ভারতের নির্বাচনঃ কংগ্রেসও সরকার গড়ে ফেলতে পারে


মোদি হেরেছেন আগামিতে কী?
এর অর্থ, তাতপর্য ও মূল্যায়ন” –

 

ভারতের নির্বাচনঃ কংগ্রেসও সরকার গড়ে ফেলতে পারে
গৌতম দাস
০৫ জুন ২০২৪ সন্ধ্যা ০৭ঃ ২৭
https://wp.me/p1sCvy-5Fv

নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী

 

প্রথম আলোসহ অনেক মিডিয়ায় আজ ভোরবেলায় দেয়া রিপোর্টের শিরোনাম –   ৫৪২ আসনের চূড়ান্ত ফল: বিজেপি ২৪০, কংগ্রেস ৯৯ আসন। এটা অবশ্য একা প্রথম আলো না, এমনকি সারা ভারতের ইংলিশ পত্রিকাগুলোরও প্রায় কমন শিরোনাম এটাই!
কিন্তু এই ফলাফলের এমন উপস্থাপন আমাদের দেশে এতে অর্থ খোলসা হবে না। বলা যায় কিছুই বুঝা যাবে না। কিন্তু যদি একই তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে করা বা দেয়া অন্য শিরোনামটা হয় এমন যে – বিজেপি একা সরকার গড়তে পারছে না – আবার কংগ্রেসও গড়ে ফেলতে পারার দাবিদারও” – তাতেও এই নয়া শিরোনামও সঠিকই থাকে মানে, একই তথ্য-সম্মত রিপোর্টের শিরোনামই  থাকে।  আর সেক্ষেত্রে আমাদের লাভালাভ হত এই যে আমরা ভারতের এবারের নির্বাচনী ফলাফলের অর্থ-তাতপর্য সহজেই ধরতে পারতাম!  কারণ এমন নয়া শিরোনাম শুনলে বাংলাদেশীরা সবাই নড়েচড়ে বসবেন।  হ্যা, কথা একেবারে সত্য! এতটুকু বাড়িয়ে বলা হয় নাই;  আর এতে কোন যদি-কিন্তুও নাই।

এবার একটু খুলে বলা যাক, তবে স্বল্প কথায় বললে, ভারতে সরকার গড়তে কোন দলকে ২৭৩+ আসনে বিজয়ী হতেই হয়। আর বিজেপি এবার পেয়েছে ২৪০ আসন। অর্থাৎ মোদির বিজেপি তাই এবার  ৩২-৩৫ আসনের ঘাটতিতে আছে। একথার অর্থ হল বিজেপি কোনভাবেই একা সরকার গড়তে পারছে না। এই অর্থে বিজেপি এবারের ফলাফল হল, বিজেপি হেরে গিয়েছে।  সেজন্যই  গতকাল সকাল দশটার পর থেকেই বিজেপির সুর বদলে ফেলেছে। মোদি আর নিজ দলের সকলেই বিজেপির নাম মুখে নেয়া বন্ধ করেছে; এর বদলে তারা তাদের রাজনৈতিক জোট এনডিএ [NDA, National Democratic Alliance] এই নাম বলা শুরু করেছে। যেমন দাবি করছে, এনডিএ (বিজেপি নয়) আবার ক্ষমতায় আসতেছে। আসলে বিজেপি যে একা আর সরকার গড়তে পারছে না সেটা মোদির অজানা ছিল না। কিন্তু আগের মতই হামবড়া “ভাব” বজায় রাখতে না পারলেও কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে এই “সুক্ষ্ম কারচুপি” বা কথার ফাঁকি তৈরি করেছে যে বিজেপি নয়, এনডিএ আবার ক্ষমতা আসতেছে!

বিজেপি এখন নিজের নাম ভুলে কেবল এনডিএ এনডিএ করছে, কেনঃ
আসলে এতদিন মানে পিছনের দুবারই সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজেপিই সরকার গঠন করে থেকেছে। তাই বিজেপি যা চায় তাই জোটের বাকি সকলকে মেনে চলতে হয়েছে। এতে আবার, এতদিন এনডিএ আছে ঠিকই কিন্তু তেমন উচ্চারিতই নয়, এমন দশা হয়েছিল !  এছাড়া সবচেয়ে বড়কথাটা হল বিজেপির সবসময় যে  প্রধান নীতি মেনে চলেছে তা হল অন্যের দল ভাঙ্গিয়ে প্রার্থীকে নিজদলের প্রার্থী করা; আর তা করে গেছে অর্থ বা যেকোন “অবৈধ সুবিধার” লোভ দেখিয়ে। তাতে সেটা এনডিএ জোটের ভিতরের কেউ হতে পারে আবার বাইরেরও! কোন পরোয়া করে নাই। আর মোদির এসব কাজের অর্থের যোগান? সেটাও কোন অসুবিধাই নয়; কারণ, দলের ফান্ডের ভান্ডার আদানি বা আম্বানিরা তো আছেই! এরই পরিণতি হচ্ছে এনডিএ জোটের প্রায় সকল দলই (যাদের এবার মোট আসন হল ৫২) বিজেপি বা তাদের নিজ এনডিএ জোটের প্রতি আনুগত্যহীন! এতে সারকথাটা দাড়িয়েছে এই যে – না মোদি না তাঁর এনডিএ জোটের কেউ – কারোরই কোন স্থির কমিটমেন্টে আর কেউ নাই। সব পক্ষই যখন তখন অন্য জায়গায় সুবিধা দেখলেই এনডিএ জোট ভেঙ্গে ত্যাগ করে চলে যায় অথবা সময়ে জোটে ফিরে আসে  – এটাই এতদিনের কমন প্রাকটিস!  গতকাল সন্ধ্যা থেকেই তাই মোদির প্রধান দুর্দশাটা হল – বিজেপি এই নাম ভুলে গিয়ে এই জায়গায় এনডিএ জোটের নাম বসিয়ে উচ্চারণ।  এছাড়াও আরও সিরিয়াস দিক মানে, মোদির গত দশবছরের ইজ্জত ধুলায় মিটানোর মত দুর্দশা হল যে মোদিকে এখন থেকে দুই এন বা N  দিয়ে যাদের নাম নাইডু আর নীতিশ – এদের মন যুগিয়ে চলতে হবে, পা-ধরতে হবে।

আজ ভোর থেকেই নিশ্চিত হওয়া এই কঠিন বাস্তবতা হল, মোদিকে এখন নিশ্চিতভাবেই এই ৫২ জনের হাত-পা চাটতে হবেই। আর তিনি তা ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন! যেমন এই ৫২ জনের মধ্যে বড় আসন ওয়ালা দুই এনডিএ জোট সঙ্গী দল হল – টিডিএ [তেলেগু দেশম পার্টি TDP] যেটা অন্ধ্রপ্রদেশ (হায়দ্রাবাদ) রাজ্যের দল; আর এরই মূল নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু [Nara Chandrababu Naidu ]। আর আরেকজন হলেন বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার; দেখুন “এবার খেলা দেখাবেন নীতীশ কুমার, কার্ড তো তাঁর হাতেই, তাকিয়ে গোটা দেশ”। সবচেয়ে মজার কথা হল, কংগ্রেসসহ অন্যান্য মোদিবিরোধী দলের বর্তমান জোট ইন্ডিয়া [I.N.D.I.A] এর জন্ম বলা হচ্ছে মাত্র ১১ মাস আগে (July 2023)। আর এই জোট গঠনের উদ্গাতা ও প্রথম উদ্যোগীদের একজন হলেন কিন্তু এই নীতিশ কুমার; যিনি পরে আর এই জোটে আর থাকেন নাই কারণ, তিনি এসেছিলেন মোদির এনডিএ জোট ভেঙ্গে আর মোদি আবার তাকে বড় কোন “সুবিধার” বিনিময়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।  এককথায় গত দশবছরের মোদি জমানায় তিনি সমসময় মোদির পক্ষে, আর না-হয় মোদিবিরোধী  এদুই জোটের কোন একটার সাথে বারবার বদলাবদলিতে থেকেছেন।

যদিও নীতিশের তুলনায় নাইডু – তিনি অনেক স্থির। বেশির ভাগ সময় তিনি কংগ্রেস ও তার বন্ধুদলের সাথে জোটের সঙ্গি থেকেছেন; কেবল এবারই সম্ভবত তিনি মোদির কোলে। তিনিই ইন্ডিয়ার আইটি খাতে যা সুনাম এর জনক! এককথায় গ্লোবাল আইটি খাতে একদিকে আমেরিকান গবেষণায় বুদ্ধি-পরিকল্পনা-ডিজাইন ইত্যাদি সবই তাদের আর অন্যদিকে তাতে ভারতের সস্তা কিছুটা এডুকেটেড শ্রমের অংশটা মাথা হল চন্দ্রবাবুর অন্ধ্রপ্রদেশ-হায়দ্রাবাদ রাজ্য। তাই ভারতের গৌরবজনক টেক সিটি [Tech city] বলতে এই হায়দ্রাবাদ।
ওদিকে অন্ধ্রে কেন্দ্রের নির্বাচনের দিনই রাজ্য সরকারেরও নির্বাচন হয়ে যায় একই সাথে প্যারালাল, এমন চারটা রাজ্যের একটা সে। গতকাল পাঁচ বছর পরে নাইডু আবার রাজ্য নির্বাচনে (বিজেপির সাথে করা জোটে) বিপুল ভোটে ফিরেছেন। আর এদিকের হিসাবে, এবার নীতিশ-নাইডু মিলিয়ে তাদের মোট আসন প্রায় ২৮; নীতিশ ১২ আসন আর নাইডু ১৬ আসন। ফলে বুঝতেই পারছেন বর্তমানে এনডিএ জোটে থাকা  নীতিশ-নাইডু মোদির কাছে কত গুরুত্বপুর্ণ। যেমন নাইডুর বিজয়ে ইতোমধ্যেই নাইডুকে মোদি তোয়াজ করতে চলেছেন; বিজয়ে ফোন করেছেন। আগামি নয় জুন নাইডু নয়া মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নিবেন আর তাতে উপস্থিত থাকবেন সম্ভবত মোদি স্বয়ং! দেখেন,  অন্ধ্র প্রদেশের বিধানসভায় শপথ নেবে, তখন সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ংএর পরিকল্পনা চলছে।

কিন্তু মোদির দিক থেকে দেখলে ভয়ঙ্কর কথাটা হল, বিজেপি জোটের নীতীশ-নাইডুর সঙ্গে যোগাযোগ করছে কংগ্রেস খবরটা হিন্দুস্তান টাইমসের আমি নিজেই গতকাল রানিং এনডিটিভিসহ স্থানীয় হিন্দি চ্যানেলে দেখেছিলাম; তখন নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেসের প্রেস ব্রিফিংয়ের পরে এই সংবাদ জেনেছিলাম। আর আজকে সব মিডিয়া লিখছে সব ছোট বড় দল এখন দিল্লিমুখি – মানে ধরাধরি পায়ে পরার কেনা বেচা এখন তুঙ্গে চলবে। আমাদের টিডিএস পত্রিকা সেগুলারই একটা সাম-আপ ছেপেছে – “মোদির ‘প্লেন’ ছেড়ে বিরোধী ‘প্লেনে’ নিতিশ? মাঝ-আকাশে জল্পনা তুঙ্গে!” । মানে হল নীতিশ কুমারকে নিয়ে টানা হেচড়া দরাদরি সম্ভবত চরমে উঠেছে।

এসবের অর্থ কী?
অর্থ খুব সোজা। মোদি একা (মানে কেবল বিজেপি) সরকার গড়ার দাবিদার নন; কারণ তাদের মোট আসন ২৪০ মাত্র, এটাই সব কিছু স্বাক্ষ্য! আর দ্বিতীয় কথা, আরো যে ৩২-৩৫ আসন মোদিকে যোগাড় করতেই হবে (যার মধ্যে নাইডু-নীতিশ মিলে ২৮ আসন থাকবে তা ধরে নেয়া আছে); আর এছাড়াও ৭-১০ জন আরো এমপি লাগবে; সাথে স্টান্ড-বাই আরো কিছু এমপি লাগবে। মজার কথা হল, এতে সব খুচরা আসন পাওয়া দলই এখন অনেক দাম হাকাবে। সবচেয়ে বড় কথা অলক্ষ্যে কংগ্রেসের ইন্ডিয়া জোটও যদি এতে মোদির চেয়ে বেশী সংখ্যায় এমপি যোগাড় করতে পারে তবে মোদিও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে বাদ যাবেন। তাঁর তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শখ খতম! যদিও ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী হবার প্রথম সুযোগ ও আহবান মোদিই পাবেন; কারণ তার দলের অবস্থান ২৪০ এমপি।
এমনকি আগামি দশদিনের মধ্যে যদি মোদি আপাতত এমপি যোগাড়ে সফলও হয়ে যান তবুও পরের দুমাসের মধ্যে আবার ক্রাইসিস দেখা দেওয়া – সেটাও অসম্ভব নয়। মোদির যোগাড় করা এমপিগুলো আগামি দিনগুলোতে নিজেই ভেগে যাবে বা কংগ্রেস ভাগায়ে নিয়ে যাবে – এমন শঙ্কার মধ্যেই কাটবে! এককথায় নিয়মিত এক ভাঙ্গাগড়ার ভিতর দিয়ে দুর্বলভাবে খাড়া করা কোন সরকারই বারবার গঠন হতে থাকবে!  এজন্য শিরোনামে বলেছি কংগ্রেসও দাবিদার হয়েই থাকবে। এনিয়ে আরো একটু বিস্তারে যাব পরবর্তিতে এলেখার শেষের দিকে।

তাহলে আগামিতে ভারতে কী হতে যাচ্ছেঃ এক.
আপাতত পয়েন্ট দুইটা।
১। ভারতের মোদির হিন্দুত্ববাদ এখানেই আটকে গেল; আরও আগানোর সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। ভারত হিন্দুত্ববাদ মুক্ত হতে থাকবে এখন থেকে; অন্তত উচ্চারিত হবে না আর! এটাকে বলা যায় হিন্দুত্ববাদের দিন শেষ; এর শুরু হল এখন থেকে!
২।  প্রমাণিত হল, হিন্দুত্বের সুরসুরি দিয়ে মানুষের পেটের ক্ষুধা বা কাজ না পাওয়া বেকারত্ব-কে ঢাকা দিয়ে সাময়িক চলতে পারলেও শেষে মোদি ফেল করতই; সেটা এবারই ঘটে গেল!

হিন্দুত্ববাদের দিন শেষঃ
গতকালই কলকাতা থেকে প্রথম আলোতে লিখেছে, নীতিশ-নাইডুর হাতে এখন বিজেপির বাঁচা-মরাএটা আসলে খুবই কম করে বলা। কেন?
গতকাল থেকেই কলকাতার আনন্দবাজার একেবারে মমতার পক্ষ আঁকড়ে ধরা অবস্থান নিয়ে ফেলেছে। আর কোন এদিক-ওদিক তাকানোর অবস্থায় নাই এই পত্রিকা! আজকেও এরা এক মুল্যায়ন রিপোর্ট লিখেছে। নিচে দেখেন।

“ভোটের ফলপ্রকাশের পর মঙ্গলের সন্ধ্যায় ‘জয় জগন্নাথ’ দিয়ে মঙ্গলবার বক্তৃতা শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদী (ঘটনাচক্রে, এ বার ওড়িশায় বিপুল জয়
পেয়েছে বিজেপি)। দেশে তৃতীয় বার এনডিএ কেন্দ্রে সরকার গড়ার জাদুসংখ্যা পেরিয়ে যাওয়ার পর মোদীর ৩৪ মিনিটের বক্তৃতায় এক বারও
‘জয় শ্রীরাম’ শোনা গেল না। রামমন্দিরের কথা বললেন যদিও। বিজেপি নয়, জোর দিলেন এনডিএ নামক জোটের উপর। তাঁর ভাষণে বার বার
শোনা গেল এনডিএ-র কথা”।

আনন্দবাজারের অবজারভেশন তাতপর্যপুর্ণ! মোদির মুখে আর ‘জয় শ্রীরাম’ শোনা গেল না, নাই।  জোর দিলেন বিজেপি নয়, জোর দিলেন এনডিএ নামক জোটের উপর। আর এই কথাগুলোই আমিও উপরে বলেছি। কেন এমন হচ্ছে? এককথায় কারণটা হল, মোদির এখনও আবার প্রধানমন্ত্রী হবার সুযোগ থাকলেও সেটা অবশ্যই হতে হবে এক কোয়ালিশন সরকারের প্রধানমন্ত্রী!! আর কোয়ালিশন সরকার মানেই হল, বিজেপির শ্লোগান ও কর্মসুচী বা দৃষ্টিভঙ্গি সেখানে চলবে না। এরই এককথায় বলা অর্থ হল, মোদির হবু কোন কোয়ালিশন সরকারে হিন্দুত্ববাদের বয়ান, বক্তব্য শ্লোগান চলবে না। এটা বলাই বাহুল্য।  হিন্দুত্ব বা হিন্দুত্ববাদের দাগ বা গন্ধ মোদির কোয়ালিশন শরীক কোন দলই নিতে চাইবে না। কারণ, বিশেষত মোদির চেয়েও কংগ্রেসের থেকে কখনও বেশী দাম পেতে কখন কোন শরীক দলকে কংগ্রেসের জোটের দরজায় টোকা দিতে হয় তা কে জানে? তাই ছোট দলগুলোর কেউই আগাম নিজ দলের সম্ভাবনা নষ্ট করতে চাইবে না! তাি মোদি এসব নিজেই বুঝে, আগাম নিজেই ঠান্ডা পায়ে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছেন!!! এটা বেশ মজার না?
কে ভেবেছিল যে খোদ মোদিকেই হিন্দুত্ববাদ বা জয় শ্রীরাম ত্যাগ করে একদিন এসবকেই এড়িয়ে চলতেই হবে!! এর চেয়ে বড় তামাসা আর কী হতে পারে??? যদিও এরপরেও কোন কোয়ালিশন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোন নিশ্চয়তা মোদির হাতে নাই!

দুই. পেটের ক্ষুধা বনাম হিন্দুত্বের সুরসুরিঃ
এটা ঠিক যে উগ্র জাতিবাদ মানে যেটা খোলাখুলি নিজ জাত-শ্রেষ্ঠত্ববাদ এর কথা সগর্বে বলে। তাও আবার সেই উগ্র জাতিবাদ  (ভাষা, ভুগোল বা অন্যকিছু ভিত্তিক জাতিবাদ না হয়ে যেটা ধর্মীয় জাতিবাদ) যদি ধর্মভিত্তিক উগ্র জাতিবাদ হয় সেক্ষেত্রে এমন উগ্র জাতিবাদী অনুসারী মাত্রই এক কমন সমস্যার মুখে তাদের পড়তে দেখা যায়। সেটা হল ধর্মবোধ এমনই উচ্চে উঠে যায় যে তিনি নিজ শরীরের কথা ভুলে যান বা অস্বীকার করতে বসে যান। অথচ কোন রক্তমাংসের মানুষের পক্ষে কী নিজ শরীরের কথা চাহিদা ভুলে যাওয়া সম্ভব? মানে হল, মানুষ মাত্রই সে বৈষয়িক; মানে সে রক্ত-মাংসের শরীর, তার ক্ষুদা লাগে। আর এই নানা ধরণের শারীরিক ক্ষুধা এটা সারাদিন ধর্মবোধে ডুবে বুঁদ হয়ে থাকলেও কমবে না, ক্ষুদা পুরণ হবে না। এটাকেই বলে নিজ শরীরের চাহিদা বা ক্ষুধা অস্বীকার করে কারও স্পিরিচুয়াল  বা ধর্ম-ভক্ত হয়ে উঠার সুযোগ নাই!  মানুষ আগে শরীর টিকায়ে বেঁচে থাকতে পারলে এরপরই কেবল সে স্পিরিচুয়াল  বা ধর্ম-ভক্ত হয়ে উঠতে পারে! অর্থাৎ আগে শরীর (মানে চাকরি বা কাজ) পরে হিন্দুত্ববাদ!

এখন এখানে এককথায় বললে, শাসক হিসাবে মোদি অযোগ্য কারণ তিনি গত দশ বছরে দেশে নুন্যতম সংখ্যায় কাজ সৃষ্টি করতে পারেন নাই; এমন কোন অর্থনীতি খাড়া করতে পারেন নাই।  [একই সমস্যা ছিল মোদির আগের কংগ্রেস কোয়ালিশনের (২০০৪-১৪) দশ বছরেও]। ফলে এবার নির্বাচনের আগে এমন বহু সাধারণ মানুষ বা পাশ করা বেকারদেরকে নিয়ে ছোট ইন্টারভিউ দেখেছি তারা বলছেন, মোদির হিন্দুত্ববাদ তাঁদের ভাল লাগে [হিন্দুত্বের  জাত-শ্রেষ্ঠত্ববাদের সুরসুরি যেহেতু]; কিন্তু একই নিশ্বাসে তিনি বলছেন তিনি বেকার; এটা তাঁর খারাপ বা অসহ্য লাগে।
মোদির হিন্দুত্ববাদ যাদের ভাল লাগে, মোদির এমন সাপোর্টার সবাই এবার মোদিকে ছেড়ে যান নাই; যদিও গেছেন কেবল একটা অংশ। ফলা ফল তাই বলছে! কিন্তু তাতেই মোদির এমন ভরাডুবি! শারীরিক ক্ষুধা সবসময়ই এমনই ধর্মবোধেরও  উপরে আগে বা প্রায়োরিটিতে অবস্থান করে থাকে! এর আরেকটা প্রমাণ হল, এত ঢাকঢোল পিটিয়ে সুপ্রীম কোর্টকেই হাত করে রায় নিয়ে মোদি বাবরি মসজিদের উপর রামমন্দির নির্মাণ শেষ করলেন। ভেবেছিলেন এটা তাকে এবার ভোটে ব্যপক মাইলেজ দিবে; তিনি ভোটে অনেক আগিয়ে থাকবেন। অথচ ঘটেছে উলটা।
এবার উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি (কংগ্রেসের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে) যে মূল শ্লোগান দিয়েছে তা আসলে এটাই যে হিন্দু-মুসলমানের অমীমাংসেয় ক্যাচাল উস্কে ঝগড়া বিতর্ক কিংবা রামমন্দির নির্মাণ ইস্যু এসব পাশে রাখেন, আগে কাজ সৃষ্টি করেন – মানুষ ক্ষুধার্ত সেদিকের তাকান!  সেদিকটা নিয়ে সরকারী কর্মসুচী, প্রকল্প তৈরি করেন আগে। আর এটাই এই দলকে পপুলারিটি দিয়েছে। মোদি-যোগীকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মোট আশি আসনের ৪৪ টাই নিজেরা পেয়েছে সমাজবাদী দলের জোট!
ঠিক একই জিনিষ ঘটেছে মমতার পশ্চিমবঙ্গে। মুসলমান প্রধান আসনগুলোতে বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার শ্লোগানও ছিল একই। বুঝা গেল ধর্মবোধ গুরুত্বপুর্ণ অবশ্যই, কিন্তু শারীরিক ক্ষুধা চাহিদা ভুলে সম্ভবত দশ বছরের বেশী সমাজের একটা বড় অংশ এভাবে চলতে পারে না! মোদির বা হিন্দুত্ববাদের হার হয়েছে এখানেই!

তাহলে কী দাড়ালো?
মূলকথাটা হল ভারতের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে – রাইজিং ইন্ডিয়া হতে – ইন্ডিয়া এখনও অনেক দূরে। এবারের নির্বাচন যেন এমনই এক ম্যাসেজ বা রায় চোখ আঙুল দিয়ে দেখাল।  গালগল্প তুলে আর এক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের চাপাবাজির দক্ষতা দিয়ে রাইজিং ইন্ডিয়া হওয়া যায় না। দেশে কাজ সৃষ্টি করতে হয়! টানা দশবছর হিন্দুত্ববাদের উত্থান দেখে যারা এতদিন এটাকেই ভারত শ্রেষ্ঠ, উগ্র হিটলারি হিন্দুত্ববাদী জাতিবাদই ভরসা আর এগুলোই ভারতের অর্থনীতি রাইজিং ইন্ডিয়াতে পৌছে যাবার লক্ষণ মনে করেছিল – তারাই সেই আম জনতাই আবার ফিরে গেল তাদের মনে পড়ল তারা ভুল আর মোহ এর মধ্যে আটকে গেছে। তাদের পেটে ক্ষুধা চিনচিন করছে!  কারণ তাদের কাজ নাই, অর্থনীতি নাই মানে কাজ নাই! এবার প্রায় ১৮০০ কোটি রুপী খরচ করে বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। এটা ফৈজাবাদ’ কনষ্টিটুয়েন্সী যার নাম বদলে অযোধ্যা করা হয়েছে। এই কথিত অযোধ্যেতেই বিজেপি হেরে গেছে, ৪৮ হাজারেরও বেশী ভোটে সমাজবাদি পার্টির কাছে

এতে ভারতের আগামি পরিণতি কী হতেপারেঃ
আমি আগে অনেকবারই বলেছি নেহেরুর হাতে ভারত এই রাষ্ট্রগঠন – এটাই মারাত্মক ত্রুটিপুর্ণ। কারণ, “কেন্দ্র নামে” এই ভুতুড়ে ক্ষমতা-প্রতিষ্ঠানের হাতে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখে ভারতরাষ্ট্র সাজানো হয়েছিল। আসলে বৃটিশ আমলেও ভারত বলে একই প্রশাসনের শাসনের অধীনে চলা কোন ভুখন্ড বলতে কিছুই ছিল না। ছিল কলকাতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক হেড কোয়ার্টার। আর এই কোম্পানি হেড কোয়ার্টার এর অধীনে আলাদা আলাদা কিছু রাজ্য এবং এরই পাশাপাশি ৫৫০ এরও বেশী আলাদা আলাদা করদ রাজ্য। এমন রাজ্য-প্রদেশ বা করদ রাজ্য এরাও আবার কেউ কারো অধীনে শাসিত নয়। সবাই আলাদা আলাদা ভাবে  এক কোম্পানি হেড কোয়ার্টার এর অধীনে শাসিত! তাই এক ভারত বলে কিছুইর অস্তিত্ব ছিল না। তাই নেহেরু একেবারে গায়ের জোরে সবকিছুকে এক ভুতুড়ে কেন্দ্রের অধীনে করে একটা ভারতরাষ্ট্র গড়তে গেছিলেন। আর এটাই আজ কাল হয়েছে।  এতে সবচেয়ে খারাপ ও বিপদের কথা হল, এই কেন্দ্র জিনিষটা আসলে কী? এটা কেমন ধরণের রাষ্ট্রচিন্তা? তা কখনই আমল করা হয় নাই। একাদেমিকেরাও না, রাজনীতিবিদেরাও না। এমন না হবার পিছনের মূল কারণ হল কমিউনিজম বা সবরোগ-হর সমাজতন্ত্রী ধারণা;  আর সমাজতন্ত্রী মানে সমাজের এক অংশ অপর অংশের উপর দাবড় দিয়ে রেখে চলে থাকে; ফলে চলতেই হবে – এমন ঘোষিত এক একনায়কতান্ত্রিক ধারণা। বিপরীতে এখানে রিপাবলিক বা পাবলিক ধারণাটাই অনুপস্থিত। পাবলিকের ক্ষমতা, গণ বা নাগরিক অধিকার ধারণাটাই অনুপস্থিত। এমনকি আমেরিকা কেন ফেডারল রাষ্ট্র -এর অর্থ বৈশিষ্ট কী তাও ভারতের কেউ, নুন্যতম কোন একাদেমিশিয়ান বুঝতে গেছেন জানা যায় না।   সবাই বড় জোর বাচ্চাদের মত করে আধো আধো বোলে (কেন্দ্রিয় সরকার না বলে) উচ্চারণ করে ইউনিয়ন গভর্মেন্ট। অথচ রাষ্ট্রই বুঝে না!

এক কথায় বললে ভারতের কোথাও কোনও কোণায় না রাজনীতিক পাড়ায় না একাদেমিক পাড়ায় – রাষ্ট্রচিন্তা ও এর অলিগলি নিয়ে কোন ধারণাই নাই। তাই আপনা থেকে ভারতরাষ্ট্রের এই আদি ও মৌলিক ত্রুটি কখনও কাটবে না। আসলে সেই ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধীর শেষ আমল থেকেই এটা পরিস্কার হয়ে উঠেছিল, নেহেরুর তৈরি কেন্দ্রের নামে জবাব্দীহিতা হীন একটা কথিত কেন্দ্রের হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রিভুত করে রাখা ভারতরাষ্ট্র এর দিন শেষ হয়েছে। এতে হয়েছে যেটা সারা ভারত শাসন করতে গেলে প্রথম শর্ত হল সারা ভারতে স্থানীয় কমিটি সংগঠন আছে (এটাকে ভারতে সর্বভারতীয় দল বলা হয়) এমন একটা কেন্দ্রীয় দল থাকা। নেহেরু মারা যান ১৯৬৪ সালে, আর ১৯৮৯ সালে এসে রাজীবের হাতের কংগ্রেস বুঝে যায় যে তারা আর সর্বভারতীয় দল নয়। সম্ভবত রাজীব মারা (১৯৯১) যাবার আগেই বুঝে গেছিলেন এই সংকটের কথা। সেজন্যই কী তিনি বিজেপিকে একটা সুযোগ দিতে গেছিলেন? যেটা প্রথমে ১৯৮৯ সালের কাশ্মীরের নির্বাচনে কারচুপি করে কাশ্মীরের ইসলামি রাজনীতিকে ভোটের রাজনীতি থেকে সশস্ত্র পথে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন; পরে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে বিজেপির উত্থানের রাস্তা খুলে গেছিল সেদিকে ঠেলে দিছিলেন? কিন্তু তাতেই মোদির দশবছরের শাসন শেষেও বলা যায় বিজেপিও সর্বভারতীয় দল হতেই পারে নাই। এরই সোজা সাপ্টা মানে হল, এখন এর এক মাত্র  বিকল্প হল কোয়ালিশন সরকার!

মোদির এবারের হারের তাতপর্য- এক. কোয়ালিশন সরকারঃ
রাজীব গান্ধীই ছিলেন শেষ স সরকারের শাসন। যেন সেটা টের পেয়েই বিজেপির জন্য রাস্তা খুলে দিছিলেন তিনি। আর আজ এর পরিণতি হল, মোদির এবারের হারের ভিতর দিয়ে শুধু মোদির এবারেরই নয় আগামিতেও ভার শাসিত হতে থাকবে এক কোয়ালিশন সরকারের মাধ্যমে। মানে বিজেপি বা কংগ্রেসকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের কোয়ালিশন।  এটাই আবার আস্ত আস্তে বিজেপি বা কংগ্রেস দল দুটো আরো ছোট হতে হতে সেগুলো প্রভাব হারিয়ে ভারতের রাজনীতি হয়ে যাবে আঞ্চলিক দলগুলোর দলগুলোর কয়েকটা স্থায়ী জোটের সরকার। এমন কয়েকটা আঞ্চলিক দলের আঞ্চলিক জোটের কথা ভেবেই বলেছিলাম এমন প্রধান তিনটা আঞ্চলিক দলের জোট হবে সম্ভবত। যেমন দক্ষিণ ভারতীয় জোট, উত্তর ভারতীয় জোট আর পুর্ব ভারতীয় জোট ইত্যাদি।

মোদির এবারের হারের তাতপর্য- দুই. দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকারঃ
দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকার – এটাই হয়ে উঠবে বাকি সবকিছুকে ছাপিয়ে প্রধান বৈশিষ্ঠ। এটা এবার থেকেই শুরু হয়ে যাবে। যে৪মন উপরে দেখিয়েছিম কেন খোদ মোদিকে ইতোমধ্যেই হিন্দুত্ববাদ বা রামমন্দির এসব ইস্যু নিয়ে কথা নিজের পেটেই দাফন করে দিতে হবে। কারণ কোয়ালিশন সরকারে শরীকের মন যুগিয়ে চলতেই হবে।
এছাড়া আরো কথা আছে। যেমন ইতোমধ্যেই গতকাল বিকালে ভারতের হিন্দি নিউজ চ্যানেলে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টির কথা শোনা গেছে। এতদিন এই ব্যাপারটা ছিল বড় জোর রাজ্য সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে। মানে শরীক দলকে মন যুগাতে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদ সৃষ্টি করে তাদের আসন দেয়া হয়েছে। কখনও সেটা আবার আরো দু-তিনটা উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেখা গেছে। এবার সেই একই ভাবনা থেকেই সবচের‍্যে বেশী পিছলা শরীক বিহারের নীতিশকে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ অফার করা হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে হায়দ্রাবাদের নাইডু সাহেব কেন বাদ পড়বেন? সেক্ষেত্রে তিনিওও আরেক উপ-প্রধানমন্ত্রীর হকদার হয়ে যেতে পারেন।
অনেকের কাছে ব্যাপারটায় ব্যাপক তামাসার দিক নজরে পড়লেও একটু সিরিয়াস দিকে যাওয়া যাক। এই উপ-প্রধানমন্ত্রী বানানোর যে অভিমুখ এর সোজা মানে হবে সেই কোয়ালিশন সরকার যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এটা মতভেদে ডুবে থাকবে। এককথায়, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেসব ইস্যুতে সে ব্যাপারে একেবারেই অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়ে যাবে।  তাই দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকার এর খাঁড়া অর্থ হল সিদ্ধান্তহীনতার অকেজো সরকার!

মোদির এবারের হারের তাতপর্য- তিন. ‘র’-এর মত প্রতিষ্ঠান দুর্বল ও অকেজো হতে থাকবেঃ
অনেকে ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন অথবা না। সামরিক বা ইল্টেলিজেন্স ধরণের প্রতিষ্ঠান; এগুলোর জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম এমন সরকার হতে হয়।  যেকোন সরকারী প্রতিষ্ঠানকেই কোন না কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে হতে হয়। আবার মন্ত্রণা লয়ের অধীনে চলে যাওয়া মানে দীর্ঘসুত্রিতা; কারণ মন্ত্রণালয় থেকে পরে আবার প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌছানি আর সিদ্ধান্ত ফাইনাল করা এটাই দীর্ঘসুত্রিতা। এজন্য ‘র’-এর মত প্রতিষ্ঠান এটা সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সেটা একই সাথে হ্যা আবার না। আসলে দীর্ঘসুত্রিতা এড়াতে মাঝখানে কোন মন্ত্রী নাই ঠিকই কিন্তু অজিত দোভাল-কে উপদেষ্টা করে রাখা হয়েছে। তাঁর মাধ্যমেই এটা দ্রুত প্রধানমন্ত্রীকে জানানো বা অনুমোদনের ব্যাপারগুলো দ্রুত সেরে নেবার ব্যবস্থা সম্পন্ন। এটাই হল আদর্শ রূপ!

কিন্তু সমস্যা হল যখন কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় থাকে বিশেষত যখন শরীক দলও অনেক প্রভাবশালী বা ওজনদার – মানে কথা না শুনলে সরকার ভেঙ্গে যেতে পারে এমন। সেক্ষেত্রে একই প্রধানমন্ত্রী কিন্তু কোয়ালিশন সরকারের বলে তিনি আগেই প্রতিজ্ঞা করেছেন পার্টনারের কাছে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলেও পার্টনার বা  উপ-প্রধানমন্ত্রীকে না জানিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না।

এখন ধরা যাক, একটা আন্তরাষ্ট্রীয় অপহরণ ও গুমের কেস। অন্যদেশ থেকে এনে ভারতের কোন রাজ্যের সড়কে তাকে ফেলে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পরে ঐ শহরের এসপি গিয়ে সেটা উদ্ধার দেখানো হবে। এখন এতে র-কে জড়িত হতে হলে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন স্বাক্ষর লাগবে – অফিস বা বিজনেস অর্ডারে মনে করেন এভাবেই নির্দেশিকায় লেখা আছে। এখন সেই ফাইল প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পড়ে আছে কিন্তু কোয়ালিশন প্রধানমন্ত্রী কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নাই। কেন?
কারণ, গতবার এমনই এক সিদ্ধান্তগ্রহণের বেলায় এক উপ-প্রধানমন্ত্রীকে রাজী করানো হয়েছিল এভাবে যে তিনিও একটা বিজনেস ডিলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন চান। প্রধানমন্ত্রী সেটা দিতে রাজি হলেই তবেই তিনিও আগের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তিতে নানান প্যাচে আর ঝামেলায় পড়ে প্রধানমন্ত্রী নিজ প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেন নাই। কাজেই এখন র-এক্ষেত্রে এক-দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করলেও প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে অনুমোদন দিবার অবস্থায় নাই!

এতে ফলাফল কী হবে?
‘র’-এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল ও অকেজো হতে থাকবে। একদিক দিয়ে এটা ভাল হয়ত। যে র যেভাবে বেপরোয়া কানাডা-আমেরিকার মত দেশে গিয়ে গুম-খুন করে আসছে বীরদর্পে – সেগুলো ভারতে কোয়ালিশন ধরণের সরকারের কারনে সিদ্ধান্তহীনতায় দুর্বল ও অকেজো হতে থাকবে; এমন ততপরতা কমে আসবে।  অবশ্য অনেকে বলেন, এনিয়ে এক লেখা বইয়ে ভারতের অশোক রায়না এমনই ধারণা পোষণ করেছেন। 
কিন্তু সাধারণভাবে যে কোন রাষ্ট্রস্বার্থ এমন হয় যেটা এমন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করতেই হয় যেমন অন্যদেশের জাশুশি-গোয়েন্দাগিরি ঠেকানো। সেক্ষেত্রে ঐ রাষ্ট্রের কোয়ালিশন সরকার রাষ্ট্র-কাঠামো ও এর ততপরতাকেই স্থবির করে দিতে পারে।

এককথায় বললে, সিদ্ধান্তহীনতা যে কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্বরক্ষার বা নরমাল ফাংশনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা। আর নিয়মিত কোয়ালিশন সরকার মানেই সিদ্ধান্তহীনতা।
এজন্যই বলেছিলেম এভাবে চললে ভারত রাষ্ট্র এভাবে ক্রমশ স্থবির হতে থাকবে সম্ভবত তিনটা আঞ্চলিক রাজ্য জোটে বিভক্ত হয়েও টিকতে না পেরে।

মোদির এবারের হারের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বড় তাতপর্য এটাই!

আর সবশেষে বলাই বাহুল্য, ভারতে যতই দুর্বল আর কোয়ালিশন সরকার গঠিত হবে ততই সেই সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে বাংলাদেশের উপর তার অযাচিত সব হস্তক্ষেপ, সব প্রভাব ও আধিপত্য ঘটানোর ক্ষেত্রে !! নিজ মাথার ঘাঁয়ে পাগল এমন সরকার বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সময় দিতে চাইবে না। এমনকি ভারতের কোটারি সমর্থন স্বার্থের ও সহায়তার উপরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের যেকোন সরকারো দুর্বল হয়ে পড়বে!

 

 

 

 

 

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

[এই লেখা কোন নিউজ নয়, ব্যক্তির নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্লেষণ মাত্র। ফলে পাঠকের এ’লেখা পড়ে কিছুই বহন করা বা মান্য করার বাধ্যবাধকতা নাই। কেবল জানলেন যে এমন একটা মতামত আছে!]

আপডেটঃ      ২০২৪  রাত
শেষ আপডেটঃ   জুন মে ২০২৪, সকাল 

Leave a comment