ইরান-ইসরায়েল বিরোধের ইস্যুকে বুঝবার পদ্ধতি ও সাথে অন্যান্য


ইরান-ইsরায়েল বিরোধে,
এই ইস্যুকে বুঝবার পদ্ধতি ও সাথে আমার কিছু রিডিং
গৌতম দাস
১৫ এপ্রিল ২০২৪   সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা

https://wp.me/p1sCvy-5wh

 

US will not take part in any Israeli retaliatory action against Iran

 

ইsরায়েলের উপর ইরানের হামলা আসন্ন বলে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল আর এর আগে গাজায় লাগাতর ইরায়েলি ম্যাসাকার ঘটে চলা ইত্যাদি এসব কিছুর একটা পর্যায় সম্ভবত আমরা পার হতে যাচ্ছি। বিশেষত ইরানের হামলার পরে কী যুদ্ধ দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে যাবে – এই ছিল সারা দুনিয়া তো বটেই গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির মুখ্য টেনশন। এই টেনশন বা টান টান উত্তেজনার একটা আপাত পর্যায়কাল শেষ হল বলে সকলের ধরে নিচ্ছে।  বিশেষ করে খোদ ইsরায়েল বড় বাঁচা বেঁচে গেছি বলে দুর্ঘ্নিশ্বাস ফেলেছে। আর কথিত পশ্চিমা ওস্তাদদেরকে থ্যাঙ্ক জানিয়েছে। ……credited an international military coalition with helping thwart   .।
কিন্তু আকাঙ্খা –  নানান মুসলিম-প্রধান দেশের মূলত তরুণদের পর্বত প্রমাণ ‘মুক্তির’ আকাঙ্খা মানে প্যালেসটাইনিদের জন্য সহমর্মীতা থেকে উতপন্ন যেসব আকাঙ্খা সেই আকাঙ্খা-চাহিদার তুলনায় বাস্তবে ইsরায়েলকে ইরানের শিক্ষা দেয়া মানে, মিসাইল ও ড্রোন নিয়ে হামলার কার্যকারিতা হয়ত তুলনায় কম মনে হচ্ছে! সেকারণে, অনেকেই অসন্তুষ্ট! অনেককে দেখেছি ফেসবুকে ইরানের উপরই ঝাল ঝেড়ে ক্ষোভ প্রশমণ করেছেন!
এবারের গত বছর ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হত্যার যে অসহনীয় পরিস্থিতি ও গাজাবাসীর আত্মত্যাগ তা কী এবারও ক্ষতি বেশী লাভ তুলনায় কম হয়েই থাকবে?

আগেই মূলকথাটাই সরাসরি বলে নেয়া যাক; প্রসঙ্গের ভিতরে ঢুকে বিস্তারে যাবার আগেই। আরব-ইরায়েলের যুদ্ধ-দ্বন্দ্ব-রক্তাক্ত সংঘাত সেই ১৯৪৮ সালে ইsরায়েল – এই দানব রাষ্ট্রের জন্ম থেকেই। অথচ প্রকৃত ও শুরুর দ্বন্দ্বটা ছিল ইsরায়েলের সাথে পশ্চিমাস্বার্থের, পশ্চিমা দেশগুলোর। বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে ইউরোপ থেকে ইহুদিবিরোধী চরম মনোভাব বা জর্মান-কেন্দ্রিক নির্মুলের [cleansing] মনোভাব থেকে।  তাই ইউরোপে ছড়িয়ে থাকা ইহুদি জনগোষ্ঠি শেষে সারা ইউরোপ ছেড়ে পুনর্বাসিত হতে  দখলীকৃত প্যালেস্টাইনী ভুমিতে ইsরায়েল রাষ্ট্র জন্মাক, গড়ে উঠুক – এটা চেয়ে আমেরিকার নেতৃত্বে সারা পশ্চিরা সরকারগুলো এই ভূমি দখলী কাজে ইsরায়েলকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তা-সমর্থন করেছিল। এভাবেই নিজেদের পাপ ও অপরাধ তারা মুসলমান উপরে সঁপে দিয়েছিল!

হিটলার ইউরোপ থেকে ইহুদি জনগোষ্ঠি নির্মুল-নিধনের এথনিক ক্লিনজিং [ethnic cleansing] এর অপরাধ করেছিলেন। এই নৃশংস ঘটনায় কোন মুসলমান-প্রধান রাষ্ট্র বা কোন মুসলমান জনগোষ্ঠি একেবারেই সংশ্লিষ্ট নয় বা কখনও  কোন দৃশ্যপটেই ছিল না। মূলত জর্মান থেকে তাদের নির্মুল ও বের করে দেওয়া হলেও যেহেতু আরব বা প্যালেস্টাইন ভুমিদখল করে তাদের ঘাড়ে চড়ে সেখানেই ইহুদিদের বসতি গড়তে ঠেলে দেয়া হয় তাতে ইহুদিরাও আর সারা ইউরোপ বা আমেরিকাকে আর শত্রু ঠাউড়ালো না। নয়া শত্রু ঠাউড়ালো আরব বা মুসলমানদের।  যে নয়া শত্রুর ভুমি ইহুদিরাই দখল করেছিল। আর দখলিকাজে পশ্চিমারা ইহুদিদের সাহায্য-সহায়তা তাদের করেছিল বলে ইহুদিরা নিজেদের আসল শত্রুদের ভুলে যায় ও মাফ করে দেয়। অথচ জন্ম থেকেই খৃশ্চান ধর্ম বা এর অনুসারীরা ইহুদিদের শত্রু হয়েই জন্মেছিল – ইহুদি-খৃশ্চান বিরোধ তাই তখন থেকেই।  তা সত্বেও  ওদিকে যারা কিছুই করে নাই সেই মুসলমান বা আরবেরা হয়ে যায় ইহুদিদের নয়া টার্গেট, নয়া মূল শত্রু!

এ যেন বাইরে ব্যাপক মার খেয়ে এসে হতাশ পুরুষের বাসায় ফিরে মনের সুখে  বউ পিটানোর বিপ্লবীপনা!! ইহুদিরা যদি প্যালেস্টাইনিদের উপর তাদের ভুমিতে জবরদখলি করে পুনর্বাসিত না হয়ে যদি, ইউরোপের কোন ভুমিতেই নয়া আবাস গড়ত হত তাহলে যারা ইহুদি এথনিক ক্লিনজিং এর হোতা তাদের সঠিক ভাবে অপরাধের প্রতিকার হত!!
অথচ নয়া ঠাউড়ানো শত্রু মুসলমানদের উপর দানব ইsরায়েল রাষ্ট্রের অত্যাচার এখনও চলছে; আর এটাই এখন আর কোন আরব রাষ্ট্রই দায় নিতে চায় না; একে কেকে সবাই কেটে পড়েছে আর যেন সব দায় সওয়ার হয়েছে ইরানের ঘাড়ে। আর সেটাই একালে ইরান-ইsরায়েল বিরোধ-সংঘাত হিসাবেই হাজির! গত ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির পর থেকে কোন মুসলমান রাষ্ট্র আর প্যালেস্টাইনের পক্ষে লড়াইয়ে লক্ষ্যহীন হয়ে সক্রিয় থাকতে চায় নাই ; আরব জাতিবাদের পক্ষের রাষ্ট্র বলেও কেউ আর থাকতে চায় নাই। আরব জাতিবাদের পরিচয় ফেলে সবাই সেই থেকে নিজ নিজ আরব পরিচয় পিছনে ফেলে নিজ নিজ দেশ-রাষ্ট্রের জাতিবাদ [আরব জাতিবাদের বদলে সিরীয় বা মিসরীয় জাতিবাদ হয়ে গেছে] বলে পরিচয় বদলে নিয়েছিল। আর এঘটনারই আরেক ভাষ্য হল, আরাফাতের পিএলও [PLO] বা পিএফএলপি [PFLP] নামে যত বিপ্লবী যোদ্ধা ছিল সেসব হারিয়ে এখন মূখ্য নাম ইরান-সমর্থিত হামাস [HAMAS]! প্রথম দিকে হামাস এরা ইসলামি দল বলে প্রগতিশীলেরা নাক শিটকালেও এখন বাস্তবতা হল, হামাস ইসলামিস্ট কিনা সেই আপত্তি তলিয়ে গেছে – বাস্তবতায় মুরোদ দেখানোর সক্ষমতার বিচারে হামাস হল  এক সাহসী লড়াকুর নাম!  এরাই একমাত্র – ভুলে যাওয়া প্যালেস্টাইনদের লড়াইকে আবার চাঙ্গা করেছে! সামনে এনেছে! যদিও পথটা খুবই কঠিন ও চড়া মূল্যের। ইতোমধ্যেই তেত্রিশ হাজারের উপর জীবন, গাজাবাসীকে জীবন দিয়ে দিতে হয়েছে। কিন্তু তবু মুখ্য সাফল্য হল, ভুলিয়ে দেয়া লড়াইকে আবার সামনের কাতারে হাজির করা গেছে।  এবারের লড়াই-সংগ্রামের সবচেয়ে বড় সাফল্য এটাই। একে তুচ্ছ করা খাটো করে দেখা অপরাধ হবে! সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করব, আকাঙ্খার তুলনায় এই অর্জন হয়ত কম মনে হতেই পারে! কিন্তু দেখা-বিচারের ক্ষেত্রে একে যেন খাটো করে দেখা না হয়। ছোট করে না দেখা হয়। কারণ, এই অর্জনের তাতপর্য ব্যাপক!

ইতোমধ্যে এতদিনে অন্যদিকের আরেক ডেভেলবমেন্ট হল, আমরা জানি চলতি নয়া শতকে মুসলমানেরা বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও বৈষম্যের শিকার বলে একটা অনুভব ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে; এই বলে তাদের মুক্তি – গ্লোব-জুড়ে তাদের মুক্তির আকাঙ্খা এখন অনেক দূর ছড়িয়েছে। বিশেষ করে বুশের ওয়ার অন টেররের আমলে তাদের উপর আক্রমণ, সীমাহীন বৈষম্য অন্তহীন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আমাদের মত দেশে মুসলমানেরা বঞ্চিত, উপেক্ষিত বলে তাদের মুক্তি চাই বলে যতই চিতকার উঠুক – তা বাস্তবায়িত হবে ততটুকুই যতটুকু  এখনকার দুনিয়ার মূল দ্বন্দ্ব-বিবাদে ও মেরুকরণে  ইসলামি আকাঙ্খা কতটা বাস্তববাদী হয়ে প্রধান দ্বন্দ্বে ভিতরে নিজেকে সফলভাবে গেঁথে দিতে / নিতে পেরেছে।

প্রধান দ্বন্দ্ব বুঝতে পারা খুব গুরুত্বপুর্ণঃ
ইরান কেন আরো বেশী করে ইসরায়েলের উপর আমাদের তরুণের আকাঙ্খা পূরণের মত আক্রমানাত্মক হতে পারলো না? – এটাই এখনকার  এক প্রধান জিজ্ঞাসা! অনেকে মনে করছেন ইরান ভিতু, কম মুরোদের কিংবা ওরা শিয়া বলে নেতৃত্ব দিতে পারল না!
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এগুলো একটাও সঠিক না। বিষয়টা সঠিক বুঝবার এপ্রোচ নয়!  তাহলে কীভাবে বুঝব কোনটা সঠিক? তরুণের আকাঙ্খা কী এভাবে মার খেতেই থাকবে?

না, অবশ্যই না। তবে এসব ঘটনা বুঝবার পদ্ধতি না জানা থাকলে এমন অপ্রয়োজনীয় দোষারোপ চলতেই থাকবে।

প্রধান দ্বন্দ্ব বুঝতে পারা এসব এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি। প্রধান দ্বন্দ্ব মানে?
একটা সমাজ, রাষ্ট্রে বা এমনকি একটা পরিবারে অনেক ধরণের স্বার্থের দ্বন্দ্ব বা সমস্যা থাকে। একটা পরিবার দিয়েই যদি বলি ধরা যাক – অনুমিত এমন পরিবারে ধরা যাক দু-তিন ভাইবোন আর বাবা-মা নিয়ে সংসার; যেখানে বাবা চাকুরিজীবী মানে যার আয়ে ঐ সংসার। এখন ঐ বাবার চাকরি টিকিয়ে রাখা, তিনার নিজে সক্ষম থাকা ফিট থাকা এটাই সেখানে প্রধান স্বার্থ। এর বাইরে ধরা যাক বড় ছেলে রাজধানীতে গিয়ে ইঞ্জিয়ারিং পড়তে চায় আর এই লক্ষ্যে কলেজ স্তরেই তাকে ভালো টিউশন শিক্ষক মানে পড়ালেখায় বিনিয়োগ দেয়া জরুরি।  কিন্তু এই চাহিদা-আকাঙ্খা কোনভাবেই বাবা কেন্দ্রিক প্রধান স্বার্থ যেটা ঐ পরিবারের এর চেয়ে বড় হতে পারবেই না। ছেলের স্বার্থই প্রধান এমন গুরুত্বপুর্ণ জিনিষ হতে পারবে না। একইভাবে অন্য ভাইবোনদেরও পড়ালেখা বেড়ে উঠার যেসব চাহিদা-আকাঙ্খা আছে সেগুলো পুরণ হওয়া এটাও বাবা কেন্দ্রিক প্রধান স্বার্থের চেয়ে বড় হতে পারবে না।  এমনকি মায়ের কোন অসুস্থতাও না। বাবার ফিট থাকা প্রধান স্বার্থ কারণ, বাবাটাই প্রধান বা পরিবারে একমাত্র আয় আনবার ব্যক্তি। বাবা না থাকলে পরিবার পথে বসবে।

আমাদের বর্তমান দুনিয়া ইতিমধ্যে (মূলত অর্থনৈতিক কারণে) এতই পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে গেছে যে একালে যে কোন কিছুই আর লোকাল-আঞ্চলিক বিরোধ দ্বন্দ্ব নয়। সব দ্বন্দ্বই মিটাতে গেলে সমাধান পেতে চাইলে তা গ্লোবাল ইস্যু হয়ে যায়। কিন্তু গ্লোবাল ইস্যুতে প্রধান দ্বন্দ্ব আরেক জিনিষ, আরেকটা ইস্যু। তাই সব লোকাল ইস্যুকেই সবার আগে গ্লোবাল প্রধান দ্বন্দ্বে পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিতেই হয় – এক মেরুকরণে অবস্থান নিতে হয়। প্যালেস্টাইন ইস্যু বা আরব স্বার্থ বা মুসলিম তরুণদের আকাঙ্খা যেটাই হোক তা মিটতে পারে তাই গ্লোবাল প্রধান দ্বন্দ্ব মিটা বা সমাধান কিভাবে হবে সেই সাপেক্ষে।  প্রধান দ্বন্দ্বকে পাশ কাটিয়ে  মুসলিম তরুণদের আকাঙ্খা পূরন হতে পারবে না।

গ্লোবাল পালাবদল এর সময়কালেঃ
আসলে, গ্লোবাল ইস্যুতে প্রধান দ্বন্দ্ব-বিরোধ হল যে এটা পালাবদলের কাল, মানে গ্লোবাল নেতৃত্বেই এখানে পালা বদল আসন্ন। গত প্রায় আশি বছরে ধরে আমেরিকা যে গ্লোবাল নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে তা পরিবর্তিত হতে চাইছে – উদিয়মান চীনের হাতে। তাই চীনকে এখন এক নয়া গ্লোবাল মেরুকরণ ঘটাতে নামতেই হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য নীতি বা মিডল-ইস্ট পলিসি অর্থে কথাটা তুলছি। ১৯৭৩ সালের শেষে কিসিঞ্জার আমেরিকান মিডল ইস্ট পলিসি দিয়েছিলেন যা এতদিন ধরে আমেরিকা নিজ স্বার্থ, রাজত্ব সামলিয়েছে। এটা মুখ্যত গালফ রাজতন্ত্রগুলোকে নিজের পক্ষে দাঁড় করিয়ে আমেরিকা এদের ব্যবহার করে গেছে।
কিন্তু একালে কখন চীন মধ্যপ্রাচ্য এর ভিতরে ঢুকে গেছে আর সব মেরুকরণ উলটে দিয়েছে বাইডেনের আমেরিকা তা টের পাবার আগেই কাজ শেষ করেছে। আমেরিকান ব্যর্থতার শুরু এখান থেকেই। সবচেয়ে দৃশ্যমান হল, ইরান বিপ্লবের (১৯৭৯) পর থেকে লাগাতর সৌদি-ইরান বিরোধ। আমেরিকা এই বিরোধকে আরো উস্কে তুলে সৌদিদের সুরক্ষা দিচ্ছে এই ভান করে আমেরিকা নিজের পক্ষে মানে ইরানকে দাবড়ে বা বঞ্চিত রাখতে এর সুবিধা ব্যবহার করে গেছে। কিন্তু কখন চীনা মধ্যস্থতায় সৌদি-ইরান নুন্যতম একসাথে কাজ করতে সম্মত এমন কূটনীতি-ব্যবসা বিনিময়ে নয়া পথ খুলে ফেলেছে তা আমেরিকা যখন টের পেয়েছে তা অনেক দেরি হয়ে গেছে। চীনা নয়া মেরুকরণে, তুরস্ক, ইরান আর এদিকে মালয়েশিয়া ইত্যাদি মুসলমান-প্রধান রাষ্ট্রগুলো একটা কমন রাজনীতি নীতিমালা যেন অনুসরণ করতে পারে এমন কাছাকাছি চলে এসেছে।
আবার ওদিকে নয়া আফগানিস্থানে দেখেন;  আমেরিকা বিতাড়িত করে সদ্য মুক্ত আফগানিস্তানে তা-লে-বা-নদের সাথে চীন নয়া ও গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আফগান মাটির নিচের কেবল দামি পাথর উত্তোলন ও তা বাজারজাতকরণ ঘটিয়েই চীন আফগান অর্থনীতি উজ্জ্বল করে দিয়েছে। যদিও বিনিময়ে চীনা রাজনৈতিক  চাহিদা ছিল একটাই যে,  আফগান শাসকদেরকে তাদের দেশের ভিতরে আশ্রয় নেয়া আইএস-কে [খোরাসান] দূরে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যারা মূলত সশস্ত্র চিনা উইঘুর গোষ্ঠির আশ্রয়দাতা ও পৃষ্ঠপোষক!  আর ওদিকে  আইএস-কে এখন প্রায়ই গোপনে আমেরিকা পক্ষ হয়ে (এমনকি সময়ে ভারতেরও হয়েও) খেপ মারা এসাইমেন্ট (বোমাবাজি বা হত্যার) করে দেয়। [সম্প্রতি রাশিয়ায় গানের কনসার্টে হামলার ক্ষেত্রে এরা সি আইএ এর হয়ে কাজ করেছে বলে পুতিনের অভিযোগ অনুমান।]।  হিলারি ক্লিনটনের আমলে এরাই একইভাবে ঠিকা নিয়ে লিবিয়াকে তছনছ করে রাস্তায় গাদ্দাফিকে লিঞ্চিং করেছিল। কিন্তু সবটা লাভ হয় নাই। এরাই শেষে বেনগাজি আমেরিকান এমবেসিতে রাষ্ট্রদুত-সহ সকল স্টাফকে হত্যা করে পালিয়ে গিয়েছিল!

আবার দেখেন, বাইডেনের প্রথম তিন বছরে,  ইরানের উপর আমেরিকা নিরন্তর ডলার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইরানকে পঙ্গু করে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করে গেছে। এর বিপরীতে চীন ইরানি তেল কেনার ২৫ বছরের চুক্তি করেছে, বিভিন্ন পণ্য বিনিময়, চীনা বিনিয়োগ আর চীনা ইউয়ান ব্যবহার করতে দিতে দিয়ে চীন ইরানকে এক বিকল্প দুনিয়ার সন্ধান করে দিয়েছে। সারকথায় সব মিলিয়ে এক নয়া ভারসাম্যে নয়া মেরুকরণের মধ্যপ্রাচ্য – এই অর্থে এক নয়া গ্লোবাল অর্ডারের ইঙ্গিতও এখানে আছে। আর এর ভিতর দিয়েই মধ্যপ্রাচ্য রাষ্ট্রস্বার্থগুলো যখন নিজেদের মধ্যেকার স্বার্থ-বিরোধকে যদি সামলে রাখতে পারে তরে সকল রাষ্ট্রই এক এক নয়া মুক্তির দিশা – টানেলের প্রান্তে আলো দেখতে পেতে পারে। এই হল এর সারকথা।   সৌদি আরবও তার ২০৩০ সালের মধ্যে বর্তমানের কেবল তেলবিক্রির উপর নির্ভরশীল এমন  একচেটিয়া নির্ভর করা দেশ নিজ অথনীতিকে তেলের বাইরে এক নয়া অর্থনৈতিক ভিত্তির সৌদি হয়ে উঠতে -যুদ্ধ সংঘাত টেনশেন ও অস্থিতিশীলতা পাশে ফেলে নিজ আকাঙ্খা পূরণ করতে পারে – চীনের নয়া মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে সৌদি এখান থেকে দেখছে।
একটা সাবধানবাণী দিয়ে রাখি।
এটা চীনপন্থি হওয়া নয়; তা হয়েছে বা হতে ইঙ্গিতও দিচ্ছি না।  সারকথাটা হল, গ্লোবাল নেতৃত্বে বদল হঠাত সহসা ঘটে না। তবে এখন এটা আসন্ন, তাই সবাই এর সুযোগ নিতে চাইছে – এতে আমেরিকার বিকল্প যে কোন নেতৃত্বের বেলাতেই এমনই ঘটবে। এতে সব রাষ্ট্রই পুরানা বৃত্ত পুরানা রেস্টিকশন বা টেনে দেওয়া সীমা ভেঙ্গে – নয়া কোন ভারসাম্য নিজের পক্ষে গড়ে নিবার সুযোগ হিসাবে দেখবেই। তাতে এই বিকল্প এটা চীন কী না – আমি বা আপনি চীনকে ভালবাসি পছন্দ না ঘৃণা করি বা ভক্ত? সেসব বিচার এখানে একেবারেই গৌণ! এককথায় একমাত্র নিজ নিজ রাষ্ট্রস্বার্থই এখানে প্রধান এক্টর!!
শেষের ঘটনা দিয়েই যদি বলি, সংকীর্ণ আত্মস্বার্থে পলায়নপর গালফ স্টেট এর লজ্জাজনক ২০২০ সালের কাজ ছিল তথাকথিত আব্রাহাম একর্ড [Abraham accords ] নামে ইরায়েলের সাথে নিজ  নিজ রাষ্ট্রস্বার্থের প্রটেকশন চুক্তিতে যাওয়া। দুবাই ও বাহারাইন [UAE and Bahrain ] প্যালেস্টাইনিদের ভুলে গিয়ে ই-রায়েলের সাথে এই আপোষ চুক্তি করেছিল।  যেখানে দুবাই ছিল আসলে সৌদি আরবের এডভান্স পার্টি। মানে সোদিদের এই আপোষপথ অনুসরণ করার কথা ছিল। এনিয়ে দ্বিপাক্ষিক সৌদি-ইওরায়েল বৈঠকও চলমান ছিল। কিন্তু গত বছর এপ্রিল ২০২৩ সালে সব উলটে যায়।

The United Arab Emirates and Bahrain made peace with Israel in 2020 through
the so-called ‘Abraham accords’ and Saudi Arabia was considering following
suit in return for U.S. security commitments.

 

সারকথায়, এই গ্লোবাল পালাবদল এই গ্লোবাল দ্বন্দ্বকে পাশ কাটিয়ে উপেক্ষা করে কোন মধ্যপ্রাচ্য স্থিতিশীলতা দেখতে পাওয়া সম্ভব নয়। অর্থাত প্রধান দ্বন্দ্ব মীমাংসার অংশ নিতে হবে। আর এরই নয়া মেরুকরণের ভিওত্রে ঢুকে এর মধ্যে নিজ নয়া স্বার্থ বের করে আনতে হবে।
আর একই কথা প্যালেসটাইনের মুক্তির প্রশ্নের নয়া ও বাস্তব দিশা!

দানব ইসরায়েলি রাষ্ট্র গড় উঠেছে নেতা আমেরিকার প্রশ্রয়ে প্রটেকশনে এবং এখনও টিকে আছে আমেরিকান ডেমোক্রাট বা রিপাবলিক দুদল নির্রবিশেষে এদের প্রশ্রয়ে প্রটেকশনে। চীনের নয়া মধ্যপ্রাচ্য নীতি প্রতিক্রিয়ায় কার্যত ইসরায়েলকে আরো বেশী করে আমেরিকার কোলে উঠিয়ে দিয়েছে যেটা এখন ইউরোপের কোলেও তুলে দিবার সামিল। আর এতেই ওদের আসল নৈতিক সংকটকে উদাম করে দিয়েছে।
ইসরায়েলকে এবারের ইরানের হামলা থেকে রক্ষা করতে এগিয়েছে কারা? বৃটিশ, ফরাসি আমেরিকা এরা? আর বলছে নাম প্রকাশ করতে চায় না এমন আরো কিছু দেশ! যে অন্যের ভুমি দখলকারি তার আবার নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে এসেছে পশ্চিম, এই নৈতিক সংকট এতই দেউলিয়া এখানে!

পুরানা প্রগতিশীল (ইসলাম কোপানো) ধারণার উপর দাঁড়িয়ে অনেকে বলে থাকেন, যে দানব ইsরায়েল রাষ্ট্রকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নেতা আমেরিকা এনেছে এথেকে দুনিয়াকে মুক্ত হতে নাকি আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ লাগবে। মানে এদের সারকথাটা দাঁড়ায় সে এটা নাকি প্রায় অসম্ভব!!  কিন্তু না, সরি; এই চিন্তা অপরিপক্ক!
ব্যাপারটা বিশ্বযুদ্ধ হতেই হবে তা না। বিষয়টা হল দানব ইসরায়েল টিকে আছে আর নিরন্তর নুইসেন্স করে যেতে পারছে কারণ একে প্রটেক্ট করছে আমেরিকা। কাজেই গ্লোবাল নেতা থেকে আমেরিকার সরে যাওয়া, চ্যুত হয়া দুর্বল হয়ে যাওয়া এটা ঘটে গেলেই – এটাই একমাত্র প্রয়োজনীয় শর্ত। এখন আমেরিকার গ্লোবাল নেতৃত্ব থেকে চলে যাওয়া কী করে ঘটবে তা আমরা নিশ্চিত জাতি না। কিন্তু সেকারণে, এটা ঘটতে আরেকটা বিশ্বযুদ্ধই লাগবে এমন করে কথা বলাটা একেবারেই বোকামি; আর দানব ইsরায়েল রাষ্ট্রের বিলুপ্তি এর বাস্তবায়নের পথ কেবল এটাই বলতে পারা উচিত; দানব ইsরায়েলের বিলুপ্তি অসম্ভব – এমন মানে করা ইঙ্গিতপুর্ণ কথা বলার তো প্রয়োজন নাই। এর চেয়ে গ্লোবাল পালাবদলকে ফলো করা য়ার বুঝতে পারাই যথেষ্ট।

আমাদের মত দেশের মুসলিম তরুণদের আকাঙ্খার কথা বলছিলাম।  তাদের আকাঙ্খায় থাকা কোন ইসলামি বিপ্লব বা রাজনীতি কতটা সঠিক বা ভাল সে বিচার-পর্যালোচনা এখানে এখন পাশ কাটাবো, প্রসঙ্গটা আলাদা বলে। তবে এর মধ্যে কেবল পরিবর্তনের  আকাঙ্খাটাকে নিয়ে কথা বলব। আর তা করতে চাইলে তাঁদেরকে অন্তত গ্লোবাল প্রধান দ্বন্দ্ব বা পালাবদলের ভিতর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য নয়া নীতি নয়া মেরুকরণকে দেখতে পারতেই হবে। এটা কেবল ইরানের বা সৌদি রাষ্ট্রের বিচার-পর্যালোচনা নয়। মনে রাখতে হবে প্যালেসটাইন ইস্যু নিজে নিজেই দুনিয়ার প্রধান দ্বন্দ্ব নয়। আসন্ন  গ্লোবাল পালাবদল এই গ্লোবাল দ্বন্দ্বকে ঘিরে যে নয়া মেরুকরণ ঘটছে ঘটবে এই ভিতরেও প্যালেসটাইন ইস্যু বা দানব ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিনাস এই উপস্বার্থ-কে দেখতে পারতে হবে। আর তবেই সফলভাবে এর সমাধান বের করে আনা যাবে। অরুণদের আকাঙ্খাকে অস্থিরতা দিকে নয় বরং স্থিরতা ও গ্লোবাল পালাবদল এই গ্লোবাল দ্বন্দ্বকে বুঝাবুঝির সক্ষমতা অর্জন করতে হবে; কারণ এটাই এখানে মুখ্য হবে। সবচেয়ে বড় কথা চীনা নয়া মধ্যপ্রাচ্য নীতি আর একে ঘিরে মেরুকরণের সময় প্যালেসটাইন ইস্যুর সমাধান ও দানব ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিনাস এই উপস্বার্থ উপযুক্তভাবে প্রোথিত করে নিতে হবে।

ইরানের এবারের ইসরায়েলে হামলা কেন সীমিত ছিল এর প্রধান কারণ, গ্লোবাল অর্থনীতি এমনিতেই নুব্জ হয়ে আছে বিশেষত করোনা ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বাইডেনের ভুল সিদ্ধান্ত ভুল যুদ্ধ ইউক্রেন থেকে এখন ক্রমশ আরো সব সঙ্কট ছড়িয়ে পড়ছে। গত সাড় তিন বছরে দিশাহীন ডলার অবরোধের নেতি প্রভাব এখন ক্রমশ আরো সবল হচ্ছে – ডলারের বদলে ইউয়ানে গ্লোবাল বাণিজ্যে অগ্রগতি ঘটে গিয়েছে যা খোদ বাইডেনের নীতির প্রতিক্রিয়া – নিজের পায়ে কুড়াল মারা হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আমেরিকান মুদ্রাস্ফীতি গত তিনমাসে আরো বেড়েছে আর তাতে ইতোমধ্যেই বাণিজ্য ব্যবস্থায় শঙ্কা ছড়িয়েছে। এর মাঝে যদি ইরানের ইসরায়েল হামলা তীব্র হয় তবে এর ধকল কাটানো মুশকিল হবে। যেমন সবার আগে তেলের দাম বৃদ্ধি পাবে যা এত সংকটের মধ্যেই গড়ে আশি ডলারের মধ্যে ছিল যা এখনও আশি-নব্বই ডলারের মাঝে থাকছে – এটা উথাল-পাথাল হলে সবার আগে উতপাদন ও মুল্যবৃদ্ধিতে সব এলোমেলো অনিশ্চিয়তার পথে হাটবে – যেটা আরেক অর্থে পধান ইস্যু।
এই স্বার্থেই ইনফরমালি হলেও চীন=-আমেরিকার ম্যাসেজ বিনিময় ঘটেছে।  মধ্যপ্রাচ্য লেবেল এনিয়ে ব্যাপক কটনীতি  কাজ করেছে। রয়টার্স এনিয়ে চারটা রিপোর্টে এসব দেখিয়েছে। এমনকি ইরানের ইওরায়েলে হামলার পরে ইওরায়েল কোন পালটা হামলার চিন্তা করলে তা এই দেশকে নিলে দায়ীত্ব ও পরিণতির দায় নিয়ে করতে হবে বলে বাইডেন হুশিয়ারি দিয়েছেন। ইসরায়েলের যুদ্ধ-ক্যাবিনেটও এখন নিজে একা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বা চাচ্ছে না। সে বন্ধু-শ্যন্য হয়ে পড়েছে। তাই পশ্চিমা-বন্ধুদেরকেও আর হারাতে চাচ্ছে না বলে এই সিদ্ধান্ত। আর মুখে বলছে ইরানের হামলার পরে তা যতই ক্ষতি ইসরায়েলের হোক না কেন এর কোন প্রতিক্রিয়া তারা এখন না ভবিষ্যতে কখনও দেখাবে।

আপাতত এতটুকুই!

 

 

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

[এই লেখা কোন নিউজ নয়, ব্যক্তির নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্লেষণ মাত্র। ফলে পাঠকের এ’লেখা পড়ে কিছুই বহন করা বা মান্য করার বাধ্যবাধকতা নাই। কেবল জানলেন যে এমন একটা মতামত আছে!]

আপডেটঃ    ১৫ এপ্রিল ২০২৪  রাত ৯ঃ ০০

Leave a comment