাদেশ” একে চীন ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যেন – এমন অনুভব এর উপর দাঁড়িয়ে এটা লেখা হয়েছে। আমি বার বার বলেছি হিন্দুত্ববাদের মত একটা উগ্র জাতিবাদী দেশের হিন্দু-মন এরা দ্বিন-দুনিয়া বুঝতে অক্ষম। এদের সাংবাদিকতাও এমন দোষে দুষ্ট একপেষে হবে। আগে ভারতের জাতিবাদ ছিল মুসলমান বা পাকিস্তানকে চরম শত্রু জ্ঞান করে দারাকনো। সেজায়গায় এখন বসেছে চীন। ভারতের সব নিয়ে গেল চীন। এর বাইরে দুনিয়ায় আর কোন ঘটনা -ফেনোমেনা আছে কিনা তা এরা জানে না। জানতেও চায় না।
একবাক্যে একটা কথা বলে শেষ করব। বাইডেনের আমেরিকার নয়া নীতি-পলিসির কারণে মোদির ভারতের উপর তাদের চাপ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এটা এমনই যে তা যদি খুবই খারাপ অবস্থায় পৌছায় – এশিয়ায় বাইডেনের সাথে ভারত নীতি সরাসরি বিপরীতমুখী হয়ে দাড়ায় সেক্ষেত্রে ঐ সামলাতে না পেরে খোদ ভারতই চীনের কোলে গিয়ে উঠতে পারে। খোদ মোদি-জয়শঙ্করের বিবৃতির অর্থ এমন – আর তা প্রকাশিত হয়ে আছে। এবিষয়ে কী চন্দন নন্দীরা অবগত????
যারা আরো গভীরে যেতে চান, ভারতের NDTV তে ছাপানো এই রিপোর্টটা দেখতে পারেন গত ১১ আগষ্ট যা ছাপা হয়েছিল। আর পরেরদিন বাংলাদেশ তা অনুবাদ করে মানবজমিন ছেপেছিল বাংলায়।
যে ভারত নিয়মিত চীনকে অভিযুক্ত করে অন্যের ভুমি দখল করেছে বলে সে কেন আচমকা ফিলিপাইন-চীনের সীমানাবিরোধে তাদেরকে শান্তিপুর্ণ সমাধান বা “Resolve Peacefully,” বলে হাঁক পাড়ছে??? এটা তো অন্তত ২০১৭ কোয়াডে [QUAD] বা আমেরিকার আনা সাউথ চায়না সি – বিতর্কে ভারতীয় অবস্থান ফেলে পালানো মানে এসবের জন্মের পর থেকে এপর্যন্ত ভারতের অনুসরণ করা ভারতীয় অবস্থানের বিপরীত! সেটা কেন হল??
কাজেই কে কখন চীনের কোলে গিয়ে উঠতে চায়, কেন চায় কী দশায় সে বুঝে শুনে এসব উগ্র জাতিব্বাদ দেখানো উচিত চন্দন নন্দীদের। নাদান মানুষে ভরে উঠছে দুনিয়া!!!
সর্বশেষ আপডেটঃ ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সকালঃ ০৭ঃ ৪৫
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com


