রেহমান সোবহান কেন বললেন – জিয়া ঋণ খেলাপীর জনক; কথাটা কী সত্য?


রেহমান সোবহান কেন বললেন – জিয়া ঋণ খেলাপীর জনক; কথাটা কী সত্য?
হাসিনা থেকে পদক, সম্মাননা পেতে তিনি এত মরিয়া কেন?
গৌতম দাস
২৯ এপ্রিল ২০২৪  সন্ধ্যা ১৮ঃ ৪৬
https://wp.me/p1sCvy-5xj

 

দেশে খেলাপি ঋণের জনক জিয়াউর রহমান: রেহমান সোবহান

 

[রেহমান সোবহান কেন বললেন – জিয়া দেশে ঋণ খেলাপীর জনক; কথাটা কী সত্য?
এছাড়া তিনি হাসিনা থেকে পদক সম্মাননা পেতে এত মরিয়া কেন?]

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সিপিডি [CPD] এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ও চেয়ারম্যান হলেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান,  যার বয়স এখন ৮৯ বছর। ভেবেছিলাম এই বয়সে আর তাঁকে নিয়ে কিছু বলব না; অন্তত তিনি মুরুব্বি বয়সের, এই খাতিরে! কিন্তু না। তিনি নিজেই যেন তা হতে দিতে চান না! মানুষের জীবনকালের কাজে-কর্মে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ভুল শুদ্ধ বহু কিছুই হয়, হতেই পারে। কিন্তু জীবন সায়হ্নে এসেও স্বাভাবিক বাস্তবতা থেকে পালিয়ে কেউ যখন নিজেকে ভুলহীন বিশুদ্ধজ্ঞানে উপস্থাপন করতে চায় অথবা এদিকটা যেন বুঝেবই নাই, খেয়াল করেন নাই অথবা নিজ কৃতকর্মের কোন দায় নিতে চায় না ইত্যাদি আচরণ করে বসে,  এটা খুবই পীড়াদায়ক!  একারণেই মনে হচছে, এই শেষ জীবনে এসে এখন তিনি যেন “বাঙালি জাতিবাদের” এক ভগবান হয়ে উঠতে চাইছেন। যিনি আবার যেন সব ভুল-শুদ্ধের উর্ধে! অন্যদিকে আবার হাসিনার এই পনেরো-ষোল বছরের শাসনের দিকে তাকালে দেখতে পাই – যারা হাসিনার বাবার আমলে মানে তাঁর বাবার সাথে কাজ করেছেন, স্মৃতি আছে তাদের অনেকের প্রতি হাসিনা বিশেষ “আনুকুল্য” দেখিয়েছেন। পদক প্রদান, বিশেষ সম্মাননা থেকে বৈষয়িক লাভালাভ পাইয়ে দেয়া ইত্যাদি্র ভাল-মন্দ তিনি করেছেন।  আর এটাই আবার অনেকের ক্ষেত্রে কাল হয়ে দাড়িয়েছে যে জীবন সায়হ্নে এসে হলেও যেভাবেই হোক হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিছু একটা উসিলায় হাসিনার আনুকুল্য আদায় করে তবেই বাকি জীবন শেষ করতে চান!
যদিও এই দৃষ্টি-আকর্ষণ করে সুবিধা নেয়ার ফেনোমেনা – এটা আবার দেখা যায় সুবিধা-বাদিদের কেবল শেষ জীবনের আকাঙ্খার বিষয় না। যেমন উপরের দিকের সরকারী আমলারা জেনে গেছেন যে নিজ পরিবারের কেউ আওয়ামি লীগ করতেন বা তিনি নিজে ছাত্রলীগ করেছেন এটা বেচে সুবিধা নেওয়ার সুযোগ আছে; এমন অনেকেই সচিব হওয়া বা ভাল পদোন্নতি নিয়েছেন এটা তো হাসিনার এই আমলে ডাল-ভাতের রেওয়াজ।  এমনকি সারা জীবন জাসদ বা বাসদ করেছেন অথচ এখন হাসিনার ছাত্রলীগ করেছেন বলে দেখিয়ে দাবি করে সচিব বা সমতুল্য পদোন্নতি নিয়েছেন এমন অনেক পরিচিত, সহপাঠি বা অপরিচিতকেও চিনি। এসব এখন খুবই কমন! এটাকেই অনেকে আবার মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণী এখন ক্ষমতায় অথবা এটাই ‘চেতনার” রাজনীতিক ক্ষমতার মহিমা ও তাতপর্য বলেও  এক নামি কমিউনিস্ট একবার আমাকেই বুঝিয়েছিলেন!

বাংলাদেশ যাত্রা শুরু কথিত এক  “সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি” দিয়ে, কারা ছিলেন এর মূল কারিগরঃ
বাংলাদেশে জন্মযাত্রার শুরুতে কথিত এই  “সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির” এক অন্যতম কারিগর ছিলেন রেহমান সোবহান। তবে কমিউনিস্ট-সমাজতন্ত্রীদের আবেগ-বিবেকের তর্কের চক্কড়ে না পড়ে, ব্যাপারগুলো আরেক দিক থেকে দেখব ও দেখাব।  বাংলাদেশের ইতিহাসে কমিউনিস্টদের কমিউনিস্ট ভাবনা থেকে আনা গজব, সবচেয়ে ক্ষতিকর ব্যবহারিক কাজ হল কথিত এই  “সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি”; ১৯৭২ সাল থেকেই যার নেতৃত্বে ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ – ততকালীন অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী ও পাট মন্ত্রী এসবগুলোই ছিলেন তাজউদ্দিন একাই। তাঁর নেতৃত্বেই কথিত “সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি” কায়েম করতে যাওয়া হয়েছিল। যার করুণ পরিণতিই হল ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ! এমনকি এখান থেকেই যে শেখ মুজিবের হত্যা বা মৃত্যুর পরিস্থিতি যে আসন্ন হয়ে উঠবে এমনটা খুব কেউ বুঝেনই নাই। তবে তখন এমন অনুঘটক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনের মূল কারণ কিন্তু এই কথিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ডেকে আনা  দুর্ভিক্ষ – এই করুণ পরিণতি, সেটা বলাই বাহুল্য! তবে এই কথিত সমাজতন্ত্রের সারকথা বা মুখ্য বাণী-টা ছিল যে, দেশের কারখানাসহ “সকল উতপাদন ব্যবস্থাকে সরকারী মালিকানায়” নিয়ে যেতে পারলেই নাকি মোক্ষলাভ ঘটবে!

এমনিতেই কোন প্রতিষ্ঠানের ‘ম্যানেজমেন্ট’ মানে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ব্যবস্থা যা ঐ প্রতিষ্ঠান/অফিসের, দক্ষতার সাথে উতপাদন ব্যবস্থার জন্য খুবই জরুরি; আর এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটা টিকতে পারবে কিনা এর জন্য ভাইটাল বিষয়। কিন্তু সোভিয়েত কমিউনিজম এর চোখে ম্যানেজমেন্ট ধারণাটাই নাকি এক “শোষণ ব্যবস্থার” ধারণা; তাই এটা তাদের চক্ষুশুল ছিল!  অর্থাৎ ম্যানেজমেন্ট মানে দক্ষ উতপাদক হওয়া এটা নাকি বুর্জোয়া ধারণা; আর এটা নাকি তাই শোষণের হাতিয়ার!

কোন নীতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় তা কাজ করছে আগাচ্ছে যেটা বুঝার ঊপায় কিঃ
তবু এসব কথা এখন থাক; এসব কথা এখন পাশে ফেলে রেখে যদি একটু আগাই তবে, একটা দেশের সমগ্র অর্থনীতিক পরিকল্পনা নিয়ে আগানো (তা বিশেষ “পবিত্র জ্ঞান করা” সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বা যেকোন অর্থনীতিই হোক না কেন)  বা বাস্তবায়নে চলে গেলে এরপর এই অগ্রগতি কাঙ্খিতভাবে চলছে কীনা এটা দেখার কোন ব্যবস্থাও সাথে থাকাটা খুবই প্রয়োজনীয় একটা দিক। এটাকেই বলে মনিটরিং বা অগ্রগতি মনিটর ব্যবস্থা যার থাকাটা খুবই এসেনশিয়াল আর প্রফেশনাল কাজের পুর্বশর্ত। এখান থেকেই মনিটরিং এর ইন্ডেক্স [index] বাংলায় যেটাকে আমরা সূচক বা নির্দেশক নামে চিনি বা বলি – তা খুবই গুরুত্বপুর্ণ!  কারণ কী দেখে বুঝব অগ্রগতি  পরিকল্পনা মাফিক ও দিকে চলছে কিনা?   কারণ না হলে যদি পরিকল্পনাটা পাঁচবছরের হয় তাহলে কী কেবল পাঁচবছরে পরেই জানা যাবে যে পুরা পরিকল্পনাটাই আসলে ফেল করেছে? অথবা সফল হতে যাচ্ছে?  নাকি প্রকল্প শুরু হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময় পরে পরে যেমন ধরা যাক,  প্রতি তিনমাস পরে কখন কী কী  অগ্রগতি ও লক্ষণ-সুচক দেখা যাবে; এভাবে বা ওভাবে কখন কী দেখা যেতে  হবে  – এটাই সুচক ইন্ডেক্স এর মাপামাপি।  অর্থনীতির অভিমুখের সিগনাল দেয় এটা!   কিন্তু যদি অন্তত শুরুর একবছর পরেও এমন কোন রেজাল্টই না দেখা যায় তবে আগেই বুঝে নিতে হবে যে এই প্রকল্প ফেল করতে যাচ্ছে, ইত্যাদি। এগুলোকেই মোটাদাগে – অগ্রগতি মনিটর ব্যবস্থা- বলে বুঝা হয়।

এখন তাজউদ্দিনের সেই “সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি”  কায়েমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অপরাধ ও অঘটনমূলক ঘটনাটা ছিল যে, তারা সমাজতন্ত্র  প্রতিষ্ঠার এই “পবিত্রকাজে” রওনা করার পরে মানে একেবারে আড়াই বছর পরেই দেখলেন ও জানলেন যে এটা নুন্যতম সফলতা দূরে থাক তাদের এই পবিত্র অর্থনীতি দেশে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ডেকে এনে সব শেষ করে দিয়েছে। রাষ্ট্র-সরকার মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই ফলাফল দেখে আমাদের অনুমান কোন মনিটরিং ব্যবস্থার সুচক সেখানে রাখা হয় নাই; বরং বিপ্লবী রাজনৈতিক আবেগে সবাই ভরপুরভাবে ডুবে ছিল!!

আর এই পরিণতি  দেখে সবার আগে এসব “অকর্মা সমাজতন্ত্রীদের” সকলকে পদত্যাগ করিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলেন ক্ষুব্ধ শেখ মুজিব।  শুধু তাই না, ঐ ১৯৭৪ সালেরই সেপ্টেম্বরে (সেবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের উসিলায়) আমেরিকা গিয়ে কিসিঞ্জারের সাথে প্রথম দেখা করেছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য সেই প্রথম বিশ্বব্যাংক-কে সংশ্লিষ্ট করা; মানে দ্রুত অনুদান, ঋণ জোগাড়। গত ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের সদস্যপদ লাভ করলেও মুজিব সরকার বা অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন  আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের সাথে কার্যকরি কোন সম্পর্ক করতে যান নাই; তাঁরা সম্পর্ক না রাখাটাই বিপ্লবীপনা বলে বুঝেছিলেন!  ফলে আমাদের অর্থনীতিতে বিশ্বব্যাংকের অনুদান, সাহায্য যোগাড় ধরণের কোন খাতাই খোলা হয় নাই। কারণ এই মন্ত্রী তাজউদ্দিন ও তাঁর সহ বিপ্লবীরা কেনিয়াতে ১৯৭৩ সালেও সে সময়ের বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের [রবার্ট ম্যাকনামারা] সাথে আলোচনার প্রস্তাব (পরিচিতি ও সৌজন্য সাক্ষাত) পেলেও এই সোভিয়েত বিপ্লবীরা তা প্রত্যাখ্যান করে ফেলে রেখেছিলেন। প্রতি পরের-বছর বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন হয় দুনিয়ার নানান দেশে; সেটাই সেবার হয়েছিল KENYA 1973 হিসাবে; এখানে এক আর্কাইভ লিঙ্ক দেওয়া হল যারা এবিষয়ে আরও গভীরে যেতে চান এমন আগ্রহিদের জন্য। আবার একালেও অনেক বিপ্লবীকে (আনু মোহম্মদ ও তাঁর বন্ধুদের) দেখা যায় বিশ্বব্যাংককে এই প্রত্যাখানকে নিয়ে গর্ব করতে।  আসলে না জানার অনেক সুবিধা যা খুশি বলা যায়!!!  এছাড়া যদিও এর আগে ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট ম্যাকনামারা বাংলাদেশে এসে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এছাড়া, VOA এর এক ভিডিও তে দেখা যায় তাজউদ্দিনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি;  রেহমান সোবহান ক্রমশ চরম বিপদজনক হয়ে উঠছেন। যেন দেশ জাহান্নামে গেলেও মৃত্যুর আগে তাঁকে হাসিনার থেকে পদক-সম্মাননা পেতেই হবে! জীবন সায়হ্নে হাসিনার দৃষ্টি ও আনুকুল্য পেতে যাতে তিনি “বাঙালি জাতিবাদের” এক ভগবান হিসাবে কোন পদক বা সম্মাননা পেতে পারেন যেন একারণেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশ জন্মের পরে সেই ১৯৭২ সাল থেকেই তিনি কথিত “পরিকল্পিত ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি” কায়েমের কালে টপ তিন-চারজনের একজন ছিলেন। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা পরবর্তি সেকালের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য।  আবার মনে রাখতে হবে সেকালের পরিকল্পনা কমিশন মানে সাংঘাতিক ব্যাপার, আজকের মত গুরুত্বহীন না। এর মূল বৈশিষ্ট বুঝতে হবে এভাবে যে, সেকালে সমাজতন্ত্র মানেই হল পরিকল্পিত অর্থনীতি এমনটাই গর্বের সাথে বুঝা হত;  আবার এর অর্থনীতিক পরিকল্পনা হত পাঁচসালা, পাঁচ বছরের জন্য। তাই সব সময়ই দেশের অর্থনীতি এক চলমান পাঁচসালা পরিকল্পনার অংশ হয়ে থাকত। কিন্তু ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রের এসব ভংচং সবকিছুই নিজ গৌরবে খতম হয়ে গেলেও এই পাঁচসালা পরিকল্পনার রেওয়াজটা পরেও কিছুদিন চালু ছিল।। স্মরণ হাতড়ে বলছি ১৯৮০ এর দশকে এটা লুপ্ত হয়ে যায়। কাজেই রেহমান সোবহানের সেকালে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য থাকা ছিল অনেক ভারী জিনিষ। একালে দেখছি সিপিডি থেকে প্রকাশিত তাঁর বায়োডাটায় ব্যপারটা লেখা আছে এভাবে ……He served as Member, Bangladesh Planning Commission, in charge of the Divisions of Industry, Power and Natural Resources, । সেই সাথে ওখানে আরো লেখা আছে যে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্টের এডভাইসারি কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন যার এক্তিয়ার বা কর্মক্ষেত্র ছিল পরিকল্পনা বিভাগ ও অর্থনীতির ইআরডি [ERD] বিভাগ। এখানে  পাঠককে জানিয়ে রাখা ভাল যে বাংলাদেশে বাকশাল শাসন (২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫) কায়েমের পর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দেশে প্রেসিডেন্সিয়াল সরকার ব্যবস্থা চালু ছিল।  যার সারকথা হল সেটা প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নয় বরং প্রেসিডেন্টই সব ক্ষমতার উতস ও সরকারের প্রধান নির্বাহি ক্ষমতাধারী; মানে কোন প্রধানমন্ত্রী নয় বরং প্রেসিডেন্টের হাতেই সব ক্ষমতা ন্যস্ত ছিল। তাই রেহমান সোবহানের ১৯৯১ সাল পর্যন্ত – প্রেসিডেন্টের এডভাইসারি কাউন্সিলের সদস্য- কথার মানে ও ওজনদার তাতপর্য, সেটা আমাদের বুঝতে হবে। আর তা জিয়া ও এরশাদ এদুই প্রেসিডেন্টের আমল জুড়ে সেটাও বুঝতে হবে।

আবার সম্প্রতি দেখলাম সম্ভবত রেহমান সোবহান তার জীবনী প্রকাশ উপলক্ষ্যে তিনি যা বলছেন এর সারকথা হল, বৃটেনে থাকার সময়ের লেবার পার্টি করেই তিনি ‘কমিউনিজম’ শেখেছেন। কি সাংঘাতিক কথা আর, কী সহজ তাই না!!  এর মানে কার্ল মার্কসের কোন মূল লেখা বই বা কোন গুরুত্বপুর্ণ আর্টিকেল পাঠ নিয়ে কিছু জেনেছেন – এভাবে এটা তাঁর জানবার পথ ছিল না। এখন তাই তাঁর নিজেই নিজেকে মুল্যায়ন করা উচিত যে, শুধু এটুকু দিয়ে “সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি” করতে যাওয়া কী ঠিক হইছে? বাংলাদেশের প্রতিটা সাধারণ মানুষ যার দ্বারা এফেক্টেড ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল??? এটা কী কোন ছেলেখেলার বিষয়?  বিশেষ করে বৃটিশ লেবার পার্টি মানে তো ওয়ার অন টেররের কালে প্রেসিডেন্ট বুশের সহযোগী প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার এর পার্টি! এছাড়া বড় জোর ওর জ্ঞানের দৌড় হল এক ট্রেড ইউনিয়নিস্ট এর যেমন থাকে! লেনিন কেন নিজ পার্টিরই কোন ট্রেড ইউনিয়ন করার বিরুদ্ধে ছিলেন, আগ্রহিরা সেটা জেনে নিতে পারেন!

 রেহমান সোবহানের “ভ্যালু এডিশন” বুঝঃ
আমি অনেকবার বলেছিল রেহমান সোবহান হলেন, বাংলাদেশে বসে ভারতের স্বার্থরক্ষা ও দেখার কনসাল্টেন্ট। বাংলাদেশের ঘাড়ে চড়ে ভারতকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ইন্ডিয়ান এজেন্ট হল রেহমান সোবহান ও তাঁর এইকাজের প্রতিষ্ঠানটাই হল সিপিডি। উলটা করে বললে, সিপিডির সর্ববৃহত ক্লায়েন্ট হল ভারত সরকার বা তার গোয়েন্দা বাহিনী। যদিও তিনি নিজে এটাকে “প্রগতিশীল আর ইতিবাচক” কাজ হিসাবেই গণ্য করে থাকেন!!!
Regional Comprehensive Economic Partnership (RCEP) is a free-trade agreement (FTA) – এদুই ধারণার মধ্যে FTA সারকথায় এর মানে হল আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যে একে অপরের বাজারে পণ্য নিয়ে ঢুকলে কত কী শুল্ক ছাড় দিবে বা শুল্কই আরোপ করবে না এরই ছুক্তি। এমন FTA বানিজ্য জোটের ভিতর আবার RCEP একেবারেই নতুন ধারণা। আর এই RCEP এটাই হল এক “ভ্যলু এডেড চেইন” এই ধারণার ভিত্তিতে পণ্য উতপাদন ও ভোগ – তা শেয়ার করার ব্যবস্থা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ধারণা হল ভ্যলু (value); এই ভ্যালু আসলে কী? মনে রাখতে হবে মার্কস সারপ্লাস ভ্যলু তত্বের জন্য বিখাত আর এটাই তাঁর জীবিনের মুখ্য অবদান মানেন অনেক। তাই ভ্যলু (value) সম্পর্কে তার বিস্তারে লেখা রচনা আছে। একেবারেই সার কথায় ভ্যলু (value) মানে হল কোণ পণ্য উতপাদনে একদিকে থাকে কাঁচামাল আর এই কাঁচামালের উপর মানুষের শ্রম যোগ করেই পণ্য উতপাদন করা হয়। এই শ্রম যোগ করা এটাই ভ্যলু (value) এডিশন। একারণের উতপাদিত পণ্যের মূল্য কাঁচামানের মুল্যের চেয়ে ছাড়িয়ে। কাজের উতপাদনে শ্রম যোগ করাই ভ্যালু এডিশন। এখন কয়েকটা দেশ মিলে কোন অর্থনৈতিক জোট যদি কোন পণ্য উতপাদনের ক্ষেত্রে যে দেশ যে অংশটায় দক্ষতার সাথে ভ্যালু এড করতে পারে তা করে ফাইনালি কোন একটা দেশে যদি তা এসেম্বল করে ফিনিস প্রডাক্ট-টা তৈরি হয় আর এবার ঐ পণ্য যদি জোটের সব দেশ কিনে ও ভোগ করে তবে ঐ উতপাদিত ঐ পণ্য হল  “ভ্যলু এডেড চেইন” পদ্ধতিতে উতপাদিত ও ভোগ্য এক পণ্য। আর বলাই বাহুল্য এই পণ্য যেহেতু সবদেশেরই শ্রম আছে তাই কেউই আর এর প্রবেশের উপর শুল্ক-আরোপ করে না আর সুবিধাটা সদস্য সকল দেশ পাবে। এমনই চীনা উদ্যোগের প্রথম জোট হল RCEP  যা পুর্ব-এশিয় আশিয়ান দশ দেশ ও এর বাইরে ঐ অঞ্চলের আরো ছয় FTA সদস্য দেশ; যাদের মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, অষ্টেলিয়াও আছে। আইডিয়াটা হাজির করা হয় ২০১১ সালে।
এমন জোট বাস্তবায়িত হয় ২০২০ সালে। কিন্তু ভারতের স্বার্থ-ধর রেহমান সোবহান ব্যাপারটা জানার পর সম্ভবত ভেবেছিলেন তাঁর ক্লায়েন্ট ভারতকে সুবিধার হাড়ি খুলে চমকে দিতে হবে। তিনি ক্লায়েন্ট ভারতকে খুশি করতে বিবেচনাবোধ হারিয়ে দাবি তুললেন ভারত-বাংলাদেশকে মিলে  “ভ্যলু এডেড চেইন” পণ্য উতপাদনে যেতে হবে।

আবার ভারতও সব শুনে মনে করেছিল রেহমান সোবহানের কাছে খুবই জ্ঞানের এক কথা তারা শুনলেন। কারণ ভারত ভেবেছিল এটাকরতে পারলে তাহলে ভারতও তো চীনের সমতুল্য এক বিরাট দেশ হয়ে যাবে!!  তারা রাজি হয়ে যায়।  রেহমান সোবহান ঠিক করে দেন এই জ্ঞানের আলোচনাটা ঢাকায় হবে আর এটা ডেইলি স্টারের নামে আয়োজন করা হবে। তাই হয় আর এতে ভারত সরকারের হুকুমে ভারতীয় আমলারা দল বেধে অংশ নিয়েছিল।  এটাসি ঘটেছিল ২০১৬ সালে তিনি ডেইলি স্টারকে দিয়ে আয়োজিত সেমিনারে ভারতীয় আমলাদেরও ঢাকায় জড়ো করেছেন – উদ্দেশ্য “ভ্যলু এডেড চেইন” শিখাবেন।

‘ভ্যালু এডিশন চেইনে’ উতপাদন, উগ্র অর্থনীতিক জাতিবাদ এর জন্য হারামঃ 
চোথা মারা মানের অপরের ধারণা বুঝে বা বুঝে টুকলিফাই করা – ব্যাপারটা শেষে তাই হয়েছিল। গোড়ার ফ্যাক্টস হল, রেহমান সোবহান ‘ভ্যালু এডিশন চেইন’ জিনিষটাই ঠিকমত বুঝেন নাই; এছাড়া মার্কসের ভ্যলু সম্পর্কেও প্রাথমক কিছু ধারণা থাকতে হবে। তিনি ভেবেছিলেন চীন বা RCEP এর ধারণাটা তিনি সহজেই ক্লায়েন্ট ভারতের কাছে বেচে দিতে পারবেন। কিন্তু ফাঁকি বা চোথা মারা ধারণার কারণে ভ্যলু এডিশনের সাথে শুল্ক-আরোপের সম্পর্ক কী তিনি জানেন নাই। আবার মনে রাখতে হবে বিদেশি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করা আর এভাবেই বিদেশি পণ্যের প্রবেশ ঠেকিয়ে দেয়া ১৯৪৫ সালের পরে জাতিবাদি ও কলোনিমুক্ত দেশগুলোতে খুবই পপুলার পদক্ষেপ ছিল। এটাকেই ইকোনমিক ন্যাশনালিজম বলে।  সব জাতিবাদিরাই ইকোনমিক ন্যাশনালিস্ট, মোদির মত উগ্র হলে তা আরও বেশী। এমনকি স্তালিন ও তার কমিউনিজম ও আসলে ইকোনমিক ন্যাশনালিস্ট।  মুল কারণ, এরা বা এই চিন্তার মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য ধারণাটাই নাই। আর একারণেই আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের সদস্য না হয়েও সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৫-১৯৯১ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল। এমনকি সোভিয়েত ব্লকের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেও কোন আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য ব্যাবস্থা ছিল না;  আসলে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের সদস্য না হলে কোন আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যই সম্ভব নয়।

কিন্তু রেহমান সোবহান এসব জানতেন পড়াশুনা আছে তা তাঁর কাজদেখে এমন জানা যায় না। যেমন ধরেন, তিনি কী জানেন উগ্র জাতিবাদী রাষ্ট্র ভ্যালু এডিশন বুঝতেই পারবে না।  গ্রহণ করবে না বা সম্ভব না? কারণ এই রাষ্ট্র-সরকার উগ্র জাতিবাদী মানে সে ইকোনমিক ন্যাশনালিজম করে বেড়ায় – মানে অন্য দেশের পণ্যকে সে কড়া ট্যাক্স বসিয়ে নিজ সীমান্তের বাইরে রাখাটাই সঠিক মনে করে। নিজ অদক্ষপুর্ণ দামে প্রস্তুত পণ্যকে যে এভাবেই প্রটেক্ট করে; আর দেশের মানুষকে তাই কিনতে বাধ্য করে থাকে। এটাই তো ইকোনমিক ন্যাশনালিজমতাহলে তিনি মোদীর ভারতকে ভ্যালু এডিশন বুঝাবেন কেমন করে? রেহমান সোবহান সেদিকটা না বুঝেই বাগড়ম্বরা করতে গেছেন ইন্ডিয়া বাংলাদেশের পাটের উপর, ব্যাটারির উপর, বাথ সোপের উপর এরকম ট্যাক্স বসিয়ে রেখেছে। আর রেহমান সোবহান বলছেন ভারত-বাংলাদেশ নাকি “ভ্যলু এডেড চেইন”  এর যৌথ পণ্য উতপাদন করতে যাওয়া উচিত!!! এই হল প্রগতিশীল বিরাট বুঝমান রেহমান সোবহান!    দেখেন এখানে এনিয়ে ২০১৬ সালের ডেইলিস্টারের রিপোর্ট। এছাড়া এসব ইস্যু নিয়ে আমার পুরানা লেখা আগ্রহিরা এখানে  আর এখানে দেখতে পারেন।

কিন্তু তবু এত ক্ষমতাধর রেহমান সোবহান কখনও ১৯৭৪ এর কথিত সমাজতন্ত্রী অর্থনীতির পরাজয় ও দেশকে একটা দুর্ভিক্ষে নিয়ে ফেলা এজন্য কোন দায় কখনও নেনই নাই। কোন একাদেমিক আলোচনাও টেনেছেন জানা যায় না।  এমনকি যদি কেন ঐ অর্থনীতি ফেল করেছিল এনিয়ে কোন সৎ মূল্যায়ন বা তাঁর কোন সৎ অনুভবও কোথায় আলোচনা করেছেন জানা যায় না।

বিআইডিএস ও রেহমান সোবহানঃ
বিআইডিএস [BIDS] কী তা এই প্রজন্ম কমই জানে, আমার অনুমান। আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিক চিন্তা ও সক্রিয়তায় কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতা যেভাবে এখন উপেক্ষিত কোনঠাসা, গুরুত্ব-প্রভাবহীন নিস্তেজ হয়ে গেছে বিআইডিএস এই প্রতিষ্ঠানের দশাও তাই। আমাদের প্রজন্মের একাদেমিক যৌবনে বিআইডিএস – একে দেখা হত এক বিরাট প্রগতিশীল জ্ঞান ও গবেষণার প্রতিষ্ঠান।  বিআইডিএস সরকারী ফান্ডে চলা এক আধা-সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। অরিজিনালি বিআইডিএস এর জন্ম পাকিস্তান আমলে করাচিতে; আর নাম ছিল পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস বা পাইড [PIDE]১৯৭১ সাল ঘুরে,  একে বাংলাদেশে এনে ১৯৭৪ সালে এসে এর নাম হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ  বিআইডিএস [BIDS]। বিস্তারে গিয়ে কথা না বললেও, অরিজিনালি করাচিতে এটা আমেরিকা প্রভাবিত এক প্রতিষ্ঠান ছিল; মানে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শী নয়।  কিন্তু বাংলাদেশে এসে এটা হয়ে যায় কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলদের প্রতিষ্ঠান; এমনকি এখনও প্রচ্ছন্নে এটা তাই মানা হয়। দুই বাক্য উপরে ডেভেলবমেন্ট শব্দটা আমি সবুজ রঙ দিয়েছি; আর BIDS শব্দের D যার প্রতীক! ক্রিটিক্যালি বললে এই ডেভেলবমেন্ট বা বাংলায় উন্নয়ন – এই শব্দ ও ধারণাটাই এন্টি কমিউনিস্ট  কেন? ডেভেলবমেন্ট মানে হল – মানে এর পুরা কথাটা হল “ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলবমেন্ট” – কিন্তু একে সংক্ষেপে বলতে শুধু ডেভেলবমেন্ট শব্দটা নেয়া হয়েছে। আর বাংলাতে বললে এটা অবকাঠামো উন্নয়ন [Infrastructure Development] যাকে সংক্ষেপে আমরা শুধু উন্নয়ন বলি।  ১৯৪৫ সালে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর জন্মের সাথে সম্পর্কিত এক মুখ্য কনসেপ্ট হল এই “ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলবমেন্ট”। মনে রাখা যেতে পারে বিশ্বব্যাংক এটাও এর সংক্ষিপ্ত নাম। আর এই প্রতিষ্ঠানের পুর্ণনাম হল, International Bank for Reconstruction and Development (IBRD)

 কমিউনিস্টদের কাঙ্খিত ক্যাপিটালিজমের বিনাশ বা পতন এখনও হয় নাইঃ
খুবই সংক্ষেপে বললে, খোদ কার্ল মার্কস সহ কমিউনিস্টদের আকাঙ্খা ও অনুমান ছিল যে দুনিয়াতে ক্যাপিটালিজম টিকবে না; টিকতে পারবে না। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিজ গুনেই ভেঙ্গে পড়বে। কার্কস তাঁর সারপ্লাস ভ্যলু তত্বের প্রেক্ষিত এমনটা মনে করতেন। তাই এই আকাঙ্খা-বিশ্বাস খোদ মার্কসের (১৮১৮-১৮৮৩) ছিল; একইভাবে লেনিনেরও (১৮৭০-১৯২৪) ছিল। ফলে পরবর্তি প্রায় সকল কমিউনিস্টদেরও। কিন্তু কমিউনিস্ট অনুমান বা ভবিষ্যতবাণীকে মিথ্যা প্রমাণ করা এক্ট বা এমন প্রধান ততপরতা মনে করা হয় – এই ১৯৪৫ সালে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের জন্ম হওয়া।  যেটা লেনিন পরবর্তিতে ১৯৪৫ সালের এসে সোভিয়েত  প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্তালিন চেয়ে চেয়ে দেখেছিলেন যে  আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের জন্ম হচ্ছে। কিন্তু তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসেছিলেন। কোন প্রতিক্রিয়া দেন নাই, দেখান নাই, কিছু লেখেনও নাই। সম্ভবত তিনি অস্পষ্ট ছিলেন, নিশ্চিত ছিলেন না যে কী বলা ঠিক হবে! অন্যদিকে এদুই প্রতিষ্ঠানের জনক  বা ফাউন্ডিং ফাদার মনে করে খোদ আইএমএফ-ই নিজের ওয়েব সাইটে লিখে রেখেছে যাদের নাম – এমন দুজন হলেন, বৃটিশ অর্থনীতিবিদ কেইনস [John Maynard Keynes ]  আর অপর জন হলেন সেকালে আমেরিকান ট্রেজারি মন্ত্রণালয়ের চীফ ইকোনমিস্ট ডেক্সটার [Harry Dexter White]। এরা মূলত দুনিয়ায় উন্নত দেশ মানে অর্থনীতিতে সারপ্লাসের দেশ থেকে গরীব দেশের জন্য অবকাঠামোগত ঋণ এর ব্যবস্থা করে দুনিয়াকে এক নয়া গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের পথে সাজিয়ে ফেলেছিলেন। এদিকের ১৯৪৫ সালের পরের দুনিয়া জুড়ে কলোনিমুক্ত স্বাধীন দেশের এক দুনিয়া হয়ে উঠেছিল। তাই, সারপ্লাস অর্থনীতির বড় দেশগুলো তাদের সম্পদের একটা ছোট অংশ আমাদের মত দেশে অবকাঠামোগত ঋণ (প্রায় নাই সুদে) দেওয়ার একটা গ্লোবাল কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান (আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক) গড়াতে এদুই প্রতিষ্ঠান শুরুতে খুবই প্রাণবন্ত ও সচল এক গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম চালু করতে পেরেছিলেন। এটাই অবকাঠামো উন্নয়নের অর্থনীতি। সংক্ষেপে উন্নয়নের অর্থনীতি।  মজার কথা হল জনবহুল চীন এই অর্থনীতির সুবিধা নিবার পথ ধরেই আজ প্রায় খোদ আমেরিকাকেই ছাড়িয়ে যাওয়া দুনিয়ার বড় অর্থনীতি যা আগামিতে পালাবদলে নেতা আমেরিকার স্থান নিবার পথে উঠে  আসছে!  অর্থাৎ অবকাঠামো উন্নয়নের ধারণাটাই কমিউনিস্ট আগের ভবিষ্যতবাণীকে আপাতত নাকচ করে রেখেছে, এটা এক কঠিন বাস্তব সত্য।  আর একারণে বলাই বাহুল্য যে “উন্নয়ন”, এটা এন্টি কমিউনিস্ট ধারণা; যা কমিউনিস্ট প্রেডিকশনকেও নাকচ করে রেখেছে

এজন্যই BIDS [প্রাক্তন নাম PIDE] কে বলেছি এটা আমেরিকা প্রভাবিত ধারণা। আবার তামাসাটা হল, এই BIDS ১৯৭৪ সালের পর থেকে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়; যা এখনও কম-বেশি তাই।  আর রেহমান সোবহান প্রগতিশীল পরিচয়েই অবসরের (১৯৯২) আগে পর্যন্ত এই BIDS এর  ডিজি বা প্রধান ছিলেন।  সারকথায়,  ১৯৭৪ এর আগে পর্যন্ত রেহমান সোবহান বাংলাদেশে “সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি” গড়ার বিরাট কুতুব কারিগর; আবার ১৯৭৪ সালের পরবর্তিতে BIDS জেগে উঠলে মানে পুঁজিতান্ত্রিক অবকাঠামো উন্নয়নের অর্থনীতি শুরু হলে পরে (১৯৮০) তিনিই আবার BIDS এর প্রধান হয়ে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের উন্নয়নের অর্থনীতিরই মুল্যায়নকারী, প্রকল্পের গবেষক! ব্যাপারটা হেভি মজার নিঃসন্দেহে। তবে একটা বাক্য পাওয়া যায় উইকিতে যেটা রেহমান সোবহানের  বায়ো বা পরিচিতি্র অংশ। সেই বাক্যটা এরকম, …… After the liberation of Bangladesh in 1971, Sobhan was appointed a member of the Planning Commission. He quit when he, along with others, fell from the grace of Sheikh Mujib in 1975. । বাংলায় বললে, ১৯৭৫ আসতে আসতে শেখ মুজিব কমিশনের সকলকে বের করে দেন; তারা সকলে নিজে পদত্যাগ করতে বলেন  আর এভাবেই তাঁরা শেখ মুজিবের অনুগ্রহ বা গুড-বুক থেকে  সকলে ঝড়ে পরেছিলেন।

অথচ, ১৯৭২ সাল থেকেই এই প্রগতিশীল কথিত “কমিউনিস্ট অর্থনীতির গোষ্ঠির” এরা আমাদের দেশে বিশ্বব্যাংক সাহায্য করতে বা অনুদান দিতে অথবা প্রায় না সুদে ঋণ দিতে চাইলেও এরা তা ঠেকিয়ে রেখেছিল। যেটার জন্যই  শেখ মুজিবকে পরে তবে ঐ ১৯৭৪ সেপ্টেম্বরেই নিউইয়র্ক গিয়ে কিসিঞ্জারের সাথে দেখা করে প্রথম বিশ্বব্যাংকের সাহায্য নিতে তাঁর আগ্রহ তিনি পুনরায় প্রকাশের সুযোগ নিয়ে তা নিশ্চিত করে এসেছিলেন।   কিসিঞ্জার তাতে একমত হলেও তা বাংলাদেশে আসার প্রস্তুস্তি শেষ করে আসতে আসতে ১৯৭৬ সালের বাজেট বছর শুরু হতে সময় লেগে যায়। আর ততদিনে শেখ মুজিব নিহত, এই কাফফারা দিতে হয়! বিশ্বব্যাংক সেই প্যাকেজে প্রথমে অনুদান (যার সুদ-আসল কিছুই ফেরত দিতে হয় না ) সাহায্য আর পরে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (প্রায় না সুদের ০.৭৫%) ঋণ দেয়া শুরু করলে এর স্থানীয় ইভ্যালুয়েটর ও সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনার কনসালটেন্সি পায় কিন্তু আধা-সরকারি বিআইডিএস [BIDS] আর এই বি আইডিএসের প্রধান ছিলেন রেহমান সোবহান। মানে দাড়িয়েছিল এমন যে, দুভিক্ষ লাগানো কথিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির এক কর্তা তখন হয়ে গেছেন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের ইভ্যালুয়েটর!!!

এখন পুরাই বিষটাকে যদি ইতিবাচকভাবে দেখি তবে এটা ছিল রেহমান সোবহানের জন্য একটা খুবই ভাল সুযোগ। তিনি এই দুই প্রচেষ্টা [কথিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি আর পরে বিশ্বব্যাংকের উন্নয়নের অর্থনীতি ]  এই দুই অর্থনীতির ব্যবহারিক তুলনা (আতলামো না) এমন ভালো-মন্দের মুল্যায়ন মন্তব্য তিনি নিজ সৎ -অভিজ্ঞতা আকারে হলেও লিখে যেতে পারতেন! যা নিঃসন্দেহে পরবর্তি প্রজন্মের জন্য এক মৌলিক সোর্স হতে পারত!  কিন্তু হায়! কিছুর বলার নাই। রেহমান সোবহান এখন একালে বাংলাদেশ যেন ভারতকে  করিডোর দেয় – এই জবরদস্তি ও বিনা পয়সায় তা দেওয়ার দালাল হয়েছেন!

এমনিতেই ২০০৭ সাল থেকে (আসলে ২০০৪ সালে সিপিডির সৎপ্রার্থী আন্দোলনের সময় থেকেই) তিনি বাংলাদেশে ভারতের লুটে নেয়া স্বার্থ হাসিল বা পাইয়ে দিবার ক্ষেত্রে সরাসরি এজেন্টের ভুমিকায় নেমে গেছিলেন। যেটা এখনও নানা উছিলায় ও ডালপালায় সক্রিয় আছে। যেমন বাংলাদেশ থেকে ভারতকে বিনা পয়সায় আর বাংলাদেশের স্বার্থ ত্যাগ করে কেবল একচেটিয়া ভারতের স্বার্থে ভারতকে করিডোর পাইয়ে দিবার পক্ষে তিনি এক নম্বর ওকালতকারি।  এমনকি যারা ভারতকে করিডোর দিবার বিপক্ষে তাদেরকে তিনি প্রকাশ্য সভায় ‘অশিক্ষিত’ বলেছেন; এতই ঘামন্ডি আত্মদর্পী তিনি। দেখুন ১। ট্রানজিট বিরোধিতাকে ‘অশিক্ষিতদের বিতর্ক’ বললেন রেহমান সোবহান; ২।  “Bangladesh is the only country to see debate over transit, which is very usual through borders,” ……“I think it’s a debate of ignorant people,”। 

এগুলো হল এখন তাঁর ক্রেডেনশিয়াল; বিরাট অর্জন!!! বাংলাদেশে এই লবি আর দালালি করে দিয়েই তিনি শেষ জীবনে সিপিডি [CPD] কে খাড়া করেছেন। এটা নাকি তাঁর যোগ্যতা!! আর প্রতীকিভাবে বললে যেমন ধরেন মুচকুন্দ দুবে যিনি ভারতের এক সাবেক আমলা কূটনীতিক; বাংলাদেশে এক সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদুত ও বলা যায় যিনি প্রো-কংগ্রেসী। তিনি একালে ঢাকা আসলে পরে রেহমান সোবহান তাঁকে নিয়ে যেন পবিত্র তীর্থে যাচ্ছেন এভাবে তাঁরা দুজনে প্রথম আলোর অফিসে এসে মতিউর রহমানের সাথে মোলাকাত করবেন! আবার অনেকে বলেন, প্রথম আলো আর সরকারের মধ্যে যে টেনশন বা যেমন প্রধানমন্ত্রীর অফিসে অনা-আমন্ত্রণ বা ঢুকতে না দেওয়া এসব পেরিয়ে তাদের মধ্যে প্রধান মধ্যস্থতাকারি হলেন রেহমান সোবহান! ইত্যাদি।

কিন্তু কেন এই লেখাঃ
উপরে এতক্ষণ যা যা লিখেছি তা বলার জন্য  মূলত এলেখা লিখতে বসি নাই।  সেগুলো পটভুমি মাত্র! আর এখন সেই মূল প্রসঙ্গে যাব।  সম্প্রতিকালে রেহমান সোবহান এক মহৎ কর্ম করেছেন!!
গত দুবছর একটু একটু করে এবছরে এসে বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে গভীর দুর্দশায় নিমজ্জিত; এটা সারা দেশের লোক টের পাচ্ছে। বিশেষ করে প্রত্যেকটা বাণিজ্যিক ব্যংক ব্যাপক অনাদায়ী খেলাপি ঋণ এর ভারে ডুবে আছে। যদিও কম বেশী আছে যা থেকে দুর্বল আর সবল ব্যাংক এর ধারণা টানা হয়েছে। যেখান থেকে মূল সমস্যাটা হল, প্রত্যেকটা ব্যাংক তার আমানত মানে আম পাবলিকের জমা টাকা খেয়ে ফেলেছে – অনাদায়ী খেলাপি ঋণ এর সংকট কথাটার প্রকৃত অর্থ এটাই। তাই মিডিয়া রিপোর্ট আসছে যে প্রায় প্রত্যেকটা ব্যংকই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে টিকে আছে, প্রতিদিনের দায় মিটাচ্ছে। এই সময় রেহমান সোবহান এক সভায় বক্তৃতায় বলেছেন, “দেশে খেলাপি ঋণের জনক জিয়াউর রহমান: রেহমান সোবহান”। খোজ নিয়ে জানা গেল এমন কথা তিনি ২০১৮ সালেও একবার বলেছেন। দেখুন, ঋণ খেলাপির সংস্কৃতি জিয়ার আমলে শুরু: রেহমান সোবহান

কোন একাদেমিক বা গবেষকের জন্য এমন বক্তব্য অপরাধমূলক; এক ক্রিমিনাল বক্তব্য। জনমানুষকে বিভ্রান্তকারি বক্তব্য। কেন এমন বলছি??

তাঁর এই বক্তব্যকে দুভাবে দেখব। এক,  বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি এদের বিতর্ক-ঝগড়া কোন সিরিয়াস আলোচনায় আনার যোগ্য নয়। যদিও তাদের এমন ঝগড়া কালচারে পরিণত হয়েছে। আমরা এক্ষেত্রে বড়জোড় যা পারি তা হল, কোন সিরিয়াস আলোচনায় অথবা একাদেমিক টেবিলে বা জগতে এসব তর্ক-কে না আনতে পারি; এড়িয়ে যেতে পারি। অর্থাৎ ইতিবাচক  ও অর্থপুর্ণ আলোচনার তাগিদ থাকলে কোন একাদেমিশিয়ানের এই বিতর্ক-ঝগড়া সচেতনভাবেই টেবিলে আনার কথা না বরং এড়িয়ে চলার কথা। কিন্তু আমরা দেখছি রেহমান সোবহান এটা এনেছেন। ১৯৮০-৮১ সালের ঘটনাকে লীগ বনাম বিএনপির ক্যাচালের মত করে এখানে তুলে এনেছেন। কেন এনেছেন?

কারণ দুই, তিনি বর্তমানে দুর্দশায় নিমজ্জিত অর্থনীতির এই কালে হাসিনার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ জনমানুষের ক্ষোভ বা তা থেকে উঠা হাসিনার সংকটকে লঘু করে দিয়ে চেয়েছেন। যেন বলতে চেয়েছেন যে খোদ জিয়াউর রহমানই যেহেতু এটা শুরু করেছেন আজ থেকে ৪৫ বছর আগে তাইলে আর একালে হাসিনার আর দোষ কী? কিন্তু আসলেই কী তাই যে, জিয়াই খেলাপী ঋণের কালচার সৃষ্ট করেছিলেন কী?

অন্যদিকে আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখছি কথাটা হাসিনা, ওবায়দুল কাদের বা লীগের কেউ রেহমান সোবহানের এই চাতুরিকে প্রশ্রয় দেয় নাই, পিক-আপ করেই নাই। যাকে বলে লীগের কেউ এতে মাতে নাই!!! কেন? খুব সম্ভবত হাসিনা খেলাপি ঋণ নিয়ে আলোচনাতেই ঢুকতে চায় নাই। কারণ তিনি জানেন প্রায় প্রত্যেকটা ব্যাংকই অনাদায়ী খেলাপি ঋণের দুর্গতি আটকে আছে। শুধু তাই না এই খেলাপিরা সোজা বা ঘুর পথে সরকারী দলের বা আড়ালে থেকে সুবিধা খেয়ে নিয়েছে।  আসলে এগুলো আদায় করার মুরোদ সেটা সরকারেরও নাই!  আর সবচেয়ে বড়কথা ঋণগুলো যারা নিয়ে ভেগে গেছে এরা বেশির ভাগই তার দলীয় নেতা বলে সরকার এদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবে না। খুব সম্ভবত এটাই সরকারের মূল্যায়ন!

কিন্তু রেহমান সোবহানের এনিয়ে এত তাগিদ উতলা কেন?
এলেখাতেই শুরুতে বলেছি, হাসিনা তাঁর বাবার আমলের লোক, শেখ মুজিবের সাথে কাজ করেছেন স্মৃতি আছে এমন ব্যক্তিত্বদের একালে  পদক প্রদান, বিশেষ সম্মাননা থেকে বৈষয়িক লাভালাভ পাইয়ে দেয়া তিনি করেছেন। আবার আরেকটা ফ্যাক্টস হল, রেহমান সোবহানের পেশাগত এক বড়ভাই আছে। নাম প্রফেসর নুরুল ইসলাম (গতবছর ২০২৩ সালে মারা গেছেন)। যিনি ১৯৭২ সালে গঠিত সরকারী পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট। কথাটা একটু বুঝায়ে বলতে হবে। সোভিয়েত ভাষ্য বলে থাকে যে তারা পরিকল্পিত অর্থনীতি করে থাকে। তাই পরিকল্পনা কমিশন বা মন্ত্রণালয়, সেখানে এটা খুব গুরুত্বপুর্ণ। সেই আদলে, আমাদের পরিকল্পনা কমিশনের তখন একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট আর প্রেসিডেন্ট পদ ছিল। পদাধিকার বলে প্রধানমন্ত্রীই কমিশনের প্রেসিডেন্ট হতেন। আর এর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন (একালের হিসাবে যেটা পরিকল্পনামন্ত্রী পদ) তবে এটা টেকনিক্যাল পোস্ট – আর এই নুরুল ইসলাম ছিলেন সেই ভাইস প্রেসিডেন্ট।

এখন আওয়ামি আমলে কথিত আছে যে পাকিস্তান আমলে এই সিনিয়র অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম আর জুনিয়র রেহমান সোবহান এরাই নাকি শেখ মুজিবের ১৯৬৬ সালের ছয়দফার প্রনেতা বা ড্রাফটকারি। শুধু তাই নয় এরাই দুই পাকিস্তান অংশের অর্থনীতির দশা ইকোনমিক ডাটা ব্যবহার করে তুলে দেখিয়েছিলেন যে তুলনায় পুর্ব পাকিস্তান বঞ্চিত ও অসাম্যের শিকার!  সেকালের এসব ততপরতা থেকেই এরা নিজেদের হিরো ভাবতে ভালবাসেন আর তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে শেখ মুজিব ঘনিষ্ট ছিলেন। তাই সেকাল থেকেই এই ক্রেডিট কিছু বিনিময় মূল্য কিছু বিশেষ করে রাখা ইত্যাদি তারা তাদের শেষ জীবন্বের মরিয়া হয়ে চেয়ে থাকেন।  কিন্তু সমস্যা হল, আগেই বলেছি বাংলাদেশের শুরুতে কথিত ঐ  সমাজতান্তিক অর্থনীতি দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে শেষ হলে শেখ মুজিব তাজউদ্দিন সহ সকলকে পদচ্যুত করেন, মানে পদত্যাগ করতে বলেন। এতে তাদের স্বাধীনতা-পুর্ব সব ক্রেডিট কালো হয়ে যায়।  অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম এর কেসটা আবার আরো খারাপ। কারণ, তিনি সেকালের অর্থনৈতিক দুর্দশা আর দুর্ভিক্ষের মধ্যেই বা কিছুটা আগেই (সম্ভবত সেপ্টেম্বর ১৯৭৪) বিদেশে জাতিসংঘের [FAO] er চাকরি নিয়ে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান। যেটা শেখ মুজিবকে আহত করেছিল। আবার বলা হয় একবছরের ছুটি নিয়ে গেলেও আর ফিরে আসেন নাই।
অথচ বিদেশি চাকরি শেষ করে গত কয়েক বছর ধরে তিনি দেশে এসে হাসিনার মন, দৃষ্টি ও স্বীকৃতি পেতে কোন কিছুই করতে বাদ রাখেন নাই। উদ্দেশ্য একটাই হাসিনা যেন স্বাধীনতা-পুর্ব অবদানের ঘটনায় তাদের স্বীকৃতি দেন। কিন্তু তাঁর দেশত্যাগ ও শেখ মুজিবের আহত হওয়া; আর ওদিকে এমনকি অনেকে দাবি করেন ১৯৭৪ সালে তাজউদ্দিননের পদত্যাগ উত্তরকালে শেখ মুজিব নুরুল ইসলামকেই নাকি অর্থমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নুরুল ইসলাম তখন দেশত্যাগে ব্যস্ত। খুব সম্ভবত, সমাজতন্ত্রী করতে গিয়ে দেশকে দুর্ভিক্ষে ফেলা আর নুররুল ইসলাম-সহ এমন তাদের অন্যান্যা সহযোগী অনেকেই নিজ উন্নতির লক্ষ্যে হারিয়ে যান। (যেমন আনিসুর রহমান, মোসাররফ ইত্যাদি অনেকেই যেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম  সম্ভবত প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ যাকে জিয়া নিজ ক্যাবিনেটে শিল্পমন্ত্রী উপদেষ্টা করে রেখেছিলেন, যিনি বিশেব্যাংকের অনুদানে ঢাবিতে আইবিএ প্রতিষ্টান সাজিয়ে নেন। ) এসব বিবেচনা থেকেই শেখ হাসিনা সমাজতন্ত্রী অর্থনীতিবিদ এই গোষ্ঠির কাউকেই কোন আনুকুল্য বা কোন বিশেষ সম্মন্ননা জানাতে এখনও কারও প্রতি রাজি হন নাই। হাসিনার এই মুল্যায়ন খারাপ বা ভুল তা বলা কঠিন; বা অন্যভাবে বললে, এমন বলার মত যথেষ্ট পয়েন্ট আমাদের হাতে নাই। বিরাট জ্ঞানীরা দেশে দুর্ভিক্ষ লাগিয়ে দিয়ে কেটে পড়বেন বা কোন দায় নিবেন না, রিকভারিতে হাত লাগাবেন না – তো এরা তাহলে দেশের জন্য কারা? রেহমান সোবহানও পরের পাঁচ বছর বিদেশে চাকরিতে ছিলেন।

তামাসার কথাটা হল, গত বছর নুরুল ইসলাম মারা [৯মে ২০২৩] যান, য়ার এতে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে যে শোক সভা ডাকা হয়েছিল সেখানে উপস্থিত প্রগতিশীল গোষ্ঠির তরফ থেকে তাতে বক্তারা সবাই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষে হাসিনাকে দুষে কথা বলেছিলেন। এখানে   এখানে  এখানে দেখুন।    এছাড়া দেশে ফিরার পর থেকে নুরুল ইসলাম মৃত্যুর আগে পর্যন্ত  তার আক্ষেপ ছড়িয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সাক্ষাতকার দিয়ে গেছিলেন। যার সর্বশেষটা সম্ভবত এইটাআর এতে লক্ষ্য করা যায় কেউই সমাজতন্ত্রী অর্থনীতির দুর্ভিক্ষ এই পরিণতি নিয়ে, এর দায় নিয়ে কোন প্রসঙ্গই তুলেন নাই। আমার ধারণা অন্তত একারণে, তারা কোন কিছুর বিশেষ প্রাপ্তির দাবিদার হওয়াটা নিজেরাই ম্লান করে দিয়েছেন! আবার নুরুল ইসলামের মৃত্যুর পরে খোদ রেহমান সোবহানের লেখাটাও এখানে দেখতে পারেন।

তবু এই লেখায়  মুলকথাটা হল, রেহমান সোবহান এর ভাষায় তার “কমরেড” নুরুল ইসলামকে হাসিনার পাত্তা না দেয়া বা নিরুত্তাপ থাকা – এটা দেখার পরও মনে হচ্ছে রেহমান সোবহান হাসিনার মত পেতে হাল ছাড়তে রাজি না। তিনি সম্ভবত ভেবেছেন, তাঁর লাস্ট ট্রাম্প হল – দেশে খেলাপি ঋণের জনক জিয়াউর রহমান -একথাটা রটায় দিলে নিশ্চয় হাসিনা এবার তাঁকে কোলে তুলে নিবেনই!!! কিন্তু হায়!  রেহমান সোবহানের পোড়া কপাল, তেমন কিছুই ঘটে নাই! হাসিনাও একথা তুলে নিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে কোন ব্যাশিং করতে যান নাই!

তবে মূল প্রশ্ন, আসলেই কী জিয়া ঋণ খেলাপীর জনক? নাকি এই বক্তব্য রেহমান সোবহানের এক অসৎ কাজ – এক ইন্টেকচুয়াল অসততা?
প্রথম কথা হল জিয়ার আমলে ঋণ খেলাপীর ঘটনা ঘটেছে।  কিন্তু ফ্যাক্টস হল, এমন ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট জিয়ার ছিলই না।  এই সিদ্ধান্ত ছিল খোদ বিশ্বব্যাংকের।
এর প্রমাণ, আমি নিচে বাংলা অর্থসুচক পত্রিকা থেকে রেহমান সোবহানের এই বক্তব্য নিয়ে ছাপানো রিপোর্ট উঠিয়ে এনেছি আর নিচে সেঁটে দিয়েছি।  ওখানে দেখা যাচ্ছে রেহমান সোবহান বলছেন, “বিশ্বব্যাংকই এই ঋণদানে চালিকাশক্তি। তাদের পরামর্শেই ওই সময়
বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বিপুল ঋণ দেওয়া হয়েছে”

“সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে দেশে খেলাপি ঋণের জনক হিসেবে আখ্যা দিয়ে রেহমান সোবহান বলেন,
ওই সময় বিশ্বব্যাংকও খেলাপি ঋণ তৈরিতে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তাদের পরামর্শেই ওই সময়
বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বিপুল ঋণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের ব্যালান্স শিটের দিকে তাকানো হয়নি।
শিল্প ব্যাংক ও শিল্প ঋণ সংস্থার মাধ্যমে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এরপর তাদের খেলাপি
ঋণ বেড়ে গেলে বিশ্বব্যাংক একটি কথাও বলেনি, যদিও পরবর্তীকালে তারাই খেলাপি ঋণের বিষয়ে সোচ্চার…”

 

পয়েন্ট দুইঃ
রেহমান সোবহান কী চেক করেছেন কোন কোন ব্যাঙ্ক এমন ঋণ বিতরণ করেছে যা খেলাপি ঋণ হয়ে গেছিল?

এর জবাবটা রেহমান সোবহান  নিজেই সম্ভবত অজান্তেই আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন।

১। সেকালের খেলাপি ঋণ যে ব্যাংকের সে ব্যাংকের কার আমানতের অর্থ এটা?
রেহমান সোবহান নিজেই বলেছেন এগুলো – “শিল্প ব্যাংক ও শিল্প ঋণ সংস্থার মাধ্যমে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়া হয়েছে” -সেই ঋণ।  এখন শিল্প ব্যাংক ও শিল্প ঋণ সংস্থার যে ঋণ দিয়েছে খেলাপি হয়ে যাবার জন্য সেই অর্থ মানে ব্যাংকের আমানত কাদের অর্থ? কারা এদুই ব্যাংকে অর্থ রেখেছিল, অর্থ আমানত রেখেছিল যাতে তা ঋণ হিসাবে বিতরণ করা যায়? [যে ঋণ পরে অনাদায়ী খেলাপি ঋণ হয়ে যায়?]। এর জবাব হচ্ছে,  এই অর্থ আম পাবলিকের কারও না। সরকারেরও না।
কারণ শিল্প ব্যাংক ও শিল্প ঋণ সংস্থা – এদুই নামে এরা ব্যাংক হলেও এদের গ্রাহক বা সেবা-ক্রেতারা সাধারণ মানুষ নয়। এদুই ব্যাংকে কোন সাধারণ মানুষ বা স্বল্প আয়ের মানুষের একাউন্ট নাই। তাই এমন আম নাগরিকের কোন অর্থ এখানে রাখা নাই, একাউন্ট খুলে দেয় না। এদুই ব্যাংক কেবল মাত্র যারা সম্ভাব্য উদ্যোক্তা যারা শিল্প- কারখানা গড়বেন তাদেরকে ঋণ দেওয়া ও ফেরত নেওয়ার ব্যাংক। কেবল এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আমানত ও একাউন্ট আছে। এককথায় এগুলো বিশেষায়িত ব্যংক। যাদের সার্ভিস-ক্রেতা জনসাধারণ নয়। কেবল সম্ভাব্য শিল্প উদ্যোক্তারাই এর খাতক। তাও আবার এই খাতকেরা কিন্তু এই ব্যাংকে তাদের নিজের অর্থ আমানত হিসাবে রাখতে আসেন নাই।

এখন আসেন আরো সরাসরি প্রশ্ন তাহলে,  এই দুই ব্যাংক তাহলে ঋণ দিবার মত অর্থ কোথা থেকে পায়? কারা এই অর্থদাতা?

এর জবাব হল, এই অর্থই বিশ্বব্যাঙ্ক আমাদের সরকারের মাধ্যমে দুই বিশেষায়িত সরকারী ব্যাংক শিল্প ব্যাংক ও শিল্প ঋণ সংস্থা কে দিয়েছে; যাতে এদুই ব্যাংক সিলেক্টেড উদ্যোক্তা যাদের ঋণের আবেদন অনুমোদিত হয়েছে তাদেরকেই কেবল বিতরণ করবে এমন ব্যাংক। এর মানে সোজা ভাষায় হবু শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে বিতরণের জন্য দেয়া এই অর্থ যা, না আমাদের সরকারী অর্থ, না তা কোন সাধারণ মানুষের অর্থ। অর্থাৎ এই ঋণদান শেষে খেলাপি হয়ে গেলেও এর দায়ভার সরকারের নয়।  এসবের প্রকৃত কারণ এটা ছিল বিশ্বব্যাংকের এক এক্সপেরিমেন্ট প্রকল্প এর ঋণ যে বাংলাদেশের শিল্পায়ন ঘটাতে গেলে তাদেরকে কিভাবে আগাতে হবে এজন্য তাদের বুঝাবুঝি শক্ত করার প্রকল্প এটা।

বিশ্বব্যাংক-কে বুঝাবুঝিঃ
আইএমএফ-বিশ্বব্যাংককে বুঝাবুঝির সমস্যা, এটা আসলে কী ধরণের প্রতিষ্ঠান, এর কাজ ও ম্যান্ডেট কী এটা নিয়ে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলদের বুঝা-পড়া সবচেয়ে করুণ!  ব্যাপারটা তাদের কাছে নিপাত যাক বলতে পারার মধ্যে সীমাবদ্ধ!
তবুও সেকালের বিশ্বব্যাংক কেন এমন করেছিল তা নিয়ে আরো বিস্তারিত বুঝাবুঝি যারা প্রবেশ করতে চান তাদেরকে সত্তর ও আশির দশকের বিশ্বব্যাংককে স্টাডির বিষয় হিসাবে নিতেই হবে। এছাড়া তাদের জন্য আরেক বড়কাজ হবে – ROBERT McNAMARA  (5th President of the World Bank Group, April 1, 1968 – June 30, 1981) – এই ব্যক্তিত্বকে জানতেই হবে; তার  কাজ ও জীবনী প্রক্রিয়াকে।  তবে সাবধান; তাঁর কাজ ন্যয়সম্মত নাকি অন্যায় এসব মুল্যায়ন পাঠকের হাতেই থাক! কিন্তু ফ্যাক্টসগুলো জানা থাকতেই হবে – তাতে বা পাঠকের কাছে নেতি বা ইতিবাচক যাই হোক! এটাই আমার আবেদন থাকবে।
কেন তাকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করা হয়েছিল? তিনি ছিলেন আসলে আমেরিকান ফোর্ড মটোর কোম্পানির প্রেসিডেন্ট। পরে তাঁকে (১৯৬১-৬৮) আমেরিকান সরকারের নিরাপত্তা মন্ত্রী  [Defence Secretary] করা হয়। এরপর তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করা হয়েছিলেন। কিন্তু কেন? কী তার এক্সপার্টিজ যা তাঁকে নিয়ে এত চাহিদা তৈরি করেছিল? খুবই সংক্ষিপ্তভাবে একটু উত্তর দেই। তিনি তাঁর বিশেষ ম্যানেজমেন্ট কোয়ালিটি এই সক্ষমতার জন্য বিখ্যাত বলে নিয়োগদাতারা বিশ্বাস করতেন। তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আমলটাই ছিল আসলে আমেরিকার ভিয়েতনাম যুদ্ধের কাল। আর সবশেষে বিশ্বব্যাংকে তাঁকে আনা হয়েছিল এটা মনে করে যে তাঁর আগমনের আগে বিশ্বব্যাংক এশিয়াতে এসে ভাল কাজ করতে পারছিল না। এর সুরাহা করতে। এশিয়ায় সরকারগুলোর সাথে মিলে কোন দেশের মূল অর্থনীতি খাঁড়া করলেও এর সুবিধা নিয়ে প্রান্তিক অঞ্চলের বহু গরীব লোককে তা স্পর্শ করতে পারছিল না। ঐ দেশের অর্থনীতিক কার্যক্রমে একেবারে প্রান্তিক গরীবদেরকে তাতে সামিল করতে পারছিল না। এটাই এককথায় বিশ্বব্যাংকের কর্মসুচি গ্রামের প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে সমস্যার  মুখোমুখি হচ্ছিল। এটা ভাঙতেই ম্যাকনামারার ম্যানেজমেন্ট বুদ্ধি কাজে আসবে মনে করা হয়েছিল।
তাই ম্যাকনামারার টেকনিক অনুসরণ করতে গেলে এজন্য অর্থ অপচয় কিছু হলে হোক, এই নীতি নেয়া হয়েছিল। তিনি এক নয়া টার্গেট নেন প্রান্তিক অঞ্চলে যেভাবেই হোক কম সুদের ঋণ সহজলভ্য করতেই হবে – তাতে কিছু চোর বাটপার বিশ্বব্যাংকের অর্থ মেরে দিলেও ক্ষতি নাই। একবার প্রান্তিক অঞ্চলে অর্থ (ঋণ বা মূলধন) এভেলএবল করতে পারলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি তাদেরকে ক্যাপিটালিজম এর অংশ করে ফেলতে পারলে পরে এরা নিজেরাই এগিয়ে আসবে। তাতে শুরুতে কিছু অর্থ ফেরত আসবে না, মেরে দিবে, অপচয় হবে তা হলেও কেবল শুরুতে এই পথেই আগাতে হবে। বিশ্বব্যাংক তাই অনুসরণ করেছিল। আর এসময়কালের অপচয় নিয়েই আনু মোহম্মদের মত অনেকেই সেকালের বাস্তবতায় লিখেছেন, এর অনেক অভিযোগ আছে। কিন্তু আশির দশকের শেষে বিশেষ করে ৯১ সালের পরে এসব এলোমেলো হয়ে থাকা অব্যবস্থা, ক্ষতি, অপচয় ইত্যাদি সবকিছুকেই কঠোর এক জবাবদীহিতার অধীনে আনা হয়। ইন্টিগ্রইটি [INTEGRITY] বা জবাবদীহিতা শাখাকে মূল আলাদা এক প্যারালাল শাখা তৈরি করা হয় যারা কেবল বিশ্বব্যাংকের বোর্ডের কাছে জবাবদীহিতা করবে। এভাবেই ম্যাকনামারার আমলের ইচ্ছা করে তৈরি কিছু আবর্জনা তখন সব সাফা করা হয়। এই পরীক্ষারই আরেক অংশ ছিল আমাদের শিল্প ব্যাংক ও শিল্প ঋণ সংস্থা মত  প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিল্পঋণ বিতরণ করার উদ্যোগ। যেখানে বিশ্বব্যাংকের অনেক অর্থেরই অপচয় হয়েছিল। এতে বলাই বাহুল্য এই সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট জিয়ার সরকারের নয়, তাই এতে অনাদায়ী খেলাপী ঋণের দায়ও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উপর চাপায় নাই। কিন্তু সেকথা উল্লেখ না করে জিয়াকে দায়ী করে এমন বক্তব্য দেয়া ইন্টেলেকুচুয়ালি গ্রহণযোগ্য নয়! সৎ ততপরতা নয়!

আরেকটা কথা বলে শেষ করব, এটা মার্কসের এক তত্ব যে যেকোন দেশের শিল্পায়নের শুরুতে যে পুঁজির যোগাড় তা এসেছে অন্যের অর্থ আত্মসাত করেই বা সরকারী ট্যাক্সের অর্থ না দিয়ে সেই অর্থ মেরে দিয়ে ইত্যাদি ধরণের সব অসদুপায় ব্যবহার করেই। এটাই মার্কসের আদিম পুঁজি সঞ্চয়ের তত্ব।  ম্যাকনামারার বিশ্বব্যাংক এটাকেই ইতিবাচকভাবে নিয়েছিল। তাই খেলাপি ঋণের নামে অর্থ লোপাট করতে দিয়েছিল।  যেমন একটা একসময়ের বিড়ি ফ্যাক্টরির কথা জানি যে ১৯৯৯ সালের ১০০ কোটি টাকা আবগারি টাক্স মেরে দিয়েছিল যা সরকারের প্রাপ্য ছিল। কিন্তু সে ছিল আসলেই ভাল উদ্যোক্তা। তাই সে মেরে দেওয়া সেই ১০০ কোটি সেকালের বিচারে অনেক টাকা। সেই অর্থ দিয়ে সে ছয়টা নতুন কোম্পানি খুলেছিল যার চাওরটাই ছিল কারখানা আর দুইটা মার্কেটিংয়ের। এবং সবগুলোই এখন খুবই ভাল চলে এখন সে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ী। ম্যাকনামারা এই পথ ধরার পক্ষপাতি ছিলেন।
কিন্তু ম্যাকনামারার শেষ জীবন কাটে হতাশায়। শেষ পনেরো বছর তিনি কারো সাথে দেখা করতেন না। কোন সাক্ষাতকারো না। এভাবেই তিনি ২০০৯ সালে মারা যান। কিন্তু কেন তিনি একান্তে চলে গেছিলেন সেটাই জানা জরুরি। তাঁর কোনকিছুই   গ্রহণ করে নিবার কথা আমি বলছি না। তবে তাকে বিস্তারিত জানা আমাদের অনেক কাজে লাগবে বলে আমি মনে করি।

শেষ কথাটা হল, নিশ্চয় আমি রেহমান সোবহানকে এসব দিক জানাবার বা শিখাবার কেউ নই; আমি তুলনার অনেক ছোট্ট তুচ্ছ। তবে দাবি ও আশা করব অন্তত তিনি এসব জেনে নিয়ে তবেই না মূল্যায়ন করে মন্তব্য করবেন যে দেশে খেলাপি ঋণের জনক জিয়াউর রহমান – কথাটা সত্যি কিনা!! অবশ্যই আমি এবিষয়ে তাঁকে শিখাবার কেউ না, এটা আমার কাজও না। তাঁর প্রতি কোন উদ্ধত্ত দেখানো এটাও আমার জন্য হারাম। তিনি আমাদের কাছে সম্মানিত অবশ্যই! কিন্তু কম বা যথেষ্ট চিন্তা না করে কেউ একটা মন্তব্য বা কথা বলে ফেলবে এটাও আশা করি না!  অগ্রহণযোগ্য!

২।  এবার তুলনা করব। বাংলাদেশের এখন যে ঋণ খেলাপির ঘোরতর সমস্যা তা কী শিল্প ব্যাংক ও শিল্প ঋণ সংস্থার এর খেলাপি ঋণের মতন?
প্রশ্নই আসেনা। পদ্মা ব্যাংকের কথাই যদি ধরি, পদ্ম্যা ব্যাংকের খাতক আর শিল্প ব্যাংকের সেবা খাতক এক নয়। সবচেয়ে বড়কথা আমানতের প্রশ্ন। পদ্মা বা ন্যাশনাল ব্যাংকের আমানত সরাসরি দেশের আম জনতার। আপনার-আমার বাসায় গৃহিকর্মী হেল্পারের কাজ যারা করে এখন গরীব মহিলাদের অর্থ। যারা মাসে দুশ-পাচশ করে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে, তাদের কষ্টার্জিত আমানত করা টাকা। আর সে টাকাই ঋণ দিয়ে খেলাপী করা হয়েছে। তাই কোনভাবেই ন্যাশনাল ব্যাংক আর শিল্প ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক বা তুলনীয় উদাহরণ নয়। কারণ, শিল্পব্যাংকের আমানত বিশ্বব্যাংকের দেয়া আর তারা জানে এটা তাদের এক্সপেরিমেন্ট; তাই অর্থ ফেরত নাও আসতে পারে।

তাহলে এখন প্রশ্ন রেহমান সোবহানের মত এক ব্যক্তিত্ব তিনি ন্যশনাল ব্যাংক ধরণের ক্রাইসিসে পরা ব্যাংকের খেলাপি হওয়া আর শিল্প ব্যাংকের খেলাপি – এদুটাকে এক করে দেখলেন কেন? কীভাবে?  এ যেন “সোবহান” যার যার নামের সাথে আছে তারা সবাই কী একই রকম ব্যবহারের হবেই? তেমনই অনাদায়ী খেলাপি ঋণ মানেই কী এমন সব কেসগুলো একই?  তাহলে  এসব ফারাক বুঝা কী রেহমান সোবহান সাহেব এর জন্য কঠিন কোন কাজ? আমরা বুঝতে অক্ষম!

একমাত্র পথ হল, ইন্টেলেকচুয়াল সততা বজায় রেখে আমাদের সকলের কাজ-মন্তব্য করা উচিত!

 

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

[এই লেখা কোন নিউজ নয়, ব্যক্তির নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্লেষণ মাত্র। ফলে পাঠকের এ’লেখা পড়ে কিছুই বহন করা বা মান্য করার বাধ্যবাধকতা নাই। কেবল জানলেন যে এমন একটা মতামত আছে!]

আপডেটঃ     ০৩ এপ্রিল ২০২৪  সন্ধ্যা ৬ঃ ১৫
এই আপডেটে মূলত -‘ভ্যালু এডিশন চেইন’ নিয়ে অংশটাই একটু বিস্তার ঘটানো হয়েছে।

 

 

 

One thought on “রেহমান সোবহান কেন বললেন – জিয়া ঋণ খেলাপীর জনক; কথাটা কী সত্য?

Leave a reply to Mohammed Enamul Haque Cancel reply