ভারতের স্বার্থে শাহরিয়ারের চীন বা হাসিনাবিরোধিতা দেখানোর বাড়াবাড়ি
গৌতম দাস
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯ঃ ৪৭ সন্ধ্যা
https://wp.me/p1sCvy-4XV
‘চীনের উত্থান : উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
শাহরিয়ার কবীর এবার একেবারে ধরা খেয়ে গেছেন। এটা টু মাচ[too much] হয়ে গেছে; তিনি সীমা ছাড়িয়েছেন। এছাড়া, আরেকটু বারাবাড়ি করলে এবার হয়ত দেখব তাকে উপড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে।হয়ত দেখব তিনি নিজেই লিখে দাবি করছেন যে তিনি বোবা হয়ে গেছেন!!! হা ব্যাপারটা আসলেই এতই সিরিয়াস!!
বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন কী করে পার হবে, হাসিনা সরকার টিকে যেতে পারবেন কীনা এটা একটা অনিশ্চয়তা যা কেউই কী দাঁড়াবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারে; তাতে আপনি যে-পক্ষেরই লোক হন। তবে আপনি আত্মবি্শ্বাস দেখাতে পারেন, প্রপাগান্ডা করতে পারেন বা এমন পক্ষ-বিপক্ষ অনেক কিছুই! কিন্তু অন্তত পরবর্তি ছয়-সাত মাসের পরেই একমাত্র নিশ্চিত জানা যাবে যে ঠিক কী ঘটল। এর আগে দুপক্ষই প্রাণপণ নিজের পক্ষে চেষ্টা করে যাবে এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু পরিস্থিতি্তের কোন আন্দাজ ছাড়াই এমন সময়ে শাহরিয়ার ভারতের এক দালালির ঠিকাদারি নিয়ে এসেছেন। সেটা হল হাসিনা যেন চীন-ঘনিষ্ট না হন – ভারতকে ফেলে চীনা ঘোরতর সহযোগিতা নিতে না যান ইত্যাদি এমন সেসব প্রপাগান্ডা!
এটা কে না জানে যে হাসিনা এই সংকটে নিজে যেকোনভাবে ক্ষমতায় টিকে যাবার চেষ্টা করবেন। তাতে চীনের কোলে না কার কোলে উঠে এটা পার হবেন সেটা তো সেকেন্ডারি বিবেচনা! প্রাইমারি বিবেচনা হল, সংকট পার হওয়া! অথচ মামার বাড়ীর আবদারের মত ভারত বলছে যে না তুমি চীনের কোলে উঠতে পারবা না!!! আর শাহরিয়ারকে লাগিয়েছে ঠিকা দিয়ে এনিয়ে প্রপাগান্দা করতে! সব বিচারেই এটা অর্থহীন! কারণ হাসিনার এক নম্বর বিবেচনা হল, ক্ষমতায় টিকে যাওয়া। আগেও তাকে টিকতে হবে। টিকে গেলে এরপরে যে হয়ত ভারতের জন্য কিছু করতেও পারে। অথচ ভারতের পোলাপানি আবদার হল যে না, হাসিনাকে সবার আগে ভারতের স্বার্থ মানতে হবে, বুঝতে হবে??? কোন সুস্থ মানুষ এভাবে চিন্তা করে না! আর এই অসুস্থ আর অবাস্তব চিন্তাটাকে বাংলাদেশে ফেরি করার ঠিকা নিয়ে এসেছে শাহরিয়ার কবীর! যেন ভারতের এই ঠিকা টা না পেলে বা নিলে আগামি বছর সে না খেয়ে থাকবে যেন এমন মরণপণ অবস্থ দশা তার! যেন এক রেলওয়ে কুলি যে লাগেজটা বহন অযোগ্য কিনা তা বুঝবার অবস্থা নাই; বাসায় অভাব এত বেশি!!
বাংলাদেশের প্রো-ইন্ডিয়ানদের এক প্রকাশ্যে মহড়া হয়েছে গতকাল। এরা সরকারের ঘরে উঠে বসে থাকা লোকজন এবং এরা সরকারের ঘরে বসেই সরকারের বিরোধীতা করতে চাইছেন।
এরা সরকারের ঘরেই বসে থাকা লোক এবং বাংলাদেশিই; কিন্তু প্রো-ইন্ডিয়ান এলিমেন্ট। ভারতের বাংলাদেশ নীতি দেখভাল করার ঠিকাদার বলা যায় সম্ভবত এদেরকে!
গতকাল, এক পুস্তক প্রকাশনী বা “মোড়ক উন্মোচন” অনুষ্ঠান হয়েছে – পত্রিকার ভাষায় বললে, “মঙ্গলবার বিকালে প্রেস ক্লাবে “চীনের উত্থান: উদ্বিগ্ন প্রতিবেশি” শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান” হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর (মানিক) রচিত এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময় মূখ্য আলোচকের বক্তব্য দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির”।
বইয়ের নাম এর মধ্যে “উদ্বিগ্ন” শব্দটা আছে – আর সেই উদ্বিগ্ন প্রতিবেশিটা হচ্ছে বাংলাদেশ নয়, সেটা আসলে ভারত। কিন্তু সে তার সেই উদ্বিগ্নতা – এটা সে চালিয়ে দিতে চায় বাংলাদেশের নামে। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে বর্তমান হাসিনা সরকারের নামে।
শাহরিয়ারের সারকথা হল – চীন খারাপঃ
কিন্তু কেন খারাপ?
১। শাহরিয়ার বলেছেন, … “এই বইয়ে (চীনের উত্থান: উদ্বিগ্ন প্রতিবেশি) প্রাসঙ্গিকভাবে উঠে এসেছে কীভাবে চীনের স্বাধীনতায় ভারত বিশাল অবদান রেখেছে। তখন স্লোগান ছিলো হিন্দি-চীনি ভাই ভাই। সেই সৌহার্দ্য থেকে কীভাবে সংঘাতে পৌঁছল…”।
উপরে কথিত, চীনের স্বাধীনতায় ভারত বিশাল অবদান – এই তথ্য ভুল। অন্তত গত ২০২২ ডিসেম্বরে কলকাতার প্রাক্তন সাংবাদিক ও গোয়েন্দার সংস্থার লোক সুখরঞ্জন দাসগুপ্তের এক লেখা ছাপা হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় শিরোনামঃ চীন-ভারত সম্পর্ক কোন পথে। সেই লেখার ভাষ্য শাহরিয়ারের এই তথ্য সাপোর্ট করে না।
আর খুবই অল্পকথায় বলতে ঘটনাটা আসলে, ১৯৬০ সালে চীন-ভারত সম্পর্ক ঘনিষ্ট করতে নেহেরু চৌএনলাইকে কলকাতায় এনেছিলেন। আর সেখানকার শ্লোগান ছিল হিন্দি-চীনি ভাই ভাই অথবা নেহেরুর পঞ্চশীলা নীতি ইত্যাদি। তাই এটা না চীন (১৯৪৯) না ভারত (১৯৪৭) এমন কারো স্বাধীনতায় কারো অবদানের ঘটনাই নয়। আর সেটা আবার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট (1953 to 1961) আইসেনহাওয়ারের আমল। যিনি বিখ্যাত বা কুখ্যাত – সিআইএ পাঠিয়ে দেশ দখল- এর কারণে। তিনি নেহেরুকে পটিয়ে তিব্বতের দালাইলামাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও তাদেরকে মাও-বিরোধী ততপরতায় সহায়তা দিতে সি আইএ পাঠিয়েছিলেন ভারতের মাধ্যমে – যারা ভারতে থেকে এই ততপরতা করবে। কিন্তু মাও এর সরকার এসব টের পেয়ে যখন সামরিকভাবে ধাওয়া দেন তখন সিআইএ দালাইলামাকে সাথে নিয়ে তিব্বত ছেড়ে পালিয়ে ভারতের আশ্রয়ে পর্যন্ত তুলে দিয়ে গেছিল। কিন্তু তাদের ভারতে প্রবেশ, সেটা ভারতের হিমাচল প্রদেশ দিয়ে নয় যেখানে এখন দালাইলামা আশ্রিত। সিআইএ অনেক ঘুর পথে আসামের দিশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে এসেছিল। আর চীনারা সেই ধাওয়া করতে এসেই তারা পুরা আসাম দখল করেছিল আর একমাস একদিন পরে নিজেরাই তা ছেড়ে দিয়ে চীনে ফিরে যায়।
কাজেই শাহরিয়ারের উচিত একটু কষ্ট করা নেট ঘেটে দেখা সস্তা ভারতীয় যা মনে চায় লিখাগুলোর ফাঁদে না পরা!
২। শাহরিয়ার ঐ সভায় বলেছেন, “…এদিকে নিজস্ব ভূরাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে চীন কাউকে সাহায্য করেনি। তাই চীন-ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে কিনা সে বিষয়ে ভাবতে হবে”।
এখানে হঠাত করে চীন-ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব – এর কথা বললেন কেন? বললেন কারণ “শাহরিয়ার ভারতের স্বার্থপন্থী” হয়ে এবার উলটা হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছেন। আর তা বলছেন যেন ভারতের মুখপাত্র হয়ে যে, হাসিনা আপনি – “চীন ও ভারত দুদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছেন – এটা বাংলাদেশের জন্য বিপদ আনবে। তাই হাসিনা, সেটা না করে আপনি কেবল ভারতের সাথে লেগে থাকেন”। ভারতের এমন খায়েসটা ভারত শাহরিয়ারকে দিয়ে অভিযোগের আকারে তুলিয়েছে।
এতা বলাই বাহুল্য আসন্ন নির্বাচন ইস্যুতে হাসিনা ভীষণ আমেরিকান চাপে আছেন। কোনভাবে একটা নির্বাচন হয়েছে আর তিনি আবার জিতেছেন – এটা ঘোষণা দিতে পারলে এরপর বাকিটা মানে আমেরিকান পরের চাপ ডিঙিয়ে টিকে থাকার ব্যপারে চীন তাকে সাহায্য করবে – এমন একটা ঝাপসা বয়ান বাজারে চালু আছে।
এটা আদৌ সত্য কিনা তেমন ডকুমেন্ট অর্থে তা কেউ দেখেছে জানা যায় না। কিন্তু মোদির ভারত এই ঝাপসা বয়ানের ভিত্তিতেই হাসিনা বিরোধিতা শুরু করেছে বা প্রপাগান্ডাও শুরু করেছে। আর এটাই এসব কথা ঢাকায় চালু হবার পিছনের কারণ। আর এসব প্রপাগান্ডাই বাংলাদেশে চীন-হাসিনা বিশেষ সম্পর্কের রহস্য হয়ে ঝাপসা বয়ান হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। শাহরিয়ারের এই বক্তৃতা সেই (ঝাপসা বয়ান ছড়ানোর) ততপরতারই একটা অংশ! তবে মোদি এই অনুমানের উপর দাঁড়িয়ে এর কারণেই, বাংলাদেশকে ব্রিকসে উঠতে দেয় নাই – মনে করা সম্ভবত ভুল হবে না!। যদিও মুখে মুখে বা প্রকাশ্যে হাসিনা-মোদির মধ্যে এখনও অনেক ভাব – সেটাও জারি আছে। হাসিনা জি২০ এর সভায় যাচ্ছেন। অতএব সারকথায় ভারতের চোখে চীন খারাপ – একথাটাই এখানে শাহরিয়ার বলছেন। অথচ শাহরিয়ারের এই ততপরতাই বলে দিচ্ছে ঝাপসা বয়ান ভাষ্যটা ভারতের। যেটা শাহরিয়ার ফেরি করতে এনেছেন।
৩। শাহরিয়ার আরো বলছেন, চীনের ঋণের ফাঁদে পড়েছে শ্রীলঙ্কা, এর আগে একইভাবে পাকিস্তানও ঋণের ফাঁদে পড়েছিল। অথবা আরও সার করে অন্য জায়গায় বলেছেন, “চীন ভূরাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য এই অঞ্চলে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। তাদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা নেওয়ার আগে ভাবতে হবে”।
শাহরিয়ারের প্রথম মন্তব্য ঋণের ফাঁদে প্রসঙ্গ বাংলাদেশের বেলায় সত্যি নয়। পরিসংখ্যান বলে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ প্রশ্নে চীনের ঋণ তৃতীয় বড় ঋণ। তা এনিয়ে আর কথা বাড়াবো না। তবে পরের কথা যেটা বলেছেন এটাই সঠিক আর এটাই মুখ্য সুত্র যে “ভূরাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য এই অঞ্চলে ঋণ সহায়তা” । তবে আমি কেবল ‘ভূরাজনৈতিক’ এই আধো-বোলের আন্দাজি শব্দটা ফেলে দিব। বদলে “গ্লোবাল ইকনমি” বলব। আর পরের আধিপত্য শব্দটা ফেলতে বলব না তবে অর্থ আরো খুলবার জন্য সাথে প্রভাব বিস্তার শব্দটা লাগিয়ে নিতে বলব। আর কথাটাকে এবার সাজিয়ে বলব – গ্লোবাল অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য ঋণ দেয়া ঠিক তা নয় বরং, এটা সারা দুনিয়াকে ব্যাপক অবকাঠামো ঋণ দিবার মুরোদ – এটা এসে গেলে একটা দেশ এটা দিয়েই এরপর গ্লোবাল অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়ে উঠে – এভাবে বলব।
যেমন ধরেন ভারত একই চীনের পথে হাটে না কেন? কারণ ভারতের অর্থনীতির সেই মুরোদ নাই, এখনও হয় নাই। আবার তাহলে এর আগে আমেরিকা কী করেছিল? হা ঠিক আজ চীন যা করে নেতা হতে চাইছে ১৯৪৫ সালের পরে আমেরিকা ঠিক সেকাজ করেই গ্লোবাল অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার বা গ্লোবাল নেতা হয়েছিল। এমনকি মোদির ক্ষমতার প্রথম পাঁচ বছরে ভারতেও চীনা ঋণ কত অথবা এমনকি মোদি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালিন গুজরাতে চীনা ঋণ কত ছিল – সেসব তথ্য মোদি লুকিয়ে রেখেছে কেন? পারলে তা বের করেন!!!!
ভারত চীনা প্রভাবের বিরোধী হতেই পারে। কিন্তু তা বলে শাহরিয়ার চীনা ঋণ খারাপ বা অনৈতিক ধরণের বাজে কথা – এসব তার না করাই ভাল!
মনে রাখবেন হাসিনা যে সর্বক্ষণ উন্নয়নের গল্প শুনাচ্ছে এই ‘উন্নয়ন’ আর (চীনের দেয়া) অবকাঠামো ‘ঋণ’ – এদুটা একই কথা – দুদিক থেকে দেখে বলা। হাসিনা চীনা-ঋণ না পেলে বা নিলে কী করত??? ভারতের ঋণ নিত? ভারতের সে মুরোদ আছে????? একারণে, শাহরিয়ারের এসব কথা ফালতু কথা!!! আজাইরা ভারতকে চীনের উপরে – যেন বিশাল মুরোদের এমন গল্প ছড়াতে এসেছেন। অথচ এসব অর্থহীন!!!
৪। শাহরিয়ার আরো বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের ব্যবহৃত সব বুলেট চীনের: শাহরিয়ার কবির”। শাহরিয়ারের এসব শুরশুরি উস্কানে আবেগ আওয়ামি লীগারেরাও খাবে না; প্রগতিবাদীরাও না। শাহরিয়ারের এটা হয়েছে আসলে পোপের চেয়েও বেশি খ্রীশ্চান হতে চাওয়া যেন! অনেক দেশেরই স্বাধীনতা যুদ্ধের শত্রু-মিত্র অনেক রকম ছিল, থাকে। ছিল বলছে মানে হল সেটা ধরে আজীবন বসে থাকা অবাস্তব চিন্তা। যেমন ধরেন ভিয়েতনামের (স্বাধীনতার যুদ্ধে) চেয়ে বড় আমেরিকান নিষ্পেষণ খুব কম দেশের ইতিহাসে আছে। এজেন্ট অরেঞ্জ (Agent Orange) শব্দটা গুগলে যেকেউ সার্চ দেন দেখেন কী বের হয়, কী এটা! এই কেমিক্যাল উড়োজাহাজ থেকে ছিটিয়ে ভিয়েতনামের গভীর বনজঙ্গল সব সাফ করা হয়েছিল যাতে বিদ্রোহিরা বনে লুকাতে না পারে; কারণ এই কেমিক্যাল toxic, plant-killing chemical (herbicide)।
কিন্তু মানুষের জীবনের উপর এর প্রভাব সবচেয়ে ভয়াবহ, যেদিকটা সকলেই উপেক্ষা ক্করেছিল। ভিয়েতনামিজদেরকে আমেরিকা মানুষ মনে করে নাই! এতই তীব্র ছিল তাদের নিজ স্বার্থবোধ। কারণ এটা মানুষের জীবনে cancer, congenital (birth) disorders and life-threatening health complications. নিয়ে আসে। আজও ভিয়েতনামের কোন দম্পতি জানে না যে তাদের বাচ্চা জন্ম নিতে গেলে কেমন বিকলাঙ্গ হবে – হাত স্বাভাবিক কিন্তু হঠাত করে কবজি থেকে বা কনুই এর পর থেকে তা আর নাই, একইভাবে পা নাই – সারকথায় ডিফেক্টিভ বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে এখনও যার কোন প্রতিকার নাই। কিন্তু এই ভিয়েতনামেরই আজ সবচেয়ে বাণিজ্য সম্পর্ক ভাল আমেরিকার সাথে; অন্যতম রপ্তানি গন্তব্য! এখন এর মানে কী ভিয়েৎনামিজরা খুব খারাপ!
শাহরিয়ার আপনি ভারতের স্বার্থে দালালির ঠিকাদারিতে বাংলাদেশের মানুষকে আবেগ-ইমোশনাল করে শুড়শুড়ি তুলার চেষ্টা করছেন? এখন বলেন কোনটা খারাপ? ভারতের কাছে আবার বেচবেন? বাংলাদেশের মানুষের আবেগ চটকাচ্ছেন কেন???
৫। শাহরিয়ারদের এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ফ্লপই হবে। ভারতের অর্থের অপচয়ই হবে। কারণ শাহরিয়ারদের টার্গেট শ্রোতার ঠিক নাই।
এটা বলাই বাহুল্য যে যারা বাংলাদেশে এখন হাসিনাবিরোধী তারা শাহরিয়ারদের টার্গেট শ্রোতা গ্রুপ নয়। আর এমনিতেও বাংলাদেশের আম-মানুষ তারা খোদ শাহরিয়ার এন্ড গং এমন যেকারো বিরোধী সেই শাহবাগের দিন গুলো থেকেই। তাহলে শাহরিয়ারের টার্গেট শ্রোতা গ্রুপ কারা? যারা হাসিনার পক্ষের হাসিনার দলীয় লোক এরা? অথবা যারা ঠিক দলের নয় তবে লীগের সুবিধাভোগী? এরা?
এরা শাহরিয়ারের কোন কথাতেই কান দিবে না তাতে তা যতই খোদ ভারতের স্বার্থকে প্রগতিবাদী জামা পড়িয়ে হাজির করলেও। এর মূল কারণ, এরা কেউই ভারত ছেড়ে চীনের কোলে (হাসিনার) উঠাকে খারাপ ভাববে কেন? কোন কারণ নাই। এটা সারভাইবাল বা মরিয়া আত্মরক্ষার পর্যায়! এছাড়া এটা খারাপ ভাবার মধ্যে তো তাদের কোন স্বার্থই নাই!!! বরং হাসিনা টিকে গেলেই তাদের স্বার্থ!
এছাড়া হাসিনার নেক নজরে যে আছে, পড়েছে একবার – সেই আবার এখন হাসিনাবিরোধীতা দেখাবে????? কেন? বরং হাসিনা এযাত্রায় টিকে গেলে তারা খুশি হবে। আর সেটা চীনের হাত ধরে কিনা তাতে তাদের কী এসে যায়? – সেটা কী তাদের জন্য কোন আপত্তি হবার কিছু????
সারকথায় শাহরিয়ার গংদের পক্ষে এখন দাঁড়াবার কেউ নাই।তাদের বয়ান শুনবার মত কোন সামাজিক গ্রুপই এখন আমাদের সমাজে নাই। এটা তো ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাইয়ের যুগ একেবারেই নয়! যে প্রগতি-ওয়ালারা ঝাপিয়ে পড়বে! আসলে শাহরিয়ার গংয়েরা সবাই তারা এমন এক ভারতীয় ইচ্ছা-স্বার্থ ফেরি করার ঠিকা নিয়ে আসছেন যেটা এখন বাংলাদেশের কেউ খাবে না। আর বেশি বারাবাড়ি করলে হাসিনার উপর দিয়ে কথা বললে এরা নিজেরাই কেউ তাদেরকে ‘উপড়ে ফেলে দিবে’ – এমন রিস্ক নিচ্ছেন তারা।
আর এটাই এক শাহরিয়ার কবীর আর ঐ বই লেখক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক) ছাড়া ওখানে আর যারা বক্তব্য রেখেছেন তারা কেউই – হাসিনা চীনা-ঘনিষ্ট হয়েছেন বা আরো হতে পারেন – এনিয়ে কোন অভিযোগ করে বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। বরং সকলেই ভারসাম্য রেখে কথা বলেছেন। সারকথায় হাসিনাকে চটাতে চাচ্ছেন না -চটে যাক এমন কথা কেউ বলছেন না – যার সোজা মানে তারা সবার আগে হাসিনাকেই ছুয়ে থাকতে চান, আনুগত্য ঠিক রাখতে চান – এটা পরিস্কার রেখেছেন!!!
ওখানে আর যারা বক্তৃতা দিয়েছেন তারা হলেন, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার ইত্যাদি কেউই ভারসাম্য না রেখে কথা বলেন নাই। যেমন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী শিকদার। তিনি বলেন, চীন নিজের শক্তিতে উত্থান করেছে। চীনকে আমরা উপেক্ষা করতে পারবো না, তাই তাদের জানতে হবে। চীন যে প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে- এতে সংঘাত অনিবার্য। এই অঞ্চলের দেশগুলোকে এই সংঘাত এড়াতে সচেষ্ট হতে হবে।
এখন সবশেষে একটা কথা মনে করিয়ে দিব। কথিত হাসিনা-চীন আশ্বাস সেটা যদি সত্যিও ধরে নেই, তবুও এই সহায়তা পাওয়া তো শর্তযুক্ত। সে শর্ত বা বাস্তবতা বা যদির কথাটা হল, যে হাসিনা সরকার চীনের সহায়তা পাবার পুর্বশর্ত পুরণে নিজেকে কোনমতে করা একটা নির্বাচন দেখিয়ে নিজেকে বিজয়ী করতে পারতে হবে আগে। তবেই না এসব জল্পনা-কল্পনা! কাজেই মোদির ভারত বা শাহরিয়ারের দালালির ঠিকাদারিতে কি বললে এটা নিয়ে আমাদেরও এতে মনোযোগী হবার মত কিছুই নাই। তবে এই লেখায় যা করা হল, তা হল, শাহরিয়ার গং যে মোদির ঝাপসা বয়ান টার উপর দাঁড়িয়ে প্রপাগান্ডা করতে এসেছেন সেটাই খুলে দেখিয়ে দেয়া!! এতটুকুই!
একটা কথা লিখতে চেয়েছিলাম বাদ পড়ে গেছে। আগামি এক বছরের মধ্যে এটা একেবারেই স্পষ্ট হয়ে যাবে যে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতি-তে কেউ না, কোন ফ্যাক্টর না। এটা ২০০৭ সালের আগে বাংলাদেশের কাছে যেমন ভারত ছিল, এটা সেই ভারত হয়ে যাবে। এর মূল কারণ, এখনো আমেরিকা ঘোষণা না দিয়ে যেটা করে যাচ্ছে তা হল – চীন ঠেকানোর ঠিকাদারিতে ভেট-উপহার হিশাবে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। বাইডেনের আমেরিকা সেই অবস্থানের ফাইনাল বদল বা সমাপ্তি টেনে দিলেও সেটা তিনি এখনও পাবলিক ঘোষণা দিয়ে করেন নাই। অন্য আরেকটা ফ্যাক্টস হল, হাসিনা এখনও ক্ষমতায়। একারণে, মোদি মিথ্যা ভাব ধরার সুযোগ নিতে পারছেন যেন ভারত এখনও আমেরিকার দেয়া খবরদারিটাই ব্যবহার করছে; সেটা তার যেন অটুট আছে। অথবা মোদির ভারত যা বাংলাদেশে করে মাতবরি দেখায় তা আমেরিকা অনুমোদিত অথবা মোদির ভারত চাইলেই সে আমেরিকার কাছে হাসিনার পক্ষ হয়ে সুপারিশ করতে পারে ইত্যাদি। অথচ এসবই ভুয়া ভিত্তিহীন। আমেরিকা যা কিছু বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ২০০৭ সালে ভারতকে দিয়েছিল সেসবই প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু হাসিনা এখনও ক্ষমতায় আছে বলে মোদি এই মিথ্যা ভাব ও অভিনয়টা এখনও করে যেতে পারছে। একারণেই অগ্নি রায়েরা মিথ্যা কথা বলে করে খেয়ে যেতে পারছে।
আগামি এক বছরের মধ্যে এই জিনিষটাই এই মিথ্যা ভাব ধরা – এটাই উন্মুক্ত হয়ে যাবে যে বাংলাদেশের উপরে ভারত কেউ না। আর আমেরিকাও এমন কোন কর্তৃত্ব বাংলাদেশের উপর খাটাতে ভারতকে দেয় নাই; ফিরিয়ে নিয়েছে। এসবই স্পষ্ট উদাম হয়ে যাবে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের মে মাসের মধ্যে ভারতে নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষ ফলাফলও প্রকাশ হয়ে যায় – এর পর থেকে। ভারত কেউ না হয়ে যাবে। বাংলাদেশের উপর প্রভাব থাকবে কেবল আমেরিকা ও চীনের। একা ভারত, সে না আমেরিকা না চীনের ঘনিষ্ট থাকবে বা হবে। তবে ভারতের উপর আমেরিকান চাপ বাড়ার সম্ভাবনা (একেবারে বাংলাদেশের মত না হলেও ভারতের উপর আমেরিকার সাব-অর্ডিনেট হওয়ার চাপ বাড়বে) আর সে পরিস্থিতিতে ভারত হয়ত চীনের কোলে উঠতে চাইতে পারে। ঘটনা যে দিকে গিয়েই থিতু হোক না কেন ভারত বাংলাদেশ কেউ না হয়ে যাবে ক্রমশ!! এই সম্ভাবনা এখন আমরা ক্রমশ উন্মুক্ত হতে দেখছি!
আপডেটেডঃ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩; রাত ০২ঃ ১৯
>
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

