আমেরিকা পলাইতে নিলে তখন কী করে


আমরা কী জানি না,
আমেরিকা পলাইতে নিলে তখন কী করে

গৌতম দাস
https://wp.me/p1sCvy-5i1

খুবই তাতপর্যপুর্ণ হিন্দুস্তান টাইমসের এই কার্টুন যা ছাপা হয়েছে এক রিপোর্টের সাথে। সারকথায় যা I WON! আর  BANGLADESH LOST! মানে হল  ইন্ডিয়ান অন্তত এই মিডিয়া আর হাসিনার সাথে নাই! 

 

 

আমি বিরক্ত! যারপরনাই বিরক্ত! আমরা কী জানি না,
আমেরিকা পলাইতে নিলে তখন কী করে? তাহলে?
[যারা মনে করেন – “আমেরিকা পালাবে? আমার বিশ্বাস হয় না!” – আমি তাদের ধারণাকে সম্মান জানাচ্ছি। আর আপাতত আমরা দেখি ঘটনা কোন দিকে যায়। এর আগে পাশাপাশি থাকতে আমি অসুবিধার কিছু দেখছি না।]

হাসিনা তো এই প্রথম নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করল না, এসব তো সে আগেও করেছে ফলে সেদিক থেকে নতুন কিছু না, সেসব। ফলে আমাদের অজানা নয়!

কিন্তু বিরোধীরা মানে, যেমন ধরেন সুনির্দিষ্ট করে ফেসবুক-ভিত্তিক কিছু সরকারবিরোধীদের কথাই যদি ধরি – এদের মধ্যে কিছু লোক যারা বাস্তবতা ফেস করতে পারছেন না।  আচ্ছা বলেন ত – আমেরিকা পলাইতে নিলে তখন কী করে এটা কী আমরা জানি না!  দেখি নাই কখনো? তাই কী এখন  অনেকে বুঝতে পারছে না যে কী হইতেছে! আমাদের উচিত হবে আমেরিকা পলাইতে নিলে এর আগে (২০১৮ নির্বাচনের পরে) আমরা কী দেখেছিলাম সেই স্মৃতি হাতড়ানো! সব খুঁজে বের করা।

এমনিতে যারা সহজে ভাবতে পারছেন না, সমস্যা তাদের একটা না অনেক। এই সমস্যা মনোগঠনগত! যেমন বাস্তব কী, রিয়েল [real]  কি – এটা তাদের কাছে অস্পষ্ট। মনে করেন বুঝেছেন কিন্তু আসলে না। আইডিয়েল কেই তারা রিয়েল মনে করেন তাই এরা কনফিউজড বা বিভ্রান্ত, আইডিয়াল [ideal] এর সাথে রিয়েলের ফারাক করে বুঝতে হবে।  আইডিয়েল মানে যা হওয়া উচিত জ্ঞান করে ব্যাপারটা জেনেছিলেন বা শিখেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয় নাই। কারণ বাস্তবে যা হয় ওটাই তো সত্যি, বাস্তব অর্থে সত্য [reality]!
অথচ আমাদের সরকারবিরোধী সমর্থকেরা এদের অনেকে হল এমন, যা তারা দেখতে চায় না যেন সেটা বাস্তবে ঘটতে পারবে না বা ঘটেই নাই; ঘটবে না – এমন মনে করা ব্যক্তি বা চিন্তা করে এমন ব্যক্তিত্ব!
এটাকেই অনেকে পুষ্ট না-হওয়া মানসিক বিকাশ বলবেন হয়ত তা বলুক!  তবে  এদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতাটা দেখা যায় যখন সাময়িক পরাজয় আসে! আর তাতে এরা আরো বাস্তবতা বিমুখ হতে শুরু করে। আর এতে সাধারণত সবচেয়ে ক্ষতিটা হয়, এরা আবার দ্রুত উঠে দাড়াতে পারে না!

ভগ্নদুত কীঃ
পুরানা বা সংস্কৃত ঘেষা বাংলায় একতা শব্দ আছে ‘ভগ্নদুত’ বলে। আগেরকার রাজাদের দিনে, যেখানে কোন যুদ্ধ চলতে তা থেকে রাজধানী বা রাজার আবাসস্থল অনেক দুরেই হত। এখন সেসব যুদ্ধের খবরাখবর দেয়া-নেয়ার জন্য বিশেষ দক্ষ বিশ্বস্ত রাজদুত ছিল। তাদের মাধ্যম্বের রাজা যুদ্ধের খবরাখবর নিতেন। এখন কোন যুদ্ধে রাজার পক্ষ যদি পরাজিত হত তো সেই খবরও তো রাজার কাছে পৌছাতে হত, কেবল সাফল্যের খবরগুলোই রাজার কাছে পাঠাত তা তো না! কিন্তু সমস্যা বাধত তখনই!
দুনিয়াতে মাথাগরম গাধার মত বোকা রাজার সংখ্যাও তো কম ছিল না। তো তেমনই রাজারা অনেকে যে কান্ডটা করে বসত তা হল, রাজার পক্ষের পরাজয়ের বার্তা বয়ে আনতে যে রাজদুত, রাজা পরাজয়ের বার্তা শুনে তাকেই খুন করে ফেলত। যেন বিরাট বিরত্ব দেখিয়েছেন ভাবত। আর এতে মানে দাড়াতো যেন দুত নেহায়ত খবরটাই ক্যারিয়ার বা বাহক নন। ঐ বাহক-ই যেন রাজাকে যুদ্ধে হারিয়েছেন! মানে হল, পরাজয়ের বার্তা যে বয়ে আনছেন আর রাজা যুদ্ধে হেরেছেন যে কারণে এদুটা যে একই জিনিষ না তা এসব গাধার বুদ্ধির রাজারা বুঝতে চাইত না। আর কিছু চামচা পারিষদ এতে তাল দিত যে দেখেছো তাদের রাজা কত সেনসেটিভ এই বলে তেল মারত।
তো বাংলাদেশে এখন হয়েছে তাই। যারা বিরোধীদের খবর স্বীকার করে কথা বলছে তাদেরকেই দায়ী করা লোকের সংখ্যা বাড়ছেই। ভগ্ন দুত-কে হত্যা করাটাই এখন বীরত্ব! আশা করি এখন এমন বীরত্ব তারা ত্যাগ করবেন!

 

আচ্ছা, আমেরিকা হেরে গেলে পরে, কী করে থাকেঃ
প্রথম কথা হল, আমেরিকা হেরে গেলে কী করে? মানে পলায় কেমনে?
তা আমরা কী আগে দেখি  নাই? মানে বলতে চাচ্ছি, এই ২০২৪ সালের আগে দেখি নাই?

যেমন ধরেম ২০১৮ সালের নির্বাচনে, যখন বিএনপিকে সাত আসন পাইতে দেওয়া হয়; বিশেষ করে সে নির্বাচনের পরে কী হয়েছিল?
সাহস করে নিজেকে জিজ্ঞাসা করেন তো দেখি, কার আশ্বাসে বিরোধীরা সেবার নির্বাচনে গেছিল? সেবার হঠাত বিরোধীরা “নির্বাচনে যাবার কৌশল” – এপথ নেয় নাই নিশ্চয়!
আমেরিকার কোন আশ্বাস ছাড়া তো সেটা হয় নাই! যেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যাই হোক! এখন হতেই পারে সে আশ্বাসের বাহক ছিল কামাল হোসেন! অথবা বিরোধীদলগুলো নিজেই যে যার মত বাড়তিভাবে আমেরিকান কর্তা বা দুতাবাসের সাথে কথা বলে নিয়েছিল! মিনিমাম এতটুকু না হলে তো সেবার নির্বাচন কৌশল ওমন হয় নাই! তা বলাই বাহুল্য!

তাহলে এখন আসেন। ঐ নির্বাচনের দিন সকালে উঠে যখন সকলে জানতে পারল যে ভোট আগের রাতে হয়ে গেছে – এমনকি জেনেছি তখনকার আমেরিকান রাষ্ট্রদুত রবার্ট মিলার [Earl R. Miller]তিনিও এর বাইরের নন! এখন বলেন তিনি কেন আম জনতার মত সকালে উঠে জানলেন? আগে কেন জানতে পারলেন না?
আসলে কথার পিঠে কথা আসে। এই রবার্ট মিলার কোথা থেকে দৃশ্যপটে আসলেন? রাষ্ট্রদুত তো ছিল মার্শা বার্ণিকাট। হা, আমাদের ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঠিক ৪২ দিন আগে আমেরিকা, বাংলাদেশে তার রাষ্ট্রদুত বদল করেছিল। বার্ণিকাটের বদলে মিলারকে এনেছিল।
আর পাঠক এটা নিশ্চয় জানেন আমেরিকা কখন মাঝপথে তার রাষ্ট্রদুত বদল করে দেয়? সরকারের রানিং পলিসি আচমকা বদলে গেলে মানে আমেরিকা বদলালে  তারা পরিস্থিতি সামলাতে সাথে রাষ্ট্রদুতও বদলে দেয়। এমনকি এর আগেও ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের ঘটক রাষ্ট্রদুত বিউটিনিস-কে ১/১১ ঘটনার ছয়মাসের মধ্যে প্রত্যাহার করে বদলে দিয়েছিল আমেরিকা!  তাহলে আমেরিকা পলাইতে নিলে তখন কী করে – এটা তো আমরা কিছু এক্সপেরিয়েন্স রাখি! অভ্যস্ত আমরা। তাহলে এখন বাস্তবতাকে মানতে না চাওয়া কেন?
বরং, এখনকার প্রধান করণীয় তো বাস্তবতা বা রিয়েলিটিকে আপন করে নিয়ে আবার উঠে দাড়াতে চান যারা তারা মুল্যায়নে বসেন নয়া রাস্তা খুজেন।

কাউকে দেবতা বানানোটা নিজেরই ভুলঃ
এধরণের বহু বাণী আমরা জানি যে – কারো উপর এত আস্থা রেখেন না যেন সে নিজেই নিজেকে দেবতা গণ্য করতে থাকে। আমাদের এমন অসচেতনাতেই আমাদের কেউ কেউ আমেরিকাকে দেবতা গণ্য করে নিয়েছিল। আর বলাই বাহুল্য সেটা বিরাট ভুল। আর তা বুঝতে আর এই ভুল কাটাতেও তাদের বেশী সময় লাগছে বা লাগবে। এর একনম্বর ভুলটা হল, আমেরিকা হল মানবাধিকার-গণতন্ত্রের রক্ষক – পাহারাদার গণ্য করার পর্যায়ে নিয়ে গেছিলাম বুঝে না বুঝে কেউ কেউ।  এর বাস্তব দিকটা বুঝতেই চাই নাই। এভাবে বুঝতেই চাই নাই যে মানবাধিকার-গণতন্ত্রের রক্ষক আমেরিকা যে নয় তা সে নিজেও জানে। সে এসেছিল এটাকে ব্যবহার করতে, এখনকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতিতে এটাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন; এতটুকুই। আমরা কী জানতাম না যে গত পনেরো বছর ধরে আমেরিকান সমর্থনেই জঙ্গী তাড়ানোর অজুহাতে হাসিনা সরকার দানব হয়েছে? এমনকি দুমাস আগেও ইইউ এর নেতারা (অন্তত তিনটা দেশ) তর্ক করেছে যে হাসিনা তো ভালই নাকি জঙ্গী তাড়িয়েছে! সুতরাই তাকে সরাতে চাই কেন আমরা? হাসিনা যে কিছু হলেই জঙ্গী তাড়ানোর নামে তার সব রাজনৈতিক-বিরোধীদের নির্মুল করে দিয়েছে এটা কী আমেরিকা-ইইউ জানত না, দেখে নাই?
কাজেই আমাদের পুরা ভার ছেড়ে দিয়ে এত আস্থা রাখা কেন? এজন্যই গত দুবছরের আমাদের মাঠের ততপরতার উপর  আমেরিকা-ইইউ এর যদি নয়া কোন সমর্থন দিয়ে থাকে সেটাকে তাদের কাফফারা হিসাবে দেখা আমাদের জন্য সবচেয়ে সঠিক হত।  যদিও বড় বিরোধী দলগুলো এপথের চেয়ে বরং পুর্ণ ভক্তি দেখিয়ে “আমরা এবিষয়ে আমেরিকান অবস্থান সমর্থন করি” ধরণের বয়ান দিয়ে গেছে আমরা দেখেছি।

তবে এমন চিন্তার ভুল বাংলাদেশে বহুদিনের। যেমন ধরেন, বাংলাদেশ সার্বভৌম কিনা! এনিয়ে সবচেয়ে বেশী করে নিজের অজ্ঞতা দেখিয়ে থাকে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলেরা। আর এদেরই প্রভাবে বেশ খানিকটা গত দুবছরের মাঠের বিএনপি।
যেমন ধরেন, জাতিসংঘকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, আচ্ছা বাংলাদেশ কী সার্বভৌম? তাতে ঐ কর্তা বলবে অবশ্য অবশ্যই। চাই কী তিনি জাতিসংঘের ম্যান্ডেট খুলেও দেখায় দিতে পারেন যে জাতিসংঘের চোখে বাংলাদেশ সার্বভৌম। কিন্তু এবার যদি সেই কর্তার কাছে আবার দাবি করেন যে আমি যে আমাদের দেশের জন্য যেকোন সার্বভৌম সিদ্ধান্ত  নিতে যে ক্ষমতা লাগবে সে ক্ষমতা আমারটা আমাকে বুঝায়ে দেন! তাহলে কী হবে?
এবার সেই কর্তা বলবে আমি বিনয়ের সাথে বলছি, আসলে সার্বভৌম নিজেই হয়ে উঠতে হয়, আপনার সার্বভৌমত্ব অন্য কেউ গুনে গুনে আপনাকে আপনার সার্বভৌমত্ব বুঝিয়ে বা ফিরে দিতে পারে না! মানে নিজেই উঠে দাড়াতে হয়।

এবারও তাই হয়েছে, আমরা বুঝেছি উল্টা। আর ওদিকে আমেরিকা চেয়েছিল আপনাদের মানবাধিকার-গণতন্ত্র ফেরত দিবার অজুহাতে এই অঞ্চলে তার কিছু এজেন্ডা ছিল ভেবেছিল তা কতটা পরিপুরণ করে নিতে পারে।  কিন্তু আপনারা সেদিকটা না খেয়াল করে যারা যারা তাকে দেবতার আসনে বসিয়ে ছিলেন তাদের এখন সেখান থেকে বের হতে একটু সময় লাগবে, লাগছে হয়ত। কিন্তু বের হতেই হবে কারণ এটাই বাস্তবতা!
আবার এখন এসব কথা তুলছি বলে ফিরে এক প্রান্ত থেকে উলটা আরেক প্রান্ত মানে চীনকে দেবতা মানতে শুরু করে দিয়েন না!

তাহলে এখন কী হবেঃ
এখন যা হবে তা সবই মূলত রুটিন। সারকথায় সবাই জানাবে হাসিনা খুবই খারাপ! অন্যজনও বলবে হা সে তো অবশ্যই খারাপ!
হাসিনা আমাদের উত্তর কোরিয়া বানায়ে ছাড়বে অথবা বাংলাদেশ একদলীয় দেশ হয়ে যাবে ইত্যাদি কথা উঠবে।
হ্যা অবশ্যই সন্দেহ নাই। কার্যত তাই হওয়া শুরুওও হয়েছে। যদিও এর কোন প্রভাব হাসিনাকে থামাবে না বা তারা থামাতে আসবেও না।

তবে এবার কথিত যে সংসদ কায়েম হল, তাতে ৬১ জনের বেশী স্বতন্ত্র হিসাবে বিজয়ের দাবিদার। এদের মধ্যে আবার ৯৫% এর মত হবেন যারা এখনও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটির সক্রিয় সদস্য। মানি সক্রিয় আওয়ামী লীগার! তাই আগামিতে আর জাতীয় পার্টি নয়। বিরোধীদল বানাবার এবারের নয়া ফর্মুলা হবে এসব স্বতন্ত্র (আধা- মূলত আওয়ামী লীগারেরা) এরাই এবার এক সংসদে বসেই সংসদীয় বিরোধী-জোট বানায় নিবে। আর এবাই বিরোধী দলের আইনি মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা দাবি করবে। এরকমই একটা ‘বিরোধীদল’ হতে যাচ্ছে খুব সম্ভবত।  এতে হাসিনাও বাঁচবে; আর কত! বার বার এই নির্বাচন আসলেই দরাদরি  আর জাপা তারা আজকাল অনেক ডাট মারে এমনকি মাঙনা বিদ্যুতকেন্দ্র রেন্টাল বিদ্যুৎ এর মালিকানা চেয়ে বসে; সেগুলো আর কত হাসিনা সহ্য করবেন?  এছাড়া এদের জন্য হাসিনাকেও ভারতের হাত-পা ধরতে হয় যেন (জাপা) কাদেরদেরকে একটু বলে বা বকে দেয়! তাই এবারই সেসবের বালাই শেষ। এখন থেকে সবাই স্বাধীন!
আর বাকিরা  মানে বিদেশিরা কি করবে? তারা সকলেই একটা করে বিবৃতি দিয়ে তাদের দায় শেষ করবে।

আমেরিকান বিবৃতিঃ
রুটিন যেভাবে বলে থাকে – মার্কিন  পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় আমরা হতাশ”। ফলে বুঝতেই পারছেন আমেরিকা এখন কী সুবিধায় আছে। মানে হল এখন উলটা দাঁড়ালো যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় আমেরিকা হতাশ! কী তামসা! সাথে বিরোধীদলের প্রতি পরামর্শও রেখেছে আমেরিকা – “সব দলের প্রতি সহিংসতাকে পরিহার করারও আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন” – কিন্তু কেন এমন পরামর্শ?
কারণ এখন আবার বিরোধীরা কোন আন্দোলন করতে গিয়ে যদি হতাহত খুনোখুনি মৃত্যু হয় তাই, আগেভাগেই আমেরিকা হাত ধুয়ে নিল যে আমেরিকা কিন্তু এতে নাই!

আরও আছে কিছু কথার কথা, নিচে দেখেনঃ

“যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ইন্দো–প্যাসিফিক) অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন
লক্ষ্যে কাজ করা, বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং দুই দেশের
জনগণের মধ্যে ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

 এর প্রথমে আছে বাইডেনের হারু প্রোগ্রাম IPS বা ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি। যেটার বা এই ব্যর্থতার নেতা স্পেশালিস্ট  ডোনাল্ড ল্যু এর গলার এই হারু-মালা চড়ায়ে দেয়া ছাড়া এর আর কোন মূল্য নাই। বাইডেনের IPS এর ঘন্টা বেজে গেছে। এই কঠিন কথাগুলো বলছি এজন্য যে একবার তাকায় দেখেন যে এগারোটা দেশ হাসিনাকে তাঁর বিজয়ে গতকালই অভিনন্দন জানিয়েছে এই প্রথম সাত রাষ্ট্র কারা?

শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানালেন যে ৭ দেশের রাষ্ট্রদূতেরাঃ
লিঙ্ক এখানে
। এই সাত দেশের মধ্যে চীন, রাশিয়া, ভুটান ও ভারত – এই চারজন হল হাসিনা বা চীনের ঘরের লোক! মানে এরা এ তো হোনাই থা ধরনের! কিন্তু বাকি তিন রাষ্ট্র ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কা এরা তো এখনকার খোদ আমেরিকার প্রত্যক্ষ স্ট্রাটেজিক প্রভাবের দেশ! যার মধ্যে আবার ফিলিপাইনো???? কি সাংঘাতিক?? কোল্ডওয়ার যুগের ফ্যাসিস্ট জেনারেল মার্কোস এর ছেলের ফিলিপাইন? মানে মার্কসের ছেলে যার বর্তমান প্রেসিডেন্ট! শুধু তাই না! এই যে একটু আগে আমরা আমেরিকান বিবৃতিতে একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ইন্দো–প্যাসিফিক) অঞ্চল প্রতিষ্ঠার খায়েস পুনঃব্যক্ত হতে দেখলাম সে খায়েসের এখনকার প্রধান রাষ্ট্রই হল এই ফিলিপাইন। ফিলিপাইনকে দিয়ে আমেরিকা নিয়মিত চীনের সঙ্গে ফিলিপাইনের সমুদ্রসীমা বিষয়ক বিবাদ জীবন্ত রেখে চলেছে। তাহলে সেই ফিলিপাইন হাসিনার সমর্থনের প্রায় এক নম্বরে সমর্থন জানাতে এসে পড়েছে, সেটা কি কারণে? তাহলে বাইডেনের আমেরিকা কোথায়? তারা ফিলিপাইনকে এলাও করল কেন???

সব আউলাইনা লাগতেছে! জেনারেল মার্কোসের ছেলে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বংবং মার্কোস [Bongbong Marcos] আমেরিকার বাইরে এসে এ’কোন খেলা!!!

আবার দেখেন বৃটেন। নির্বাচনের আগের তিনমাস আমার কান ঝালাপালা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার কর্মীদেরকে বারবার তিনদেশের নাম শুনতে হচ্ছিল – বৃটেন (যুক্তরাষ্ট্র) ফ্রান্স ও জর্মানির। এদের কথা হল, হাসিনা নাকি ভালই জঙ্গি তাড়িয়েছে তাহলে আমরা হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি চাই কেন? ইত্যাদি। আর আজ দেখেন কী তামসা! রাত না পোহাতেই আমেরিকান বিবৃতি অনুসরণে সাথে সাথে বিবৃতি বাংলাদেশের নির্বাচন গণতান্ত্রিক হয়নি: যুক্তরাজ্য! মানে এরা সবদিকেই আছে লিপ সার্ভিস নিয়ে।
আবার নিরুত্তর প্রশ্নো আছে। যেমন ধরেন এখন মানে আট জানুয়ারি তারা জানাচ্ছে  –নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। অথচ এই খবরটা আগে মানে নির্বাচনের জানায় নাই কেন? বাংলাদেশে স্ব স্ব দেশের এমবেশী কী করছিল? অথচ নির্বাচনের পরে বলাতে এসব ভুয়া পর্যবেক্ষক তারা যা করতে এসেছিল এর সবটাই পুরণ করে ফেলেছে। এমনকি গতকাল বিকেলের সাংবাদিক সম্মেলন করে আরো বিভ্রান্তি ছড়ানো পর্যন্ত! আমরা এজন্য কাকে দায়ী করব?

কিছুক্ষণ আগের, নয়া ১৯ দেশের অভিনন্দনঃ
এই সমর্থন-অভিনন্দন গুলোর অর্থ হচ্ছে যে আপনাদের দেশে একটা নির্বাচন হয়েছে কিনা আমি আগ্রহী নই। কিন্তু আমি আপনারদেশের সাথে ব্যবস্থা চাই। আর এই উনিশ দেশের মধ্যে আছে, সৌদি আরব আর জাপান। জাপান মানে? হা এটা চীনবিরোধী আমেরিকান সবচেয়ে বড় স্ট্রাটেজিক মিত্র! আমরা তাই জানতাম। অন্তত ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু বা অন্তত এশিয়ায় আমেরিকার চীন বিরোধীতার প্রশ্নে। অথচ হায় হায় তাহলে এ আমরা কী দেখছি? কেন?  আরো মেট্রো রেল বা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প!!! সব চীন পেয়ে যাবে এই ভয়ে? ভাগ পেতে?
 সৌদি নয়া তেলশোধনাগার প্রকল্প! বাকিটা পাঠক বুঝে নেন।

আসেন এখন “জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক” প্রধানঃ
এটা নতুন না যে জাতিসংঘের বইয়ে বা দলিলে যাই থাক, জাতিসংঘ গলা চড়ায় ততটা যতটা আমেরিকা তাদের চাবকায়! গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ গুম-খুন-অপহরণের রাষ্ট্র হয়ে আছে “জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক” প্রধান এর তো তাতে কোন খবর ছিল না। তবে গত একদেড় বছর আমেরিকা চাবকিয়েছে তাই তাদের কিছু চিৎকার শুনেছি। এখন “জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক” প্রধান – হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক; এটাই তার সম্ভবত শেষ চিৎকার!  যদিও জোশের ঠেলায় একটু বেশী বলে ফেলেছেন। বলেছেন, পথ পাল্টান, সত্যিকার অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের পরিবেশ তৈরি করুন”! 

কথাগুলো শুনতে খুবই ভাল লেগেছে সন্দেহ নাই। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল হাসিনাকে কী পাগলা কুত্তায় কাটছে? তিনি এসব করবেন কেন? তার ঠেকা লাগছে? তার তো কোন ঠেকা নাই!

তাহলে কী হবে, ঠিক কী বলতে চাইঃ
কথা খুব সহজ! যার মাথা ব্যাথ্যা তাকেই ওষুধ খুঁজে আনতে হবে। সেই মুরোদও লাগবে! মুরোদ যার ক্ষমতা তারই হবে, তার কাছে ফিরে আসতে পারে তা!!!
এভিন্ন সবকিছুতেই রুটিন বিবৃতিই চলতে থাকবে!

 

 

সর্বশেষ আপডেটঃ  ০৯ জানুয়ারি   ২০২৪,

গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

 

 

One thought on “আমেরিকা পলাইতে নিলে তখন কী করে

Leave a reply to mohammad fazlul Huq Cancel reply