বাইডেনের আরেক হারঃ
চীন-আমেরিকার কাছে আসা কী এখন শুরু হবে?
গৌতম দাস
০৮ এপ্রিল ২০২৪ সন্ধ্যা ০৭ঃ ৫২
https://wp.me/p1sCvy-5vk
U.S. Treasury Secretary Janet Yellen meets with Wang Weizhong, deputy party secretary and governor of Guangdong, … in southern China’s Guangdong province, April 5, 2024. (Pool/AP)
আমেরিকায় বলে ট্রেজারী সেক্রেটারি, ইংল্যান্ডেও বলে ‘চ্যান্সেলার অফ এক্সচেকার’ আর সমতুল্য ভাবনায় আমরা যাকে বলি অর্থমন্ত্রী। তবে অবশ্যই কড়া সমতুল্য বলে কিছু নাই। কারণ, কঠোর বিবেচনায় সবগুলো ধারণাই আবার আলাদা বলেও মানে ট্রেজারী সেক্রেটারি আর অর্থমন্ত্রী এক নয় বলেও প্রমাণ করা যাবে। আমরা এখানে তুলনীয় অর্থে ট্রেজারী সেক্রেটারি বলতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অর্থমন্ত্রী ধরে নিয়ে এখানে কথা বলব। বাইডেনের বর্তমান অর্থমন্ত্রীর নাম জেনেট ইয়েলেন [Janet Yellen]। নিয়মিত হুঙ্কার দেয়া বাইডেন এর এই অর্থমন্ত্রী জেনেট চীনের কাছে এক আর্জি নিয়ে চীন সফরে গেছেন ও আছেন। একলম্বা সফর এপ্রিল ৩-৯ জুড়ে [From April 3-9,…… ] চলবে এই সফর বলে জানিয়েছে চীনের অবস্থিত আমেরিকান এমবেসী। কেন এই সফর তা এককথায় বললে, আমেরিকান এক রাজ্য জর্জিয়ার সোলার বিদ্যুৎ কোম্পানীগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সোলার কোম্পানি বলতে যারা electric vehicles, solar cells and lithium batteries ইত্যাদি এসব সম্পর্কিত পণ্য উতপাদক! কেন, আর তাতে চীনের সাথে এর সম্পর্কটা কী?
জেনেটের নিজ সরকারী বিবৃতির ভাষায় বললে, ……because it could not compete against large quantities of goods that China was exporting at artificially depressed prices. সারকথাটা বাংলা করে বললে – “ চীনে উতপাদিত এই পণ্য উতপাদনের বিপুল সক্ষমতা ও তুলনামূলক কম-মুল্যের সাথে সমতুল্য আমেরিকান কোম্পানিগুলো পেরে না উঠাতে[could not compete] “ – আমেরিকান কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
পাঠককে পরিস্কার করে দেই এটা কোন নিউজ এজেন্সির রিপোর্ট থেকে কোট করি নাই। এটা জেনেটের নিজ মন্ত্রণালয় এর ওয়েব সাইটে প্রকাশিত জেনেটেরই বিবৃতি। তাই কোন ভিন্ন ব্যাখ্যা বা অর্থের ভিন্নতার সুযোগ নাই। আর, এখন আসি যে জেনেট ঠিক কী চাইতে চীনে এসেছেন? রয়টার্স লিখেছে, ...concerns are growing over the global economic fallout from China’s excess manufacturing capacity, বাংলায় সারকথা – এই পণ্যের গ্লোবাল মার্কেটে [এখানে গ্লোবাল মার্কেট বলতে মুলত আমেরিকান মার্কেটের উদ্বেগ বুঝতে হবে ] উতকন্ঠা বাড়ছে চীনের অতি-উতপাদন সক্ষমতার সাথে পারছে না বলে!!
জেনেট কী আশা নিয়ে চীন সফরেঃ
জেনেট কী আশা নিয়ে চীন সফরে তা বুঝবার সহজ পথ হল, সফরে আলোচনা শেষে তিনি কী পেলেন এনিয়ে তার নিজের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত বিবৃতি পাঠ – এটাই সবচেয়ে ভাল সোর্স। সেই বিবৃতিটা এখানে পাওয়া যাবে। এই বিবৃতির শিরোনাম – Statement from Secretary of the Treasury Janet L. Yellen on Announcement of New U.S.-China Initiatives Following Meeting -। আর ওর ভিতরের অংশ ছোট ছোট করে তুলে এনে বাংলায় পাঠককে দেখাবো এখন।
ভিতরের বক্তব্য ১ঃ
উচ্ছসিত খুশি প্রকাশ করে জেনেট ইয়েলেন বলছেন,
আমি খুবই খুশি যে আমরা (তিনি ও চীনা প্রতিনিধি) একমত হয়েছেন যে তারা দুইটা তাতপর্যময় নয়া উদ্যোগ চালু করতে পেরেছেন। এতে কী হবে? এতে “আমেরিকান শ্রমিক ও কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষা পাবে আর এতে আমেরিকান রাষ্ট্রস্বার্থ রক্ষিত হবে” – জেনেট বলছেন। সারকথায় এতে চীন আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য গ্লোবাল বাজারের কিছু অংশের ভাগ আপোষে আমেরিকাকে ছেড়ে দিবে। আর সেটাই জেনেট কথিত “two significant new initiatives”, আর এটাই এই সফরে তাঁর চীনের কাছ থেকে অর্জন!
“I am pleased that we have agreed to launch
two significant new initiatives that will advance
the interests of American workers and firms
and help protect U.S. national security.”
ভিতরের বক্তব্য ২ঃ
এক নম্বর অর্জন হল, জেনেট বলছেন যে, “এখন চীন-আমেরিকা তাদের আভ্যন্তরীণ ও গ্লোবাল অর্থনীতির ইস্যুতে এক ভারসাম্যপুর্ণ অর্থনৈতিক উন্নতি [মানে আমেরিকাকে ছুড়ে ফেলে একক চীনা উন্নতি নয়] পথে গভীর নিচ পর্যন্ত স্বার্থ-মতামত বিনিময় করতে পারব। আর এতে চীনের অতি-উতপাদন সক্ষমতায় ভারসাম্য টানাসহ সাথে আমি এখানে সুযোগ নিব যাতে আমেরিকান কারখানা আর শ্রমিকেরা চীনের কাছে থেকে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিজেদের জন্যও পায় – এদিকে চীন যেন খেয়াল রাখে। আমি বিশেষ করে কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্বেগ প্রসঙ্গে খেয়াল রাখব যেমন কিছু উতপাদন সেক্টরে সরকারী সহায়তায় চীনের অতিউতপাদন সক্ষমতার ধাক্কা যা আমাদের উপর পড়ছে আর এই ধাক্কা আমেরিকান অর্থনীতির উপর পড়ছে”।
First, we agreed that the U.S. and China will hold intensive exchanges on balanced growth
in the domestic and global economies. These exchanges will facilitate a discussion around
macroeconomic imbalances, including their connection to overcapacity, and I intend to
use this opportunity to advocate for a level playing field for American workers and firms.
I am particularly concerned about the impact of Chinese industrial overcapacity in
certain sectors as a result of government support, and the impact it could have on
the American economy.
ভিতরের বক্তব্য ৩ঃ
এটা হল জেনেটের বলা এই সফরে তাঁর দ্বিতীয় তাতপর্যপুর্ণ অর্জন প্রসঙ্গে। কী সেই অর্জন?
চীন-আমেরিকা দুদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যায়ে গ্লোবাল অর্থনীতিক নিয়ন্ত্রণ আনার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা। এখানে দুদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুঝাতেই শব্দদুটো হল, Treasury-PBOC Cooperation। যেখানে টেজারি হল জেনেটের মন্ত্রণালয় আর PBOC মানে হল পিপলস ব্যাংক অফ চায়না – চীনে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক সমতুল্য তাদের প্রতিষ্ঠানকে বুঝাতে তা PBOC নামে ডাকা হয়। এবং এই সহযোগিতা বিনিময় হবে বিদেশে অর্থপাচার বিরোধী কাজগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা।
Second, we agreed that the U.S. and China will start Joint
Treasury-PBOC Cooperation and Exchange on Anti-Money
Laundering to expand cooperation against illicit finance
and financial crime.অর্থাৎ এই পুরা সফরটার একটাই উদ্দেশ্য ছিল – সেটা হল, চীন-আমেরিকান সহযোগিতা, বিরোধ না। কিন্তু সেটা এত দেরিতে এই বোধোদয় এত দেরিতে কেন?
চীন-আমেরিকান বিবাদ কী ও কেনঃ
শুরুতে এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি গত ৩ এপ্রিল ২০২৪ মানে জেনেটের সফর শুরুর একই দিনে তবে কিছু আগেই, বাইডেন-শি এক গুরুত্বপুর্ণ টেলিফোন কথোপকথন করেছেন। শি মানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং [Xi Jinping]। এই কথোপকথন নিয়ে আগ্রহিরা এই দুটা রিপোর্ট দেখতে পারেন। APnews আর REUTERS এদুইটা হল বিখ্যাত তিন গ্লোবাল নিউজ এজেন্সীর অন্যতম দুই কর্ণাধার। এটা পাঠক যারা এই প্রসঙ্গের গভীরে ঢুকতে চান তাদের জন্য। তবে সারকথাটা বলে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার চারবছরের ক্ষমতা-আয়ুর তিনবছর তিন মাস পার করে ফেলেছেন; এছাড়া আর ছয়মাস (নভেম্বর ২০২৪ এর প্রথম সপ্তাহে) এর মধ্যে তাকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে পাস দেখাতে হবে। আর মিডিয়ায় জোর অনুমান পরিস্থিতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে যাবে। সে যাই হোক এই সময়কালে বাইডেন গড়ে বছরে একবারের কিছু বেশী হয়ত চীনা প্রেসিডেন্টের শি সাথে এমন ফোনালাপ করেছেন! অর্থাৎ বাইডেনের নীতি ছিল চীন-মার্কিন অসহযোগিতা। এর পিছনের মূল কারণ কী?
এটা পালাবদলের যুগ চলছেঃ
এর পিছনের মূল কারণ বলতে প্রথমে যা আমাদেরকে বুঝতে হবে এটা পালাবদলের যুগে প্রবেশ করেছি আমরা। এটা পালাবদলের যুগ মানে হল, গত ১৯৪৫ সাল থেকে আমেরিকা সেই যে গ্লোবাল নেতা হয়ে বসেছিল সেটা এখন ফুরিয়ে আসছে আর বিপরীতে চীন সেই আসনে গ্লোবাল নেতা হয়ে উঠে আসতে চাইছে। এখানে গ্লোবাল নেতা বলতে – কোন দেশের অর্থনীতি এখন সবাইকে ছাপিয়ে সারপ্লাস বা নয়া বাড়তিমূল্য নিজ অর্থনীতি জমা করতে পারছে – যার সোজা অর্থ হল অন্য দেশের অর্থনীতিকে ঋণ-বিনিয়োগ দিবার নেতা হয়ে উঠছে এরই হিসাবের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলা। আর বলাই বাহুল্য অন্যদেশকে বিশেষ করে আমাদের মত দেশকে অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় সুদহীন বিনিয়োগ দেয়া আর সাথে ডাইরেক্ট বিনিয়োগ হিসাবে বাণিজ্যিক পুঁজি ধার দেয়া – একাজে এখন সবার উপরে সক্ষম রাষ্ট্র হল চীন। আমাদের মত কলোনি দখল হয়ে থাকা দেশ থেকে দখলদারেরা ২০০ বছরের সারপ্লাস সব লুটে নেয়া হয়েছিল। ফলে এই ঘাটতি যে রাষ্ট্র মিটিয়ে নয়া আশার আলও যে এগিয়ে আসে সেই চীনের প্রভাব আমাদের উপর থাকবেই! এটাকে ইতিবাচক দেখা হবে, স্বাভাবিক! এটা পন্থি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না – যে আপনি কাউকে বলবেন যে উনি আমেরিকা ছেড়ে চীন-পন্থি বলেই নাকি তিনি দেশে চীনা বিনিয়োগ-সহযোগিতাকে ইতিবাচক দেখছেন। সবচেয়ে বড় কথা গত প্রায় ৮০ বছর এই ভুমিকাতেই আমেরিকা গ্লোবাল নেতা ছিল!
এককথায় বললে, আমাদের মত সব গরীব খাতক-দেশকে অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় সুদহীন বিনিয়োগ [development loan] আর সাথে ডাইরেক্ট বিনিয়োগ [FDI] যে দাতা দেশ দিতে পারে সেই-ই গ্লোবাল নেতা ধারণাটার সারকথা!
উলটা দিকে চীনের এই উত্থান এটা ততই আমেরিকার গ্লোবাল নেতা স্টাটাস ও সক্ষমতা শুকিয়ে যেতে থাকছে ও থাকবে এটা স্বাভাবিক। এককালের এমন গ্লোবাল নেতা বৃটিশ সরকারেরও মুরোদ এভাবে শুকিয়েছিল বলে আমেরিকার উত্থান হয়েছিল।
কিন্তু এটা আমেরিকার কোন প্রেসিদেন্ট (বিশেষ করে ২০০০ সালের পরের কোন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট) শেষে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নাই। ভেবেছেন তাদের সামরিক সক্ষমতা ও গ্লোবাল প্রতিষ্ঠান সমুহকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা তো অটুট আছে – এই ভাবনা থেকে। তবে একটা লাইন টেনে বলা যায় ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকান প্রতিটা প্রেসিডেন্ট যে নীতি অনুসরণ করেছেন তা হল, চীনের কাছে যাওয়া আর একটা না একটা সেক্টরে নিজের অর্থনীতির জন্য বাজার ছাড় চীনের থেকে নিয়ে এসেছেন। সবচেয়ে বড় কথা চীনও এই সহযোগিতা করে গেছে। সবচেয়ে বেশী এখন সহযোগিতা নিয়ে এসেছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা (দুই টার্মের ওবামা ২০০৯-২০১৬ সময়কালে)। আর এটাই এই একই চীনা সহযোগিতা টোকাতে এখন বের হয়েছে এখনকার প্রেসিডেন্ট বাইদেন।
এমনকি ডনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথম বছরও একই নীতিতে চীনা বাজার সহযোগিতা টোকানো – তা এনেছেন। কিন্তু পরের বছর থেকে ট্রাম্পের নয়া রাস্তা হয়ে যায় অসহযোগিতা – মানে সংঘাতে মোকাবিলার পথে যাওয়া। শুরু হয় আমেরিকায় চীনা আমদানি নানা পণ্যের উপর ইচ্ছামত কর আরোপ – এটা ছিল ২৫% থেকে ৬৬% পর্যন্ত করারোপ। যদিও ট্রাম্পের শপথের পর থেকে যে নীতি ঘোষণা করেছিলেন তিনি তা হল অর্থনীতির গ্লোবালাইজেশন আর নয়। মানে ১৯৮০ সাল থেকে অর্থনীতির গ্লোবালাইজেশন এর নেতা ছিল খোদ আমেরিকা। এটা ছিল তথাকথিত অর্থনীতিক জাতিবাদ – এই মৃতপ্রায় নীতির বিপরীতে অর্থনীতির গ্লোবালাইজেশন এর পথে দুনিয়াকে সঠিকভাবেই ঠেলে দেওয়া। অথচ ট্রাম্পই প্রথম ২০১৭ সালে ক্ষমতার শপথের পর থেকেই পুরানা অর্থনীতিক জাতিবাদ কে কতটা ফিরিয়ে আনা যায় এই ব্যর্থ পথে তিনি ফিরে রওনা দিয়েছিলেন। যদিও এর মূলধারা হোয়াইট সুপ্রিমিজম [সাদা ককেশীয়রাই শ্রেষ্ঠ জাতি] ধারণা। একি কারণে, তিনি আমেরিকার একাই ন্যাটো [NATO] এর ৯৫% খ্রচ যোগানো ত্যাগ করার পক্ষে। তিনি কোন গ্লোবাল নেতা থাকার ব্যয়ভার বইতে রাজি ছিলেন না।
বিপরীতে বাইডেনও তাই তবে একটু ঘুরিয়ে ভিন্ন পথে।
যেমন চীনা পন্যে বাড়তু করারোপ যা ট্রাম্প করে গেছিলেন তিনি তা বন্ধ না করে সেটাই চালিয়ে গেছেন, এখনও চালু আছে। আর বাইডেনও হোয়াইট সুপ্রিমিষ্ট নীতি নিয়েছেন। তবে তফাত হল, ট্রাম্প আমেরিকার ভিতরের সাদা বাদ বাদামি বা কালো লেবার তাড়িয়ে দিবার পক্ষপাতি – মেক্সিকো বর্ডার পারলে পুরা ল্যাটিন আমেরিকান বর্ডার বন্ধ করতে চান। বিপরীতে বাইডেন দেশের বাইরে হোয়াইট সুপ্রিমিষ্ট নীতি অনুসরণ করে গেছেন। সারকথায়, দুনিয়ায় সাদা ককেশীয় শাসন কলোনি দখলদারের হাতে যার বয়েস হয় প্রায় পাচশ বছর। তিনি তাই ইইউ-কে সাথে এই সাদা শাসন আরো চালিয়ে যেতে চান। কেন? চীন গ্লোবাল নেতার আসনে বসে যাওয়া মানে পশ্চিমা সাদা শ্রেষ্ঠত্ব এর শাসনের দিনের শেষ হবে। আর এখান থেকে ইউক্রেনকে সামনে রেখে রাশিয়ার সাথে সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের লড়াই এর শুরু। তবে তাদের ময়ল আগ্রহ ছিল রাশিয়ার অবস্থা খারাপ হলে চীন তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসে সামরিকভাবে সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদের কাছে হেরে যাবে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে চীন গ্লোবাল নেতা হয়ে উঠলেও এই কৌশলে চীন হেরে লোপাট হয়ে যাবে আর দুনিয়া সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদের শাসন টিকে যাবে – চলতে থাকবে। যদিও চীন দূরে থেকেই রাশিয়াকে সহযগিতা দিয়্বে গেছে। আর বাইডেনের ডলার অবরোধ কাজ করে নাই। উলটা ইন্ডিয়া রাশিয়াত সস্তা তেল নিয়ে রপ্তানিকারক হয়ে অর্থ লুটেছে আর ও দিকে রাশিয়াও বিদেশি মুদ্রার সমস্যায় না পরে উলটা রিজার্ভ বাড়িয়েছে সোনা কিনেছে।
বাইডেনের টানা তিন বছর ছিল তথাকথিত গণতন্ত্র-মানবাধিকার এর পররাষ্ট্রনীতি আর সাথে ডলার অবরোধ সহ নানান ধরণেরস্যাংশন আরোপ করার নীতি। তিনি দাবি করে এসেছিলেন আমেরিকার এসব অস্ত্র লুকানো অবস্থায় পড়ে আছে আর তিনি এসব অস্ত্র ব্যবহার করে দুনিয়া থেকে চীনা প্রভাব কাটাবেন।
এরই সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র ও প্রদর্শন স্থল ছিল সাউথ চায়না সি – অন্যভাষায় বললে ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাতেজি দিয়ে চীনকে একঘরে করবার খায়েস। যেমন বাংলাদেশকেই চীনা বিনিয়গসহ সব ধরণের প্রভাব মুক্ত করা এর লক্ষ্য ছিল।
কিন্তু গত সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে আমেরিকা আমাদেরকে পথে ফেলে চলে যায় শুধু তাই না। এবার আবার বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে যায়।
বাইডেন এখন চীনের সাথে ফিরে সহযোগিতার লাইনেঃ
আর সব হারিয়ে অর্জন-শুণ্য বাইডেন এখন চীনের সাথে ফিরে সহযোগিতার লাইনে!!!! নিজ কারখানা-কোম্পানি বাঁচাতে এখন চীনের কাছেই হাত পাতা।
সগযোগিতা অবশ্যই সঠিক ও বিনা-যুদ্ধের পথে স্বার্থ-দ্বন্দ্ব এর মোমাংসার পথ!! তার মানে বাইডেনের ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাতেজি করে কোন লাভ হয় নাই। ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি একটা পুরাটাই ভুল পথ ভুল সিদ্ধান্ত ছিল!!! সবটাই গচ্চা গেছে পানিতে। ডোনাল্ড ল্যু এই কথিত মহান ব্যক্তিত্বকে তাহলে আসলে বাইডেনের দরকার ছিল না, দুনিয়ারও না। উনি তাহলে একতা খামোখা ছিলেন!!!! নাকি তাই তো?
তাহলে আমাদের আম-স্বার্থ, রাষ্টড় রাজনীতি ও অধিকার এসবের যে ক্ষতি বাইডেন করে গেলেন এর দায় কে নিবে এখন???
এসবের সোজা মানে এক ভারত ছাড়া দুনিয়াতে কেউ আর আমেরিকাকে বিশ্বাস করবে না!
এরপরেও আবার বাইডেনের আয়ূ আর মাত্র ছয় মাস। যদি ট্রাম্প বাবাজি জিতে আসেন তো সেক্ষেত্রে কী হবে?
কথা একটাই, আমাদের রাস্তা আমাদের স্বার্থ নিয়ে আমাদেরকেই ভেবে-চিন্তে আর সর্বোপরি শত্রু-বন্ধু বুঝে ফারাক করে উঠে দাঁড়াতে হবে!
লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
[এই লেখা কোন নিউজ নয়, ব্যক্তির নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্লেষণ মাত্র। ফলে পাঠকের এ’লেখা পড়ে কিছুই বহন করা বা মান্য করার বাধ্যবাধকতা নাই। কেবল জানলেন যে এমন একটা মতামত আছে!]
আপডেটঃ মার্চ ২০২৪ সন্ধ্যা
আপডেটঃ মার্চ ২০২৪ রাত

