আমেরিকা কেমন চীন চেয়েছিল, আর পরিণতি


আমেরিকা কেমন চীন চেয়েছিল, আর পরিণতি

গৌতম দাস

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০৬ সোমবার

https://wp.me/p1sCvy-3mw

Is American Century OVER? চীন নিয়ে আমেরিকার স্বপ্নের পরিণতি – ছবি : সংগৃহীত

জো বাইডেন আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন দিন দশেক আগে। তাঁর ক্যাবিনেটসহ অন্য যেসব স্টাফ নিয়োগ দিয়ে তিনি প্রশাসন গড়তে চান তাদের নিয়োগের পক্ষে আলাদা আলাদা সিনেট অনুমোদন লাভের কাজও এখন শেষের পথে। কিন্তু ইতোমধ্যেই খারাপ উদাহরণ দিয়ে বাইডেন নিজের কাজ শুরু করছেন। কথিত ‘তাইওয়ান হুমকি’ আর বিপরীতে ‘তাইওয়ান রক্ষা’ – এই অজুহাতের আলোকে চীন বোমারু বিমানের আনাগোনার বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধবিমানবাহী জাহাজ পাঠিয়ে মহড়া – এগুলো এখন সাউথ চায়না সি’তে খামোখা উত্তেজনা তৈরির উপাদান। অথচ বাইডেন ভাল করেই জানেন এবং আমাদেরকে জানিয়েছেন, যুদ্ধ তাঁর পথ নয়।
অবস্থাটাকে বলা যায়, ক্ষমতা ছাড়ার আগে ট্রাম্প-পম্পেও যুদ্ধের উসকানি তুলে এর মধ্যে বাইডেনকে ফেলে দিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন তিনি মাতেন কি না। এখন তারা দেখছে আমরা সব ভুলে বাইডেন মেতে উঠেছেন। আমরা দেখছি, এতে অনুভূতি-বুদ্ধিসুদ্ধি হারিয়ে নির্বিকার হয়ে যাওয়া- ইংরেজিতে যাকে ‘ক্যালাস’ [callous] বলে, সেভাবেই বাইডেন ক্যালাস হওয়াই পছন্দ করেছেন আর খামোখা উত্তেজনা ছড়ানো তার কাজ বলে মেনে নিয়েছেন।

পম্পেও-এর চুনা লাগানোঃ
চুনা লাগানো কথাটা হিন্দিফিল্মের চালু এক ডায়লগ। মানে কাউকে কড়া মেক আপ লাগিয়ে সাজিয়ে ক্যামেরার সামনে ইচ্ছামত নাচানো বা হাজির করা। অনেকটা যেন সেরকম,  যে কাজটা করে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও ক্ষমতা ছাড়ার দশদিন আগে, বাইডেনকে “তাইওয়ান রক্ষার নামে” খামোখা উত্তেজনা ছড়ানোর কাজে নামাতে পেরেছেন সেটা হল, চীনের ‘একচীন’ নীতি। কোন রাষ্ট্র চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক করতে চাইলে একটা পূর্বশর্ত মোতাবেক চুক্তিতে চীন প্রতিশ্রুতি আদায় করিয়ে নেয় যে, ‘একচীন নীতি’ মেনে চলতে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এই ‘একচীন নীতি’ কী, কোথা থেকে এলো আর চীনই বা এটা নিয়ে এত সিরিয়াস কেন?

ঘটনার শুরু অনেক পেছন থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিণতিতে আমেরিকা নতুন এক গ্লোবাল সিস্টেম খাড়া করতে সক্ষম হয়েছিল, আমেরিকা নিজের নেতৃত্বে। বলা ভাল যে, এর আগে বিশ্বব্যাপী কোনো পণ্য-পুঁজির লেনদেন-বিনিময়, বাণিজ্য করার মত কোনো  অর্গানাইজ সিস্টেম-ব্যবস্থা ছিল না। তবে খুবই সীমিত পর্যায়ে বিনিময় চালানোর উপযোগী আর ঠুনকো একটা ব্যবস্থা ছিল যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতেই টিকতে না পেরে তছনছ গায়েব হয়ে যায়। আসলে, সেকাল ছিল কলোনি অর্থনীতির যুগ। ফলে বিনিময় বাণিজ্য লেনদেন তেমন বিকশিত ছিল না, ব্যাপক বিকশিত হওয়ারও সুযোগ ছিল না, চাহিদাও তেমন তৈরি হয়নি। মূল বিনিময়টা হত মূলত কলোনি “মাস্টার আর স্লেভ” মানে “প্রভু ও দাস’ দেশের মধ্যে। দখলদার আর কলোনি হয়ে যাওয়া এমন দুদেশের মধ্যে। আর বলাই বাহুল্য তা একপক্ষীয় ভাবে দখলদার দেশের অনুকুলে ও শর্তে।

সে কালের দুনিয়া মানে, পাঁচ কলোনি মালিক রাষ্ট্র : মূলত ব্রিটেন ও ফ্রান্স আর এদের সাথে ছোট তরফের স্পেন, পর্তুগাল ও নেদারল্যান্ডস। সব মিলিয়ে এদের হাতেই সারা দুনিয়ার সব ভূখণ্ড ভাগ-দখল হয়ে থাকা যার মধ্যে স্পানিশ, পর্তুগিজ এদের কলোনি দখল কেবল ল্যাটিন আমেরিকা ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ,  ইস্ট এশিয়ায় নেদারল্যান্ডসের ডাচেরা ক্ষয়িষ্ণু আর বাকি বড় দুনিয়া ব্রিটেন ও ফ্রান্সের ভাগ দখলে, যেখানে আবার বেশির ভাগই ব্রিটেনের। বিপরীতে, আমেরিকা ব্যতিক্রম। অন্যের দেশকে কলোনি দখলের পরিবর্তে নিজেদেরই ব্রিটিশের কলোনি আরেক আমেরিকান কলোনি হয়ে থাকার খারাপ স্মৃতি ছিল তাদের। তাই ১৭৭৬ সালে আমেরিকান স্বাধীনতার যুদ্ধে সেসব থেকে মুক্ত হওয়ার পরে তাদেরই পঞ্চাশ রাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত এক ফেডারল আমেরিকায়, ভিতরের কোন এক রাজ্য যেন অন্যকে কলোনি বা আধিপত্যের সম্পর্কে জড়ানোর সুযোগ না নিতে পারে সবসময় এ নিয়েই তারা তটস্থ থাকত। কেন্দ্রীয় বা ফেডারল আইন নামে কোনকিছু যেন রাজ্যগুলোর প্রত্যেকের আলাদা আগাম সম্মতি না নিয়ে উপর চেপে বসতে না পারে, এই ব্যবস্থাই সেই সময় চালু ছিল। এরপর ধীরে ধীরে রাজ্যগুলো পারস্পরিক আস্থা অর্জন করলে পরে, সেটাই আজকের আমেরিকা এভাবে থিতু হয়েছিল। যে কারণে ১৯১৩ সালের আগে মার্কিন রাজ্যগুলো একটা কমন কারেন্সির অধীনে সবাই আসে নাই। বরং প্রতিটা রাজ্যে যতগুলা স্থানীয় প্রাইভেট ব্যাঙ্ক ততগুলো ধরণের আলাদা নোট শহরে চালু থাকত। এক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠানের অধীনে সব রাজ্যের থাকা সেটা ছিল অনেক দুরের ব্যাপার ছিল তখন, এভাবে আসেনি বা ছিল না। ১৯১৩ সালেই প্রথম মার্কিন রাজ্যগুলো সকলে একটা কমন কারেন্সিতে এক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধীনে আসে।

আবার এরই ভেতরে আমেরিকা তার অর্থনীতি ও সঞ্চিত সম্পদের দিক থেকে  ব্রিটেনকে মানে কলোনিদখলদারদের শিরোমনিকেও ছাড়িয়ে সবার উপরে উঠে গিয়েছিল। অথচ অন্য দখলদারদের মত কারো কলোনি দখল না করেই এটা ছিল আমেরিকার সবচেয়ে  বড় এক অর্জন। আর এমন আবির্ভাবের পেছনে মূল যে জিনিস কাজ করেছিল তা হল, উনিশ শতকের শেষে ১৮৮২ সালের (‘স্ট্রাটফর’ Stratfor -এর রবার্ট কাপলানের মতে) আশপাশের সময় থেকে অর্থনীতি ও সঞ্চিত উদ্বৃত্ত সম্পদ বা সারপ্লাসে [surplus] আমেরিকার উত্থান ঘটেছিল। সেই থেকে পরে বিশ শতকের পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধ – এর শেষে ১৯৪৫ আমেরিকা যেটা কায়েম করেছিল তা হল, একটা নতুন গ্লোবাল (নিয়ম শৃঙ্খলা) অর্ডার চালু করা। যার ফলাফল হল ১৯৪৫ সাল থেকে গুছিয়ে বসা বহুরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত  – রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতিসঙ্ঘ, গ্লোবাল অর্থনীতি-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেমের প্রতিষ্ঠান আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি।

যারা সেকালের উত্থিত্ নয়া ট্রেন্ড, এসব ঘটনা নিয়ে আরেকটু ধারণা পেতে চান তারা ১৯৪১ সালে প্রকাশিত একটু বিস্তারিত এক আর্টিকেল পাঠ করতে পারেন। সে কালের বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের মালিক-সম্পাদক হেনরি লুসের [Henry Robinson Luce (April 3, 1898 – February 28, 1967)] এক আর্টিকেল ‘দ্য আমেরিকান সেঞ্চুরি’ প্রকাশিত হয়েছিল যা ছাপা হয়েছিল টাইমেরই নতুন এক সহযোগী প্রতিষ্ঠান, সাপ্তাহিক ‘লাইফ’ ম্যাগাজিনের  ১৯৪১ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

ইন্টারন্যাশনালিস্ট বনাম আইসোলেশনিস্টঃ

আমেরিকান ইতিহাসে এটা Internationalists বনাম Isolationists ডিবেট নামে পরিচিত। এই তর্কের তুঙ্গ কাল হল ১৯২১-৪১ এই সময় জুড়ে।  তবে ১৮৮২ সালের পর থেকেই আমেরিকান সমাজে অভ্যন্তরীণ এই মহাবিতর্ক ছিল – ইন্টারন্যাশনালিস্ট বনাম আইসোলেশনিস্ট নামে; বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৮) আগে-পরে, এর প্রথম ঝাপটা উঠেছিল। এর আগে বলেছি, আমেরিকার অর্থনৈতিক উত্থানের মূল বৈশিষ্ট্য হল, সে কোন কলোনিয়াল শক্তি নয়। তাই সে সাবেক কোনো সম্রাটের সাম্রাজ্য নয়। আর সুপার-পাওয়ার শব্দটার ব্যবহার শুরু সম্ভবত তখন থেকেই; যা এমপায়ার (সাম্রাজ্য) শব্দের বিপরীত হিসাবে আমেরিকায় ব্যবহার শুরু হয়েছিল। অর্থাৎ তারা বলতে চাইতেন, যারা কলোনি দখলদার এদের সাধারণ ফিচার হল, তারা কোন না কোন সাম্রাজ্য-দেশ আর যাদের অর্থনীতি হল অন্যের দেশ দখলদারি বা কলোনি দখল নির্ভর। কারণ কলোনি দখলদার পাঁচ ইউরোপীয় রাষ্ট্রই ছিল সম্রাটের সাম্রাজ্য থেকে উঠে আসা দেশ। আর এমন রাজতন্ত্রের বিপরীতে আমেরিকা আগে থেকেই এক রিপাবলিক, পাবলিক স্বীকৃত গণক্ষমতা এর ক্ষমতার উৎস এমন রাষ্ট্র। তাই এটা নন-কলোনিয়াল (কাউকে কলোনি করেনি), নন-ইম্পেরিয়াল (রাজতন্ত্রী নয়) কিন্তু সুপারপাওয়ার রাষ্ট্র। তাই সেই আমেরিকাতেই ১৮৮২ সালের কাছাকাছি সময় থেকেই অভ্যন্তরীণ তর্ক ভারী হয়ে উঠতে থাকে যে, আমেরিকার কি অন্যান্য কলোনি মালিক দেশের (তখন সারা দুনিয়াই ইউরোপের পাঁচ কলোনি দখলদার রাষ্ট্রের মধ্যে ভাগ করে নেয়া) সাথে বাণিজ্য সম্পর্কের গভীরে জড়ানো উচিত কি না। তর্কটা এভাবে উঠার পেছনে মূল কারণ,  কলোনিদখলদারদের সাথে তাঁদের যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার ভয়। যারা উচিত মনে করতেন এদেরকেই বলা হতো ইন্টারন্যাশনালিস্ট। আর যারা অনুচিত মনে করতেন তারা আইসোলেশনিস্ট বা বিচ্ছিন্নরাষ্ট্র-থাকাবাদী।

এটা কোনো এথিক্যাল তর্ক ছিল না, মানে নৈতিকভাবে উচিত-অনুচিতের তর্ক নয়। তাহলে?
ইউরোপীয় সাম্রাজ্য-রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়লে প্রায়ই স্থানীয় প্রাইভেটব্যাংক থেকে ধার করত। কিন্তু কোনো সঙ্কট দীর্ঘস্থায়ী হওয়াতে (বিশেষত কোন যুদ্ধের কারণে) এর কারণে তা থেকে প্রথমে স্থানীয় ব্যাংককে ধার শোধ না করার ঘটনার শুরুতে জটিল সব সম্পর্ক-সমীকরণ তৈরি করত। ফলে তা একসময় ক্রমশ পুরা অর্থনীতির জন্য তা সঙ্কট হিসেবে হাজির হত। শুরুর দিকে অনেক সময় ব্যাংকগুলোকে সোনা রিজার্ভে রাখা ছাড়াই রাষ্ট্রের নেয়া-ঋণের সমপরিমাণ টাকা ছাপানোর অনুমতি দিয়ে, রাষ্ট্র ব্যাংকগুলোকে  ম্যানেজ করার চেষ্টা করত। কিন্তু এসব সঙ্কট সেবার একেবারেই মারাত্মক হয়ে উঠে জার্মানির উত্থানে। কারণ সেও কলোনি দখলের প্রতিযোগিতায় নামতে চায়। কিন্তু এখানে এসে এবার এমন সঙ্কট তীব্র হলে ইউরোপীয় সাম্রাজ্য-রাষ্ট্রগুলো ইউরোপের বাইরের (বিদেশি) আমেরিকান ব্যাংক থেকে ধার পেতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। আর এ থেকেই আমেরিকার অভ্যন্তরীণ তর্কও সে সময় তুঙ্গে উঠেছিল।
আইসোলেশনিস্টরা বলতে চাইতেন, জার্মানির উত্থানের ফলে সারা ইউরোপে যুদ্ধ আসন্ন হয়ে গেছে। তাই এসময়ে আমেরিকার কোন ব্যাংক বা ব্যবসায়ী ইউরোপের বিবদমান কোনো একটা পক্ষকে ঋণ দেয়া বা বাকিতে ব্যবসা করা মানে ঐ দেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের ক্রমশ শত্রু হয়ে পড়া, তা থেকেই ওদের যুদ্ধে আমেরিকাকে জড়িয়ে ফেলা হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যখন এত দিন ইউরোপে রাষ্ট্রগুলোর কলোনি দখলের ঝগড়া-মারামারিটা হত ইউরোপের বাইরের সেই মহাদেশেই। মানে, যাকে এরা দখল করতে চায়, সেই মহাদেশের ভূমিতে। কিন্তু জার্মানির উত্থানের বেলায় প্রথম তা ইউরোপেই ঘরের ভেতরের যুদ্ধ হিসেবে হাজির হয়েছিল, আর এটাই তো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-৮)। বিপরীতে ইন্টারন্যাশনালিস্টরা যুক্তি তুলতেন, আরে এটাই তো বরং ইউরোপের বাজারে ঢুকার ভাল সময় বলে। এসব তর্কাতর্কিতে একপর্যায়ে ইন্টারন্যাশনালিস্টদেরকে “মৃত্যুর সওদাগর” (যুদ্ধ মানে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়া এই সুত্রে) বলে দাগ লাগিয়ে হেয় করার বয়ান হাজির হয়েছিল।

হেনরি লুস একজন ইন্টারন্যাশনালিস্টঃ
টাইম ম্যাগাজিনের হেনরি ছিলেন এমনই এক ইন্টারন্যাশনালিস্ট, রিপাবলিকান। তবে সাবধান ইন্টারন্যাশনালিস্ট যারা হতেন তারা বাই-পার্টিজান মানে, মানে রিপাবলিকান বা ডেমোক্রাট দুদল থেকেই হতে দেখা যেত। যেন এত বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট তিনি ডেমোক্রাট ছিলেন। যাই হোক, তবে  সেসময়ে ইন্টারন্যাশনালিস্ট এদেরই এক লম্বা ও শক্ত পরিকল্পনা ছিল যে, আমেরিকান অর্থনীতিতে যে উদ্বৃত্ত সম্পদ জড়ো হওয়া শুরু হয়েছে আর এর যে ট্রেন্ড, তাতে দুনিয়াকে কলোনি দখলের কবল থেকে বের না করতে পারলে, কলোনি শাসনের অবসান না ঘটাতে পারলে, পরে কলোনিমুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম না হলে আমেরিকা দুনিয়ার কোথাও বিনিয়োগের জায়গা পাবে না, খাতক রাষ্ট্র পাবে না যার সাথে সে বিনিয়োগ, বাণিজ্য সম্পর্কে যুক্ত হতে পারে। কল্পিত এমন যেই দুনিয়ার নেতা হতে পারবে আমেরিকা! এই কথাটাই গুছিয়ে তুলে ধরেছিলেন হেনরি তাঁর ‘দ্য আমেরিকান সেঞ্চুরি’ নামের ওই দীর্ঘ প্রবন্ধে। বলতে চেয়েছিলেন, এতে সফল হতে পারলেই দুনিয়াতে পরবর্তী শত বছরের নেতা থাকতে পারবে আমেরিকা। তাই প্রবন্ধের নাম ছিল ‘দ্য আমেরিকান সেঞ্চুরি’। আসলে আমেরিকান সমাজের বিতর্ক আলোচনাগুলোকেই তিনি তুলে ধরে এনেছিলেন।

মোটাদাগে বললে পরে বাস্তবে, এসব বক্তব্যের ভিত্তিতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এগিয়েছিলেন। আর তাতে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট আর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের মধ্যে ‘আটলান্টিক চার্টার’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যেটা মূলত “কলোনি করা নিষিদ্ধ” বা যুদ্ধে হিটলার পরাজিত হলে চার্চিল কলোনিগিরি ছেড়ে দিবেন এরই প্রতিশ্রুতির চুক্তি। হেনরির প্রবন্ধটা প্রকাশিত হয়েছিল ফেব্রুয়ারি ১৯৪১-এ, আর ওই ‘আটলান্টিক চার্টার’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৪ আগস্ট ১৯৪১, অর্থাৎ ছয় মাস পরে।

আর ঐ বছরেরই শেষে ১ জানুয়ারি ১৯৪২ সালে, আটলান্টিক চার্টার এই ড্রাফটটাতেই কিন্তু এবার আগের দু’জনসহ সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্টালিন ও চীনের এক প্রতিনিধি স্বাক্ষর দিয়েছিলেন। আর এটাকেই জাতিসঙ্ঘের জন্ম ঘোষণা মনে করা হয়। এছাড়া পরের দিন থেকে অন্যান্য দেশও এতে স্বাক্ষরদানের জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছিল।

ভেটো সদস্যপদের ধারণা কেন ও কোথা থেকে এলোঃ
কিন্তু ভেটো ক্ষমতার [Veto Power] সদস্যদের বিশেষ ভেটো অধিকারের ভিত্তিতে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল গড়া, এটা কেন? ১৯৪২ সালের জানুয়ারি থেকেই বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার সরাসরি যোগ দেওয়াতে যুদ্ধ পুরাদমে শুরু হয়েছিল। আর প্রায়শই রুজভেল্টের পাশে পাশে তখন থেকে আরও দুজন নেতাকে দেখা যেত – স্টালিন ও চার্চিল। মূলত জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে রুজভেল্টের প্রাইমারি আইডিয়াটার পক্ষে স্টালিনকে রাজি করাতে চাইতে গেলে তিনি আপত্তি করেন। সেটা হল এরকম যে,, জাতিসঙ্ঘ নামক এই প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিয়ম যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভিত্তিতে চালু হয় তাহলে এটা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কখনও সোভিয়েত ইউনিয়নেরই রাষ্ট্রস্বার্থের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসতে পারে। তখন কী হবে? তখন এরই সমাধান দিতে গিয়ে আর স্তালিনকে আস্থায় নিতে চেয়ে রুজভেল্ট এর সমাধান দেন এভাবে যে, প্রথমে তারা একমত হোক দুনিয়ায় পরাশক্তি বা হবু পরাশক্তি কারা, আছে বা হতে যাচ্ছে। এরপর ঐ পরাশক্তিগুলোর যেকোন এক সদস্য যদি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভায় কোনো ইস্যুতে আপত্তি করে তবে জাতিসঙ্ঘের কোনো সিদ্ধান্তই আর গৃহীত হতে পারবে না- এমন সিস্টেম করা হবে, এটাই ভেটো দেয়া। অর্থাৎ রুজভেল্ট ভেটো আইডিয়া দিয়ে স্টালিনের উৎকণ্ঠার সমাধান টানেন। আর এভাবেই তিনি স্টালিনকে নিজের জাতিসঙ্ঘ আইডিয়ার নৌকায় তোলেন।

কিন্তু ভেটো সদস্যধারী ওই পাঁচজন কারা ও কেন সাব্যস্ত হয়েছিল? স্টালিনের সোভিয়েত ও রুজভেল্টের আমেরিকা তো ভেটো সদস্য হবেই, জানা কথা ধরতে পারি। আর ব্রিটেন, ফ্রান্স- এরা দুনিয়ায় কলোনিদখল অবসানকে লক্ষ করে বিরাট মিত্র। এবং এরা আটলান্টিক চার্টার চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গেলেও তখনো পরাশক্তি; কাজেই তারা এতে অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়। এছাড়া তাদেরকে ভেতরে সদস্য করে না নিলে তারা বাইরে গিয়ে বিরোধিতা শুরু করলে হিটলারের জার্মানবিরোধী করে মিত্রপক্ষশক্তির জোট গড়াই হতো না, এই বাস্তবতাও ছিল। কিন্তু তাহলে পঞ্চম ভেটো সদস্য হিসেবে চীনকে নেয়া হয় কী যুক্তিতে? চীন তো তখন অর্থনীতি বা সামরিক অর্থে তেমন কোনো শক্তিই ছিল না। তাহলে?

আসলে সে সময়ে রুজভেল্টের মিত্রশক্তির বিপরীতে জার্মানির হিটলারের পক্ষে ছিল দুই প্রমিনেন্ট রাষ্ট্র ইতালির মুসোলিনি আর  সামরিক নেতা মার্শাল তোজোর জাপান, যার দুই-ই ছিল কলোনি দখলদার রাষ্ট্র। জাপান ছিল পুরা কোরিয়া (তখনও দুই কোরিয়া হয় নাই) আর চীনের আংশিক দখলদার। অর্থাৎ  ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে ভেটো সদস্যপদ দিয়ে ইউরোপকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও রুজভেল্ট এশিয়ারই একমাত্র কলোনি দখলদার জাপানকে শায়েস্তা করতেই এর কাউন্টার ওয়েট হিসেবে চীনকে খাড়া করতে চেয়েছিলেন; তাতে চীন আন্ডার ডেভেলপড্ হলেও, পরে গড়ে নেবেন এই আশায়। আসলে সোভিয়েত আর ব্রিটেন ও ফ্রান্স এরা সবাই নিজ নিজ ভেটো সদস্যপদ বুঝে পাওয়ার পর আর চীনের বেলায় তত সিরিয়াস ছিল না। ফলে আপত্তি না করে রুজভেল্টের বাছবিচারের প্রতি সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ শেষে এই চীন হল জাপান দখলমুক্ত।  ওদিকে সারা চীনের জাতীয়তাবাদী নেতা চেয়াংই কাইসেক আর তাকে কেন্দ্র করেই আমেরিকার গড়ে তুলেছিলেন নিজ চীনা-স্বপ্ন, ভেটোসদস্য পদধারী চীন।।

কিন্তু অচিরেই আমেরিকার স্বপ্ন ভেঙে যায় বা ভেঙে দেন মাও সেতুং। পরের চার বছরের মধ্যেই তিনি ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লব কায়েম করে ক্ষমতায় বসেন। তবে একটা খুঁত থেকে যায়। চীনের বিশাল ভূখণ্ডের তুলনায় তাইওয়ান একটা ছোট্ট ভূমি মাত্র। তবে এরপরেও আলাদা দ্বীপ বলে এর কিছু স্ট্রাটেজিক গুরুত্ব আলাদা। মাওয়ের বিপ্লবে তাইওয়ান তিনি দখল করেননি, আর ওই দ্বীপেই কাইশেক পালিয়ে আশ্রয় নিয়ে বসেন।

এদিকে ১৯৪৯ সাল মানে হল, বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে; ততদিনে রুজভেল্টের স্বাভাবিক মৃত্যু (এপ্রিল ১৯৪৫) হয়ে গেছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রু ম্যান নিয়ম অনুসারে সাথে সাথেই প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। এদিকে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের দুই সমর্থক- সাগরেদ মূল নেতা সোভিয়েত ও ব্রিটেন এদের জন্য সেকালে এটা দেখানো খুবই জরুরি ছিল যে, ওই বিশ্বযুদ্ধ জয়ে ও জাতিসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠায় দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মানে জাতিসঙ্ঘের জন্ম হয়ে যাওয়াতে যেকোন দু’রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধ দেখা দিলে যুদ্ধ না করেই কথা বলে শান্তি ও মীমাংসা এখন সম্ভব এবং তা সহজ। সেই ফ্যারে পড়ে অতএব, আমেরিকা ও সোভিয়েত পরামর্শ ও চাপে চীনের মাও তখনকার মত আর তাইওয়ান দখল স্থগিত রাখেন। তবে জাতিসঙ্ঘ বা শান্তি, এসব কথার আড়ালে আমেরিকা ও সোভিয়েতের অন্য স্বার্থ ছিল অবশ্যই।  যেকথা এখনও চীনা নেতৃত্ব অভিযোগ তুলে বলে থাকে। চীনের ব্যাখ্যা হল,  আমেরিকা চেয়েছিল তাইওয়ানকে বাঁচিয়ে রাখতে যাতে তার “চীনা-স্বপ্ন” এর সম্ভাবনা কিছুটা হলেও জেগে থাকে। মাওয়ের নয়াচীন নয়, তাইওয়ানকেই সে আসল চীনের প্রতিনিধি বানিয়ে চীনের জন্য বরাদ্দ করা আগের ভেটোক্ষমতাটা আমেরিকা তাইওয়ানের হাতে রেখে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিল। সম্ভবত মাওয়ের ব্যাপারটা বুঝতে দেরি হয়ে যায়। এছাড়া ওদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়নও চায়নি আরেক কমিউনিস্ট প্রতিদ্বন্দ্বী ভেটোক্ষমতা পেয়ে যাক! এমনটাই চীনের ব্যাখ্যা।

কিন্তু সেকালে এথেকে মাও সিদ্ধান্ত নেন, যে কোনো রাষ্ট্র নয়াচীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক করতে গেলে ‘একচীন’ নীতি মানতে হবে। মানে চীন মেনে নেয় নাই যে তাইওয়ান চীনা-রাষ্ট্রের অংশ নয়। আসলে কাইশেক “তাইওয়ান মুক্ত” করার জন্য কখনও লড়েছেন ব্যাপারটা তো তা নয়। তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র করতে হবে এটাও কখনও তার দাবি অথবা লড়াই ছিল না। সোজাকথা তাইওয়ান কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বা সশস্ত্র লড়াইয়ের ফসল তা একেবারেই নয়। 

এদিকে, আমেরিকা মাত্র এই ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ‘একচীন’ নীতি মেনে প্রথম কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করেছিল। কারণ, মাও তখন ইতোমধ্যেই (১৯৫৮ সালে) সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে এক ধরণের ‘ক্যাপিটালিজম’ তিনি কায়েম করতে চান,(এটাই আজকের চীন)। তাতে চীনে ব্যাপক বিনিয়োগ আর পণ্য নিয়ে ব্যাপক বাজারের সুযোগ যদি আমেরিকা নিতে চায় তবে আগের তাইওয়ানকে দেয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক ও স্বীকৃতি প্রত্যাহার করতে হবে। এর বদলে চীনকেই ভেটো সদস্যদের হকদার ও আসল চীনের প্রতিনিধি মেনে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও স্বীকৃতি দিতে হবে। বাংলাদেশকে বিক্রি করেই এসব ঘটেছিল। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে চীন ভেটো সদস্যপদ পায় আর তাইওয়ান জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃতি হারায়। আমেরিকা তখন থেকে (আজও)  তাইওয়ানকে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নিয়ে আছে। এছাড়া সে সময় আমেরিকা  অভ্যন্তরীণভাবে নিজ কূটনীতিকদের করণীয় কী এর গাইডলাইন হিসেবে এক সার্কুলার জারি করেছিল যাতে ‘একচীন’ নীতি ভঙ্গ না করতে করণীয় লেখা ছিল। সেটাই এখন একালের ঘটনা এবং এই লেখার শুরুর ইস্যু।
এবার পম্পেও ট্রাম্পের ক্ষমতা ছাড়ার আগে সেই সার্কুলারটা প্রত্যাহারের ঘোষণা করে দিয়ে যান। ফলে বাস্তবত অভ্যন্তরীণভাবে কূটনীতিকরা এখন কোনো বাধ্যবাধকতায় নাই, যদিও চীনের সাথে সম্পর্কের বেলায় চীন-আমেরিকা সম্পর্ক চুক্তি বহাল আছে। মানে আমেরিকা একচীন মানে এই প্রতিশ্রুতি বহালই আছে।  সারকথায় আমেরিকার রাষ্ট্রের ভিতরে-বাইরে দুইকথা হয়ে গেছে।  ওদিকে বাইডেনের সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেটা হল, “পাছে লোকে কিছু বলে”। ট্রাম্পের দেশপ্রেমিক জাতিবাদের তুলনায় তিনি খাটো – পাবলিক যদি এমন মনে করে!
বাইডেন খুবই আয়েশে পম্পেও এর প্রত্যাহার আদেশটাকেই তিনি বাতিল ঘোষণা করতে পারতেন। কিন্তু এই সহজ কাজটা তিনি করেননি। সম্ভবত ইমেজের ভয়ে যে এতে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে কম দেশপ্রেমিক হয়ে যান কি না! বাইডেন এখানেই থামেন নাই।
বরং উল্টা তিনিও ট্রাম্পের মতোই নিজেকে দেশপ্রেমিক দেখাতে চেয়েই যেন আরেক ক্যালাস কয়াজ করে বসেন। আমেরিকায় তাইওয়ানের ট্রেড কমিশনারকে (অর্থাৎ কূটনীতিক বা রাজনৈতিক প্রতিনিধি নয়, ট্রেড প্রতিনিধি যেটা চীন অনুমোদন করে, এবং চীনেও তাইওয়ানিজ ট্রেড প্রতিনিধি আছেন) বাইডেন নিজ শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত করে বসেন। ট্রেড কমিশনার তাতে উপস্থিতও হন। যেখানে বাইডেনের উচিত ছিল সরকারিভাবে জানান দেয়া যে, তিনি একচীন নীতি মেনেই চলবেন সেখানে তিনি উলটা তাইওয়ানকে দাওয়াত করে বসেন। অনেকে বলতে পারেন, বাইডেনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়োগ সিনেটে অনুমোদন পেয়েছে মাত্র গত পরশু। তাই হয়ত তিনি অপেক্ষা করছিলেন। না এই অজুহাত গ্রহণযোগ্য না। কারণ, সেক্ষেত্রে তিনি ইনফরম্যাল কিন্তু বিশ্বস্ত চ্যানেলে চীনকে মেসেজ পৌঁছাতে পারতেন। যেটা একালে খুবই প্রচলিত এক কূটনীতিতে খুবই প্রচলিত এক যোগাযোগে উপায়।
এদিকে এরই ফলাফলে কথিত ‘তাইওয়ান হুমকি’ আর বিপরীতে ‘তাইওয়ান রক্ষা’ – এই অজুহাতের আলোকে চীন বোমারু বিমানের আনাগোনার বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধবিমানবাহী জাহাজ পাঠিয়ে মহড়া – এগুলো এখন সাউথ চায়না সি’তে খামোখা উত্তেজনা তৈরির উপাদান। যুদ্ধের ইঙ্গিত ছড়িয়ে খেলাধুলা করা খুবই দায়ীত্বজ্ঞানহীন কাজ!

কাজেই এগুলো চুলকিয়ে ঘা করা অদূরদর্শী আচরণ ছাড়া অন্যকিছু ভাবার সুযোগ দেখা যাচ্ছে না। তবে কি বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে কড়া সঙ্ঘাতপূর্ণ সম্পর্ক করতে চাইছেন? না, এরও কোনো আলামত তিনি বা হবু ক্যাবিনেটের কেউ দেননি। মানে যা আপনি করতেই চান না, সেটার ইঙ্গিত বাতি জ্বালাচ্ছেন কেবল! অর্থাৎ কেবল বিভ্রান্তি আর বিভ্রান্তি বাড়ানোই যেন বাইডেনের উদ্দেশ্য! ফলে স্বভাবতই এটা খুবই খারাপভাবে শুরু, সন্দেহ নেই!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

[এই লেখাটা  গত ৩০ জানুয়ারি ২০২১, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার ওয়েবে ও  পরদিন প্রিন্টেও চীন নিয়ে আমেরিকার স্বপ্নের পরিণতি” – এই শিরোনামে  ছাপা হয়েছিল।  পরবর্তিতে ঐ লেখাটাকে এখানে আরও নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]

One thought on “আমেরিকা কেমন চীন চেয়েছিল, আর পরিণতি

Leave a comment