চীন ভাইসাবের সমস্যা
গৌতম দাস
১৬ জুন ২৩ মধ্যরাত ০০: ০৪
https://wp.me/p1sCvy-4CP
আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত: চীন। [চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন]
চীনা এমবেশির ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মিডিয়ার কিছু খোরাক এসেছিল [মুল ইংরাজিটা এখানে]। এরপর সবাই নিজ নিজ মত করে ফোকাস সাজিয়ে সে খবর মিডিয়ায় এনেছে। এর মধ্যে সবাইকে ছাড়ানো ফোকাসে প্রথম আলোও তা হাজির করেছে। তাতে মনে হইয়েছে চীন এবার বোধহয় যেন হাসিনার বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামবে। দুনিয়াকে সব অনাচার থেকে মুক্ত করবে ইত্যাদি এমনই বোধহয় এর শপথ!
না বাস্তবতা একেবারেই তা নয়। আমরা একসাথে কাজ করব এতটুকু তো বলাই যাই। কিন্তু পরের শব্দটা যখন নীতিগতভাবে, মানে মূলত কমন পলিসিতে তহ্ন একথার একরকম মানে হবে। আর যখন সরাসরি বা আকার ইঙ্গিতে বলা হবে যুদ্ধের বা বলপ্রয়োগের কথা তাহলে সেটা অন্যরকম! অনেকেই চীনাদের কথাটা – “We stand ready to work together with Bangladesh and other countries to oppose all forms of hegemonism and power politics,…।” কথাটাকে নীতিগত সমর্থনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন নাই। বাইরে নিতে চেয়ে ইঙ্গিত রেখে মানে করেছেন। তাতেই এটা সাংঘাতিক শুনাচ্ছে। খুব সম্ভবত এটাই ভারতের ইচ্ছা যেকারণে প্রথম আলো এসব কথার এক্সট্রিম অর্থের ইঙ্গিত এনেছে।
কিন্তু কোর ফ্যাক্টস-টা মানে মর্মশাসটা হল, আমেরিকা হাসিনাকে সরাতে পারলে, মোদিকেও সরাতে পারলে এতে লাভের গুড়ের এক বড় অংশ যাবে চীনের পক্ষে আর তা কিছুই না করেই!
আমাদের উচিত হবে, “একসাথে কাজ” বলতে এইটারে নীতিগত পর্যায়ে রাখা ও বুঝা পর্যন্তই; তা ছাড়িয়ে ফিজিক্যাল যুদ্ধ, বা পাশে দাড়ায় যুদ্ধ এসবের ইঙ্গিত দেয়াটা হল উস্কানি তোলার চেষ্টা – এটা যেন মনে রাখি।
এখন তাহলে চীন ভাইসাবের সমস্যাটা কীঃ
চীনের মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, যে আমেরিকা “hegemonism and power politics”করে।
আচ্ছা, চীনই কী প্রথম বা এবারই প্রথম যে আমেরিকার “hegemonism and power politics” এর নিন্দা করে কথা বলছে বা তুলছে?
মোটেও না, একেবারেই না। এমনকি ১৯৫৩ সাল থেকে একেবারে আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকা একাজ করে চলেছে। সেবারই প্রথম সিআইএ বাহিনী পাঠিয়ে ইরানের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে শাহের রাজতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিল আমেরিকা। এটা দুনিয়া সকলেই জানে শুধু তাই নয়, এটা একালে আমেরিকা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকারও করে নিয়েছে। পরে একালে ২০১৩ সালে এই স্বীকারোক্তি নিয়ে নিউজ রিপোর্ট এখানে CIA admits role in 1953 Iranian coup
।
কিতু তামাশা হল আমেরিকার এসব বিশেষ স্বভাব পরিচয় জানার পরও আজকের চীন [১৯৫৮ সাল থেকে মাওয়ের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে ঢেলে সাজানো যে চীন] সেও কী সেই আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠতম সুসম্পর্ক করে নাই; আর সেটা অন্তত ২০১০ সাল পর্যন্ত????
শুধু তাই না এই চীন-আমেরিকা হানিমুন এমনই হানি-ময় ছিল হবু বাংলাদেশকে বিক্রি করে দিয়ে আমেরিকা-চীন এর সখ্যতা কী তখন ঘোষণা দিয়ে এরা একসাথে সেসময়ের (১৯৭১) পাকিস্তানের আয়ুব-ইয়াহিয়ার পক্ষ নেয় নাই?
আর তখন কী আমেরিকা hegemonism and power politics নীতিতে ছিল না??? আমি নিশ্চিত কোনপক্ষই এটা অস্বীকার করবে না। এমনকি ২০১০ সালের পর থেকে আজকের আবার আমেরিকা-চীন প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ক্রমশ এটা মুখোমুখি সংঘাতের সম্ভাবনা হাজর করার দিকে যাচ্ছে – এটাই তো বাস্তবতা!
কাজেই আজকে হঠাত আমেরিকাকে আবার hegemonism and power politics এর কর্তা বলে আবিস্কার কেন? এটা পরিস্কার করে বলা উচিত ছিল চীনা মুখপাত্রের। এটাই সেই ফ্যাক্টস যে আজ আমেরিকাকে আবার hegemonism and power politics এর জন্য দায়ী করে কথা তোলা এটা চীনের এখনকার বাংলাদেশ নীতি! আবার এটাই সত্য কাল যদি আর কোন দৈব দুর্বিপাকে হাসিনা ক্ষমতা হারায় ফেলেন তাহলে আবার তখনও চীনা অবস্থান আবার বদলে যাবে, আর সেটাও স্বাভাবিকই হবে!
সারকথায় তাহলে মূল বিষয়টা হল চীনা স্বার্থ। এটাই সবক্ষেত্রেই সবকিছুর নির্ণায়ক আর তাই এর মধ্যে আমেরিকা ভাল কী খারাপ কিংবা hegemonism and power politics কিনা সেটা খোজা অর্থহীন।কাজেই বাংলাদেশেও তো রাজনৈতিক ধারাগুলোর স্বার্থ – এর অন্তত দুইটা পক্ষ তো আছে আমরা ধরে নিতে পারি যে তারা হল – “প্রো আর এন্টি” – হাসিনা। চীন যেমন তার যখন যেমন স্বার্থ সে ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তেমনই তারাও তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ মোতাবেক অবস্থান নিবে, কোনটাকে সঠিক বা কোনটাকে বেঠিক বলবে! তাই না? এটাই তো স্বাভাবিক!
কথা আরও আছে খানিকটাঃ
এই যে চীন আজ হাসিনার পক্ষে দাঁড়িয়ে আমেরিকার hegemonism and power politics বলে খারাচ্ছে [নীতিগতভাবে] – তাতে, চীন নিশ্চয় জানে এটা কোন ক্ষমতার হাসিনা!
ওয়ান-ইলেভেন বা ২০০৭ সালে বাংলাদেশে যে নয়া (অ্যামেরিকান) ক্ষমতার উদয় হয়েছিল এর সরাসরি সুবিধাভোগী এবং সরাসরি সেই ততপরতার গন্তব্য ও পরিণতিই তো হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়ে উঠে যেটা আজ পনেরো বছর ধরে বহাল। এটা কী চীনের অজানা? তা তো নয়। তাহলে সেটাও তো এই আমেরিকারই hegemonism and power politics এর এক সদম্ভ প্রকাশই ছিল। অথচ চীন কী তখন এই আমেরিকারই অথবা আমেরিকার কোলে উঠে ক্ষমতা নেওয়ার জন্য কী হাসিনা সরকারের কোন সমালোচনা করেছিলেন? কোন অ্যামেরিকান hegemonism and power politics তখন চীন দেখতে পায় নাই কেন????
বরং চীন কী করেছিল?
২০১০ সাল থেকেই চীন শুধু হাসিনা সরকারই নয়, পার্টি টু পার্টির কথা বলে আওয়ামী লীগের সাথে বিশেষ সম্পর্ক শুরু করেছিল। ঐ বছরের ঈদের ছুটিতে ততকালীন লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম চীন সফরে গেছিলেন। আর চীন সরকার তক্কে তক্কে ছিল কীভাবে বিশ্বব্যাংকের পাশ দিয়ে হলেও অবকাঠামো ঋণদাতা হিশাবে বাংলাদেশে ঢুকা যায় কিভাবে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে তা পেতে চীনের (বিশেষত ভারতীয় বাধা পেরিয়ে) ২০১৬ সাল লেগে যায়। কিন্তু কখনই চীন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে অ্যামেরিকান হেজিমনির (hegemonism and power politics) সমালোচনা করেই নাই। কেন? হোপ চীন এই সত্যের সাথে একমত হবে।
তাহলে এখানেও সারকথা হল চীন যেটাকে তখন স্বার্থ মনে করেছিল সেটাই ছিল নির্ণায়ক! তাতে আমেরিকা hegemonism and power politics এর শক্তিধর – সেটা হ্যা কিংবা না তাতে কিছু আসে যায় নাই।
তাহলে এখন শেষ কথাটা চীনকে শুনতে হবেঃ।
তাহলে এখন সেই আমেরিকারই একই হাসিনা সরকারের উপর স্যাংশন দেয়া – এটা আসলে কী?
সম্ভবত বাংলাদেশের মেজরিটি মানুষ বলবে এটা কাফফারা! আমেরিকার ২০০৭ সালে আমাদেরকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া এই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত! তবে স্বভাবতই এগুলো আমজনতার ভাষা যারা থিওলজি বা ম্যাটোফোরে [matafor] কথা বলে থাকে তাই! – ঠিক রাজনৈতিক ভাষা বা ভাষ্য হয়ত নয় তা বলতে পারেন!
তাহলে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা বা পরিভাষাটা কী?
সেটা হল, এখন অ্যামেরিকান স্বার্থ হল এশিয়ায় একটা ওলটপাল্ট বা ঢেলে সাজানো। গত ২৩ বছর ধরে অনুসৃত অ্যামেরিকান এশিয়া নীতি ঢেলে সাজানো। আর এই নয়ানীতিতে বাইডেন প্রশাসন এখন আর হাসিনাকে আর দেখতে চাইছে না। কেন?
কম করে বললেও এতে একটা সংযোগ হল ভারত মানে মোদির ভারতের! সেখানেও বাইডেন মোদিকে দেখতে চাইছে না। খাড়া ভাবে (ব্যক্তি বাদ দিয়ে) বললে, গত ২৩ বছর আমেরিকা ভারতের পিঠে হাত রেখেছিল, চীন ঠেকানোতে ভারতকে ব্যবহার করবে বলে। আর এরই মজুরি ছিল বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া।
কিন্তু এখন সময়টা হল অ্যামেরিকান বদল যাওয়ার – মানে গত ২০০১ সালে ওয়ার অন টেরর বা এর কিছু আগে যার শুরু হয়েছিল সেই নীতি-পলিসির পল্টে যাওয়া বা পল্টানি শুরু হয়েছে এখন। যখন প্রেসিডেন্ট বুশ ভারত এনপিটি [NPT] এর সদস্য না হওয়া সত্বেও তাকে পরমানুর কাচামাল পাওয়া, পরমানু এনরিচমেন্ট ইত্যাদিয়ে সাহায্য করে ভারতের মন জয় করে বুশের আমেরিকা ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছিলেন। কাশ্মীর নির্বাচনি ব্যবস্থা রাজীব থেকে বাজপেয়ি সকলেই ভেঙ্গে দিয়ে কাশ্মীরকে সশস্ত্র আন্দোলনের ভুমি এই নতুন দিকে ঠেলে দিলেন অথচ বুশ এটাকে মুসলমানদেরই দোষ, সশস্ত্রতা – কথিত “জঙ্গীবাদই” সমস্যা বলে সুর মিলিয়েছিলেন সেই সময়ে।
ঘটনা হল আমেরিকা এখন হায় হায় করছে পুরানা সেই নীতি নেওয়াটা ভুল মনে করছে, সেটা মুখে না বললেও এক্ষণকার পদক্ষেপগুলো তা বলছে। তারা মনে করে ভারতের পিঠে হার রাখার জন্যই ভারত যেন ‘বেয়াদব’ হয়ে গেছে ভুয়া পরাশক্তির দাবিদার হয়ে গেছে। তুলনায় আমেরিকার খুব একটা কোন লাভ হয় নাই। এটাই পরোক্ষে সেসময়ের নীতি-পলিসিটা ভুল বলা হয়ে যাচ্ছে – কারণ তা বলেই না তা এখন বদলে দিতে চাচ্ছে। তাই এখনকার অ্যামেরিকান লক্ষ্যকে ভারতের শব্দে বললে এটা যেন আমেরিকার “ভারতকে আওকাত শিখানোর” সময় এটা। কথাটা জামা পড়িয়ে বললে এককথায়, এক সাব-অর্ডিনেট বা অধীনস্ত ভারত দেখতে চায় আমেরিকা। যেটা সারকথায় কোন চীন-রাশিয়া-ভারত জোট এর হয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে দাড়াবার হুমকি দিবে না। যদিও আপাতদৃষ্টিতে চীনের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভারতের প্রপাগান্ডা যাতে ভারত মানে করে থাকে চীনই তার প্রধান শত্রু – এধরণের কথাই আমরা এখনও দেখছি। কিন্তু অ্যামেরিকান চাপ যত বাড়বে তাতে ভারত চীনের কোলে গিয়ে উঠবে এটাই সবার স্থির অনুমান!
মোদি বাইডেনের দাওয়াতেঃ
মজার কথা হল এমাসেই ২১-২৪ জুন মোদি বাইডেনের আমন্ত্রণে আমেরিকা যাচ্ছেন। সেখানে বাইডেন ভারতকে নিয়ে যেন তোলায় তোলার সুযোগ নিবে; দরদামে নিবদ্ধ হবে। সারকথায় বাইডেন সম্ভবত মোদিকেই বলবেন, সাব-অর্ডিনেট হয়ে ভারতকে তেমন সাইজে ছোট হয়ে যেতে। না হলে তিনি রাহুলের পক্ষ হয়েই নিশ্চিত দাঁড়াবেন।
বিপরীতে মোদি চাইবেন তাকে জিততে দিতে আর জিতবার পর ভারত-আমেরিকা এক কমন স্টাটেজিক দোস্ত হবেই এই ওয়াদা করতে চাইবেন তা যত গভীরে সম্ভব এমনটাই হতে পারবেন তিনি। এমনকি, এটা বলাও বিচিত্র নয় যে মোদি বলবেন বাকি সবদেশের সাথে সম্পর্কের উপর আমেরিকার সাথে সম্পর্ককে তিনি জায়গা দিতে চান ইত্যাদি।
স্বভাবতই মোদি একবার নির্বাচন করে ফেললে আর মোদিকে আটকানোর কোন সুযোগ আমেরিকার হাতে থাকবে না, তাই বলাই বাহুল্য যা করার আমেরিকাকে আগেই করতে হবে। কাজেই এই আলাপ থেকে কোন ডিলে বা রফায় এবারে পৌছানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রায় তা যাবে না।
তবে বাইডেনের দিক থেকে এটা মোদিকে একবার শেষ বাজিয়ে দেখা বা নেওয়া যে মোদির দিকে গেলে বাইডেনের জন্য কোন ভাল ডিল ছিল না – এখন ২৪ জুনের পরে এব্যাপারে বাইডেন নিশ্চিত হয়ে যাবেন হয়ত। এবং দেখা যাচ্ছে বাইডেনের গন্তব্য ক্রমশ মোদিবিরোধীদের দিকে, মানে রাহুলের দিকে! এদিকে শেষে যাবে হয়ত!
তাহলে সেক্ষেত্রে এই পুরা প্রক্রিয়ায় শেষে ভারতের আসল সাইজ সক্ষমতাটা কী সেটাই উদোম হওয়ার দিকেই যাচ্ছে। এভাবে ভারতের সক্ষমতাটা প্রকাশ্য হয়ে যাওয়াটা এতে তো তা চীনের জন্যও কম লাভজনক হচ্ছে না- তাই নয় কী???
তবে আমার কথা হল, ঘটনাটাক যেদিকেই যাক মোদি বা রাহুল বা মোদিবিরোধী জোট যাদের হাতেই ক্ষমতা গিয়ে শেষে ঠেকুক – ভারতরাষ্ট্র এতে এক্ষণকার চেয়ে মারাত্মকভাবে সক্ষমতায় এক দুর্বল ভারত হিশাবে পরিণত হবেই। ভাই পিঠে হাত রেখেছিল বলে এত দিনকার সব রোয়াবি পরাশক্তির ভাব সব চুপসে যাবে! আর এথেকে পরে পাওয়া চার আনা আসবে বাংলাদেশের পকেটে! এছাড়াও এতে সেই নয়া ভারতও কী চীনের দিক থেকে এক কাম্য-ভারত নয়, হবে না!! অবশ্যই!
তার মানে আমেরিকার নীতি-অবস্থান চীনের জন্যও লাভজনক হতে পারে!
তাহলে বাংলাদেশে আমেরিকা যদি কোন প্রায়শ্চিত্য করতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তাতে চীনের বিরোধী অবস্থান অপ্রয়োজনীয়; বাংলাদেশের কেউ কেউ এরমধ্যে এটা তার পক্ষের মনে করে দাঁড়িয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক, তাই না! সময় দুনিয়ার ঘটনাবলী ঘুর্ণিঝড় ভুমিকম্প ইত্যাদির মত করে অবজেকটিভলি দেখাও খারাপ হয় না!
শেষকথাঃ
এবিষয়ে আমার নিজের রিডিং নিয়ে দুটা কথা বলব।
এক. আমি মনে করি এই মন্তব্য বাংলাদেশ বা হাসিনার নাম ধরে চীন বললেও এর টার্গেট বাংলাদেশ নয়। এর টার্গেট হল গ্লোবাল শ্রোতা এই অর্থে যে যেন বলা যে, চীন নয় আমেরিকাই এশিয়াকে আউলা ঝাউলা [প্লানডার বা plunder] করছে। তোমরা অযথাই সবকিছুতে চীনকে দোষী করছো [বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজির কথা যদি মনে রাখি।]। চ্চীন এটা বলবারই মওকা নিয়েছে – বাংলাদেশ ইস্যু বা এই ইস্যুর মাথায় দাঁড়াবার সুযোগ নিয়ে। কাজেই এসব চীনা কথা বার্তায় বাংলাদেশ ঠিক কোন প্রসঙ্গই না।
দুইঃ দুনিয়াতে হিউম্যান রাইট ইস্যুটা ইস্যু হতে পেরেছে এই সেদিন, জাতিসংঘের জন্মেরও পরে ১৯৪৮ সালে। তাও কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলো এখনও জাতিসংঘ এর হিউম্যান রাইট বিষয়ক কোন কথায় মানে না আমল করে না; তা মানে না। মূল কারণ কমিউনিস্ট চিন্তায় রাজনীতিতে হিউম্যান রাইট বলে কিছু নাই। বিপরীতে জাতিসংঘের ভিতরের যেকোন ফোরামে কোনটাই ইস্যু হিশাবে উঠাবে হবে কোনটা হবে না, এসবের চেয়েও বড় কথা কতটা গুরুত্ব দিয়ে কোন ইস্যুকে উঠানো হবে এসব ব্যাপারে আমেরিকা এখনও একলাই রাজা। সে আগ্রহ দেখালে হবে না হলে কিছুই হবে অথবা দাফনায় দেয়া হবে – এই হল বাস্তবতা! এসবই আমেরিকাকে নির্ণায়কের এক বশাল ভুমিকা দিয়ে রেখেছে। কাজেই যখন আমেরিকা কোন হিউম্যান রাইট ইস্যু তুললে তাতেআমেরিকা যদি নিজের কোন স্বার্থ দেখে কেবল তখনই সে উঠবে; নইলে দাফন হয়ে যাবে। যেমন দেখেন হাসিনার গুম খুন তো প্রথম পর্বে সবচেয়ে একচেটিয়া ছিল ২০১৬ সাল পর্যন্ত। অথচ সবকিছু আমেরিকার জানা সত্বেও তা কোথাও এক চিলতেও ইস্যু হয় নাই। কারণ আমেরিকা আগ্রহী ছিল না, ইস্যু মনে করে নাই যা তার কাজে লাগবে! আজ মনে করছে বলেই তো এটা বিরাট ইস্যু! এসব দিক দিয়েই ইস্যুটা বুঝতে হবে।
আবার উল্টা কথাটা হল, এবারর বাইডেনের আমলে এসে ইইউ শেষ বেলায় বাইডেনের নীতির মধ্যে মিশে গেল। এটা যদি না হত তাহলে কী দেখতাম?
আমরা দেখতাম ইইউ এর পাঠশালায় চীন হিউম্যান রাইট এর ক্লাস করছে। এবিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে আমার ২০১৯ সালের পুরানা লেখা এখানে দেখতে পারেন আগ্রহীরা। এব্যাপারটা দুদুবারের চীন-ইইউ যৌথ ঘোষণাতেও উল্লেখ আছে। কাজেই হিউম্যান রাইট যদি কোন ইস্যুই নয় বা বাজে কথা হয় – তা নিশ্চয় নয়; তাহলে তো চীন ইইউ এর পরামর্শ নিত না। সমস্যাটা হিউম্যান রাইট ইস্যু কী গুরুত্বপুর্ণ ইস্যু নয় না বা তা নিয়ে অন্যদেয়াশ কথা বলতে পারবে সেটাই বরং বাজে কথা। সবাইওই বলতে পারবে। কিন্তু ইস্যু হল বলবে কিনা। আর কোন রাষ্ট্র তখনই বলবে পক্ষে অথবা বিপক্ষে যেদিকে নিজের স্বার্থ দেখব। এই হল বটম লাইন!
আপডেটঃ ১৬ জুন ২০২৩ ভোর রাত ০১ঃ ৩৭
আপডেটঃ ১৭ জুন ২০২৩ বিকাল ০৫ঃ ৩৫
>>>>
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

