আফগানিস্তান ও জনপ্রতিনিধিত্বঃ
রাজা না জনপ্রতিনিধি? কী হতে চান?
গৌতম দাস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০৬ সোমবার
গত সপ্তাহের শুক্রবার জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে নয়া আফগান শাসক তা=লে=বা=নদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এক প্রস্তাব পাস হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘আফগানিস্তানের জন্য এক ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ গঠন দরকার” (Ta-lib-an rulers need to establish an inclusive government )। অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার বলতে অবশ্য অনেকে অনুমানে অনেক কিছু মনে করে থাকে। যেমন অনেকে মনে করে, এটা বোধহয় শয়তান পশ্চিমা বা আমেরিকানরা বলছে যে, আগের কারজাই বা গণি সরকারের লোকদের সাথে নিয়ে সরকার গঠন করতে বলা হচ্ছে। ভারতও হয়তো মনে করছে, এতে তার পছন্দের এক আফগান সরকার আবার আসবে। কিন্তু এটা ঠিক তা নয়। এমনিতেই মোদ্দাকথা বুঝানো হচ্ছে এমন এক সরকার গঠন করা দরকার যেন সেখানে জনগোষ্ঠীর সব ধরনের মানুষের প্রতিনিধিত্বই থাকে যাকে অন্তর্ভুক্ত করে তা গঠিত হয়। জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্ত অবশ্য পুরানা যেটা ট্রায়কা+ বলে একটা কমিটি গঠনের সময়ও উঠেছিল। যা নিয়ে আমার আগের রচনা আগ্রহিরা এখানে দেখে নিতে পারেন।
এখানে ‘সব ধরনের মানুষের প্রতিনিধিত্ব’ বলতে যেমন ওই দেশের সব অঞ্চলের লোক (দেশে কয়েকটা ভাষা বা কালচার প্রচলিত থাকলে), সব ভাষাভাষী ও কালচারের লোক, (যেমন প্রায় সবাই বাঙালি হলেও ধরা যাক কেউ কেউ বিহারি অথবা মনিপুরী ইত্যাদি যাদেরকে আলাদা ‘এথনিক’ জনগোষ্ঠী বলে এরা একেকটা কয়েক লাখের বেশি নয় হয়তো, এমন হলে) সব এথনিক জাতিগোষ্ঠীর লোক, আবার (আফগানিস্তানে যেমন হাজারা-রা এমন হলে) পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর লোক, সব ধর্মের লোক, (সমাজের নারী-পুরুষ এমন বিভক্তি আছে তাই) পুরুষরা তো থাকবেই সাথে নারীদেরও প্রতিনিধিত্বের লোক, দেশে পাহাড়ি-সমতলী বলে আলাদা বা বিভক্তি কিছু থাকলে সব ভুগোলের লোক – এভাবে ঐ দেশের মানুষের মধ্যে যত ভাগ-বিভক্তি আছে তার সব অংশের প্রতিনিধিত্ব নতুন রাষ্ট্র ও সরকারে থাকতে হবে। এটা বুঝাই সঠিক হবে। এ ছাড়া আরো আছে, সুনির্দিষ্টভাবে অন্য ধর্মীয় বা অন্য মতবাদের লোক বলে কেউ থাকলে তাদের বাদ দেয়া যাবে না।
একটা ছোট উদাহরণ দেয়া যাক; ২০১৫ সালে নেপাল হল নবগঠিত করে নেয়া এক রাষ্ট্র। এখন থিতু হয়ে গেছে বলে এর মোট জনপ্রতিনিধি বা এমপির সংখ্যা ২৭৫ যারা নেপালের মোট প্রায় তিন কোটি জনসংখ্যাকে প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু এর কনস্টিটিউশন গঠনের সময় তাতে মোট জনপ্রতিনিধি আরো বাড়িয়ে করা হয়েছিল ছয় শতাধিক। কারণ নেপাল মূলত পাহাড়ি ও প্রাচীন বলে ভিতরে জনগোষ্ঠীর এথনিসিটি অনেক ভাগে বিভক্ত। তাই সেখানে কনস্টিটিউশন যা একবারই বানানো হয় ফলে তাতে জনগণের সব অংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল।
এসময়ের কাজটাকে আসলে বলা হয়, সমাজের সবার পলিটিক্যাল হয়ে ওঠা; সবাইকে নিয়ে এক পলিটিক্যাল কমিউনিটি বা পলিটি (Polity) গড়ে নেয়ার সদর রাস্তা। আর এর নীতি একটাই – প্রত্যেককে বলতে দিতে হবে, তাকে শোনা হতে হবে, মার্জিনালাইজ করে ফেলে রাখা হবে না। আরেকভাবে দেখলে এটাই একটা কনস্টিটিউশন রচনায় পৌঁছানো উপায় যেখানে সমাজের সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছিল। ফলে এটা ঠিক একটা নারী-মন্ত্রী রাখা না রাখায় সীমাবদ্ধ রেখে পরিস্থিতি মুল্যায়ন করা নয়। তালেবানরা খারাপ না ভালো বলে ফতোয়া দেয়াও নয়।
নেপালের বেলায় পরে রেগুলার সংসদীয় এমপি নির্বাচনের সময় প্রতি এক-সোয়া লাখ ভোটার পিছু একেকটা কনস্টিটিউয়েন্সি নির্ধারণ করে নেয়া হয়েছিল। এমন ছবিটাই আফগানিস্তানেও আঁকতে পারলে খারাপ হতো না – “এটাই ইনক্লুসিভনেস”। আবার ইনক্লুসিভ মানে সবাইকেই এখনকার অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রিসভায় জায়গা দেয়াও না। মূলত ওই কনস্টিটিউশন রচনার সভায় সবারই উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। আর পরে নির্বাচন-ভোট হলে যারা সকলেই অংশ নিবে কিন্তু সবাই তো ক্ষমতায় আসবে না কিন্তু তারাও বস্তুত ঐ সরকারে ইনক্লুসিভ বলে বুঝতে হবে অবশ্যই। ফলে জাতিসংঘের ওই ইনক্লুসিভ সংক্রান্ত প্রস্তাবের ব্যাপ্তি অনেক দূর, এমন মনে করার সুযোগ আছে।
তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক বা ইংরেজিতে শব্দটা হল ইনক্লুসিভ (Inclusive), যার সোজা মানে হল সমাজের সব অংশের প্রতিনিধি সেখানে থাকতে হবে তাতে প্রভাবশালী গোষ্ঠীদের চোখে অনেককেই তাদের পছন্দের না হলেও। উল্টা করে বললে সমাজের কোনো অংশ আগে থেকে মার্জিনালাইজড বলে, কোণঠাসা বলে অথবা গরিব ও ক্ষমতাহীন বলে এই সুযোগে তাদের বাদ দেয়ার সুযোগ নিতে যাবে না – এই হল ‘প্রতিনিধিত্ব’ কথার মূল মেসেজ।
কথা আরো কিছু আছে। একটা দেশে মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের ভাগাভাগি থাকে যার মধ্যে জেন্ডার বা নারী-পুরুষ বিষয়ক বিভক্তিটা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। কেন? কারণ একটা সমাজে সাধারণত দেখা যায় যে নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই প্রায় ৫০ ভাগাভাগির মতো হয়। ব্যাপারটা অনেকে হয়ত খেয়াল করে দেখেন নাই। যেমন, বাংলাদেশের নারী-পুরুষের হার (৪৯.৪-৫০.৬), আমেরিকায় এটা (৪৮.৯ – ৫১.১), ইউকে তে (৪৯-৫১) অর্থাৎ সার কথাটা হল, বিশেষ ব্যতিক্রম না থাকলে সবদেশেই নারী-পুরুষ সংখ্যায় প্রায় সমান সমান হয়ে থাকে। তাহলে এর মানে হল, রাষ্ট্র-সরকারে শুধুই পুরুষ আর পুরুষকে দিয়ে সব প্রতিনিধিত্ব করানো ও থাকার মানে, বাকি ৫০ ভাগ যারা নারী নাগরিক তাদের আমরা অ-প্রতিনিধিত্বে বাইরে রেখে দিচ্ছি এবং আফগানিস্তানের মত রাষ্ট্রে এই ক্ষতিটাই হচ্ছে। অর্থাত, আমাদের এখানে আলাপের প্রসঙ্গ কিন্তু জনপ্রতিনিধিত্ব, মানে কি উপায়ে আমরা রাষ্ট্র-সরকারে একটা দেশ-সমাজের সব অংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারি। যাতে সেটাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র-সরকার বলতে পারি।
তবে এখানে আরেকটি সত্যও বলে রাখা দরকার। ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তায় নারীদেরকে কিভাবে প্রতিনিধিত্ব দেয়া হবে আদৌ হবে কি না, এই বিতর্ক শেষ হয়নি। সব দেশে তাই এক রূপ নয়। বরং এটা তাদের চিন্তায় এক দুর্বল জায়গা হয়ে আছে। আর এর সুযোগ নিয়ে আমেরিকা গত ২০ বছর ধরে জাতিসঙ্ঘের চোখেই আফগানিস্তান অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল। অথচ এই অপরাধটা ঢাকতে আমেরিকা উলটা এমন বয়ান দিয়ে এসেছে যেন অবৈধভাবে আফগানিস্তানে সম্পদ লুটতে না, বরং আফগান নারীদের মুক্ত করতেই যেন তারা আফগান দেশটা দখল করেছিল। আমেরিকার এই লজ্জাজনক তৎপরতা বাংলাদেশ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। গত ২০০৭ সালে আমেরিকা প্রকারান্তরে আমাদেরও ‘দখল’ করলে ঐ ‘এক-এগারো’র সরকার গড়া হয়েছিল আর তা ছিল মঈন-ফখরুদ্দীনের কথিত সিভিল-মিলিটারি সরকার।
ওদিকে কমিউনিস্ট সিপিবির নারী সংগঠন “বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ” পাকিস্তান আমলে জন্ম এমন পুরোনা সংগঠন। সারা জীবনে তাদের বার্ষিক সম্মেলনে তারা কখনো শেখ মুজিবকেও প্রধান অতিথি করতে পারেনি। সম্ভবত তাদের মাপকাঠিতে তিনি “গুরুত্বপুর্ণ যথেষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব” মনে হওয়ার মাপকাঠি পেরোতে পারেননি। অথচ মহিলা পরিষদ ২০০৭ সালেই ফখরুদ্দীনকে মহিলা পরিষদের সম্মেলনের প্রধান অতিথি করেছিলেন; যে ফখরুদ্দীন আসলে ছিল অবৈধ ক্ষমতাধর ও ‘ছুপা’ আমেরিকান দখলদারের প্রতিনিধি। আর ঐ সম্মেলনে তিনি সংবর্ধিত হয়েছিলেন আমেরিকা আফগানিস্তানে নারীমুক্তি ঘটিয়ে ‘কত কিছু করেছে’- এর নায়ক বলে ও সেই প্রশংসায়। কেন? কারণ, ‘বুশ-বাবাজি’ ২০০১ সাল থেকে মুসলমান কুপায় হাত পাকিয়েছেন আর তা দেখে বাংলাদেশের কথিত কমিউনিস্ট যারা আসলে ‘হিন্দু-জমিদার’ স্বার্থের প্রতিনিধি, এরা এইবার আহ্বাদিত হয়ে বুশের কোলে উঠে যাবার সুবিধা নিতে। অথচ কেউ যদি কমিউনিস্টই হয় তো সেই আবার বুশের কোলে উঠে যায় কেমনে? এরই নমুনা ছিল ফখরুদ্দীনের ওই প্রধান অতিথি হওয়া। একইভাবে তালেবানরা এবার ক্ষমতায় আসায় সবদিক দিয়ে এতিম হওয়া ভারতও এখন প্রধান অভিযোগ বানিয়েছে আফগানিস্তানের নারীদের দুরবস্থাকে। এরা এতই মরিয়া যে, পাকিস্তানে আফগান দূতাবাসের সামনে জনা পঞ্চাশ নারী সমাবেশ ঘটিয়ে আফগান নারীদের জন্য সংহতি জানানোর ব্যবস্থা করেছে। অর্থাৎ আমেরিকার মত ভারতও আফগান নারীমুক্তির মহান ‘দূত’ হওয়ার রাস্তা ধরেছে; যদিও আমরা সবাই জানি তারাই তাদেরও দেশের নারীদের কিভাবে রাখেন।
তবে নারী ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের ইসলামী রাজনীতি নিজের দুর্বলতায় ভুগতে না চাইলে তাদেরও কিছু স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে থাকতেই হবে। একালের রাষ্ট্র-সরকারে নারীদের প্রতিনিধিত্ব কিভাবে নিশ্চিত করবেন তা আর উপেক্ষা করে যাওয়ার মতো ইস্যু নয়। কারণ নারীরা যেকোনো দেশের প্রায় ৫০ ভাগ জনগোষ্ঠি। এই নারী নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব তারা কিভাবে নিশ্চিত করবেন, এর সদুত্তর একটা লাগবেই। ঠিক এ কারণেই নিরাপত্তা পরিষদের ওই পুরো প্রস্তাব যা ১৫ সদস্যের সবাই ওর পক্ষে ভোট দিয়েছে। সেটা বলেছে – এক অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার লাগবে যারা নারীদের ‘পূর্ণ, সমান ও অর্থপূর্ণভাবে নারী অংশগ্রহণ ও মানবাধিকার রক্ষা নিশ্চিত করবে।’
“Taliban rulers need to establish an inclusive government that has “the full, equal and meaningful participation of women” and upholds human rights.”
উপরে যা নিয়ে কথা বলেছি ওখানে মুখ্য প্রসঙ্গ হল আসলে প্রতিনিধিত্ব (representation); যদিও অনেকের মনে হতে পারে বোধহয় রাষ্ট্র-সরকার নিয়েই কথা বললাম। আসলে কথা বললাম ‘রাষ্ট্র-সরকারে বাসিন্দাদের প্রতিনিধিত্ব কিভাবে নিশ্চিত করা হবে’ তাই নিয়ে এবং একালে এটাই হতে বাধ্য।
১৯৪৫ সালের পরে এক নয়া যুগঃ
পুরনো দিন আর কত থাকে, সব ‘নাই’ হয়ে গেছে, বিশেষ করে ১৯৪৫ সালের পর থেকে মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। এর আগে একদিকে রাজ-রাজড়া, সুলতান, আমির, বাদশাহ ইত্যাদির নানান নামে রাজতন্ত্রের শাসন এবং অন্য দিকে সর্বোপরি ইউরোপের ব্রিটিশ-ফরাসিদের কলোনি দখল হয়ে থাকা (যেমন বৃটিশ-ইন্ডিয়া) – এসব কিছুরই স্বর্ণযুগ ছিল সেটা, এভাবে এক অবাধ লুণ্ঠনের ক্ষমতা চর্চার যুগ ছিল সেটা। আর এসব কিছুরই সমাপ্তি ঘোষিত হয়ে গেছিল ১৯৪৫ সালে জাতিসঙ্ঘ জন্ম ও কার্যকারিতা দেয়ার পর থেকে। তাতে আপনি জাতিসঙ্ঘের যত কিছু অযোগ্যতা বা অসম্পূর্ণতা দেখান না কেন অথবা জাতিসঙ্ঘ অপছন্দ করেন না কেন! ঘটনা হল, আমরা কেউ আর চাইলেও ১৯৪৫ সালের আগে্র কালে ফিরতে পারব না। এমনকি যারা চাইব বা কামনা করব তাদের জন্যই এটা এখন আত্মঘাতী হতে পারে!
জাতিসঙ্ঘ যে জন্মভিত্তিমূলক বক্তব্য বা বাণীর উপরে দাঁড়িয়ে আছে তা হলো, যেকোনো দেশ-ভুখণ্ড কার কথায় চলবে, কার কথা চূড়ান্ত ও একমাত্র বৈধ বলে মানা হবে? এই প্রশ্নের জবাব হল, ওই ভুখণ্ডের সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের কমন ইচ্ছা বা সম্মিলিত ম্যান্ডেট কী এর উপরে। আর এটা তো বলাই বাহুল্য, আম-বাসিন্দারা কোনো এক রাজার শাসন চাইবে নাকি নিজেরাই নিজেদের শাসন করবে এমন প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের শাসন চাইবে – এই দুইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়টাই চাইবে। অর্থাৎ নানা নামে বলা ও চালানো রাজতন্ত্রের দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে এখন থেকে। এ কারণে প্রতিনিধিত্ব, জনগণ, নাগরিক বা পাবলিকের সরকার এসব শব্দ ছাড়া দুনিয়া এখন অচল।
তাহলে রাজনীতি, কবে থেকে?
পাঠক সবাইকে খেয়াল করতে অনুরোধ করব, ‘রাজনীতি’ শব্দটা কবে প্রথম শুনেছেন? হদিস করেন। বা আপনার দাদা কবে প্রথম শুনেছিলেন? ব্রিটিশ কলোনি দখলের আগে মানে মোগল সাম্রাজ্য (রাজতন্ত্রের বড় ভার্সন হল সাম্রাজ্য) শাসনের আমলে “রাজনীতি” শব্দটি ছিল না। কেন? রাজার দেশে ‘রাজনীতি’ বলে কিছু থাকে না কেন? রাজনৈতিক দল থাকে না কেন? তাহলে ‘রাজনীতি’ মানে আসলে কী?
এ কারণে লক্ষ করলে বা খুঁজলে পাবেন, রাজার শাসনের বিরুদ্ধে বা বিপরীতে জনগণ বা পাবলিকের শাসন এই ধারণা শুরু বা চালু হয়েছে ‘রাজনীতি চর্চা’ শুরু হওয়া থেকে; ব্যক্তির নিজেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গণ্য করা থেকে। তাই কোনো রাজা নয়, দেশ-রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষমতার উৎস জনগণ – এটাই সেই ভিত্তি অনুমান। জনগণই তার প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমেই একমাত্র রাষ্ট্র-সরকার পরিচালনা করতে পারে। বাকি সব কিছুই এই শাসন পরিচালনেরই উপর ঘটানো নানান বিকৃতি।
কাজেই একালে ১৯৪৫ সালের পরে দুনিয়াতে ‘ইসলামী রাজনীতি’কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে কোন দিকে যাবে? রাজতন্ত্র নাকি পাবলিকের শাসন? এমনকি তা একটা “এলিট শাসনের” আড়ালে রাজতন্ত্র হলেও হবে না। যেমন যেটা তালেবানরা প্রস্তাব করে এখন ক্ষমতায় আছে এটি কার্যত একটি ‘এলিট শাসনব্যবস্থা’ হবে যাদের কেউ নির্বাচিত করেনি। অর্থাৎ আফগান পাবলিকের সাথে তালেবানদের কী সম্পর্ক তা কেউ জানে না।এর ব্যাখ্যা বা বর্ণনা করতে কেউ চায় না। আবেগী থাকতে চায়। আবার তালেবানদের তাদের চোখে এই শাসনের নাম “আফগানিস্তান আমিরাত”। মানে এক আমিরের শাসন, তাই তো নাকি? এ বিষয়ে স্পষ্টতা আনতেই হবে।
আবার বিপরীতে যদি পাবলিকের শাসন, জনমতের শাসন, জনগণের অনুমোদন নিয়ে একটা শাসনব্যবস্থা তৈরি করতে চান সেটাও আগে যথেষ্ট বুঝেসুঝে বলতে হবে। যদি তালেবানরা এই পথে যায় তবে এক্ষেত্রে এই প্রথম এর মানে হবে তালেবানরা ‘রাজনীতিতে’ প্রবেশ করল। পাবলিক বা জনগণ আছে এর স্বীকৃতি কোনো শাসক করলে তবেই একমাত্র রাজনীতি শব্দটি তাদের জন্যও ব্যবহারযোগ্যতা লাভ করবে।
এমনিতেই শাসনের বহু ধরন হতে পারে। কিন্তু শাসন বা শাসক থাকলেই সেখানে রাজনীতি নাও থাকতে পারে। সৌদি আরবে শাসক আছে অবশ্যই কিন্তু তাই বলে সেখানে কিন্তু রাজনীতি নাই, দল নাই। কারণ পাবলিক, নাগরিক বা জনগণের অনুমোদন কিংবা প্রতিনিধিত্ব এসব ধারণার তখনই দরকার পড়ে যখন সে দেশের শাসক আর রাজা নয়, ব্যবস্থাটা আর রাজতন্ত্র নয়। যখন শাসক ও সরকার নিজেই স্বীকার করে বলে যে সে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের নাগরিকরা তাকেই ক্ষমতা দিয়েছে।
তাহলে কথাটি এভাবে বলা যায়, তালেবানের শাসনের নাম যদি হয় “আফগানিস্তান আমিরাত” – তাহলে সেক্ষেত্রে এটা আর কোনো ধরনেরই ইসলামী রাজনীতি নয়। কারণ তখন সেটা আর কোনো রাজনীতিই নয়। রাজনীতি মানেই তা রিপাবলিক; মানে জনগণের ক্ষমতা ও গণশাসন ক্ষমতার রাজনীতি। আফগানিস্তান আমিরাত হলে সেক্ষেত্রে, তাই ‘রাজনীতি’ শব্দটি; আনফিট মানে অমানানসই ও অপ্রয়োজনীয় শব্দ। যদিও তখন এটাকে এক ধরনের ইসলামী শাসন বলা যেতে পারে। আর উল্টাভাবে বললে কোনো আমিরাত কখনোই পাবলিকের শাসন নয়। আমিরাত (সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৃষ্টান্ত) কোনো জনশাসন ব্যবস্থা নয়। না রাজনীতি, না পাবলিক, না জনপ্রতিনিধি ইত্যাদি কোনো ধারণার অস্তিত্ব সেখানে থাকে না। বরং থাকে ও আছে আমিরের শাসন। মজার কথা হল, এখানকার দুবাই এর আমির তার কন্যা রাজকুমারীকে ঘরে বন্দী করে রেখেছেন বলে তিনি বেঁচে আছেন কিনা এর নিন্দা করে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংগঠন উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেন। কেন? এই বিষয়গুলোর পরিষ্কার বোঝাবুঝি রেখে “ইসলামী রাজনীতি” নিয়ে কোনো কথা বললে তবেই তা অর্থপূর্ণ হতে পারে।
এখন পথ বা রাস্তা একেবারেই সোজাঃ
তালেবানরা যদি মনে করে তারা এক আমিরাত-ই গড়বে, তাহলে এর অর্থ হবে তারা ১৯৪৫ সালেরও আগের দুনিয়াতে ফিরে ও থেকে যেতে চাইছে। তা চাইতেই পারে অবশ্যই। তবে সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য জাতিসঙ্ঘ আর কোনো প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান নয়। জাতিসংঘের সদস্যপদ আর তাদের জন্য আগ্রহের বস্তু নয়।
এছাড়া আর তাতে ব্যবহারিক দিকগুলো কী কী হবে? প্রথমত যেমন, একালে রাষ্ট্রগুলো একে অপরের কাছে পণ্য বেচাবিক্রি করে মানে পণ্য দেয়া-নেয়া বা বিনিময় করে বেঁচে থাকে, নিজ নিজ অর্থনীতি টিকিয়ে রাখে। এক কথায়, এক গ্লোবাল বাণিজ্য ব্যবস্থায় সদস্য ও সংযুক্ত হয়ে নেয় রাষ্ট্রগুলো সবার আগে। কিন্তু, তালেবানরা আফগানিস্তানে এমন সুযোগ নিতে পারবে না। মানে তালেবানরা না কিছু অন্য দেশ থেকে কিনতে পারবে, না বেচতে পারবে! কারণ সে তো জাতিসঙ্ঘেই থাকবে না। ফলে গ্লোবাল বাণিজ্য ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবে না। নিজেই যেন নিজেকে একঘরে করা হবে। দ্বিতীয়ত, যেমন দুনিয়ায় বহু গরিব অর্থনীতির রাষ্ট্র নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা অনুসারে, জাতিসঙ্ঘ-আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক মিলে যে ‘গ্লোবাল রাজনৈতিক ব্যবস্থা’ একটা আছে এর মাধ্যমে তার দেশের গরিব মানুষ খাদ্য, চিকিৎসা ধরনের বেশ কিছু বিষয়ে সাহায্য পায়। আর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের যতই খারাপ দিক থাক আপনার চোখে লাগুক এটা এখন এত অর্গানাইজড একটা ব্যবস্থা যে এটা এখন গরিব দেশের মানুষের জন্য তাদের হকের মত হয়ে গেছে। এখন এরই সাহায্য ব্যবস্থার উপরে টিকে আছে আফগানিস্তানের শিশুদের এক বিরাট অংশ। এ ছাড়া গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের জন্য সহায়তা এবং কিছু স্কুল এই সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তালেবানেরা জাতিসংঘের বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে আফগানিস্তানে এই সাহায্য পাবার ব্যবস্থাটা তখন থেকে নড়বড়ে হতে থাকবে। বর্তমানে অবশ্য তালেবানরা কী করবে তা উহ্য রেখে দেয়াতে জাতিসঙ্ঘ তাতে কোনো স্বীকৃতি দেয়নি। আবার সে জন্য সব সাহায্য স্থগিত করে দিলে আফগান গরিবরা সবচেয়ে কষ্টে পড়বে বিবেচনায় মানবিক কারণে সাহায্য অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই মাসেই দাতারা যারা বেশির ভাগই পশ্চিমা দেশ। ভারতও নিজেকে বিরাট মহান দেশ হিসাবে দেখাতে ঐ দাতাদের সভার আগে বক্তৃতা মেরেছে। আসলে আফগানিস্তানের যত সম্পদই থাক চরম অব্যবস্থার সরকারে অদক্ষতা দুর্নীতিতে ডুবে এটা এখন লাগাতরভাবে বিদেশি সাহায্য ও অনুদানে চলা একটি দেশ। প্রতি বছর এর বাজেট রচনা করতে বিদেশী প্রতিশ্রুতি ও সাহায্য [Taliban thanks international community for aid pledges] লাগে; তবেই তা রচনা করা যায়; বর্তমান আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকির বয়ানে সেটি স্পষ্ট। কিন্তু তালেবানরা জাতিসঙ্ঘের বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে এ দিকটিও তখন অনিশ্চিত হয়ে যাবে। কল্পনা ও ফ্যান্টাসিতে অনেক বিল্পবের স্বপ্ন দেখা যায়। কমিউনিস্টেরাও এথেকে বাইরে ছিল না। কিন্তু বাস্তবে একটা সরকার পরিচালনা সম্পুর্ণ অন্য জিনিষ। কারণ এটা আর কল্পনার হাতিঘোড়া মারা নয়। বাস্তবে করে দেখানো, অর্জন করে দেখানোর বিষয়। এথিক্যাল কিছু বাণী দিয়ে একটা অব্যবস্থাকে সুব্যবস্থায় আনা যায় না। সুব্যবস্থাই খাড়া করতে হয়। গ্লোবাল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যা আছে একে ব্যবহার করে একটা নুন্যতম সুব্যবস্থার গড়ার লড়াই এটা। তাই বন্ধুকের লড়াইয়ের চেয়ে কঠিন এটা। প্রতিটা আফগান মা ও শিশুকে অব্যবস্থার শিকার হতে বাচানোর লড়াই এটা।
তাই আসলে খোলাখুলি স্পষ্ট ভাষায় বললে, তালেবানরা এখন ক্ষমতায় আসার পর তাদের মূল সমস্যা জাতিসঙ্ঘ নয়। মূল সমস্যা আফগানিস্তান মূলত এক ট্রাইবাল সমাজ। এই ট্রাইবাল অতীত ভেঙ্গে সে এখনও বের হয়ে আসতে পারে নাই। তাই তারা এক ট্রাইবাল অর্থনীতিতে যার মানে ট্রাইবাল জীবনযাপন। অচল প্রায় স্থবির এক ব্যবস্থা। একে ভাঙতে হবে। নতুন উতপাদন ও এক ব্যাপক বেচা-কেনা বিনিময় ব্যবস্থায় প্রবেশ করতেই হবে; বিনিয়োগ আনতে হবে। বিনিয়োগদাতারাও আগ্রহী। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে থিতু ব্যবস্থা দেখাতে না পারলে কেউ আগাবে না। আর এখানেই তালেবানদের মুনশিয়ানা দেখাতে হবে। নিজের সম্ভাবনা নিজেদের বুঝতে হবে। বাণিজ্যসম্পর্ক সবার সাথেই করতে তাদের প্রস্তুত হতে হবে; এবং তা প্রতিযোগিতামূলকভাবে। এমনকি তা শুধু মাত্র চীন-রাশিয়ার সাথেই নয়, আমেরিকানদের সাথেও। কিন্তু সবার আগে সুনির্দিষ্ট ও একই পলিসি ও নিয়মনীতির ভিত্তিতে। যা সবার আগে তৈরি করে নিতে হবে। নইলে টেন্ডার, কাজ দেয়া-নেয়ার মধ্যে, বিদেশীরা তালেবানদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে বাড়িয়ে সব বিশৃঙ্খল করে ফেলবে। নিজেদের মধ্যে মারামারি লেগে যাবে!
মূল কথাটা হল – তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত ও বিচক্ষণতায় তারা হয় হিরো না হয় জিরো হয়ে যেতে পারে। উল্টা বললে, যেকোনো ইসলামিজমের ‘ফ্যান্টাসি’ তাদের পাতালে নিতে পারে। তাই এখনো ঝোঁক ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে যে, কড়া শাস্তিমূলক কড়া শাসন হবে তালেবানদের ব্র্যান্ড – সরি, না। এটা ফ্যান্টাসি হবে। মানুষের সামাজিক অর্থনৈতিক জীবনকে কঠিন করে দিচ্ছে কি না, অদক্ষ করে দিচ্ছে কি না ইত্যাদি সেদিকে খেয়াল করতে হবে; এসব ব্যবহারিক দিকের সাফল্য হতে পারে তাদের ব্র্যান্ড।
জাতিসঙ্ঘ প্রসঙ্গে বাকি কথাগুলো অর্থাৎ গ্লোবাল পলিটিক্যাল ব্যবস্থা যেটি আছে এর বহু অযোগ্যতা এবং আপনার জন্য বোঝা বা বিরুদ্ধবাদী আচরণের মনে হয় ইত্যাদি সব নেতি দিক আছে আপনি দেখতে পান, কথা সত্য। তা সত্বেও এটা এক বারো মুরুব্বির ন্যূনতম ফাংশনাল ব্যবস্থা। তাই এটা উপেক্ষা করা খুবই কঠিন। তবু তা যদি করেন তবে হয়ত এর জন্য কড়া মাশুল দিতে রাজি থাকতে হবে।
আবার বিপরীতে এতে আফগানিস্তানকে ছাড়া বাকি দুনিয়া তার গ্লোবাল পলিটিক্যাল ব্যবস্থাসহ কি ভালো থাকবে? বা খুশি হবে? তাও না। এখনই সবচেয়ে নিশ্চিত যেটা তা হল , সেক্ষেত্রে আফগান-পড়শি প্রত্যেকটা দেশ “সশস্ত্র ইসলামী তৎপরতা” মোকাবেলার বিরাট সঙ্কটে পড়বে।
সর্বশেষ, জাতিসঙ্ঘের পাঁচ ভেটো ক্ষমতার রাষ্ট্র একমত হওয়া খুবই দুর্লভ মানে কম দেখা যাওয়া ঘটনা। আবার বিপরীতে তাদের ভেটো ক্ষমতার যেকোনো এক দেশের একটা না-ভোট মানে জাতিসঙ্ঘের সে প্রস্তাবই নাকচ। তাই এখানে আলোচ্য বিষয় এটা পাঁচ ভেটো ক্ষমতাধরদের এক সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। এর সোজা অর্থ, যে দেশের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত সে দেশের জন্য এটা শনির দশা। আন্তর্জাতিক পলিটিক্যাল ইকোনমিক সব ব্যবস্থা এখন ঐ দেশের (মানে আফগানিস্তানের) বিরুদ্ধে যাবে এর ইঙ্গিত দিচ্ছে তা বলা যায়। আর আফগানিস্তানের জন্য সময় কম অবস্থা। তাই একটা আকার ইঙ্গিতের মেসেজ এখানে বলে রাখি। যেকোনো দেশের জন্য এটি বিরাট বোকামি যে, সে এই পাঁচ ভেটো ক্ষমতার কোন সর্বসম্মত সিদ্ধান্তকে একমতে থাকতে দেয়া। এদের বিভক্তিই আফগানদের জন্য বাচোয়া। তাই এমন অবস্থা তালেবানদের জন্য ভুল যা পাঁচ ভেটো ক্ষমতাকে কোন সর্বসম্মত সিদ্ধান্ন্ততে আনে।
তাও আবার এখন যখন আমেরিকার পাশে চীনও বিরাট প্রভাবশালী অর্থনীতি এবং তার সাথে রাশিয়া আছে মানে তালেবানরা যদি ব্যবহার করতে জানে তবে দুই ভেটো সদস্যকে তার পক্ষে রাখতে পারে। কাজেই বুদ্ধিমানরা দুই ভেটো সদস্য তার পক্ষে থাকে এভাবে পা ফেলবে। মানে জাতিসঙ্ঘকে অসুবিধা বা বিরোধিতা অস্বস্তির প্রতিষ্ঠান হিসেবে না দেখে একে নিজের পক্ষে ব্যবহারের মত করে সাজানোর জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠান করে দেখতে হবে, কাজে লাগাতে হবে।
দুনিয়ার কিছু আপনার পক্ষের প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে না, করে নিতে হয় যতটা সম্ভব।
শেষ কথা, তালেবানরা কি আফগানদের জনপ্রতিনিধি? নাকি রাজা হতে চায়? এনিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া কী তাদের জন্য এতই কঠিন?
যা কিছু অতীতে কোন ইসলামি সমাজে প্রচলিত ছিল তাই শ্রেষ্ঠ – এই বিচারকাঠি সবল নয়। তাই তালেবানদের জন্য অনুকরণীয় তা নাও হতে পারে। দরকার আসলে শক্ত বিচার-বিবেচনাবোধ, বাস্তবতাবোধ এবং এসবের স্পষ্ট গাইডলাইন। কোনটা কাজ করবে না ফল দিবে না সেটা আগেই দেখতে পেয়ে যাওয়া এমন হতে হবে। নইলে তালেবানেরা অচল হয়ে যাবে। অনেক কিছুই অতীতে স্পষ্ট ছিল না; পরে হয়েছে এমন তো হতেই পারে! ব্যক্তির উন্মেষের দিক বুঝতে হবে, আবার সময়ে লাগামও টেনে দিতে হবে। কোনটা ট্রাইবাল সমাজ আর কোনটা ব্যক্তি সমাজ এর ফারাক কী আর এর লক্ষণ কোনটা তা বুঝে ফেলতে হবে। সে ভিত্তিতে গ্রহণ-বর্জনের দিক আছে তা আমল করতে হবে।
কাজেই রাজা না জনপ্রতিনিধি হবেন – (দুটো রাস্তা কিন্তু পরিস্কার আলাদা) এই সিদ্ধান্ত তালেবানদের সবার আগে নিতেই হবে , পারলে এখনই ঘোষণা দিতে হবে! আর এই এক ঘোষণাতেই বাকি সব সমস্যার হাল করার রাস্তা খুলে যাবে!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
[এই লেখাটা গত ২৫ সেপ্টেম্বর আগষ্ট ২০২১, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার ওয়েবে ও পরদিন প্রিন্টে “আফগানিস্তান ও জনপ্রতিনিধিত্ব“– এই শিরোনামে ছাপা হয়েছিল।
নয়াদিগন্তে ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়। আর আমার এই নিজস্ব সাইটের লেখাটাকে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে এবং থিতু ভাষ্য বলে পাঠক গণ্য করতে পারেন। পরবর্তিতে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ লেখাটাকেই এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]