চীনা হুয়াওয়ের ৫জিঃ আমেরিকার কঠিন পরিণতির ইঙ্গিত!
গৌতম দাস
প্রথম প্রিন্টেড প্রকাশঃ নয়া দিগন্ত, ঈদুল ফিতর ঈদ সংখ্যা, মে ২০১৯
প্রথম অনলাইন প্রকাশঃ ০৪ জুলাই, ২০১৯
[এই লেখাটা গত ঈদে মানে, গত মে মাসে ঈদুল ফিতরের ঈদ সংখ্যা নয়া দিগন্ত পত্রিকায় প্রিন্টেড ভার্সান হিসাবে ছাপা হয়েছিল। সে হিসাবে এর প্রথম প্রিন্টেড প্রকাশঃ নয়া দিগন্ত, ঈদ সংখ্যা, মে ২০১৯। কিন্তু এর কোন অন লাইন ভার্সান তারা করে নাই। সেকারণে ঐ ছাপা ভার্সানেরই হুবহু সফট কপি, (নতুন কোন এডিট করা ছাড়াই) এখানে নতুন করে আনা হল। সাথে ছাপা ভার্সানের প্রথম পৃষ্ঠার একটা স্কান কপি ছবি আকারে উপরে সাটানো হল। লেখাটা যখন শেষ করে জমা দিয়েছিলাম, সেটা ছিল ১ মে ২০১৯।
ফলে মে মাসের পর থেকে ফোনের ৫জি টেকনোলজি ইস্যুতে চীন ও আমেরিকার গভীর স্বার্থ সংঘাত আর বিপরীতে চীন ও ইউরোপের পারস্পরিক স্বার্থ খাপ খাইয়ে নেয়ার সম্পর্ক সংক্রান্ত যা কিছু ডেভেলবমেন্ট ঘটেছে তা এখানে আপডেট করা নাই। সেসব নিয়ে আলাদা আবার লিখতে হবে। তবে ৫জি নিয়ে চীন-আমেরিকার সংঘাত এখনও চলছে।হুয়াওয়ে কোম্পানির প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা সাবরিনা মেঙ’ কে আমেরিকার অনুরোধে কানাডা গ্রেফতার করেছিল, সাত মাস আগে। কানাডা-আমেরিকার মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি আছে। তাই আমেরিকায় দায়ের করা এক মামলার অভিযোগ সাবরিনার কানাডা সফরের সময় যেন তাঁকে গ্রেফতার করে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়া হয় – সেই আবেদন আগেই কানাডাকে জানিয়ে রেখেছিল আমেরিকা। তাই ঐ কর্মকর্তা সাবরিনার কানাডা ট্রানজিট সফরে থাকার সময়ে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল কানাডা; যাতে কানাডারই আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কানাডা সরকার তাঁকে আমেরিকার হাতে তুলে দিতে পারে। বর্তমানে সাবরিনা জামিনে তবে কানাডা ত্যাগ করতে পারবে না, এই শর্তে যে মামলা না মিটে যাওয়া অব্দি। আর স্থানীয় থানায় রিপোর্ট, সাথে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে ও মামলা মোকাবিলা করে যেতে হবে। ইতোমধ্যে চীনা ৫জি টেকনোলজি দুনিয়া কাঁপিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।]
চীনা ইন্ডাস্টিইয়াল টেকনোলজি কোন পর্যায়ে আছেঃ
চীনা শিল্প-পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত টেকনোলজি কেমন পর্যায়ের, কেমন মানসম্পন্ন অথবা কোন স্তরে আছে চীনা টেক-শিল্প? এই প্রসঙ্গে চীনা টেকের মান যেন খুবই নিচে এই অনুমানের ওপর দাঁড়িয়ে চীনকে ব্যঙ্গ করা, নিচা দেখানো বা খোঁটা দিয়ে কথা বলা এমন লোকের কোনো অভাব নেই। গ্লোবাল অর্থনীতিতে মানে গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের নেতৃত্ব এখন বাঁক পরিবর্তনের পর্যায়ে আছে, চলছে। এমনই আমাদের চলতি দুনিয়ায় চীনা উত্থানকে, সঠিক অথবা বেঠিকভাবে, যারা নিজ নিজ রাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের পরাজয় হিসেবে দেখে থাকে ( ফলে অনেক সময় এতে তাদের অপ্রয়োজনীয় ঈর্ষা চেপে রাখতে পারে না, প্রকাশ হয়ে পড়ে) এমন রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষে আছে ভারত। কিন্তু মজার কথা হচ্ছে, তবু চীন-ভারতের সম্পর্কের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন যথেষ্ট গভীর।
ভারতীয় অর্থনীতিতে বিদেশী বিনিয়োগ তা, অবকাঠামোগত বিনিয়োগ অথবা বাণিজ্যিক বিনিয়োগ (মানে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট, FDI) এই দুই অর্থেই ভারতের অর্থনীতিতে চীনা বিনিয়োগ এখন এক বিরাট ভূমিকা ও অবদান নিয়ে হাজির আছে। যেমন ব্রিকস (BRICS) উদ্যোগ হল, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের এক বিকল্প গড়তে চীনের সাথে মোট পাঁচ রাষ্ট্রের এক উদ্যোগের নাম, চীন যেখানে মূল উদ্যোক্তা। ভারতও অবশ্যই এই উদ্যোগের সাথে আছে, শুধু তাই না। এই ব্রিকস উদ্যোগের ভেতরে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB) নামে আর এক বিকল্প-বিশ্বব্যাংকও চালু আছে। কাজ ও তৎপরতার ধরনের দিক থেকে এটাও এআইআইবি (AIIB) নামে চীনের নেতৃত্বে যে মূল বিকল্প-বিশ্বব্যাংক আছে (যেখানে চীনের ৩০% মালিকানার পরই ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মালিকানা ১০%) এরও বাইরের প্রতিষ্ঠান NDB, আর তা আর এক চীনা বিকল্প-বিশ্বব্যাংক অবশ্যই। যদিও মনে রাখতে হবে, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB) -এটা এআইআইবি (AIIB) নামে চীনের মূল বিকল্প-বিশ্বব্যাংক থেকে একেবারেই আলাদা এক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বিনিয়োগ সক্ষমতার দিক থেকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তুলনায় খুবই ছোট। তবে এই দুই বিকল্প-ব্যাংকের মধ্যে মূল ফারাক বুঝতে গেলে এটা মনে রাখলেই চলে যে, আসলে ব্রিকস উদ্যোগের নামে চলা যেকোনো তৎপরতা তা কেবল চীন, রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা এই পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ; তাতে সে তৎপরতা এই (NDB) ব্যাংকের সুবিধাদির গ্রহীতা বা দাতার যে ভূমিকারই হোক না কেন। মানে পাঁচের বাইরের আর কেউ এর সদস্য না, ফলে ব্যাংকের সুবিধাদি তাদের বাইরের কেউ পাবেও না। আবার নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ দেয়া হয়েছে ভারতকে আর সব মিলিয়ে বর্তমান বাস্তবতা এই ব্যাংকের একমাত্র বিনিয়োগ ‘খাতক’ হল ভারত। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কেবল পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের বিপরীতে তাহলে এআইআইবি ব্যাংকের সাথে এর মূল ফারাকটা হল, সর্বশেষ লেবাননকে সাথে ধরলে এআইআইবি ব্যাংকের মোট সদস্য ৮৭ রাষ্ট্র, যারা সবাই এআইআইবি-এর সুবিধাদি পাওয়ার যোগ্য। সার কথায় বোঝা গেল চীনের সাথে ভারতের গাঁটছড়া ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা অনেক গভীরের, উপরে উপরে তা যতই রেষারেষির বলে দেখাক না কেন।
কিন্তু তবু ভারতের কূটনীতিতে বাস্তব কৌশলগত তৎপরতাগুলোর সবটাই চীনবিরোধী করে সাজানো। এমনকি সম্প্রতি অভ্যন্তরীণভাবে বিজেপির উদ্যোগের চীনা-পণ্যবিরোধী এক প্রপাগান্ডাও চালু হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আরো আছে। যেমন ভারতের বাংলার বাইরে, উত্তরে হিন্দি-বলয়ে বা দক্ষিণে দাক্ষিণাত্য রাজ্যগুলোতে মূল ধর্মীয়-সামাজিক উৎসব হিসেবে দেওয়ালি পালিত হতে দেখা যায়। বাংলায় যেটাকে আমরা কালীপূজা নামকরণ হয়ে পালিত হতে দেখি, এটাই সেই দেওয়ালি। যদিও বাংলার মূল ধর্মীয়-সামাজিক উৎসব হয়ে আছে আবার দুর্গাপূজা। আর কালীপূজা বাংলাতেও আছে, তবে সেটা সেকেন্ডারি উৎসব। এখন এই দেওয়ালিকে বাণিজ্য ও বাজারের দিক থেকে দেখলে, ভারতে এই প্রধান উৎসবে বাজি বা পটকার বাজারটা বিশাল, প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মত। এ ছাড়া এই উৎসবের সাজসজ্জার আলোকবাতি, খেলনা বা আনুষঙ্গিক আইটেমসহ ধরলে এমন মোট আমদানি বাজার বছরে ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের। ওদিকে চীন থেকে ভারতের বাজারে বছরে আমদানির মোট পরিমাণ ৭০ বিলিয়নের ওপরে। আর এই আমদানি পণ্যগুলোর মধ্যে বিশেষত বাজি-পটকা এতদিন যা ভারতে স্থানীয়ভাবে তৈরি হত, বিশেষ করে তামিলনাড়ু–র শিবাকাসি শহরে (ভারতের ৯৫ ভাগ পটকা এখানে তৈরি হয়, আর ১০ লাখের মতো লোক কাজ করে) তৈরি পটকার দখলে ছিল এই বাজার। কিন্তু এক্ষেত্রে চীনা পণ্য হল এখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিশেষ করে দামের কারণে। সস্তা চীনা পণ্যের ঠেলায় স্বভাবতই ভারতীয় উৎপাদকরা অস্থির ও নাখোশ। তাই গত ২০১৬ সাল থেকে অভ্যন্তরীণভাবে এই চীনা-পণ্যবিরোধী একটা ন্যাশনালিজমের বয়ান তৈরি হতে দেখা গেছিল, যাতে প্রধান তাল দেয়া অবস্থানটা বিজেপির।
মূল বিষয়টা হল, আমাদের মতো দেশে ছোটখাটো সমস্ত পণ্য, যা আগে নিজ নিজ দেশে তৈরি করতে সক্ষমতা ছিল ফলে বাজারও নিজ দখলে ছিল সেই সব বাজারে এখন চীনা সস্তা পণ্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে হাজির হয়ে গিয়েছে। এর পেছনের প্রধান কারণ “বাল্ক (bulk) প্রডাকশন লাইন”। কোনো পণ্য উৎপাদনের সময় একেকটা ব্যাচে তা তৈরি হয়। আমাদের মতো দেশের কারখানায় ট্রাডিশনাল উৎপাদনের চেয়ে চীনা উৎপাদনের আলাদা বৈশিষ্ট্য হল সেখানে একেকটা উৎপাদন ব্যাচ আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ লম্বা শুধু তাই না, এক সাথে বসা ব্যাচের সংখ্যাও কয়েকগুণ বেশি। এতে উৎপাদকের সুবিধা হল কাঁচামাল কেনার সময় বিপুল ক্রয়ের সুবিধায় দামে কম পাওয়াসহ পণ্য তৈরির ব্যাচ সাইজের কারণে বহু পর্যায়েই উৎপাদনের ওভারহেড খরচ কমিয়ে ফেলতে পারে। আর এটা এক বাল্ক বা বিপুল সাইজের উৎপাদনের কারণে তাতে চীনা পণ্যমূল্য আমাদের মত দেশের চেয়ে অনেক সস্তা, বিশেষ করে যেমন প্লাস্টিক পণ্যে যা কখনো একেবারে অর্ধেক হয়ে যায়। প্লাস্টিকের সামান্য টুথব্রাশ উৎপাদনের বেলায় চীনা সস্তা দামের ঠেলায় আমাদের উতপাদন সক্ষমতা সঙ্কুচিত হয়ে গেছে।
এরই প্রতিক্রিয়ায় ভারত বা আমাদের মতো দেশের ছোট উৎপাদকেরা চীনবিরোধী ‘ন্যাশনালিস্ট’ হওয়ার চেষ্টা করে, ন্যাশনালিজমের ‘বয়ান’ এর গাঁথুনি খাড়া করার চেষ্টা করে থাকে। যদিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তাদের আবার মোকাবিলার ভিন্ন অভিজ্ঞতা হল, এসব নাকে-কাঁদুনি “ন্যাশনালিস্ট” হয়ে থাকা বেকার; এরচেয়ে বরং কাজের কিছু পদক্ষেপ তারা নিতে পারে। যেমন প্রাণ গ্রুপ; যেসব প্লাস্টিক পণ্যে, অন্তত মূল্যের দিক থেকে চীনাদের সাথে পারা যাবে না অপ্রতিদ্বন্দ্বী, সেসব পণ্য ‘প্রাণ’ নিজেই চীন থেকে আমদানিকারক হয়ে এনে বিক্রি করতে শুরু করেছে। আর নিজ প্রডাকশন লাইন বদলে অন্য প্রডাকশনে নিয়ে গিয়েছে, অনুমান করা যায়।
যদিও ন্যাশনালিজমের বুঝ থেকে “দেশে ব্যবহার্য সব জিনিস নিজেদেরই বানাতে পারতে হবে” এটা কতটা সঠিক বুঝ, কাজ হয় কি না ও বাস্তবোচিত কি না অথবা তা আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা এমন “অর্থনৈতিক ন্যাশনালিজম” এর পালটা-চিন্তা হাজির আছে। অথচ পরীক্ষা করা হয়নি যে এটা আদৌ অর্থপূর্ণ পথ কি না? ভায়াবাল কি না? নাকি এটা জনগোষ্ঠীর সম্পদ ও শ্রমঘণ্টার অপচয় বা টেকনোলজি ইত্যাদিতে পিছিয়ে পড়ে থাকা হবে? যদিও আবেগের ন্যাশনালিজম বহু আগেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন এই কঠিন বাস্তব প্রশ্নগুলো একালে আরো সামনে এসে গেছে, স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। তবুও বারবার সহজেই সস্তা সুড়সুড়ি তৈরি করা যায় বলে দেখা যাচ্ছে ‘অর্থনৈতিক ন্যাশনালিজম’ থেকেই যাচ্ছে, জাগিয়ে উঠানো হচ্ছে।
ভারতের রাষ্ট্র ও রাজনীতি উগ্র ন্যাশনালিস্ট, এটাই তার মূল ধারা। ওদিকে আবার চীন-ভারতের অমীমাংসিত সীমান্ত আর তা থেকে সামরিক সঙ্ঘাতের পুরানা (১৯৬২) স্মৃতি বা নতুন করে কিছু ঘটার একটা বাস্তবতা আছে বলে মূলত এসবকে পুঁজি করে ভারতে ‘অর্থনৈতিক ন্যাশনালিজম’ এর উসকানি ধারা খুবই প্রবল। বিশেষ করে ছোট উৎপাদকেরা চীনবিরোধী বয়ান সহজেই খাড়া করতে পারে। এবং করে লড়তে থাকে। সেখান থেকেই বয়ানের ডালপালা গজায় যে চীনা পণ্যের মান, এর টেকের মান খুবই খারাপ, ঠুনকো ইত্যাদি ইত্যাদি!
তবে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, লো-টেকনোলজি লাগে এমন পণ্যে – চীনারা পণ্য মান খারাপ করে সস্তা দামে বাজার দখল করে এগোতে হবে – এটাই তাদের সবকালের এগোনোর পথ ও পরিকল্পনা – এমন বুঝের কোনো অনুমান করা ভুল হবে। তাহলে কিভাবে দেখতে হবে? আসলে তাদের মূল বিষয় ছিল আশির দশকে চীনা ক্যাপিটালিজম উত্থানের শুরুর দিকের নিজ সস্তা শ্রমের সুবিধাকে কাজে লাগানো আর “বাল্ক প্রডাকশন লাইনে” উৎপাদন করে বাজারে নেতা হওয়া। যেমন আরেক উদাহরণ, আমাদের মত দেশে কম্পিউটার পণ্য সস্তায় পাওয়ার পেছনে চীনের দুই উতপাদন সূত্র – সস্তা শ্রম ও বাল্ক প্রডাকশন – হল মূল কারণ। আবার যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে মান একটু গুরুত্বপূর্ণ সেই বাজারটা চীনারা তাইওয়ান, ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুরের (একালে ইন্দোনেশিয়া বা ফিলিপাইনের) হাতে ছেড়ে দিয়েছে বা বাধ্য হয়েছেও বলতে পারি।
ইদানীং চীনা উৎপাদকদের মধ্যে আর এক আওয়াজ জোরদার হচ্ছে যে, চীনা শ্রম আর সস্তা নয়, মানে ন্যূনতম মজুরি চোখে পড়ার মত অনেক বেড়ে গেছে। ফলে আগের সেই বাল্ক প্রডাকশন কোম্পানি এখন চীন ছেড়ে সস্তা শ্রমের কোন ভিন দেশে কারখানা স্থানান্তর করতে চায়, এটা বড় ইস্যু এখন চীনে।
আবার এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে চীন নিজের এমন পরিচয় চায় না যে দেশ-বিদেশে মানুষ চীনকে ‘লো-টেকনোলজি’ পণ্যের দেশ হিসেবে চিনুক অথবা এটাই তার ভবিষ্যৎ পরিচিতি হয়ে দাঁড়াক। ফলে যেসব হাই-টেকনোলজি চীনের করায়ত্বে নাই তা আনতে পশ্চিম থেকে কোম্পানিগুলোকে জয়েন্ট ভেঞ্চারের কোম্পানি হিসেবে চীনে আনার তৎপরতাও প্রবল হয়েছে। বিশেষ করে যেমন গাড়ি তৈরির শিল্পে। পশ্চিমের কোম্পানিগুলোও আসতে খুবই আগ্রহী কারণ পশ্চিমের দিনকে দিন বাজার সঙ্কোচনের বিপরীতে চীনে বাজার উদ্যমী ও সচল (vibrent) বলে।
এভাবে লো আর হাইটেকের ছাড়াও আর এক দিকের চীনা কৌশল হল কোন একটা উতপাদন খাতে লেটেস্ট টেকের শীর্ষ নেতা হওয়া। তেমন সেই খাত হল মোবাইল টেলিফোন। তারবিহীন স্মার্ট টেকনোলজি। চীনা এমন দুই পাইওনিয়ার কোম্পানি হল, বেসরকারি হুয়াওয়ে (HUAWEI) ও সরকারি জেডটিই (ZTE)।
মোবাইল টেকনোলজির ব্যবসা ফলে এর উৎপাদনের পুরাটা বলতে গেলে তা মূল তিন ধরণের উতপাদক কোম্পানিতে বিভক্ত। এক হল, আমরা ব্যবহারকারী পর্যায়ের উতপাদক মানে, ফোন সেটের (mobile phone set) উৎপাদন ও বাজারজাত করা। দুই হল, আমাদের গ্রামীণ বা বাংলালিঙ্কের মত কোম্পানিগুলো; যাদের ভূমিকা হল ব্যবহারকারিদের ফোনের সেটে – নেটওয়ার্ক কানেকশনসহ ফোনের সার্ভিস জোগান দেয়া। এদেরকে ক্যারিয়ার (carrier) কোম্পানিও বলে থাকে অনেকে। আর তৃতীয় ধরণটা হল, আর এক টেক উৎপাদক যারা গ্রামীণদের মত কোম্পানির জন্য বেজ যন্ত্রপাতি উৎপাদন করে তা সরবরাহ করে থাকে। স্বভাবতই এসব বিপুল যন্ত্রপাতি সাধারণ মানুষ পর্যায়ে সরাসরি ব্যবহার করার জন্য না। তবে এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেই ক্যারিয়ার কোম্পানিগুলো পাবলিককে সার্ভিস জুুগিয়ে থাকে, তাই পাবলিক এই টেকনোলজির পরোক্ষ ব্যবহারকারী। এ কারণে এমন যন্ত্রপাতিকে ‘ব্যাকঅ্যান্ড’ (back-end) টেক বা পেছন-ঘরে লাগে এমন যন্ত্রপাতি বলে। অর্থাৎ গ্রামীণের মত কোম্পানিগুলোই ব্যাকঅ্যান্ড যন্ত্রপাতির মূল ক্রেতা বা গ্রাহক। আর এটা ব্যবহার করেই সাধারণ মানুষকে তারা নানান ফোন সার্ভিস যুগিয়ে থাকে।
এই মোবাইল টেকনোলজিতে চীন শীর্ষপর্যায়ের টেক-উৎপাদন ও সরবরাহকারী পরিচয় হাসিল করে ফেলেছে। টেকনোলজিতে উঁচুমান – এই পরিচয় চীনা পণ্যে লাগানোর ক্ষেত্রে – ফোন কোম্পানির নাম এখন হুয়াওয়ে (HUAWEI)। তবে এই কোম্পানি ফোনসেট এবং ব্যাকঅ্যান্ডের যন্ত্রপাতি – দুটোই উৎপাদন করে থাকে। তাই সাধারণ মানুষের কাছেও ‘হুয়াওয়ে’ নামটা পৌঁছে গেছে ও পরিচিত। হুয়াওয়ে ব্যক্তি-মালিকানাধীন কোম্পানি, তা সত্ত্বেও কমিউনিস্ট কায়দায় এর কর্মচারীরাও প্রত্যেকে স্বল্প হলেও সবাই শেয়ারহোল্ডার মালিক। এ ছাড়া মালিকেরা বা পরিচালক বোর্ডের মেম্বারেরা রোটেশনালি মানে ঘুরে ঘুরে সবাই নির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকেন। এমন অনেক কিছুই এর নতুন বা ভিন্ন। এ ছাড়া এই কোম্পানি চীনা সরকাররেও আদরের চোখের মনির মত। কারণ এটা সামগ্রিকভাবে চীনা টেকনোলজিক্যাল উচ্চতা কত, তা কতটা ওপরে উঠেছে এর চিহ্ন সেট করেছে।
আর ঠিক ততটাই যেন এটা আমেরিকার চক্ষুশূল। অনেকগুলো কারণে। প্রথমত কী দিয়ে বুঝা যাবে হুয়াওয়ে উঁচুমানের টেকনোলজির? মোবাইলে টেকনোলজিতে ওয়ান-জি, টু-জি করে লেটেস্ট হলো ফাইভ-জি। মোবাইলে টেক্সট (লেখা), ভয়েজ (শব্দ) আর ভিডিও (ছবি) পাঠানো – এই তিনটাই আদান-প্রদান করা যায় কি না; আর তা কত দ্রুত যায় এরই প্রকাশ হল – এই ওয়ান থেকে ফাইভ জি (ইংরেজি জি মানে এখানে জেনারেশন বা প্রজন্ম) পাঁচ প্রজন্মের টেকনোলজি।

যার মূল জিনিসটা হল, ফোন নেটওয়ার্কে চলাচলকারী ডাটার গতি। যেমন একটা ধারণা দেয়া যাক, ১৯৯১ সালে চালু ২জি টেকনোলজি দিয়ে একটা পাঁচ গেগাবাইটের পূর্ণ সিনেমার ডাটা নামিয়ে আনতে সময় লাগত এক মাসেরও বেশি। তাই তা করতে যায়নি কেউ। কিন্তু গত ২০১০ সাল থেকে চালু হয়ে থাকা চলতি ৪জি টেকনোলজিতে (যা আমরা বাংলাদেশে দেখি নাই, গল্প আর “কে দিয়েছের” চাপাবাজি শুনেছি। অভিজ্ঞতা পাইনি বলাই ভাল) লাগে ৭ মিনিট। সেই পাঁচ গেগার সিনেমা আসন্ন নতুন ৫জি টেকনোলজিতে লাগবে মাত্র ৪০ সেকেন্ড। [৫জি সাপোর্ট করে এমন ফোনসেট এখনো বাজারে আসনি, তবে এ বছরই আসবে।]
এই ৫জি টেকনোলজি এখন একটা রাষ্ট্রের টেক-উচ্চতা কতটা তা মাপার বিষয় (স্টান্ডার্ড) হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন আমেরিকার কোন কোম্পানি এই টেকনোলজি নিয়ে কখনও কাজই করেনি। বিপরীতে এই টেকনোলজি নিয়ে নিজের ল্যাবে গবেষণা ও উন্নয়ন শেষ করে, এরপর বাণিজ্যিক উৎপাদনে এবং বিক্রিতে চলে গেছে চীনা হুয়াওয়ে। শুধু তাই না, ২০১৮ সালের মোট বিক্রিতে ইতোমধ্যে কিছু ৫জি টেকসহ বিক্রি করেছে ১০৮ বিলিয়ন ডলারের। এই বিক্রি, তাও আবার সরাসরি ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের মিথ্যা প্রপাগান্ডা হুমকির মধ্যে যে চীনা ৫জি টেকনোলজি [বেসরকারি হুয়াওয়ে ও সরকারি জেডটিই ] বাজারে আনা হয়েছে অন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনের গোয়েন্দাগিরির জন্য। অন্যের রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সংগ্রহ ও তা নিজ দেশে পাচারের জন্য – এই হল সেই ভীতিকর মিথ্যা প্রপাগান্ডা। শুধু তাই না, ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ নির্দেশ জারি করেছে যে কোনো আমেরিকান সরকারি অফিস এ দুই কোম্পানির কোনো কিছু কিনতে ও ব্যবহার করতে পারবে না [President Donald Trump in August, which bars federal agencies and their contractors from procuring its equipment and services]। এই আইনের বিরুদ্ধে খোদ হুয়াওয়ে নিজে আমেরিকার টেক্সাসের আদালতে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে নতুন দুনিয়ায় মাতব্বরিতে নেতা আমেরিকার সাথে সবসময় ছোট-তরফ বা প্রধান সাগরেদ হয়ে থেকেছে ইউরোপ। সম্ভবত এবারই প্রথম আমেরিকান নেতাগিরির শেয়ার-ভাগ সাগরেদ নিতে চাইছে না। ইউরোপ আমেরিকার হাত ছেড়ে ভেগে আগে বাড়তে যাচ্ছে।
এ বছর ‘মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস” [Mobile World Congress] যেটা সাধারণভাবে বললে ‘মোবাইল টেকনোলজির গ্লোবাল বাণিজ্যমেলা, তা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৫-২৮ ফেব্রুয়ারি, স্পেনের বার্সিলোনায়। কিন্তু ট্রাম্পের প্রপাগান্ডাীখানে এসে ফেল করে যায়। মানে চীনা হুয়াওয়ে সম্পর্কে আমেরিকার প্রপাগান্ডা ও ভীতি ছড়ানো আর তা ইউরোপে কাজ করাতে ব্যর্থ হয় আমেরিকা এই সম্মেলন থেকেই। এটা ফোন ব্যবহারকারি সাধারণ মানুষের মেলা নয়, ফলে সাধারণ ক্রেতাদের বাদে বা তাদের বাইরে, মোবাইল নিয়ে গবেষণা, উৎপাদন থেকে বাণিজ্য বিতরণ পর্যন্ত জড়িয়ে থাকা টেলিকম এক্সিকিউটিভদের মেলা ছিল এটা। ইউরোপের পলিটিকো ম্যাগাজিনের হিসাব মতে প্রায় এক লাখ [where some 100,000 telecoms executives had gathered] এমন টেলিকম নির্বাহীর সমাগম হয়েছিল এখানে। এমনিতেই এই মেলার বড় খরচের দায়ভার নিয়েছিল হুয়াওয়ে। সে সাথে নিজের ৫জি টেকনোলজিসহ সব পণ্যের ব্যাপক প্রদর্শনীও করেছিল। এই মেলা থেকেই মোবাইল উতপাদন ব্যবসার দুনিয়ার বড় বড় কুতুবেরা বিশেষ করে যারা ইউরোপীয় যেমন, নরওয়ের নোকিয়া, ব্রিটিশ ভোডাফোন, সুইডিশ এরিকশন ইত্যাদির, আমেরিকান প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে এদের আপত্তিগুলো সামনে প্রবলে আসতে থাকে।
তাদের বক্তব্যের সারকথা হল, তারা আমেরিকার কাছে খাস প্রমাণ চাচ্ছে, নইলে তারা হুয়াওয়ের টেকনোলজি কিনতে ও ব্যবহার- সম্পর্ক করতে থামবে না। অর্থাৎ চীন বা হুয়াওয়েকে রাজনৈতিক কারণে কোণঠাসা করার কাজে যুক্ত হতে তারা অস্বীকার করে বসলেন। রয়টার্স বলছে, ওই মোবাইল মেলাতে ভোডাফোনের প্রধান নির্বাহী মিডিয়াকে জানিয়েছেন যে, আমরা “ফ্যাক্টস ভিত্তিক মূল্যায়ন দেখতে চাই” [“We need to have a fact-based risk-assessed review,” – Nick Read, chief executive of Vodafone]। আর হুয়াওয়ের টেক ব্যবহার করব না বলার খারাপ পরিণতিও আছে। আমরা যদি অস্পষ্ট তর্কে সিদ্ধান্তহীন থাকি তবে ইউরোপ আপডেট টেকনোলজিতে দুই বছর পিছিয়ে যাবে। আর ইতোমধ্যে আমরা যারা হুয়াওয়ের ৪জি টেক ব্যবহার করছি সেগুলোর কী হবে?” [ Read said it was not a simple case of barring Huawei from future 5G networks as the company’s equipment was already in use in 4G networks in Europe that would be the foundation of the new technology……“It will delay 5G in Europe by probably two years,” he said.] ।
ওদিকে ওই মেলা থেকে এক টেকনিক্যাল আলোচনায় হুয়াওয়ের চেয়ারম্যান সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বললেন আমেরিকার হাতে কোন প্রমাণ নাই [The U.S. security accusation on our 5G has no evidence, nothing,”] অথচ প্রপাগান্ডা করছে। তিনি খোঁচা দিয়ে বলেন, “হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করার মিথ্যা অভিযোগ আনার আগে আমেরিকা স্নোডেনকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারে [those concerned about government spying “can go ask Edward Snowden” ]। (আমেরিকান টেক কন্ট্রাকটারের এক স্টাফ অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন প্রমাণসহ দেখিয়ে দেন যে আমেরিকান সরকার কিভাবে গ্লোবালি মোবাইল ডাটা হ্যাক করে থাকে। এই তথ্য ফাঁস করা, সেই থেকে তিনি আমেরিকা থেকে পালিয়ে রাশিয়াতে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে বাস করছেন।)
তবে অনেক তর্ক-বিতর্কে উঠার পরে ঐ বার্সেলোনা মেলা থেকেই হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে আমেরিকার অভিযোগ হাল্কা হয়ে যেতে থাকে। ইউরোপীয় পলিটিকো বা আমেরিকান ব্লুমবার্গ মিডিয়া বলছে, মূলত ট্রাম্পের একটা মন্তব্য থেকে এই অবস্থার সৃষ্টি। ব্যাপারটা হল, বর্তমানে চীন ও আমেরিকা এক বাণিজ্য যুদ্ধে পরস্পরের ওপর বাড়তি আমদানি শুল্ক আরোপের ঝগড়ায় আটকে আছে। যার সর্বশেষ অবস্থা হল তারা এখন আলাপ আলোচনার মধ্যে আছে যাতে মনে হচ্ছে তারা একটা আপসের পথ খুঁজে পেতে যাচ্ছে, কিন্তু কিছুই এখনও ফাইনাল নয়। সেই আলোচনার সময়ে এক পর্যায়ে ট্রাম্প বলে বসেন যে হুয়াওয়ে কেসটা আমাদের আলোচনায় দরকষাকষিতে হাতিয়ার হতে পারে [“President Trump has made a big mistake by allowing the Chinese to draw the conclusion that the two are related”]। এ কথা জেনে যাওয়ার পর থেকে ইউরোপের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ফলে তা থেকে টেক কোম্পানিগুলোও হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে আমেরিকার অভিযোগগুলো আর গুরুত্ব দিয়ে আমল করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। এরপর থেকে আমেরিকা ইউরোপকে আর নিজের নৌকায় তুলে নিতে পারেনি।
এদিকে বিতর্কেরও কোনো শেষ হয়নি। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এ নিয়ে খুবই ভোকাল। তিনি এক পাবলিক আলোচনাতে বলছেন, তিনি দুটো বিষয়ে নীতিগতভাবে বিশ্বাস করেন না। এক, আমেরিকার এমন সেনসেটিভ নিরাপত্তা-বিষয়ক অভিযোগ পাবলিকলি তুলল কেন? আর দুই-একটা কোম্পানিকে একঘরে করতে হবে কারণ সে একটা বিশেষ দেশের [“First, to discuss these very sensitive security questions publicly, and second, to exclude a company simply because it’s from a certain country.’] – একটা বিশেষ দেশ বলতে বলা বাহুল্য তিনি বুঝিয়েছেন চীনের হুয়াওয়ে] কোম্পানি। ’ এরপর তিনি আরো এক ধাপ এগিয়ে শক্ত এথিক্যাল প্রশ্ন তুলে বলছেন, “চীন অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী বলে তার সাথে এভাবে লড়ব। বরং আমাদেরকে অবশ্যই ন্যায্য আইনকানুন ও পারস্পরিক স্ট্যান্ডার্ডের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। আর আমরা ‘বহুরাষ্ট্রীয় দুনিয়া ব্যবস্থা’ মাল্টিলেটারিজম ত্যাগ করতে পারব না, [“Of course we’re in a systemic competition with China,’’ Merkel said in a separate speech at the same event. “But the answer can’t be that we fight those who are economically strong, we must stand up for fair, reciprocal rules and not give up on multilateralism.’’]।
এ কথাগুলো তিনি বলেছেন কারণ ইতোমধ্যে এ নিয়ে ন্যাটোর মিটিংয়ে চরম তর্কাতর্কি ও আর আমেরিকান হুমকি প্রদর্শন ঘটে গেছে। আমেরিকা হুমকি দেয় যে চীনা ফোন টেকনোলজি ৫জি ব্যবহার জার্মান বন্ধ না করলে তারা আর আগের মত জার্মানির সাথে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করবে না। ন্যাটোর জেনারেল স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, “ন্যাটো ফোর্স জার্মানির সাথে ‘বার্তা যোগাযোগ ছিন্ন” করবে যদি তারা হুয়াওয়ের সাথে সম্পর্ক রেখে কাজ করে’ [The threat escalated when Nato’s Supreme Allied Commander in Europe, US General Curtis Scaparrotti, warned Germany that Nato forces would cut communications if Berlin were to work with Huawei.]। কিন্তু মার্কেলের অবস্থান আসলে খুবই পরিষ্কার। তিনি বলতে চাইছেন, আমরা নিরাপত্তা স্টান্ডার্ড উন্নত করতে পারি, আলোচনায় চীনকে তা মানতে বাধ্য করতে পারি। কিন্তু চীনা কোম্পানি টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না এ কথা বলতে পারি না।
ওদিকে ইটালিকে নিয়েও প্রায় একই রকম বিতর্কে [Italian daily La Stampa ] এক ভুয়া নিউজ ছাপা হয়েছিল। ওর পেছনে আর এক কারণ হল, সেই একই সময়ে ইতালি চীনের বেল্ট-রোডে যোগ দিয়েছে, এমন এক মেমোরেন্ডাম বা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু ইতালির মন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তারা যেহেতু এখনও ৫জি ইস্যুতে নিরাপত্তার জন্য হুমকিমূলক কোনও কিছুই পায়নি। তাই কোনও কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে আগ্রহী নয়। ইতালির “টেলিকম ইতালিয়া” কোম্পানি হুয়াওয়ের গ্রাহক। তারাও বলছে সরকারি কোনো নিষেধাজ্ঞা না পেলে তারা কিছুই বন্ধ করবে না [Italian phone incumbent Telecom Italia has previously said it will keep working with Huawei until told otherwise by the government.]।
মোটা দাগে বললে, হুয়াওয়ে বা চীনা টেকনোলজি ঠেকিয়ে দেয়ার ইস্যুতে আমেরিকা ইউরোপকে নিজের নেয়া ‘নিষেধাজ্ঞার পথে’ আকৃষ্ট বা রাজি করাতে পারেনি। এর মূল কারণ চীন বা হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে আমেরিকার আনা গোয়েন্দাগিরি অভিযোগের কোনও প্রমাণ দিতে না পারা। অর্থাৎ আমেরিকান অভিযোগ এখনো ভিত্তিহীন বলে এমন অসৎ পথে আমেরিকার সঙ্গী হতে চায়নি ইউরোপ। ইতোমধ্যে প্রায়ই ট্রাম্পের মুখে শোনা যায় যে চীন আমাদের টেকনোলজি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি হুয়াওয়ের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে আমেরিকান টি-মোবাইল কোম্পানির পক্ষে [T-Mobile, an American wireless carrier] টেকনোলজি চুরির মামলা করা হয়েছিল। লন্ডন ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, সে মামলাতে আদালতের মূল্যায়ন হল, এখানে টি-মোবাইলের কোনো ‘ক্ষতি করা, কারও অন্যায় লাভবান হওয়া এমন কিছু ঘটেনি। এমনকি এটা হুয়াওয়ের দিক থেকে ইচ্ছা করে কিছু ঘটানো এমন কাজ নয়, খারাপ উদ্দেশ্যে করা কোনো কাজও নয়” [The court found, however, “neither damage, unjust enrichment nor wilful and malicious conduct by Huawei”.।
তবু আমেরিকার দিক থেকে ইউরোপকে নিয়মিতভাবে চীনা ৫জি টেকনোলজি ব্যবহার না করার আবেদন করে চলছিল। সম্প্রতি ইউরোপীয় কমিশন আমেরিকার চীনাবিরোধি যা অভিযোগ তা আনুষ্ঠানিক আমল করেনি বলে জানা যাচ্ছে। কিভাবে? কারণ সে তার নিজস্ব কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। সেগুলো আসলে উপরে অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের বয়ানে যেটা আমরা দেখেছি সেই অবস্থানই। তা হল, কমিশনের সিদ্ধান্ত হল যে আরো ‘শক্ত নিরাপত্তা স্টান্ডার্ড’ তৈরি করতে হবে, কিন্তু কোনো দেশকে ঠেকাতে হবে এটা তাদের কোনো পথ নয় [commission officials signalled they prefer to secure Europe’s critical digital infrastructure with a more nuanced approach, rather than bowing to US pressure for blanket bans.]। । আসলে মূলত এ কারণেই ইউরোপের মোবাইল জয়েন্টগুলো হুয়াওয়ের টেকনোলজি কেনার ও সাথে সম্পর্কে এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল।
হুয়াওয়ের ‘প্রধান ফাইন্যান্স কর্মকর্তা’ সাবরিনা গ্রেফতারঃ
তবু আমেরিকা চীন ও হুয়াওয়েকে বিনা যুক্তিতে স্রেফ নিজের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মাতব্বরির স্বার্থে কোন যুক্তি ছাড়া “তাদের ঠেকাতে” একের পর এক বাধা তৈরি করে যাচ্ছে। এমনই আর এক বাধার দেওয়াল হল, হুয়াওয়ের ‘প্রধান ফাইনান্স কর্মকর্তা’ সাবরিনা মেঙ ওয়ানঝুয়ের [Huawei CFO Subrina Meng Wanzhou ] কানাডায় গ্রেফতার। যিনি আসলে হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা মালিক রন ঝেংফাই এর নিজের মেয়ে। সেই সাবরিনা মেঙ কোম্পানির কাজে হংকং থেকে মেক্সিকো যাচ্ছিলেন, পথে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার ছিল তার বিমান বদলের জন্য যাত্রা বিরতি। আর এই ভ্যাঙ্কুভার বিমানবন্দর থেকে কানাডিয়ান পুলিশ তাকে গত ১ ডিসেম্বর ২০১৮, গ্রেফতার করেছে। কিন্তু এর সাথে আমেরিকার কী সম্পর্ক?
কানাডা-আমেরিকার মধ্যে পরস্পরের “বন্দী হস্তান্তর চুক্তির” সম্পর্ক আছে। তাই আমেরিকার অনুরোধে কানাডা সরকার এই গ্রেফতার করেছে। কিন্তু আমেরিকার অভিযোগ কী?
আমেরিকার দিন ফুরিয়ে আসছে এর অনেকগুলো চিহ্ন ফুটে উঠতে শুরু করেছে। এর একটা হল, যাকে খুশি তাকে যেকোন অপছন্দের রাষ্ট্রকে নিজের একক সিদ্ধান্তে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করে দেয়া। নেতানিয়াহুর জিগরি দোস্ত ট্রাম্প ইরানের ওপর খুবই বেজার। ট্রাম্প ইরানের ওপর অবরোধ ঘোষণা করেছেন। যার সোজা অর্থ হল ইরান কোন ভিন্ন-রাষ্ট্রের সাথে পণ্য কেনা বা বেচাবিক্রির ক্ষেত্রে আমেরিকান ডলারে সেই লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন না। করলে কী হবে? করলে এর মানে হবে ওই পণ্যের চালানে ডলারে পেমেন্টের কথা উল্লেখ থাকবে আর সেই ডলার দেয়া-নেয়া করতে গেলে তা একমাত্র একটা পর্যায়ে কোন না কোন এক আমেরিকান ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবেই। আর ইরান যেহেতু অবরোধ ঘোষিত তালিকায় আছে তাই আমেরিকান কোনো ব্যাংকের জন্য ওই অবরোধের অর্থ হল, এই লেনদেন ঘটিয়ে দেয়া নিষিদ্ধ। কোন আমেরিকান ব্যাংক যদি এমন নিষিদ্ধ লেনদেনে সহায়তা করে আর আমেরিকান সরকার যদি এ জন্য তাকে অভিযুক্ত করে তবে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ফাইন দিয়ে তাকে রেহাই পেতে হয়। তাহলে ইরান অবরোধের সাথে হুয়াওয়েকে কিভাবে সম্পর্কিত করছে আমেরিকা?
অভিযোগ হল, হুয়াওয়ে তার মোবাইল টেক বিক্রি করেছে ইরানকে। আমেরিকার অভিযোগ এই বিক্রি ঘটেছে হুয়াওয়ে মূল কোম্পানির নাম বা অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে নয়, বেনামে। ‘স্কাইকম’ নামে এক কোম্পানির মাধ্যমে হুয়াওয়ে ইরানের সাথে কেনাবেচা ব্যবসা করেছে। কিন্তু আইনত স্কাইকম হুয়াওয়ের কোনো অধীনস্ত বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানি নয় বলে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে সাবরিনা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাই মামলাটা হয়েছে এই লেনদেনে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে। ভয় পাওয়ার মতো তথ্য হল, প্রমাণিত হলে আমেরিকায় এর সাজা কমপক্ষে ৩০ বছর। তবে কানাডার আদালতে এখনকার মামলা হল সাবরিনা মেঙকে আমেরিকার কাছে হস্তান্তরের অনুমতি পাওয়ার। কানাডার আদালত অনুমতি না দিলে কানাডা সরকার সাবরিনাকে আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করতে পারবে না। তাই সাবরিনা এখন বিশেষ অনেক শর্তের জামিনে আছে, যার একটা হলো তাকে কানাডায় থাকতে হবে, রায় না হওয়া পর্যন্ত।
ঘটনার এখানে শেষ নয়, উপরে বলেছিলাম যে চীন-আমেরিকা যে বাণিজ্য যুদ্ধের সমাপ্তির আলোচনা চলছে ট্রাম্প সেখানে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি সাবরিনাকে ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারটাকে তিনি ঐ আলোচনায় বিশেষ সুবিধা আদায়ের ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে চান।
কিন্তু ব্যাপারটাতে আমেরিকা একাই চালাক তা তো নয়। চীনও অন্তত দুজন কানাডার নাগরিককে পাল্টা ডিটেনশন দিয়ে আটকে রেখেছে [After Meng’s Vancouver arrest, Chinese police also detained two Canadian citizens]। যাদের একজন আমেরিকার প্রাক্তন কূটনৈতিক, এখন “ক্রাইসিস গ্রুপ” নামের থিঙ্কট্যাঙ্কের সাথে কাজ করছেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের ‘উঠায়ে নেওয়া’, ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা এসবই চালু করার জায়গায় পৌঁছেছে আমেরিকা।
কিন্তু আমেরিকা এক হুয়াওয়েকে নিয়ে এত মরিয়া কেন?
এখানে দুটা প্রসঙ্গ, তবে কমকথায় বলতে হবে। একালে মোবাইল টেকনোলজিতে আমেরিকা আর কুতুব কেউ নয়। বরং সব টেক কোম্পানিই বেচে-কিনে সারা। আমেরিকান ভ্যানিটি ছিল প্রখ্যাত গ্রাহাম বেলের এটিঅ্যান্ডটি [AT&T]। কিন্তু এত বিখ্যাত এটাই তার নেতি দিক। কোম্পানিটা একচেটিয়া করছে – এই অভিযোগে আমেরিকান এন্টি-ট্রাস্ট আইনের মামলা খেয়েছিল এই কোম্পানি। ফলাফলে দুটা ঘটনা ঘটে। এটিওঅ্যান্ডটি নিজেই নিজের কোম্পানিকে ভেঙ্গে দুইটা করে। মানে লুসেন্ট (Lucent) নামে যন্ত্রপাতি উৎপাদন ইউনিটকে আলাদা কোম্পানি [Lucent Technologies, Inc.] হিসেবে সাজিয়ে নেয়। এতে সেকালে (১৯৯৬) বাজারে প্রবল সাড়া জাগানোতে ইনিশিয়াল ইস্যু করা শেয়ার বেচে তারা তিন বিলিয়ন ডলার জোগাড় করেছিল।
আমাদের অধুনা বিলুপ্ত মোবাইল কোম্পানি সিটিসেলের কল্যাণে “সিডিএমএ” [CDMA] নামে টেকনোলজির কথা কেউ কেউ জানি। বাংলাদেশের মোবাইলে ওই একটাই সিডিএমএ নামে টেকনোলজি ছিল। এ ছাড়া বাকি সবগুলো এখন জিএসএম [GSM]। এই দুটা ছাড়া কাছাকাছি সুবিধা-অসুবিধার অন্যান্য অনেক টেকনোলজি ছিল। আমেরিকান সরকার ১৯৯৬ সালে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে দেশে টেকনোলজির স্টান্ডার্ড বলে কিছু সবাইকে আর মানতে হবে না। “সিডিএমএ” বা “জিএসএম” বা যেকোন স্টান্ডার্ডের মোবাইল সার্ভিস চালু করা যাবে। সরকার তখন মনে করেছিল এতে একচেটিয়াত্ব বন্ধ হবে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে যায়। কারণ, মোবাইল টেকনোলজি ব্যবসার রিস্কি দিকটা হল, এখানে ব্যাকঅ্যান্ডের যন্ত্রপাতি উৎপাদনের কোম্পানিগুলোকে নিরন্তর গবেষণা ও নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ করে যেতে হয়। তাই আমেরিকায় একটা স্ট্যান্ডার্ড না থাকার কারণে সব টেকনোলজির ফোন সার্ভিস বেচে তুলে আনা রাজস্ব সবগুলো টেকনোলজিতেই গবেষণা করতে গিয়ে ভাগ হয়ে যায়। ফলে প্রত্যেকটা টেকনোলজির গবেষণা খরচ জোগানো কঠিন হয়ে যায়। ফলে ২০০১ সালের মধ্যে লিসেন্টের পতন শুরু হতে থাকে। এর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল মটোরোলা [Motorola] তারও অবস্থা খারাপ। মোটের ওপর আজকের শেষ পরিণতি অবস্থাটা হল – নরওয়ের নোকিয়ার কাছে আমেরিকার লুসেন্ট বা মটোরোলা দুটাই বিক্রি হয়ে গেছে। ওদিকে ফ্রান্সের আর এক কোম্পানি “এলকাটেল” [Alcatel] – সেও এখন নোকিয়ার পেটে, চলে গেছে। ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে আমেরিকার নিজের এখন মূল ব্যাকঅ্যান্ড যন্ত্রপাতি বানানোর কোন কোম্পানি নেই। সব ইউরোপের হাতে। বলা হয়ে থাকে, সম্ভবত এর মূল কারণ ইউরোপ শুরু থেকেই কেবল ‘জিএসএম’ [GSM] একেই একমাত্র মোবাইল টেক স্ট্যান্ডার্ড বলে নির্দিষ্ট করে দেয়। ফলে এখানে কোম্পানিগুলোর গবেষণার খরচ জোগান তুলনামূলক সহজ ছিল।
তাহলে সার কথা দাঁড়াল আমেরিকার হাতে কোনো ৫জি টেকনোলজিই নেই। কিন্তু না থাকলে কী? ইউরোপ থেকে কিনে নেবে!
ব্যাপারটা অত সহজ নয়। কেন?
৫জি এক বিরাট সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উল্লম্ফন
মূল কারণ ৫জি কোনো সাধারণ টেকনোলজি নয়। যেমন ২জি থেকে ৩জি অথবা ৩জি থেকে ৪জি এসেছিল – তেমন সাধারণ নয়। কথাটা ভেঙে বলতে হবে।
প্রথমতঃ আগের যেকোনো টেকনোলজি থেকে ৫জি তে আসা – এটা এক বিরাট সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক উল্লম্ফন। মানে কী? এত সাংঘাতিক করে ব্যাপারটা হাজির করছি কেন?
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial intelligence, AI) এর কথা একালে আমরা অনেকে শুনেছি। যন্ত্র বা রোবটকে মানুষের বুদ্ধিতে চলার মত করে তৈরি করা। মানুষের শ্রম কম লাগবে। আর এর বিকল্প হিসেবে রোবট সে কাজ করবে। যেমন “রোবট রেস্টুরেন্ট” – মানে এখানে কাস্টমারকে রোবট ঘুরে ঘুরে খাওয়া সার্ভ করছে, অর্ডার নিচ্ছে – এটা আমরা অনেকেই দেখেছি।
এ ছাড়া ড্রাইভার ছাড়া গাড়ির কথা শুনেছেন অনেকে। এসব আগামীতে আমরা কেমন থাকব, চলব, কেমম কাজ পাবো, করব অথবা আমাদের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হবে ইত্যাদি প্রায় সব কিছুকে বদলে দেবে, প্রভাবিত করবে।
এসবের প্রধান আর কমন বিষয়টা হল, এগুলো গায়েবি নিশ্চয় নয়, বরং মানুষই অনেক দূরে বসে এসব কিছুকে পরিচালিত করবে। যেহেতু অনেক দূর থেকে, একটা বৃত্তের মধ্যে নানান জায়গায় বসে বসবাস করে তাই খুবই দ্রুত আর বাল্ক নির্দেশ পৌঁছানোর উপযুক্ত তারবিহীন টেকনোলজি বা নির্দেশ বহনকারী ওয়ারলেস টেকনোলজি লাগবে। এসব কিছু ঠিকঠাক চলার ব্যাকবোন বা শিরদাড়ার মত কাজ করতে হবে ৫জি ওয়ারলেস টেকনোলজিকে। এর মাধ্যমেই সবাই সব নির্দেশ পাঠাবে, নেবে।
আরো দিক আছে কারখানা পর্যায়েও প্রডাকশন লাইনে নির্দেশ পাঠাতে ব্যবহৃত হবে ৫জি টেকনোলজি। এ জন্য বলা হচ্ছে এই ৫জি মোবাইল বা ওয়ারলেস টেকনোলজিকে আসলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পর্যায়ে কাজ করতে হবে।
এই বিপুল পরিবর্তন যা মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে ব্যাপক উল্লম্ফন ঘটাবে এর ব্যাকবোন হতে যাচ্ছে ৫জি টেকনোলজি। অথচ আমেরিকার হাতে এটাই নাই, থাকবে না। এখনও যদি শুরু করে তবুও তিন থেকে পাঁচ বছরের পেছনে থাকবে আমেরিকা। এছাড়া অর্থনৈতিক লাভজনকভাবে একে প্রতিস্থাপন সে ত আমেরিকার জন্য আর এক অলীক স্বপ্ন! আর ওদিকে চীন! এখনই সে শীর্ষে। অতএব, বলাই বাহুল্য আমেরিকা কেন এমন হাত-পা ছোড়া ছোট ছেলের মতো অস্থির আচরণ করছে। আমেরিকার জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি ও পরিণতি অপেক্ষা করছে বলাই বাহুল্য!
[এই ব্যাপক পরিবর্তনের টেকনিক্যাল দিকটা থেকে আগ্রহী পাঠকেরা এই আর্টিকেল ও সংশ্লিষ্ট অন্যগুলো পড়ে দেখতে পারেন।]
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
One thought on “চীনা হুয়াওয়ের ৫জিঃ আমেরিকার কঠিন পরিণতির ইঙ্গিত!”