কর্ণাটক নির্বাচনী বিজয় মোদিবিরোধীদের কতটা আগিয়ে দেবে!


কর্ণাটক নির্বাচনী বিজয় মোদিবিরোধীদের কতটা আগিয়ে দেবে!
গৌতম দাস

১৮ মে ২০২৩
https://wp.me/p1sCvy-4t2

 

         India: Congress victory strong message against majoritarian politics

 

দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্য সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ১০ মে যার, ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ১৩ মে এবং  এই ফলাফল হয়েছে মোদির জন্য একালের খুবই বিপর্যয়কর এক আঘাত। অনেকটা যেন ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভাগ্যে নেমে এসেছিল এক কঠিন নেতি ফলাফল বিপর্যয় হিশাবে যখন, বিজেপি ঐ নির্বাচনে বিরাট মার্জিনে জিতে আসতেছেই বলে ব্যাপক প্রপাগান্ডা  আওয়াজ তোলার পরে বাস্তব ফলাফল দেখা গিয়েছিল একেবারে উলটা; বিজেপি সেবার তার গত ২০১৯ সালের সফলতাটাই ধরে রাখতে পারে নাই; বরং আরও নিচে নেমে গেছিল। এবার কর্ণাটকের ফলাফল বিজেপির জন্য অনেকটা সেরকম তো বটেই তবে এর চেয়েও বেশি নেতি প্রভাব ফেলেছে। এর বড় কারণ হল প্রথমত, আগামি কেন্দ্রীয় নির্বাচন আসন্ন। মানে হল, আগামি বছর মে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন ততদিনে শেষ হয়ে ফলাফলও প্রকাশিত হয়ে যাবে।

এছাড়াও, অন্যান্য বড় ফ্যাক্টরগুলো হলঃ এতদিন গত ২৩ বছরেরও বেশি যে ভারত ছিল এশিয়ায় অ্যামেরিকান স্ট্রাটেজিক পার্টনারই শুধু না, ভারত ছিল আমেরিকার হয়ে এশিয়ায় চীন ঠেকানোর বরকন্দাজ। আর এর বিনিময়ে মানে বরকন্দাজির নামে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার চলতি বছর থেকে বাইডেনের আমেরিকা সেই পুরানা অনুসৃত নীতি থেকে সরে এসেছে। যদিও সরকারি আনুষ্ঠানিকভাবে   আমেরিকা বা ভারত দুই সরকারের কোন পক্ষ থেকেই কোন ঘোষণা  দেওয়া হয় নাই কৌশলগত কারণে কিন্তু, দুপক্ষই নিজ নিজ সরকারের পথচলা ও আচার আচরণে এমনকি ভিন্ন প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে প্রকাশিত করে ফেলছে যে তাদের পথ আলাদা হয়ে গেছে। তবুও যেটা অনেকটা একটা বিয়ে ভেঙ্গে গেছে কিন্তু এর আনুষ্ঠানিক ডিভোর্স হয় নাই – এর মত। তাই আচার-আচরণ বসবাসে তা প্রতিফলিত হবেই, সেরকম। সেই নয়া  গতি-প্রকৃতি কেমন এনিয়ে ভারতের মনোভাব যেভাবে প্রকাশিত তা নিয়ে একটা লেখা আসবে আগামিতে।

এতদিন বাইডেন সরকার বিভিন্নদেশের শাসকদের বিরুদ্ধে   মানবাধিকার লঙ্ঘণের এর অভিযোগ আনা আর স্যাংশন আরোপ – অন্তত এই দুই নীতি নিয়ে সামনে আগিয়েছে। তাসত্বেও এর কোনটাই এতদিন মোদি সরকারের উপর প্রয়োগ করে নাই। ছাড় দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলেছিল। কিন্তু এবার সবকিছুই প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্যপদ খারিজ ও সাজা দান ইস্যুতে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট(পররাষ্ট্র বিভাগ) এর মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল জানিয়েছিল তারা সব লক্ষ্য করছে [we r Watching], নোট নিচ্ছে। তাই, আমার আগেরই এক লেখায় কিছু বিস্তারিত বাক্যে লিখেছিলাম। সেই গত লেখায় এখানে, যার সারকথাটা হলঃ
“যেমন, গুজরাত মুসলমান-নিধনের ডকুমেন্টারি বিবিসিতে প্রকাশ, মোদির দোস্ত আদানির শেয়ার বাজারে করা কারসাজির গুমোড় ফাঁস, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর ‘ভারত-জোড়ো’ পদযাত্রা, রাহুলের লন্ডন সফর ও সফরে গিয়ে ভারতে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠিগুলোকে সোচ্চার হবার পরোক্ষ আহবান জানিয়েছেন [defenders of democracy have been “oblivious” to the systematic erosion of democracy in India. ]  যেটাকে প্রত্যক্ষ আহবান বলে দাবি করে মোদির অভিযোগ, আদালতে মোদির কারসাজি করে রাহুলকে শাস্তির রায় ঘোষণা ও প্রভাব বিস্তার; এছাড়া, পালটা হিশাবে মোদির ভারতের বৃটিশ এনজিও অক্সফামের বিরুদ্ধে তাদের অফিস তল্লাসি ও মামলা,  গায়ের জোরে রাহুলের সংসদ সদস্যপদ বাতিল, সর্বশেষ কাশ্মীরে পুলওয়ালে জওয়ান হামলায় ৪০জনের মৃত্য ও এতে মিথ্যা করে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার দাবি ও ভারতের বিমান বাহিনীর পাকিস্তানে হামলার মিথ্যা খবর ছড়ানো ইত্যাদি নিয়ে মোদি নিজেই দায়ি বলে গুমোড় ফাঁস করেছেন। পুলওয়ামা হামলা: সরকারের ভুল চেপে যেতে বলেছিলেন মোদি; বলছেন, সেকালে মোদির নিয়োজিত কাশ্মীরের রাজ্যপাল  সত্যপাল মালিক – এসব ঘটনাই এক সুত্রে গাথা ও যুক্ত।”
অর্থাৎ মোদির ভারত থেকে অ্যামেরিকার আলাদা হয়ে যাওয়া রাস্তাটা হল এই যে, বাইডেন এখন দেখতে চান ২০২৪ সালে্র নির্বাচনে মোদি সরকার যেন ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়; আর এর স্বপক্ষে “রাহুলের নেতৃত্বে বিরোধী দলকে”  আইন বাঁচিয়ে যতটা সহায়তা করা যায় এর সবটা করতে নেমে পড়েছে আমেরিকা। তাই কর্ণাটক রাজ্য নির্বাচনে বিজেপির গোহারা হার “রাহুলের নেতৃত্বে বিরোধী দলকে” নতুন উতসাহে আগিয়ে যেতে উতসাহিত করবে আর ঠিক ততটাই যেন তা বিজেপি-কে হতাশ ও নিরুতসাহিত করবে! এটাই হল কর্ণাটক নির্বাচনের একতা বড় তাতপর্য, যা একেবারেই ভারতের একটা আঞ্চলিক হিশাবেও যায় না কর্ণাটক এমন এক রাজ্য নির্বাচন মাত্র হওয়া সত্বেও, এর মধ্য দিয়ে এক  গ্লোবাল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দিক ফুটে উঠেছে! এনিয়ে সবচেয়ে বড় করে ভোটের হার-জিত দুপক্ষই পরস্পরকে টিটকারি করেছে টুইটারে।  যেমন তেমনই একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক মোটা ভাই কর্ণাটক নির্বাচনের ফলাফল আসতেই ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে অমিত শাহ প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করেছেন আর সকল প্রার্থীই ভোট ছেয়েছেন মোদির নামে। তাই ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক “মোটা ভাই” পালাচ্ছে। আর গুজরাতি ভাষায় মোটা ভাই মানে বড় ভাই যার মাথায় আবার প্রতীকিভাবে অমিত শাহের মত বিশাল টাক আছে।

ভৌগলিক ভাবে কর্ণাটক কোথায়, কেন আর এর গুরুত্বই বা কীঃ
শুরুতে একবাক্যে কর্ণাটকের এই নির্বাচনের ফলাফল একটু বলে নেই। এই নির্বাচনে মোট আসন ছিল ২২৪ যার মধ্যে এবার কংগ্রেস একাই জিতেছে ১৩৯ আসনে, যেখানে সরকার গঠনের জন্য নুন্যতম প্রয়োজনীয় হল ১১৩ আসন। এখানে গত রাজ্য নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালে আর সেবারই প্রথম বিজেপি দল ১০৪ আসন পেয়েছিল যা এককভাবে সরকার  গঠন করার মত যথেষ্ট আসন নয়। কিন্তু এদিয়েই বিজেপি ষড়যন্ত্র এঁটে বাকি আসন সেবার বিরোধীদের থেকে ভাগিয়ে এনে গত পাঁচ বছর রাজ্য সরকার গঠন করতে সক্ষম ও তা চালিয়ে এসেছিল। কারা সেই ভাগিয়ে আনা লোক তা নিয়ে এলেখার শেষে কথা বলব।

এবার, ভৌগলিক ভাবে কর্ণাটকের পরিচিতি প্রসঙ্গে। উত্তর-ভারতের আর্য-প্রভাবিত সব রাজ্যগুলোর বিপরীতে ভারতের দক্ষিণের চারটা প্রদেশকে   ‘দ্রাবিড়ীয়ান’ রাজ্য বলা হয়। অনেক সময় এই রাজ্যগুলোকে ‘দাক্ষিণার্ত’ [DECCAN] অঞ্চলও  বলতে দেখা হয়। আসলে ভূ-গঠনশৈলী হিশাবে এই পুরা অঞ্চলটাকেই (সংস্কৃতঘেঁষা বাংলায়) বলে মালভুমি, ইংরাজিতে যা  Plateau বলে পরিচিত। আর গ্রামের সাধারণ বাংলায় যেটা পাহাড়ের উপরের এক ব্যাপক বিস্তীর্ণ সমতলভুমি – এমন ভুখন্ডকে বুঝায়।  যার নাম বাংলা উচ্চারণে লিখলে হবে  ডেকান প্লাটো [DECCAN Plateau]। 

মিথিওলজি বা প্রচলিত ধারণায়ঃ
মিথিওলজি [mythology] মানে বলা যায় কিংবদন্তি ধারণা; বহু পুরানা প্রচলিত থাকা ধারণায় যা আছে বা থাকে কিন্তু যার প্রমাণ নিয়ে কেউ আগ্রহ করে না বা মাথা ঘামায় না।  সব এথনলজি [ethnology] বা জাতির ধারণার মধ্যেই এমন নানান মিথ [myth] থাকতে দেখা যায়। সেকথা একটু পরে আসছি।   ভারতের উত্তর-দক্ষিণের মধ্যে ধর্মীয় ও কালচারাল ঝগড়ার মূল ইস্যুটা প্রাচীন ও ঐতিহাসিক একারণে যে ভারতের বাইরে থেকে এসে আর্যরা যেখানে প্রথম খুঁটি গেড়ে বসেছিল সেটা সারা ভারত না বরং,  কেবল উত্তর ভারত মাত্র। পরে সেখান থেকে এর আশেপাশের প্রদেশ যেমন মহারাষ্ট্র (মারাঠি) এর উপর অংশ, মধ্যপ্রদেশ আর পুবে বিহার পর্যন্ত সহজেই প্রভাব বিস্তার ও ভাষার দিক থেকে এসব রাজ্যের উপর সংস্কৃত ভাষার প্রভাব-আধিপত্য ছড়াতে পেরেছিল। কিন্তু কখনই দাক্ষিণার্থে প্রবেশ করতে পারে নাই। আর প্রায় একইভাবে ওদিকে পুবে বিহারে – ভোজপুরি ভাষার বিহার পেরিয়ে বাংলায় পুরাটা দখল নিতে পারে নাই আর্যরা।  আর্যরা মহারাষ্ট্র পেরিয়ে আরও দক্ষিণে দাক্ষিণার্থের কোথায় প্রবেশ না করতে পারার মূল কারণ মনে করা হয় এই ডেকান প্লাটো মানে পাহাড়ের উপরের সমতলভুমি, এটাকে তারা সদলে পার হতে পারে নাই।
এমনকি মিথিওলজিতে [এথনিক মিথের ধারণায়] দেখা যায় আর্যদের দেবতা ও তাদের আবাস স্বর্গের ধারণায় – সেখানে সুরালোক বলতে স্বর্গ বুঝানো হয়ে থাকে অর্থাৎ স্বর্গ মানে সুর বা দেবতা-দের আবাস যেখানে।  আর বিপরীতে যারা দেবতাদেরকেই স্বর্গচ্যুত করতে চায় এরাই হল তাদের চোখে অসুর যেন দেবতাদের দিক থেকে দেখলে সুর হল তারা নিজেরা; তারা নায়ক সেখানে আর অসুর হল ভিলেন বা বিপরীত।  দুর্গাপুজার মুর্তিতে দেখা যাবে ওটা হল, দুর্গা লড়ছেন এক অসুরের সাথে। আর কেমনে চিনব যে এটা অসুর? দেখা যাবে মহিষের পেট চিড়ে যে বেরিয়ে এসেছে আর দেখতে কুচকুচে কালো – এই হল আর্যদের ভিলেন-বোধ। আর তাতে এটাই মহিষাসুর!
সারকথায় মিথিক্যাল বর্ণনাগুলোতে সেটা কার দিক থেকে দেখা বর্ণনা – এটাই খুবই নির্ধারক। যেমন পশ্চিমবঙ্গেই একদল সাঁওতাল ট্রাইব আছে যারা দুর্গাকেই উলটা ভিলেন মনে করে থাকে; আর মেনে বিপরীতে মহিষাসুর এরই পুজা করে থাকে। এনিয়ে ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার এক নিউজ এখানে। আবার মহিষাসুর নিয়ে কলকাতার বাঙালির আলাদা ভার্সান এখানে দেখা যেতে পারে।

দাক্ষিণার্ত – ভারতের এই অঞ্চলটা হল এই উচু পাহাড়-মালভুমি তা আগেই বলেছি; কিন্তু যার আবার দুই দিকেই দুই সাগর। মানে বামে বা পশ্চিমে হল আরব সাগর আর ডানে বা পুবে হল বঙ্গোপসাগর। ভূ-প্রাকৃতিক এসব কারণে এই অঞ্চলের মানুষেরা প্রচন্ড খাঁড়া রোদের মধ্যে বসবাস করতে হয় আর তাতে রোদে পোড়া বলে তাদের গায়ের রঙ খুবই কালো হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা যত বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকুলে ও মাছধরা পেশায় তারা ততই কালো। কাজেই এই কালো রং-ই হয়েছে আর্যদের চোখে নিচা মানুষ; মানে,  যাদের আর্যরা ঘৃণা ছিটিয়ে নিচা দেখাতে চায় যাদের সেই আম জনগণ – এরাই নাকি  আর্যদের চোখে অসুর! এরা অসুরের জাত! কেউ কেউ তাদের দ্রাবিড়ীয়-ও [DraviDian] বলে থাকে।  তামিলনাড়ূর সবচেয়ে বড় দলের নাম ডিএমকে [DMK -Dravida Munnetra Kazhagam ] যেখানে ডি [D] মানে দ্রাবিড়। [ভারতের নামগুলোর মধ্যে তাই কখনও ইংরাজিতে ‘ডি’ অক্ষর দেখা গেলে এর উচ্চারণ বাংলায় “ড়” করতে হবে]।
আর একটা কথা বলার সুযোগ নেই। কর্ণাটক এর ভাষার নাম কানাড়া যা দ্রাবিড়ীয় চারটা ভাষার একটা।  কর্ণাটকিরা নিজেদের কন্নড় জাতির লোক মনে করে থাকে, তাই তাদের ভাষার নাম কানাড়া। কর্ণাটকের কন্নড় ভাষা পাশের মানে উপরের সীমান্ত সংলগ্ন মহারাষ্ট্র (মুম্বাই) এর দক্ষিণ সীমান্ত বা পুবে বা ডানপাশে অন্ধ্রপ্রদেশ ও নিচের তামিলনাড়ুতেও কন্নড় ভাষা বলার চল আছে।

দ্রাবিড়ীয় চার রাজ্যের কর্ণাটকঃ
দ্রাবিড় শব্দের আক্ষরিক অর্থ ঘন কালো চামড়ার মানুষ যাদের দক্ষিণ ভারতে দেখা যায় [a member of an ancient dark-skinned people of southern India.]  । এদিকে ১৯১৬ সাল থেকেই তামিল বা দ্রাবিড়ীয়রা তাদের দলীয় প্রতীক ছিল এক দাড়িপাল্লার ছবি যা হিন্দুধর্মীয়  জাত-বিভাজন ও বৈষম্যের বিপরীতে সাম্যের প্রতীক। আর এদের সাথে ছিল একটা ফ্লাগ – যা ছিল একটা পুরাটাই কালো ফ্লাগ; আর এর কেন্দ্রে কেবল একটা লাল সার্কেল চিহ্ন থাকত। যেখানে এই কালো হল তাদের নিচা করে রাখা মর্যাদার ও নিপীড়নের প্রতীকি বিরুদ্ধতা যার বিরুদ্ধে উঠে দাড়ানোর  প্রতীক হল লালচক্র চিহ্ন।

The party at its inception retained the flag of the South Indian Liberal Federation, which had a picture of a traditional type of balance signifying the idea of equality.[26] Its central theme was to remove the degraded status imposed on Dravidians

ভারতে দ্রাবিড়ীয়ান বলতে এরা পুরানা হিশাবে চার রাজ্য ছড়িয়ে আছে – কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু আর কেরালা।
কর্ণাটকঃ কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী ব্যাঙ্গালোর (নতুন নাম ব্যাঙ্গালুরু)। আর এই ব্যাঙ্গালোর রাজধানী থেকে ১২০ কিমির ভিতরে পশ্চিম দিকে টিপু সুলতানের মহীসুর বা ইংরাজিতে মাইসোর [Mysore] অবস্থিত। আর মাইসোর শব্দটা আবার অনেকে দাবি করেন যে মহিষাসুর শব্দের নাকি অপভ্রংশ যেখানে এর অর্থ  ‘মহিষের মত তুচ্ছ প্রাণীর গর্ভে জন্মানো অসুর’।
আর অন্ধ্রপ্রদেশ – এই নয়া রাজ্য গঠিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হবার পরে এবং এই অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী করা হয়েছিল বৃটিশ আমলের নিজামের হায়দ্রাবাদকে। এছাড়া মোগল আমল থেকেই বিকশিত লক্ষ্ণৌ এর পরের দ্বিতীয় বড় শহর ছিল হায়দ্রাবাদ – এই সেই হায়দ্রাবাদ। অর্থাৎ পুরানা হায়দ্রাবাদ রাজ-রাজ্যকে এর রাজধানী করে নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয়েছিল।
তেলেঙ্গনা  – এটা বাড়তি; মানে হল আগের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের এক অংশ এখন তেলেঙ্গনা হয়েছে। ভেঙ্গে গেলেও  বাকি অন্ধ্রপ্রদেশ এখন আগের নামেই তবে আলাদা রাজ্য।
তামিলনাড়ু – এই নামেই বুঝা যাচ্ছে এটা দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী তামিল এথনিক জাতি-রাজ্য, আগের নাম মাদ্রাজ।
আর সর্বদক্ষিণে হল কেরালা রাজ্য। এভাবেই পুরানা হিশাবে ভারতের দক্ষিণী চার রাজ্য (নতুন হিশাবে পাঁচ রাজ্য) মিলিয়ে দাক্ষিণার্ত। সমুদ্র সংযোগের দিক থেকে ভারতের নিচের দিকের বা দক্ষিণী অংশ এটা। যার আবার পশ্চিম দিকে আরব সাগর কিন্তু দক্ষিণ দিকটা তখনও বঙ্গোপসাগর বা এর সর্ব-পশ্চিম প্রান্ত – এভাবে বিভক্ত। আর দক্ষিণের আরব সাগরের সংযোগ দিয়েই আরব দেশ থেকে ব্যবসায়ীদের সাথে ধর্মপ্রচারকেরা আরবদেশ থেকে ১০০০-১১০০ সালের দিকে প্রধানত এই কেরালা দিয়েই প্রবেশ করেছিল। এভাবে প্রথম ব্যাপক মুসলমান সংযোগ ও ভারতে ইসলামের প্রসার শুরু হয়েছিল।  এমনকি খ্রীশ্চানিটিও বিশেষত পর্তুগীজেরাও এই দাক্ষিণার্ত দিয়েই ভারতে এসেছিল। প্রায় কাছাকাছি সময়ে।

মোদির হিন্দুত্ববাদের এযুগে এসেও আর্যদের অসমাপ্ত কাজ করার খায়েসঃ 
এখন,  একালে মোদির হিন্দুত্ব হিন্দিভাষাভাষি অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব-আধিপত্য ছড়িয়ে বসেছে। তাই এক অর্থে হিন্দুত্ববাদ যেন আর্যদেরই নয়া অনুসারি এবং ব্রাক্ষ্মণ-ইজম এর ধারা হয়েই থাকতে চায়। যদিও আবার সাধারণভাবে সব হিন্দুভোট তাকে পেতে ও নিতেই হবে। তাই আর্য-ভাব ও ব্রাক্ষ্মণ-ভাব সে প্রকাশ্যে আনে না; অন্তরে চর্চা করে।  আবার জায়গামত জাত-পাত ভেদের বা উচ্চ-বংশের ঠাকুর এর সুবিধাও পেলে উঠিয়ে নিবে। তাই মোদির হিন্দু শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা হল তার মানে – এটা পুরানা আর্য-শ্রেষ্ঠত্ব ধারণারই যেন আর এর একালের রূপ  হল আরএসএস-বিজেপি;  পুরানা আর্য কারবারিদেরই যেন একালের এক নয়া উত্থান!  তাই উত্তর ভারতের দিক থেকে দেখলে কর্ণাটক হচ্ছে দাক্ষিণার্তে প্রবেশের এক প্রবেশদ্বার যেন!
তবে মোদির বিজেপি-আরএসএস এদের খায়েসস হল আর্যদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা। মানে হল দাক্ষিণার্তকেও হিন্দি বলয়ের অধীনে ও প্রভাব প্রতিপত্যিতে নিয়ে আসা। এজন্য গত ২০১৮ সালের সরকার গঠন করার পর থেকে  বিজেপি-আরএসএস এই দাবি ও প্রপাগান্ডা করতে থাকে যে তারা দাক্ষিণার্ত প্রায় দখল কর্বে ফেলেছে! যদিও বাস্তবে ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়!

মোদির বিজেপি-আরএসএসের এমন যত স্বপ্ন বা খায়েসই থাক এনিয়ে দুটা বড় ঘটনার কথা বলব।
এক হলঃ সরাসরি এন্টি-ব্রাহ্মণ আন্দোলন যা প্রথমে সংগঠিতভাবে শুরু হয়েছিল  ১৯১৬ সালে তামিলনাড়ুতে। পরে ১৯৩৭, ১৯৪০ সহ অনেক বারই।  সেবার জাস্টিস পার্টি নামে দল গঠন করে তা শুরু হয়েছিল। পরবর্তিতে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতে আবার সেই আন্দোলন শুরু হয়েছিল তামিলনাড়ুতে পেরিয়ার রামস্বামী [ E. V. Ramasamy (Periyar)] নামে নেতার হাতে। সেসময় দ্রাবিড়ীয় সমাজে বিয়ে করতে গেলে যেন ব্রাহ্মণ-কে ডাকতে বা নির্ভরশীল হতে না হয় তাই এই আন্দোলন। তারা স্বাধীন ভারতের তামিল রাজ্য সরকারের হাত দিয়ে সংসদে এক সিভিল ম্যারেজের আইন পাশ করিয়ে নেন। যেহেতু রাজ্য সরকারের আইন ফলে ব্রাহ্মণ ডেকে এনে বিয়ে পড়ানোর বাধ্যবাধকতা এতে নাই হয়ে যায়।  পরবর্তিকালে রামস্বামীর এই আন্দোলনই ১৬৬৪-৬৫ সালের দিকে [এর আগে ১৯৬৩ সালে নেহরু  Official Languages Act in 1963 চালু করেছিলেন – এর বিরুদ্ধের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ ও বাধা হিশাবে উঠে এসেছিল। হিন্দি চাপানোর প্রতিবাদে সারা দাক্ষিণার্তে জুড়ে তারা প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল। তামিলনাড়ুতে কিছু মানুষ গায়ে আগুন ধরিয়েও প্রতিবাদ করেছিল। এই আইনে সারা ভারতের সব রাজ্যের স্কুলে হিন্দি ভাষা শিখা বাধ্যতামূলক করা হয়। যা দ্রাবিড়ীয় অঞ্চলে কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়  নাই।

আবার ওদিকে, অনেকে মনে করেন এরপরেই নেহরু মারা যান ১৯৬৪ সালে হার্ট এটাকে। তাই অনেকের ধারণা সেসময়ের দুটা রাজনৈতিক বিপর্যয়ের শক নেহরু শারীরিক-মানসিক ভাবে অসহ্য হয়ে যায় বলে অনেকে মনে করেন।  সে দুই রাজনৈতিক ঘটনার এক হল, নেহেরুর হিন্দি-ভাষার ভারত-সাম্রাজ্য বা হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা বানিয়ে ভারত গড়ার খায়েস মার খেয়ে যাওয়া। আর দ্বিতীয়টা হল ১৯৬২ সালে চীনের ভারত আক্রমণ এবং আসাম দখলসহ (সাথে লাদাখের অনেক অংশ-ভুখন্ড ও জম্মুকাশ্মীরের বর্তমান আকসাই চীন) এর ঘটনা; যেটা  ২১ নভেম্বর ১৯৬২ তে চীন একমাস একদিন পরে স্বেচ্ছায় সেনা প্রত্যাহার করে ফিরে গেছিল।
আর নেহেরুর হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার জোড়জবরদস্তির প্রতিক্রিয়ায়, এতে দ্রাবিড়ীয় চার রাজ্য আরও বেশি করে এন্টি-হিন্দি রাজ্য হয়ে উঠেছিল এবং এখনও সেই সেন্টিমেন্ট বর্তমান যা সবচেয়ে বেশি তামিলনাড়ুতে। সেখানকার ডিএমকে পার্টি এরপর থেকে তামিলনাড়ুতে প্রধান দল হয়ে উঠে আছে। পরবর্তিতে অবশ্য কেবল ডিএমকে দলটাকে ছেড়ে বেরিয়ে আরেকটা আন্না-ডিএমকে দল হয়েছে। যারা দুই দল অদলবদল করে রাজ্য সরকারে ক্ষমতায় আসে – অন্য কোন দল নাই। ওদিকে নেহেরুর মৃত্যুর পরের প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী কম্প্রোমাইজ হিশাবে হিন্দি-কে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারটা কনষ্টিটিউশনে উহ্য করে রাখেন। যেটা পরবর্তিকালে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এক অবজারভেশন-রায়ে ঘোষণা করে যে ভারতে রাষ্ট্র-ভাষা বলতে কিছু নাই, ভাষার বাধ্যবাধকতাও নাই। তবে অফিসিয়াল ভাষা বলে অনেক কিছু আছে যা সব মিলিয়ে এখন ইংরাজি ও হিন্দিসহ মোট ২২টার মত।

গত ১৯১৮ সালের মানে আগের বারের কর্ণাটক রাজ্য নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল ঘাটতিতে থাকা নয়্টা আসন কিনে নিয়ে। আর তা জুগিয়েছিল কর্ণাটকের আরেক ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী সামাজিক-ধর্মীয় গোষ্ঠি যাদেরকে লিঙ্গায়েত [Lingayat or  Lingayatism] নামে ডাকা হয়।   যারা লিঙ্গায়েত নিয়ে আর একটু পড়াশুনা করতে চান তারা এখানে লেখাটা পড়তে পারেন।  এরা বলাই বাহুল্য হিন্দুত্ববাদের বিরোধী।  এছাড়া  ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব লিঙ্গায়েত রাজ্য-সংসদ সদস্য বিজেপিতে বা কংগ্রেসেই সবাই এমন ছিল না। অর্থাৎ দুদলের মধ্যেই লিঙ্গায়েত সদস্য ছিল। লিঙ্গায়েত-রা কর্ণাটক ভোটারদের মধ্যে ১৭% জনগোষ্ঠি তা হলেও তারা দুই দলের মধ্ইযে নির্বাচিত সদস্য হয়ে ছিল। কিন্তু মোদি সেবার লিঙ্গায়েতদের জজবা তুলে তাদের সব রাজ্য-সংসদ সদস্যকে দলছুট করে নিজ দলে ভিড়ান। এভাবেই তার নয় আসনের খামতি তিনি পূরণ করে সেবার সরকার গঠনে সফল হয়েছিল।  কিন্তু এবার নির্বাচনের আগে লিঙ্গায়েত হবু রাজ্য-সংসদ সদস্যদের কংগ্রেসে যোগ দিবার ঝড় উঠেছিল। কিন্তু পরে ফলাফল প্রকাশের পরে একটা রিপোর্ট এমন ফলাফলের ব্যাখ্যা করে বলেছে যে এতে কংগ্রেসের পক্ষ্যে সব লিঙ্গায়েত সদস্যের আসন যায় নাই সত্য। তবুও তা এমন হয় নাই যে কংগ্রেস এতে তেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কারণ শেষ বিচারে ভোট ব্যালেন্স হয়ে গেছে।

ওদিকে ভোটারদের আরেক বড় চাঙ্ক হল মুসলিম ভোট। কর্ণাটকে মুসলমান ভোটারদের সংখ্যা মোট ভোটারের ১২% এর মত।  আর এতে মোদির সেই পুরানা কৌশল -ইসলামোফোবিয়া আর ঘৃণা ছড়ানী চালু করেছিল। আপনাদের অনেকেরই গত ২০২২ ফেব্রুয়ারিতে মুসকান নামের এক কলেজ তরুণীর সাহসী প্রতিবাদের ভিডিওদেখেছেন; এখানে টুইটারে দেখেন, মনে আছে নিশ্চয়। হা সেটাই ছিল মোদির নোংরা পুরানা কৌশল যে তরুণদের মাঝে হিজাব তর্ক তুললে তাতে ইসলাম-ঘৃণা জোরদার হবে আর হিন্দু-ভোটারদের মুসলমান-বিদ্বেষী করতে পারলে তাতে বেশির ভাগ হিন্দুভোট বিজেপির পক্ষে আসবে – এই ছিল মোদির অনুমান। কিন্তু ভাগ্যের ফের মুসলমান-বিদ্বেষী জজবা তেমন করে কর্ণাটকে উঠে নাই।  মোদি মুসলমান ঘৃণা এতই তুঙ্গে তুলতে চেয়েছিলেন যে তার ২২৪ আসলে প্রার্থীদের মধ্যে একটা আসনেও মুসলমান প্রার্থীকেই রাখেন নাই।  তাই ফলাফল দেখে এখন মনে করা হচ্ছে মুসলমানেরা হিজাব মামলায় আদালতে তাদেরকে হারিয়ে দেয়া হলেও নির্বাচনের আগে তারা সংগঠিত হয়ে কংগ্রেসের পক্ষে একযোগে ভোট দিতে পেরেছেন।

এব্যাপারে এটা মনে করা অমুলক হবে না যে  এক্ষেত্রে আমেরিকার সমর্থন মানে মোদিবিরোধী  “রাহুলের নেতৃত্বে বিরোধী দলকে” নৈতিক সমর্থন দিয়ে যতটা সম্ভব সহায়তা দেয়া – এটা যথেষ্ট কাজ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা বিরোধীদলের সবাইকে আস্থা দিয়েছে যে তারা চাইলে মোদির বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে পারে, মোদিকে হারাতেও পারে।  আসলে বিরোধী জোটের পক্ষে অ্যামেরিকান সংসর্গ সম্পর্কে আগেই বলেছি এটা সাবধানী ও পরোক্ষ পদক্ষেপ হলেও গ্লোবাল মহলে মোদি সরকারের আভ্যন্তরীণ পরিচালনায় কতটা সে স্বৈরাচারী আর মূলত মুসলমানবিদ্বেষী ঘৃণা প্রচারক – মোদির এই পরিচয়কে বাইরের দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকা এক বড় সহায়ক।
যদিও ভারতের রাজনীতি এপর্যন্ত ভিতরের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কখনই বিরোধীদলকে বাইরে নিতে দেয়া হয় নাই। এটা সম্ভব হয়ে এসেছে কারণ বেশির ভাগ দ্বন্দ্ব পাকিস্তান বা কাশ্মীর-কেন্দ্রিক। অথবা কখনও পাঞ্জাব বা আসামের মত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সমস্যাকে দেশের স্বার্থ বলে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করা হয়ে এসেছে।  এছাড়া জন্ম থেকেই ভারত এত উগ্র জাতিবাদ (যা মূলত হিন্দু-জাতিবাদ) দিয়ে শাসিত- পরিচালিত হয়ে এসেছে যে এটা মূলত শেষবিচারে এক “এন্টি-পাকিস্তানি জাতি” ধারণা; তাই এটা সহজেই এক উগ্র-হিন্দুজাতিবাদ ধারণা হতে পেরেছে। [অনেকে অবশ্য  পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এর উল্টাটাও বলবেন।]
ভারতে কখনই  রাজনৈতিক অধিকারের ইস্যুকে অথবা জনগণের নাগরিক অধিকারের অথবা বাক ও ব্যক্তির অধিকারের ইস্যুকে  যেকোন রাষ্ট্রের গঠনে জনগণের মৌলিক রাজনৈতিক অধিকারের জায়গা থেকে দেখতে দেয়া হয় নাই। এবং সবচেয়ে বড়কথা রাজনীতিবিদ ও জনগণের মধ্যে সেই রাজনীতিক চিন্তার অভ্যাস বা চর্চাই হতে দেয়া হয় নাই। প্রতিটা উগ্র-জাতিবাদী জাতিরাষ্ট্রে এমনটা হওয়াই খুব স্বাভাবিক; আর বিপরীতে শাসকের প্রথম পছন্দও [নেহেরু সহ সকল ভারতীয় শাসক] তাই একটাই উগ্র জাতিরাষ্ট্র যেখানে জাতিবাদ, দেশপ্রেম, দেশ মাতৃকা ইত্যাদি এসব শব্দের আবেগ-সুরসুরি তৈরি করে জনগণকে দাবায় রাখাটাই শাসকদের কমন কৌশল হয়ে থাকে।
তৃতীয় বিশ্বের দেশে এমন হওয়ার পিছনে আরেক দায়ী ফ্যাক্টর হচ্ছে প্রগতিশীল-কমিউনিস্ট। আসলে এদের রাষ্ট্র- সম্পর্কিত অস্পষ্ট ও অপুষ্ট ধারণাই  [শ্রেণীর রাষ্ট্র ধারণাই] এজন্য দায়ী।  যেটা অন্যভাষায় মনে করিয়ে দিলে কমিউনিস্ট চিন্তায় অধিকারের ধারণা নাই শুধু না এটা হারাম – এমন হওয়াটাই সেই দায়ী ফ্যাক্টর। নয়া চলতি শতকের শুরু থেকে আবার সেটা জঙ্গীবাদ দমনের নামে বিরোধী রাজনীতিকের নির্মুলকরণ কর্মসুচি হয়ে দাড়িয়েছে।  যদিও আমেরিকা আজ মোদির চাপে দাবিয়ে রাখা ভারতের নাগরিক রাজনৈতিক অধিকারকে বের করে  মুক্ত  করে আনার পক্ষে কাজ করছে কিন্তু এই  জঙ্গীবাদ দমনের নামে জনগণের অধিকার ও বিরোধী রাজনীতিকে কোনঠাসা করে রাখার পক্ষে শাসকের এই নয়া চর্চার জন্য খোদ আমেরিকার ওয়ার অন টেরর নীতিও কম দায়ী নয়!  আবার, মোদির ক্যাশিয়ার আদানির শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি ও তাতে ধস নামানোর পিছনে এতে পরিবেশ তৈরি করে দিতে অ্যামেরিকার কিছু সহায়ক ভুমিকা থাকায় এর সুবিধা ভারতের বিরোধী দলেরা পেয়েছে। যেমন আদানির পতনের পরে গ্লোবাল শেয়ার মার্কেটের উতসাহীদের সাথে নিয়ে আরেক শেঠ শেয়ার ব্যবসায়ী জর্জ সোরেস, তিনি এক আসরে লম্বা বক্তৃতা দিয়ে আদানিকে সমালোচনা করে শুইয়ে দেয়া – এটা শেষবিচারে ভারতের বিরোধিদের পক্ষে গিয়েছে।  যদিও ভারতের বিরোধী রাজনীতিকদের  আজকে আমেরিকার এই সমর্থন নেওয়ার কিছু নেগেটিভ এফেক্টও আছে যা কার্যকর হতে পারে। তবুও বর্তমানে সতর্কভাবে অ্যামেরিকান এই সমর্থন নেয়াটা খুবই সঠিক ও হালাল কাজ-ই হবে।

 Temple run: Hard lessons for Rahul Gandhi’s ‘soft Hindutva’

এর পিছনের মূল কারণ হল ভারতের এক বাস্তবতা। সেটা হল আমেরিকা আজ আছে বলেই “রাহুলের নেতৃত্বে বিরোধী দল” বলে কোন কিছুই ভারতে সম্ভব হচ্ছে যা এতদিন সম্ভব ছিল না। কংগ্রেস বা রাহুল গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক চিন্তায় বড় খামতি এজন্য দায়ী।
যেমন ২০১৮ সালে থেকেই মোদী বিরোধী রাজনীতি বিশেষত মোদির হিন্দুত্ববাদ বিরোধীরা কিভাবে মোকাবিলা করবেন – এনিয়ে রাহুল ও কংগ্রেস চরম অযোগ্যতার প্রমাণ রেখেছিল। তারা ধরেই নিয়েছিল মোদির তখন প্রায় পাঁচবছরের হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি ছেয়ে ফেলাতে পেরেছিলেন। আর এতে কংগ্রেস ধরেই নিয়েছিল  যে এরপর থেকে ভারতে বোধহয় আর কংগ্রেস নিজের রাজনীতিও হিন্দুত্ববাদকে আপন ও অনুসরণ করে গড়ে নেয়া দিক এসে গেছে। তাই ২০১৯ সালের কেন্দ্রের নির্বাচনের আগে্র বছর গত কর্ণাটকের রাজ্য নির্বাচনে রাহুল নিজে এক মন্দিরে পুজা দিয়ে কংগ্রেসের সফট হিন্দুত্ববাদ চালু করেছিলেন উপরের ছবি ও লিঙ্কে গিয়ে দেখতে পারেন। তারা ধরেই নিয়েছিলেন কংগ্রেসও হিন্দুত্ববাদের নামে ভোট না চাইলে ভারতের হিন্দুরা তাদেরকে আর ভোট দিবে না! এই মিথ্যা অনুমানের পিছনে ছূটতে যাওয়া কংগ্রেস এটাই ইঙ্গিত করে আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ১৮৮৫ সালে জন্ম নেয়া কংগ্রেস এটা তো হিন্দু জাতিরাষ্ট্র এর ভারত কায়েমেরই প্রথম রাজনৈতিক দল হয়েই গড়ে উঠেছিল।

অথচ এর বেকুবিপনার পাল্টা উদাহরণ কিন্তু তখনও রাহুলের সামনে ছিল।
কলকাতার রাজনীতিতে তৃণমূল সেই ২০১১ সাল থেকে রাজ্য সরকারে ক্ষমতায় আসছে। আর সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় হল যে তৃণমূলের মমতা কখনই কোন ব্রান্ডের কোন হিন্দুত্ব এর নামে হিন্দুদের কাছে ভোট চাইতে হয় নাই, তবু যথেষ্ট হিন্দুভোট তার দল পেয়েছে।   কোন হিন্দুত্ব বয়ান ছাড়াই তিনি লাগাতর তিন তিনবার হিন্দুদের ভোট পেয়ে রাজ্যে সরকার গড়ে চলেছেন। কোন সমস্যা হয় নাই! কেন? তার মানে একবারও এদিকে রাহুল বা কংগ্রেস একবারও চোখ মেলে তাকায়নি! এটাই কংগ্রেস দলের ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে যাবার পিছনের অন্যতম মূল কারণ, যেন এটা কংগ্রেসের নিজেই নিজেকে যেন বলা যে এই দলের আয়ূ শেষ!!! আজকে রাহুল “ভারত জোড়ো” [ মুসলমান ঘৃনাবিদ্বেষে জনগণ বিভক্ত হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে জনগণের একত্র হওয়া বা জোড়া লাগানো পক্ষে এক প্রচারণা] নামে পদযাত্রা কর্মসুচিতে এসেছে।  এটা তখনই কংগ্রেস শুরু করেছে যখন পিছনে অ্যামেরিকান ফ্যাক্টর উপস্থিত হয়ে কংগ্রেস রাজনীতিকে নয়া সাহস ও দিশা দিয়েছে!  অর্থাৎ মোদি যুগের ভারতে সবাইকেই একমাত্র হিন্দুত্ববাদের নামেই ভোট চাইতে হবে – এই মিথ্যা অনুমান থেকে রাহুল ও কংগ্রেস এখন বের হয়ে এসেছে। যেটা না করে স্ফট হিন্দুত্বের পক্ষে দাড়ানোটা শুধু আত্মঘাতিই তা না; কংগ্রেস দল যে মূলত জন্ম থেকেই হিন্দু-ইজমের [গান্ধীর Hinduism -তাও বলা চলে] দল হিশাবে গড়ে তোলা হয়েছিল এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ!

সবশেষে একটা কথাঃ যদিও কর্ণাটকের নির্বাচনে মোদিবিরোধীরা বিরাট জয় পেয়েছে এরপরেও খুবই শক্তভাবে পাঠক সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে এই নির্বাচনের দুটা কনষ্টিটিউশনাল প্রতিষ্ঠান যারা আইনীভাবে দায়ীত্বপ্রাপ্ত ছিল এই নির্বাচনকে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার – এমন দুই প্রতিষ্ঠান হল সুপ্রীম কোর্ট ও নির্বাচন কমিশন।  যাতে এমনকী সরকার বা সরকারি দলের বিরুদ্ধেও নির্বাচনি আইন ভঙ্গের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেন। কিন্তু আগের নির্বাচনেওর মতই এখানে এওদুই প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের হাত থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধি দলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অপব্যবহার ও হয়রানি করে যাচ্ছে। এমন প্রতিষ্ঠান গুলো যেমন সিবিআই [CBI – Central Investigation boreau), ইডি ED [Enforcement Directorate, For Economic Law], আয়কর অধিদপ্তর ইত্যাদি এগুলো প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিরোধীদের হয়্রানি করা হচ্ছে যাতে চাপে ফেলে বিরোধীদলের নেতাদেরকে সরকারের সাথে আপোষে আসতে বাধ্য করা যায়। মোদির চাপের কাছে সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান নত হয়েছে, মোদির খাম খেয়ালির অধীনস্ত হয়েছে।
এরকম দশটা ফ্যাক্টর মোদি বিরোধিদলের বিরুদ্ধে এখনও খাড়া করে রেখেছে। The WIRE পত্রিকা এমন দশটা ফ্যাক্টরের কথা উল্লেখ করে রিপোর্ছেট করেছে যার শিরোনাম Ten Factors to Remember Amidst the Congress’s Win and BJP’s Defeat in Karnataka। পাঠকের উচিত হবে এই দশ বাধার কথাও যেন তারা জেনে রাখে।

কর্ণাটকের রাজ্য নির্বাচন ভারতের সকল বিরোধিকেই সাহস যোগাক যে তাদের একত্রে উঠে দাঁড়াতেই হবে। যদিও সামনে অনেক পথ আর তাতে অনেক যদি-কিন্তু আছে! আপাতত তাদের জন্য শুভ কামনার বেশি আগানোটা আমার জন্য প্রয়োজনীয় নয়!  তাই শুভ কামনা জানিয়ে শেষ করছি!

+++++++
গৌতম দাস

রাজনৈতিক বিশ্লেষক

 

 

Leave a comment